প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৪০

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৪০
জান্নাত নুসরাত

শীতকালের আনাগোনা প্রকৃতিতে! বাতাস মিহি হয়ে বইছে চারিদিকে। কখনো সহনীয় গরম তো আবার কখনো ঠান্ডা আবহ পরিবেশে! দো-তলার খোলা থাই গ্লাসের জানালা বেয়ে সুরসুরিয়ে বাতাস এসে প্রবেশ করছে। সাথে বাগানে রোপন করা বেলী, রজনীগন্ধা, গোলাপ ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ এসে প্রবেশ করছে নাসারন্ধ্রে। শীতল বাতাসে নুসরাতের গা হীম হয়ে না আসলেও জায়িনের শান্ত চাহনিতে নুসরাতের গা বেয়ে ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেল। পরিবেশ স্বাভাবিক কর‍তে না চাইতেও ভেটকানো দিল নুসরাত। তার এই মুহুর্তে মোটেও হাসি আসছে না কিন্তু প্রয়োজন মনে হলো হাসি দেওয়া তাই দিল। দাঁত বের করে জায়িনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কানে ভেসে আসলো শান্ত স্বর,”দাঁত ভেতরে ঢোকান, জঘন্য হাসি আপনার!

নুসরাত মুখ চুপসে নিল। আড়চোখে চেয়ে টিপেটিপে পা ফেলে বের হতে যাবে জায়িন ধমকে উঠে বলল,”স্টপ!
নুসরাত দরজার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোখ কিঞ্চিৎ কুঁচকাল। চোয়াল ঝুলিয়ে নিয়ে কিছু বলতে নিবে জায়িন তর্জনী আঙুল ঠোঁটে রেখে দেখাল চুপ। পরপর বলল,”শাটআপ নুসরাত…!
নুসরাত মিনমিনিয়ে নিজের সাফাই গাইতে যাবে জায়িন জানতে চাইল,”আপনাকে কী শাস্তি দেওয়া যায় বলুন তো!
নুসরাত হে হে করে হাসল। জিজ্ঞেস করল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“মজা করছেন জায়িন ভাই!
জায়িন দু-পাশে মাথা নাড়াল। ঠোঁট চেপে রেখে আওড়াল,”উঁহু, আমি সিরিয়াস!
নুসরাত ঠোঁট মুখ কুঞ্চিত করে জানতে চাইল,
“কী শাস্তি দিবেন জায়িন ভাই!
জায়িন নিশ্চুপ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইল। এক পা দু-পা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল দরজার সামনে, যাতে নুসরাত দৌড় দিতে না পারে। বলল,”সবার সামনে আপনাকে এক্সপোজ করব, মেঝ মাকে দেখাব উনার গুণোধর মেয়ে কী করছেন উনার অগোচরে!
নুসরাত প্রথমে বলে ফেলল,

“তো আমি ভয় পাই নাকি, বলুন না আম্মাকে।
কথা শেষ করে আকস্মিক মনে হলো কনভেনশন হলের ঘটনাটার কথা। যদি জানে ওই কাহিনি করার পর এমন কান্ড করেছে তাহলে তার মা জননী তাকে আস্ত রাখবে না, এমনকি এই বাড়ির মহিলা সমিতির সবাই মিলে তাকে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে ফেলবে। নুসরাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কল্পনা করল তাকে বেঁধে পিটানো হচ্ছে আর একপাশে দাঁড়িয়ে তাকে অবলোকন করে দাঁত কেলিয়ে হাসছে মাহাদি, আরশ, ইরহাম, আহান, এমনকি ওই অনিকাটা ও! নুসরাতের চিন্তা আর বেশি দূর এগোলো না, জায়িন দু-পা বাড়াতেই নুসরাত লাফিয়ে উঠে বলল,”ভাইয়া আপনার একটু লজ্জা লাগবে না আমার মতো অবলা
এক শিশুকে মার খাওয়াতে আম-জনতার হাতে?
জায়িন দু-ঠোঁট উল্টে নিষ্পাপ ভঙ্গিতেবলল,

“একদম না, আমার ভীষণ খুশি লাগবে আপনার মতো একজন বুড়ো শিশুকে জনতার হাতে পিটা খাইয়ে।
নুসরাত দু-হাতে মাথা চেপে ধরল নাটকীয় ভঙ্গিতে। কন্ঠে মেকি কান্নার ভাব এনে বলে,”এমন পাপ কাজ ধর্মে সইবে না সৈয়দ সাহেব।
“না সই করুক, তারপরও আপনার আজ আমি একটা ব্যবস্থা করব।
নুসরাত দুঃখী দুঃখী চেহারা বানাল। বলে ওঠল,
“দয়া করে মহিলা সমিতির কাছে আমাকে দিবেন না।
জায়িনে থুতনিতে হাত বুলিয়ে নিল। ভ্রু উচিয়ে শুধাল,
“যদি না দেই তাহলে কী করবেন আপনি?
নুসরাত ঝটপট বলে দিল,
“আপনি যা বলবেন তাই করব।
কথাটা বলে জিভ কাটল। মনে মনে আওড়াল,
“ ইসশ ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছিস নুসরাত।
জায়িন নুসরাতের কথায় জিভ দিয়ে গাল ঠেলে ঈষৎ হাসল৷ লহু স্বরে বলে ওঠল,”কান ধরে উঠবস করুন এক্ষুণি!
নুসরাত অবিশ্বাস্য কন্ঠে শুধাল,

