প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৭

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৭
জান্নাত নুসরাত

নুসরাতের গগণ ফাটানো চিৎকারে হেলদোল হলো না সৈয়দ বাড়ির কারোর। রুমানা খাতুন ব্যস্ত হাতে লাঠি নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি বুঝলেন না হচ্ছে টা কি এখানে আসলে?
আরশ হাত টেনে বের করতে চাইলো নুসরাতকে। কিন্তু, নুসরাত গো ধরে বসে রইলো ওখানে। আরশের পাতানো হাতে দু-একটা থাপ্পড় মারল হালকা হাতে। হাত বাড়িয়ে আরশের হাঁটুর উপরের মাংস চেপে ধরে চিমটি কাটলো। আরশ মার খেয়ে, হাত ছেড়ে দিল। চিমটি কাটা স্থানে বাম হাত দিয়ে বুলিয়ে খেতে মনোযোগ হলো। যখন ইচ্ছে হয় হবে বের হোক তার কি?
রুমানা খাতুন চিন্তিত গলায় বললেন,

“তোর বউয়ের গলার আওয়াজ শুনলাম না, কোথায় ও?
আরশ যারপনাই বিরক্ত হয়ে বলল,
” নানি চুপচাপ খাও,আছে এখানেই।
আরশ কথা বলা শেষ করে খেতে নিতেই নুসরাত টেবিলের নিচ থেকে মাথা বের করে চেয়ারে উঠে বসলো। রুমানা খাতুন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,”তুমি নিচে কি করছিলে?
নুসরাত ঠোঁটে ঠোঁট চেপে উত্তর ভাবল। উত্তর সাজিয়ে নিয়ে বলল,”আসলে নানি আমার পায়ে মশা কামড় দিচ্ছিল। টেবিলের নিচে ঢুকে মশাগুলো মারছিলাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নুসরাত কথা শেষ করতে করতে কয়েকবার হাচ্ছি দিল নাক চেপে। তারপর আরশের দিকে তাকিয়ে নাক বরাবর থাপ্পড় মারল। খেতে থাকা আরশের গলায় খাবার আটকে গেল। নিঃশ্বাস ফেলতে না পেরে চোখের কোণ লাল হয়ে গেল । তারপর পুরো রুম কাঁপিয়ে হাচ্ছি দিয়ে উঠলো। রুমানা খাতুন লাঠি তুলে নুসরাতকে ইঙ্গিত দিয়ে বললেন,”স্বামীর গায়ে হাত তুলো, এটা অন্যায়।
নুসরাত কথা উত্তর দিতে নিয়ে হাচ্ছি দিয়ে উঠলো একসাথে অনেকবার। আরশের অবস্থা সেইম হলো। দু-জন হাচ্ছির অবস্থা ব্যগতিক দেখে হাঁটা ধরলো বাহিরের দিকে। মানুষের মাঝখানে বসে হাচ্ছি দিলে তাদের খেতে অসুবিধা হতে পারে ভেবে।

নাজমিন বেগম নুসরাতের সচারাচর এরকম এলার্জি বেড়ে গিয়ে হাচ্ছি দেয় এজন্য পানি গরম করে নাকে ভাপ দেন যাতে একটু হলে ও হাচ্ছি দেওয়া বন্ধ হয়।
প্রথমে মনে করেছিলেন শুধু নুসরাত হাচ্ছি দিচ্ছে। কিচেন থেকে বের হয়ে যখন দেখলেন নুসরাতের সাথে তাল মিলিয়ে আরশ ও হাচ্ছি দিচ্ছে তখন উনার মুখ মাছের মতো হা হয়ে গেল। মুখ কোনো রকম বন্ধ করে বড় বোলে করে পানি গরম করে নিয়ে আসলেন।
আদেশের স্বরে দু-জনকে বললেন,
” সোফায় বসো।

