প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৩৮ (৩)
জান্নাত নুসরাত
নাছির সাহেব ইসরাতের হাত চেপে ধরলেন নিজের হাতের মুঠোয়। পুরো কনভেনশন হল জুড়ে তখন নিস্তব্ধতা। কনে বিদায় দেওয়ার জন্য সকলেই প্রস্তুত। নাছির সাহেবের পাশে দাঁড়ানো নুসরাত ও নাজমিন বেগম। জায়িন এর পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে হেলাল সাহেব, লিপি বেগম।
নাছির সাহেব কথা বলতে গিয়ে চোখ ঝাপটালেন। চশমা ঠেলে নাকের ডগায় তুলে নিলেন আলগোছে। জায়িনের হাতের মধ্যে ইসরাতের হাত চেপে ধরে বললেন,”আমার মেয়েরা আমার কাছে অনেক মূল্যবান, আমি আমার দু-রত্নের এক রত্ন তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি, আমি জানি তুমি তাকে অনেক ভালোবাসবে, হয়তোবা আমার ধারণার থেকে বেশি, এজন্যই আমি তাকে তোমার কাছে দিচ্ছি। আমি দেখতে চাই তুমি কতটুকু তার দেখভাল, ও খেয়াল রাখো।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আমি চাইব, সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে তুমি তার গুরুত্ব দিবে, যেকোনো বিপত্নীক মুহুর্তে, সমাজের মানুষ যখন তার বিরুদ্ধে থাকবে তখন তুমি তার পাশে থাকবে, এটাই আমার চাওয়া তোমার নিকট। যদি কোনোদিন তোমার হৃদয় পরিবর্তন হয়, তুমি যদি তখন তাকে আর না ভালোবাসো, তখন তাকে কষ্ট দিও না৷ সে হারিয়ে গেলে তাকে খুঁজে বের করো, তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিও। যদি কখনো মনে হয় তুমি তার দেখাশোনায় কমতি করছ, তার দায়িত্ব নিতে পারবে না, তোমার হৃদয় অন্য কারোর জন্য কম্পন হচ্ছে, তাহলে তাকে আঘাত করো না, তাকে দুঃখ দিও না, আমার মেয়েকে আমার কাছেই ফিরিয়ে দিও দয়া করে। এখন থেকে আমার মহামূল্যবান মেয়ে তোমার দায়িত্বে। আমি তাকে তোমাকে দিয়ে দিলাম। আমার আশাকে তুমি নিরাশায় পরিবর্তন করবে না, এইটুকু চাওয়া তোমার কাছে আমার।
জায়িন ইসরাতের হাত নিজের মুষ্টিতে পুরে নিয়ে নাছির সাহেবের উপরে চাপা রাখা হাতে ভরসা দিল। বলে ওঠল,”আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে, সৈয়দা ইসরাত নাছির আমার প্রিয় সহধর্মিণীকে আমি কখনো কষ্ট স্পর্শ করতে দেব না। কখনো যদি আমার সহধর্মিণীকে দুঃখ, বিষন্নতা, কষ্ট স্পর্শ করতে যায়, তাহলে প্রথমে তা আমাকে ভেদ করতে হবে। আর তার সাধ্য নেই যে, আমি জায়িন হেলালকে ভেদ করে গিয়ে আমার স্ত্রীকে স্পর্শ করবে। আমি এটা ও কসম করছি আমার খোদার নামে, আমার আগে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হলে আমি জায়িন হেলাল কখনো দ্বিতীয় বিবাহ করব না। যেদিন আমি এই কসম ভাঙবো, কসম ভাঙার পূর্বে যেনো আমার মৃত লাশ খাটিয়া স্পর্শ করে। আমি আপনার আশা নিরাশায় পরিবর্তন করব না, বিশ্বাস রাখুন আমার উপর।
ইসরাতের হাত চেপে ধরে সামনে আগালো জায়িন। পেছন থেকে নুসরাত,ইরহাম, আহান ও অগ্রসর হলো তাদের সাথে। কনভেনশন হলের বাহিরে বের হতেই জায়িনের মায়ের বাড়ির দএক লোক ঠাট্টা করে বলে ওঠলেন,”বউ দেখি কাঁদেনা?