“এক্ষুণি?
জায়িন মাথা নাড়িয়ে শক্ত গলায় বলল,
“রাইট নাও সিস্টার।
নুসরাত চেহারা কাঁদো কাঁদো বানিয়ে ফেলল। বলল,
“ এই বাচ্চাকে দিয়ে কান ধরে উঠবস করাতে, আপনার দিলে একটুও কষ্ট হবে না?
“না কষ্ট হবে, বরঞ্চ ভীষণ ভালো লাগবে!
নুসরাত দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। রাগী রাগী চোখ মুখ করে একবার কান ধরে উঠবস করে চলে যেতে নিবে জায়িন দরজার আটকে দাঁড়াল। ভ্রু উচিয়ে শুধাল,”কোথায় যাচ্ছেন?
“বাড়িতে!

“ একশোটা কান ধরে উঠবস করুন তারপর বাড়িতে যাবেন, না হলে আপনাকে ওই জানালা দিয়ে একদম ছুঁড়ে মারব।
নুসরাত নাক ফুলিয়ে কিছু বলতে নিবে জায়িন ইশারা করল চুপচাপ কান ধরে উঠবস কর‍্যে। শেষ পর্যন্ত কোনো পথ না দেখে নুসরাত হতাশ হয়ে কান ধরে উঠবস করতে শুরু করল। জায়িন ঠোঁট চেপে কোনোরকম হাসি আটকাল চুপসানো মুখখানা দেখে। মোবাইল পকেট থেকে বের করে নুসরাতের দিকে তাক করতেই নুসরাত চ্যাঁচাল,”ভিডিও করছেন কেন? সমস্যা কী ভাই?
“কানধরে চুপচাপ উঠবস করুন, আপনাকে এখানে কথা বলার জন্য আনা হয়নি, কাজ করানোর জন্য আনা হয়েছে। উঠবস না করলে চলুন আপনি আমার সাথে।
নুসরাত কড়মড় করল। কান ধরে উঠবস করতে করতে বলে ওঠল,“জায়িন ভাই আপনি খুবই বড় ধান্দাবাজ।
জায়িন নির্লিপ্ত গলায় উত্তর দিল,

“আপনার থেকে কম।
নুসরাত পরপর একশোটা কান ধরে উঠবস করে কোমর চেপে উঠে দাঁড়াল। জায়িনের মোবাইলের দিকে কিৎকাল তাকিয়ে থাকল অবিরাম। থুতনিতে বুড়ো আঙুল আর তর্জনী আঙুল একত্রিত করে বুলিয়ে নিয়ে হুমকি দিল,”এই কাজের জবাব সময় মতো পেয়ে যাবেন দুল্লাভাই!
শেষটুকু বলতে গিয়ে নুসরাতের গলা সামান্য চড়াও হলো। জায়িন তাতে ভ্রুক্ষেপ না করে গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠল,“আমি সবসময় সেই অপেক্ষায় থাকব শাল্লিকা।
এরপর জায়িন দরজা থেকে সরে আসলো। সম্মানের সহিত দেখাল বের হয়ে যেতে। নুসরাত রুম থেকে বের হতে হতে জায়িনের শোনার মতো বিড়বিড় করল,”দেখে নেব জায়িন ভাই, দেখে নেব, না দেখে নিলে আমার নাম নুসরাত নাছির থেকে বদলে নিব।

নাছির মঞ্জিলের পরিবেশ উত্তেজিত। নুসরাত মুখ ফুলিয়ে কাহিনি বলছে এতক্ষণ যাবত কাহিনি কী কী হয়েছে। কাহিনি বলা শেষ করতে পারেনি তার পূর্বেই টুংটাং নোটিফিকেশন আসলো সবার মোবাইলে। ইরহাম মোবাইল হাতে নিয়ে দেখল তারপর রেখে দিতে গিয়ে আবার তড়াক করে চোখ দাবিয়ে দেখল। ফ্যামেলি গ্রুপে কিছু একটা মেসেজ আসছে। ইরহামের বৌদলতে ইসরাতের বিয়ের আগের দিন এই গ্রুপটা খোলা হয়েছিল। যেখানে পরিবারের সব সদস্য আছে। গ্রুপে অপ্রত্যাশিতভাবে এই ভিডিও আসায় ইরহামের মনোযোগ ভ্রষ্ট হলো নুসরাতের কথা শোনা থেকে। একা ইরহামের নয় সবারই হয়েছে। দ্রুত হাতে গ্রুপে ঢোকে ভিডিওটা ডাউনলোড দিল সবাই। নুসরাতকে ইশারা করে ইরহাম বোঝাল, দু-মিনিটের জন্য চুপ করতে। নুসরাত বিরক্ত হয়ে চ সূচক শব্দ উচ্চারণ করল না চাইতেও মুখ দিয়ে। পকেট থেকে মোবাইল বের করতেই একই মেসেজ সো করল। সে ও সেখানে ঢোকে ভিডিওটা দেখার আগে দেখল কে সেন্ড করেছে ভিডিওটা। যখন জায়িন লেখা নাম দেখল তখন নুসরাত চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার সিক্সথ সেন্স বলছে ওই ভিডিওটাই জায়িন ভাই দিয়েছে।
সকলে ভিডিওটা দেখার শেষ হওয়ার পর থেকে নিজেদের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। থমথমে পরিবেশ তখন সেখানে। সকলে নিজেদের ভেতর থমথমে মুখে চাহনি দেওয়া শেষে দো-তলার ড্রয়িং রুমের আনাচে কানাচে ফাটিয়ে হেসে উঠল। ইরহাম সর্বপ্রথম বলে ওঠল,”আল্লাহ মান সম্মান বাচাইছে, জায়িন ভাই নুসরাতকে পুরো বাঁশ দিয়ে দিল।
আহান বলল,

