প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ১৯
জান্নাত নুসরাত
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি থেমেছে অনেক আগে। আকাশ এখনো মেঘের আড়ালে ঢাকা। হয়তো আবার সন্ধ্যার আগে বৃষ্টি হবে। নুসরাত ইরহামের সাথে কাঁধ মিলিয়ে বাহিরে বের হতে হতে আড় চোখে তাকাল গ্যারেজের দিকে। ইরহামের তাড়ায় পেছনে ভালো করে দেখতে পারল না। দ্রুত পা চালিয়ে সামনে যেতে যেতে নুসরাত ইরহামকে জিজ্ঞেস করল,”কোথায় যাচ্ছি আমরা?
ইরহাম মৃদু স্বরে আওড়াল,
“গেলেই দেখতে পাবি।
রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটার সময় স্যাঁতস্যাঁতে পানির স্পর্শ পাওয়া গেল। নিজের থেকে দু-ইঞ্চি লম্বা জুতো কাদার সাথে মিলে মিশে একাকার হলো। হাঁটু পর্যন্ত লম্বা হোয়াইট কালার হ্যালো কিট্টির টি-শার্টের ও কাদা লাগল। নুসরাত এক হাত দিয়ে নিজের কাপড় থেকে কাদা ঝেড়ে ফেলতে ফেলতে জিজ্ঞেস করল,” এক্সেক্ট বল কোথায়?
ইরহাম কথা বলল না। তাই নুসরাত ইরহামের দিকে কপাল কুঞ্চিত করে তাকাল।। ইরহামের চোখ অনুসরণ করে সামনের দিকে তাকাতেই অজানা ভয়ে ভেতরে কিছু একটা শঙ্কিত হলো। সৌরভিকে বারান্দায় দাঁড়ানো দেখে হা করে ওইদিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইরহাম। নুসরাত ইরহামের হাত চেপে ধরতেই কেঁপে ওঠল পুরুষালি শক্ত সামর্থ শরীরটা। নুসরাতকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকে অবলোকন করতে দেখে চোখ সরিয়ে নিল। আশেপাশে চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে হাঁটতে নিবে নুসরাত শক্ত করে হাত চেপে ধরল। ইরহাম পিছু ফিরে ভ্রু বাঁকাতেই, নুসরাত ঠোঁট কামড়ে, মলিন কন্ঠে নিষেধাজ্ঞা জারী করল,”মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল ইরহাম। ও তোর কখনো হবে না। আবেগ হোক আর গভীর কোনো অনুভূতি হোক বাড়ার আগে সরিয়ে ফেল। নাহলে ভবিষ্যতে তোকে কষ্ট পেতে হবে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
ইরহাম কথা বলল না। চুপচাপ হেঁটে সামনে অগ্রসর হলো। নুসরাতের হাত তখনো তার হাতের মুঠোয়। নুসরাতকে হাঁটতে না দেখে ইরহাম জোরে টান দিল। নুসরাত হুমড়ি খেয়ে সামনে আসতেই, ইরহাম নিজের বাহুতে নুসরাতকে নিল। নুসরাতের চোখের দিকে হালকা ঠোঁটে হাসি আনল। মোলায়েম কন্ঠে নিজের সাফাই গাইল,”সেরকম কিছু না।
নুসরাত নিজেও শক্ত কন্ঠে বলল,
“নাহলেই সবার জন্য মঙ্গল। বিশেষ করে তোর জন্য।
এই একটু পথ আসতে আসতে নুসরাতের পায়ের গোড়ালি, টিশার্ট, জুতো সব কাদার সাথে মাখামাখি খেল। ফুটবল খেলার মাঠে পৌঁছাতেই ঝুঁকে কাপড় পরিস্কার করতে লাগল। ঠোঁট কামড়ে মুখ দিয়ে ‘চ’ সূচক শব্দ উচ্চারণ করে সে।
নিজের পেছনে কারোর উপস্থিতি পেয়ে মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই চোখাচোখি হলো দুটো কালো মণির মালিকের চোখের সাথে। ম্যানলি মাস্কি পারফিউমের সুগন্ধি নাক চিড়ে ভেতরে প্রবেশ করল। কানে আসলো পুরুষালি গম্ভীর স্বর,”মিসেস..!
নুসরাত চোখ সরিয়ে নিয়ে ঝটপট আরশের থেকে দু-পা পেছনে সরে গেল। আরশকে সেখানে দাঁড়ানো দেখে কোনো ভাবাবেগ হলো না তার। স্থির দাঁড়িয়ে থাকল নিজের জায়গায়। আরশ গম্ভীর গলায় শুধাল,”ভয় করছে না?
