প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৫

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৫
জান্নাত নুসরাত

বাড়ির বাহিরে ভয়ংকর রকম চিৎকার চেচামেচি হচ্ছে। গত আধ ঘন্টা যাবত ইসরাত এই চিৎকার, গালি, বিকট শব্দ শুনতে শুনতে তার কান ব্যথা হয়ে গিয়েছে, তাই আর সহ্য করতে না পেরে সোফার উপর রাখা কুশন দিয়ে দু-কান চেপে ধরে মাথা নিচু করে বসে আছে।
নাজমিন বেগম চিন্তিত মুখে বসে আছেন সোফার উপর। তিনি একবার রাগে লাল হওয়া নুসরাতের মুখ দেখছেন একবার বাহিরের দিকে তাকাচ্ছেন। নুসরাত আর সহ্য করতে পারল না বাহিরের এতো হাঙ্গামা, লাফ মেরে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। নিজের ওভার সাইজড টি-শার্টের ভাঁজ হওয়া জায়গা টেনে ঠিক করে বাহিরের দিকে পা বাড়াতেই পিছন থেকে হাতে টান অনুভব করল ।

এক মুহুর্তে বুঝে ফেলল কে হাত টেনে ধরেছে। অলস দৃষ্টি পিছনে দিতেই নাজমিন বেগমের রাগী চোখ মুখ নিজের অক্ষিকোটরে ভাসল। এক আঙুল তুলে নাজমিন বেগম নুসরাতকে শাসিয়ে বললেন,”সাবধান, এক পা বাড়ির বাহিরে রাখবি না তুই, তোর বাপ ওখানে আছে, সেজ ভাই, ছোট ভাই আছে সবাই সামলে নিবে,তুই চুপচাপ এখানে বস। নাহলে আজ আমার জুতোর বারি থেকে কেউ তোকে রক্ষা করতে পারবে না।
নুসরাত নাজমিন বেগমকে আর ক্ষ্যাপাল না, চুপচাপ গিয়ে সোফার উপর বসল এক পা তুলে। ইসরাত এখনো কপালে ভাঁজ ফেলে, বসে আছে মেঝেতে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নাজমিন বেগম অন্যমনস্ক হতেই নুসরাত সেদিকে একবার দেখল, তারপর সোফা থেকে লাফ মেরে নেমে ভু দৌড় দিল বাহিরের দিকে। নাজমিন বেগম পিছন থেকে কিছু বলতে নিবেন ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে, নুসরাত নাছির মঞ্জিলের ত্রি-সীমানার বাহিরে।
ইসরাতের দিকে বিরশ মুখে চেয়ে চিন্তিত গলায় আওড়ালেন,”চলে গিয়েছে আবার, তোর বাপের সাথে মিলে ঝগড়া করতে। ওখানে পুরুষরা আছে ও যাবে কেন! বাপের মতো খবিস হয়েছে মেয়েটা। বাপ ও লাই দিয়ে দিয়ে বেটা বানাচ্ছে। যেদিন উনার মাথার উপর উঠে দিন-তানা-দিন-তানা বলে নাচবে সেদিন মজা বুঝবেন।
ইসরাত মায়ের দিকে চেয়ে মিষ্টি হাসে। দু-কান থেকে কুশন নামিয়ে মেঝেতে রাখে। রিনরিনে গলায় বলে,”চিন্ত করো না আম্মু, নুসরাত উল্টা পাল্টা লজিক দিয়ে মন্টু চাচাকে সামলে নিবে। আর দোষ তো মন্টু চাচার, উনি কেন আমাদের জমির উপর বারবার নিজের সীমানা ঢুকিয়ে দেন।