“আল্লাহ বাচাইছে যাইনি আপুর কথা শোনে, না হলে আজ মান সম্মান নিলামে উঠত।
ইসরাত বারবার ভিডিওটা পোজ করছে তারপর আবার দেখছে, দেখা শেষে সোফার উপর হাসতে হাসতে ঢলে পড়ছে বারংবার। কিছু সময় ধরে এমন কাহিনি চলল তাদের মধ্যে। ইরহাম বলে ওঠল,”নুসরাতরেএএ তোর মান-সম্মান তো পুরোই শেষ!
নুসরাত নির্বিকার চিত্তে বসে থেকে গর্বের সহিত বলে ওঠল,“আমার মান-সম্মান থাকলে না শেষ হবে।
ইসরাত বলে ওঠল,

‘“আর এটা তুই গর্বের সহিত বলছিস? নুসরাত তোর সামান্য লজ্জা লাগছে না?
নুসরাত ইসরাতের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। বলল,”অবশ্যই না আমার মোটেও লজ্জা লাগছে না। আর মান-সম্মানের কথা আসলে আমি বলব কানে ধরে উঠবস করে আমি নিজের প্রতি এমন গর্ববোধ করছি যে, নিজেকে এখন গর্ববোধের ঠেলায় গর্ভবতী মনে হচ্ছে।
নুসরাতের কথার ভেতর জায়িনের আগমন ঘটল নাছির মঞ্জিলে। গায়ে এখনো জড়ানো তখনকার সাদা পাঞ্জাবি। রেড চেরির ন্যায় লাল টকটকে ঠোঁট গুলো দিয়ে অনবরত উঁচু আওয়াজে উচ্চারণ হচ্ছে,”বেগম, বেগম, বেগম..!
নুসরাত দো-তলার রেলিঙ ধরে প্রায় বাঁদরের ন্যায় ঝুলে পড়ল। ড্যাবড্যাব করে জায়িনের পানে তাকিয়ে ইসরাতকে বলে ওঠল,”বেগমের খোঁজে জনাব চলে আসছেন।
জায়িন নিচ থেকে নুসরাতের দিকে কিৎকাল তাকিয়ে থেকে জানতে চাইল,”আমার বেগম কোথায়?
নুসরাত নির্বিকার চিত্তে বলে ওঠল,

“কাক উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে।
জায়িন উপহাস করে শুধাল,
“ আর ওই কাকটা মনে হয় আপনি?
নুসরাত উপর নিচ মাথা নাড়াল। জায়িনকে বলে ওঠল,”আপনি তো দেখি ভালো কথা বলতে শিখে গেছেন জায়িন ভাই। এত চ্যাটাংচ্যাটাং কথা শিখলেন কীভাবে? আপনার শিক্ষকটা কে?
“আপনাকে বলতে বাধ্য নই।
নুসরাত রেলিঙে ধরে দাঁড়িয়ে রইল।। জায়িন নিচ থেকে দো-তলা বেয়ে উঠতে উঠতে ডাকল,” বেগম..!
ইরহাম ব্যগ্র আওয়াজে ইসরাতের পেছন থেকে বলে ওঠল,”জনাব এসেই বলবেন, আপনি ঠিক আছেন ইসরাত, তখন বেগম উত্তর দিবেন হ্যাঁ জনাব।

