প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৪ (৩)
জান্নাত নুসরাত
রাত দুটো কি তিনটে! মুখের উপর গরম নিঃশ্বাস পরায় নুসরাত নড়েচড়ে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। আরশের নুসরাতের নড়াচড়া মনে হয়ে ঠিক পছন্দ হলো না। মুখের এক পাশ বিকৃতি ঘটল। শরীরের এক পাশ চেপে ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিল। চোখ মুখ অন্যরকম! নুসরাতের মুখ থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিল। ঠোঁটে ভেসে উঠল মৃদু হাসির ঝলক। গালের এক পাশ উঁচু হয়ে গেল। পেট হঠাৎ গুলিয়ে উঠতেই বমি করার মতো মুখ বানাল আরশ। তারপর আবার সব ঠিক! আরশ ঢেঁকুর তুলল। মুখ দিয়ে বের হয়ে আসলো নিষিদ্ধ পানীয় এর গন্ধ। আরশ হাসল ঠোঁট এলিয়ে! তারপর আবার কেঁদে উঠল মৃদু শব্দ করে। নুসরাতের কপালে কপাল ঘষল। নাকে নাক! ঠোঁটে ঠোঁট! গলায় তীব্র ক্ষোভে সূচারু দাঁত বসাল। তারপর আবার চুপ করে বসে রইল নুসরাতের পাশে।
নুসরাত একবার নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে গেল। ঘুম কিছুটা হালকা হলো! এক চোখ খুলে তাকিয়ে দেখল আরশ উদ্ভট চাহনি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের কোণ লাল হয়ে আছে। নুসরাত পাত্তা দিল না নড়ে চড়ে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পরল। ঘড়ির কাটা টিক টিক করে সেকেন্ডের কাটা থেকে মিনিটের কাটা, মিনিটের কাটা থেকে ঘন্টার কাটায় যেতেই আরশ মাথা ধুম করে ফেলে দিল নুসরাতের পেটের উপর।
নুসরাত ঘুম থেকে ধড়ফড় করে উঠল। পেটে আঘাত পাওয়ায় পেট চেপে মুখ কুঁচকে নিল। আরশ ওইভাবে পর রইল। দুই-হাত দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করল নুসরাতের পেটের কাছে।
আরশকে ঠেলে দূরে সরাতে চাইল নুসরাত আরশ সরল না। গো ধরে শুয়ে রইল। নুসরাত বড় করে শ্বাস ফেলল। আরশকে টেনে তুলল নিজের উপর থেকে। এক জায়গায় বসাতেই মাতালের মতো তাকিয়ে রইল। নুসরাত সূক্ষ্ম নজরে দেখল আরশের মুখের ভাবগতি। সন্দেহ করল আরশ মদ ধরণের কিছু খেয়েছে। নাক মুখের সামনে নিয়ে শুকতেই মুখের বিক্রিতি করে নিল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আরশের মুখের সামনে থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে ওয়াক্ করে উঠল। আরশ নুসরাতকে ঠিক মতো শ্বাস নেওয়ার সুযোগ না দিয়ে নুসরাতের গাল চেপে ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিল। নুসরাত ধাতস্থ হওয়ার আগেই নরম ঠোঁটের উপর সংঘর্ষ ঘটল রুক্ষ ঠোঁটের।
রুক্ষ ঠোঁটের পিষ্টনে সাথে দাঁতের আঘাতে ব্যাথায় জড়জড়িত হলো মেয়েলি ঠোঁট। ঠেলে দূরে সরাতে গিয়ে হাত বাঁধা পরল আরশের হাতের নিচে।
যখন শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম তখন আরশ দূরে সরে গেল। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখ মুছে নিল।
নুসরাতের মনে হলো আরশের মুখ থেকে পাওয়া গন্ধ তার মুখের রন্ধে রন্ধে মিশে গিয়েছে। ওয়াক্ করে মুখ দিয়ে শ্বাস বের করতে নিল আরশ হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল।
মাতাল গলায় হেসে বলল,
“শ্বাস ফেলবি না! মেরে বর্তা বানিয়ে দিব! সেদিন তুই আমার, আরশ ঠোঁটে হাত দিয়ে দেখাল, এখানে, নাকে হাত দিয়ে দেখাল এখানে, বুকে হাত দিয়ে দেখাল এখানে, আরো কত জায়গায় চুমু খেয়েছিলি আমি কি ওয়াক্ করেছি! তাহলে তুই কেন করবি?
