প্রেমঘোর পর্ব ১৬
নার্গিস সুলতানা রিপা
…প্রাপ্তি দৌঁড়ে আসে…
…”এই এই…পিক নেন আমাদের”(ফটোগ্রাফারকে উদ্দশ্যকে করে)(প্রাপ্তি)(সাদাদ আর নৌশিনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে)
….তাই হলো…ফটোগ্রাফার ওদের কিছু পিক তুলে নিলো…
“ওকে..তোমরা বসো.. আমি যাই…সবার সাথে পিক হয়ে গিয়েছিলো তোমাদের সাথেই বাকী ছিলো…তাই তুলে নিলাম”
“হুম…তা তোমায় তো দেখায় যাচ্ছে না…কোথায় কি করছো??”(নৌশিন)
…”আমি একটু ঐ দিক টায় ছিলাম ভাবী তাই হয়তো দেখতে পাও নি…আমি যাই হ্যাঁ??খুব খুদা পেয়েছো-এসে যাবত খাই নু কিছু..”(প্রাপ্তি)
“বলিস কি!এক ঘন্টা হয়ে গেলো তুই না খেয়েই আছিস!!”(সাদাদ)
“ওহ..ভাইয়া…জোক করো না…সত্যিই খাই নি”
“আচ্ছা বাবা..তুমি যাও”(নৌশিন)
“এর যে কত খাবার পেটে ডুকে আল্লাহ ই জানে…”(সাদাদ)
“আরে।।।কত খাবার মানে.. খুদা লাগলে খাবে না! আর ও তো একবারে অনেক টা খায় না…এখন খেয়ে খুব বেশি একটু জোস…পরে আবার”(নৌশিন)
“হুম..এজন্যই বেশি মোটা হচ্ছে না…খাবার পরিমাণ বেশি হলে ফুলতো সিউর”(সাদাদ)
..”এই…”(নৌশিন)।।।।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আবার দাগের কথাটা বলতে চাইলো…বাট পারলো না…..সাদাদের এক বন্ধু এসে জড়িয়ে ধরলো সাদাদকে”আরে দোস্ত….কি অবস্থা তোর??অবশেষে আমাদের ছোট্ট বোন টাকে??”(সাদাদের ফ্রেন্ড)(সুমন)
“আরে….কি আর করার… “(সাদাদ)
“কবে আসলি??..আমি তে ভেবেছি তুই আসতে পারবি না”(সাদাদ)
“আর বলিস না…প্রথমে আমিও ভেবেছিলাম তোর মতো।।।বাট পরে ভাবলাম কাজের জন্য বিয়ে টা মিস করলাম এখন এটাও যদি মিস করি তাহলে ঠিক জমবে না…আফটার অল বন্ধুর বিয়ে বলে কথা…তাই সব কাজ ফেলে চলে এলাম-আবার পরশু গোয়িং টু কলকাতা”(সুমন)
“আপনি কলকাতা থেকে আসলেন ভাইয়া??”(নৌশিন)
“হ্যাঁ রে পুচকি…আর শোন বন্ধর বউ বলে আমি কিন্তু তোকে ভাবী বলে ডাকছি না…আগে যেমন তুই তোকারি করতাম তেমন টাই থাকবে”(সুমন)
….নৌশিন মুচকি হেঁসে…”হুম…আপনি আমায় সেভাবে ডাকলেই আমি বেশি খুশি হবো…ভাই-বোন তো আমরা তাই না??”(নৌশিন)
“রাইট…এই নে এটা তোর ভাইয়ের পক্ষ থেকে তোর”(সুমন)
“এ মা…আবার গহনা…আমি এতো গহনা কোথায় রাখবো ভাবছি☺”(নৌশিন)
“রাখিস মাটির হাড়িতে ভরে মাটির নিচে…😃😃😃”(সুমন)
“আপনিও না ভাইয়া☺☺!”(নৌশিন)
…সাদাদের আরও অনেক ফ্রেন্ড রাও এসে যায়…অনেক দিন পরে দেখা হওয়ায় সবাই সবার সাথে আগের মতো মেতে উঠেছে…আসলে পুরোনো বন্ধুদের একসাথে কাছে পেলে যা হয় আর কি…নৌশিন শুধু ভাবছে দাগ টার কথা….কি করবে এখন সাদাকে কে তো আর ডাকা যাবে না এখন….আশে পাশে তাঁকাতে থাকে-বলার মতো কাউকে যদি পাওয়া যায়!!…..
