প্রিয় বেগম সিজন ৩ পর্ব ৩+৪

প্রিয় বেগম সিজন ৩ পর্ব ৩+৪
পুষ্পিতা প্রিমা

পথে শাহানার সাথে শেরহামের দেখা হলো। শাহানা শেরহামকে সংকোচ ঝেড়ে বলল, ” তনীর আব্বা এসেছে। তোমার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে? ”
শেরহাম জবাব দিল।
” না হয়নি। ”
শাহানা কথা খুঁজে পেলেন না। শেরহাম পাশ কাটিয়ে চলে গেল। কক্ষপথে পা বাড়ালো পুনরায়। শোহরাব আব্বা ডেকে ঝাঁপিয়ে পড়লো তার কোলে। শেরহাম তাকে কোলে তুলে নিয়ে গালে ঠোঁট চেপে বলল,

” দৌড়াচ্ছিলে কেন? ”
সিভান দৌড়ে এসে হাঁপিয়ে উঠলো। বলল,
” আমার কথা শুনছে না। ”
শোহরাব সিভানের দিকে তাকিয়ে দাঁত দেখিয়ে হাসলো। হাত নেড়ে টা টা দিল। শেরহাম তার গালে আদর করতে করতে কক্ষের দিকে হেঁটে যেতে যেতে জানতে চাইলো,
“তোমার আম্মা কোথায়?”
” আম্মা নান্না করে। ”
” কি রান্না? ”
শোহরাব দু’পাশে মাথা নাড়লো। সে জানে না। শেরহাম কক্ষে প্রবেশ করলো। শোহরাবকে বিছানায় বসিয়ে টেবিলে একটা মোড়ক বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” আম্মাকে ডেকে নিয়ে এসো। ”
শোহরাব লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে একদৌড় দিল। শেরহাম হাতমুখ ধুঁতে চলে গেল। ফিরে এসে গামছা দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে দেখলো একটা ঢালায় হরেকরকমের জিনিসপত্র। সে আগ্রহ দেখালো না। ফোঁপানির শব্দ শুনে পেছনে তাকাতেই দেখতে পেল শোহরাব ফোঁপাচ্ছে। শেরহাম কপাল ভাঁজ করে তার দিকে এগিয়ে বলল,
” কি হয়েছে আব্বা? ”
শোহরাব ঠোঁট টেনে টেনে বলল,
” বুন আবান কালু ভাইচান বুলেচে। ”
” আবার? ”
শোহরাব উপর-নীচ মাথা নাড়লো। শেরহাম জিজ্ঞেস করলো,
” কোথায় ও? ”
” উখানে। ”
” আমাকে নিয়ে চলো। ”

শেরহামের আঙুল টেনে নিয়ে গেল শোহরাব। আলিজা ফুলটবের পাশে তার পুতুলকে কোলে নিয়ে খেলছে। তার সামনে কয়েকটা ছোট্ট ছোট্ খেলনার পাতিল। সেগুলো থেকে খাবার নিয়ে পুতুলকে খাওয়াতে খাওয়াতে মাথা নাড়তে লাগলো। বিড়বিড় করতে করতে গাইছে,
” কালু ভাইচান, কালু ভাইচান। ”
শেরহাম তাকে সরু চোখে চেয়ে থাকলো। শোহরাব বলল,
” ওই তো। ”
আলিজা চোখ তুললো। শোহরাবকে দেখে হেসে বলল,
” কালু ভাইচান, কালু আব্বা। ”
বলেই খিকখিক করে হাসিতে ফেটে পড়লো। শেরহাম লম্বা লম্বা পা ফেলে একহাতে তাকে ঘাড়ে তুলে নিয়ে এল কক্ষে। আলিজা ভয়ে চেঁচিয়ে উঠেছে। শেরহাম কক্ষে এনে দরজা বন্ধ করে শোহরাবের সামনে তাকে বসিয়ে বলল,
” চুপ। আর কালো ভাইজান ডাকবে? ”
আলিজা চেঁচাচ্ছে আব্বা আব্বা বলে। শেরহাম বলল,
” আর চেঁচালে তোমার আব্বাকেও তুলে নিয়ে আসবো।”
আলিজা হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়েছে ভয়ে। দু’পাশে কয়েকবার মাথা নেড়ে একসঙ্গে বলল,