নুসরাতের নিরুদ্বেগ গলায় প্রশ্নের উত্তর আসলো,
“না।
আরশ সঠান হয়ে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত ঢোকাল আরাম করে। ঠোঁট বাঁকাতেই পুরুষালি ক্লিন সেভ এক গালে গর্তের সৃষ্টি হলো। নুসরাতের দিকে নির্বিঘ্নে এক পা দু-পা করে এগিয়ে গিয়ে একদম সন্নিকটে দাঁড়াল। নিজেদের ভেতরের শরীরের দূরত্বটুকু মেটাল না। কানের কাছে ঠোঁট নামিয়ে ফিসফিসে আওয়াজে জিজ্ঞেস করল,” কষ্ট হয়নি মিসেস?
নুসরাত নির্বিকার চিত্তে চেয়ে রইল। প্রখর গরম শ্বাস ফেলে, নির্লিপ্ত কন্ঠে উত্তর দিল,”একদম না। বুকের বাঁ-পাশে আলাদা এক ঠান্ডা নেমে এসেছিল, আপনাকে কষ্ট পেতে দেখে।
গম্ভীর গলায় আরশ হাসল। নিজেদের ভেতরে দূরত্ব বাড়াতে সরে গেল নুসরাতের থেকে। নুসরাতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে মন ভুলানো হাসি দিল। ইরহাম নুসরাতের পাশে দাঁড়িয়ে চুপচাপ সবকিছু লক্ষ করছিল। আরশ হঠাৎ নুসরাতকে সামনের দিকে ইশারা করল তাকানোর জন্য। নুসরাত কপালে ভাঁজ ফেলে সামনে তাকাতেই চোখে ভেসে ওঠল নিজের অতি প্রিয় বাইক। দ্রুত পদক্ষেপে পা বাড়াবে সেদিকে আরশ হাত ধরে থামিয়ে দিল তাকে। নুসরাত ভ্রযুগল কুঞ্চিত করতেই, আরশ ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে নিজের পকেট থেকে দিশলাই বের করে ছুঁড়ে মারল বাইক যেখানে রাখা ওখানে। কেরাসিন ঢালা ছিল বাইকের চারপাশে, সামান্য আগুনের সংস্পর্শে দপদপ করে লাল শিখার লেলিহান রশ্মি দাবালনের মতো জ্বলে ওঠল চারিদিকে। নুসরাত স্থির চেয়ে রইল আগুনের ভেতর পুড়তে থাকা বাইকের দিকে। বুকের ভেতর মুচড়ে ওঠল। ঢোক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার বৃথা চেষ্টা করল। আরশের দিকে চাইতেই আরশ ঠোঁট কামড়ে হাসল। নুসরাত নিজেও হাসল। বুকের বাঁ-পাশে হাত চেপে ধরে ফিসফিস করে আওড়াল,”উপস, কষ্ট পেলাম কাজিন ব্রাদার!
আরশের দিকে এগিয়ে আসলো নুসরাত মুখে হাসি ঝুলিয়ে। হাত তুলে আরশের সাদা শার্টের কাঁধ ঝেড়ে ময়লা পরিস্কার করে দিল। বুকের যেখানে গুলি করেছিল সেখানে হাত রেখে মুখ ব্যথাতুর করে দুঃখ প্রকাশ করল। ওই জায়গায় আঙুল স্থির রেখে ফিসফিস করে বলল,”কাজিন ব্রাদার, ওইদিকে দেখুন।
আরশ নুসরাতের ইশারা অনুযায়ী নিজের বিপরীত পাশে চোখ ফিরাতেই অক্ষিকোটরে ভেসে ওঠল ব্ল্যাক কালারের মার্সিডিজ বেঞ্জ । চোখ গাড়ির উপর থেকে সরানোর আগেই তাতে দপদপ করে আগুন ধরতে লাগল। দু-পাশের আগুনের শিখা এতো তাড়াতাড়ি বাড়তে লাগল দেখে মনে হলো নিমেষে তা আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে। নুসরাত আরশের বুক থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে কাঁধ থেকে আবারো ময়লা ঝেড়ে নেওয়ার মতো করল। পুরুষালি চোখ জোড়া এখনো নিবিষ্ট দূরে নিজের গাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখতে। বিস্ময়ে পুরুষালি আঁখিযুগল কোটর থেকে বের হওয়া শুধু বাকি।
নুসরাত আরশের বলিষ্ঠ হাত জোড়া নিজের হাতের মুঠোয় তুলে নিল। নিজের ভেতরে প্রশ্ন জাগল, বেটা কী দুঃখে অজ্ঞান হয়ে যাবে, নাকি ধুপ করে মাটিতে পড়ে কান্নাকাটি করবে। তারপর আবার নিজেকে শুধরে দিল, এই বেটা হৃদয় এত দূর্বল না, যে অজ্ঞান হয়ে যাবে,আর কান্নাকাটি করবে মাটি চাপড়ে।