আরশ চুপচাপ বসতে চাইলো প্রতিমধ্যে হাচ্ছি দিয়ে উঠলো। নুসরাত একের পর এক হাচ্ছি দিয়ে চলেছে। আরশ একটা হাচ্ছি দিলে নুসরাত পাঁচটা হাচ্ছি দেয়। এমন কর্মকান্ডে আরশ চোখ বাঁকিয়ে নুসরাতের দিকে তাকালো।
নাজমিন বেগম চাদর নিয়ে এসে দু-জনের মাথা ঢেকে দিলেন। গরম পানির বোল টেবিলের উপর রেখে বললেন,
” পানি থেকে বের হওয়া গরম ধোঁয়া গুলো টেনে নাও। তাহলে নাকে পিটপিট করা কমে যাবে।
আরশ মাথা চাদর দিয়ে ভালোভাবে পেঁচিয়ে নিচের দিকে বসে ভাপ নিতে লাগলো। নুসরাত চুল টেনে ধরে বলল,”আরিবাস, শালা তুমি একা একা নিজের নাক ঠিক করে নিবে আর আমার নাক এরকম থাকবে তা তো হবববে…

কথা শেষ করার আগেই হাচ্ছি দিয়ে উঠলো। আরশ নুসরাতকে চুল থেকে হাত ছাড়তে না দেখে নুসরাতের চুল সে ও টেনে ধরলো। দু-জন দু-জনের দিকে তাকাতেই নাকি-গলায় হেসে উঠলো।
“তোকে দেখতে বান্দরের মতো লাগছে? কিরকম নাকের ডগা লাল হয়ে আছে।
” এ্যাঁ বললেই হলো! নিজেকে আগে দেখুন লাগছে কেমন? তারপর নাহয় অন্যকে সার্টিফিগেট দিবেন। আপনাকে বান্দরের জামাই লাগছে।
আরশ নুসরাতকে জ্বালানোর জন্য বলল,
“দেখি তো দেখি, তোর চোখ বড় বড় করে তাকা।
নুসরাত বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কেন?
আরশ চোখ পাকিয়ে বলল,

“তোকে তাকাতে বলেছি তুই তাকাবি! এতো প্রশ্ন কীসের?
নুসরাত কথা বাড়াল না। চোখ বড় বড় করে তাকাতেই আরশ কিছুটা এগিয়ে এসে নুসরাতের সামনে বসলো। নুসরাত হাত দিয়ে চোখের নিচের চামড়া টেনে ধরে কর্নিয়া বড় করার চেষ্টা করলো। আরশকে দূরে সরা কথা বলেই নাক মুখ হাত দিয়ে চেপে হাচ্ছি দিয়ে উঠলো। নুসরাত নিজের অবস্থানে ফিরে এসে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”বলুন নিজেকে দেখতে পাচ্ছেন?

আরশ কথা না বলে কাছ ঘেষল নুসরাতের। নুসরাত হাতের তালু দিয়ে নাক ঘষলো নাকের পিটপিট কমানোর জন্য। চোখ তুলে তাকাতেই দেখলো আরশ তাদের মধ্যে থাকা ২ ইঞ্চির দূরত্ব মিটিয়ে তার মুখের সামনে চলে আসছে। এক হাত দিয়ে চাদর টেনে দিল মুখের সামনে। নুসরাত কিছু বলার জন্য হা করতেই আরশ এক হাত দিয়ে মাথার পিছন দিকে হাত গলিয়ে চেপে ধরলো শক্তভাবে। নুসরাত সরতে চাইলো পিছন দিকে কিন্তু সরতে পারল না। তার আগেই প্রগাঢ় চুমুতে সিক্ত হলো তার ওষ্ঠাধর। শক্ত চুমুতে যখন দিশেহারা নুসরাত, চুমু ভাঙতে চাইলো পিছনের দিকে সরে, তখন আরশ তা বুঝে তার পেশিবহুল হাত দিয়ে টাইটলি মাথা চেপে ধরে নিজের শরীরের সাথে আটকে রাখলো। হঠাৎ এমন চুমুতে নুসরাতের বুকের বাঁ-পাশে কম্পন শুরু হলো। শরীরে অন্যরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি হলো। অনুভূতির ধার না ধেরে নুসরার হাত দিয়ে ঠেলে আবার আরশকে পিছনের দিকে সরাতে চাইল। আরশ সরল না উল্টো নুসরাতের কোমর চেপে ধরে সামনের দিকে নিয়ে আসলো। শক্ত বুকের সংস্পর্শে নুসরাতের প্রায় মিইয়ে পড়ার অবস্থা। নাকে ব্ল্যাকবেরির তাজা এবং মিষ্টিগ্রান এসে লাগলো। আরশ একপ্রকার চাইলো আস্তো নুসরাতকে নিজের ভিতরে ঢুকিয়ে নিতে।