‘ নানানানানা। আব্বা না। ”
” আর কালো ভাইজান ডাকলে তোমার আব্বাকেও বেঁধে রাখবো। তোমার আম্মাকেও বেঁধে রাখবো। ”
শোহরাব তালি দিয়ে খিকখিক করে হাসতে লাগলো। আলিজা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
” কালু ভাইচানের আব্বা ভানো নয়। ”
শেরহাম অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। আলিজার হাত দুটো একসঙ্গে করে তটিনীর একটা ওড়না দিয়ে বেঁধে দিল। আলিজা ঠোঁট উল্টে বলল,
” আল্লাহ মাবুদ তুমাকে মালবে। ”
শেরহাম হেসে তার নাক টিপে দিয়ে বলল,
” তোমাকে মারবে। আর বলবে কালো ভাইজান? ”
আলিজা ফুঁপিয়ে কাঁদলো শব্দহীন। বলল,
” নানানানা বববো না। ”
” ঠিক আছে। যাও। হাতদুটো সবাইকে গিয়ে দেখাও। যাও। ”

শেরহাম ছেড়ে দিতেই আলিজা তার বাঁধা হাত নিয়ে একছুটে পালালো কেঁদে কেঁদে। তার কান্না শুনে সকলেই ছুটে এল এবার। শেহজাদ তার সামনে হাঁটুমুড়ে বসে বলল,
” একি অবস্থা? হাত বেঁধেছে কে? কান্না করছেন কেন আম্মি? ”
আলিজা তার আব্বাকে পেয়ে এবার সশব্দে কেঁদে উঠে বলল,
” কালু ভাইচানের আব্বা কালু আব্বা বুকা দিচে। ”
তনী এসে বলল,
” কি হয়েছে মামনি? ”
আলিজা তাকে দেখে শেহজাদকে বলল,
” কালু ভাইচানের আম্মা ভানো। আব্বা ভানো নয়।”
শেহজাদ বলল, ” আপনি কি বলেছেন? ”
আলিজা ঠোঁট ফুলিয়ে চেয়ে রইলো। শেহজাদ তার হাতের বাঁধন খুলে নিতে নিতে বলল,
” সত্যি কথা বলবেন। কি বলেছেন আপনি? ”
” কালু ভাইচান। ”

উপস্থিত সকলেই হেসে উঠলো তার কথা শুনে। শেহজাদ তাকে কোলে তুলে চোখের পানি মুছে আদর করে বলল,
” বড় ভাইজান ডাকবেন। কালো ভাইজান বলা তো বেয়াদবি। আল্লাহ মাবুদ ভীষণ রাগ করবেন। ”
শেহজাদ যেতেই তটিনী সিভানকে জিজ্ঞেস করলো, তোমার ভাইজান কবে এসেছে? ”
” এইতো মাত্রই। ”
তটিনী কক্ষে গেল। শেরহাম শোহরাবের গায়ে আতর মাখিয়ে দিচ্ছিলো। তটিনীকে দেখে শোহরাব হেসে বলল,
” আম্মা বুন কান্না কলচে। আব্বা বুকা দিচে। ”

তটিনী মৃদু হাসলো। শোহরাব শেরহামের গালে নাকমুখ ঘষে বিছানা থেকে নেমে গেল। তটিনীর কাছে যেতেই তটিনী নীচু হয়ে তার গালে আদর করলো। শোহরাব টা টা দিয়ে চলে গেল। তটিনী চোখতুলে শেরহামের দিকে তাকালো। চোখাচোখি হতেই তটিনী চোখ সরিয়ে নিল। ঘাড়ে হাত মালিশ করতে করতে শেরহাম সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তার মুখের দিকে চেয়ে রইলো। তটিনীর প্রত্যেকটা মন খারাপের গল্প তার চোখেমুখে লেপ্টে থাকে যা শেরহাম সুলতানের কাছে আড়াল করা দায়। সোলেমান মাহমুদ আসায় যেখানে তার হাসিখুশি আনন্দে থাকার কথা সেখানে তার মন খারাপ! অবিশ্বাস্য! ক্ষণকাল পর শেরহামের বুঝতে পারলো যে এই মন খারাপের পেছনে সে-ই দায়ী। সোলেমান মাহমুদ নিশ্চয়ই কিছু না কিছু বলেছে।
তটিনী টেবিলে থেকে মোড়কটা নিয়ে চলে যাচ্ছিলো। শেরহাম ডেকে বলল,

