প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২২ (২)
জান্নাত নুসরাত
মেঘের আধাঁরে ঢাকা আকাশ। মৃদু বাতাস বইছে চারিদিকে। ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাওয়ার মতো। গ্রোসারি শপের গ্লাস বেয়ে ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে বৃষ্টির ঝিরঝিরে কণা। তা আলগোছে স্পর্শ করছে দূর্বা ঘাসগুলোকে। বাহিরের বৃষ্টির জন্য গ্রোসারি শপের স্লাইডিং দরজা টানা হয়েছে অনেক আগে। ইসরাত শপিং কার্ট ঠেলে নিয়ে বিভিন্ন মশলার আইটেম সেখানে রাখল। একবার চোখ বুলিয়ে নিল সবগুলো আইটেম রাখা আছে কিনা তা দেখার জন্য। তারপর আবারো অগ্রসর হলো চকলেট, চিপস, নেওয়ার উদ্দেশ্যে। জায়িন চুপচাপ বিল কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছে। ইসরাতকে নিশ্চিন্তে জিনিস কিনতে দিচ্ছে। মেয়েটার সাথে এসেছিল এক পলক দেখার জন্য, এখানে দাঁড়িয়ে থেকে সে খুব ভালো দেখতে পারছে মেয়েটাকে।
ইসরাত জায়িনকে পাশ কাটানোর সময় অভ্যাসবশত নিজের গলায় ঝুলানো মিনি ব্যাগ হাতালো। কিছু খুচরা নোট ছাড়া আর কিছু পেল না। তাই চকলেট কিনার জন্য অগ্রসর হওয়া পা থামিয়ে ফিরে আসলো আবারো নিজের জায়গায়। জায়িন নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সব কিছু লক্ষ করল। চুপচাপ এগিয়ে গিয়ে ইসরাতের হাতের মুঠোয় থাকা শপিং কার্ট নিজের কাছে হস্তান্তর করল। মেয়েটাকে ওভাবেই বিল কাউন্টারের কাছে দাঁড় করিয়ে রেখে শপিং কার্ট নিয়ে সেদিকে চলে গেল। ইসরাত না করার পূর্বেই জায়িন বড় বড় পা ফেলে অদৃশ্য হয়ে গেল গ্রোসারি শপের ভেতর। দশ মিনিট পাড় হওয়ার পর দেখা মিলল জায়িনের।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
দু-হাতে একটা ভর্তি শপিং কার্ট ঠেলে নিয়ে আসছে। তার সাথে আরেকজন সেলসম্যান। যে জায়িনের পেছন পেছন আরেকটা শপিং কার্ট ঠেলে নিয়ে আসছে। ইসরাত বাকরুদ্ধ চোখ মুখ নিয়ে তাকিয়ে থাকল। নিজের সামনে এগিয়ে আসা গম্ভীর মুখাবিশিষ্ট লোকটাকে এভাবে এতকিছু নিয়ে আসতে দেখে নির্বাক বনে গেল। জায়িন ততক্ষণে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ক্যাস কাউন্টারে থাকা মহিলা জিনিসপত্র গুলো স্ক্যান করে জায়িনের উদ্দেশ্যে বলল,”স্যার, আপনার বিল ত্রিশ হাজার টাকা হয়েছে।
ইসরাত কিছু বলতে যাবে জায়িন ঠোঁটে আঙুল রেখে চুপ দেখাল। গম্ভীর কন্ঠে মহিলাকে জিজ্ঞেস করল,
“কার্ড হলে চলবে?
মহিলাটি বিনয়ী সুরে বলে ওঠল,
” জি স্যার!
মহিলাটির কথা শেষ হতেই জায়িন পকেট হাতড়ে বিল পেমেন্ট করার জন্য কার্ড বের করল। ইসরাত মিনমিন করে বলল,”এতকিছুর প্রয়োজন ছিল না।
জায়িন ভ্রু সামান্য বাঁকাল। ইসরাতের এমন মতবাদ পছন্দ না হওয়ায় গম্ভীর ভঙ্গিতে পাশ ফিরে তাকিয়ে শুধাল,”আর ইউ সিওর?