নুসরাত তেরছা সুরে কিছু বলতে নিবে ইসরাত হাসি হাসি মুখে উত্তর দিল,”আমি আমার নিজের বাড়িতে যাচ্ছি, এখানে কাঁদব কেন, আজব!
নুসরাত বলে ওঠল,
“এই ডিজে গান বাজা ইসরাতের শ্বশুর বাড়ি আজ নেচে-কুঁদে যাব।
ইরহাম সুর টেনে ইসরাতের পেছন থেকে গেয়ে উঠল,
” বান্নো রে বান্নো মেরি চালি সাসুরাল কো
আনখিয়ো মে পানি দে গায়ি
ডুয়ায়া মে মেথি গুদ ধানি লে গায়ি….
গাড়ির সামনে যেতেই ইসরাতের জন্য দরজা খুলে দিল জায়িন। ইসরাত ব্যাক সিটে উঠে বসতেই তার লেহেঙ্গা গুছিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিল নুসরাত। বলে ওঠল,”তুই যাওয়ার আগে তোর শ্বশুর বাড়ি ইনশাআল্লাহ আমি পৌঁছে যাব, চিল ব্রোহ..!
ইসরাত মৃদু হাসতেই নুসরাত দরজা লাগিয়ে দিল। জায়িন ড্রাইভিং সিটের দিকে যেতেই ইরহাম এসে খুলে দিল দরজা। গম্ভীর মুখে ইরহামের স্রীয় চেহারা অবলোকন করে জায়িন বলল,”থ্যাংক্স..!
জায়িন ড্রাইভিং সিটে বসে দরজা লাগিয়ে দিল। গাড়ি স্টার্ট করে অ্যাক্সলেটরে চাপ দিতেই গাড়ির গতি বৃদ্ধি পেল আর তা শা করে চলে গেল পাশ কাটিয়ে। তারা য্বতেই নুসরাত পিছু ফিরল।।আর তখনই দেখা মিলল নিহাল মির্জার। লোকটা তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকায়, আকস্মিক মুখ দেখে ভয়ে লাফ মেরে উঠছিল প্রায়। গোল গোল চোখে তাকিয়ে, সৌজন্যতার খাতিরে হেসে বলল,”কোনো প্রয়োজন স্যার?
“আরে আমি স্যার নই, মৃন্ময়ের বাবা!
নুসরাত দু-ভ্রু এর মধ্যিভাগে কিঞ্চিৎ ভাঁজ ফেলে বলে ওঠল,”মৃন্ময় কে? তাকে কী আমি চিনি?
ভদ্রলোক ভীষণ অবাক হলেন। বললেন,
” মা আমাকে চিনতে পারছো না, আমি মৃন্ময়ের বাবা।
নুসরাত চোখ ঝাপটাল। মনে মনে নিজেকে হাজারটা গালি দিল কেন যে এই লোকের সাথে খাতির করতে গিয়েছিল, এখন না ওই ঘুষখোর এর সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় এই লোক। নুসরাত ঘাড় কাত করে শুধাল,”আঙ্কেল আমি আপনাকে কোথাও দেখেছি কখনো?
“আরে মা এই আধঘন্টা পূর্বে না তোমার সাথে আমার কথা হলো।
নুসরাত মাথায় চুলকে পাগলের মতো বলে ওঠল,
” সত্যি?
নিহাল মির্জা মেয়েটার অদ্ভুত কান্ড দেখলেন। কিছু বলবেন দেখলেন হাতের মধ্যে ঘষছে। অবাক চোখে তাকাতেই দেখলেন সেখান থেকে একটু একটু রক্ত বের হচ্ছে, তারপরও মেয়েটা ঘষাচ্ছে জায়গাটা। নিহাল মির্জার শোনার মতো বিড়বিড় করে বলল,”ডা ডা ডার্গ…!
নিহাল মির্জা বিস্ময়ে বিমূর্ত আওয়াজে শুধালেন,
“ডার্গ নেও তুমি?
নুসরাত মাথা নাড়াল উপর নিচ। হাতে তখনো সমানতালে ঘষিয়ে চামড়া লাল করে ফেলেছে। মৃদু কন্ঠে তুতলিয়ে বলে ওঠল,” ইয়াবা, পাউডার, হঠাৎ হঠাৎ নাইট ক্লাবে গিয়ে দু-তিনটা হুইস্কির বোতল শেষ করি।
“নাইট ক্লাবে ও যাও তুমি?
