প্রিয় প্রণয়িনী শেষ পর্ব
জান্নাত নুসরাত
০৯-০২-২০২৭
ইসরাতের টুইন বাচ্চাদের নয় মাস চলছে। ঈশানী কিছু টা শান্ত শিষ্ট হলে ও জোহান তার থেকে ডাবল দুষ্টু। সারাদিন কান্না করবে! কিছুক্ষণ চুপ থাকবে তারপর আবার কান্না করবে। ইসরাত বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে রইল। দু-জন এখন ঘুমাচ্ছে আধ ঘন্টা পার হওয়ার আগেই উঠে যাবে। মোবাইল বিছানার পাশে রেখে ভিডিও কল দিল। নিজে পিক করে একটা মোবাইল দেয়ালের মাঝে আটকে দিয়ে কিচেনে চলে গেল। আরেকটা মোবাইল সিঙ্কের উপর আটকে রাখলো। মোবাইলের দিকে একবার তাকিয়ে দেখল দু-জন নড়াচড়া করছে কি না। না ঘুমাচ্ছে দু-জন আরামের ঘুম।
জায়িনকে শুক্রবার ছাড়া এপার্টমেন্টে থাকে না, তাই বাচ্চাদের সারাদিন ইসরাতকেই সামলাতে হয়। দু-জন বাচ্চা হওয়া সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় ইসরাতের। দিনের বেলা জোহান আর ঈশানী না ঘুমালে ও রাতের বেলা ঘুমায় এদিক দিয়ে ইসরাত সুখী। রাতের তার আরামের ঘুম হয়!
ইসরাত রান্না চাপালো তাড়াতাড়ি করে গ্যাসে। আধঘন্টা পর যখন তাকাল মোবাইলের দিকে দেখল, জোহান উঠে বসেছে। শরীরের কাঁতা ফেলে দিয়ে ঈশানীকে ডাকছে। মুখ দিয়ে শব্দ বের করছে,”আই নাই আই নাই নাই!
ইসরাত দৌড়ে রুমে গেল। জোহানকে কোলে নিয়ে আসলো কিচেনে। কোলে নিয়ে রান্না শেষ করল। রান্না শেষ করে জোহানকে নিয়ে রুমে ফিরে আসলো। ঈশানীকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে জোহানকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করলো ইসরাত। ঘুম পূর্ণ না হওয়ায় ইসরাত আল্লাহ বলে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতেই জোহান ঘুমিয়ে পড়ল। ঈশানীর পাশে জোহানকে শুইয়ে দিয়ে খোলা থাই গ্লাস লাগিয়ে দিল। বাহির থেকে ঠান্ডা বাতাস আসছে বলে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
কাপড় নিয়ে গোসল করতে গেল। তাড়াহুড়ো করে গোসল শেষ করে বের হওয়ার আগেই বাহির থেকে কান্নার শব্দ আসলো দু-জনের একসাথে। কাপড় পরিধান করে ইসরাত ভিজে চুল টাওয়াল দিয়ে বেঁধে বের হতেই চোখে ভাসল জোহান আর ঈশানী একজন আরেকজন কে খামচি দিচ্ছে। তারপর একজন আরেকনের চোখের ভিতরে আঙুল ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা করছে। দু-জনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে কেউই জিতল না দু-জনই সম পরিমাণ জখম হয়ে কান্না করতে শুরু করলো। ইসরাত দু-জনকে কোলে নিয়ে বসল বিছানার উপর। তারপর ও দু-জনের কান্না শেষ হলো না। কিছুক্ষণ থামানোর চেষ্টা করে ইসরাত হাপিয়ে উঠল। চোখ মুখ অন্ধকার করে ইসরাত ও কান্না করে দিল। তার ধৈর্য্যের বাঁদ ভেঙে গেছে। কষ্ট করে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো হলো না। নিজে ও তাদের সাথে গলা ছেড়ে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করতে লাগলো।
পুরো সপ্তাহ ইসরাত একা বাচ্চা সামলায় বলে জায়িন ইসরাতকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এসেছিল এপার্টমেন্টে লুকিয়ে। এপার্টমেন্টের লক খুলে ভিতরে ঢুকতেই ইসরাতের কান্নার শব্দ পেল। রুমে গিয়ে যখন দেখল মা, ছেলে, মেয়ে সবাই একসাথে তাল দিয়ে কান্না করছে তখন জায়িন মাথায় হাত দিল। বিড়বিড় করে বলল,”সর্বনাশ করেছে! এ কি অবস্থা?
০৪-০১-২০২৯
সৈয়দ বাড়িতে এই দুই বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। সাথে পরিবর্তন হয়েছেন মানুষ জন। ইরহামের বিয়ে হয়ে গিয়েছে সৌরভির সাথে পারিবারিক ভাবে। অনিকার বিয়ে ও হয়ে গিয়েছে দেড় বছরের মতো। কার সাথে বিয়ে হয়েছে সেটা নাহয় পরে জানা যাবে। আরিশার বয়স বিশ। আরিশাকে ও বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কিন্তু সে রাজি না! আরিশা নুসরাতের মতো বিজনেস ওমেন হতে চায়। ইসরাতের টুইন বেবির বয়স এখন তিন বছর চলছে। মে মাসে তিন বছর পূর্ণ হবে! আশিক আর ডেলার একটা ছেলে সন্তান হয়েছে যার বয়স সাড়ে চার। বর্তমানে ডেলার আবার সন্তান সম্ভবা। মমো আর মাহাদির ও পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে সাত মাস আগে। জায়ান আর ইনায়ার প্রথম বেবি মিস ক্যারেজ হওয়ার পর দ্বিতীয় বারের মতো আবার তারা বাবা-মা হতে চলেছে। এবার সৈয়দ বাড়ির সবাই ইনায়ার প্রতি আর বাচ্চার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখছে। যাতে আগের বারের মতো আর সেই কান্ড না ঘটে। নুসরাত, আরশ, ইরহাম পুরো দমে বিজনেসে মনোযোগী হয়েছে। কিন্তু, আরশ আর নুসরাতের সম্পর্ক এখনো দা আর মিষ্টি কুমরার মতো। একজন একটা কথা বললে আরেকজন গা জ্বালানো উত্তর দে। কেউ কারোর কথার সোজা উত্তর দেয় না। অনিকা ও সংসারের কাজে বিজি হয়ে গিয়েছে। সাজিদা আর শুভ এর আরেকটা বেবি হয়েছে। তার বয়স দুই। শুভ্রের বয়স এখন সাত।
সবকিছু পরিবর্তন হলেও মেহেরুন নেছা আগের মতো রয়ে গিয়েছেন। তিনি এখন নতুন মিশনে লেগেছেন। মিশনটা হলো আরিশার বিয়ে দেওয়া। আগের মতো শাড়ি পড়া শুরু করেছেন। সেদিন হাই হিলের সাথে ফ্লেয়ার প্যান্ট পড়ে হাঁটতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে উলটে পড়ে গিয়েছিলেন মেহেরুন নেছা। তারপর এক মাস হসপিটালের বেডে পড়ে থেকে তওবা করেছেন আর এই জীবনে বেঁচে থাকতে হাই হিল আর ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়বেন না।
বসন্তের বাতাবরণ শেষে গ্রীষ্মের শুরু। আকাশ মেঘলা হয়েছে। সময়ের সাথে মেঘের গর্জন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছোটো ছোটো হাত পা ফেলে একটা চার বছরের বাচ্চা হেঁটে চলেছে এদিক সেদিক। ছোটো পায়ের ছোটো ছোটো আঙুল গুলো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। সিঁড়ি বেয়ে ধীরে ধীরে নামলো বাচ্চাটা। নামার পথে সিঁড়ির পাশ ঘেঁষে কিছু বড়সড় ছবি টাঙানো তার চোখে লাগলো। আঙুল মুখে ঢুকিয়ে কিছু ভেবে ছবির দিকে হাত বাড়ালো নাগালে পেল না। বিড়বিড় করে বলল,
“আম্মা আব্বু।
কিছুক্ষণ রাগী চোখে ছবির দিকে তাকিয়ে থেকে নিচে নেমে গেল। মেহেরুন নেছা সোফায় বসে ছিলেন। আইজানকে সিঁড়ি বেয়ে নামতে দেখে হাক দিলেন।
“এই আখজান এইদিকে আইয়া হুইনা যা!