আহান সোফায় মাথা চেপে খিলখিল করে হেসে উঠল। জায়িন উপরে এসে কিৎকাল দেখল ইসরাতকে, এরপর কাউকে কোনো কিছু বোঝার সুযোগ না দিয়ে পেঁচিয়ে কাঁধে তুলে নিয়ে চলে গেল। নুসরাত হা করে তাকিয়ে থাকল। আহান দু-হাতে নিজের চোখ ঢেকে নিল, পর মুহুর্তে আবার আঙুলের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিল সামনে কী হচ্ছে চুপিচুপি দেখার জন্য। ইরহাম নুসরাতের পানে অবিশ্বাস্য চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলে ওঠল,”এটা জায়িন ভাই আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
আহান নিজের হাতের আড়াল থেকে ইসরাত আর জায়িনের যাওয়া দেখতে দেখতে সহমত পোষণ করল,”আমার ও!
নুসরাত মিনমিনিয়ে বলে ওঠল,
“ এই জায়িন ভাই তো ইসরাতের উপর পুরাই আশিক হয়ে গিয়েছেন।
পরপর আবারো বলল,
“বেগমকে এসে জনাব নিয়ে চলে গেলেন কাঁধে তুলে, আর আমরা হা করে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারলাম না জীবনে।
নুসরাতের কথায় আহান ইরহাম সমস্বরে আওড়াল,

“সহমত দাদা, সহমত..!
সকাল ছয়টা টিকটিক করে ঘড়িতে বাজছে। জায়িন ইসরাতকে নিয়ে সৈয়দ বাড়িতে আসতে গিয়ে এতক্ষণে হাজারো চড়-থাপ্পড়, কিল, ঘুষি খেয়েছে পিঠে ঘাড়ে, তবুও কাঁধ থেকে ইসরাতকে নামায়নি। বাহিরে তখন ধীমিধীমি কুয়াশা। সোসাইটিতে নীরবতা বিরাজমান। সৈয়দ বাড়ির অভ্যন্তরে প্রবেশ করার পর ইসরাতকে নিজের কাঁধ থেকে নামাল জায়িন। ভ্রু উচিয়ে জানতে চাইল,”সমস্যা কী?
ইসরাত চোখ দুটো পাকাল। বলে ওঠল,
“লজ্জা সরম আপনার নেই?
জায়িন নির্দ্বিধায় বলে ওঠল,
“ লজ্জা নারীর ভূষণ, পুরুষদের থাকাটা বেমানান!
ইসরাত কপালে ভাঁজ ফেলল। বলল,

“আপনি তো সত্যিই আজকাল একটু বেশি কথা বলা শিখেছেন! সব কথার উত্তর আছে আপনার কাছে দেখছি।
জায়িন গোলগাল মুখটায় চোখ নিবিষ্ট করে বলে ওঠল,“আপনার বোনের প্রভাব পড়ছে আই থিংক।
ইসরাত ভ্রু যুগলের মধ্যে ভাঁজ ফেলল। দরজা ঠেলে রুমের ভেতর ঢুকতেই জায়িন বলে ওঠল,”সারারাত ঘুমাননি, রেস্ট নিয়ে নিন।
ইসরাত নিজেও মুখের উপর হাত রেখে হাই তুলল। জায়িনের কথায় সহমত পোষণ করে বলে ওঠল,”হ্যাঁ, সত্যিই মনে হচ্ছে ঘুমানো প্রয়োজন।
জায়িন অবাক কন্ঠে শুধাল,
“সত্যিই ঘুমিয়ে যাবেন?
ইসরাত উপর নিচ মাথা নাড়াল। বলে ওঠল,

“তো ঘুমাব না, না ঘুমিয়ে কী কাবাডি খেলব আজব! দু-দিন ধরে ঠিকঠাক ঘুম হয়নি।
কথা শেষে বিছানায় ধুপ করে গিয়ে শুয়ে পড়ল ইসরাত এক পাশ ঘেঁষে। এই মুহুর্তে ঘুমে সে চোখে কিছুই দেখছে না। জায়িন চোয়াল ঝুলিয়ে তাকিয়ে থাকল বিছানার দিকে। বিড়বিড় করে আওড়াল,”সত্যিই ঘুমিয়ে পড়ল।

বিয়ে সকল রীতিনীতি মেনে হওয়ায় সকালের নাস্তা ও এসেছে নাছির মঞ্জিল রীতিমতো। জায়িন নিষেধাজ্ঞা জারী করেছিল, বলেছে বাজার থেকে ফ্রোজেন জিনিস এনে দিবে কিন্তু তারপরও নাজমিন বেগম মানা শুনেননি, উনি দিবেন মানে দিবেনই। নাজমিন বেগমের জোরাজুরিতে সকালে ঘুম বাদ দিয়ে নাস্তা তৈরি করতে সাহায্য করেছে নুসরাত। সকালে নাস্তা পাঠানোর কথা থাকলেও সবাই ঘুম দিয়েছে তখন। তাই আছরের সময় নাস্তাগুলো পাঠানো হয়েছে সৈয়দ বাড়িতে। নুসরাত ঘুমাতে যেতে যেতে বেজেছে বারোটা। চোখ দুটো ঘুমের জন্য খুলে রাখতে পারেনি, যখন ঘুম ভাঙল তখন সন্ধ্যা নেমে গিয়েছে। পরায় অন্ধকার হয়ে গিয়েছে ধরনী, নুসরাত ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হলো। হাঁটাহাঁটি করে সামান্য নাস্তা পানি খেয়ে গোসল করতে ঢুকল।