নাজমিন বেগম প্রলম্বিত শ্বাস ফেললেন। ইসরাতের দিকে এক পলক চোখ বুলিয়ে অবসন্ন কন্ঠে বললেন,”তুই তো ওর পক্ষ টানবি তোর বোন না! আচ্ছা তুই এরকম হলি তাহলে ও এই রকম হলো কেনো। কার মতো হয়েছে এক আল্লাহ ভালো জানে!!
ইসরাত হাসে, হেস্ব নরম গলায় করে বলে ওঠে,
“আমি এরকম বলে ও ওরকম হয়েছে। দু-জন ভালো হলে তো আর তোমাদের কোনো দুশ্চিন্তা থাকতোই না। তাই একটু দুশ্চিন্তা থাকার জন্য আল্লাহ ওকে ওরকম বানিয়েছেন। আর তুমি জানো না ও কার মতো হয়েছে?
ইসরাত কথাটা শেষ করে নাজমিন বেগমের দিকে প্রশ্নাত্মক চোখে তাকায়। ইসরাতের প্রশ্নের উত্তরে নাজমিন বেগম দু-পাশে মাথা নাড়ান। ইসরাত গলার আওয়াজ নামিয়ে নিয়ে বলে,”বড় আব্বুর মতো হয়েছে।
নাজমিন বেগম কপালে ভাঁজ ফেলে উদ্বেগ নিয়ে জিজ্ঞেস করেন,”তুই কিভাবে জানলি বড় ভাইয়ের মতো হয়েছে?
ইসরাত ফিসফিস করে বলে,
” দাদি বলেছে।
মা-মেয়ে দু-জন দু-জনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে ফেলে।

শিকদার বাড়ির কর্তা নিজাম শিকদার। শিকদার মঞ্জিলে নিজাম শিকদার ও তার দুই নাতি নাতনীর বসবাস। রোড এক্সিডেন্টে ছেলে আর ছেলের বউ মারা যাওয়ায় পর নাতি-নাতনী তার কাছে বড় হয়েছে। বড় নাতির নাম আরমান শিকদার আর ছোট নাতনীর নাম সৌরভী শিকদার। বর্তমানে আটাশ বছর বয়সী আরমানের জন্য নিজাম শিকদার পাত্রীর খোঁজ করছেন,আর ভালো পাত্রী পেলেই তিনি আরমানের গলায় হাত চেপে ধরে বিয়ে দিয়ে দিবেন সেই পাত্রীর সাথে।
নিজাম শিকদারের একটা মেয়েকে আরমানের জন্য পছন্দ হয়েছে। মেয়েটা যেমন সুন্দর, তেমন লম্বা। কথা বলার ধরণ, ভদ্রতা, নম্রতা, সবদিক দিয়েই মেয়েটাকে তার কাছে ভালোই লেগেছে। কি সুন্দর করে কথা বলে! বড়দের যখন সালাম দেয় মাথা নিচু করে তখন মনে হয় কোনো কোকিল কু কু শব্দ করে গান গাইছে৷ তাই নিজাম শিকদার মেয়েটার নাম দিয়েছেন কোকিলা সুরি।

মেয়েটাকে তার পছন্দ হয়েছে কিন্তু এখনো কিছুটা যাচাই বাচাই করার বাকি আছে তাই তিনি সব-সময় চোখ স্থির রাখেছেন নাছির মঞ্জিলের দিকে। সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা, রাত এক টাইম করে তিনি প্রতিদিন গিয়ে বসেন নিজের বাড়ির, রাস্তার দিকে হওয়া বড় বারান্দায়। আর সেখানে বসে কখনো উঁকি ঝুঁকি মারেন, তো কখনো বারান্দায় রাখা বেতের সোফার উপর উঠে লাফ মারেন, আবার কখনো পাশের বাড়ির মেয়েটা বারান্দায় আসলে নিজাম শিকদার লাফ ঝাপ মেরে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, তখন মেয়েটা তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয়, আর কোকিলা স্বরে সালাম দিয়ে বলে কেমন আছেন দাদু ভাই। এটা বললেই তার মনে একটা কথা বাজে, আহ, কি চমৎকার গলা মেয়েটার! শুনলেই মন ভরে যায় তার!