আইজান ভ্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ চোখে কিছুক্ষণ মেহেরুন নেছার দিকে তাকিয়ে নাক কুঁচকালো। মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার চেষ্টা করলো। প্রয়োজন বোধ করলো না মেহেরুন নেছার ডাকে সাড়া দেওয়ার। মেহেরুন নেছার চোয়াল ঝুলে গেল। হাতের আঙুল সমান বাচ্চা তার কথার উত্তর দিচ্ছে না। নাক ফুলিয়ে বসে রইলেন আজ আসুক এর মা বাপ এর নামে বিচার দিতে হবে।
আইজান মেহেরুন নেছার পাশ কাটিয়ে চলে গেল কিচেনের দিকে। কিচেনে গিয়ে দেখল ইনায়া রান্না করছে। ইনায়ার কামিজের ওড়না ধরে টান দিল। ইনায়া হাসি মুখে পিছন ফিরে তাকাল। আইজান ইনায়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
” মেজ আম্মু ভা খাবো!
ইনায়া আইজানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। কিচেনে ইনায়ার সাথে সৌরভি ও ছিল। সৌরভি আইজানকে দেখে এগিয়ে আসলো। তার বান্ধবীর ছেলেটা এতো কিউট কেন? গোলগাল ছেলেটাকে দেখলেই ইচ্ছে করে সৌরভির গাল টেনে দিতে। সৌরভি আইজানের ফুলো ফুলো গাল টেনে দিয়ে গাল লাল করে দিল। আইজান বিরক্তির চোখে তাকাল সৌরভির দিকে। এই আম্মুটাকে তার মোটে ও পছন্দ না দেখলেই তার গাল টেনে ব্যথা বানিয়ে দে।
সৌরভি হাঁটু ঘেড়ে বসল আইজানের সামনে। দু-হাতের নিচ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে কোলে নিতে যাবে আইজানকে, আইজান শরীর ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে বসে গেল। ইনায়া খিলখিল করে হেসে উঠল। হাসির তালে চার মাসের পেটটা ও হালকা দোলে উঠল। ইনায়া হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরল। সৌরভি নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে রইল আইজানের দিকে। দুঃখি গলায় বলল,”এই নুসরাতের বাচ্চাটা নুসরাতের মতো ত্যাড়া হয়েছে। আইজান ছোট আম্মার কোলে একবার আসো।
আইজান মেঝে থেকে উঠল না। ওভাবে পড়ে রইল চোখ মুখ কুঁচকে। ইনায়া প্লেটে ভাত নিয়ে আইজানকে টেনে তুলল।
“বাবা মেজ আম্মু খাইয়ে দেই ভাত।
আইজান তাকাল ইনায়ার দিকে কথা বলতে তার ইচ্ছে হচ্ছে না তারপর ও ভদ্রতা খাতিরে বলল,” আমাত আম্মার হাত চারা কারোর হাতে খাই না। আপনি জানেন না মেজ আম্মু।
ইনায়া আইজানের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল। প্রতিদিন খাবার খাইয়ে দেওয়ার কথা বললে এরকম উত্তর আসে আইজানের থেকে। ইনায়া সারাদিন তাকিয়ে থাকে চার বছরের বাচ্চাটার দিকে এতো কম কথা বলে কেন এই ছোট বাচ্চা? কি নীরব নিস্তব্ধ তার বয়সী বাচ্চাদের তুলনায়? গলার স্বর ও ভারী! বড় মানুষের মতো কথা বলে।
সৌরভি ইনায়ার হাত থেকে প্লেট নিজের হাতে টেনে নিল। আইজানকে টেনে টুনে কোলে নিল। আইজান নামার জন্য ধস্তাধস্তি করতে গেল সৌরভি ধমক দিল। না কাজ হলো না! আইজান ভয় পায় নাকি সৌরভিকে! সে একমাত্র তার মা আর বাবাকে ভয় পায় আর কাউকে না। বাবাকে ভয় পায় বললে ভুল! শ্রদ্ধা করে বলে সে বাবার কথার অমান্য করে না, কিন্তু মায়ের চোখের চাহনি দেখলেই তার ভিতরের রুহ কেঁপে উঠে। আইজান আম্মাকে বেশি ভয় পায়!
