প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২৩

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২৩
জান্নাত নুসরাত

মমো রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা কুকুরটাকে কিছুক্ষণ চুপচাপ দেখল। কুকুরটাকে জ্বালানোর জন্য মাথায় চাপল দুষ্টু বুদ্ধি। কুকুরের পেছনে লাগার জন্য আশেপাশে চোখ বুলালো। আজ আর কাল মিলিয়ে দু-দিন, মেজ মামার বাড়িতে ইরহাম আর নুসরাতের চুলোচুলি হয়নি তাই বিনোদন দেখা থেকে দূরে তারা সবাই। কুকুরকে জ্বালানোর উদ্দেশ্যে পা বাড়ানোর আগে ঘেউ করে ডেকে কালো কুকুরটা ওঠে দাঁড়াল। বাঁকা কুচকুচে কালো লেজ নাড়িয়ে নিজের লাল চোখ দিয়ে মমোর দিকে তাকিয়ে গা ঝাড়া দিল।

এতক্ষণে মমোর টনক নড়ল, কুকুরটা নির্ঘাত তাকে কামড় দেওয়ার জন্য এদিকে গা ঝাড়া দিয়ে আসছে। চোখ বড় বড় করে মমো দাঁড়িয়ে রইল নিজের জায়গায়। কুকুরটাকে হিংস্র গতিতে তার দিকে তেড়ে আসতে দেখে হুঁশ ফিরল। পা ঘুরিয়ে দৌড় দেওয়ার পূর্বে জুতোর ফিতে ছিঁড়ে মুখ থুবড়ে উল্টে পড়ল কংক্রিটের রাস্তায়। মুখ রাস্তায় স্পর্শ করার আগে নিজের দু-হাতের তালুর আড়ালে ঢেকে নিল তা। এতে করে মুখের শেষ রক্ষা হলেও হাতের উল্টো পিঠ ছেঁচে গেল খারাপভাবে। মুখ থুবড়ে পড়ার জন্য হাঁটু আর পায়ের নখে ব্যাখ্যা না করার মতো ব্যথা পেল। পায়ের নখ হয়তো উপড়ে গেছে নয়তো কোনোরকম চামড়ার সাথে ঝুলে আছে। ঘাড় সামান্য বাঁকানোর আগে ভেবে নিল কী কী হতে চলেছে তার সাথে। সাথে সাথে জীবনে করা সব পাপের জন্য তওবা করে নিল। অতিরিক্ত ব্যথায় ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠল। কান্নারত গলায় মৃদু স্বরে আওড়াল,”মামনি!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফিসফিসে স্বরে কাঁদতে কাঁদতে তা জোরালো রুপ ধারণ করল। নিজের পেছনে থাকা কুকুরটা উচ্চ শব্দে ঘেউ ঘেউ করছে তা শোনার প্রয়োজন বোধ করল না মমো। সে নিজের চিন্তায় একান্ত ব্যস্ত হলো। নিজেকে গালি দিল কেন এই পাগল কুকুরের পেছন লাগতে গিয়েছিল? মমো এত চিন্তায় মশগুল হলো ভুলেই গেল এতক্ষণ হয়ে গেল কুকুর কেন তাকে কামড় দেয়নি! যখন এই কথা মাথায় আসলো সামান্য ঘাড় বাঁকিয়ে পেছনে ফিরল। দেখল কুকুর একপাশে পড়ে আছে। গায়ের মধ্যে মারের দাগ। জিহ্বা বের করে অস্বাভাবিকভাবে কাতরাচ্ছে। এক চোখ কুঁচকে মমো বিড়বিড় করল,”এরকম বেরহরমের মতো কে মেরেছে!

চোখ ফিরিয়ে যাকে দেখল তাতে নিজের ভেতরে এতক্ষণে উদয় হওয়া সব ভয় এক নিমেষে দূর হয়ে গেল। স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল সে। আরশ হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তার দিকে। ইশারা করছে হাত ধরে ওঠে আসতে। খুশির তোপে মমোর চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল৷ কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে ঠোঁট ভেঙে ডেকে ওঠল,”ছোট ভাইয়া..!
আরশ কথা বলল না। গম্ভীর মুখভঙ্গি নিয়ে মমোর পাশে পা ভেঙে বসল। কাঠখোট্টা গলায় জিজ্ঞেস করল,”ব্যথা পেয়েছিস?