আজ ও তার ব্যতিক্রম নয়, নিজাম শিকদার বারান্দায় এসেছেন নাছির মঞ্জিলে নজর রাখার জন্য। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর হঠাৎ কানে আসে একাদিক পুরুষের গলার আওয়াজ। বিরক্তিতে চ বর্গীয় শব্দ বের করে বিড়বিড় করেন নিজাম শিকদার,”আবার ঝগড়া লাগিয়ে দিয়েছে এই মন্টুটা! এর জন্য একটু শান্তিতে পাশের বাড়িতে নজর ও রাখা যাচ্ছে না। হায় আল্লাহ এদের জন্য মনে হয়, আমার নাতিটার বিয়েই হবে না।
নিজের বিরক্তি চেপে বারান্দা রাখা বেতের সোফায় গিয়ে বসলেন নিজাম শিকদার। ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে এক চুমুক দিতেই কুহ কুহ করে কেশে উঠলেন। সামনের দিকে তাকাতেই চোখ রসগোল্লা হয়ে গেল। চায়ের কাপ রেখে বিড়বিড় করলেন,”এসে গিয়েছে টর্নেডো এই জন্য মনে হচ্ছিল এতক্ষণ ধরে কিছু একটা নেই, কিছু একটা নেই, বাপরে কি গলার আওয়াজ মাইয়ার। বাপের থেকে জোরে ধমক মারে।

নিজাম শিকদার বুকে এক হাত চেপে ধরেন। সূরা ইখলাস, ফাতিহা পড়ে ফু দেন বুকে। একটুর জন্য তার হার্টটা আল্লাহ তায়ালার কাছে পিয়ারি হয়ে যায়নি, এটাই বেশ। বুকে ফু দেওয়া শেষ হতেই কানে আসে এই চচপ বলা শক্ত গলার আওয়াজ।
কে কাকে চুপ বলছে সেটা দেখার জন্য বারান্দার রেলিঙ ধরে উঁকি মারতেই দেখলেন মন্টুর ছেলে সজীব এসেছে। নাক উপরে তুলে ফেললেন নিজাম শিকদার। চোখ মুখে ভারী বিরক্তি এনে নিজ মনে আওড়ান,”এহ আসছে,! এই মেয়ের হাতে মার খেতে এসেছে এখানে। ওর বাপ-চাচাকে ধমক মেরে বসিয়ে রাখে সেখানে তুই কোন খ্যাতের মুলারে সজীব। আজ নির্ঘাত তুই এই মেয়ের হাত মার খাবি।
নিজাম সাহেবের চিন্তা করণে আঘাত পড়ল সজীবের বুঝানো স্বরে বলা কথায়। সজীব বলছে,”নুসরাত আপনি রাগ করছেন কেন! আমি আব্বাকে বুঝিয়ে আপনাদের জায়গা থেকে সীমানা সরিয়ে দিবে। দয়া করে, রাগ করবেন না। আপনার পেশার হাই হয়ে যাবে।

কথাটা শেষ হতেই নুসরাতের ভারী কন্ঠের চিৎকার ভেসে আসলো। নিজাম শিকদার কানে দু-আঙুল ঢুকিয়ে চেপে ধরলেন। বিড়বিড় করলেন,”কি ভয়ংকর আওয়াজ। কিভাবে আঙুল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলে এই মেয়ে, এই চপ বলে। এভাবে বললে তো কোনো জঘন্য অপরাধী কাঁপতে কাঁপতে হার্ট অ্যাটাক করে মরে যাবে। কি তেজ মেয়ের মাইরি। এই জন্য এই মেয়েকে আমার মোটেও পছন্দ নয়! কি রকম ছেলেদের মতো আচরণ করে, আর লম্বায় ও কেমন বাপের সমান হয়ে যাচ্ছে।
নিজাম শিকদার চোখ ছোট ছোট করে তাকান। নিজের কথা শুধরে নিয়ে বলেন,”না না বাপের মতো লম্বা হয়নি এখনো, পোলা হলে এতোদিনে বাপকে পার করে ফেলত। বাপরে এই মেয়ে, মেয়ে হয়েই যা করছে, যদি ছেলে হতো তাহলে তো…