সৌরভির ধমকে কাজ হলো না। আইজান গড়াগড়ি করে কোল থেকে নেমে গেল। ইনায়ার দিকে হাত বাড়িতে দিল প্লেট এনে দেওয়ার জন্য। ইনায়া সৌরভির দিকে তাকিয়ে বলল,”ছেড়ে দে সৌরভি, ছেলেটার সাথে ঘষাঘষি করিস না, ও এসব পছন্দ করে না! কয়েকদিন যাক তোর সাথে মানিয়ে নিবে। আর ওর মা অফিস থেকে এসে যদি শুনে ওর বাচ্চার সাথে তুই আবার লেগেছিস তাহলে তোর পিঠে মার পড়বে। মার গুলো তোর খুব ভালো লাগে কি? সৌরভি হেসে উঠল। মাথা নাড়ালো হ্যাঁ ভঙ্গিতে। যে মার গুলো তার খুব পছন্দের।
আইজানের হাতে ভাতের প্লেট দিল না সৌরভি। ঝুঁকে বসল নিচে। গাল বাড়িয়ে দিয়ে বলল,”আগে উম্মাহ দাও তারপর ভাতের প্লেট পাবে।
আইজান বিরক্তির চোখে তাকিয়ে গালে গাল লাগিয়ে সরিয়ে নিল। সৌরভি কথা বাড়ালো না আইজানকে ছেড়ে দিল প্লেট হাতে। আইজান কিচেন হতে ভাতের প্লেট হাতে বের হতেই লিপি বেগমের সাথে দেখা হলো।পরণে হাঁটু সমান শার্ট। গোলুমুলু হওয়ার ধরুন আইজান হাঁটলে সবার চোখ এদিকেই পড়ে। লিপি বেগম ডায়নিং টেবিলে গিয়ে চেয়ার টেনে বের করে দিলেন। আইজান চেয়ারে উঠে দাঁড়িয়ে গেল।
“দাদা আমি খাইয়ে দেই!
আইজান লিপি বেগমের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাথা না ভঙ্গিতে নাড়ালো। লিপি বেগম হতাশ হয়ে চলে গেলেন কিচেনে। আইজান হাতের মুঠোয় ভাত নিয়ে মুখে দিল। হাত থেকে কয়েকটা ভাত প্লেটে পড়ে গেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
লিপি বেগম ভাবতে পারেন না, এই ছোট বাচ্চার এতো এটিটিউড কোথা থেকে আসে? আর কথা ও বলে মেপে মেপে। এর বয়সী বাচ্চাদের কান্না আর চিৎকারে বাড়ি থাকবে মুখরিত আর তাদের বাড়ি থাকে নিশ্চুপ। মায়ের সাথে সব কথা তার আর কারোর সাথে রা অব্ধি করবে না। মা যদি হাসে তাহলে এই বাচ্চার ঠোঁট দিয়ে একটু হাসি বের হয় নাহলে বের হবে না। কেউ জোর করে হাসাতে পর্যন্ত পারবে না। লিপি বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন।
কনাফারেন্স রুমে মাঝখানের দু চেয়ারে বসে আছে নুসরাত আর আরশ। নুসরাতের পাশে আবির বসে আছে। আর আরেক পাশে ইরহাম। আরশের পাশে ডায়না! আরশের সেদিনের অপমানের পর ডায়না নিজেকে পরিবর্তন করেছে। আগের মতো কাপড় সে পড়ে না। এখন সে শালিন কাপড় পড়ে তবুও কোথা একটা কিন্তু থেকে যায়। ওই যে তার পাশে বসে থাকা ত্রিশউর্ধ্বে বসে থাকা পুরুষ দিন দিন আরো সুদর্শন আর সুন্দর হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, ওই পুরুষের কারোর দিকে তাকানোর সময় নেই। সে তো এক রমনীতেই আটকে! সেই রমনী আর কেউ না, যে এখন দাপুটে ভঙ্গিতে বসে আছে সকলের মাঝখানের চেয়ারে। মুখে প্রশাধনীর ছোঁয়া নেই! গোলগাল মুখে চোখের মাঝে চশমা এঁটে আছে। ধারুণ মানিয়েছে চোখের চশমাটা। নাকে ছোট্ট একটা সাদা পাথরের নাকফুল। মুখের সৌন্দর্য্য এই নাকফুল মনে হয় আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
সাদা কালার কোটের ভিতর সাদা কালার শার্ট। গলাতে টাই ঝুলছে! নুসরাতের হাতে ফাইল। বাঁ-হাতের অনামিকা আঙুলে আরশ নামবিশিষ্ট একটা ডায়মন্ড রিং ঝুলছে। নুসরাতের দৃষ্টি ফাইলের দিকে। ফাইল চেক করতে করতে নুসরাতের কপালের মাঝ বরাবর দুটো ভাঁজ পড়ল। ঠোঁট কুঁচকে গিয়ে উপরের দিকে উঠে গেল।
নুসরাতের মুখ ধীরে ধীরে গম্ভীর হতে দেখে কনাফারেন্স রুম শান্ত হয়ে গেল। আরশ ইরহামের দিকে একবার তাকাল। চোখ দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করল,”কি হয়েছে?
ইরহাম অসহায় ভঙ্গিতে মাথা না দিকে নাড়ালো। আরশ দাঁতে দাঁত চেপে কটমট চোখে তাকিয়ে রইল ইরহামের দিকে। নুসরাত কপালে ভাঁজ ফেলে সবার দিকে চোখ ঘুরালো। সবাই নড়েচড়ে বসল! আবির ধীর গলায় ডাক দিল,
“ম্যাম!
নুসরাত চোখ ফিরিয়ে তাকাল না। কান খাড়া করে বলল,
” জি বলুন, মিস্টার আবির!
আরশ চোখ তীক্ষ্ণ করে তাকাল আবিরের দিকে। আবির নুসরাতের দিকে মুখ বাড়িয়ে ফিসফিস করে কিছু বলল। আরশ জেলাসি সামলাতে না পেরে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। এই আবিরের বাচ্চা কে আজ সে ছাড়বে না। তার বউয়ের সাথে ঘষাঘষি আবার কিসের? আজ আবিরের একদিন কি আরশের একদিন!
নুসরাত আবিরের কথা শোনে চোখ সামনের দিকে দিতেই দেখল আরশের উঠে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখের অবস্থা রাগে বেহাল! নুসরাত পাত্তা দিল না! আরশের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করল,”মিস্টার আরশ! কোনো সমস্যা?
আরশ কেশে গলা স্বাভাবিক করে নিল। নুসরাতের দিকে তাকিয়ে নাক ফোলাল। অসভ্য মহিলা তার নাম ধরে ডাকছে। স্বামীর নাম ধরে ডাকে, কোনো লজ্জা শরম নেই! আবার দাপুটে চোখে তাকায় জামাইয়ের দিকে। জামাইয়ের দিকে তাকাবি নির্মল চোখে তা না করে তাকায় চোখ ছোট ছোট করে। জামাই থাকতে আরেক বেটার সাথে তোর আবার কিসের ফিসফিসানি! থাপড়ে লাল নীল করে দিব। আরশের চিন্তার ব্যাঘাত ঘটল কর্কশ গলার স্বরে।
“মিস্টার আরশ বসছেন না কেন? এরকম খুটির মতো সবার মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? এনি প্রবলেম? ওয়াশরুমে যাবেন, গেলে যেতে পারেন। আমরা আপনার জন্য অপেক্ষা করছি ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না, আপনি ওয়াশরুম থেকে না ফিরছেন!