আরশের অন্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে নুসরাত তার হাত থেকে কালো বেল্টের রোলেক্স সাবমেরিনের ঘড়িটা আলগোছে খুলে নিল। হাতে নিয়ে তা ভালো করে উল্টেপাল্টে দেখল। নিজের কাছে মনে হলো একটা অকেজো জিনিস। ঠোঁট চোখা করে সেটা কিৎকাল অবলোকন করল, যদি বিশেষ কিছুর সন্ধান পায়। কিন্তু কোনো কিছুর সন্ধান না পেয়ে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে অনিহা নিয়ে ঢিল মেরে তা ও আগুনের শিখার মধ্যে ফেলে দিল।
আরশ হতবিহ্বল চাহনি নুসরাতের দিকে নিক্ষেপ করল। পুরুষালি শক্ত, রাগী চোখের চাহনি নিজের উপর উপনব্ধি করে, নুসরাত বোকার মতো আরশের পানে চাইল। এমন ভাব নিল যে, সে কিছুই বুঝে না। এখানেই কী হচ্ছে তা তার মতো বাচ্চার বোঝার বাহিরে। নুসরাত আরশের থেকে দূরে সরে যেতে যেতে আওড়ায়,”আশা করি আজকে রাতে অনেক ভালো ঘুম হবে মিস্টার ব্রাদার।
নুসরাত এই কথাটুকু শেষ করে নিয়ে পা বাড়াল বাড়ির দিকে। ইরহামকে বগলদাবা করে যখন সামনে অগ্রসর হলো তখন নাকের পাটা ফুলিয়ে কিড়মিড়িয়ে বলল,”বাড়িতে পৌঁছাতে দে শালা সাউয়া, তোর ব্যবস্থা আমি নুসরাত নাছির নিচ্ছি।
ইরহাম নিষ্পাপ কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“আমি কী করছি বোন? আমার উপর রাগ করছিস কেন?
নুসরাত ইরহামের কাঁধে নিজের চোখ চেপে ধরে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে প্রশ্ন করল,”তুই কী করেছিস জানিস না? শাআলা!!
ইরহামের দু-পাশে মাথা নাড়াল না ভঙ্গিতে । বোঝাতে চাইল সে জানে না, কী করেছে! নুসরাত ইরহামের পিঠে দুটো কিল বসিয়ে দু-হাতে জড়িয়ে ধরল ইরহামের পিঠ। জড়িয়ে ধরে ঢুলে ঢুলে সামনের দিকে অগ্রসর হলো। গভীর শোকে আহত প্রাণির ন্যায় হাঁটল ইরহামের উপর ভর দিয়ে। হাঁটার ভঙ্গি দেখে মনে হলো এক্ষুণি মাটিতে লুটিয়ে পড়বে।। চোখের ভেতর পানি টলমল করল গড়িয়ে পড়ার জন্য। নুসরাত চোখের পাপড়ি ঝাপটাল। চোখের পাপড়ি ঝাপটানোর ফলে জলদ্বারা নিমেষে উধাও হয়ে গেল অক্ষিকোটরে। ইরহাম নুসরাতের পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,”এ্যা কাঁদে না, কাঁদে না আমার বুড়ো বাচ্চা। এ্যা কাঁদে না, কাঁদে না..!
নুসরাত নিজের আবেগ সামলে ইরহামের পিঠে হাত রেখে নাকি স্বরে বলল,”আমি কাঁদছি না।
দু-জন যখন দুঃখে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে মাঠ ছেড়ে চলে গেল তখন আরশের রাগের বিস্ফোরণ ঘটল মাহাদির উপর। মাহাদি ঠোঁট টিপে হেসে বলে ওঠল,”যাই বলিস আরশ, আমি যদি তোর বউটার দেখা আগে পেতাম, বিশ্বাস কর ভাই, তুই বিয়ে করার আগে আমি কিডন্যাপ করে তোর বউকে বিয়ে করে নিতাম।
কথা শেষ করে আরশের দিকে চোখ রাখতেই মাহাদি দু-পাশে মাথা নাড়িয়ে না করল সে এটা বলতে চায়নি, মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে। ঠোঁট দু-হাতে চেপে ধরল। উপলব্ধি হলো ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে। যতক্ষণে পালানোর চিন্তা মাথায় আসলো, ততক্ষণে তার কলার আরশের হাতের মুঠোয় চলে গেছে। আরশ রাগী চোখে চেয়ে, দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে জিজ্ঞেস করল,”আমার বউকে বিয়ে করে নিতি?
মাহাদি দু-পাশে মাথা নাড়াল। অপরাধীর মতো মুখ বানিয়ে উত্তর দিল,”মজা করছিলাম ভাই।
আরশ মাহাদির কলার টেনে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। কলারে ধরা হাত ধীরে ধীরে আরো বেশি জোরালো হলো। দাঁতে দাঁত চেপে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে ওঠল,”কিন্তু আমি তো এটা সিরিয়াস নিয়ে নিয়েছি। এখন কী হবে?