নিজাম শিকদার আর ভাবতে পারলেন না। পকেট থেকে ফোন বের করে ক্যামেরা অন করলেন। ভিডিও করার জন্য। হেলালের কাছে এসব পাঠাবেন মেয়েটার কীর্তি কারনামা। সে ও দেখুক তার বাড়ির মেয়ে কি লেভেলের ডেঞ্জারাস। নিজেকে একবার বাহবা দিয়ে দিলেন নিজাম শিকদার। ঠিক সময় মোবাইলটা অন করার জন্য। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত করা ঝগড়া ভিডিও করলেন বারান্দায় দাঁড়িয়ে। তারপর এইচ-ডি ব্যবহার করে ভিডিও টা হেলাল সাহেবের নাম্বারে সেন্ড করে দিলেন। ঠোঁট চোখা করে মারামারি জায়গার দিকে তাকিয়ে হি হি করে হাসলেন। বুঝতে চাইলেন কে আসলে ঝগড়ায় জিতেছে। তিনি জানেন কে জিতবে তা ও একটা জানার আগ্রহ আছে এই বিষয়ে।
নিজাম শিকদার দেখলেন বাপ মেয়ে হাসি হাসি মুখ করে উল্টো পথে চলে যাচ্ছে। এখন আর কি হবে! বাপ মেয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকে নিজেদের জেতার আনন্দে, আনন্দ উল্লাসে করবে। যত্তসব পাগলদের পাগলামি! এই নাছির টা ও এই পাগল মেয়ের সাথে থেকে থেকে এর মতো পাগল হয়ে গিয়েছে। কেউ ঝগড়া জিতার আনন্দে রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে যায়? হাহ… নিজাম শিকদার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সামনের বাড়ির বারান্দায় নজর রাখতে শুরু করলেন। এতো ঝগড়া হয়ে গেল তা ও ভদ্র মেয়েটার নড়াচড়ার একটা শব্দ পাওয়া গেল না। মেয়েটা আসলেই মায়ের মতো ভদ্র হয়েছে।

হেলাল সাহেব সেন্টার টেবিল থেকে নিজের চিকন লেন্সের চশমা পড়তে পড়তে ডাক দিলেন,”এই আরশ, এদিকে আসো, দেখে যাও নিজাম চাচা কি দিয়েছে?
আরশ অনিহা নিয়ে বন্ধ দরজার বাহিরে তাকাল। বিরক্তিতে ঠোঁট চোখা করে শ্বাস ফেলল। অলস ভঙ্গিতে বিছানা থেকে ওঠে দাঁড়াতেই ভেসে উঠল পুরুষালি চওড়া কাঁধ বিশিষ্ট শরীর। আরশ হাত উপরে তুলতেই হাতের মোটা মোটা মাসালস গুলো বের হয়ে আসলো। উদোম গায়ে টিশার্ট জড়িয়ে নিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল ড্রয়িং রুমের দিকে, বাবার ডাকে সারা দিতে।
বাহিরে বেরিয়ে আসতেই হেলাল সাহেব চিকন লেন্সের চশমা নাড়িয়ে চাড়িয়ে চোখে পরে নিয়ে জিজ্ঞেস করেন,”এতো লেট করলে কেন?