নুসরাত মাথা নাড়িয়ে নিজের জীবনে না করা সকল কথাগুলো ফরফরিয়ে বলে চলে গেল। যেন সব সত্য, মিথ্যে বলতে গিয়ে একবারও জিভে বাঁধল না। বলে ওঠল,”আমি ব্যালি ডান্সার ওখানকার..!
নিহাল মির্জার এক মুহুর্তে ছেলের সাথে এই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চিন্তা ধূলিসাৎ হয়ে গেল। মেয়েটা নাচ নেওয়ালি! ছি্হ… আর উনি নাকি তার ভদ্র ছেলের জন্য এই মেয়েকে পছন্দ করেছেন।
মৃন্ময় বাবাকে আবারো ওই মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখে দৌড়ে আসলেও থেমে গেল মাঝপথে তাদের বাক্যে। নুসরাতের নিজের উপর নেওয়া মিথ্যে দায়গুলো শুনল চুপচাপ। এই মেয়ে এত মিথ্যা কীভাবে বলে প্রশ্ন করল নিজে নিজেকে। নুসরাত আরো কিছু বলবে এর মধ্যে মৃন্ময় এসে তার বাবাকে চেপে ধরল। বলল,”এই মেয়ের মাথায় সমস্যা আছে, ছেড়ে দাও ওকে।
নুসরাত আড়চোখে তাকাল চারিদিকে। না এদিকে কেউ নেই সবাই ভেতরে। আত্মীয় যারা যাওয়ার চলে গেছে। আকস্মিক মাথা ঘুরিয়ে ইচ্ছে করে পড়ে গেল মাটিতে। বিড়বিড় করল,” ডার্গ, ডার্গ, পাউডার দিন।
নুসরাতকে এমন পড়ে যেতে দেখে মৃন্ময় ভাবল সত্যিই কিছু হয়েছে যখন দেখল পিটপিট করে চেয়ে হাসি আটকানোর বৃথা প্রচেষ্টা করছে তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নিজের বাবাকে বগলদাবা করে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে ফিরে আসলো সে। নিষেধাজ্ঞা জারী করল সে ফিরে না আসা পর্যন্ত গাড়ির বাহিরে পদক্ষেপ বের না করতে। মৃন্ময় ফিরে এসে দেখল নুসরাত উঠে বসে আছে। হাতের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বলল,”এসব কী? এমন রক্ত বের হচ্ছে কেন আপনার?
নুসরাত ভুলে বসল মৃন্ময় তুষার সামনের ব্যক্তি। ইরহাম মনে করে খ্যাক করে উঠে বলল,”আরে ভাই,
থেমে গেল পরমুহূর্তে। হাঁটু গেড়ে বসা মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠল,”ওহ স্যরি, মশা কামড় দিয়েছিল, চুলকানোর জন্য হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে।
মৃন্ময় হাত বাড়িয়ে নুসরাতের বাড়ানো হাত ধরতে নিবে থেমে গেল, বাড়ানো হাত গুটিয়ে নিয়ে পকেটে পুরল। উপহাস করে বলে ওঠল,”আপনি চাইলে জীবনে খুব ভালো অভিনেত্রী হতে পারেন।
“এটা আপনার মতো মাথায় এন্টিনা হীন লোক ভালোই বলেছে, মনে হচ্ছে আমার দেওয়া নাপা এক্সাট্রা খেয়ে এই উন্নতি।
মৃন্ময় হু হু করে হেসে উঠল নুসরাতের কথায়। পরপর আবার দাঁতের পাটির আড়ালে হাসি ঢেকে বলে ওঠল,” আপনি সবমসময় এমন হাসিখুশি থাকেন?
নুসরাত উপর নিচ মাথা নাড়াল। মৃন্ময় বলে ওঠল,
“আপনার কষ্ট হয় না?
নুসরাত বলে ওঠল,
” কষ্ট কেন হবে?
“কারোর এ জিনিস আছে আপনার কাছে তা নেই, তাহলে কষ্ট লাগবে না আপনার?
নুসরাত হাত টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নিল। ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল,” আজ এত ভাব জমাচ্ছেন বিষয় কী, প্রেমে টেমে পড়েছেন নাকি কোনো রমনীর?
মৃন্ময় হাসল ঠোঁটের কোণ বাঁকিয়ে। বলে ওঠল,
“প্রশ্নের উত্তর দেননি আপনি?