কনফারেন্স রুমে উপস্থিত সবাই ঠোঁটে হাত চেপে হেসে উঠল। আরশ পঁচিশ বছরের রমণীটির দিকে তাকিয়ে রইল। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধীরে ধীরে নিজ আসনে বসে গেল। আরশ বসতেই নুসরাত উঠে দাঁড়ালো! নিজের কোট খুলে চেয়ারের হাতলে রাখল। টাই টেনে লোজ করে নিল।
“সবাইকে জানাই স্বাগতম আজকের কনফারেন্সে। আমাদের বিজনেসের নিউ আরেকটা ব্রাঞ্চ লঞ্জ হতে যাচ্ছে তারই জন্য আপনাদের এখানে ডাকা হয়েছে। আপনারা সবাই আপনাদের বক্তব্য রেখেছেন সবার বক্তব্য ও আলাদা ধরণের। আমার সেগুলো পছন্দ হয়েছে বাট মিস্টার আরশের ফাইলের মধ্যে কিছু সংযোজন বিয়োজন করা প্রয়োজন। উনার ফাইলের মধ্যে অনেক ভুল রয়েছে।
আরশ নুসরাতের কথা শোনে মুখ কালো করে ফেলল। নুসরাত আরশের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে হেসে উঠল। সবাই হা করে তাকাল নুসরাতের দিকে। নুসরাত হাত মুখে রেখে হাসি আটকানোর চেষ্টা করে বলল,
” স্যরি পার্ট অফ এ্যা জোক! আপনাদের দেওয়া সবার ফাইলের মধ্যে আমার সবথেকে বেশি নজর কেড়েছে মিস্টার আরশের ফাইল। উনার ফাইলে কিছু ভুল আছে সেগুলো আমি মার্ক করেছি! এবং মিস্টার আরশ কে বলব অতি শীগ্রই যেন উনি এগুলো সংশোধন করে অফিসে জমা দেন। উনার আইডিয়া টা আমরা বিজনেসের ক্ষেত্রে খুব তাড়াতাড়ি ইউজ করব বড় স্যারদের সাথে কথা বলে।
আরশ ঢোক গিলল। এই মহিলা এক মুহুর্তের জন্য তার জান হাতে নিয়ে এসেছিল। আল্লাহ বাঁচাইছে আরেকটু লেট করলে তো সে নির্গাত অজ্ঞান হয়ে যেত। আজ বাড়িতে গিয়ে এই মহিলার একটা হেস্ত নেস্ত করবে। আরশ নুসরাতের দিকে তীব্র ক্ষোভ নিয়ে তাকিয়ে রইল। নুসরাত আড় চোখে লক্ষ করলো সবকিছু তারপর আরশকে ভেঙ্গিয়ে জিহ্বা বের করে হাসল।
আরশের জেলাসি পরিমাণ মাথা থেকে পা পর্যন্ত গিয়ে নামলো। এই মহিলা তার সাথে একটা হেসে কথা বলে না আর এখন শব্দ করে হাসা হচ্ছে আবার ওই আবিরকে উদ্দেশ্য করে মুচকি হাসা হচ্ছে। শুধু বাড়িতে যাই তারপর দেখাবো মজা! তুই আমার বাচ্চার মা না…
না, না ওসব বলা যাবে না। আমার একমাত্র বউ! আমার একটা মাত্র বাচ্চার মা।
ফ্রান্সে,
কলিং বেল বেজে উঠল। ইসরাত কিচেনে রান্না করছিল। হঠাৎ এই সময় কে আসলো এপার্টমেন্টে ভাবতে গিয়ে ইসরাতের কপালে ঘাঢ় ভাঁজ পড়ল। হাত টিস্যু দিয়ে মুছে নিয়ে সে অগ্রসর হলো দরজার সামনে। দরজার সামনে গিয়ে দেখল ইতিমধ্যে ঈশানী আর জোহান পৌছে গিয়েছে দরজার সামনে। দরজা ধরে ঝুলে আছে যাতে ইসরাত দরজা খুলার সাথে সাথেই তারা বের হয়ে যেতে পারে বাহিরে। ইসরাত দু-জনের মতলব বোঝল। ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে দু-জনের দু-হাত ধরে টেনে দরজার সামনে থেকে নিয়ে গিয়ে সোফার উপর বসিয়ে দিল। বসিয়ে দিয়ে দৌড়ে এসে দরজা আনলক করলো। বাহির থেকে দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল একটা মেয়েলি গোল গাল মুখ। তারপর হাত পা! ইসরাত তাড়াতাড়ি দরজা লাগিয়ে দিল। ঈশানী আর জোহান ততক্ষণে ঈগল পাখির মতো দৌড়ে আসলো দরজা দিয়ে বের হওয়ার জন্য। কিন্তু পারল না! জোহান হতাশা ধরে রাখতে না পেরে মাটিতে শুয়ে পড়ল। তারপর সেখানে শুয়ে চিকন গলা দিয়ে চিৎকার করে কান্না শুরু করলো। কান্না বললে ভুল হবে এমনি ভান করলো কান্নার! ইসরাত জোহানকে তুলার চেষ্টা করলো না। আঙুল দেখিয়ে বলল,”চুপচাপ উঠে বসো জোহান, এতো বেয়াদব কেন তুমি? কার মতো হয়েছ?
ইসরাতের কথা হয়তো বোঝল জোহান উঠে বসল চুপচাপ। চোখের কোণে জমা হওয়া পানি ছোট হাতের তালু দিয়ে মুছে নিল।
ইসরাত কিচেনে গেল তাড়াতাড়ি করে যাতে তরকারি পুড়ে না যায়! তরকারি নামিয়ে রাখল। চাল ধুয়ে বসিয়ে দিল গ্যাসে। কিচেন থেকে ইসরাত বের হয়ে দেখল ক্যামেলিয়া খেলা শুরু করেছে জোহান আর ঈশানীর সাথে। ইসরাত তাদের পাশ ঘেঁষে মেঝেতে বসল। বসতেই ঠান্ডা মেঝের ঠান্ডা সারা শরীর শিরশির করে উঠল। দৌড়ে গিয়ে হিটার অন করলো। জোহান আর ঈশানীকে সোফার উপর বসিয়ে দিল। ক্যামেলিয়া কে উদ্দেশ্য করে বলল,”ক্যামেলিয়া তুমি ও সোফায় বসো!
ক্যামেলিয়া শব্দ করে হেসে বলল,
“আমাকে ও কোলে করে নিয়ে সোফায় বসাও!
ইসরাত হেসে উঠল। ক্যামেলিয়া ধীরে ধীরে উঠে বসল সোফায়। ইসরাত ক্যামেলিয়াকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করল,” লিও কোথায়?