গোসল শেষে মাথায় তোয়ালি পেঁচিয়ে হুডি চড়াল গায়ে। তার শীত একটু বেশিই অনুভব হচ্ছে আজ। ক্যাপ মাথায় দিয়ে ঢিলেঢালা ছেলেদের ট্রাউজার পরে নিল। চোখে হাই পাওয়ারের চশমা লাগিয়ে নিয়ে হাতে নিজের প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিল। চুইংগাম মুখে দিয়ে গা ছাড়া ভাব নিয়ে হাঁটল সৈয়দ বাড়ির উদ্দেশ্যে। অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য তখন মুখ ফোলো ফোলো হয়ে উঠেছে। মুখে গম্ভীরতা আটা। সৈয়দ বাড়ির গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে দেখা হলো হেলাল সাহেবের সাথে। দু-জনের চোখাচোখি হতেই মুখ ঝামটা মেরে চলে গেল দু-দিকে। নুসরাত যেতে যেতে গিয়ে ধাক্কা খেল দরজার সম্মুখে দাঁড়ানো খুঁটির মতো দাঁড়িয়ে থাকা আরশের সাথে। বিরক্ত ভঙ্গিতে চোখ তুলে তাকাতেই দু-জনের চোখাচোখি হলো। একসাথে দু-জন দু-জনকে শুধাল,”কী সমস্যা কী?
কথা শেষে দু-জনেই কপালে ভাঁজ ফেলল। একসাথে বলে ওঠল,”একদম নকল করবেন না!
নুসরাত আরশকে ঠোঁটে হাত রেখে চুপ দেখাল। পরপর খিটখিটে মেজাজে নিজের দিকে তর্জনী আঙুল তুলে শুধাল,

“আমি নকল করব আপনার? আমি?
আরশ মাথা উপর নিচ নাড়াল৷ বলল,
“এতক্ষণ যাবত তো নকলই করছিলিস।
নুসরাত হাহ্ করে অহংকার করে শ্বাস ফেলল৷ দাম্ভিক স্বরে বলে ওঠল,”কোনদিক থেকে আপনাকে নকল করেছি?
আরশ বলে ওঠল,
“সব দিক দিয়ে!
নুসরাত ঠোঁটের কোণ উচিয়ে তাচ্ছিল্য করে হাসল। বলে ওঠল,“ ওহ রিয়েলি, তা শুনি কী করেছি নকল?
আরশ গ্রীবা বাঁকিয়ে ঝুঁকে আসলো সামান্য। হিসহিসিয়ে বলে ওঠল,”আমার পুরো আউটফিট, পুরোটা আমাকে!
নুসরাত এবার ঠাহর করল তার আর আরশের দু-জনের ড্রেস একদম একই রকম সামান্য হুডির কালার চেঞ্জ, আরশের লাইট কালার আর তারটা ডার্ক কালার৷ ট্রাউজার এর দিকে চোখ যেতেই নুসরাত চ্যাঁচাল,”আপনি সেম ট্রাউজার কোথায় পেলেন?

“তোর বাপের চুরি করেছি।
নুসরাত কপালে ভাঁজ ফেলল। বিরক্ত স্বরে বলে ওঠল,“বাপ নিয়ে টানাটানি করছেন কেন?
আরশ হিসহিসিয়ে বলে ওঠল,
‘“তো টানাটানি করব না, একমাত্র শ্বশুর বলে কথা।
নুসরাত নির্বাক চেহারা বানিয়ে চেয়ে রইল সামনে। তার কাছে কথা বলার ভাষা নেই। আরশ নিজের মুখ সামান্য কাছে নিয়ে আসতেই নুসরাত নিজেকে সামলে নিয়ে বলে ওঠল,”আপনার বাপ নিয়ে আমি টানাটানি করেছি কখনো!
“তো কর না, আমি না করেছি।
নুসরাত দাঁতে দাঁত চেপে ধরে কড়মড় করে উঠল। কটমটে চাহনি নিবিষ্ট করে বলে ওঠল,”আপনি ভীষণ খারাপ, আপনি জানেন?

“না মাত্র তুই বলেছিস বলে জানতে পারলাম।
নুসরাত দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। শীতিল কন্ঠে বলে ওঠল,
“আপনার সাথে কথা বলার ইচ্ছে আমার নেই, রাস্তা দিন।
আরশ দরজা ব্লক করে দাঁড়াল। আরাম করে দাঁড়িয়ে বুকে আড়াআড়ি হাত বাঁধল। নুসরাতের দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ হাসল। বলল,”রাস্তা বানিয়ে নে, আমি পারব না।
নুসরাত নাকের পাটা ফুলিয়ে দেখল এই ত্যাড়া লোককে। ভৎসনা করে বলে ওঠল,”আপনি খুবই ত্যাড়া একজন মানুষ, ঘাড়ের রগ এত ত্যাড়া কেন?
“তোর থেকে একটু বেশিই সোজা আছে আমার রগ।
নুসরাত বিরক্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল,