মমো উপর-নিচ মাথা নাড়িয়ে স্বীকারক্তি দিল ব্যথা পেয়েছে বলে। আরশের হাঁটু কংক্রিটের রাস্তা ছুঁতেই মমোকে তুলে বসানোর চেষ্টা করল। মমো লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে মাহাদির দিকে তাকাল। আরশের হাতে ধরে ওঠে বসতে চাইল না। তাই আরশ নিজ উদ্যোগে মাহাদির উদ্দেশ্যে সামান্য শব্দে বলে ওঠল,”ওদিকে তাকা!
মাহাদি অবাক হয়ে নিজের দিকে আঙুল তুলে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুধাল,”আমি!
আরশ আশেপাশে তাকিয়ে বিরক্তির সুরে হেয়ালি করে বলে,”তুই ছাড়া আর এখানে কেউ আছে?
মাহাদি নাক কুঞ্চন করে পিছু ফিরল। মিনমিন করে আওড়াল,”এই ভদ্রমহিলার মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই নাকি। বিরক্তিকর!

আরশ মমোর দিকে ফিরে তাকে সুন্দর করে বসিয়ে দিতে দিতে মাহাদিকে আবারো সাবধানী বাণী দেওয়ার মতো করে ধমকিয়ে ধমকিয়ে বলল,”চোখ নিচের দিকে, ভুলেও এদিকে যেন না আসে।
আরশের ধমকানোতে মমো শঙ্কিত হওয়া কোণা চোখে তাকাল নিজের থেকে দু-হাত দূরে। কুকুরটা মার খেয়ে আধমরা হয়ে পড়ে আছে এক কোণায়। তার পাশ ঘেঁষে পড়ে আছে শক্তপোক্ত লাকড়ির মোটা দুটো টুকরো। কুকুরটা মার খাওয়ার তোপে লম্বা লকলকে জিহ্বাখানা বের হয়ে আছে মুখের বাহিরে। ওতে করে কুকুরটাকে দেখতে এখন আরো বেশি বিশ্রী ঠেকছে মমোর নিকট।

মমো চোখ ঘুরিয়ে ভয়ে ভয়ে আরশের দিকে তাকাল। ঢোক গিলে কিছু বলার পূর্বেই আরশ বড় ভাইয়ের মতো মমোর হাঁটুর নিচে একহাত ঢুকিয়ে অন্যহাত দিয়ে পিঠ চেপে ধরে আলগোছে কোলে তুলে নিল। মেয়েলি শরীরের কোনো জায়গায় অস্বাভাবিক স্পর্শ না লাগার জন্য যতেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করল।
আকস্মিক কোলে তুলে নেওয়া মমো হকচকাল। চোখ বড় বড় করে ভাইয়ের পানে চেয়ে মিনমিন করে কিছু বলার পূর্বেই আরশ ধমকাল,”এত বড় মেয়ে কুকুরের পেছনে লাগতে যাস কেন? বাচ্চা রয়েছিস তুই? থাপড়ে গাল ফাটিয়ে দিব আরেকদিন এসব করতে দেখলে!
মমো ভয়ে ভয়ে উপর-নিচ মাথা নাড়াল। আর জীবনে এসব সে করবে না। বুকের ভেতর মাংস পিণ্ডটা ধুকধুক শব্দে স্পন্দিত হচ্ছে। চোখ খিঁচিয়ে নিল সে। ভয়ে শঙ্কিত হওয়া মনে বিড়বিড় করল,”লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।

সাথে সাথে নুসরাতের জন্য সমবেদনা প্রকাশ করতে ভুলল না। চিন্তা করতে ব্যস্ত হলো, এই রাগী ব্যাটার সাথে সংসার করবে কীভাবে বেচারি। ব্যথিত মনে যখন নিজের পাশে তাকাল তখন কানে পুরুষালি গলার আওয়াজ বাজল। মাহাদি গলা নিচে নামিয়ে মমোকে স্পষ্ট ঠাট্টা করে বলছে,”তোমার পড়ে যাওয়া ছাড়া কোনো কাজ নেই? যেখানে যাই সেখানেই তুমি উল্টে পড়ে থাকো। অকর্মার ঢেকি!
মমো নাক ফুলিয়ে আরশের দিকে তাকিয়ে নীরবে নিজের অভিযোগ জানাল। আরশ মাহাদিকে চোখ রাঙিয়ে চুপ থাকতে বলল। চোখের ইশারায় কিছু একটা কথা সেরে নিল নিজেদের মধ্যে। মাহাদি মাথা নাড়াতেই আরশ বলে ওঠল,”মাথা ফাটাবো তোর, আমার বোনকে কিছু বললে।

