প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২৫

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২৫
জান্নাত নুসরাত

ইরহামের রুম গোছাতে গিয়ে ঝর্ণা বেগমের হাতে পড়েছে অনেকগুলো প্রেমপত্র। একে একে সব খুলে পড়তেই তার চোখগুলো বৃহৎকার ধারণ করেছে। শুধু কোটর থেকে বেরিয়ে আসার পূর্বক্ষণমাত্র। গোল গোল চোখে মনোযোগ সহকারে কতক্ষণ অবলোকন করলেন চিঠিগুলো। অতঃপর নাইটস্টেন্ড থেকে ফোন হাতে নিয়ে দ্রুত হাতে কল লাগালেন নুসরাতকে। প্রথমবার কল দেওয়ার পর নুসরাত কল পিক করল না। ঝর্ণা বেগম এতে মোটেও বিরক্ত হলেন না। ধৈর্য সহকারে আবারো কল লাগালেন নুসরাতের নাম্বারে। এটা নুসরাতের বদ অভ্যাস প্রথমবারের কলে কারোর ফোন ধরবে না। দ্বিতীয় কলের প্রথম রিং হতেই ধরবে। শ্বাস ফেলে ঝর্ণা বেগম অপেক্ষা করলেন নুসরাতের কল পিক করার। ঝর্ণা বেগমের অতর্কিত চিন্তার ব্যাঘাত ঘটাতে নুসরাত গলা খাঁকারি দিল। অতঃপর উচ্ছাস মিশ্রিত মেয়েলি গলার স্বর ভেসে আসলো কানে,”হ্যাল্লো, বৌমা!

ঝর্ণা বেগমের ঠোঁটে আপনা-আপনি হাসি চলে আসলো। পরমুহুর্তেই মুখ শক্ত করে নিয়ে নুসরাতকে কাঠকাঠ গলায় জিজ্ঞেস করলেন,”ইরহামের বাচ্চা তোদের বাড়িতে?
নুসরাত এক ভ্রু উচিয়ে নির্বিঘ্নে উত্তর দিল,
“হ্যাঁ!।
ঝর্ণা বেগম হেয়ালি না করে সোজাসাপ্টা জানতে চাইলেন,” এই নিয়ে শোহেবের বাচ্চা কয়টা মেয়ের সাথে প্রেম করেছে?
নুসরাত সামান্য অবাক হলো। অতঃপর ইরহামকে বাঁশ দিতে পারবে ভেবে তীর্যক হাসল। হাতের আঙুলে গুণে নিল কতগুলো মেয়ের সাথে এই নিয়ে ইরহাম প্রেম করেছে। সামান্যকাল অতিবাহিত হতেই নুসরাত বিটকেল মার্কা চেহারা বানিয়ে উত্তর দিল,” এই তো বেশি না, মাত্র শ-খানিক হবে।
ঝর্ণা বেগমের কপালে হাত পড়ল। চোখ সরু সরু করে নুসরাতের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়লেন,”এতদিন ধরে আমায় জানাসনি কেন?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নুসরাত সর্দপে বলে ওঠল,
“আমি নুসরাত নাছির কারোর সিকরেট ব্রেক করিনা। আর এটাই আমার বিশেষত্ব্য।
ঝর্ণা বেগম নাক ফুলিয়ে বলে ওঠলেন,
” হাতের কাছে পেয়ে নেই মেয়ে, তোর বিশেষত্ব্য ঝাটা পিটা করে বের করব।
নুসরাত চোখ উল্টালো। ঝর্ণা বেগমের কথা থুড়াই কানে তুলল, সব উড়িয়ে দিল বাতাসের বেগে। ভাবসাব নিয়ে চুল কানের পেছনে গুজতেই ঝর্ণা বেগম বললেন,”সোহেবের বাচ্চা কী কী করে তার সকল খবর আমার চাই!
নুসরাত ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“তোমাকে খবর দিয়ে আমার লাভ কী?
ঝর্ণা বেগম তপ্ত শ্বাস ফেলে শুধালেন,
” কত টাকা চাই?