ইসরাত মাথা উপর নিচ নাড়ানোর পূর্বেই জায়িনের উদ্দেশ্য মহিলাটি ডেকে ওঠল। হাতের POS মেশিন এগিয়ে দিল পিন দেওয়ার জন্য। জায়িন নিজের এটি-এম পিন ইসরাতকে দেখিয়ে চাপতে চাপতে বলে ওঠল,”আপনাকে আমি পরে দেখে নিব ইসরাত।
ইসরাত চোখ উল্টালো জায়িনকে দেখিয়ে। জায়িন গম্ভীর চোখ মেয়েলি মুখে স্থির রেখে নিজের শক্ত চোয়ালে হাত বুলালো। কোনো শব্দ করল না। বিড়বিড় করল কিছু একটা।
আবির হাতে একটা ফাইল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সামনা সামনি বসা দু-জনকে চুপচাপ দেখছে সে। মনে মনে ভাবছে নানা চিন্তা। জোরা দিচ্ছে নুসরাত আর আরশের কী সম্পর্ক হতে পারে। নুসরাতকে দু-একটা গালি ও দিল। তার স্যারের মতো মাটির মানুষকে এই শয়তান মেয়েটাকেই গার্লফ্রেন্ড করতে হলো! বাহবা ও দিল নুসরাতকে। এই মেয়ের কী ট্যালেন্ট স্যারের মতো বড়লোক মানুষ পটিয়ে ফেলেছে। এবার তো বস্তি থেকে একদম হাই প্রোফাইলে চলে যাবে। আবির দ্বিধাদ্বন্দে ভরা কন্ঠে আরশকে প্রশ্ন করল,”স্যার, ম্যাম কী আপনার গার্লফ্রেন্ড?
আরশ ধমকে ওঠল আবিরকে। শক্ত চোখ তার দিকে নিক্ষেপ করে বলে ওঠল,”গার্লফ্রেন্ড হতে যাবে কেন, আমার মিসেস ও! আর তুমি বারবার ওর দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছো কেন, চোখ নিচের দিকে স্থির রাখো, আমার বউয়ের দিকে না।
নুসরাত গা দুলিয়ে খিকখিক করে হেসে ওঠল। আবির নুসরাতের হাসিতে বিরক্ত হলো। মাস্তিষ্কে কত কথা জমল। তার মধ্যে এমন একটা কথা জমল তা তাকে ভাবাল। বিড়বিড় করল,” কী চতুর মেয়ে স্যারকে বিয়ে করে নিয়েছে। নির্ঘাত সম্পত্তি দেখে পটিয়ে নিয়েছে মাটির মানুষটাকে। পটাবে কীভাবে কালো জাদু করেছে নিশ্চিত! নাহলে এমন পেত্নী মেয়ে স্যারের বউ হবে নাকি। স্যার আরো সুন্দরী মেয়ে ডিজার্ভ করেন।
সামনা-সামনি জিজ্ঞেস করল আরশকে বিপরীত প্রশ্ন।
“স্যার কবে বিয়ে করলেন আমাদের দাওয়াত দিলেন না?
আরশ কপাল কুঞ্চিত করে তাকাল আবিরের দিকে। তিক্ত বিরক্ত কন্ঠে বলে ওঠল,”তোমার ম্যামকে আমি আজকাল বিয়ে করেছি নাকি, আজব! তোমার জন্মের আগে বিয়ে করেছি। আই মিন তেরো বছর আগে বিয়ে করেছি।
আবিরের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। শুধাল,
” তাহলে ম্যামকে এভাবে বেঁধে রেখেছেন কেন?
“এটা আমাদের পার্সোনাল ব্যাপার তোমাকে বলতে যাব কেন?
আবির ওপর নিচ মাথা নাড়াল। মনে অনেক প্রশ্ন জাগল কিন্তু ভয়ে মুখ ফুটে বের হলো না। আরশের কাছ থেকে পারমিশন নিতে বলল,” স্যার লাস্ট একটা প্রশ্ন!
আরশ হু বলতেই, আবির শুধাল,
“আপনাদের বিয়ে হলো কীভাবে?