“রেস্টুরেন্টে!
” তুমি যাওনি?
“বোকা ইসরাত, রেস্টুরেন্টে গেলে এখানে আসতাম কীভাবে?
ইসরাত ও ক্যামেলিয়া সাথে তাল মিলিয়ে হাসল। জোহান আর ঈশানীর আবার ঝগড়া লেগে গিয়েছে। একজন আরেকজনের চুল ধরে টানছে। ইসরাত বিরক্তির চোখে দু-জনের দিকে তাকাল। আদেশ দিয়ে বলল,” চুল ছিঁড়ে ফেলতে চাও নাকি একজন আরেকজনের। ছাড়ো জোহান ওর চুল! আর ঈশানী তুমি ও ছাড়ো জোহানের চুল।
মায়ের ধমক খেয়ে দু-জন ঠোঁট উল্টে নিল। ঈশানীর এখনো কথা পরিষ্কার হয়নি কিন্তু জোহান যা শোনে তা শিখে যায়।
ক্যামেলিয়া হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“আন্টির কোলে আসো, জোহান।
জোহান কিছুক্ষণ ক্যামেলিয়ার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট টেনে কেঁদে দিল। ক্যামেলিয়া কোলে তুলে নিয়ে বলল,
” ওলে আমার বাবুটা! আন্টি আম্মুকে মারবে।
জোহান ক্যামেলিয়ার কাঁধে মাথা ফেলে বসে রইল। ক্যামেলিয়া পিঠে হাত বুলিয়ে দিল। জোহান মিনমিন করে বলল,”আন্তি, আন্তি, আন্তি!
ক্যামেলিয়া হা করে ইসরাতের দিকে তাকাল। ঈশানী মায়ের কাছে বিচার দিচ্ছে জোহানের। বিচার দেওয়ার ধরণ হলো, “মাম্মা ভাই, আই নাই নাই, ইন্গে ইন্গে!
ইসরাত হেসে গড়াগড়ি খেল। ঈশানীর কপালে চুমু দিয়ে বলল,” ঈশানী কি বলছ? কিছুই বুঝতে পারছি না।
ক্যামেলিয়া ইসরাতকে বলল,
“ও আমায় আন্তি ডেকেছে। তোমার পাকনা ছেলে যাই শুনে তাই শিখে যায়।
ইসরাত হেসে মাথা নাড়ালো। ক্যামেলিয়া কোলে নিয়ে জোহানকে হাঁটতে বের হলো বাহিরের দিকে। জোহান বাহিরে হাঁটতে যাওয়ার জন্য পাগল। ঈশানী গেল না! সে মায়ের সাথে এপার্টমেন্টে থেকে গেল। গল্প করলো নিজের ভাষায়। ইসরাত কথার কিছু না বোঝে শুধু মাথা নাড়ালো আর হেসে কুটিকুটি হলো।
কনফারেন্স রুম থেকে বের হয়ে নুসরাত নিজের কেবিনের দিকে গেল। তার পিছু পিছু আবির ও গেল। নুসরাত কেবিনের লক খুলে স্লাইডিং দরজা ঠেলে ঢুকে গেল। আরশের কেবিনের সাথে এটাচ করে নুসরাতের কেবিন।
নুসরাত কেবিনে ঢুকার কিছু মিনিট পর আরশ ও এসে ঢুকল কেবিনে রাগী মুখ বানিয়ে। কেবিনে ঢুকে মাথা আরো গরম হয়ে গেল যখন দেখল আবিরের সাথে মুচকি হাসি দিয়ে নুসরাত কথা বলছে।
আরশের পদচারণের শব্দ শুনে নুসরাত চোখ তুলে তাকাল। আবিরের দিকে তাকিয়ে আরশ বলল,” মিস্টার আবির মিসেস আরশের সাথে আমার কথা আছে আপনি একটু বাহিরে যান।
আবির নুসরাতের দিকে তাকিয়ে রইল। নুসরাত কিছু বলার আগেই আরশ আবার বলল,”আমি আপনাকে বাহিরে যেতে বলেছি না, তাহলে না গিয়ে এখানে বসে আছেন কেন? যান আবির।
আবির নড়ল না। আরশ জেলাসি সামলাতে না পেরে বলল,”গেট আউট। আই সে গেট আউট মিস্টার আবির। নাহলে আপনার সামনে আমি কিস করব আমার বউকে তখন বসে বসে দেখবেন আমাদের কিস করা।
নুসরাত ভয়ার্ত চোখে তাকাল আরশের দিকে। এই লোক পাগল না কি? এভাবে বলে মানুষ কে। আরশকে এগিয়ে আসতে দেখে নুসরাত বলল,”আবির পরে আমি তোমাকে ডেকে নিব এখন যাও!
আবির নুসরাতের কথা শুনে চলে গেল কেবিনের বাহিরে। আরশ আবিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিচ্ছিরি গালি দিল। বিড়বিড় করলো,”আমার বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকা বের করছি! আগে এটাকে একটা শিক্ষা দিয়ে নেই তারপর তোকে শিক্ষা দিচ্ছি শালা পাটকাঠি।
আরশ নুসরাতের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসলো। নুসরাতের চেয়ার ধরে টান মারতেই সেটা নিজ জায়গা থেকে চলে আসলো আরশের সামনে। আরশ বাঁকা হেসে ঝুঁকে গেল নুসরাতের দিকে। কপালে কপাল লাগিয়ে শ্বাস নিল। কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে বলল,”তোকে না করিনি ওই পাটকাঠির সাথে না থাকতে, তাহলে ওটাকে বিদায় করিস না কেন?