যখন নুসরাত রুদ্ধশ্বাস হয়ে আসলো আরশ ধীরে ধীরে ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে নিল।
টেনে শ্বাস নিতে চাইলো তার আগেই নুসরাত আরশের নাক চেপে ধরলো দু-হাত দিয়ে।
বিস্ময় নিয়ে নুসরাতের দিকে তাকাতেই নুসরাত দাঁত কেলিয়ে হাসল। কিছুক্ষণ আগে চুমু খাওয়ার জন্য ঠোঁট লাল হয়ে আছে। আরশ কিছু বলতে চাইলো নুসরাত হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে বলল,”শালা এখন তোকে শ্বাস আটকে মেরে ফেলি! তখন যদি আমি মরে যেতাম তাহলে কি হতো? বউ মরলে আর বউ পাইতি?
আরশ নুসরাতের হাত টেনে সরিয়ে দিল। নুসরাতের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পানির দিকে তাকিয়ে শ্বাস টেনে ভিতরে নিতে চাইলো। গম্ভীর গলায় বলল, “জীবনে শুনেছিস লিপ কিস করতে গিয়ে কারোর মৃত্যু হয়েছে।
নুসরাত কিছুটা ভাবল। তারপর থতমত খেয়ে নিজেকে জিতানোর জন্য নিজের সাফাই গেয়ে বলল,”অন্য কেউ এতক্ষণ কাউকে চুমু খেয়েছে নাকি যে মরবে। আপনি না শালা এতক্ষণ চুমু খেলেন। মনে হচ্ছে, বিশ্ব রেকর্ড করে ফেলেছেন। আর এতো যদি শখ বউকে চুমু খাবেন তাহলে বলতেন বেডরুমে গিয়ে দু-জনে মিলে ডবলিউ ডবলিউ ম্যাচ খেলতাম।

আরশ কেঁশে উঠলো। নুসরাত আরশের পিঠ গলিয়ে হাত রাখতে চাইলো। হাত ওইটুক গেল না, আরশের পুরুষালি মোটা পিঠের মাঝে সীমাবদ্ধ রইলো। হাত ফিরিয়ে নিয়ে এসে আরশের গলা পেঁচিয়ে ধরে বলল,”আর জীবনে চুমু খাবেন?
“একশো বার খাব। তোর কি?
নুসরাত বাঁকা দৃষ্টিতে তাকালো। হাত তুলে আরশের নাকে মারতে নিবে আরশ নুসরাতের হাত চেপে ধরলো।
“এই শরীর নিয়ে তুই এসব করছিস? আমি যদি একবার তোকে ঠিক করে ধরি তুই তো আর নড়তে পারবি না নুসরাত।
নুসরাত আরশের কথার মানে প্রথমে বুঝতে পারল না। নখ মুখে ঢুকিয়ে কামড়াতে কামড়াতে ভাবতে লাগলো আসলে বলেছে টা কি শালা? ভালো কিছু বলেনি তা মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কিরকম উপর থেকে নিচের দিকে তাকাচ্ছে আর খবিসের মতো করে হাসছে। যখন নুসরাতের মাথা ধরতে পারল, আরশের বাচ্চা তাকে অশ্লীল ইঙ্গিত দিচ্ছে তখন চোখ বড় বড় করে আরশের দিকে তাকিয়ে ধুম ধুম করে কিল পিঠে বসিয়ে দিল। আরশ হেসে উঠল শব্দ করে।

” ছি্হ কি অশালীন কথা বার্তা?
আরশ চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“আপনি বললে দোষ নেই মেডাম, আমি বললেই দোষ!
“আমি বললে ওটা অন্য বিষয় স্যার…।