নুসরাত আরশকে এক ধাক্কা মারতেই আরশের মাতাল দেহ ছিটকে দূরে সরে গেল। আরশ ইচ্ছা করে বিছানায় শুয়ে পরল নিথর দেহের মতো। নুসরাত কে টেনে নিজের পাশে শুইয়ে নিল। নুসরাতের মাথা নিজের হাতের উপর রাখল। উপুড় হয়ে শুয়ে ঠোঁটে, নাকে, গালে, গলায়, ঘাড়ে, চুলে চুমু খেল।
বিড়বিড় করে বলল,
” তুই আমাকে কি দিয়ে পাগল করেছিস? আমি চাইনি প্রেমে পরতে, আমি চাইনি মায়ায় পরতে কিন্তু তুই আমার সাথে এটা কি করলি?
নুসরাতের কর্কশ গলার আওয়াজ,
“আমি কিছু করিনি!
আরশ ক্ষোভে নুসরাতের চোয়াল চেপে ধরল। নুসরাতের দিকে ঝুঁকতেই কি হলো? হাত হালকা হয়ে আসলো। ঠোঁট মৃদ্যু মন্দ কেঁপে উঠল। নুসরাতের কপালে কপাল দিয়ে আঘাত করল। গলার কাছে এনে শিহরণ জাগানো শ্বাস ফেলল। ফিসফিস করে বলল, “লেট’স মেইক লাভ!
নুসরাতের কর্কশ গলার উত্তর,
” না!
আরশ চোখ নিভু নিভু করে তাকিয়ে রইল। নুসরাতের মাথা চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে জোর গলায় বলল,
“হ্যাঁ!
” না!
“হ্যাঁ!
” না!
নুসরাত আর আরশের মধ্যে তর্কা তর্কি চলল অনেকক্ষণ। নুসরাত কে মানাতে না পেরে আরশ পৈশাচিক হাসি হাসল। ঠোঁট মেলে বলল,”তুই চাচ্ছিস আমি জোর করি!
নুসরাত শীতল চোখে তাকিয়ে রইল। গলার আওয়াজ ঠান্ডা।
“একদম না!
আরশ হাসল। ভিন্ন পথ অবলম্বন করল। নুসরাতের কানের কাছে মুখ নামিয়ে শব্দ করে হাসল আবার। পাগলের মতো কানের আশে পাশে চুমু খেল।
“আমি তোর কাছ থেকে অনুমতি নিচ্ছি না!
” আমি তা বলিনি!
আরশের হাত ধীরে ধীরে নুসরাতের গালের কাছে গেল। গালে হাত দিয়ে ঘর্ষন করে চুমু খেল।
বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলল,
“অপেক্ষা কর! আসছি!
ঢুলু ঢুলু পায়ে বের হয়ে গেল রুম থেকে। কিছুক্ষণ পর শব্দ করে এসে রুমে ঢুকল। নুসরাত নির্লিপ্ত চোখে তাকাল। আরশ নুসরাতের কিছু বুঝে উঠার আগেই ধুম করে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল। দাঁত বের করে হাসল! নুসরাত ভ্রু কুঁচকে মুখ দিয়ে বিরক্তির শব্দ বের করতেই আরশ নুসরাতের দুই হাত চেপে ধরে বেঁধে ফেলল দড়ির সাথে। নুসরাত পা দিয়ে আরশকে লাথ মেরে সরাতে চাইল আরশ নিজের পা দিয়ে নুসরাতের পা চেপে ধরল। রাগে ফোস ফোস করে উঠল নুসরাত।
মুখ দিয়ে চিৎকার করে কিছু বলতে যাবে আরশ মুখের মধ্যে কাপড় গুজে দিল। অতিরিক্ত নড়াচড়ার জন্য পা বেঁধে দিল দড়ির সাহায্যে। নুসরাত কাপড় মুখে গুজা অবস্থায় চোখ মুখে ক্ষোভ ফুটে উঠল।
আরশ মুখে আঙুল রাখলো। নুসরাতের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,” তুই যদি চিৎকার না করিস তাহলে তোর মুখ থেকে কাপড় সরাবো। আর চিৎকার করলে তোর ঠোঁটে আমি,
আরশ থুতনিতে হাত রেখে ভাবলো৷ তারপর বলল,
“হ্যাঁ আমি দুইশত,, না না কম হয়ে যায়! উমমম, পাঁচ শত টা কামড় মারবো। দেখ, আমি ভালো মানুষ তাই কম বলেছি অন্য কেউ হলে তোকে এক হাজারটা কামড় মারতে বাঁধতো না। আমি তোর কষ্ট তো বুঝি! আমি তোর স্বামী না তাই!
নুসরাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
” রাজি!
নুসরাত উপর নিচ মাথা নাড়ালো। আরশ মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে আনলো।
“কুকুরের বাচ্চা! একবার হাত থেকে দড়ি খোল তারপর দেখিস তোর কি করি?
” বেবি আগে বিছানা থেকে ঠিকভাবে উঠো তারপর না হয় আমার কিছু করবে।
নুসরাত হাত পা চালাতে না পেরে রাগে নিজের ঠোঁট কামড়ে উঠলো। আরশের দিকে দাঁত কিড়মিড় করে তাকিয়ে রইলো।
“বেবি ডাকবি না আমায়! আমি তোর কোনো বেবি টেবি কিছুই না।
“তুমিই তো আমার বেবি!
“একবার ছাড়া পাই তারপর দেখ, তোর বেবি কীভাবে বের করছি?
“আচ্ছা দেখবো তুই কি করিস?
আরশ কাপড় গুজে দিতে চাইলো তারপর কি ভেবে স্মির্ক করলো। নুসরাতের দিকে ঝুঁকে চুমু খেলো ঠোঁটে। নুসরাত দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরলো আরশের ঠোঁট।
আরশ হাসল। ডিপ গলায় বলল,
” গুড! এইভাবে আমার কাজে রেসপন্স কর!
ঘড়ির কাটা টিক টিক করে চারটার কাটায় গেল। ঘড়ি শব্দ করে জানান দিল ভোর হয়ে যাচ্ছে। নুসরাতের কঠোর গলার আওয়াজ শোনা গেল রুমের ভিতর থেকে,”এক পা এগোনোর চেষ্টা করবি না কুত্তা। মেরে ফেলবো তোকে, পিস পিস করে কেটে পানিতে বাসিয়ে দিব।
আরশের মাতাল গলার স্বর,
” তোর জন্য মরণ সই! তোর হাতের মৃত্যু, আমি মাথা পেতে নিব।
“আরশের বাচ্চা সরবি নাকি তোর ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিব।
” পা তো বাঁধা জান। তুমি কীভাবে ভবিষ্যৎ অন্ধকার করবে?
নুসরাত রাগে ফোস ফোস করে উঠলো। আরশের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বলল,”সামনে আগাবি না আরশ! হাত তো ছাড়া পাবো তখন তোকে মেরে দিব। তুই আমার সুযোগ নিচ্ছিস। গলা টিপে হত্যা করব তোকে আমি!
“আহ জান তোর মুখে এই তুইটা না অনেক জোস! আমার অনেক ভালো লাগছে। আবার বল! তুই রাগলে আমার কাছে তোকে ভলকেনো মনে হয়!
” তাহলে ভলকেনোয় ঝাপ দিয়ে মরে যাস না কেন?
“আজ তো মরতে এসেছি তোর কাছে।
বাহিরে বাতাস বইতে লাগল। হঠাৎ করে ধূলো ঝড় শুরু হলো। বাহিরের ঠান্ডবের কাছে রুমের ভিতরের ঠান্ডব ঢাকা পরল। মৃদুমন্দ নুসরাতের গলার আওয়াজ পাওয়া গেল। সাথে আরশের হাসির!