মমো নীরবে দেখল আরশ আর মাহাদির চোখাচোখি। নিজ মনে নিজেকে প্রশ্ন করল,”আমি কী ছোটো বাচ্চা, যে এরা আমাকে এভাবে বোঝ দিচ্ছে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে শরীরের পুরো ভার ছেড়ে দিল আরশের গায়ে। অস্বস্থিতে ঘাট হওয়ার কথা থাকলেও মমোর একটুও অস্বস্থি হলো না আরশের কোলে। আরশ তাকে এমনভাবে ধরে রেখেছে যেন হাতের স্পর্শ এদিক সেদিক একবারও নাহয়।

সোফার ওপর মমোকে বসিয়ে দিয়ে আরশ পাশে বসল। লিপি বেগমকে ডেকে ওঠল,”মাম্মা, দেখে যাও!
লিপি বেগম তড়িঘড়ি করে এসে উপস্থিত হলেন নিচে। তিনি আরশের রুম পরিস্কার করতে ব্যস্ত ছিলেন। ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল কাপড়। নিচে নেমে এসেই কোনোদিকে চোখ না দিয়ে ঠাস করে আরশের কাঁধে থাপ্পড় বসালেন। আরশ মুখ ব্যথাতুর বানিয়ে মোলায়েম কন্ঠে বলে ওঠল,”মাম্মা, কী সমস্যা কী তোমার? এভাবে হামলা করছ কেন? কী করেছি আমি?
লিপি বেগম চোখ রাঙিয়ে আরেকটা থাপ্পড় বসালেন আরশের পিঠে। রাগী মুখে বললেন,”এই তোর সমস্যা কী! এক কাপড় রোজ পরে বাহিরে যাস, তারপরও রুম গরুর গোয়ালের মতো রাখিস কেন?
কথা শেষ করেই আরেকটা থাপ্পড় মারলেন আরশের কাঁধে। আরশ কাঠখোট্টা গলায় বলল,”এক কাপড় পরিনা, অল ক্লথস হেভ দ্যা সেম কালার।

লিপি বেগম ধুপ করে কিল বসালেন। তারপর জানতে চাইলেন,”তোকে বলেছি এখানে ইংরেজি ঝাড়তে? ইংরেজ!
আরেকটা থাপ্পড় মারার আগেই সোফার ওপর বসে কিটকিট করে হাসা মমোকে লক্ষ করলেন। এক পা সেন্টার টেবিলে রাখা তার। লিপি বেগম এগিয়ে গিয়ে পাশে বসতেই হাতের পিঠে জখম, কপালের কোণে, পায়ের বুড়ো আঙুলের নখের মধ্যে জখম দেখলেন। নখটা অবস্থা দেখে গা গুলালো লিপি বেগমের। হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলেন বুড়ো আঙুলের চামড়ার পাশ। হাঁটুর মধ্য রক্ত বের হওয়ায় প্লাজো সালোয়ার এর উপর দাগ বসে গিয়েছে, সেদিকে চোখ রেখে লিপি বেগম জিজ্ঞেস করলেন,”ব্যথা হচ্ছে?

মমো ঠোঁট টিপে ওপর নিচ মাথা নাড়াল। লিপি বেগম কীভাবে হলো তা জানার প্রয়োজন বোধ করলেন না। দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে নিয়ে আসলেন ফাস্ট-এইড-বক্স। মমোর পাশে বসতে বসতে চোখ ফিরলেন আরশ আর মাহাদির দিকে, দু-জনকে রুমে যাওয়ার জন্য বলতে, কিন্তু তা বলার পূর্বেই দেখলেন দু-জন চলে যাচ্ছে সিঁড়ির দিকে। চোখ ফিরিয়ে নিয়ে তুলো দিয়ে প্রথমে নখের আশপাশ পরিস্কার করলেন। তারপর সেখানে স্যাভলন দিতেই মমোর মুখ দিয়ে ব্যথাতুর শব্দ বের হলো।

আরশ বড় বড় পা ফেলে করিডোর পেরিয়ে চলে গেছে। মাহাদি দো-তলার করিডোরের ওপর থেকে চোখ ফিরিয়ে এক পলকের জন্য তাকাতেই পুরুষালি শরীরটা টানটান হয়ে গেল। চোখের মধ্যে ভাসল সাদা ধবধবে মেয়েলি পা।
লিপি বেগম মমোর সাথে কথা বলতে বলতে হাঁটুর ওপর কাপড় তোলার আগে থেমে গেলেন। ঘাড় বাঁকিয়ে উপরে তাকাবেন ভাবলেন, তার আগেই মাহাদি সেখানে থেকে চলে গেল।
লিপি বেগম ঘাড় কাত করে ডেকে ওঠলেন,
“সেজ এইদিকে আয় তো!