নাহ্ আশে পাশে না আছে সাদাদের আপু…না আছে ভাবী..নৌশিনের ভাবী টাও নেই-থাকলে বলা যেতো,হেল্প করতো ওরা নিশ্চয়…বাট এখন কি হবে সেটা ভেবে নৌশিন অস্থির……………………
“না আশে পাশে কথাটা বলার মতো কাউকে ই দেখছি…একটু পরেই সাদাদের সব বন্ধুরা আমার সাথে কথা বলতে তো আসবেই দাগ টা যদি ভেসে ওঠে!আল্লাহ্,বাবার দাওয়াত দেওয়া গেস্টদেরও আসার সময় হয়ে যাচ্ছে…কি হবে??”(মনে মনে ভাবতে লাগলো নৌশিন)
…ভাবতে ভাবতে চোখ পড়ে যায় ওর মায়ের দিকে….ওর মা অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছে-মেয়ে যেন একটু চিন্তিত কিন্তু বুঝতে পারে নি কেন’তিনি ভেবেছেন এতো লোকের মাঝে এই সাজে একটু হয়তো আনইজি ফিল করছে ওনার মেয়ে সেজন্য এমন দেখাচ্ছে’তাই কাছে যায় নি….কিন্তু নৌশিন মাকে দেখা মাত্র ই আর কিছু ভাবলো না ইশারা করে নিজের কাছে আসতে বললো……”যাই হোক..মাকে তো বলা যাবে….যতই লজ্জা লাগুক মা কেই বলতে হবে-তা না হলে সবার সামনে সামনে লজ্জায় মাথা কাটা যাবে…বিশেষ করে ওর বাবার গেস্ট রা কি ভাববেন’ছিঃ ছিঃ…তার চেয়ে মায়ের কাছেই হেল্প চাওয়াটাই বেটার…মা তো আর ভাবী বা আপুর মতো মজা করবে না এটা নিয়ে…হুম!!মা কে বলাই বেটার হবে..”(মনে মনে ভাবতে লাগলো নৌশিন)
…নৌশিনের মা এসে গেলো…নৌশিনের পাশে গিয়ে আস্তে করে বলে”কি রে কি হয়েছে??”(আস্তে করে বলেন কারণ ওনি জানেন কোনো সমস্যা ছাড়া ওনার মেয়ে এতটা ছটফট করবে না কোনোদিন আর এভাবে ইশারা করেও ডাকবে না…..)
…নৌশিন মাকে উপস্থিত পেয়ে-চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়ে মুচকি হাঁসে…..
“মা একটা প্রবলেম হয়েছে আমার”(নৌশিনও কথা টা এতো আস্তে বললো যেন ওর মা ছাড়া আর কেউ শোনতে না পারে)…নৌশিনের মা নৌশিনের আরও কাছে যায়…”কি হয়েছে.???বল..”
…নৌশিন ওঠে দাঁড়িয়ে মায়ের হাতটা ধরে অন্য দিকে হাঁটা শুরু করে…পাশ থেকে কেউ বলে ওঠে”কোথায় যাচ্ছেন ভাবী??”
….নৌশিন চিনে না মেয়ে টা কে…তবুও বলে”একটু…জাস্ট দু মিনিট আসছি”….সাদাদও এই কথা টা শোনতে পায় নৌশিনের…নৌশিনের দিকে তাঁকায় সাদাদ…ভ্রু কুঁচকে জানতে চায় কি হয়েছে??….নৌশিন আঙুল দিয়ে ইশারা করে দু মিনিটে আসছে আর তেমন কিছু হয় নি….
….নৌশিন ওর মাকে নিয়ে ওয়াশ রোমের দিকে চলে যায়…..”কি হয়েছে…ওয়াশরোমে যাবি??”(নৌশিনের মা)
“না..মা”(নৌশিন মাথা নিচু করে রাখে)
..”তাহলে…?আর মুখ টা এমন করে রেখেছিস কেন???”
…নৌশিন মাথা তুলে ওর মায়ের দিকে তাঁকায়-কথা টা কিভাবে বলবে বুঝতে পারছে না…মা হোক তবু তো কেমন লজ্জার কথা….ভাবতেই কেমন একটা লাগছে মেয়েটার….