“ আপনি এখানে দাঁড়িয়ে এখন কী করবেন?
আরশ গম্ভীর গলায় বলে ওঠল,
“তোর বাপের বাসর সাজাব।
নুসরাত চ্যাত করে উঠল। আকস্মিক আরশের বুকে দু-হাত এক ধাক্কা মারল, কিছু বুঝে ওঠার আগেই হুমড়ি খেয়ে পিছনে সরে গেল সে। অপ্রত্যাশিত ঘটনা থেকে আরশ সামলে উঠতে যাবে, নুসরাত আঙুল তুলে শাসাল,”শেষ বারের মতো বলছি সম্মান দিয়ে কথা বলবেন, আমার বাপ আপনার চাচা হয় বুঝেছেন, এসব নস্টালজিক কথা বার্তা বললে আমার সামনে আসবেন না। বেয়াদব..! আমার বাপের বাসর সাজাবি কেন তুই, তোর বাপেরটা গিয়ে সাজা!
আরেকটা ধাক্কা লাগল আরশর বাহুতে। নুসরাত আরশকে ধাক্কা মেরে পাশ কাটিয়ে ধুপধাপ পায়ে এগিয়ে যেতে যেতে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসা আরশের দিকে৷ তার দিকে একনিষ্ঠ তাকিয়ে থেকে ঘাড় কাত করে জিভ দিয়ে গাল ঠেলে হাসল।

সৈয়দ বাড়ির অভ্যন্তরে তখন মেহমানের আনাগোনা। ইসরাত শাওয়ার নিয়েছে কিছুক্ষণ পূর্বে। লিপি বেগম শাড়ী পরিয়ে দিয়েছেন। এরপর থেকে শাড়ী পরে টুকটুক করে ঘুরছে ইসরাত। জায়িন রুমে চুপচাপ বসে থেকে কিছু ই-মেইল চেক করছিল, তাই তখনো শাড়ী পরা ইসরাতকে দেখেনি। সিঁড়ি বেয়ে হঠাৎ মাথায় আঁচল টেনে নামতে দেখা গেল ইসরাতকে। ঠোঁটে হাসি সামান্য, নতুন কনের নাকি মুখ গোমড়া হয়ে থাকে, কিন্তু এই কনের ব্যাপারটা বিপরীত। সকলেই অদ্ভুত চোখে দেখলেন ইসরাতকে। ইসরাতকে দেখা শেষে যখন নিজেদের ভেতর কথা বলতে যাবেন সবার মাঝে ঠেলে ঠুলে আসরের মাঝখানে এসে নুসরাত ধুপ করে বসে গেল। বেয়াদবের মতো দু-পা সোফার উপর তুলে বসতে বসতে বলে ওঠল,”হ্যাঁ কী বলছিলেন বলুন!
সবাই অদ্ভুত চোখে নুসরাতকে দেখে বলে ওঠলেন,

‘’তুমি আবার এখানে টপকালে কীভাবে!
নুসরাত ত্যাড়া কন্ঠে বলল,
“ওই উড়ে এসে ছাদ দিয়ে টপকে গিয়েছি।
নুসরাতের কথা কেউ কানে তুলল না। একজন ইসরাতকে স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করল,”রান্না জানো তুমি?
ইসরাতঅক্ব কেটে দিল নুসরাত। মুখের কথা একদম কেড়ে এন বলে ওঠল,“রান্না না জানলেও, মানুষকে ভালো ফ্রাই, রোস্ট করতে জানেও।
মহিলাটা বিরক্ত হয়ে বলে ওঠলএন,
“আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছি ও উত্তর দিবে, ওর উত্তর দেওয়ার তুমি কে?
“আমি মেয়ের বাড়ির লোক, ছেলের বাড়ির চুগলখোর চাচি মামিদের আচার আচরণ দেখতে আসছি। এখন মেয়ে কোথায় বিয়ে দিলাম সেটা তো দেখে নেওয়া উচিত একটু খুঁতিয়ে।
মহিলাটি নুসরাতের কথার বিপরীতে বলে ওঠলেন,
“বিয়ে দেওয়ার আগে খঁতিয়ে নেওয়া উচিত ছিল, এখন কেন নিচ্ছো?
নুসরাত বলল,

