প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২৮

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২৮
জান্নাত নুসরাত

আরশ নুসরাতের কথা শুনে কী বলবে বুঝে উঠতে পারল না। রাগে উঠলে তার মাথা ঠিক থাকে না। নুসরাতের উদ্ধ্যতা সে মেনে নিতে পারল না। নিজেও চিৎকার করে ওঠে বলল,”আল্লাহর কসম করে বলছি নুসরাত নাছির, পরের জন্ম বলে যদি কিছু হয় তাহলে তোর মতো বেয়াদব, অবাধ্য, অভদ্র মহিলাকে আমি বিয়ে করব না।
নুসরাত দমে যাওয়ার পাত্রী নয়, সে ফোনের অপাশ থেকে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ওঠে বলল,”এ্যাঁহ আমি মনে হচ্ছে মরে যাচ্ছি আপনাকে বিয়ে করার জন্য। ফোন রাখ শালা! আর লিখে নে দু-দিনের ভেতর আমি বিয়ে করব, তোর সামনে বসে! তারপর আমার জামাইকে তুই দুলাভাই ডাকবি।

নুসরাত আরশকে ফোন রাখার কথা বলে নিজেই মুখের উপর ফোন কেটে দিল। আরশের রাগে ঘি ঢালার মতো কাজ করল নুসরাতের মুখে দ্বিতীয় বিয়ের কথ শোনে। সে কী সত্যি বলেছে নাকি ওই কথা। রেগে গিয়েছে বলেই তো বলেছে কিন্তু ওই বেয়াদব মহিলার মুখে মুখে তর্ক করার বদ অভ্যাস কখনো যাবে না। আজ একটা উচিত শিক্ষা দিয়ে আসবে সে। সৈয়দ বাড়ির ফটক থেকে বের হয়ে আসলো বড় বড় পা ফেলে। কানে তখনো ফোন লাগানো, বেমালুম ভুলে বসেছে সেটা। নুসরাত ফোন কেটেছে তার মুখের উপর এটা ভাবতেই আরশের রাগ বাড়ছে তরতর করে। কত্ত বড় সাহস তার মুখের উপর ফোন কাটে। আরশ ফোনটা শক্ত হাতে চেপে অন্য হাতে নাক ঘঁষল। কয়েকবার ঘঁষল এরকম করে। কিৎকাল অতিবাহিত হতেই নাকের ডগায় খসখসে অনুভব হলো। এরপর জ্বালা পোড়া শুরু হলো। নাকের ভেতর চাপ অনুভব হতেই হাত দিয়ে নাকের ডগায় স্পর্শ করল আরশ। সামান্য ঘষে হাত চোখের সামনে আনতেই বিরক্ত হলো। নাক কুঞ্চিত করল। মুখ দিয়ে নিচু স্বরে ধ্বনিত হলো,”নাউ দিজ ফাকিং ব্লাড হেজ টু স্টার্ট কামিং আউট? হোয়াট দ্যা হেল ইয়ার?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরশ আরো দুয়েকবার হাতের তালু দিয়ে নাকে ঘঁষল শক্ততার সাথে। চোখে অন্ধকার দেখল, সাথেমাথা ঘোরে উঠল। আরশ পাত্তা দিল না! তার মাথায় আজ আগুন চড়ে বসেছে। এই বেয়াদবটাকে কয়েকটা না দিলে এর কাঁচির মতো চলা জিহ্বা বন্ধ হবে না। শিকদার বাড়িতে যেতে যেতে নাক এমনভাবে হাতের তালুতে ডলল নাকটা লাল টকটকে হয়ে গেল। হাতের রাবার বলটা দূরে ছুঁড়ে ফেলল রাগে। এটা কোনো কাজের না! সামান্য পরিমাণ রাগে রিলিফ আসেনি এত প্রচেষ্টা করার পর।