” ওটাতে বিরিয়ানি। ”
” কার? ”
” কিনেছিলাম। ”
” বেশ খেয়ে নাও। ”
তটিনী সেটা টেবিলে রেখে বেরিয়ে যাচ্ছিলো। শেরহাম কোমর টেনে তার সামনে এনে বলল,
” তোর কি মনে হয় আমি না খেয়ে আছি? তুই আমাকে খেতে না দিয়ে বের করে দিবি আর আমি উপোস থাকবো? কেন কোন দুঃখে? এটা ছেলের জন্য কিনেছি। ”
তটিনী নিজেকে তার বাহুবন্ধনী হতে মুক্ত করার জন্য ছটপট করে উঠলো। বলল,
” খুব ভালো। ছেলেকে ডেকে এনে খাওয়াও। ”
শেরহাম হেসে বলল, ” ছেলের মাও খাবে। শোন তনীর বাচ্চা আমার সাথে ধাক্কাধাক্কি করিস না। পারলে ঘাড়ে মলম মালিশ করে দে। ঘাড় ব্যাথা করছে ভীষণ। ”
বলেই ঘাড়ে হাত বুলালো। তটিনী বলল,

” ঘাড়ে কি হয়েছে? ”
” ওই খালাসিদের সাথে হাতে হাতে কাজ করতে গিয়ে কয়েকটা বোঝা কাঁধে তুলেছিলাম। ব্যস। ঘাড় ঘুরাতেও পারছিনা। মনে হচ্ছে রগটগ ছিঁড়ে যাবে। ”
তটিনী রাগত স্বরে বলল, ” অত ভারী বোঝা তুলতে গেলে কেন? দেখি। ফুলেছে? ”
শেরহাম ফিচেল হাসলো। বলল,
” ভয় পেলি নাকি? এত সহজে রগটগ ছিঁড়বে না।মরবও না। মরলে তখনই মরে যেতাম। ”
জমানো রাগগুলো তরতরিয়ে বাড়তে লাগলো তটিনীর। নাকের সাথে কেঁপে উঠলো চোখের পাতাও। শেরহাম বলল,
” পরে কান্নাকাটি করিস। আগে মলম দে। ”
বলেই কেদারায় বসলো। তটিনী পেছনে দাঁড়িয়ে ঘাড়ে আলতো করে মলম মেখে দিতে দিতে বলল,
” বেশি ব্যাথা করলে বলো। ঔষধ খেতে হবে। নাহলে কমবে না। ”
শেরহামের সাড়াশব্দ নেই। সে মাথা ছেড়ে দিয়েছে। তটিনী ভড়কে গেল। মলমের কৌটো পড়ে গেল তার হাত থেকে। সামনে গিয়ে শেরহামের মুখ ধরে ডেকে বলল,

” এই কি হলো? চোখ খুলো। ”
গাল ধরে ডাকাডাকি করতে করতে ফুঁপিয়ে উঠে উচ্চৈস্বরে কেঁদে উঠার পূর্বমুহূর্তে শেরহাম চট করে চোখ খুললো। হেসে উঠলো। তটিনী স্তব্ধ, হতভম্ব। সজলনেত্রে শেরহামের পানে চেয়ে রইলো। আচমকা হিংস্র বাঘিনীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো শেরহামকে নখের আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন করতে। শেরহাম কেদারা ছেড়ে উঠে তাকে শূন্যে তুলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হেসে উঠলো। রাগে তটিনীর মুখ দিয়ে কথা বেরোলো না । শুধু চোখফেটে জল বেরোলো। শেরহাম হেসে উঠে তটিনীর গালে শক্ত চুম্বন বসাতে বসাতে বলল, ” ওরেহ নাগিনী। ”
তটিনী তার দন্ত গেঁথে দিল শেরহামের ঘাড়ে।
শেরহাম ঘাড়ে হাত মালিশ করে বলল, ” মলম লাগাতে বলেছি। আর তুই কামড়ে যা তা অবস্থা করে দিয়েছিস। রাক্ষসী। সারাদিন কি না খেয়েছিলি নাকি? ”
তটিনী নিজেকে শান্ত করে তার দিকে তাকিয়ে রইলো মুখ গোমড়া করে। শেরহাম কেদারায় ফের বসলো। তটিনীর দিকে ঘুরে বসে বলল,