খাবার শেষ হওয়ার পর ইসরাত বাধ্য হয়ে জায়িনের পিছন পিছন গেল। ড্রয়িং রুমে নুসরাত আর আরশ চাদরের ভিতর বসে কথা বলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। একজন আরেকজনকে রাগানোর জন্য হেও মূলক কথা বলছে। ইসরাত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। যখন দেখে এরা তখনই ঝগড়া করে। জায়িন দাঁড়ালো না। পা চালিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে চলে গেল। ইসরাত না চাইতে ও হাঁটতে হলো জায়িনের সাথে পা মিলিয়ে। রুমে প্রবেশ করে জায়িন দরজা বন্ধ করে দিল। ইসরাত চোয়াল ঝুলিয়ে বলল,”আমার হাত খুলুন। কখন থেকে লক করে রেখেছেন,আমার হাত ব্যথা হয়ে গিয়েছে?
জায়িন এমনভাব করলো যেন ইসরাতের কথা শুনতে পাচ্ছেনা। পকেটে এক হাত পুরে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল।

” কথা কি কানে যায় না আমার হাতটা খুলে দিচ্ছেন না কেন?
“চাবি নেই।
” চাবি নেই মানে কি? তখন ঢিল মেরে ফেলেছেন কেন?
জায়িন ইসরাতের দিকে শীতল দৃষ্টি দিয়ে তাকালো।
“সমস্যা কি? এইরকম করার মানে কি? আমার হাত খুলে দিন, আমি আমার রুমে যাব।
“তোমার রুমেই আছো।
“ভাইয়া আপনার সমস্যাটা কি বলুন?
“আমার আবার কি সমস্যা হবে?
ইসরাত দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“সব সমস্যাই তো আপনি করছেন!
জায়িন নিজের দিকে আঙুল তুলে বলল,

” তুমি আমাকে ব্লেম করছো ইসরাত। আমি তোমাকে কি বলেছিলাম, ধীরে ধীরে আমরা সব ঠিক করে নিব। তুমি কি করলে? এপার্টমেন্ট থেকে আমাকে না বলে চলে আসলে! এতে ও আমি কিছু বলিনি কিন্তু তুমি কার পারমিশন নিয়ে বাংলাদেশ এসেছো? আমি তোমাকে এই অধিকার দেইনি যে তুমি আমার সাথে ডিসকাশন ছাড়া দেশে আসবে।
জায়িন দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলল। ইসরাত নিশ্চুপ হয়ে জায়িনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
” কথা বলছো না কেন এখন? তোমার বিন্দুমাত্র ধারণা আছে,আমি কুকুরের মতো দিন-রাত এক করে তোমাকে খুঁজেছি কোথায় কোথায়?

জায়িন তাচ্ছিল্য করে হাসল। ইসরাতের গাল ডান হাত দিয়ে চেপে ধরে বলল,”আর তুমি আমাকে না বলে চলে আসলে। এই তোমার ম্যাচুরিটি! তোমার ম্যাচুরিটির গুষ্টি কিলাই।
ইসরাত জায়িনের কথার বিপরীতে সম্পূর্ণ আলাদা উত্তর দিল।
“আমার কি অধিকার ওখানে থাকার, ওইটা তো আপনার আর আপনার প্রেমিকার এপার্টমেন্ট?
জায়িন বিস্ময়ে ভ্রু তুলে তাকালো। ঠোঁট কামড়ে বলল,”প্রেমিকা।
ইসরাত সুর টেনে বলল,