বাড়ি ফিরেই নুসরাতের কান্নাকাটি শুরু হলো। যেরকম সেরকম কান্না নয় সোফার মধ্যে মুখ চেপে কান্না। কোনো শব্দ হলো না। সবাই শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখল। ইরহাম সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য পিঠে হাত বুলিয়ে নিয়ে বলে ওঠল,”হয়েছে, আর কান্নাকাটি বন্ধ কর।
নুসরাত ইরহামের সান্ত্বনা বাণী কানে তুলল না। নিজের গা থেকে ইরহামের হাত সরিয়ে ঝাড়ি মেরে বলল,”তোর পশ্চাৎদেশে লাত্তি মেরে এখান থেকে বের করার আগে, তুই ভালোয় ভালোয় বের হয়ে যা।
নুসরাতের কথায় ইরহাম কিছু মনে করল না। ঠোঁট ফুলিয়ে শ্বাস ফেলল। নুসরাতকে একা থাকার সুযোগ করে দিয়ে, দো-তলায় মমোর সাথে কথা বলতে চলে গেল।
সন্ধ্যাবেলা নাছির সাহেব জরুরি তলব দিলেন নুসরাতকে। না চাইতেও নুসরাতকে মুখ ফুলিয়ে ওঠে আসতে হলো সেখান থেকে। সোফায় অনেকক্ষণ মুখ চেপে ধরে রাখায় মুখে লাল লাল দাগ পড়ে গেছে। চোখগুলো কান্নার জন্য লাল হয়ে টইটম্বুর হয়ে আছে। কারোর সাথে বাক্য ব্যয় করল না, সবাইকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল দো-তলায়।
নাজমিন বেগম নুসরাতকে মুখ ফুলিয়ে চলে যেতে দেখে ইসরাতের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছে? চোখগুলো ওরকম হয়ে আছে কেন?
ইসরাত দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। ধীরে ধীরে বলে ওঠল,
” ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে তাই মুখ ফোলাচ্ছে।
নাজমিন বেগম মাথা নাড়ালেন। কিচেনে যেতে যেতে ইসরাতকে ও ইশারা করলেন চলে যাওয়ার জন্য।
ইসরাত চলে যেতেই নিজের ফোন কিচেন কাউন্টার থেকে নিয়ে কল করলেন লিপি বেগমকে। প্রথম রিং হতেই কল পিক করে ফেললেন তিনি। নাজমিন বেগম বললেন,”হ্যালো! আপা?
লিপি বেগম নিজেও ঝটপট উত্তর দিলেন,
“হ্যাঁ আমি, তোকে ফোন দিতেই যাচ্ছিলাম। এর মধ্যে দেখি তুই ফোন দিয়ে দিয়েছিস।
নাজমিন বেগমের কপালে ভাঁজ পড়ল। ঠোঁট টিপে চিন্তিত গলায় শুধালেন,” কিছু কী হয়েছে আপা?
লিপি বেগম উত্তর দিলেন,
“তেমন কিছু না। আরশ একটু রাগ করেছে।
লিপি বেগম একটু সময় থেমে শুধালেন,
” তোর ওখানে কোনো সমস্যা হয়েছে?
নাজমিন বেগম হালকা হাতে কপাল টিপে উত্তর দিলেন,”আপা, আমার মনে হচ্ছে আরশ আর নুসরাত মিলে কিছু একটা করেছে।
লিপি বেগমের কপালে গাঢ় ভাঁজ পড়ল। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলে ওঠেন,”আমার ও মনে হচ্ছিল। রাগে হিসহিস করছিল। আর মাহাদির ও…
কথাটা বলতে বলতে থেমে গেলেন। হেলাল সাহেব ওনাকে ডাকছেন পেছন থেকে। লিপি বেগম প্রতিত্তোরে আসছি বললেন। নাজমিন বেগমের উদ্দেশ্যে মলিন গলায় বললেন,”তোকে পরে ফোন দিচ্ছি মেজ, আর একটা কাজ করিস নুসরাতের উপর নজর রাখিস আর আমি আরশের উপর নজর রাখব। আমারটার মতিগতি ঠিক লাগছে না। কখন কী করে বসে থাকে, তা বলা যায় না! তোর ভাই ডাকছে, পরে কথা বলব নাজমিন।
নাজমিন বেগম ঠিক আছে বলতেই লিপি বেগম তাড়াহুড়ো করে ফোন কেটে দিলেন। মোবাইল হাতে রেখে এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে চিন্তা করতে লাগলেন। আকস্মিক মাথায় আসলো আপা মাহাদির কথা কিছু একটা বলছিলেন, ওর কী হয়েছে?