“আমার মরহুম দাদা আমার সাথে তোমার ম্যামের জোর করে বিয়ে দিয়েছেন। আমি করতে চাইনি, কিন্তু আমার মরহুম দাদা সম্পত্তি থেকে বেদাখিল করে দিবেন বলে ভয় দেখানোর জন্য বিয়ে করেছি।
ইরহাম আবিরের মুখ দেখে ঠোঁট টিপে হাসল। নুসরাত এতক্ষণ হাসলেও এবার মুখ বন্ধ করে চেয়ে আছে দু-জনের দিকে। মন দিয়ে শুনছে দু-জনের কথা। মাহাদি আরশকে টিপ্পনী কাটার জন্য মাঝ থেকে এমনভাবে বলল যেন আবিরকে বোঝাচ্ছে সে। তেরছা সুরে টেনে টেনে বলল,”ম্যাম হলেন আপনার স্যারের একমাত্র দায়িত্ব। এছাড়া আর কিছু না বুঝেছেন। তাই দায়িত্ব বুঝে নিতে আপনার স্যার এসেছেন। এর বেশি কিছু না। শুধু দায়িত্ব।
আরশ নুসরাতের দিকে চুপচাপ তাকিয়ে আছে। ভ্রু সামান্য বাঁকা হয়ে আছে সামনের লোকটার। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মাহাদির কথায় বিরক্ত। নুসরাত এসবের পরোয়া করল না মাহাদির কথায় রুম কাঁপানো হাসি দিল। আবির নুসরাতের দিকে না তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,”স্যার ম্যাম সম্পর্কে আপনার কী হন?
আরশ চ্যাত করে ওঠল। বলল,
“তা জেনে তোমার লাভ কী! চুপ করে থাকো আর প্যানপ্যান বন্ধ করো।
ইরহাম ঠোঁট কামড়ে হাসছে। মাহাদি কোনোরকম বলে ওঠল,”এখনো বোঝোনি গাধা, ম্যাম হলেন আপনার স্যারের দ্বি-মাত্র চাচাতো বোন।
আবিরের মাথায় অজান্তেই বম ফাটিয়ে মাহাদি হেসে ওঠল। আবিরের মুখটা দেখার মতো কালো হলো। নুসরাত আর ইরহাম দু-জন গলা মিলিয়ে হাসতে লাগল এতে করে আরো বেশি। আরশ তা দেখে অভ্যাসবশত নিজের ধারালো গম্ভীর সুরে কিৎকাল আগের প্রশ্ন আবার ছুঁড়ল,”কার সাথে রিলেশনে ছিলি?
নুসরাত হাসতে হাসতে ভুলে বসেছে আরশ সামনে। আরশকে ইরহাম মনে করে, আবিরের দিকে আঙুল তুলে বলে ওঠল,”ওই ব্যাটার সাথে।
কথাটা শেষ করেতেই ঠোঁট থেকে ফুস করে হাসি উধাও হয়ে গেল। চোখ তুলে আরশের দিকে তাকাল। আরশও তার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখের অবস্থার কোনো ভাবাবেগ নেই! আগের মতোই গম্ভীর, শক্ত করে রাখা ক্লিনসেভ চোয়াল। পুরুষালি চোখ দুটোতে কিছু একটা জ্বলজ্বল করছে। তা ঠাওর করতে পারল না নুসরাত। ঠোঁট কামড়ে একবার আবিরের দিকে তাকায় নুসরাত, মুখটা বেচারা করে রেখেছে। চোখ নিচু করে চোরের মতো একবার আরশকে দেখছে তো একবার তাকে। নুসরাত উপরে উপরে নির্বিকার থাকার চেষ্টা করলেও ভেতরে ভেতরে ঠিকই ভয়ের দানা বাসা বাঁধল। ঠোঁট চেপে কিছু বলতে নিবে আরশ অত্যাধিক হিমায়িত কন্ঠে বলে ওঠল,”হাত খুলে দে!
মাহাদি এগিয়ে এসে খুলে দিতে যাবে আরশ চোখ রাঙাল। শাসানোর সুরে হিসহিসিয়ে বলল,”তোকে বলেছি? ওর থেকে গণে গণে বিশ ফুট দূরে থাকবি তুই!
মাহাদি ঠাট্টা করে বলল,
“ঠিক আছে দূরে থাকব,কিন্তু বিশ ফুট হয়েছে কীভাবে জানব?