শিকদার বাড়ির গেট খুলে দাঁড়িয়ে ছিলেন নিজাম শিকদার। আরশকে দেখে এগিয়ে আসলেন কথা বলতে, আরশ কোনো কথা কানে নিল না তার। ধুপধাপ পায়ে এগোলো বাড়ির ভেতর। অচেনা একটা বাড়িতে, কোনোদিকে না তাকিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে গিয়ে ঢুকে গেল। নিজাম শিকদার তব্ধা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন বাড়ির সামনে। ছেলেটা তাকে এমনভাবে অদেখা করে গেল যেন সে এখানে দাঁড়িয়েই নেই। তার বাড়িতে ঢুকে গেল সুরসুর করে, তাকে রেখে। অবাক হয়ে যখন নিজাম শিকদার চেয়ে রইলেন আরশের যাওয়ার দিকে,তখনই বাড়ির ভেতর থেকে আসলো বিকট শব্দ। নিজাম শিকদার দৌড় দিলেন ভেতরে। ড্রয়িং রুমে উপস্থিত হতেই কানে আসলো নুসরাত আর আরশের তর্কাতর্কি। নিজাম শিকদার চিৎকার অনুসরণ করে এসে উপস্থিত হলেন সৌরভির রুমের সামনে। ভেতরে ঢুকে পরিবেশ পরিলক্ষণের পূর্বেই তার মুখের উপর ধুপ করে দরজা লাগিয়ে দিল আরশ। সৌরভির দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে শুধালেন,”কী হয়েছে?
সৌরভি শ্রাগ করল। অতঃপর দু-জনকে ফুল প্রাইভেসি দেওয়ার জন্য নিজের দাদা নামক লোকটাকে টেনে নিয়ে চলে গেল দো-তলার দিকে। এই লোক এখানে থাকলে আরো ভেজাল করবেন, তাই এই মুহুর্তে উনাকে নিয়ে যাওয়া উত্তম।

আরশ ধুপধাপ পায়ে রুমে ঢুকতেই নুসরাত হকচকাল। সে মনে করেনি আরশ চলে আসবে শিকদার বাড়িতে। অতিরিক্ত রাগে, চিৎকারে কপালে ঘাম জমা হয়েছে দু-জনের। শ্বাস ফেলছে দু-জনেই ঘন ঘন। আরশ তখন নাকের রক্ত মোছার জন্য এখনো লেগে আছে চারিদিকে ছড়িয়ে। সরু নলি দিয়ে মৃদু রক্ত বের হচ্ছে নাসারন্ধ্রের ভেতর থেকে। আরশ সৌরভির দিকে না চেয়ে হাত দিয়ে চুটকি বাজাল। তারপর ইশারা করল রুম থেকে বের হওয়ার জন্য। সৌরভি কোনোপ্রকার বাক্য ব্যয় না করে নিঃশব্দে বেরিয়ে পড়ল রুমের বাহিরে। আরশ দ্রুত হাতে দরজার ছিটকিনি লাগাল।

অতঃপর খেপাটে চোখে নুসরাতের দিকে এগিয়ে যাবে, নুসরাত সতর্কতা জারী করল,”এক পা আগাবি না?
আরশ কথা কানেই নিল না, নুসরাতের কথা না শোনার ভান করে চুপচাপ পা বাড়াল বিছানার দিকে। নুসরাত তখন রাগে বিছানায় দাঁড়িয়ে আরশের সাথে চিৎকার করে কথা বলছিল এখনো পর্যন্ত বিছানার মধ্যে দাঁড়িয়ে। আরশ হেঁটে এগিয়ে গেল বিছানার কাছে। নুসরাত পেছনে সরার পূর্বেই নিজের বলিষ্ঠ একহাত দিয়ে মেয়েলি পিঠ পেঁচিয়ে ধরল। অতঃপর একটানে বিছানার উপর থেকে কোলে তুলে নিল। নুসরাত চোখ গোল গোল করে তার পানে চাইতেই আরশের শান্ত চোখের সাথে চোখাচোখি হলো। চোখ স্থির রেখেই আলগোছে নুসরাতের পিঠ থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিল। ব্যালেন্স হারিয়ে তখনই ধুপ করে মাটিতে পড়ল নুসরাত। মেঝেতে পড়ে কোমড় ব্যথা পেল। অস্বাভাবিক ব্যথায় কুকিয়ে উঠল কোমড় চেপে ধরে। একহাতে ভর দিয়ে উঠে বসল। নুসরাত চিৎকার করে উঠল গলা ফাটিয়ে।