নাছির মঞ্জিলে আবারো গভীর সভা বসেছে। গভীর সভায় কোনো কথা হচ্ছে না নিশ্চুপ বসে সবাই প্রহর গুণছে। ইসরাত ঘড়ির পানে একবার চেয়ে সময় দেখে নিল। সন্ধ্যা ছয়টা পঞ্চাশ। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে টেবিলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। যা বুঝল আজ এভাবেই বসে থাকতে হবে। নুসরাত কিছু একটা আঁকাআঁকি করছে এ-ফোর-সাইজের পেপারে। ইসরাত উঁকি দিয়ে দেখতে চাইল তা, তার আগে নুসরাত আতঙ্কিত হাতে লুকিয়ে ফেলল কাগজ নিজের হাতের মুঠোয়। ইসরাত এক ভ্রু উঁচু করে বোনের উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুঁড়ল,”ওসব কী!
নুসরাত না বোঝার ভান করল। ফিসফিসিয়ে শুধাল,”কী-সব কী?
ইসরাত কথা বাড়াল না। চুপটি করে বসে রইল। বাহির থেকে ইন্টারকম বাটনে চাপ দেওয়ায় বেল বেজে ওঠল। ইসরাত ওঠে দেওয়ালের কাছে গেল। ইন্টারকম হ্যান্ডপিস হাতে নিয়ে কানে লাগাতেই জায়িনের মোলায়েম কন্ঠ ভেসে আসলো,”ইজ এনিওয়ান লিসেনিং?
ইসরাত মৃদু আওয়াজে উত্তর দিল,
“জি শুনছি।
জায়িন গলা খাঁকারি দিল। মৃদু কন্ঠে বলল,
“গেট খুলুন ইসরাত। আমরা দাঁড়িয়ে আছি।
ইসরাত দেয়ালে মাউন্টেড ইন্টারকম হ্যান্ডসেট লাগিয়ে রাখল। ঠোঁট টিপে কিছু বলার পূর্বে দেখল নাছির সাহেব আর নুসরাত দু-জন একসাথে বসে মোবাইলে কিছু একটা করছে। সে এগিয়ে যেতেই দেখল দু-জন বাড়ির বাহিরের সিসি ক্যামেরা চেক করছে। আরো একটু কাছে যেতেই দেখল নুসরাত ফিসফিসিয়ে বলছে,” আব্বা এত কম জিনিস নিয়ে এরা কী করতে আসছে? একবার দেখুন মাত্র বিশ প্যাকেট মিষ্টি আর শুধু ফল চার পাঁচ জাতের। এই ঘরে যে এত মানুষ আছে তারা কী জানে না?
ইসরাত পেছন থেকে তেরছা স্বরে বলে ওঠল,
“মাত্র চারজন মানুষ, এত বেশি তো না।
নুসরাত বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে ফেলল। অভিযোগ করার মতো করে বলল,” উফ আব্বা, এই মেয়েকে সরান। এর জন্য আমি ঠিক মতো মানুষের ব্যাপারে কথা বলতে পারিনা।
ইসরাত নুসরাতকে ঠিক করে দিয়ে বলল,
“ওইটা কথা বলা বলে না, মানুষের পিঠ পিছে তার নামে পরনিন্দা করা বলা হয়।
” যা আমরা পরনিন্দা-ই করলাম, তোর এখানে কী? যা তোর শশুর আর আব্বার শ্রদ্ধেয় ভাই এসেছেন তাদের আপ্পায়ন কর।
ইসরাত ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। কোমরে এক হাত চেপে ধরে বলল,”ফর ইউ্যের কাইন্ড ইনফরমেশন, আমার একার শশুর নয় আপনার ও শশুর উনি।
নুসরাত কাঁধ ঝাঁকাল। অবজ্ঞা করল ইসরাতের কথা। মৃদু আওয়াজে হাসতে হাসতে বলে ওঠল,”আপনার শ্রদ্ধেয় শশুর অনেক আগে আমাদের ডিভোর্সের ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। তাই এই বিয়ে বেশিদিন স্থায়ী হবে না, আর উনি ও আমার শশুর থাকবেন না। হা হা..!
নাছির সাহেব নুসরাতের কথায় সহমত পোষণ করলেন। ইসরাত তীক্ষ্ণ কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,”তাহলে তুই কী আর বিয়ে করবি না?