ঝর্ণা বেগম নিজের মায়ের সাথে কথা বলছিলেন। লিপি বেগমের ডাকে সাড়া দিতে তাড়াহুড়ো করে ফোন রেখে দৌড় দিয়ে আসলেন নিচে। ততক্ষণে মুখে জি আপা, জি আপা বলে ফেনা তুলে ফেলেছেন। রুহিনী নিজেও হই হুল্লোড় শুনে এসে হাজির হলেন। মমোকে সোফার ওপর আঘাতপ্রাপ্ত দেহ নিয়ে পড়ে থাকতে দেখে দু-জনের বিস্ময়ে মুখ হা হয়ে গেল। রুহিনী এমন অবস্থা দেখে হেসে দিলেন। যেখানে সেখানে, সিরিয়াস মুহুর্তে হাসির ব্যামো আছে উনার। তার এই ব্যামো খুবই নিপুণভাবে কেড়ে নিয়েছে সৈয়দ বাড়ির পঞ্চম সদস্য। রুহিনী বেগম মজা করে বললেন,”কিরে মমো আবার কোথায় উল্টে পড়লি? যখনই আসিস, তখনই কাঁদায় গড়াগড়ি,না হয় রাস্তার নোংরা পানিতে গড়াগড়ি খেয়ে আসিস। কেনরে তুই হাঁটতে পারিস না? ছোটবেলায় কী তোকে আমরা হাঁটা শিখাইনি?
কথাটা শেষ করে রুহিনী বেগম শব্দ করে হাসতে লাগলেন। অতিরিক্ত হাসির জন্য চোখের কোণে পানি জমা হলো তাই ওড়নার কোণ দিয়ে চোখ মুছলেন। মমো অতি দুঃখে নিজেও হেসে দিল রুহিনী বেগমের সাথে। লিপি বেগম ঠোঁট টিপে হেসে বললেন,”ছোটো তুই আয় এদিকে, তোর স্বাস্থ্য ভালো আছে। মমোকে আমার রুমে নিয়ে যেতে সাহায্য কর।
রুহিনী নাক ফুলিয়ে ডেকে ওঠেন,

“আপা!
লিপি বেগম আর ঝর্ণা বেগম হেসে ওঠলেন। মমোকে কাঁধে ভর দিয়ে ওঠে দাঁড়াতে বললেন। মমো পায়ের পাতায় ভর দিতেই গায়ে কাঁপুনি শুরু হলো। ধুপ করে আবার বসে গেল নিজের জায়গায়। ঝর্ণা বেগম কিছুটা হেসে বললেন,”মমো যেখানে দাঁড়াতে পারছে না সেখানে উপরে ওঠে যাবে কী করে! এককাজ করি, আপা আর ছোটো মমোর দু’হাত ধরো, আর আমি পা ধরে ওকে উপরে নিয়ে যাব।
ঝর্ণা বেগমের কথায় হেসে দিলেন উপস্থিত সবাই। রুহিনী বেগম বললেন,”মমো দেখলি তোর ভাগ্য, এই বয়সে এসেও মামিদের কোলে চড়ার মতো সৌভাগ্য হলো।
রুহিনী বেগম মমোকে ভয় দেখাতে দু-পা এগোলেন মমোর দিকে। মমো আতংকিত হয়ে চিৎকার করে ওঠল। রুহিনী বেগম হাসি মুখে দু-হাত তুলে বললেন,”আয় মমো, মামনির কোলে আয়!
মমো পেছনের দিকে সরতে সরতে বলে ওঠল,

“সেজ মামনি, ছোটো মামনিকে দূরে সরান।
রুহিনী বেগম ড্রয়িং রুম কাঁপিয়ে হাসতে লাগলেন। জায়িন রুম থেকে বের হয়ে এদিকে আসতেই লিপি বেগম বললেন,”বাবা একটু সাহায্য কর!
জায়িন এক ভ্রু উঁচু করে গম্ভীর গলায় শুধাল,
” কী সাহায্য?
“মমোকে একটু আমার রুমে পৌঁছে দিয়ে আয়।