নুসরাত চোখের পাতা পলক ফেলে হাসল। হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে রেখে বলে ওঠল,”তুমি গৃহিনী মানুষ কতটাকা আর নিব তোমার থেকে, বেশি না একটা খবরের জন্য মাত্র দশ হাজার টাকা।
ঝর্ণা বেগম ঠোঁট চেপে মিনমিন করে শুধালেন,
“ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে না?
নুসরাত বলল,
” আচ্ছা যাও তোমার জন্য দু-টাকা ডিসকাউন্ট করে দিলাম। এর বেশি আর পারব না,আমার ব্যবসায় লাল বাত্তি জ্বলে যাবে। এই মাসে দু-টাকা লস হয়ে গেল।
ঝর্ণা বেগমের সাথে আরো কিছু জরুরি আলাপ সেরে নুসরাত ফোন রেখে দিল৷ তারপর পাশে বসা ইরহামের দিকে চেয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠল।

শ্রীকান্তে, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন,
আমি সমস্তই দেখিলাম সমস্তই বুঝিলাম
যে গোপনে আসিয়াছিল,
তাহাকে গোপনে যাইতে দিলাম।
কিন্তু এ নির্জন নিশীথে, সে যে
তাহার কত খানি আমার কাছে
ফেলিয়া রাখিয়া গেল তাহা কিছু জানিতে
পারিলো না।

ইসরাতের লাইনগুলো আবৃতি শেষেই ইরহাম আর নুসরাত চোরের মতো একে অন্যের দিকে তাকাল। ইসরাত দু-জনের এমন বিহেভিয়ার এর মানে খুঁজে পেল না। হঠাৎ টনক নড়তেই তার সারা শরীর ঝিমঝিম করে ওঠল। বিড়বিড় করে আওড়াল,”এরা আবার ডিপ মিনিং বের করতে নেমে যায় নাকি!
ইসরাতের বিড়বিড় শেষ হতেই ইরহাম আর নুসরাত হেসে ওঠল। দু-জন দু-জনের দিকে এক পলক নজর মিলায় অতঃপর শুধু হাসে আর হাসে। ইসরাত ভাব করল সে শুনছে না নুসরাত আর ইরহামের কথা, কিন্তু এই দুইজন তা হতে দিল না। নুসরাত তর্জনী আঙুল তুলে কপাল ঘঁষার মতো করল। তারপর দৃষ্টি নিবিষ্ট করল ইরহামের পানে। ঠোঁট চেপে হাসি আটকিয়ে খিকখিক করে হাসি গলায় ঝুলিয়ে বলে ওঠে,”গোপনে নির্জনে নিশীথে তার কতটুকু ফেলিয়া রাখিয়া গেল… এর মানে কী রে ইরহাম?
ইরহাম গম্ভীর মুখভঙ্গি করে বলে ওঠল,

“এর ডিপ মিনিং হতে পারে। গোপনে মানুষের অগোচরে..!
কথা শেষ না করে চোখের ইশারায় কিছু একটা বুঝিয়ে দিল। আহান নিজেও হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। শুধু একাই মমো বলদের মতো তাদের এই হাসির মানে খুঁজে পেল না। তাই প্রশ্ন করল,” এত হাসির কী হলো?
ইসরাত হাতের বইয়ে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করল, কান পাতা তখনো মেঝেতে বসা ওই তিন নটান্কীর দিকে। নুসরাত মেঝেতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো পড়ে বলল,”তুই মাঙ্গের নাতি ওগুলা বুঝবি না। এসব বুঝতে লিজেন্ড হতে হয় আমাদের ন্যায়।