” যাহ গরম চা-পানি কিছু নিয়ে আয়। মাথাটা ধরেছে। না আনলেও সমস্যা নেই। বাইরে গিয়ে খেয়ে আসবো। ”
কথাটা যে তটিনীকে রাগিয়ে দেয়ার জন্য বলেছে তটিনী বেশ বুঝেছে। সে শেরহামের বাহুতে ধুমধুম মেরে গটগট পায়ে বেরিয়ে গেল। যেতে যেতে শেরহামের হাসির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলো।
তটিনী চা করার জন্য রসাইঘরে এল। শাহানা তাকে দেখে বলল,
” শেরহামের জন্য এখান থেকে কিছু নাশতা নিয়ে যাও। আর এখানে তোমার জন্য কয়েকটা ফল রেখেছি। নিয়ে যাও। আঙুরগুলো মিষ্টি আছে শোহরাব খেতে পারবে। ”
তটিনী মাথা নাড়লো। ফুলকলিকে বলল, ” ফুলি আপা চা দাও তো। ”
ফুলকলি চা করতে দিল। পানি সেদ্ধ হচ্ছে। তটিনী চা-পাতা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সে পাতার আন্দাজ বুঝতে পারে না। শাহানা এসে চা-পাতা দিয়ে দিল। হামিদা হেসে বলল,
” ভাগ্যিস বিয়ে করে বাইরে যেতে হয়নি। নইলে কি হতো তনী? ”
তনী গাল ফুলিয়ে তাকালো। হামিদা হেসে উঠলো। বলল,

” এই শবনম তুমি ভালো করে রান্নাটা দেখো আগে। আয়শা তুমিও। নইলে সোহিনীর মতো অবস্থা হবে। ডাক্তার সাহেব সেবার যা নাম করলো বউয়ের রান্নার। ”
রসাইঘরে উপস্থিত সকলেই হেসে উঠলো। তটিনী বলল,
” মোটেও তা নয় মামী। আমি দেখিয়ে দিলে সবই পারি। ”
শাহানা বলল, ” হ্যা তা ঠিক। চেষ্টা করলে অসম্ভব কিছু নয়। ”
হঠাৎ করে টুনু বলে উঠলো,
” আরেহ আপনে ছোট মামী ডাকেন ক্যান বেগম? উনি তো আপনের শ্বাশুড়ি হয়। ”
উপস্থিত সকলেই হঠাৎ বিষম খেল। হামিদা দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে নিল। খোদেজা চোখ রাঙিয়ে তাকালো টুনুর দিকে। তটিনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হামিদাকে পেছন জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বলল,
” আমি তো মামী ডেকেই অভ্যস্ত। হুট করে একদিন শ্বাশুড়ি মা ডেকে বসবো। কেমন? ”
হামিদা হাসলেন। শাহানা বলল,

” চা হয়ে গেছে। নিয়ে যাও তনী। ”
খোদেজা বললেন ” শেরহামের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে ভাইসাবের?”
শাহানা তটিনীর মুখে দৃষ্টি রেখে বললেন,
” তোমার হয়ত ওকে বলা উচিত। ”
তটিনী চা নাশতাগুলো ট্রেতে তুলতে তুলতে বলল,
” আব্বার প্রয়োজন পড়বে না আম্মা। তাছাড়া ও বেফাঁস কথাবার্তা বলে বসে। তোমরা নিশ্চয়ই চাইবে না ও আব্বার সামনে বেঁফাস কথাবার্তা বলে বসুক। ”
শাহানা বলল, ” কিন্তু..
” আর কোনো কিন্তু নয় আম্মা। আমি শান্তি চাই। আর চাই ওকে জড়িয়ে কোনো অশান্তি যাতে না হয়। কারণ দিনশেষে সব দোষ ওর ঘাড়ে চাপে। ওর কাছ থেকে স্বাভাবিক আচরণ আশা করো না।”
কাউকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তটিনী চলে গেল। খোদেজা বলল,
” শেরহামকে নিয়ে কোনো কথায় বলা যায় ওর সামনে। বাবাহ গো। ”
শাহানা বলল, ” আমি আর কিছু বলবও না। ওরা থাকুক ওদের মতো। ”
তটিনী চা এনে শেরহামের সামনে রাখলো। বলল,