নুসরাত শ্রাগ করল। ঠোঁট কামড়ে হেসে ওঠল। ভ্রুক্ষেপহীন গলায় প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করল,”তোকে বলেছি আমি বিয়ে করব না? নিজের পছন্দ অনুযায়ী একটা হ্যান্ডসাম লাকড়ে বিয়ে করব।
ইসরাত ভেংচি কাটল। নুসরাতের দিকে চেয়ে থেকে বিরক্তির সহিত বলল,”দেখে নেব। যা একটা বাজি ধরি, আরশ ভাইকে ছাড়া তুই আর কাউকেই বিয়ে করবি না, আর তুই করতে চাইলেও আরশ ভাই কখনো হতে দিবে না। এটা আমি একশত পার্সেন্ট সিউর। তুই জিতলে আমার কার্ড তোকে এক সপ্তাহের জন্য দিব, আর আমি জিতলে তোর কার্ড আমাকে এক সপ্তাহের জন্য দিবি। রাজি?
নুসরাত উপর নিচ মাথা দোলাল। নাছির সাহেবের দিকে তাকিয়ে ইসরাত বলল,”আব্বু আপনি সাক্ষী পরে যেন মিথ্যা না বলে।
নাছির সাহেব মাথা নাড়ালেন। ইসরাতের হঠাৎ টনক নড়ল, মৃদু লাফ দিয়ে বলে ওঠল,”আব্বা গেট খোলতে ভুলে গেছি, জায়িন বলেছিলেন গেট খোলার জন্য।
নাছির সাহেব আর নুসরাত নিরুৎসাহিত গলায় একসাথে বলল,”তো কী হয়েছে? এখন খুলে দিলেই হলো।
ইসরাতকে ঠাই দাঁড় করিয়ে রেখে নাছির সাহেব আর নুসরাত পা মিলিয়ে বের হয়ে গেল লাইব্রেরি রুম থেকে।
নুসরাত নাছির সাহেবের সাথে পা মিলিয়ে বের হলো। নাজমিন বেগম ওয়াশরুমে ছিলেন। নুসরাত আর নাছির সাহেবকে হেলেদুলে বাহিরে যেতে দেখে পেছন ডেকে শুধালেন,”বাপ মেয়ের কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?
নুসরাত দ্রুত পদক্ষেপে বের হতে হতে বলল,
“আব্বাকে জিজ্ঞেস করো আম্মা।
নাজমিন বেগম নাছির সাহেবের দিকে প্রশ্নাত্মক চাহনি নিক্ষেপ করতেই তিনি বললেন,” ইসরাতকে জিজ্ঞেস করো।
ইসরাতের দিকে ফিরে তাকিয়ে আগে নিষেধাজ্ঞা জারী করলেন,”এবার বলিস না তুই অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করতে।
ইসরাত অবাক চোখে চেয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কী হয়েছে সেটা তো আগে বলবে? কাকে কী জিজ্ঞেস করব?
নাজমিন বেগম চোখ পাকিয়ে রেখে অতিষ্ঠ ভঙ্গিতে জানতে চাইলেন,”কে এসেছে?
ইসরাত হাফ ছাড়ল। মোলায়েম কন্ঠে উত্তর দিল,
“ওহ এ ব্যাপার৷ বড় আব্বু এসেছেন।
নাজমিন বেগম ইসরাতের সাথে আর কোনো বাক্য ব্যয় না করে কিচেনের দিকে দৌড় দিলেন। ইসরাতের উদ্দশ্যে হাক ছুঁড়ে বললেন,” যা রুমে গিয়ে কাপড় চেঞ্জ কর। আর মুখে কিছু লাগিয়ে নে। কাজের মহিলার মতো লাগছে তোকে।
ইসরাত দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চলে গেল উপরে। বাড়ির বাহির থেকে মানুষের গমগমে স্বর ভেসে আসলো। নুসরাতের ও কিছু উদ্ভট কথা কানে আসলো ইসরাতের। নিজেকে এসব শোনা থেকে অনেক কষ্টে থামিয়ে রুমে গিয়ে রুম লক করে দিল। কাবার্ড খুলে দাঁড়িয়ে রইল কী পরবে ভেবে! পছন্দসই কোনো কিছু খুঁজে না পেয়ে সাদা রঙের একটা থ্রি-পিস বের করে নিয়ে আসলো। সেটাই গায়ে লাগিয়ে কিছুক্ষণ ডং করল। তারপর ঝটপট ওয়াশরুমে ঢুকে চেঞ্জ করে বের হয়ে আসলো। চুল খোপা করে, ওড়না গায়ে ঝুলিয়ে নিচে দৌড়াল। নাজমিন বেগমের হাতে হাত কাজ করে দেওয়ার জন্য।
নিকষ কালো অন্ধকারে ডুবেছে রজনী। ডু-প্লেক্স বাড়িটার বাহির ঝমকালো আলোয় সুসজ্জিত। গেট খুলে যেতেই প্রথমেই বাড়ির ভেতরে পা রাখলেন সৈয়দ হেলাল আহমেদ। নাছির সাহেব হাসি হাসি মুখে এগিয়ে এসে বিনয়ী কন্ঠে বললেন,”আসসালামু আলাইকুম বড় ভাই,আপনি এখানে আসায় আমি অনেক বেশি খুশি হয়েছি।
হেলাল সাহেব কাটখোট্টা গলায় নাছির সাহেবের হাসি মুখে পানি ঢেলে বললেন,”আমি এখানে কারোর ভাই হয়ে আসিনি, আমার ছেলের শশুর বাড়ি এসেছি। তাই একথা মনে রেখে আপ্পায়ন করলে ভালো হয়।
নুসরাত নাছির সাহেবকে ঠেলে সরিয়ে দিল দূরে। নিজে ঠোঁটে মেকি হাসি ঝুলিয়ে সামনে এসে ঠাট্টা করে বলল,”ইসরাতের শশুর আঙ্কেল, ছেলের শশুর বাড়ি প্রথমবার আসলেন আর এই সামান্য জিনিস নিয়ে আসলেন, এটা কী একটু বেশি কঞ্জুসি হয়ে গেল না?