কথা শেষ করে হাইফাই করল সবাই। ইসরাত ঠোঁট চেপে বইয়ের আড়ালে মুখ ঢেকে মিটিমিটি হাসছে৷ মমো ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলল,”আপু লাইনগুলো আবার বলো।
ইসরাত নিজের হাসি আটকিয়ে আবারো না বোঝার মতো করে পড়ে শোনাল মমোকে। মমো ঠোঁটের ডগায় শব্দগুলো প্রতিনিয়ত জপল তসবি জপার ন্যায়। তাহার কত খানি আমার নিকট… এখানেই এসে পঞ্চমবারের মতো থমকাল মমো। গোল গোল চোখের বাদামি নয়নের দৃষ্টি প্রথমেই গিয়ে পড়ল আহানের দিকে। আহান হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে। এরপরে পড়ল নুসরাতের দিকে। নুসরাত নির্বিকার চিত্তে আহানের পাশে শুয়ে হাসছে। মমো নুসরাতের চোখে লজ্জার লেশমাত্র দেখতে পেল না। এরপর তার দৃষ্টি ঘুরে গেল ইরহামের দিকে। ইরহাম ও নির্লিপ্ত,ঠোঁটে মিচকে হাসি। ইসরাতের দিকে চোখ পড়তেই দেখল সে আরাম করে শুয়ে বই পড়ছে। ঠোঁট না হাসলেও চোখগুলো হাসছে। বাদামি চোখগুলোতে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ায় জ্বলজ্বল করছে। মমো মৃদু স্বরে নুসরাতের উদ্দেশ্যে বলে ওঠল,”তোর লজ্জা লাগছে না, এর সামনে বসে এরকম নির্লজ্জের মতো কথার মিনিং বের করতে?

নুসরাত ঠোঁট উল্টালো। কপালে তথাকথিতভাবে ভাঁজ ফেলে বলে ওঠল,”ওয়াট দ্যা ফাক! আমার কেন লজ্জা লাগবে? আমি কী কোনো গুণাহ এর কাজ করেছি যে আমার লজ্জা লাগবে?
মমো মাথায় হাত দিল। কিড়মিড়িয়ে বলল,
“একটু শরম কর, ও তোর থেকে চার বছরের ছোট!
নুসরাত বলল,
” তো কী হইছে, ও আমার বান্ধবী! ও তোর থেকে ভালো আমাদের কথা বুঝে, সর সৌদির ভাই!
নাজমিন বেগমকে কিচেন থেকে বের হতে দেখে নুসরাত কথার সুর পালটে ফেলল। আহান ফিসফিস করে নুসরাতের কথাটা পৌঁছে দিল মমোর কানে,”আপু বলতে চাইছে সুদির ভাই!
মমো ধুপ করে একটা কিল বসাল আহানের পিঠে। আহান পিঠ চেপে ধরে চিৎকার করে ওঠল। রাগী চোখে কতক্ষণ মমোর দিকে চেয়ে বলে ওঠল,”আজ বড় বলে ছেড়ে দিলাম, পরেরবার এমন ভুল করার চিন্তাভাবনা করলে একদম সজীবের বাপের সাথে বিয়ে দিয়ে দিব।
মমো হিসহিসিয়ে বলে ওঠল,

“মন্টুর বউয়ের সাথে তোকে বিয়ে দিব।
আহান চোখ উল্টালো ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে। মুখ দিয়ে বের হয়ে আসলো ব্যঙ্গ মূলক শব্দ। নুসরাত আরাম করে শুয়ে ঝগড়া দেখছে। উৎসাহ দিল আহানকে,” আহান লেগে পড়, চুল ধরে ধুমসে কয়েকটা দিয়ে দেয় এই মহিলাকে, না পারলে আমি তোকে সাহায্য করব, বল শুধু!
আহান অফ সোল্ডার টি-শার্টের গলা ঝাঁকাল। ভাবসাব নিয়ে বলল,”শক্তিশালী প্রতিদ্বন্ধী আমি, আমার সাথে লাগতে আসবে না, ছাই করে দিব।
অতঃপর নুসরাত, ইরহাম, আহান একসাথে গলা মিলিয়ে বলে ওঠল,”একদম চু মন্থর চু কালো কুত্তার গু করে দিব। ধূলিসাৎ করে দিব তোকে।
এই তিনজনের কথা শুনে মমোর চোখ ছলছল করে ওঠল। নাক টেনে ইসরাতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই, ইসরাত না চাইতেও শব্দ করে হেসে দিল। তার সাথে মিলিয়ে ওই তিন নমুনা ও হেসে দিল।