” চা নাও। ”
শেরহাম চায়ের কাপ নিল। চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,
” চা কে বানিয়েছে? ”
তটিনী ভাবলো চা হয়ত বেশ মজা হয়েছে। তাই সে বলে ফেললো, ” আর কে। আমি। ”
শেরহাম নাকমুখ কুঁচকে বলল,
” এসব কোনো চা হলো? ফালতু। ”
তটিনী জিভে তৎকালীন কামড় দিয়ে বলল,

” আল্লাহ’র কছম। আমি বানাইনি। আম্মা নয়ত ফুলিআপা বানিয়েছে। দাঁড়াও আমি জিজ্ঞেস করে আসি। ”
শেরহাম চায়ের কাপ দূরে সরিয়ে পা বাড়িয়ে দিল। তার পায়ের সাথে লেগে তটিনী উল্টে পড়ে যাবে তখনি শেরহামের কোলে গিয়ে পড়লো। শেরহাম বলল, ” তুই কেমন চা বানাতে পারিস তা আমার ভালো জানা আছে। অন্যজন চা বানিয়েছে। নাম কুড়াচ্ছিস তুই। অকর্মার ঢেঁকি। ”
তটিনী তার গলা জড়িয়ে ধরে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
” আমি অকর্মার ঢেঁকি? সেজন্য চা ফেলে পুড়িয়ে মারতে চাইছো? চা পড়লে কি হতো ?”
শেরহাম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,

” পুড়ে যেতি। ”
” পুড়ে গেলে ভালো হতো? চামড়া পুড়ে গেলে তো বলতে ইয়াক কি কুৎসিত! তারপর আরেকটা সুন্দরী দেখে নিকাহ করে নিতে। মন্দ তো সব আমার হতো। তোমার কিছু হতো না। ”
শেরহাম অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে বলল,
” আর কি? ”
তার হাসিতে তটিনীর গায়ে জ্বালাপোড়া হতে লাগলো। সে বলল
” হাসি থামাবে নাকি.
” নাকি কি করবি? কামড়াবি? তুই ওটা ছাড়া আর কি পারিস ভাই?”
” বউকে ভাই ডাকতে লজ্জা করে না?”
” বড় ভাইয়ের কোলে চড়তে লজ্জা করে না?”
তটিনী কোল থেকে সরে পড়ার জন্য ধস্তাধস্তি শুরু করলো। শেরহাম হেসে বলল,

” চা পড়বে। সত্যি সত্যি পুড়ে গেলে আমি কিন্তু পুড়ে যাওয়া বউ নিয়ে সংসার করব না বলে দিলাম।”
” তোমাকে আর বউ দিচ্ছে কে? ”
” চাইলে লাইন পড়ে যাবে। চেষ্টা করে দেখবো নাকি?”
” করো। আমিও দেখি। আমার মতো মেয়ে তোমার সংসার করছে অন্য কেউ হলে কবে চলে যেত। ”
তটিনী চোখদুটো জ্বলজ্বল করছে। শেরহাম সশব্দে হেসে বলল,
” আরেহ তুই রেগে যাচ্ছিস কেন তনীর বাচ্চা? ”
” ছাড়ো আমাকে। আরেকটা সুন্দরী দেখে নিকাহ করো যে ভালো ভালো রান্না পারে। ছাড়ো। ”
শেরহামের চা খাওয়া শেষ। হেসে বলল,