জায়িন নুসরাতকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,”উপস শালিকা, আমি তো ভুলে গিয়েছিলাম এই বাড়িতে আপনার মতো একজন ভয়ংকর খাদক আছে। আশা করি ভবিষ্যতে এরকম ভুল আর হবে না।
নুসরাত হাসল। জায়িনের কথায় কোনো প্রতিত্তোর করল না। জায়িন মনে করল তার কথায় নুসরাত দমে গিয়েছে কিন্তু সে যে অন্য মতলব মাথায় আঁটছে তা ধারণা করতে পারল না। জায়িন বাড়ির ভেতর পা রাখতেই নুসরাত পেছন থেকে ডাক দিল। পিছু ফিরে চাইতেই নুসরাত জায়িনের শার্টের দিকে ইশারা করে বলল,”কালো শার্টে ভালো লাগছে আপনাকে, হাড্ডি ভাঙার ডাক্তার।
জায়িন নিজের চওড়া কাঁধ ঘুরিয়ে এমন ভাবে ভিতরে প্রবেশ করল, যেন নুসরাতের কথা তার কানেই যায়নি। ধীরে ধীরে বাড়ির কর্তারা ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে আলিঙ্গন করলেন নুসরাতের সাথে। দু-জনেই মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, নুসরাতের কপালে চুমু খেলেন। নাছির সাহেব শোহেব আর সোহেদের সাথে আলিঙ্গন করে ততক্ষণে ভেতরে প্রবেশ করেছেন। বাড়ির দু-জন কর্তীরা সবাই এসে গিয়েছে। ঝর্ণা বেগমের সাথে নুসরাত যখন কুশল-বিনিময় করায় ব্যস্ত ছিল তখন লিপি বেগম এসে জড়িয়ে ধরলেন তাকে। নুসরাত নিজেও জড়িয়ে ধরল হালকা ঝুঁকে লিপি বেগমকে। লিপি বেগমের পেছনে চোখ পড়তেই হুডি পরে টানটান হয়ে দাঁড়ানো আরশকে দেখল। কপালের একপাশে প্লাস্টার লাগানো। তার দিকে ভ্রু কুঞ্চিত করে চেয়ে আছে লোকটা। নুসরাতের পলিশ কপাল ভাঁজ পড়ল। সামান্য ভ্র কুঞ্চিত করে আরশের চোখে চোখ রেখে সরে আসলো। লিপি বেগম প্রশ্ন করলেন,”আমাদের বাড়িতে আসো না কেন তুমি?
নুসরাত চোখ সরিয়ে নিয়ে আসলো। অপ্রস্তুত হেসে, মৃদু স্বরে বলল,”জ্বি আসব।
লিপি বেগম গালে, কপালে সূক্ষ্ম চুমু খেয়ে সামনে চলে যেতেই আরশ এসে দাঁড়াল নুসরাতের সামনে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গ্রীবা সামান্য বাঁকিয়ে নুসরাতের কোমর ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। গম্ভীর গলায় শুধাল,”বেয়াইন কী সবাইকে ফ্রিতে চুমু আর হাগ দিচ্ছেন?
নুসরাত নিজের হাত দিয়ে আরশকে ঠেলে দূরে সরাতে চাইল, আরশ সরলো না, আরো এগিয়ে আসলো তার সন্নিকটে। এক হাত দিয়ে নুসরাতের মাথা শক্ত করে নিজের বুকের ডানপাশে চেপে ধরল। মৃদু আওয়াজ মুখ দিয়ে বের করে বলল,”আ আ আ..সবাইকে চুমু দিচ্ছেন, আমাকে তো আর চুমু দিবেন না, তাই আমাকে জড়িয়েই ধরুন। নাকি জড়িয়ে ধরতেও আপনার সমস্যা হবে বেয়াইন?