একটু আগের ঝগড়ার পর থেকে মমো মুখ ফুলিয়ে বসে রয়েছে। ইসরাত মানানোর চেষ্টা করেছে কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। হাত দিয়ে স্পর্শ করতে গেলেই গা ঝাড়া মেরে ওঠে। নুসরাত আরাম করে একহাত মাথার নিচে ঢুকিয়ে শুয়ে, নড়চড়বিহীন বদনে কাঠপুতলির মতো মমোর আগাগোড়া পরখ করছে। এক ভ্রু উচানো সবসময়ের ন্যায়। ইরহাম আর আহানের অবস্থা একইরকম। মমোকে চোখ দিয়ে গিলছে তিনজনে একসাথে শুয়ে থেকে। হঠাৎ হন্তদন্ত পায়ে কিচেন থেকে ফোন হাতে বেরিয়ে আসলেন নাজমিন বেগম। তৎপরতা নিয়ে বললেন,”ইসরাত শুনেছিস, মন্টু ভাই নাকি আবার বিয়ে করেছে?

নুসরাতের মাথায় যেন বাজ পড়ল আকাশ ফেটে৷ বিস্ময়ে ঠোঁট ফাক হয়ে গেল নিমেষে। অ আকৃতির মুখ করে, গোলাকার আখিঁযুগলের পাতা না ফেলে বলে
ওঠল,”মন্টু শালা বিয়ে করে নিয়েছে? আবার?
ইসরাত এসবে কান দিল না। যার ইচ্ছে বিয়ে করুক, তার কী! নড়েচড়ে আবারো বইয়ে চোখ নিবিষ্ট করল নীবিড় মনোযোগে৷ নাজমিন বেগম ইসরাতের খামখেয়ালিতে বিরক্ত হলেন। হাত থেকে বই নিয়ে ছুঁড়ে মারলেন সামনের সোফায়। চোয়াল শক্ত করে বললেন,”চল, চল, চল! মন্টু ভাইয়ের বউ কান্না করছে সান্ত্বনা দিতে যেতে হবে তো! প্রতিবেশি হিসেবে তো একটা দায়িত্ব আছে নাকি আমাদের!
“দ্বিতীয় বিয়ে করেছে, তো কী হইছে?আব্বু করে নাই বিয়ে, আর এরকম অদ্ভুতভাবে ঘামছো কেন? এত তৎপর হওয়ার মানেই বা কী? এমন ভাব করছো আম্মু, যেনো আব্বু দ্বিতীয় বিয়ে করে তোমার জন্য সতিন নিয়ে আসছেন!
ইসরাত কথা বলে না বলে না, কিন্তু যখন বলল তখন নাজমিন বেগমের মাথায় বাজ ফেলে দেওয়ার মতো একটা সম্পূর্ণ বাক্য বলল। নাজমিন বেগমের খেপাটে চাহনি দেখার মতো হলো। ইসরাত মায়ের শক্ত মুখ দেখে শান্তভাবে তবুও বসে রইল নিজ স্থানে।