জায়িন এবার মমোর দিকে তাকাল। পরপর চোখ সরিয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,”কী হয়েছে?
” পায়ে ব্যথা পেয়েছে।
জায়িন আর কোনো শব্দ ব্যয় করল না। আলগোছে হেঁটে এগিয়ে গেল মমোর কাছে। কোলে তুলে নিয়ে গটগট করে চলে গেল উপরে। মমোর এবার আরো দ্বি-গুণ তালে বুক কেঁপে ওঠল ভয়ে। চোখ তুলে চাপদাড়ির আড়ালে ঢাকা শুভ্র মুখখানা লক্ষ করল। দূর থেকে এই লোককে দেখলেই ভয় লাগে কিন্তু কাছ থেকে আরো বেশি। মমো গুটিয়ে নিল নিজেকে। রুমে এসে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আলগোছে বের হয়ে গেল জায়িন। রুহিনী একটু দ্বিধাহীনতায় ভুগলেন। জিজ্ঞেস করলেন,”তুই এখন হাঁটতে পারছিস না, তাহলে আমাদের বাসায় কীভাবে হেঁটে আসলি? নাকি মামিদের কোলে চড়ার ধান্দা করেছিস বলে তখন ওভাবে বসে গেলি? হু, বল মমো?

লিপি বেগম রুহিনী বেগমকে থামিয়ে দিয়ে উত্তর দিলেন,”আরশ কোলে করে নিয়ে আসছে।
রুহিনী বেগম হতাশ কন্ঠে বলে ওঠলেন,
” মমোরে, মমোরে, এই বয়সে এসে তুই দুই দুইবার ভাইদের কোলে চড়ে বসলি। কী ভাগ্যরে তোর! তোর মামা এখন পর্যন্ত আমাকে একবারও কোলে চড়ায়নি।
বেফাস কথাটা শেষ করে জিভ কাটলেন রুহিনী বেগম। বুঝলেন, তিনি ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছেন জায়েদের সামনে। তাই পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য জোরে হেসে দিলেন। মিনমিনিয়ে বললেন,”মজা করছিলাম আপা।

আরশ আর মাহাদিকে করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জায়িন এগিয়ে আসলো দু-জনের কাছে। গম্ভীর গলায় শুধাল,”দু-জনে কী খিচুড়ি পাকাচ্ছিস?
আরশ নিজের দিকে আঙুল তুলে দু-পাশে মাথা নাড়াল। মাহাদি ও সেইম করল আরশের মতো করে। জায়িন গিয়ে সোজাসুজি দাঁড়াল দু-জনের সামনে। আরশ আর জায়িন সমান উচ্চতার হওয়ায় দু-জনের চোখাচোখি হলো প্রথমেই। গায়ের দিক দিয়েও দু-জনে সুঠাম দেহি। তাদের মধ্যে মাহাদি এক ইঞ্চি ডিফারেন্সে খাটো। কাছে থেকে দেখলে বোঝা যায় মাহাদি একটু খাটো আরশ আর জায়িনের তুলনায়, কিন্তু দেহের দিক দিয়ে মাহাদিও সমান সুঠাম দেহি, টগবগে পুরুষ। রুপে, জৈলুষ্যে, সৌন্দর্য্যে, এই দুই ভাইয়ের থেকে কম কিছু না। জায়িন ধবধবে ফর্সা হওয়ার ধরুণ উজ্জ্বল শ্যামলা আরশকে তার সামনে দাঁড়ানোতে কিছুটা কালো দেখাল। আরশ মেকি হাসতেই বাঁ-গালে গর্তের সৃষ্টি হলো। ঠোঁটের কোণ ঘেঁষে ফুটে ওঠল সুক্ষ্ম সুতো পরিমাণ খাঁজ। জায়িন নিজেও আরশকে ভেঙিয়ে মেকি হাসল। তারও ঠোঁটের ডানদিক দিয়ে সুতো পরিমাণ খাঁজের সৃষ্টি হলো। আরশকে তীক্ষ্ণতার সহিত অবলোকন করতে করতে জায়িন নিজের খাঁড়া নাকে চুলকালো। তারপর এক ভ্রু তুলে রেড চেরির মতো লাল ঠোঁট জোড়া নাড়িয়ে শুধাল,”হাসছিস কেন?
আরশ বলল,

“এমনি!
জায়িন দু-হাত আড়াআড়ি বুকে বেঁধে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজাল। তীক্ষ্ণ চোখে আরশকে দেখে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,”ধুমপান করা ছেড়ে দিয়েছিস, নাকি এখনো করিস?
আরশের থেকে চোখ সরিয়ে মাহাদির পানে চাইল। যার মানে দু-জনের কাছে উত্তর চাচ্ছে সে। মাহাদি সাথে সাথে বলে ওঠল,”তুমি সে-বার না করার পর হাত ও দেইনি। গড প্রমিজ ভাইয়া।
আরশ ত্যাড়া গলায় জিজ্ঞেস করল,
“সত্যি বলব নাকি মিথ্যে?