নুসরাত আরশের হাতের নিচ দিয়ে বের হয়ে যেতে চাইল, আরশ অন্য হাত দিয়ে শক্ত করে তার পৃষ্ঠদেশ চেপে ধরল। বিরক্তিতে পরিপূর্ণ কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,” এরকম ব্যঙের মতো লাফালাফি করছেন কেন? চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকুন, নাহলে পুরো একঘন্টা আপনার মাথা বুকে চেপে ধরে এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখব।
নুসরাত আরশের সাথে কথা বাড়াল না। শান্ত হয়ে, স্থির দাঁড়িয়ে রইল, কোনোপ্রকার মোচড়া মুচড়ি করল না। নুসরাতকে নড়তে না দেখে আরশের শক্ত করে ধরে রাখা হাত শীতল হয়ে আসলো। নুসরাত সুযোগের সৎ ব্যবহার করল। আলগোছে আরশের বাহুবন্ধনী থেকে বের হতে হতে হাত দিয়ে খাঁমচে ধরল সুঠাম দেহি পুরুষটার বুকের বাঁ-পাশ। ঘা কাঁচা থাকায় খামচে ধরতেই মুখের বিকৃতি ঘটল তার। দাঁতে দাঁত চেপে ধরে মুখ স্বাভাবিক রাখার বৃথা প্রচেষ্টা করল। তবু্ও মুখ দিয়ে ব্যথাতুর আর্তনাদ বের হয়ে আসলো। নুসরাত আরশের চোখে চোখ রেখে মৃদু আওয়াজে আদেশ দিল,”হুডি খুলুন।
আরশ শুধাল,
“কেন?
নুসরাত নির্লজ্জের মতো হাসল। আরশের কাছে এগিয়ে এসে বিনয়ের সহিত বলে ওঠল,”আপনার পুরুষালি খাঁজকাটা বডি দেখব। সমস্যা আছে? নাকি লজ্জা পাচ্ছেন বেয়াই?
আরশ চোখা চোখে তাকিয়ে এক টানে হুডি খুলে ফেলল। পরণের সাদা সেন্ডো গেঞ্জিতে কিছুটা রক্তের দাগ লেগেছে। নুসরাত সেদিকে ইশারা করে আরশের উদ্দেশ্যে বলল,” এবার শুধু রক্ত বের করেছি, পরেরবার আমার অনুমতি ছাড়া ,আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করলে, আপনি বেঁচে থাকাবেন কিনা তার গ্যারান্টি আমি দিতে পারছি না।
আরশ নিজেও হাসল। হুডি গায়ে চাপিয়ে নুসরাতকে শক্ত হাতে চেপে ধরল নিজের সাথে। নুসরাত হাত দিয়ে আঘাত করতে যাবে আরশের মুখের মধ্যে, আরশ নিজের একহাত দিয়ে নুসরাতের দু-হাত মুচড়ে নিয়ে পিঠে চেপে ধরল। মাথা সামান্য কাত করে, গা-হিম করা শীতল কন্ঠে বলল,”কী করবেন করুন,আমিও একটু দেখি মিসেস!
নুসরাত দাঁতে দাঁত চাপল। নিজের অপাগরতায় নিজেকে ধিক্কার করল। সেই ক্ষণে সেখানে এসে উপস্থিত হলো মাহাদি। দু-জনের দিকে কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে নিয়ে বুঝতে চাইল এদের মধ্যে হচ্ছে কী! যখন কিছু বুঝল, না তখন পেছন থেকে ডেকে ওঠল,”নুসরাত..!
নুসরাত হালকা কাত হয়ে গেটের দিকে চোখ ফেলতেই মাহাদিকে ভঙ্গুর অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। মাহাদির নাকে প্লাস্টার লাগানো, কপালে সাদা ব্যান্ডেজ, এমনকি হাতে ব্যান্ডেজ করে গলার সাথে তা ঝুলানো। নুসরাত সরু চোখে মাহাদি আর আরশকে অবলোকন করে কিছু বলতে নিবে তখনই কানে ভেসে এলো আরশের ধমকানো গলার স্বর,”নুসরাত কী? ভাবি বল!
নুসরাত আরশকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল। চোখ দিয়ে সাবধান করল স্পর্শ করার চেষ্টা না করতে। আরশ নুসরাতের নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে কোমর ধরে টেনে এনে আবারো নিজের সাথে চেপে ধরল।
আরশের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে কোমল কন্ঠে জিজ্ঞেস করল মাহাদিকে,”আপনার কপালের আর হাতের এ অবস্থা কেন?-
প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ১৮
আরশ নুসরাতের মুখ শক্ত হাতে টেনে আনলো নিজের দিকে। কন্ঠ নিচে নামিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠল,”ওর এই অবস্থা নিয়ে আপনার চিন্তা না করলেও চলবে মিসেস, এখন শুধু আমার চিন্তা করুন আপনি।।