নাজমিন বেগম খিটখিটে স্বরে বললেন,
” তোর বাপ ওই সাহস করবে না। আর করলে, প্রথমে তোর বাপকে পিস পিস করে কাটবো। কেটে কুকুরকে খাওয়াবো, তারপর তার দ্বিতীয় বউকে কাটবো। দুটোকেই দুনিয়ায় জাহান্নাম দেখিয়ে দিব।
নুসরাত হাতের হাতা গুটিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছিল। মন্টু শালাকে আজ দুটো ধরে দিয়ে দিবে ভেবে। সে ভয়ংকর রকম ঘৃণা করে যারা বউ বেঁচে থাকতে দ্বিতীয় বিয়ে করে। এই বয়সে এই ব্যাটা বুড়োর এত উত্তেজনা আসে কীভাবে দ্বিতীয় বিয়ের করে নিয়ে আসছে। শালা গোলামের ফুতের আজ একদিন কী তার একদিন। কিন্তু মাঝপথেই সে বাঁধা পড়ে ইসরাতের কথায়। সামনে আগানো পা পিছিয়ে যায় ইসরাতের কথা শোনার জন্য। পিছু ফিরে তাকাতেই মায়ের উত্তর কানে আসে, আর এতেই নুসরাতের চোয়াল ঝুলে যায়।

নাজমিন বেগমের কথা শেষ হতেই পাঁচজোড়া চোখ ঘুরে গেল নাজমিন বেগমের দিকে। সবগুলোই নাজমিন বেগমের উপর থেকে নিচ পরখ করছে। সবার ইচ্ছে ছিল সামন্য নাজমিন বেগমকে জ্বালানোর, কিন্তু নাজমিন বেগমের শক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নাছির মঞ্জিলের ড্রয়িং রুম থেকে কোনোপ্রকার ফাজলামি না করে সবগুলা এক এক করে বের হয়ে গেল। টু পরিমাণ বাক্য ব্যয় করল না। সবারই সিকথ সেন্স জানান দিচ্ছে আর একটা শব্দ মুখ দিয়ে বের করলেই নাজমিন বেগমের পায়ে থাকা জারা লগো বিশিষ্ট জুতো জোড়া তার হাতে উঠে আসবে। আর তা সরাসরি পড়বে গিয়ে তাদের পাঁচজনের পিঠের উপর। নাজমিন বেগম এসি অফ করে, ধীরে সুস্থে দরজা জানালা লক করে বের হবেন বাড়ি থেকে, তার পূর্বেই নুসরাত ঝড়ের বেগে এসে প্রবেশ করল বাড়িতে। নাজমিন বেগমের গায়ের মোটা ওড়না একটানে ছিনিয়ে নিয়ে নিজের গায়ে জড়িয়ে আবারো চলে গেল। ততক্ষণে তার দলের সকল সাঙ্গপাঙ্গু গিয়ে হাজির হয়েছে মন্টুর বাড়িতে।

মন্টুর বাড়িতে গেট না থাকায় সুরসুর করে সৈয়দ বাড়ির পাঁচমাথা ঢুকে গেল। মন্টুর বউ সাজনা কাঁদছেন দেয়ালের সামনে বসে। টাইলস এর মেঝেতে চাপড় মেরে মেরে করুণ থেকে করুণ স্বরে কাঁদছেন। নুসরাত সরু চোখ ঘোরাল চারিদিকে। পরণের সাদা শার্ট ইন করে ঢোকানো প্যান্টের ভেতর। ইসরাত নির্বিকার চিত্তে দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করলেও সাজনার কান্নায় মনটা ব্যথিত হলো। শান্ত মুখখানা রাগে লাল হতে লাগল সময়ের ভেতর। নুসরাতের কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলে ওঠল,”নুসরাত ওই মন্টু ব্যাটার কোনো ব্যবস্থা করা যায় না?
নুসরাত সামান্য মাথা কাত করল ইসরাতের দিকে। বলল,”আগেরবার যা করেছি তাই করব। শালা মন্টুর হাড্ডি ভেঙে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখব।