” আমি তোকে ছাড়ব না আরশ! তুই আমার এতো বড় ক্ষতি করছিস! তোকে হত্যা করব।
আরশের হাস্যরস গলার আওয়াজ,
“আচ্ছা ছাড়িস না, ধরে রাখিস! আমি তোর সাথে এভাবে থাকতে চাই। মরার আগ পর্যন্ত এবং মরার পরে ও।
পরেরদিন সকালে,
আরশের মাথা ব্যাথার জন্য চোখ খুলে তাকাতে পারল না। শরীরে শীত শীত অনুভব হলো। কম্ফোটার ভালোভাবে শরীরে জড়িয়ে শুয়ে পরতেই চোখে ঝাপসা কিছু ভাসল। নিভু নিভু চোখ ফিরিয়ে তাকাল পুরো রুমে। না নুসরাত নেই! চোখ ফিরিয়ে নিয়ে শুয়ে থাকল! মনে করল নুসরাত আশে-পাশে আছে।
বিকেল চারটা,
আরশ শরীরের আলস্যতা ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। শ্বাস ফেলতেই নাকে উদ্ভট গন্ধ আসলো। ধীরে ধীরে রাতের কথা মনে হলো। নুসরাত ডিভোর্সের কথা বলায় রাগ করে রুম থেকে বের হয়েছিল। তারপর মাহাদির কাছে গিয়েছিল এরপর আর কিছু মনে নেই সব ঝাপসা। মাথা চিনচিন করে উঠল! দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরল। হঠাৎ করে টনক নড়ল। চোখে ভাসল নুসরাতের হাত পা বাঁধার দৃশ্য! একে একে সব মনে হতেই চুল টেনে ধরে চিৎকার করে উঠল।
নিজেকে নিজে গালি দিল,”ফাক ইউ্যের সেল্ফ আরশ।
নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল! হাতে টাওয়াল আর প্যান্ট নিয়ে গোসলে ঢুকল। শরীর ম্যাজ ম্যাজ করছে। গোসল করে বের হলো রুম থেকে।
নিচে নামতেই লিপি বেগম খাবার বেড়ে দিলেন। আরশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,” মাথা ব্যাথা কমেছে!
আরশ মাথা নাড়াল। মায়ের দিকে অবাক চোখে চেয়ে জিজ্ঞেস করল,”আমার মাথা ব্যাথা করছে কে বলেছে তোমায়?
লিপি বেগম চুলে হাত বুলিয়ে দিলেন। ঝাকড়া চুলগুলো আরেকটু অগোছালো করে দিলেন।
“নুসরাত বলে গেল!
আরশ মনে হওয়ার মতো করে বলল,
” নুসরাত কি বলে গেছে? আর কিছু বলেছে।
আরশ জিজ্ঞাসার চোখে তাকিয়ে রইল।
“কিছু বলার ছিল!
” না তেমন কিছু না!
লিপি বেগম চুলে হাত বুলিয়ে দিলেন। আরশের গালের মধ্যে থাপ্পড়ের দাগ দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,” তোর গালে কি হয়েছে?
আরশ থতমত খেল। গালে হাত দিয়ে ঢোক গিলল। মনে করতে চাইল রাতের কথা! ঝাপসা চোখে ভাসল নুসরাতের হাত খুলে দিতেই এই থাপ্পড় তার গালে পরেছিল। তারপর নাকে ঘুষি মেরে ছিল! আর কি করেছিল? হ্যাঁ হ্যাঁ পিঠে আর কোমরে লাথ মেরেছিল।
“ঘুমের মধ্যে থাপ্পড় মেরে দিয়েছিলাম!
” অহ!
আরশ মুখে ভাতের লোকমা তুলতে তুলতে বলল,
“নুসরাত কোথায় গিয়েছে জানো?
” হ্যাঁ জানি তো! বড়সড় লাগেজ নিয়ে নানার বাসায় গিয়েছে! আর বলে গিয়েছে আগামী এক বছরের আগে সে এই বাড়ি মুখো হবে না!
আরশ পানি খেয়ে লিপি বেগমের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি স্থাপন করল।
“কেউ আটকায় নি!
” আটকানোর আগেই তো সি-এন-জি রিজার্ভ করে চলে গিয়েছে।
আরশ দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। লিপি বেগমের কথায় আরশের খাবার খাওয়া হাত গলায় আটকে গেল।
“আমার দিকে তাকিয়ে বলল কীসের পেপার যেন ঠিক সময় পাঠিয়ে দিবে? তুই জানিস কীসের পেপার?
আরশ ঢোক গিলে মাথা দু-দিকে নাড়িয়ে না করল। লিপি বেগম ভাত দিতে দিতে বললেন,” তোর মুখ এভাবে শুকিয়ে গেছে কেন?
“কই, কোথায়?