জায়িন একহাতের শার্টের হাতা গুটিয়ে নিল। তীক্ষ্ণতা পরিপূর্ণ আওয়াজে হিসহিসিয়ে বলল,” মিথ্যেই বল, শুনি!
মাহাদি আলগোছে দু-পা পেছনে সরে গেল। চোখের সামনে ভাসল ফ্রান্সে থাকার সময়কার একটা কথা। বছরখানেক আগে সিগারেট খাওয়ার সময় ছাদে হাতেনাতে ধরা পড়েছিল জায়িনের কাছে সে আর আরশ। এই লোক রাগে না কিন্তু সেদিন দেখার মতো রাগ করেছিল। শুভ্র মুখ রাগের জৈলুষ্যে ভয়ংকর দেখাচ্ছিল। ছাদের ওপর পড়ে থাকা রডের লাঠি নিয়ে এসে কোনো কথা ছাড়া অতর্কিত হামলা করেছিল তাদের দু-জনকে পেছন থেকে। মার খাবে জানলে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে থাকতো, কিন্তু এই লোক কোনো পূর্ব প্রস্তুতি নিতে দেয়নি তাদের। এত মার খেয়েছিল পায়ের হাড্ডি ভেঙে একমাস বিছানায় পড়েছিল।। তাদের সেবা ও করেছে এইলোক। জুতো মেরে গরুদান যাকে বলে সেরকমই কিছু।

এখনো চোখে ভাসে মাহাদির, পা ব্যান্ডেজ করে পঙু হয়েছিল। যে দেখতে এসেছে বলে গিয়েছে খুব ভালো হয়েছে। তার নিজের বাপ ও জায়িনের পিঠে চাপড় মেরে বলেছিল,”গুড জব ম্যান।
একটুও সহানুভূতি দেখায়নি তাকে আর আরশকে। এরপর কোনোদিন সিগারেটে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখেনি সে, কিন্তু তার পাশে দাঁড়ানো, তার অতি প্রিয় বন্ধু ভাইয়ের কথা না শুনে আবারো সিগারেট খেয়েছে। সেবার লাস্ট ওয়ার্নিং ছিল জায়িনের কাছ থেকে। নিষেধাজ্ঞা জারী করেছিল যেন এধরণের কোনো কাজ করতে না দেখে। আর দেখলে আগেরবার একমাস বিছানায় পড়ে থাকতে হয়েছিল, পরেরবার একমাস নয় সারাজীবনের জন্য পড়ে থাকতে হবে।
মাহাদির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপল। আজ বন্ধুর দায়িত্ব একদম ভালো করে পালন করবে সে ভেবে নিল। আরশকে ফাঁসিয়ে দিতে বলে ওঠল,”ভাইয়া এখনো সিগারেট খায় ,কয়েক ঘা লাগিয়ে দেন।

কথা শেষ করে কেটে পড়ল। এখন কয়েকটা খাক এই রামছাগল। সারাদিন তার ওপর চড়াও হয়, উনার ওপর চড়াও হওয়ার লোক আছে সেটাও একটু বুঝুক।এবার একা ঠেলা সামলাক। আজ সে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করছে। বন্ধুত্বের গুরু দায়িত্ব হলো, প্রতি পদে বন্ধুকে বাঁশ দেওয়া। আর আজ তা সে পালন করেছে, এবার চলে গেলেও কিছু হবে না। তাই আলগোছে কেটে পড়ল।
জায়িন আরশের দিকে তাকাল ভ্রু বাঁকিয়ে। সামান্য কপাল কুঞ্চন করতেই আরশ গম্ভীর গলায় বলল,”ছেড়ে দিয়েছি!
জায়িন এবার অন্যহাতের হাতা গুটিয়ে বলল,
“সত্যি বল?
“বেশি না দিনে চারটা, রাতে চারটা।

সপ্তাহ খানিক বাদে। বুধবার রাত। নাছির মঞ্জিলের লাইব্রেরি রুমে গোপন বৈঠক বসেছে। আজকের গোপন বৈঠকে উপস্থিত আছেন নাজমিন বেগম। নুসরাত নাছির সাহেবকে নাকি স্বরে অভিযোগ করল,”আব্বা আপনার ভাইয়ের ছেলে আমার বাইক বম মেরে উড়িয়ে দিয়েছে গত সপ্তাহে।
“আর তুই কী করেছিস?
নাজমিন বেগমের প্রশ্নে নুসরাত চোখ ঘুরিয়ে তাকাল। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে চিৎকার করে ওঠল। সাথে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”আমি সত্যি বলছি কিছু করিনি।
কথাটা শেষ হতে পারল না চলতে থাকা ঠোঁটে উল্টো হাতের থাপ্পড় পড়ল। তারপর দু-গালে পড়ল। কানে আসলো নাজমিন বেগমের কথা,” আমাকে চোখ দেখাস তুই? আমাকে দাঁত দেখাচ্ছিস তুই? আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলিস তুই? যা এখান থেকে ভাগ!