নুসরাত চুপচাপ তাকিয়ে রইল আরশের গালের দিকে। হাত বাড়িয়ে আলগোছে নখের ঢগা দিয়ে ছুঁয়ে দিল।আরশ চেয়ারের হাতল এক হাত দিয়ে চেপে ধরে নুসরাতসহ চেয়ার নিজের কাছে নিয়ে আসলো। দন্তের নিচে চাপলো পুরু ঠোঁট। গাল এক হাত দিয়ে চেপে ধরে বলল,”আচ্ছা যা বিদায় করার দরকার নেই, সারাদিনের মাঝে একটা চুমু খাসনি একটা চুমু খাই।
নুসরাত সচারাচরের মতো এবার ও আরশের কথার উত্তর দিল, “না।
আরশ জানতো এই উত্তর আসবে নুসরাতের কাছ থেকে। উত্তর আসতেই নুসরাতের মাথা চেপে ধরে নিজের ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে আসলো। নুসরাতের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকা করে হেসে ঠোঁট চেপে ধরল। এক্সিকিউটিভ চেয়ার দোলে উঠল আরশের আক্রমণে। চাকা বিশিষ্ট হওয়ায় পিছনের দিকে সরে গেল। নুসরাত ভারসাম্য বজায় রাখতে আরশের পিঠের কাছের শার্ট খামচে চেপে ধরল। আরশ নিজেও চেয়ারের সাথে পা মিলিয়ে পিছনের দিকে গেল তবুও ঠোঁট ছাড়ল না। এক্সিকিউটিভ চেয়ার চলতে চলতে গিয়ে দেয়ালের সাথে আটকে গেল তার সাথে আরশ ও আটকে গেল। নুসরাতের ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠল। নুসরাতের গালে শব্দ করে চুমু খেল। নাকের ঢগায় হালকা কামড় মারল। আরশ চোখ দিয়ে নুসরাতের উপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,”গুড রেসপন্স বউ! রাতে দেখা হচ্ছে।
আরশ দরজার দিকে ফিরে তাকাতেই দেখল ইরহাম হা করে তাকিয়ে আছে। নাক কুঁচকে নিল আরশ। ইরহামের উদ্দেশ্যে গালি ছুঁড়ে কেবিন থেকে বের হলো। দাঁতে দাঁত চেপে কিড়মিড় করে বলল,”তোর বউ নাই, যে মানুষের রোমান্সের সময় দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে হা করে থাকিয়ে তাকিস। তোকে লাস্ট বার বলছি ইরহাম আরেকবার যদি আমার রোমান্সের সময় দরজার সামনে এসে হা করে থাকিয়ে তাকিস তাহলে সারাজীবনের জন্য তোর ওই মুখ হা করে দিব। মানুষের রোমান্স লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার শখ মিটিয়ে দিব।
ফ্রান্স বিকেল পাঁচটা।
জোহান ইসরাত আর জায়িনের বিয়ের এলবাম পেটের সাথে চেপে ধরে টেনে নিয়ে এসে মেঝেতে বসল। ঈশানীকে ডাক দিল।
“ঈতানী! এই ঈতানী! মাম্মা, মাম্মা!
ইসরাত আর ঈশানী রুম থেকে বের হয়ে আসলো। স্বাস্থ্যবান শরীর নিয়ে আসতে গিয়ে ঈশানীর একটু বেগ পেতে হলো। তবুও আসলো! হাঁটতে গিয়ে উলটে পড়ে গেল। তারপর উঠে এসে জোহানের পাশ ঘেঁষে মেঝেতে বসল। ইসরাত হায় হায় করে উঠল। দু-জনকে টেনে নিয়ে গিয়ে সোফার উপর বসালো। জোহান এলবামের পাতা উল্টালো ছোটো ছোটো হাতে। মেহেদি অনুষ্ঠানের জায়িন আর ইসরাতের কাপল পিক দেখে জোহান চোখ ছোট ছোট করে তাকাল। আঙুল নিয়ে জায়িনের মুখের উপর রাখলো। ইসরাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,” মাম্মা, হুয়াই ডাডা লুকিং চো বিটিফুল।
ইসরাত তাকাল জায়িনের ছবির দিকে। থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর একটা কুঁচকানো টি-শার্ট পড়ে আছে। পায়ের সব লোম বের হয়ে আছে।
ইসরাত নাক ছিটকালো। ছবির উপর তর্জনী আঙুল রেখে বলল,”এটা সুন্দর ছবি। আর ডাডা কে কোন দিক দিয়ে বিটিফুল দেখাচ্ছে।
জোহান নাক ফুলিয়ে বলল,
“মাম্মা, ডাডা লুক বিটিফুল, বিটিফুল, বিটিফুল।
ইসরাত হার মেনে বলল,
” হ্যাঁ বাপ, তোমার বাপ বিটিফুল এবার মুখ বন্ধ করো।
ঈশানী হাত বাড়িয়ে এলবামের পাতা ছিঁড়ে দিতে চাইল। ইসরাত এলবাম নিয়ে গিয়ে কাবার্ডের ভিতর ঢুকিয়ে রাখলো। ড্রয়িং রুমে বসে জোহান বসে বসে চিৎকার করে বলছে,”ডাডা হুয়াই চো বিটিফুল? মাম্মা হুয়াই চো বিটিফুল? ঈতানী হুয়াই চো বিটিফুল? জোনাচ হুয়াই চো বিটিফুল?
সন্ধ্যা ছয়টা,
কিছুক্ষণ আগে নুসরাত, ইরহাম আর আরশ অফিস থেকে ফিরে আসছে। নুসরাত শাওয়ার নিয়ে বের হতেই আইজান এসে কোলে উঠে গেল। ছেলেকে কোলে নিয়ে নুসরাত ঠোঁট দাবিয়ে গালে চুমু খেল শব্দ করে।
আরশ মাথার নিচে দু-হাত রেখে বিছানা শুয়ে আছে। নুসরাত কে চুমু খেতে দেখেই বলল,”ওটাকে চুমু খেতে পারিস, আমি বললেই নাক ছিটকাস কেন? যেভাবে নাক ছিটকাস মনে হয় আমার চুমুতে জীবাণু আছে। অসভ্য, অভদ্র, বেডি মানুষ!
নুসরাত ভেংচি কেটে বলল,
“আপনারা কথা বলায়ি জীবাণু লাগানো আর চুমুতে জীবাণু না থাকা বিলাসিতা।
আরশ মিছিমিছি রাগী গলায় বলল,
” এই বেডি তুই কি বলতে চাস? আমার ঠোঁটে জীবাণু লাগানো, আমার সারা শরীরে জীবণু লাগানো। এতো বড় সাহস তোর! নুসরাতের বাচ্চা তোকে আমি ছাড়বো না।
নুসরাত পাত্তা দিল না আরশের কথা। আইজান কোল থেকে নামার জন্য মুচড়া মুচড়ি করতে দেখে কোল থেকে নামিয়ে দিল। আইজান রুম থেকে বের হয়ে গিয়ে সিঁড়ির কাছে টাঙ্গিয়ে রাখা ছবি নিতে চাইল। নাগালে পেল না! সৌরভি আইজানকে লাফালাফি করতে দেখে এগিয়ে গিয়ে নামিয়ে দিল ছবিটা। আইজান একবার সৌরভির দিকে তাকিয়ে হাতে ফটো টা নিয়ে বলল,”থ্যাংক্স ইউ!
সৌরভি আইজানের গালে চুমু খেয়ে বলল,
“ওয়েলকাম!