আরশ কথার উত্তর দিল না। জিহ্বা দিয়ে গাল ঠেলল। । নীরবে কিছু একটা ভাবতে বসল। ইরহাম নুসরাতের হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে পায়ের বাঁধন খুলতে যাবে তার পিঠে শক্তি দিয়ে একটা কিল বসাল নুসরাত। দাঁতে দাঁত চেপে ধরল। এত শক্ত করে ধরল দাঁতগুলো দাঁতের সংঘর্ষের ফলে যে আওয়াজ হলো তা এসে কানে লাগল ইরহামের৷ ইরহাম নুসরাতের নীরবে করা রাগ তার প্রতি কতটুকু হয়েছে তা উপলব্ধি করাচ্ছে এভাবে। কোনো কথা না বলে নির্লিপ্ততার সহিত নুসরাতের পায়ের বাঁধন খুলে দিল। নুসরাত সুর গলার নিচে নামিয়ে ইরহামের শোনার মতো করে আওড়ায়,”তোর সাথে সম্পর্ক আমার এখানেই শেষ।
নুসরাত এসব বললেও আধঘন্টা পর তাদের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই ইরহাম ও নুসরাতের কথায় মোটেও বিচলিত হলো না। ইরহাম নুসরাতের পা খুলে দিতেই ওঠে দাঁড়ায়। এতক্ষণ পা বাঁধা থাকায় অসাড় হয়ে আছে। তাই নাড়ানোর সক্ষমতা হারিয়েছে অনেক আগে। নিজের জায়গায় আবারো বসে গিয়ে পা ঝাড়া দেয়। মুখ ব্যথাতুর বানিয়ে ওঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালালে আরশ তার দিকে কিছু একটা ছুঁড়ে মারে। গমগমে স্বরে বলে ওঠে,” ক্যাচ!
নুসরাত ক্যাচ ধরার আগে তা পাশ কাটিয়ে চলে যায়। বিরক্ত হয়ে নুসরাত পিছু ফিরে, তখনই মাহাদি হাত বাড়িয়ে চাবি একটা নুসরাতের হাতে ধরিয়ে দেয়। নুসরাতের কানে এসে বারি খায় একটা কথা। আরশ পেছন থেকে শক্ত গলায় বলছে,”তোকে বলেছি আমি চাবি খুঁজে দিতে? আরেকবার দেখেনেই তোকে ওর আশেপাশে, তোকে আমি কোপাবো! আই এগেইন রিপিট দেট, মাহাদি তোকে আমি কোপাবো!
আবিরের অবস্থা নাজেহাল। ভয়ে হাত-পা সব অসাড় হয়ে আসছে। অস্বাভাবিক কাঁপা কাঁপছে তার হাত-পা। ঘামাক্ত মুখ একহাত দিয়ে মুছে নিল। নুসরাত সেদিকে তাকিয়ে আবিরের উদ্দেশ্যে গুড বায় হাত নাড়াল। হেসে হেসে বলে ওঠল,”আপনার দিনটা ভালো কাটুক, এই হালুমের সাথে। বেঁচে থাকেন যদি অবশ্যই আমি নুসরাত নাছির বস্তির মেয়ে ফল নিয়ে আপনার সাথে দেখা করতে আসবো। আপনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। এছাড়া আর কোনো দোয়া এই মুহুর্তে করতে পারছি না।
ইরহাম আর নুসরাত দু-জন একসাথে দু-হাত তুলে মুখের সামনে ধরল। সমসুরে বলে ওঠল,”আমিন!
বলে দু-জন দু-হাত দিয়ে মুখের মধ্যে হাত বুলালো। মাহাদি দু-জনের কান্ড দেখে হাসছে। আরশ নিজের চেয়ারে চুপচাপ বসে থেকে ভ্রু বাঁকিয়ে লক্ষ করছে দু-জনের কান্ড। নুসরাত এবার আরশের দিকে তাকিয়ে কপালে হাত ঠেকাল। অত্যন্ত বিনয়ের সহিত সালাম ঠুকল,”আসসালামু আলাইকুম বড় ভাই!
আরশ চুপচাপ তাকিয়ে থাকল নুসরাত পানে। নুসরাত দরজা দিয়ে বের হতে যাবে আরশ আদেশ দিল,”দাঁড়া..!
নুসরাত ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই আরশ গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে,”সোজা হয়ে দাঁড়া!