“কেন চিনতে পারছেন না মিসেস এমেলিকে?
জায়িন কপালে ভাঁজ ফেলে চোখ তীক্ষ্ণ করে নিল। রুঢ় গলায় বলল,”কি হয়েছে এমেলির সাথে?
ইসরাত কোনো কথা বলল না। মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
জায়িন পৈশাচিক হাসি হেসে ইসরাতের মুখের দিকে ঝুঁকে ঠোঁট বাঁকিয়ে ডিপ গলায় বলল, “আরে কথা বলছো না কেন? তুমি বলবে নাকি আমি অন্য ব্যবস্তা নিব।
ইসরাত জায়িনের দিকে শান্ত চোখ তোলে তাকালো। জায়িন ইসরাতকে কথা বলতে না দেখে গাল চেপে নিজের দিকে ফিরালো। ইসরাত গাল থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। জায়িনের মতো সুঠাম দেহের ব্যক্তির কাছে নিজেকে নিজের কাছে চুনোপুটি মনে হলো। জায়িন মুখ চেপে ধরায় মাথা তুলে উপরের দিকে ইসরাতের তাকাতে হলো।

“অনেক সুন্দর করে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি লাস্ট বারের মতো বলছি, তুই বলবি নাকি আমি মুখ খুলাবো আমার পদ্ধতিতে?
ইসরাত আঙুল তুলে বলল,
” একদম তুই তোকারি করবেন না।
“একশত বার করবো। তুই দেশে আসলি কেন? তোকে আমি টাইম দেইনি আমার সাথে বোঝা পাড়ার জন্য। তুই আমার পারমিশন নিয়েছিলি। তোর সাথে যে আমি এতক্ষণ সুন্দর করে কথা বলেছি এটা তোর ভাগ্য। তোর জায়গায় অন্য কেউ হলে থাপড়ে গাল লাল করে দিতাম।
ইসরাত বিস্ময়ে মুখ হা করে নিল। এটা কোন জায়িন? এতো এগ্রোসিভ আচরণ করছে কেন?
জায়িন ইসরাতের তোলা আঙুল মুচড়ে দিয়ে বলল,

” একদম আমাকে আঙুল দেখাবি না। তোর ওই আঙুল আমি হালকা টোকা দিলে ভেঙে যাবে। এবার বল ভালোয় ভালোয় দেশে আসছিস কেন?
ইসরাত ঠোঁট ঠোঁটে চেপে দাঁড়িয়ে রইলো। জায়িন ইসরাতের মাথা চেপে ধরে নিজের দিকে নিয়ে এসে বলল,”তুই চাচ্ছিস আমি কিছু করি তাই না! এজন্য মুখ বন্ধ করে বসে আছিস। ওকে ডান, আই এম কিসিং ইউ্যের লিপস, এন্ড ওয়াটেভার হেপেন’স নেক্সট উইল বি এন্ট্রেলি(entirely) ইউ্যের রেসপনসেবলিটি।
ইসরাত জায়িনের এমন কথায় থতমত খেল। ঢোক গিলে কিছু বলতে নিল,”ইউ্যের টাইম ইজ আপ।
মৃদ্যু বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে জায়িন পা বাড়াল ইসরাতের দিকে। ইসরাত চোখের পাতা ফেলে নড়বড়ে পায়ে পিছনের দিকে সরে গেল। জায়িন এক পা বাড়ালো ইসরাত এক পা পিছন দিকে সরে গেল। জায়িন একেবারের জন্য ইসরাতের থেকে চোখ সরালো না। মিষ্টি গন্ধ পুরো বারান্দায় ছড়িয়ে গেল। জায়িন নিজের উনত্রিশ বছরের কামনা বাসনা শিকল ছেড়ে বের হয়ে আসলো। আকাঙ্কা নিয়ে চেপে ধরলো নিজের বিবাহিত স্ত্রীর ঘাড়। চোখের পলকের সাথে দুটো ওষ্ঠাধরের এক সাথে মিলন হলো। শক্ত চুমুতে সিক্ত হলো দুটো ঠোঁট। চুমুর সাথে নিজের ক্ষোভ মিটানোর জন্য জায়িন হালকা কামড় মারতে লাগলো।
নিজেকে সামলাতে যখন ইসরাত ব্যস্ত তখন ঠোঁটে চিনচিনে ব্যথার জন্য মুখ দিয়ে ব্যথাতুর শব্দ করলো। জায়িন চুমু ভেঙে ইসরাতের উদ্দেশ্যে বলল,”ইট সাউন্ডস গুড।