আইজান বিরক্ত হয়ে নাক ফোলাল। এই ছোট আম্মু শুধু সুযোগের অপেক্ষা বসে থাকে, তাকে চুমু খাওয়ার জন্য। নাক মুখ কুঁচকে নিজ থেকে বড় ছবিটা পেটের সাথে চেপে ধরে এগিয়ে গেল। হাঁটতে গিয়ে পড়ে যেতে নিল আবার নিজেকে সামলে আরশের রুমে গেল।
রুমে ঢুকেই ছবিটা মেঝেতে ফেলে দিল। ছবিটা উল্টে পড়ার জন্য কিছুটা শব্দ হলো। আরশ লাফ মেরে বিছানা থেকে নেমে ছবিটা হাতে তুলে নিল। বিছানার মাঝখানে রাখতে রাখতে বলল,” তোর মা বাপের এই একটা বিয়ের ছবি আর নেই! এটা ও ভেঙে ফেলতে চাচ্ছিস তুই।
আইজান আঙুল দেখিয়ে বলল,
“আব্বু দুইটা!
আরশ রাগী গলায় বলল,
” হ্যাঁ হ্যাঁ ওই দুইটা! একটা তে তো আমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম মাটিতে। আমার মুখ ঠিকভাবে দেখা যাচ্ছে না। আর দ্বিতীয়টা তে আমার মুখ দেখা গেলে ও তোর মা ভি কাট দিয়ে ছবিটা নষ্ট করে দিয়েছে। ছবিটা যখন টাঙ্গিয়ে রাখবে তখন আগে বলে দিল না কেন যে, টাঙ্গাবে। তাহলে ওই চেয়ার থেকে নিজের হাত ছুটিয়ে নিতাম।
আইজান মায়ের নামে বদনাম শুনে রাগ করে ফেলল। আরশের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,”আরুশ পোচা!
” হ্যাঁ হ্যাঁ আমি পচা আর তুমি আর তোমার মা ভালা!
আরশ গান গেয়ে উঠল,
“আমি তো ভালা না, ভালা লইয়া থাইকো।
নুসরাত কাপড় মেলতে ছাদে গিয়েছিল। আরশকে এসে গান গেইতপ দেখল। নুসরাতকে দেখতেই আরশ দু-হাত দিয়ে নুসরাতের গলা পেঁচিয়ে ধরে বিছনায় ফেলে দিল। গালে শব্দ করে চুমু খেয়ে জিহ্বা বের করে আইজানকে ভেঙ্গাল। বলল,” আমার বউ!
আইজান বিছানা বেয়ে উঠল। আরশের মুখে খামচি মেরে বলল,” আমাত আম্মা!
“তো কি হয়েছে? তোর আম্মা, আমার বউ!
” আমাত আম্মা!
“ভাগ গাধা! বাপ মাকে রোমান্স করতে দিস না, দেখিস তোকে ও আমি বিয়ে দিয়ে রোমান্স করতে দিব না।
আইজান রাগী চোখে তাকিয়ে আরশের বাহুতে কামড় মেরে ধরলো। আরশ আইজানের মাথা ঠেলে সরাতে সরাতে বলল,” মায়ের মতো রাক্ষস হয়েছে। কিছু হলেই কামড় মেরে ধরবে। এতো রাগ আসে কোথা থেকে?
আইজানের মাথা ধরে টেনে নিজের বুকের বাঁ-পাশে চেপে ধরলো। নুসরাত কে বুকের ডানপাশে চেপে ধরলো। আইজান মায়ের সান্নিধ্যে এসে আর নড়াচড়া করলো না। চুপচাপ মাথা ফেলে বাবার বুকের পড়ে রইল। আরশ নুসরাতের চুল ধরে টেনে বলল,”আইজানের বোন আসবে কবে?
“তেহবিনের বোনের প্রয়োজন নেই!
” কিন্তু, জোহানের তো বউয়ের প্রয়োজন!
“মানে কি?
” মানে হলো আমার বাচ্চা চাই! তোরা মা ছেলে আমার দুঃখ বুঝিস না। আমার বাচ্চা চাই! যেটা আমার দুঃখ বুঝবে।
“তাহলে এটা কার বাচ্চা?
“এটা তোর বাচ্চা!
আরশ নুসরাতের চুলে চুমু খেল। নুসরাত উঠে দাঁড়ালো। আরশ ও নুসরাতের সাথে উঠে দাঁড়ালো। কোলে তুলে নিল আইজানকে। নুসরাতের হাত চেপে ধরে বলল,”চল, আজ শীত বিলাস করি! বাহিরে যাব!
নুসরাত দাঁড়িয়ে রইল এক জায়গায়। আরশ ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই নুসরাত বলল,”গরম কাপড় নেই!
“শীত বিলাস করতে গরম কাপড়ের কোনো এন্ট্রি নেই। শীত বিলাস যখন নাম দিলাম তাহলে শীত উপভোগ না করলে কি শীত বিলাস হবে? আর এটাকে রেখে যাই!ও কাবাবে হাড্ডি হচ্ছে! আমার আর আমার বউয়ের মাঝখানে তোকে রাখবো না।
আইজান আরশের গলা পেঁচিয়ে ধরলো। আরশ হেসে বলল,” তোকে রেখে যাচ্ছি না বাপ আমার, গলা পেঁচিয়ে ধরতে হবে না।
আইজান গলা ছাড়লো না। আরশ দু-জনকে শীতের মধ্যে টেনে নিয়ে গেল বাহিরে। নাজমিন বেগম পিছন থেকে ডেকে বললেন,”গরম কাপড় নিয়ে যাও!
আরশ হাত নাড়িয়ে না করে দিল। পিছনে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করলো না। বাহিরে আসতেই শীত এসে চেপে ধরলো। চারিপাশ কুয়াশার আধারে ঢেকে আছে। আরশ আইজানকে উদ্দেশ্য করে বলল,”আমার মতো হবি না আব্বা, তাহলে তোর মায়ের মতো দজ্জাল মহিলা কিডন্যাপ করে বিয়ে করে নিবে। প্রয়োজন হলে তুই উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করিস তবুও চরিত্রে বাপের মতো এই দাগ লাগতে দিস না।
নুসরাত আরশের পিঠে থাপ্পড় মারল। আরশ হেসে নুসরাতের পিঠ এক হাত দিয়ে পেঁচিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
আইজান কি বুঝল আরশের কথা খিলখিল করে হাসল? নুসরাতের দিকে তাকাতেই দেখল নুসরাত ও হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। আইজান লজ্জা পেয়ে আরশের মুখে থাপ্পড় মেরে মুখ লুকালো আরশের ঘাড়ে। আরশ আইজানকে নিচে নামিয়ে নুসরাতকে জড়িয়ে ধরলো।
আইজান বিরক্তির চোখে তাকিয়ে রইল আরশের দিকে। আরশ আইজানকে দেখিয়ে গালে শব্দ করে চুমু খেল। আইজান রাগে ঠোঁট টেনে কেঁদে উঠল। আরশ হেসে মাটিতে বসে গেল। নুসরাতের ও হাত টেনে মাটিতে বসিয়ে দিল। আইজানকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো আরেক-হাত দিয়ে নুসরাত কে। নুসরাত আর আরশ বসে যাওয়ায় আইজান দাঁড়িয়ে থেকে দু-জনের কাঁধের কাছে আসলো। আরশ নুসরাতের কপালের সাথে নিজের কপালের এক পাশ আর আইজানের কপালের সাথে নিজের কপালের আরেক পাশ লাগিয়ে নিল। ফিসফিস করে বলল, “আমার দুই সুখ পাখি!