আরশ দাঁত কিড়মিড়িয়ে নিজের রাগ সামালানো বৃথা চেষ্টায় রপ্ত হতেই নাকের সরু দ্বারা দিয়ে সুরসুর করে লাল তরল গড়িয়ে পড়ল। বিরক্তির সাথে তা আবার মুছল হাতের তালুতে। নুসরাতের দিকে কিছুক্ষণ লাল চোখ দিয়ে চেয়ে একটানে বসা থেকে দাঁড় করালো। ফিরেও দেখল না হাতে ব্যথা পেয়েছে কি না! আরশের হঠাৎ এমন আক্রমণে নুসরাতের মাথা ঘুরে উঠল। কোমড়ের ব্যথায় আর হাতের ব্যথায় মুখ কুঁচকাতেই ঠাটিয়ে বাঁ-গালে থাপ্পড় পড়ল। নুসরাতের উপর জমা হওয়া এতক্ষণের রাগ সামান্য কমল না। অতঃপর আবারো রুম কাঁপিয়ে আরেকটা থাপ্পড় পড়ল ডান-গালে। নুসরাত বাঁ-হাতে বাঁ-গাল চেপে ধরল, নিজের গাল বাঁচানোর জন্য। আরশ সেদিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে আবারো ডান গালে বাজিয়ে আরেকটা থাপ্পড় বসাল। নুসরাত দু-গালে দু-হাত চেপে রাগে চিৎকার করে ওঠল,”তোকে আমি ডিভোর্স দিব কুত্তা। তোর মতো পাঠার সাথে সংসার আমি করব না। তোকে আমি বিয়ে করব না। তোর সংসার তুই কর! তোর সাথে আমি থাকব না। তুই পাঠা, পাঠা, পাঠা!

নুসরাত একহাতে চেপে ধরা গাল ছেড়ে নিজের পকেট থেকে ছুরি বের করল। সেটা চালাতে যাবে তার পূর্বেই আরেকটা বাজিয়ে থাপ্পড় পড়ল। চোখে অন্ধকার দেখল মেয়েটা। এবারের থাপ্পড়টা এত জোরালো ছিল, নুসরাতের কান লেগে এসেছে একদম। নুসরাত চোখের পাপড়ি ঝাপটে শক্ত হাতে ছুরি মুঠোয় পুরে তা আরশের বুকের ভেতর চালাতে যাবে তার আগেই আরশ তার হাত মুচড়ে ধরল। তা ঘুরিয়ে নিয়ে নুসরাতের পিঠের মধ্যে চেপে ধরল। হিসহিসিয়ে পুরু ঠোঁট দিয়ে অস্ফুটে সুরে বলে ওঠল,”তুই সংসার করবি, তোর বাপ সংসার করবে, তোর চৌদ্দ গুষ্টি সংসার করবে। তাছাড়া এই ছুরি ছুরি খেলা অনেক দেখিয়েছিস, আমিও দেখেছি! আক্রমণের প্রন্থা পরিবর্তন কর,সব পুরোনো হয়ে গেছে। এই দেখ আমার চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছে এসব দেখতে দেখতে।

নুসরাত হাত চালাতে না পেরে, রাগে চিৎকার করে ওঠল। আরশের হাতের কবল থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর বৃথা প্রচেষ্টা করল। বাঁ-হাত দিয়ে আরশকে খাঁমচি দিবে সেটা আরশের রাগ বাড়িয়ে দিল আরো বেশি। নুসরাতের দু-হাত একহাতের সাহায্যে পিঠের কাছে পেঁচিয়ে নিল। তারপর মুচড়ে ধরল। হাত মোচড়ানোর জন্য দু-হাত ব্যথায় ঝিমঝিম করে ওঠল। আরশের দিক থেকে তবুও নুসরাতের খেপাটে দৃষ্টি সরলো না। রাগে কিড়মিড়িয়ে উঠে বলল,”করব না আমি তোর সংসার! বিয়ে করব না আমি তোকে। তোকে ডিভোর্স দিয়েই আমি আরেকটা বিয়ে করব। কথায় কথায় তুই আমাকে চড়, থাপ্পড় মারিস!