…নৌশিন কিছু না বলে গলার যে জায়গা টায় দাগ সে জায়গা টায় হাত দেয়….”মা….লোক এট মি…”
….নৌশিনের মা খেয়াল করে জায়গা টাই নৌশিন আলাদা কিছু লাগিয়েছে আর সেটা ওঠে গেছে অনেকটা…তাই ওনি হাত থাকা রোমাল টা দিয়ে জায়গাটা একটু মুছে দেন…মুছে দিতেই দাগটা আবার কালো স্শপ্ট বুজা গেলো….নৌশিনের মায়ের আর বুঝতে বাকী রইলো না-কিসের দাগ এটা,আর ওনার মেয়ে কেন এতো চিন্তা করছিলো…..মেয়ের কান্ড দেখে মুচকি হেঁসে ফেললেন রেহানা বেগম….
“মা……”(নৌশন মায়ের হাঁসি দেখে লজ্জায় পেয়ে যায়-ও বুজতে পারে ওর মা সব বুজে গেছে)……রেহানা বেগম হাঁসি থামায়…
“বোকা মেয়ে….ঠিক করে আসবি না??এভাবে কেউ অনুষ্ঠানে আসে”(রেহানা বেগম)
…”মা,আমি যেটা জানি সেটা করেছি….বাট জানতাম এটা ঘন্টা খানেক থাকবে তাই তোমাকে ডাকলাম…”(মাথা নিচু করে মাকে কথাগুলো বলে নৌশিন)
“হয়েছে বোকা মেয়ে আর বড় হবি না তুই….আর একটা গহনা পড়ে আসলেই তো ডেকে যতো স্পট টা”….বলে নিজের গলার হার টা খুলে নৌশিনের গলায় একটু উপরের দিকে পড়িয়ে দেয়”দেখি ঠিক করে লাগাতে দে….”
“ওহ্ আবার আরেক টা গয়না…এমনি ই তো দাঁড়াতে পারছি না এতো কিছু নিয়ে…তুমি আবার কি পরাচ্ছো…”(নৌশিন)
“চুপ কর…গাঁধি…কমন সেন্স থাকলে নিজে থেকেই পড়ে আসতি হাবি-জাবি লাগতে যেতিস না…”…..হার টা ভালো ভাবে সেট করে দেন…এবার দাগ টা আর দেখা যাচ্ছে না….
“নে…এবার ঠিক আছে…☺☺”
“মা…এখন আবার হাঁসছো তো তুমি??”
“ওকে…হাঁসবো না…যা এখন-না হলে সবাই অন্য কিছু ভাববে”
“হুম…চলো..”
…রেহানা বেগম মেয়ের কপালে আলতো করে চুমু আঁকেন”দোয়া করি সারা জীবন এমন ভাবেই স্বামী সোহাগী হয়ে থাকুক আমার মেয়েটা”…নৌশিন আরও লজ্জায় পড়ে যায়….”মা…”(জড়িয়ে ধরে নৌশিন ওর মাকে)
…”আচ্ছা চল চল..”
“চলো☺☺”….
প্রেমঘোর পর্ব ১৫
নৌশিনকে নিজের জায়গায় বসেই দিয়ে রেহানা বেগম নৌশিনের শাশুড়ির কাছে গিয়ে গল্পগুজব করতে থাকে………..এদিকে সব গেস্ট রা আসতে শুরু করে……সাদাদ অনেকক্ষণ হয়ো গেলো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সবার সাথে কথা বলতে বলতে…নৌশিনের একটু বোর ফিল হচ্ছে সাদাদকে ছাড়া….সাদাদের বাবার ডাকে সাদাদ আবার নৌশিনের পাশে এসে বসে-আর ওর ফেন্ডরা সেন্কস নিতে থাকে…..এবার নৌশিন একটু শান্তি পায়।।।।সাদাদের বাবা ওনার বন্ধুদের নিজের ছোট ছেলে আর বউকো পরিচয় করিয়ে দেয়…..
রাত নয় টা বেজে গেছে প্রায়….
সবাইকে ডিনারের জন্য এনাউন্স করেন সাদাদের কাকা(প্রাপ্তির বাবা)…