আরশের কথা শেষ হতেই মা ছেলের হাসির ঝংকার ভেসে আসলো। আরশ নুসরাতের উদ্দেশ্যে বলল,
” প্রিয় প্রণয়িনী, আমার চোখে দেখা দ্বিতীয় সুন্দরী নারী তুই।
আইজান আরশের সাথে বলল,
“আমাত দেখা সবথেকে চুন্দরী নারী আম্মা!
তারপর বাপ ছেলে দু-জন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল। আইজান বাপের গালের সাথে গাল লাগিয়ে উম্মাহ বলল। আরশ হাসল!
নিস্তব্ধ রজনী। দুই মানব-মানুবীর হাসির ঝংকার আসলো সাথে আসলো একটা বাচ্চা শিশুর খিলখিল হাসির ঝংকার। গাছে বসে থাকা নিশাচর প্রাণি গুলো উড়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল পাখিগুলো ওই দূর আকাশে। চাঁদটা ধীরে ধীরে নিজের জায়গা থেকে সরে গেল। পূর্ণ চাঁদটা ঢেকে গেল মেঘের আড়ালে। প্রকৃতির নিয়ম ভেঙে মেঘের গর্জন শুরু হলো। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মাটিতে পতিত হতে লাগলো। গম্ভীর কন্ঠে কেউ গেয়ে উঠল,
“You’re the light, you’re the night
You’re the color of my blood
You’re the cure, you’re the pain
You’re the only thing I wanna touch
Never knew that it could
mean so much, so much
ফ্রান্স রাত ১০ টা।
বাহিরে স্নোনফল হচ্ছে। এই বছর একটু বেশি ঠান্ডা পড়েছে অন্য বছরের তুলনায়। জোহান কান্না করছে ইসরাত কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। জায়িন ঈশানী কে ঘুম পাড়াচ্ছে। কিছুক্ষন পর, ঈশানী আর জোহান ঘুমিয়ে পড়ল। জায়িন বাহিরে তাকিয়ে দেখল এপার্টমেন্টের পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া রাস্তা সাদা হয়ে আছে স্নো পড়ে।
দু-জনকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে জায়িন ইসরাতের হাতে টেনে ধরল। ইসরাত ভ্রু উঁচিয়ে তাকাতেই জায়িন ঠোঁটে হাত রেখে বলল,”চুপচাপ আসো!
ইসরাত কথা বাড়ালো না। জায়িনের সাথে পা মিলিয়ে এপার্টমেন্টের বাহিরে আসলো। রাস্তায় বের হতেই শীতল বাতাস এসে গা ছুঁয়ে গেল। জায়িন ইসরাতকে টেনে নিজের চাদরের নিচে নিয়ে আসলো। এক হাত দিয়ে ইসরাতের বাহু চেপে ধরে হাঁটতে লাগলো।
শীত কাল হওয়ায় গাছের পাতা পড়ে গিয়েছে। বসন্ত আসার সাথে সাথে গাছ গুলো বসন্তের রঙে রঙিন হবে। গাছে নতুন পাতা গজাবে। গাছ সাদা তুষারে ঢেকে আছে। রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা গাড়িগুলো সাদা বর্ণের ধারণ করেছে। কিছুক্ষণ চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটল। জায়িন তাকাল ইসরাতের দিকে। ল্যাম্পপোস্টের গোলাটে আলোয় মুখ দেখতে কিছুটা হলুদ বর্ণের লাগছে। নিস্তব্ধ পরিবেশ ভেঙে জায়িনের গম্ভীর গলার স্বর ভারী শোনালো।
“ধন্যবাদ ম্যাডাম আমার জীবনে আসার জন্য।
ইসরাত ভ্রু উঁচিয়ে তাকাতেই জায়িন বলল,
” না, তোমাকে ধন্যবাদ দেওয়া ঠিক না রেই, ধন্যবাদ দেওয়া উচিত আসলে মিসেস আজমল আলীকে।
ইসরাত হাসল! জায়িন ও মুচকি হাসি হাসল।
“কেন? দাদিকে কেন ধন্যবাদ জানাবেন?
” কারণ উনার জন্যই আমাদের বিয়ে হলো আর বাচ্চা ও হলো।
ইসরাত হেসে বলল,
“ঠিক বলেছেন!
” তাহলে দেশে ফিরা হচ্ছে কবে?
“ঈশানী আর জোহান আরো কিছুটা বড় হোক তখন।
জায়িন হেসে পিচঢালা রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে গেল। ইসরাতকে ইশারা করে বলল,” এই যে ম্যাডাম,
ইসরাত তাকাতেই দেখল জায়িন রাস্তার মধ্যে পড়ে থাকা স্নো ফলের মধ্যে ইসরাত লিখে তার পাশে প্লাস দিয়ে জায়িন লিখল। লাভ দিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ করে নিল দু-জনের নাম।
ইসরাত মুচকি হাসল। জায়িন উঠে দাঁড়িয়ে ইসরাতকে আবার টেনে চাদরের ভিতর ঢুকিয়ে নিল। শীতের জন্য ইসরাতের গাল গুলো লাল হয়ে গিয়েছে। ঠান্ডা বাতাসের জন্য চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। জায়িন হাত বাড়িয়ে গাল টেনে দিল। চোখের পানি ও মুছে দিল। ফিসফিস করে বলল,”আমার লাল টমেটো!
ইসরাত জায়িনের কথা শোনে লজ্জা পেয়ে হেসে উঠল। দু-জনে হাঁটা ধরলো গন্তব্যহীন পথে সামনের দিকে। রাতের নিস্তব্ধতা ছিঁড়ে গম্ভীর কন্ঠে ভেসে আসলো,
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৯
❝এই নশ্বর পৃথিবীতে, ভালোবাসা নশ্বর।
তুমি না হয় আমার মায়া হয়ে থেকে যেও,
হৃদ গহীনে অবিনশ্বর আমার
প্রিয় প্রণয়িনী ❞