প্রেমঘোর পর্ব ১৩
নার্গিস সুলতানা রিপা
…..সাদাদ ড্রাইভ করছে…কোনো কথা বলছে না…মেজাজ টা যে এখনও চটে আছে নৌশিনের বুজতে বাকী রইলো না…তাই নৌশিন নিজে থেকে কথা বললো…”আচ্ছা,এখনো তোমার রাগ কমে নি??ব্যাপার টা তো সিম্পল ছিলো”
…সাদাদ নিশ্চুপ…
“ওকে…রিদি আপু আমার সাথে একটু খারাপ বিহেভ করেছে বাট তুমি তো সেটার প্রতিবাদ করেছো…তাহলে এখনো কেন মুখটা বাংলার পাঁচ করে রেখছো??আমি কিন্তু তোমার এমন চেহারা দেখতে রাজি নই….”
….সাদাদ এখনও চুপ…ড্রাইভ করে চলেছে…নৌশিনের এবার রাগ হচ্ছে সাদাদের উপর….
“আজব তো…একটা মানুষ হতেই পারে তোমার আমার থেকে আলাদা…সেটা মেনে নিতে হবে…এটাই স্বাভাবিক যে সবাই সেইম মোডের হবে না…এই যে তুমি আর আমি আমাদের মাঝেও তো কত তফাত…তো রিদি আপু তোমার আমার মাঝের কেউ না ওর জন্য আমরা কেন আমাদের ভালোলাগার সময় টা নষ্ট করবো??”
…সাদাদ কোনো কথা বললো না..কিন্তু মনে মনে ঠিকই বললো”তোমায় আমি কি করে বলবো,ও যে তোমার আমার মাঝে ডুকে পড়তে চাইছে”…কিন্তু সেটা তো আর নৌশিন শোনতে পেলো না…তাই বিরক্ত হয়ে নৌশিনও আর কোনো কথা বললো না…জানালার দিকে মুখ করে বসে রইলো….
….সাদাদের বাসা থেকে সেন্টারটা খুব বেশি দূরে নয়…এবার ওরা সিগনালে আটকে পড়লো….সাদাদ গাড়ি থামিয়ে নৌশিনের দিকে তাঁকালো-মেয়েটা মুখ ভার করে বাইরের দিকে তাঁকিয়ে…..
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তুমি আবার মোড অফ করে রাখলে কেন?”(সাদাদ)
…নৌশিন সাদাদের দিকে ফিরে তাঁকালো….
“না আমার কি মোড আছে??যে সেটা অফ হবে??”
“রাগ করলে??”(সাদাদ)
“তোমার কি মনে হয়???সেই কখন থেকে আমি তোমার সাথে কথা বলছি তুমি কোনো কথাই বলছো না..এট লিস্ট হু বা না তো করতে পারতে…?”