“আসলে ওই ব্যাপারটা একটু বেশিই ক্যাজুয়াল, আমি আর আমার বাপ তো আর ক্যাজুয়াল না তাই বিয়ের পর পাড়ার কুচুটে কাকিদের খোঁজ নিব ভেবেছি।
মহিলাটি বিরক্ত হয়ে কথা বাদ দিয়ে দিল। নুসরাত এসবে থোড়াই পাত্তা দিল, চোখ উল্টে নিয়ে বসে রইল। নুসরাতের সাথে কথা কাটাকাটি হওয়া মহিলাটি আরেক মহিলার সাথে কথা বলছিলেন,”মেয়ের চেহারা বেশি ফর্সা হাত-পায়ের তুলনায়।
ওই মহিলাটি সহমত পোষণ করে বলে ওঠলেন,
“মনে হয় নাইট ক্রিম ইউজ করত।
নুসরাত এদের কানাঘুষা করতে দেখে একদম কান লাগিয়ে শুনছিল কথা গুলো। দু-জনে কথা শেষ করে শ্বাস ফেলতে পারল না নুসরাত ব্যাঙ্গাত্মক গলায় বলে ওঠল,” আপনার মেয়ের সস্তা নাইট ক্রিমটা আমি চুরি করে নিয়ে এসে ইসরাতের মুখে লাগিয়ে দিয়েছিলাম, বুঝেছেন আপা, আই মিন কাকিমা, এজন্য ওর হাত পা কাইল্লা, আপনার মেয়ের মতো শুধু মুখটা সুন্দর।
নুসরাত আরো কিছু বলতে নিবে রুহিনী এসে টেনে ধরলেন তার হাত। চোখের আকার বড় বড় করে বলে ওঠলেন,”ঝগড়া করো না নুসরাত আম্মা!

নুসরাত নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে টানা হিঁচড়া করল। গলা ফাটিয়ে সবার শোনার মতো করে বলে ওঠল,”আমাদের মেয়ে আমরা নিয়ে চলে যাব, মেয়ে দিলাম তো দিলাম এরপরও কোনো সম্মান নেই। এই কুচুটে বুড়িরা ক্যান বলবে ও ক্রিম ইউজ করছে৷ ওগো মতো পাইছে, সস্তা পণ্য ব্যবহার করবে আমার বোন।।
রুহিনী বেগম এক হাতে নুসরাতের মুখ চেপে ধরলেন। চোখ দুটো দেখিয়ে বোঝালেন আল্লাহর ওয়াস্তে চুপ যেতে। নুসরাত চুপ হওয়ার পাত্রী না সে অবিচল গতিতে হাতের নিচ থেকে মুখ বের করে বলে চলল,”আমি কোথাও একটা লিখা দেখেছিলাম মুসলমান একে অপরের ভাই-ভাই, এদের দেখে মনে হচ্ছে না তা। এরা কোনো প্রতিবেশী হতে পারে না, ভাবছিলাম রিসিপশনের দাওয়াত দিব, এদের এই ব্যবহারে রিসিপশনের দাওয়াত দেওয়া ক্যান্সেল।
রুহিনী নুসরাতকে টেনে টুনে নিয়ে গেলেন ড্রয়িং রুম থেকে, যেতে যেতে নুসরাতের কানে ভেসে আসলো,”এই মেয়েকে বিয়ে করবে কে!

এই কথার উত্তর দিতে ডায়নিং রুম থেকে গলা উচিয়ে নুসরাত চিৎকার করল,”কেন আপনার ছেলেকে করব, দেখলাম তো বহুত সুন্দর। কালো জাদু করে আমার রুপের দেওয়ানা বানাব আপনার ছেলেকে সাথে আপনাকে।
ইসরাত মেহেদি রাঙা হাত মুখের উপর চেপে ধরে হেসে উঠল সবার সামনে বসে। নুসরাত আবার বলল,”আপনার ছেলেকে পাগল বানিয়ে রাস্তায় পাগলদের মতো ছেড়ে দিব, তারপর ওই যে বিদেশ থেকে আসছে না দুটো, একটা তো বিয়ে করে নিয়েছে অন্যটার উপর কালো জাদু এপ্লাই করব, সাক্সেস হলে শাশুড়ি মাকেও কালো জাদু করব, বুঝেছেন, কালো জাদু করে বিয়ে করব।

ভদ্র মহিলা হা করে তাকিয়ে থাকলেন ডায়নিং এর দিকে। সামান্য মাথা উঁচিয়ে দেখতেই দেখলেন টেবিলের উপর উঠে বসে খাবার খাচ্ছে আরাম করে নুসরাত। এতক্ষণ যে ঝগড়া করেছিল তার বিন্দুমাত্র প্রতিচ্ছবি তার ভেতর দেখা যাচ্ছে না৷ নুসরাত মুখে সিঙ্গারা ঢুকিয়ে নিল, খাবার মুখে নিয়ে নাজমিন বেগমের নামে নালিশ করতে বলল,”আম্মা আমায় একটা সিঙ্গারা খেতে দেয়নি, আমি মাত্র সাতটা সিঙ্গারা খেয়েছি।।
রুহিনী বেগম মুখের খাবার গুলো হজম করে নেওয়ার জন্য পানি এগিয়ে দিলেন। নুসরাত তা পানি নিয়ে খেল, ঢেঁকুর তুলে মৃদু কন্ঠে জানাল,”ধন্যবাদ!