” ছাড়বোই তো। না ছাড়লে আরেকটা নিকাহ কিভাবে করব? একসাথে দুই বউ! অসম্ভব ব্যাপার স্যাপার। তোর কামড়ানোর দাগ দেখে কেউ আমার কাছ ঘেঁষবে? ”
তটিনী কথাটা শুনে হঠাৎ চাপা হাসলো। শেরহাম
হাসি চেপে রেখে কাপটা তটিনীকে দিল। তটিনী কপাল কুঁচকে কাপটা নিতেই শেরহাম তাকে কোলসমেত দাঁড়িয়ে গেল। নাকে নাক ঘষে বলল,
” যদি এর পরের বার নিকাহ করি তাহলে তোকেই করব। এর পরেরবারের পরেরবারও যদি নিকাহ করি তাহলেও তোকে করব। কারণ কি জানিস? ”
তটিনী তার হাতের বন্ধন দৃঢ় করে ঠোঁট মৃদু হাসি ঝুলিয়ে বলল,
” কি কারণ? ”
শেরহাম বলল,
” কারণ আমার কাপড়চোপড় ধোঁয়ার জন্য, খাবার এনে দেয়ার জন্য বিনা পয়সায় এমন বিশ্বস্ত কাজের ঝি পাব না। ”
তটিনী আশ্চর্যান্বিত চোখে চেয়ে রইলো। আচম্বিত চিৎকার দিয়ে বলল, ” তুমি আমাকে কাজের ঝি বললে? ”
পরিস্থিতির বিরূপভাব বুঝে শেরহাম আগেভাগেই তাকে বিছানায় ধপাস করে ছুঁড়ে দিয়ে বলল,

” আর কামড়াস না ভাই। এখনো জ্বালা কমেনি। ”
তটিনী তাকে টান মেরে ফেলে দিল তার পাশে। শেরহামের উপর ঝুঁকে গালে দন্ত দ্বারা দংশন করে হেসে বলল,
” আর কি যেন? ”
তার কপালের চুলগুলো শেরহামের মুখের উপর পড়লো। কামড়াতে পেরে তার ঠোঁটে মধুর হাসি। শেরহাম গালে হাত মালিশ করে বলল,
” মানুষের সামনে মুখ দেখাতেও কি দিবি না? আজব! ”
তটিনী ঝুঁকে বলল, ” আরেকটা দেই? ”
শেরহাম তৎক্ষনাৎ তাকে ফেলে দিল। তার শরীরের নীচে চাপা দিয়ে বলল,
” সবকিছুর একটা সীমা থাকে তনীর বাচ্চা। ”
তটিনী হাসতে লাগলো। বলল,

” নাগিনী ডেকেছ, আর ছোবল খাবে না? আমি কে জানো? সুলতান মহলের বাড়ে বেগম। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে জানা আছে মশাই? আমি কার বেগম জানো?”
শেরহাম কপাল চোখ কুঞ্চন করে বলল,
” কার? ”
তটিনী ঠোঁট টিপে হাসলো। বলল,
” বিখ্যাত বনমানুষ রহমান ওরফে শেরহাম সুলতানের প্রিয় বেগম। ”
আচমকা শেরহামের কাঁধের পোশাক টেনে নিজের আরও কাছে টানলো তটিনী। জিজ্ঞেস করলো,
” খুব প্রিয় না? বলো বলো। আমার মতো তোমাকে কেউ অত ভালোবেসেছে?”
শেরহাম ভাবুক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে রইলো। তটিনী মৃদুভাবে হেসে তার কানের কাছে বলল,
” কিন্তু আমি জানি, এই পৃথিবী, চাঁদ, সূর্য যেমন সত্য, তুমি আমাকে ভালোবাস এটাও ঠিক তেমনই সত্য। ”
শেরহাম তার মাথার নীচে হাত গলিয়ে রেখে মাথাটা উপরে তুলে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলল,

প্রিয় বেগম সিজন ৩ পর্ব ১+২

” কাজ আছে। আসি। ”
তটিনী খপ করে ধরে ফেললো তার পোশাক। খুবই নিকটে টেনে এনে চেয়ে রইলো প্রতীক্ষমান দৃষ্টিতে।
শেরহাম তার মাথার নীচে দু’হাত গলিয়ে মুখটা তুলে এনে অজস্র ভালোবাসায় রাঙিয়ে দিল।
তটিনী ফিক করে হেসে উঠে বলল, ” ছিঃ এতগুলো দিতে বলেছি?”
শেরহাম অবাক!

প্রিয় বেগম সিজন ৩ পর্ব ৫+৬