“এখন তো বলছি….মোড ঠিক করো..”(সাদাদ)
“বললাম আর মোড ঠিক হয়ে গেলো…ভেতর থেকে ঠিক হতে হয়….যেমন তুমি রাগ করলে পা থেকে মাথা সবটায় রাগে গিজগিজ করে…কেন বলো তো??ফার্স্টে আমার সাথে রাগ করলে সেটা ঠিক হলো কত ভালো লাগছিলো তখন আমার তুমি জানো??বাট এরপরে রিদি আপুর উপর রাগ করে তুমি আমার সাথে কথা বলছিলে না…যেটা সব চেয়ে বেশি কষ্ট দেয় আমায়…আমার কি মনে হয় বলো তো??তোমার মতো রাগী হওয়া উচিত ছিলো আমার…আমি তো আর তোমার মতো রাগ দেখাতে পারি না…কথা না বলে থাকতে পারি না বাট তুমি পারো…”(নৌশিন)
“হালকা হয়েছে মন??”(সাদাদ)
“মানে???”(নৌশিন)
“এই যে মনের সব কথাগুলো আমার উপর ঝাড়লে মনটা তো হালকা হলো নাকি??”(সাদাদ)
“সাদাদ আমি রাগে কথা গুলো বলি নি…আমি জাস্ট এটা বুঝতে চেয়েছি তুমি যখন রাগ বা মন খারাপ করে আমার সাথে কথা না বলো আমার খুব কষ্ট হয়…ইভেন শুধু আজ কেন?টানা চার বছরে কম বুজিয়েছি তোমায় আমি-যে তুমি রাগ করে বা মন খারাপ করে আমাকে মারো-বকো আমার কোনো আপত্তি নেই বাট কথা বলো আমার সাথে,আমি সহ্য করতে পারি না যদি তুমি আমার সাথে কথা না বলো…কিন্তু তুমি একটা কাজ ই করে আমার সাথে”(নৌশিন মন খারাপ করে কথাগুলো বললে ফেললো)
…আসলেই সাদাদ যখনি যার সাথে রাগ হোক না কেন সেটার প্রভাব এই মেয়েটার উপর ফেলে…কথা বললে জবাবও দেয় না…যেন ওর সব কিছুর দায় এই মেয়েটার…আসলে যাকে খুব বেশি ভালোবাসা যায়-সে মানুষটার উপর নিজের রাগ/অভিমান/কষ্ট/সুখ সবটা কিভাবে জানি এমনি ই চলে যায়…হুম না চাইলেও প্রভাব টা পড়ে….
“মনে থাকে না তো…মনে হয় তুই এসে সব ঠিক করে দিবি তাই….অভ্যাস হয়ে গেছে সবটা তোকে দিতে দিতে…একটু মানিয়ে নে না??”(সাদাদ)
“ধুর….মানিয়েই তো নিচ্ছি…বাট কথা না বললে কান্না পায় আমার…এট লিস্ট হু হা কিছু করো তাহলেই হবে…রাগ করলে তো মুখটা ঢেড়সের মতো হয়ে যায়…ভালো লাগে না দেখতে…আমার কপালেই যে কোথা আসলে তুমি!আল্লাহ ই ভালো জানেন”(নৌশিন)
“আল্লাহ না শুধু আমিও জানি…”(সাদাদ)
“তুই আমার টেডি বেয়ার… আমার সব রাগ,মন খারাপ ঠিক করা তোর কাজ তাই আমি তোর কপালে জুটেছি….দেখ তোর তো রাগ দেখলাম না কোনো দিন বাট আমার রাগ ভাঙাতে তোর একটু কষ্ট হলেও কিন্তু একমাত্র তুই রাগ টা ভাঙাতে পারিস বা কনট্রোল করতে পারিস তাই তো তোকে আমার করে পাঠানো হয়েছে…এই যে আজ রিদির উপর আমি চটে গেলাম তুই ছাড়া অন্য কেউ কিন্তু আমাকে সে সময় থামাতে পারতো না…আর আমি কেন জানি না তোর উপর সব টা দিতে পারি…”(সাদাদ)
“ওহ্…☺☺☺তুমি না আস্ত পাগল…”(নৌশিন)
“আচ্ছা শোন না…”(সাদাদ)
“তোর রাগ হয় না আমার উপর.??”(সাদাদ)
“তোমার মতো নিম মুখু নাকি আমি যে অল্পতেই রাগ হবে…তবে আমারও কিন্তু রাগ হয় দেখবা যে দিন রাগ করবো তোমাকেই ভাঙাতে হবে হিমসিম খেয়ে যাবে তখন…আমি তো তোমার টা অনায়াসে ভাঙাতে পারবো কষ্ট করে হলেও আমার অভ্যাস আছে বাট তোমার সেটা নেই…তাই এমন কিছু করে বসো না যেন আমার রাগ হয়-হয়তো এমন হয়ে গেলো আমি রাগ টা ভাঙানোর সুযোগ ই দিলাম না তোমায়….কথাগুলো অবশ্য আমার না বাবা বলে আর কি…আমি নাকি ছোট সময় খুব শান্ত ছিলাম..আমি তো ভাইয়ার নয় বছরের ছোট বাট ভাইয়া নাকি তবু সারাক্ষণ আমায় জ্বালাতো আর আমি সব হাঁসি মুখে সহ্য করে নিতাম..কিন্তু মাঝে মাঝে ভাইয়া এমন কিছু করতো আমি নাকি ভাইয়াকে সারা দিন মুখ ই দেখাতাম না যেন ভাইয়া আমার রাগ ভাঙানোর সুযোগ না পায়….তাই তোমাকে বললাম”(নৌশিন)
“এই…না প্লিজ….আমাকে এতো বড় শাস্তি দিলে আমি নিতে পারবো না…”(সাদাদ)
“ওকে।।।তার চেয়ে শাস্তি স্বরূপ তোমায় ফুচকা খায়িয়ে দিবো সে দিন..”