ইসরাত হাসল সামান্য। এর আগেও এই কাজ তারা সম্পাদন করেছে। তাই সবার কাছে অতোটা অবকাতর মনে হলো না। সবাই সবার পানে চেয়ে একসাথে ঠোঁট নাড়াল,”মিশন আজ রাতে মন্টু শালাকে শিক্ষা দিয়ে, একদম উত্তেজনার রফাদফা করে দেওয়া।
নুসরাতের পাশে দাঁড়ানো মমো হা করে সাজনার দিকে তাকিয়ে আছে। নুসরাত ভেতরে ভেতরে হেসে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,”তোকে বলেছিলাম মমো, মন্টু শালাকে বিয়ে করে নে, কিন্তু তুই, আমার একটা কথাও শুনলি না। আজ যদি আমার কথা শুনতি তাহলে মন্টু শালার সব ফল গাছ আমার হতো। আর তুই মন্টুর ঘরে রাজ করতি রাজ।
মমো যারপরনাই বিরক্ত হলো।

নুসরাতের দিকে হতাশামিশ্রিত চাহনি বুলিয়ে নিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। এর জন্য ঠিকমতো সে দুঃখ প্রকাশ করতে পারছে না বেচারি সাজনা বেগমের জন্য। তাই দুঃখে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ইসরাতকে বগলদাবা করে অন্যদিকে চলে গেল। আহান আর ইরহামকে সোহেদ ডেকে পাঠিয়েছেন তাই তারা অনেক আগেই চলে গিয়েছে। নুসরাত একা ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে চোরের মতো আশ পাশ দেখল। কোন ফল গাছে কোন ফল আছে। আর কোন পজিশনে গেলে, সেই ফল সে আরাম করে চুরি করতে পারবে। চোরের মতো মুখ ভঙ্গি বানিয়ে দু-হাত ফরমাল প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে হিসেব কষতে লাগল কীভাবে কী করবে!

হেলাল সাহেবের সাথে আরশ আর জায়িন দাঁড়িয়ে। নিজাম শিকদার গিয়ে সৈয়দ বাড়ির সবাইকে নিয়ে আসছেন। বাড়ির কর্তীরা ভেতরে। সাজনাকে সান্ত্বনা দিতে আসলেও এখন তারা দলবদ্ধ হয়ে নিজেদের ভেতর গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। হেলাল সাহেবের বিপরীত দিকে নুসরাত দাঁড়িয়ে ছিল। আকস্মিক নুসরাতকে দাঁড়িয়ে আশপাশে দেখতে দেখে মেয়েটা নজর কাড়ল উনার। মেয়েলি শান্ত শিষ্ট মুখখানা দেখলেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বলতে বাধ্য হলেন, নাছিরের মেয়ে দুটোর গঠন দেখতে মাশাআল্লাহ! হেলাল সাহেবের এমন প্রখর দৃষ্টি নুসরাত সেকেন্ডের ভেতর বুঝে গেল নিজের ওপর। সময় ব্যয় না করে, কোনোদিকে চোখ না ফেলে, সোজাসুজি হেলাল সাহেবের দিকে সরু সরু চোখে তাকাল। হেলাল সাহেব চট করে নিজে চোখ সরিয়ে নিলেন। বিড়বিড় করে আওড়ালেন,”তাকায় কীভাবে?

আরশ সটান হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। হেলাল সাহেবের চোখ অনুসরণ করে তাকাতেই নুসরাত দৃষ্টিসীমায় পড়ল। আরশের পাশ থেকে কিছু একটা বিড়বিড় করে হেলাল সাহেব চলে যাচ্ছেন। আরশ সেই সুযোগ নিল। বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে এলো নুসরাতের দিকে। কাছে এসেই গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়াল। নুসরাত মাথা উচিয়ে উপরে তাকাতেই আরশের সাথে চোখাচোখি হলো। সুঠাম দেহি লোকটা একহাতে কপালের উপর থাকা চুল ঠেলে পেছনে সরিয়ে, ভ্রু নাচাল সামান্য।। আরশ বলল,”ভাবতাছি দ্বিতীয় বিয়ে করে নিব!
নুসরাত ঠোঁট বাঁকাল। ব্যঙ্গ করে শুধাল,