“এই যে! আর চোখ লাল হয়ে আছে কেন নুসরাতের সাথে ঝগড়া হয়েছে।
” না তেমনি কিছু না! মাথা ব্যাথার জন্য চোখ লাল হয়েছে।
লিপি বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আরশ চুপচাপ ভাত খেতে লাগল। তার মোটে ও অপরাধ বোধ জাগল না। সে তার অধিকার নিয়েছে! এখন যেদিকে ইচ্ছে যাক! যদি ডিভোর্স দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে সে পা ভেঙে দিবে! গতকাল রাতের মতো হাত পা বেঁধে রেখে সংসার করবে তবুও ডিভোর্স দিবে না। দেখবে সে ডিভোর্স দে কিভাবে?
কয়েকদিন পরের কথা,
খাবার টেবিলে সবাই নিশ্চুপ খাবার খাচ্ছে। আরশ মুখ লটকে ভাত মাখাচ্ছে আবার সে গুলো ভেঙে দিচ্ছি। হেলাল সাহেব ভ্রু কুঁচকে আরশের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। আরশ ভাত আঁকি বুকি করে ছুঁড়ে ছুঁড়ে মুখের ভিতর ঢুকাচ্ছে। তারপর আবার অলস ভঙ্গিতে চেয়ে রয়েছে খাবারের দিকে।
জায়িন কথা গুছিয়ে নিল। হেলাল সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কেঁশে উঠল। হেলাল সাহেব চোখ ফিরালেন জায়িনের দিকে। ভ্রু বাঁকিয়ে চেয়ে রইলেন।
“আব্বু, আমি ফিরে যেতে চাচ্ছি!
হেলাল সাহেবের কর্কশ গলার আওয়াজ,
” তো যাও না!
“উমম, তাহলে আর কি? এই মাসের শেষ শুক্রবারে আমার ডেইট কনফার্ম করেছি!
” বাহ বাহ ডেইট কনফার্ম করে আমাকে জানানো হচ্ছে। তাহলে একেবারে চলে গিয়ে জানাতে।
জায়িন কথা না বলে চুপচাপ খেতে মন দিল। মনে মনে বলল,”এ্যাঁ আমাকে পাগল কুকুরে কামড় দিয়েছে যে এখানে থাকব। জীবনে না! ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হলেও এই বাড়ি ছাড়তে হবে।
ইসরাতের দিকে তাকিয়ে জায়িন শয়তানি হাসি দিল।
দশদিন পরের কথা,
রাত দুটোর সময় এসে আরশ হাজির নুসরাতের নানার বাসায়। তখন সবাই খাবার খেয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঘুমানোর। আরশকে বিধ্বস্থ দেখে আঁতকে উঠলেন নুসরাতের নানা। কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়ে থেমে গেলেন। কিছু জিজ্ঞেস না করে রুমে নিয়ে বসালেন। হাত বাড়িয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিলেন। স্ত্রী কে বলে পানি আনিয়ে খাইয়ে দিলেন আরশকে। আরশের চোখের কোণ লাল, উস্কো খুস্কো চুলের অবস্থা, চোখের নিচের অবস্থা ভালো নয়! সুঠাম দেহের শরীরটা কিছুটা ভেঙে গিয়েছে।
আরশ পানি খেল না। তাড়া গলায় বলল,
“নুসরাত কোথায় নানা ?
“নানার সাথে ভাই ডাকতে পারো। আর নুসরাত তো ঘুমাচ্ছে!
আরশ শ্বাস ফেলল। পানি না খেয়ে উঠে দাঁড়াল।
“আমি নুসরাতের সাথে দেখা করতে চাই নানা ভাই।
” আগে একটু পানি খেয়ে নাও!
“জি না পরে খাবো! ওর সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৪ (২)
নুসরাতের নানা কথা বাড়ালেন না। স্ত্রী কে বললেন নুসরাতের রুম দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। নুসরাতের নানি ধীর গতিতে হেঁটে যেতে লাগলেন। বয়সের ভারে আগের মতো হাঁটতে পারেন না। আরশ চিন্তায় নিজের হাত কামড়ে ধরল। নুসরাতের বাচ্চা থাকে ডিভোর্স লেটার পাঠায়! আবার বলে এক সপ্তাহের মধ্যে সাইন করে না দিলে আইনি পদক্ষেপ নিবে। দেখাচ্ছে আরশ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া। আজ এমন অবস্থা করবে যে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া বের করে দবে।