“তবুও হাজার গুণ ভালো শাস্তি হবে সেটা☺”(সাদাদ)
“আর শোনো রিদি আপুর উপর আর রাগ করে থেকো না…সবাই তো একরকম হয় না…আমারও বুজা উচিত ছিলো-যে সবার হাত ধরা মে বি ঠিক না…তাই তুমি আর রাগ করে থেকো না…তুমি তো প্রতিবাদ করেই এসোছো ততটুকুই যথেষ্ঠ”(নৌশিন)
…..সাদাদ কিছু বলতে যাবে তখনি সিগনাল ছেড়ে দিলো তাই আর কিছু না বলে তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করে পৌঁছে গেলো সেন্টারে…
……সেন্টারে গাড়ি পার্ক করতেই সাদাদের ভাবীর প্ল্যানিং মতো-রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু কিশোরী ওদের ফুল ছিটিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলো…..
…..ওরা ভেতরে ডুকতেই সবাই পুরো হা হয়ে তাঁকিয়ে আছে…যদিও সেই মুহুর্তে যারা উপস্থিত ছিলো সবাই সাদাদ আর নৌশিনের পরিচিত বাট ওদের দুজনকে পাশাপাশি যে এতটা ভালো লাগছে কেউ চোখ সরাতে পারছে না…বিশেষ করে নৌশিনকে আসলেই আজকে অন্য রকম অপূর্ব সুন্দর লাগছে….সাদাদের মা দৌঁড়ে এসে ছেলের বৌকে জড়িয়ে ধরে…”বড় বৌ মা…এই মেয়ে কি আমার ছেলের বউ নাকি পরী??”
“না মা…আপনার ছোট ছেলেরই বউ…কিন্তু একটা ছোট্ট পরীর মতো দেখতে”(সাদাদের ভাবী)
“মাম্মি…নতুন বউ কাকি মনি কে দেখতে বারবি ডলের মতো তাই না??”(অরূপ)….সাদাদের ভাইয়ের ছেলে পাঁচ বছর বয়স-ওর মায়ের অাঁচল ধরে এমন একটা প্রশ্ন করলো……অরূপের কথা শোনে সবাই হেঁসে ওঠলো….
…একটু দূরে বসে থাকা নৌশিনের বাবা মা এতক্ষনে সবার ব্যবহার দেখে এটা বুঝে গেছে ওদের মেয়ের কোনো দিন সুখের অভাব হবে না এই পরিবারে…..নৌশিন সবার ভিড়ে ওর বাবা মা কে দেখতে পায় নি…..
“মাম্মাম বলো না…বউ টা বারবি ডল না???”(অরূপ তখন কোনো উত্তর পায় নি তাই আবার ওর মাকে প্রশ্নটা করে)
…”হুম বাবু…এটা একটা বারবি ডল☺☺…তোমার কাকি মনি..কেমন!”….