আরশ দন্ত কপাটি চেপে ধরল একটার সাথে অন্যটা। দাঁতের সাথে দাঁতে পিষে হিসহিসিয়ে বলে ওঠল,”
“নুসরাত নাছির লিসেন কেয়ারফুললি, ইউ আর অনলি মাইন। আই সোয়ার, আমাকে ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে নিজের জীবনের সাথে জড়ানোর কথা ভাবলেও, তোমাকে আমি নিজ হাতে মেরে ফেলব।
নুসরাত চোখ বন্ধ করে শ্বাস ফেলল শব্দ করে। জোরে জোরে শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করল, হলো না! কালো মণির চোখগুলো জ্বলজ্বল করে উঠল। আরশের দিকে তাকিয়ে ক্ষীপ্ততার সাথে আওড়াল,”আমি আপনাকে ডিভোর্স দিব, এটাই আমার শেষ কথা।

আরশ নাকের মধ্যে নিজের বাঁ-হাত ঘঁষল। আজ একটু বেশি জ্বালাপোড়া করছে এই বুলশিটটা। নুসরাতকে ঠেলে পেছনে নিয়ে গেল। যতক্ষণ পর্যন্ত পিঠ না ঠেকে যায় টেবিলের সাথে। পিঠ টেবিলে ঠেকতেই নুসরাত মাথা তুলে উপরে তাকাল। আরশ শক্তহাতে তার থুতনি চেপে ধরল। কন্ঠ খাদে নামিয়ে কড়মড় করে বলে ওঠল,” নুসরাত নাছির আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো আজ আমি যে তোমায় মারিনি, আমাকে রাগিও না!
নুসরাত চাপা ক্লেশ ভেতরে চেপে চিৎকার করে বলে ওঠল,”আপনি ও আমাকে রাগাবেন না। কথায় কথায় গায়ে হাত দেন কেন আপনি! আমি আপনার নামে নারী নির্যাতনের মামলা করব।

নুসরাত অতিরিক্ত রাগে গলার কাছে কান্না দলা পাকাল। আরশ নুসরাতের চোখে চোখ রেখে হাত ছেড়ে দিল। নিজেদের ভেতরে দূরত্ব মিটানোর পূর্বেই নুসরাত হাত ঘুরিয়ে এনে আরশের গালে থাপ্পড় মারতে নিল, আরশ সামান্য বিরক্ত হলো এতে। কী থাপ্পড় থাপ্পড় খেলা শুরু করেছে এই বেয়াদব মহিলা! আরশ চাইলেই এই মহিলাকে একহাত দিয়ে তুলে আছাড় মারতে পারবে, কাকে সে তেজ দেখায়,এই ছোট শরীর নিয়ে! নুসরাতের দ্রুত বেগে আসা হাত থেমে গেল, আরশের বলিষ্ঠ হাতের পিষ্টনে। আরশ ভ্রু নাচিয়ে আওড়াল,” নুসরাত নাছির ইউ আর সো মিন। এতক্ষণ ধরে কী ক্লাস করালাম! নিজের টসটসে গালগুলোকে কেন থাপ্পড় খাওয়াতে উঠে পড়ে লেগেছো?

এত যদি আমার হাতে মার খেতে ভালোবাসো তাহলে প্রথমেই বলে দিতে, আমি না হয় নিজ দায়িত্বে এর ব্যবস্থা করে দিতাম।
পরপর বাজিয়ে দুটো থাপ্পড় পড়ল নুসরাতের গালে। নুসরাত চোখ কুঞ্চিত করে আরশের পানে চাইতেই আরশ তার থুতনিতে বল প্রয়োগ করে চেপে ধরল। প্রখর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে একহাতে কোমর পেঁচিয়ে তুলে বসাল টেবিলের ওপর। ধারালো কন্ঠে পুরুষালি পুরু ঠোঁট দিয়ে সতর্কী বাণী উচ্চারিত হলো,”এই ছোট শরীরে এত তেজ আসে কোথা থেকে? আছাড় মেরে সব তেজ বের করে দেব, বেয়াদব! বেশি লাফালাফি করবা না, পা দুটো কেটে ঝুলিয়ে রেখে দেব। অসভ্য মহিলা..!

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২৭

দুপুর দুইটা বেজে আঠারো মিনিট। আরশের মোবাইলে কল আসলো আননন নাম্বার থেকে। আরশ ফোন পিক করে না আননন নাম্বার হলে কিন্তু আজ কী মনে করে কল পিক করল। ফোন কানে লাগিয়ে হ্যালো বলার পূর্বেই অপাশ থেকে গমগমে সুরে কর্কশ আওয়াজে কেউ বলে ওঠল,”সৈয়দ আরশ হেলাল, একটু পুলিশস্টেশনে এসে হাজিরা দিয়ে যান, আপনার স্ত্রী আপনার নামে নারী নির্যাতনের কেস করেছেন।

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২৮ (২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here