নুসরাত পরপর কষে কয়েকটা থাপ্পড় খেয়ে গাল ফুলিয়ে বসে রইল। মুখটা একদম ভোতাঁ হয়ে আছে। নুসরাত নাজমিন বেগমের থেকে দূরে সরতে সরতে বলল,”আব্বা দেখছেন আপনার ভদ্রমহিলা আমাকে কীভাবে পিঠাল? আব্বা আপনি কিছু বলুন না?
নাজমিন বেগম তেড়ে আসবেন তার আগেই নাছির সাহেব নাজমিন বেগমকে চোখ দেখালেন। ইশারায় বসতে বললেন। নাজমিন বেগম খেপাটে চোখে তাকিয়ে বসে গেলেন নিজ জায়গায়। নুসরাত থাপ্পড় খাওয়ার ভয়ে ভেগেছিল দরজার দিকে, নাজমিন বেগমকে বসে যেতে দেখে নিজেও এসে বসল ইসরাতের পাশ ঘেঁষে। ইসরাত ঠোঁট টিপে হাসছে। নুসরাত কপাল কুঞ্চিত করে হাসি দেখল, তারপর বলল,”হেসে নে, হেসে নে, কয়েকদিন পর জায়িন ভাইয়াকে বিয়ে করে কাজ করবি আর কাঁদবি। হাসি আসবে না তখন। কাঁদবি আর গাইবি, মুঝে পাপা কি ঘার জানা হে। মুঝে হাসনা নেহি আতা হে। মুঝে দুলহান নেহি বাননা হে।

নুসরাত কথা শেষ করতেই পারল না বাজিয়ে দুটো থাপ্পড় পড়ল দু-গালে। নুসরাতের মনে হলো তার সামনের পৃথিবী ঘুরছে। তার মা আজ এত মারছে কেন! কানে এলো নাছির সাহেবের ধমকানো,”নাজমিন একদম বাড়াবাড়ি করবে না! কখন থেকে দেখছি মেয়েটাকে কথা বললেই চড় থাপ্পড় মারছো! কিছু বলছি না মানে এই না যে, কিছু বলব না। চুপচাপ বসো, এত বড় মেয়েকে আরেকবার মারতে দেখলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।
নাজমিন বেগম বসলেন নিজের জায়গায়। বসতে বসতে চোখ দিয়ে নুসরাতকে শাসাতে ভুললেন না। মুখ দিয়ে শাসালেন,”বেশি কথা বলতে দেখলে মুখ সেলাই করে রাখব। দু-সপ্তাহ থাপ্পড় না পড়ায় মুখ বেশি চলছে। একদম বেশি কথা বলতে যেন না দেখি।
নুসরাতের তোতা মুখ ভোঁতা হয়ে গেল। নাছির সাহেব শান্ত কন্ঠে শুধালেন,”তুমি কি করেছ সেটা বলো?
নুসরাত ঠোঁট চেপে মিনমিনিয়ে বলে ওঠল,

“গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছি।
নাজমিন বেগম বললেন,
“দেখেছেন, আপনার মেয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বাচ্চা ছেলেটার গাড়িতে।
নুসরাত চিৎকার করে ওঠল। নাজমিন বেগমের চোখ রাঙানো দেখে নিজের রাগ গলধকরণ করে বলে ওঠল,” আমার একার দোষ শুধু দেখে আম্মা। আরশ ভাই যে আমার গাড়িতে আগুন লাগিয়েছে তা দেখছে না!
নাজমিন বেগম হাত দিয়ে টেবিলে থাপ্পড় মারলেন,
“দেখেছেন, কী সাহস ওর। মুখে মুখে তর্ক করে, আবার দোষ চাপায় ওই বাচ্চা ছেলের ওপর।
নুসরাত চিৎকার করে ওঠে। রাগে হাত মুঠ করে বলে, “উনি বাচ্চা হলে আমি কী? আমি বুড়ো!
নাজমিন বেগম শাসিয়ে বললেন,
” চুপ একদম চুপ!
ইসরাত মাঝখান থেকে বলে ওঠল,