আরশ কপাল কিঞ্চিত কুঁচকে যায়। কোথায় সে লেট করল! বেশি হলে দু-মিনিট পর ড্রয়িং রুমে আসছে তাই বলে এতো লেট বলবে। অবসন্ন চোখে হেলাল সাহেবের দিকে তাকিয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে নিয়ে রাশভারী গলায় বলে,”আ’ম স্যরি পাপা!
হেলাল সাহেব হাত দিয়ে নিজের পাশ দেখিয়ে দেন বসার জন্য। আরশ দন্তপাটি একটার সাথে আরেকটা চেপে নিজের বিরক্তি লুকাতে চায়। সে জানে এখন কি হবে! তাকে পাশে বসিয়ে রেখে একের পর এক কথা বলবেন হেলাল সাহেব, আর তার বন্ধু-বান্ধব কি ফটো ভিডিও পাঠিয়েছেন তাই দেখাবেন। অত্যাধিক বিরক্তি চেপে যায় নিজের গম্ভীর মুখের আড়ালে। সোফার পিছনের দিকে ভর দিয়ে চোখে এক হাত রেখে শুয়ে পড়ে।
হেলাল সাহেব আরশের দিকে তাকিয়ে নাক কুঁচকান। চোখ ফিরিয়ে সামনে রাখতেই জায়িনের সাথে চোখা-চোখি হয়। জায়িন পানি নিতে এসেছিল কিচেনে, বাবাকে হাতে মোবাইল নিয়ে বসে থাকতে দেখেই পা টিপেটিপে পালাতে চাইছিল তার আগেই চোখ-চোখি হয়ে গেল। গম্ভীর করে রাখা মুখটায় টেনে হাসি আনলো। হাসিটা বড়ই নিরর্থক লাগল! বোকার মতো হাসতে দেখে হেলাল সাহেব ব্যগ্র কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,”এ রকম বোকার মতো হাসছ কেন?
জায়িন দু-পাশে মাথা নাড়িয়ে মৃদু কন্ঠে বলে,

“জি না, কিছু না।
হেলাল সাহেব তীক্ষ্ণ চোখ জায়িনের দিকে বুলিয়ে বলেন,”এদিকে আসো।
জায়িনের মুখের রঙ উড়ে যায়। পাংশুটে মুখ বানিয়ে বিড়বিড় করে,”যার ভয় পাচ্ছিলাম তাই হলো। আল্লাহ এবারের মতো বাঁচিয়ে নাও, দু-রাকাত নফল নামাজ আদায় করব।
বিরশ মুখে এগিয়ে আসে সামনের দিকে। সেন্টার টেবিলে পানির বোতল রেখে হেলাল সাহেবের পাশে বসে। হেলাল সাহেব ওয়াট’স আ্যপে ঢুকে নিজাম চাচা লিখা জায়গায় টাচ করেন। গলার আওয়াজ মৃদু রেখে নিজে নিজেকে বলেন,”চাচা আবার কি পাঠালেন?
ইনবক্সে একটা ভিডিও দেখতেই জায়িনের দিকে ফোন বাড়িয়ে দিলেন। জায়িন জানে কি করতে হবে! সে বাড়িয়ে দেওয়া ফোন হাতে নিয়ে ভিডিওটা ডাউনলোড করে। তারপর নিস্প্রভ চোখে বাবার দিকে চেয়ে বলে,”এসে গিয়েছে!
হেলাল সাহেব ঝাঁঝ মিশ্রিত কন্ঠে বলেন,

” এসে গিয়েছে যখন তাহলে বাজাচ্ছো না কেন? আমার মুখ দেখছ কেন বসে বসে!
জায়িন কথা বাড়ায় না। ভিডিও প্লে করে হেলাল সাহেবের দিকে বাড়িয়ে দিতেই দেখা যায় নাছির সাহেব, শোহেব সাহেব,সোহেদ সাহেব, আর একটা মেয়ে। জায়িন চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকে। চেনার চেষ্টা করে কারা এরা। তখনই কানে ভেসে আসে বজ্র কন্ঠে কারোর বলা কথা,”সজীবের বাচ্চা তুই চুপ থাক। তোর বাপ এতদিন ধরে আমাদের জায়গা থেকে সীমানা সরায়নি তাহলে এখন তুই বলে সরাবি কেন? এতোদিন সরানোর কথা বলিসনি কেন? আজ তুই আর তোর বাপ দুটো আমার হাতে ধুলাই হবি। আব্বা আসেন, আসেন, ভয় পাবেন না। আমি আছি তো দু’জনে মিলে এদের একদম ঠিক করে দিব।