ঘড়ির কাটায় টিকটিক করে আটটা বাজছে। রুহিনী বেগম কখন থেকে লাগাতার বমি করেই চলেছেন। লিপি বেগম পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,”যা ছোট গিয়ে শুয়ে পড়, শরীর ক্লান্ত মনে হয় এজন্য মাথা ঘুরছে, পেট ব্যথা হচ্ছে।
সুফি খাতুন কিৎকাল অদ্ভুত চোখে পরিলক্ষিত করলেন রুহিনী বেগমকে। লিপি বেগমের কথা কানে যেতেই এতক্ষণের সন্দেহি নজর আরো গাঢ় হলো তার। জিজ্ঞেস করলেন,”মাথা ঘুরাচ্ছে কবে থেকে তোর?
রুহিনী বেগম নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। তাকে ধরে নিয়ে এগোলেন ঝর্ণা বেগম, আর লিপি বেগম। বিছানার দারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে বললেন,”গতকাল থেকে।
সুফি খাতুন থুতনিতে হাত রেখে মাথা নাড়ালেন। বলে ওঠলেন,”এই লক্ষণ সুবিধার না, মনে হচ্ছে পোয়াতি পড়ছে ও আবার।
নুসরাত, ইসরাত ততক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে। সুফি খাতুনের কথা শেষ হতেই দু-জন মৃদু কন্ঠে বলে ওঠল,”কীঈঈঈ!

রুহিনী বেগমের শরীর খারাপ হতে দেখে লিপি বেগম সবার আগেই ফোন দিয়ে সোহেদ সাহেবকে জানিয়ে ছিলেন। যখন তিনি এটা জানতে পারলেন তখন ফোন দিয়ে ডাক্তারকে আসতে বলবেন প্রতিমধ্যে হেলেদুলে হেঁটে এসে হাজির হলো নুসরাত। রুমের সামনে ভীর করে দাঁড়ানো ইরহাম, আহান, হেলাল সাহেব, শোহেব সাহেব, সোহেদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে বারবার নিচের দিকে ঝুঁকে গেল। নিজের দিকে সবার অদ্ভুত দৃষ্টি অবজ্ঞা করে পেটের কাছে হাত বেঁধে কোমর দোলাতে লাগল। হাসির তোড়ে কথাটা বলার ফুরসত হলো না। তারপরও কোনো রকম অস্ফুটে সুরে উচ্চারণ করল,”আসবে আমার কোল জুড়ে… স্যরি, স্যরি, স্লিপ অফ ঠ্যাং। আসবে চাচ্চুর কোল জুড়ে ছোট্ট সোনা।

এই কথাটা বিস্ফোরণ এর ন্যায় কাজ করল সবার ভেতর। সকলেই একে অন্যের মুখ চাওয়া চাওয়ি করল স্তম্ভিত নয়নে। সোহেদ সাহেব লজ্জায় লাল মুখ করে নিলেন। নুসরাত সেসব দেখল না, সে আহানকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠল,”আমার অ্যান্টনি আহানটনের ভাই আসতে চলেছে, ইয়াহুউউউ, হুউউররেএএ..!
নুসরাত খুশিতে লাফিয়ে উঠল। ইরহাম একবার বাপ-চাচার থমথমে মুখ দেখল একবার খুশিতে নাচতে থাকা নুসরাতের মুখ দেখল। শোহেব সাহেব নুসরাতকে কোমল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,”ভাই আসবে এটা কে বলেছে?
নুসরাত ফড়িং এর মতো শুধু নাচল। তার পা এক জায়গায় আটকে নেই। ছোট বাচ্চা আসার কথায় সবাই যতটা মুষড়ানো নুসরাত তার তুলনায় দ্বিগুণ উৎফুল্ল। হাসি মুখে বলে ওঠল,”দাদি বলেছে।
শোহেব সাহেব শুনতেই হাত উপরে তুলে নুসরাতকে দেখালেন, ঠাট্টা করলেন সামান্য। উপহাস করে বললেন,”পাগল মেয়ে, কার কথা বিশ্বাস করেছিস তুই, বুঝেছিস!
নুসরাত মাথা দোলাল। বলে ওঠল,

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৩৯

“যেখানে আমি নিজেকেই বিশ্বাস করিনা, সেখানে আমি দাদিকে বিশ্বাস করব কীভাবে ভাবলে তুমি! দাদির কথায় বম মারতে এসেছিলাম, চাচ্চুর এই চুপসানো মুখ দেখতে। হে হে..!
বলেই খিকখিক করে হেসে উঠল। আহান দমিয়ে রাখা শ্বাস ফেলে বলে ওঠল,”আমি শ্বাস আটকে মরেই যাচ্ছিলাম বুঝে মজা করবে তো! এসব ভাই, বোন বিষয়ক নিয়ে আমাকে দ্বিতীয়বার ডিপ্রেশন দিও না তো আপি।
নুসরাত খিটখিট করে হাসল। সোহেদ সাহেব ফোঁস করে শ্বাস ফেলে কল দিলেন ডাক্তারের নাম্বারে। সবকিছু জানানোর পর ডাক্তার জানালেন ফুড পয়জনিং হয়েছে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়ায়। কী কী ওষুধ দিতে হবে একটা প্রেসক্রিপশন বানিয়ে তা সোহেদ সাহেবের নাম্বারে পাঠাবেন বলে কল কেটে দিলেন।

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৪০ (২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here