“সত্যি?
“আম ডেম সিরিয়াস, এবার বিয়ে করবই। এভাবে আর কতদিন?
নুসরাত আরশের দিকে এমন ভাবে তাকাল যেনো আস্তো গিলে নিবে। পলক না ফেলে আরশের কথা চুপচাপ মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করল। জানতে চাইল,” কীভাবে কতদিন?
আরশ আবার লহু স্বরে, নির্বিঘ্নতার সহিত বলল,
“আর কতদিন কুমার থাকবো, যৌবন, জীবন সবই তো এক এক করে চলে যাচ্ছে তোর অপেক্ষায়!!
নুসরাত ধীমি সুরে শুধায়,
” দ্বিতীয় বিয়ে করবেন?

আরশ সূক্ষ্ম চোখে নুসরাতের মুখের পরিবর্তন দেখল। ধীরে ধীরে যা অস্বাভাবিক বর্ণ ধারণ করছে। বলল,”হ্যাঁ বিয়ে করব। আর কত বছর বউয়ের অভাবে থাকবো। আমি আবার তোর অপেক্ষায় কুমার মরতে চাই না। শেষ বয়সে যদি তুই আসিস তাহলে তোকে নিয়ে সংসার করব, এখন না হয় দ্বিতীয় বিয়ে করে নেই।
নুসরাত আবার শুধাল,
“দ্বিতীয় বিয়ে করবেন?
” এখনো চিন্তাভাবনা করিনি, আজ বিকেল থেকে দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করব।
নুসরাত আওয়াজ নামিয়ে নিল। হেসে হেসে বলল,
“আপনি যতক্ষণে দ্বিতীয় বিয়ের চিন্তা-ভাবনা করবেন, ততক্ষণে আমি আপনাকে জিন্দা পুঁতে ফেলার ব্যবস্থা করে ফেলব। আই এগেইন রিপিট দেট, জিন্দা দাফন করব। মাইন্ড ইট!
আরশ ভয় পাওয়ার মতো ভাব করল। বলল,

” এখন তো মনে হচ্ছে দ্বিতীয় বিয়ে করা জরুরি।
নুসরাত গলার আওয়াজ খাদে নামিয়ে নিয়ে বলে ওঠল,”মরার শখ জেগেছে আপনার? জাগলে বলুন, আমি নুসরাত নাছির আপনাকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসব।
আরশ প্রখর দৃষ্টি নুসরাতের মুখের দিকে বুলিয়ে নিয়ে বলে ওঠল,”মরার শখ জাগবে কেন! আমার দ্বিতীয় বিয়ের শখ জেগেছে। আর কতদিনই বা থাকব কুমার? এবার কুমারত্ব ত্যাগ করতেই হবে।

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২৪

নুসরাত ধীমি সুরে, অত্যন্ত মোলায়েমতা আনলো কন্ঠে। তর্জনী আঙুল দিয়ে আরশের কপালে ধাক্কা দিয়ে, দাঁতে দাঁত চেপে, মিষ্টতার সঙ্গে আওড়াল,”এটা আমার ও শেষ কথা ভালো করে আপনার এই গিলুহীন মাথায় ঢুকিয়ে নেন। আরেকবার দ্বিতীয় বিয়ের কথা মাথায় আনলে চেহারার নকশা এমভাবে পাল্টাবো আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজেকে নিজে চিনতে পারবেন না। এন্ড দ্যা মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট থিং আমি যদি ঘুণাক্ষরেও টের পাই আমি থাকতে অন্য কোনো মহিলার দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছেন আপনি, তাহলে আপনাকে খুন করে আপনার লাশ আমি নিজ হাতে দাফন করব। একটা কাকপক্ষীও টের পাবে না আপনার লাশ আমি কোথায় দাফন করেছি!

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ২৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here