“হয়েছে আম্মু, তুমি এমন বিহেভ করছো সব দোষ নুসরাতের? দু-জনের সমান দোষ আমি মনে করি!
নুসরাত উপর নিচ মাথা নাড়াল। নুসরাতের মষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিল ইসরাতের গালে থাপ্পড় পড়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে। নাজমিন বেগম রেগে ফুসে ওঠে ইসরাতকে একটা দিতে যাবেন নুসরাত টেনে সরিয়ে নিল। নাছির সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলল,” এই ভদ্রমহিলাকে কে বলেছে আমাদের আলোচনায় নিয়ে আসতে। এসেছে থেকে আমাকে পিঠিয়েই চলেছে। এখন নাদান শিশু মেয়েটা একটু পক্ষ পাতিত্ব্য করায় ওকে ও পিঠাচ্ছে। মানে এই ভদ্র-মহিলাকে কেন এখানে এনেছেন আব্বা?
নাজমিন বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন,
“আপনার মেয়ের আচরণ দেখেন, আমাকে ভদ্র মহিলা বলছে। ওকে বলে দিবেন, আমার সাথে আর যেন কোনো কথা না বলে। আমি বলেই আপনার সংসার করছি, আপনার মেয়েদের ফরফরামায়েশ কাটছি, আপনাদের সবকিছু পরোয়া করছি। আর আপনারা আমাকে তার প্রতিদান এই দিলেন। আমার জায়গায় অন্যবেটি হলে এতদিনে মুখের ওপর ঠ্যাং দেখিয়ে চলে যেতো।

কথাটা শেষ করে ওড়না কোণে চোখ মুছলেন নাজমিন বেগম। নুসরাত আর ইসরাত মায়ের দিকে তাকিয়ে সমসুরে বলে ওঠল,”হয়ে গেল গোপন বৈঠক।
কিছুক্ষণ পর,
গোপন বৈঠক চলছে এখনো। নাছির সাহেব গম্ভীর মুখে বসে আছেন। নুসরাত দু-গালে হাত রেখে বসে আছে। নাছির সাহবে নুসরাতকে বললেন,” হাত সরাও গাল থেকে।
নুসরাত দুঃখি মুখে হাত সরাতেই দেখা গেল গালগুলো থাপ্পড়ের চোটে ঠুসঠসে ফুলে আছে। ইসরাত আর নাছির সাহেব নুসরাতের গাল দেখে না চাইতেও হেসে দিলেন। ইসরাত বলে ওঠল,”আব্বু নুসরাতকে কিউট কিউট লাগতাছে না?

নাছির সাহেব মাথা নাড়ালেন। বললেন,
“তোমার মায়ের উচিত প্রতিদিন এরকম করে দেওয়া। তাহলে ওর মুখ দেখতে স্বাস্থ্যবান দেখাবে।
ইসরাত আর নাছির সাহেব হাই-ফাইভ করে হাসলেন। নুসরাত দু-জনের দিকে খেপাটে নজর বুলিয়ে ওঠে চলে যেতে নিবে নাছির সাহেব পিছু ডাকলেন। বললেন,” আগামীকাল সকালে তোমার জন্য নতুন বাইক নিতে যাব। আগে বলে দিচ্ছি, টাকা তুমি দিবে, আমি নিয়ে যাব।
নুসরাত কপাল কুঞ্চিত করল। মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“তাহলে আমি একাই যেতে পারব, আপনার যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
ইসরাত নাছির সাহেবকে বলল,

” আব্বু ছোটো মানুষ কিছু দিয়ে দিয়েন।
নাছির সাহেব নিজস্ব ভঙ্গিমায় বলে ওঠলেন,
“আচ্ছা, ইসরাত সুপারিশ করেছে বলে বিশ টাকে দিব তোমাকে। বাকি টাকা নিজের পকেট থেকে খরচ করবে তুমি।
নুসরাত শক্ত কন্ঠে শুধাল,

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২২ (২)

” আমাকে নিয়ে মজা নিচ্ছেন আপনারা দু-জন?
নাছির সাহেব আর ইসরাত মাথা উপর নিচ নাড়িয়ে রুম কাঁপিয়ে হাসল। তারপর ইসরাত আর নাছির সাহেব বললেন,,”জি হ্যাঁ, আপনাকে নিয়ে আমরা মজা নিচ্ছি।

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here