নুসরাত হেয়ালি করে জানতে চাইল,
” কী প্রশ্ন ছিল?
“আপনার কাছে কোনো জিনিস নেই, কিন্তু অন্য কারোর কাছে আছে, তাহলে আপনি কী করবেন?
নুসরাত তর্জনী আঙুল থুতনিতে রেখে মেকি ভাবনায় ব্যস্ত হলো। কিছুক্ষণের ভেতর মৃন্ময়ের কানের কাছে ভেসে আসলো বজ্রপাতের মতো নির্ঘোষ, অধিপত্য বিস্তারকরণ কারী নারী কন্ঠ,” আমি আমার পছন্দের জিনিস নিয়ে আপোষ করা ভীষণ অপছন্দ করি, যদি পছন্দ হয় তাহলে মালিক সেটা আমাকে নিজ ইচ্ছেয় দিবে, নয়তো আমি ছিনিয়ে আনব। যা আমার তা আমারই, আমি আপোষে নই, ছিনিয়ে আনতে বিশ্বাসী!
মৃন্ময় ভ্রু উচিয়ে জানতে চাইল,
“আমি যদি আমার সেই পছন্দের জিনিসটা ছিনিয়ে আনতে চাই?
নুসরাতের ঠোঁটের হাসি দীর্ঘ হলো। মৃন্ময়ের শোনার মতো করে বলল,” পারবেন না!
“কেন?
“ওপর পক্ষ আপনার থেকে থেকে জেদি, সে নিজের জিনিসের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকিয়েছে তা যদি টের পায় তাহলে চোখ তুলে নিবে।
” এত বিশ্বাস?
“উপহাস করছেন?
” শুধু জিজ্ঞেস করছি!
নুসরাতকে ত্যাড়া চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে পরপর প্রশ্ন ছুঁড়ল মৃন্ময় আবার,”উত্তর দিলেন না যে?
মৃন্ময়ের কথায় নুসরাত শব্দ করে হাসল। তার কাছে উত্তর আছে কিন্তু দিতে ইচ্ছে করছে না। এমন করে ঠেস দিয়ে বসে থাকতে ভালো লাগছে। শেষ রাতের দিক হওয়ায় ল্যাম্পপোস্টের নিভু হলদে রশ্মি এসে মেয়েলি মুখটায় পড়ে অপার্তিব সৌন্দর্য্যে মুড়ে গিয়েছে। মৃন্ময় প্রশ্নাত্মক চোখে তাকিয়ে থাকল, নুসরাতের উত্তরের অপেক্ষায়। অপাশ নীরব থাকল অনেক সময়। বলে ওঠল,”আমি মনে করি আপনার তাকে ভুলে যাওয়া উত্তম!
“এটা আপনি বলছেন?
” আমি-ই বলছি! নিজের ব্যক্তিত্বের বাহিরে গিয়ে আপনি অবাঞ্চনীয় জিনিস পাওয়ার আশা করছেন, যেটা হবে না।
মৃন্ময় জানতে চাইল,
“আশাও ছেড়ে দিতে বলছেন?
নুসরাত ফিরে তাকাল মৃন্ময়ের দিকে। চোখের ভাষা একদম সহজ, নেই কোনো জটিলতা সেখানে। সহসা শীতল কন্ঠে বলে ওঠল,”মিথ্যে আশা নিয়ে বাসা বাঁধা, অপেক্ষা করা মূর্খতা!
মৃন্ময় আবারো প্রশ্ন ছুঁড়ল,
” তাহলে অপেক্ষা করতেও মানা করছেন?
নুসরাত মেকি হাসল। কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ ফেলে বলে ওঠল,”“অপেক্ষা সুন্দর, ভীষণ সুন্দর মৃন্ময় শাহরিয়ার তুষার মির্জা…কিন্তু সেটা তখনই, যখন আশা থাকে —
যে সে ফিরে আসবে,কিন্তু যখন আপনি জানেন—
সে আর ফিরবে না,তার ফিরে আসার কোনো নিশ্চয়তা নেই,তখন সেই অপেক্ষা আর সুন্দর থাকে না!