“হি হি পুতুল কাকি মনি☺☺☺”(অরূপ)
“আচ্ছা তোমরা কি ওদের এখানেই দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি??স্টেজে চেয়ার দুটো খালি থাকবে???বসুক ওরা পরে কথা বলো তোমরা..”(সাদাদের দোলাভাই)
….সবাই মিলে সাদাদ আর নৌশিনকে স্টেজে নিয়ে যায়…নৌশিন কোনো কিছু না ভেবেই ধপাস করে বসে পড়ে নিজের চেয়ারে…এটা দেখে উপস্থিত সবাই হেঁসে ফেলে…নতুন বউ কোনো কিছু না বলেই বরের আগে এভাবে হুড়হুড়িয়ে বসে পড়বে এটা কেউ ভাবে নি…তাই হাঁসা টাই স্বাভাবিক….
নৌশিন বোকার মতো আবার জোড়ে বলে উঠে”প্লিজ হেঁসো না তোমরা…আমি এতো গহনা আর এই ভারী শাড়ী টা নিয়ে আর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না…তাই বসে পড়লাম…”
…সাদাদের দিকে তাঁকিয়ে আবার বলে ওঠে”সাদাদ প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড তোমার আগেই বসলাম…যদিও আমি জানি তোমার আগে বসার কথা…বাট শাড়ী টা আমার থেকেও ওজন লাগছিলো”….
।।।”আরে ঠিক আছে…বর আগে বসবে সেটা জাস্ট প্রচলিত এটা তো আর রোল টোল না রে”।।।(সাদাদের কাকি)
….”হুম…তবে শাড়ী আর গহনার দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই-শরীর টাও একবার খেয়াল করা উচিত”(সাদাদ)…
“সাদাদ..আজ একটু চিকন আর তোমার চেয়ে খাটো বলে এই কথা টা বললে…..এই অপমান কই রাখবো??”(নৌশিন)
“অপমানের কি আছে যা সত্যি তাই বলেছি ম্যাম…আমারও তো এটাই মনে হয় তোমার চেয়ে তোমার শাড়ীর ওজন টা বেশি হবে”(সাদাদ)….
…..সাদাদের মা নৌশিনের বাবা আর মাকে স্টেজে নিয়ে আসে…নৌশিন ওর বাবা মাকে দেখে ওঠে গিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে…”মা..☺☺আমি না বললে আসবে না???”
“তোর বাবা জোর করে আনলো কি আর করার তাই আসলাম..না আসলে আমার সোনা মেয়েটাকে যে এতো সুন্দর লাগছে দেখেতেই পেতাম না”
“আমাকে ভুলে গেলি??”(নৌশিনের বাবা)
…নৌশিন এবার ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে”ইশ একদম না..তুমি আমার একটা মাত্র বাবা তোমাকে কি ভুলা যায় নাকি..☺☺”(নৌশিন)
প্রেমঘোর পর্ব ১২
….এটা কোনো কথা???…বাবা তো একটাই থাকে সবার… নৌশিন আবার ঘটা করে সবার সামনে বলে একটা মাত্র বাবা…হায় আল্লাহ মানুষের হাঁসি কি এতো সহজে থামবে নাকি….হলোও ঠিক তাই….
“হয়েছে পাগলী…যা বস এখন নিজের জায়গায়…”(নৌশিনের বাবা)
“মা…ভাইয়া,ভাবী কোথায়??”(নৌশিন)
“ওরা আসছে…ফোন আসছে সবাইকে নিয়ে…আমি আর তোর বাবা আর দেরি করতে পারছিলাম না তাই সবাইকে রেখেই বেরিয়ে পড়েছি…ওরা এসে গেলো বলে-মিরপুর এসে গেছে..শ্যামলী আসতে আর কতক্ষণই বা লাগবে…তুই গিয়ে বস জামাইয়ের পাশে….যা…”(নৌশিনের মা)…………………