লজ্জায় ইসরাতের গাল লাল হয়ে গেল। জায়িনের হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। জায়িন ছাড়লো না উল্টে প্রয়োজনীয় স্পেস পাওয়ার জন্য ইসরাতকে ঠেলে বারান্দার রেলিঙের সাথে চেপে ধরলো।
জীবনে প্রথম কোনো পুরুষের সান্নিধ্যে এসে ইসরাতের বুক আশঙ্কায় কেঁপে উঠলো। বুকের ভিতরের স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকা নরম মাংস পিন্ড ধুকপুক করে উঠলে। শরীরে কাঁপণ অনুভূত হলো,অসাড়তায় ইসরাতের পা প্রায় ভেঙে আসলো, নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো মেয়েটা, হয়তো পারল না। জায়িন হ্যান্ডকাফ পড়া হাত কোনোরকম করে ইসরাতের কোমরের কাছে নিয়ে বেষ্টনী তৈরি করলো,যাতে ইসরাত পড়ে না যায়। শ্বাস নেওয়ায় কষ্ট হওয়ায় জায়িন ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়ালো। কিন্তু কোমর আর ঘাড় থেকে হাত একটু ও সরালো না।
জায়িন নিলজ্জের মতো দাঁত কেলিয়ে বলল,

“আই লাভ ইউ্যের লিপ টেস্ট!
ইসরাত লজ্জায় লাল গাল নিয়ে চোখ নিচের দিকে দিল। জায়িন ইসরাতের থুতনি তর্জনী আঙুলের সাহায্যে উপরের দিকে তুলে বলল,” টাইম ওয়েস্ট না করে তাড়াতাড়ি বলো কি হয়েছিল সেদিন? আমি আরেকবার টেস্ট করতে চাই… ভ্রু তুলে ইশারা করলো ঠোঁটের দিকে।
ইসরাত ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে রইলো। জায়িন ইসরাতের দিকে পা বাড়িয়ে বলল,”তুমি বলবে?
ইসরাত অস্থির গলায় বলল,
“বলছি তো! এভাবে হুমকি দিচ্ছেন কেন?
” তোমাকে হুমকি না দিলে কাজ হয় না। একটা প্রবাদ আছে না, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকাতে হয়। এটা তোমার জন্য প্রযোজ্য আমার কাছে মনে হচ্ছে।
ইসরাত মিনমিন করে বলল,

“আপনার এমেলি বলেছিল ওটা ওর এপার্টমেন্ট, আমি আত্মসম্মান হীনের মতো ওখানে পড়ে আছি। তাই আমি বের হয়ে এসেছি ওর এপার্টমেন্ট থেকে।
জায়িন রাগে চুল টেনে ধরলো। থুতনিতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,” আরে তুমি গাঁধা নাকি ও বলল ওটা ওর এপার্টমেন্ট আর তুমি চলে আসলে আত্মসম্মান দেখিয়ে। ওটা আমার এপার্টমেন্ট! আমি মাসে মাসে এর টেক্স দেই এতো এতো ইউরো সরকারকে আর আমার বাসায় এসে আমার বউকে বের করে দিল আর আমি জানলামই না।
ইসরাত আবেগে আপ্লুত হয়ে গেল। থমথমে গলায় বলল,”আমি জানতাম নাকি ওটা আপনারা এপার্টমেন্ট!
“আমাকে তো কল করে বলতে পারতে।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৬

ইসরাত হাত ছাড়া করলো না সুযোগ। জায়িনকে ঠেস দিয়ে বলল, “আপনার কি সময় আছে আমার কথা শোনার? আপনি তো আপনার মিটিংয়ে ব্যস্ত!
জায়িন ইসরাতের ঠেস দেওয়া বুঝতে পেরে হালকা হাসল। ইসরাতকে ডান হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে নিজের একান্ত কাছে টেনে আনতে আনতে ডিপ গলায় ফিসফিস করে বলল, “নিজের অধিকার নিজেকে নিয়ে নিতে হয়, প্রয়োজনে ভালোবেসে নয়তো ছিনিয়ে। Whatever you desire.

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here