জায়িন একবার হেলাল সাহেবের দিকে তাকাল আরেকবার ফোনের ভিডিও এর দিকে।
ফোনের লাউড স্পিকারের জন্য আরশের চোখ থেকে কাঁচা ঘুম পালিয়েছে। মাথা বাড়িয়ে দেখতে নিবে কি দেখছেন হেলাল সাহেব, হেলাল সাহেব ফোন লুকিয়ে ফেললেন হাতের নিচে। আরশ ভরকে গেল হেলাল সাহেবের মোবাইল লুকানো দেখে। ভ্রু যুগল কুঞ্চিত করে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করল,”ভাইয়া বাবা কি লুকালো?
জায়িন কিছু বলতে নিবে হেলাল সাহেব মুখ চেপে ধরলেন দু-হাত দিয়ে। চোখের ইশারা না করলেন, কোনো কিছু না বলতে। জায়িন হেলাল সাহেবের কথা টা ফেলে দিল না, দু – কাঁধ উপরে তুলে বলল,”আমি কি জানি!
আরশ কপালে এক হাত রেখে পুরুষালি পুরু কন্ঠে বলে,”কারোর গলার আওয়াজ শুনলাম। মনে হয় মনের ভুল।
হেলাল সাহেব আরশের দিকে চোরা চোখে তাকিয়ে থেকে মিছিমিছি রাগ কন্ঠে এনে বললেন,”এই আরশ তুমি তোমার রুমে যাও, আমার আর জায়িনের কিছু বিশেষ আলোচনা আছে।

আরশ কপালে গাঢ় ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে থাকে দু-জনের দিকে। সে যতটুকু জানে পাপার সাথে ভাইয়ার সম্পর্ক এতো ভালো না, তাহলে তাদের আবার কি গুরুত্বপূর্ণ কথা থাকতে পারে। নিজের অতর্কিত চিন্তা এক পাশে ফেলে রেখে আরশ উঠে দাঁড়ায়। ম্যাজম্যাজ করতে থাকা শরীর ঠিক করার জন্য দু-হাত উপরে তুলে শরীরের আড়মোড়া ভাঙে। কান খাড়া রেখে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সামনের দিকে। তখনই কানে আসে ফিসফিস করে কথা বলা বাবা ভাইয়ের কন্ঠ। জায়িন নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করছে,”ওই মেয়েটা কে?

হেলাল সাহেব তার থেকে আরো বেশি নিচু সুরে বলেন,”তোমার মেজ চাচার ছোট মেয়ে।
জায়িন মাথা নাড়ায়। আরশ গলা খাঁকারি দিতেই হেলাল সাহেব কেঁপে ওঠেন। ভরকানো চোখে সামনের দিকে এক পলক চাইতেই আরশ গলা পরিস্কার করে বলে,”মেয়েটার গলা স্বর কি বিশ্রী পাপা, মেয়ের গলা নাকি বাজপাখির গলা আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। চ্যাহ কি বিশ্রী!

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৪

হেলাল সাহেব হে হে করে হাসলেন। মাথা নাড়িয়ে ভরকে যাওয়া চেহারা নিয়ে এলোমেলো কন্ঠে বললেন,” ঠিক, একদম ঠিক আছে। মেয়েদের গলা একেবারে কোমল হওয়া উচিত এই মেয়ের গলা নয় যেন ফাটা মাইক, আই মিন ফাটা বাঁশ।

প্রিয় প্রণয়িনী ২ পর্ব ৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here