তখন অপেক্ষা হয়ে যায় নিছক বোকামি, আর আমি মনে করি এই বোকামি আপনি করবেন না।
মৃন্ময় বলে ওঠল,
“আমি আজ খেয়াল করলাম, আপনি ভীষণ গুছিয়ে কথা বলেন। আপনাকে যতটা বোকা ভাবা হয় আপনি ততটা না, খুবই চালাক আপনি।
নুসরাত নিজের নিষ্প্রাণ দৃষ্টি সামনে স্থির করল। মৃন্ময়কে তার দিক থেকে চোখ সরাতে না দেখে ইতস্তত করে বলে ওঠল,”চোখ সরান আমার উপর থেকে আমি অস্বস্তি বোধ করছি।
মৃন্ময় নিজের চোখ সরিয়ে নিল নুসরাতের উপর থেকে। মৃদু সুরে বলল,” স্যরি আপনার অস্বস্তির কারণ হওয়ার জন্য।
নুসরাত আড়ষ্ট কন্ঠে বলে ওঠল,
“আপনার বাবা গাড়িতে অপেক্ষা করছেন, যান!
মৃন্ময় উঠে দাঁড়াল। বলল,
“আজ তাহলে আসি, মিসেস আরশ!
” জ্বি!
মৃন্ময় সামনে পা বাড়াতেই নুসরাত ডেকে উঠল,
“তুষার…
মৃন্ময় ঘাড় বাঁকিয়ে পিছু ফিরে এক পলক তাকাতেই নুসরাত বলল,”বিয়ে এটেন্ড করার জন্য ধন্যবাদ..!
জায়িন গ্রোসারি শপের সামনে গাড়ি থামিয়েছে। অনেকক্ষণ যাবত গ্রোসারি শপের ভেতর সে। কয়েক মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর দেখা গেল হাতে কিছু একটা নিয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসছে এদিকে। ইসরাত গ্লাসের ভেতর থেকে ঠিক ধারণা করতে পারল না জায়িনের হাতে কী, যখন ভেতরে প্রবেশ করল তখন ছোটো পলিথিন ব্যাগ এগিয়ে দিল ইসরাতের দিকে। ইসরাত অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,” এটা কী?
জায়িন গাড়ি স্টার্ট করতে করতে বলল,
“খুলে দেখো!
ইসরাত হাত নাড়াতেই হাতে পরা চুরিগুলো ঝনঝন করে উঠল। জায়িন তার দিকে ঘাড় কাত করে তাকাতেই ইতস্তত কন্ঠে বলে ওঠল,” চুরির শব্দে আপনার সমস্যা হলে বলুন আমি খুলে ড্যাশবোর্ডে রেখে দিচ্ছি।
জায়িন তিক্ত কন্ঠে শুধাল,
“আমি আপনাকে বলেছি খুলে রেখে দিতে?
ইসরাত বিরশ মুখে তাকাল। বলল,
” আমি মনে করেছি আপনি বিরক্ত হচ্ছেন।
জায়িন চোয়াল শক্ত করে তাকাল। জিজ্ঞেস করল,
“আমি বলেছি আমি বিরক্ত হয়েছি?
” তা বলেননি, আমি ভেবেছি….
প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৩৮ (২)
জায়িন ইসরাতকে কেটে দিয়ে বলে ওঠল,
“এত বেশি ভাবতে হবে না, আপনি একটু কম কম ভাববেন, বুঝেছেন?
ইসরাত উপর নিচ মাথা নাড়াল। পলিথিন ব্যাগের ভেতরে হাত ঢোকাতেই বেরিয়ে আসলো ফ্রোজেন কিছু জিনিস, আর লেইস এর প্যাকেট। আঙুলে ফলস নেইলস ব্যবহার করায় লেইসের প্যাকেট খুলতে গিয়ে বেগ পোহাতে হলো ইসরাতকে। জায়িন সেটা খেয়াল করে, গাড়ি চালানো বন্ধ করল। এক পাশে সাইড করে গাড়ি দাঁড় করালো। ইসরাতের হাত থেকে লেইসের প্যাকেটটা নিয়ে নিতেই সে হকচকিয়ে উঠে বলল,” আরে আমি পারব, আপনি এভাবে সব কাজ করে দিলে হবে, আমি কিছু করব না?
জায়িন গম্ভীর মুখে ইসরাতকে অবলোকন করে বলল,”আপনি শুধু শ্বাস নেওয়ার কাজ করুন, এটাই আমার জন্য অনেক বেশি, বাকি টুকু আমি সামলে নিব।