নুসরাত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ঠোঁট এলিয়ে হাসার পূর্বেই নিজের বাঁ-গাল দিয়ে বয়ে গেল জোরালো থাপ্পড়। থাপ্পড়ের জোরে নুসরাতের মুখ ঘুরে গেল অন্যপাশে। আবারো মুখ তুলে তাকাতেই আজকের দিনের মধ্যে চতুর্থ থাপ্পড় পড়ল নুসরাতের গালে। নুসরাত বিমূর্ত! বিস্ময়ে কোটর থেকে চোখ বের হওয়ার মতো। দু-ইঞ্চি হা করে তাকিয়ে আছে আরশের দিকে।
ইরহাম চোখ নিচের দিকে নামিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আরশ বা নুসরাতের কোনো কথায় বা কাজে হস্তক্ষেপ করল না। চোখ নিচের দিকে স্থির থাকতে থাকতে কান বাজানো আরেকটা থাপ্পড় পড়ল। সেই থাপ্পড়ের শব্দ পুরো রুমে প্রতিধ্বনি হলো। ইরহাম ভয়ে ভয়ে নুসরাতের দিকে চোখ তুলে তাকাল। মনে করল এইতো গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসানো মেয়েটার, কিন্তু তেমন কিছু নেই। আড় চোখ সামনে ঘোরাল। দেখল সঠান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আরশের উজ্জ্বল শ্যাম গালে থাপ্পড়ের চিহ্ন। ইরহাম শঙ্কিত হওয়া চোখ আবারো ঘুরিয়ে নিল নুসরাতের দিকে। নুসরাত একহাত কোমরে রেখে কিছু না হওয়ার ভঙ্গিতে বলে ওঠল,”কী বাচ্চাদের মতো থাপ্পড় মারছেন? থাপ্পড় মারতে হয় এভাবে, পুরো রুম কাঁপিয়ে। এভাবে শিশুদের মতো থাপ্পড় মারলে চলে?
ইরহাম নুসরাতকে টেনে পেছনে সরিয়ে নিতে চাইল, নুসরাত হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ইরহামকে দূরে সরিয়ে দিল। বিরক্তি ভরা কন্ঠে আওড়াল,”এই সমস্যা কী তোর? দেখছিস না, বড় দু-জন মানুষ কথা বলছে? এর মধ্যে তুই ছোট মানুষ তোর নাক ঢোকাস কেন?
আরশের দিকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বিনয়ী হাসল নুসরাত। অতঃপর অত্যন্ত নম্র গলায় বলে ওঠল,”ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আজ তাহলে আসি বড় ভাই?
নুসরাত জিজ্ঞেস করল যাওয়ার কথা কিন্তু, আরশের উত্তরের পরোয়া না করে রুম থেকে বের হয়ে গেল। ঠা করে খোলা দরজা দিয়ে নুসরাত বের হওয়ার ত্রিশ সেকেন্ড পর বের হলো আরশ। করিডোরে কাচের তৈরি রেলিঙের সামনে গিয়ে টানটান হয়ে দাঁড়াল। চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণতায় পরিপূর্ণ। দো-তলা থেকে দাঁড়িয়ে, নিচে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নুসরাতের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুঁড়ল। ইরহামের সাথে কিছু একটা নিয়ে কন্ঠ খাদে নামিয়ে ঝগড়া করতে ব্যস্ত সে। ইরহাম ক্ষীণ স্বরে কিছু একটা বলে ঝাড়ি মারছে নুসরাতকে। তারপর নিজের হাতের মুঠোয় থাকা নুসরাতের হাত ঝটকা মেরে ফেলে দিয়ে হনহন করে চলে যাচ্ছে।
প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২২
নুসরাতও একহাত উপরে তুলে অন্যহাত কোমরে রেখে হেলেদুলে ইরহামের পেছন পেছন গান গেয়ে গেয়ে বের হচ্ছে। ঠোঁটে লেগে আছে মারাত্মক হাসি, ইরহামকে জ্বালাতে পারায় এই হাসি হয়তো আয়ত্ত করেছে নুসরাতের ঠোঁট। আরশ হুডির ক্যাপ মাথায় তুলল একহাতে টেনে। নির্মিশেষ দৃষ্টি তখনো স্থির নুসরাতের দিকে। নিজের দু-হাত অলস ভঙ্গিতে প্যান্টের পকেটে পুরে ব্ল্যাক কার্ড বের করল। তর্জনী আর মধ্যমা আঙুলের মধ্যে রেখে তা ঘোরাল কয়েক সেকেন্ড। চোখ ব্ল্যাক কার্ডের ওপর স্থির রেখে ঘাড় বাঁকা করল। মড়মড়ে শব্দ হলো তাতে। কার্ড আঙুল দিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে মাহাদির উদ্দেশ্যে শক্ত কন্ঠে উচ্চারণ করল,”শুট হিম!