প্রেমঘোর পর্ব ৩১+৩২

প্রেমঘোর পর্ব ৩১+৩২
নার্গিস সুলতানা রিপা

বাসার গেইটের সামনে গাড়ির শব্দ শোনে অরূপ দৌঁড়ে বাড়ির বাইরের দিকে যেতে থাকে………………
“অরূপ কোথায় যাচ্ছো তুমি???”
“বাবা,শোনো এভাবে দৌঁড়াচ্ছো কেন?দাঁড়াও বলছি……….এই ছেলে দাঁড়াও………”
অরূপ ড্রয়িং রোমেই খেলছিলো-আর ওর মা রান্না ঘরে……ছেলে কে এভাবে দৌঁড়াতে দেখে তিনিও পেছন পেছন ডাকা দৌঁড়াতে থাকেন……কিন্তু তার ডাক শোনার সময় তার ছেলের নেই-বেচারা তো দৌঁড়াচ্ছে তো দৌঁড়াচ্ছেই………..

পার্কিং সাইডে সাদাদের গাড়ি ডুকতে দেখে অরূপের মায়ের আর বুজতে বাকী থাকে না-যে তার ছেলে কেন এভাবে বাইরে এলো………………
তা
বাগান থেকে না এগিয়েই তিনি ছেলের কান্ড দেখছেন……………
সাদাদ গাড়ি থামানোর আগেই অরূপ বাগানের পাশ দিয়ে দৌঁড়ে এসে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে যায়…………………….
“সাদাদ………অরূপ……….”
নৌশিনের চিৎকার আর চোখের সামনে অরূপ…… অথচ হাতে স্টিয়ারিং পায়ে ব্রেক থামাতেও কিছু মুহুর্ত লাগবে-সাদাদের কলিজার পানি শুকানোর মতো অবস্থা…….ঐদিকে ঘটনা টা চোখ এড়ায় না অরূপের মায়েরও-ছেলেকে ধরার জন্য ছোটে আসেন……..

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিন্তু যার জন্য সবার প্রাণ যায় যায় অবস্থা সে তো লাফাচ্ছে আর এক তালে বলে যাচ্ছে……”নতুন বউ নামো……নতুন বউ নামো….”
সাদাদ কোনো ভাবে গাড়ি পাশ কাটিয়ে থামিয়ে নেয়……..নৌশিন দ্রত নেমে এসে অরূপকে কোলে তুলে,
“বাবা,এভাবে কেউ গাড়ির সামনে দাঁড়ায়?”
এতক্ষণে ছেলের মাও এসে যায়……..
“অরূপ তোমাকে আমি…….”বলেই মাথায় জোরে একটা চড় বসিয়ে দেয়…….
“কতবার বলেছি এতো দুষ্টুমি করবে না তুমি……”
“এ্যাঁ….এ্যাঁ….এ্যাঁ….”

“ভাবী…ছাড়ো না ছোট মানুষ বুজতে পারে নি….”(নৌশিন)
“ছোট সে…..বুড়ো হয়ে গেছে ও……নাম কোল থেকে,নাম বলছি…..”
ছেলেকে জোর করে নামানোর চেষ্ঠা চালালে আরো জোরে চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করে….নৌশিনকে জাপটে ধরে রেখে বলে “এ্যাঁ….এ্যাঁ…আমি নামবো না……”
“কেন নামবি না তুই???তোর নতুন বউ বাড়িতে ডুকতো না??তুই এভাবে দৌঁড়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ালি কেন?”
অরূপ কান্না করেই চলেছে……

“ভাবী,কুল হও তো তুমি….কিছু তো হয় নি না….”(সাদাদ)
“হয় নি হতে কতক্ষণ……বড় হচ্ছে দিন দিন আর আমাকে জ্বালিয়ে মারছে……”
“তোমাকে ডিস্টু কলবো না আল……আমিও বিয়ে কলবো কাকাইয়েল মতো,বউকে ডিস্টু কলবো”
“এই কি বললি তুই…..শুনেছিস ওর কথা???শুনলি??ও নাকি বিয়ে করবে?তোর বাপকে আর একটা বিয়ে করাবো….র কে বলে ল সে করবে বিয়ে……এই ছেলে ছোট…..??”
নৌশিন আর সাদাদ অরূপের কথা শোনে হাঁসতে হাঁসতে শেষ……
“ভাবী….যাই বলো ভাতিজা কিন্তু সাহসী বটে…..”(সাদাদ)
“এই তোদের আশকারা পেয়ে পেয়ে নষ্ট হচ্ছে ছেলেটা…….”
“এখন বাদর টা কে নিয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে ভতরে আয়……আর দেখিস আজকে পড়া না পাড়লে তোকে কি পিটানো টা পিটাই আমি……….”

নৌশিন অরূপকে কোলে নিয়েই বাসার ভেতরে ডুকে…..ওর শশুড় আর শাশড়ি ড্রয়িং রোমে বসে আছেন সালাম করবে বলে অরূপকে কোল থেকে নামাতে চায় কিন্তু বেচারা মায়ের ভয়ে নৌশিনকে আরও শক্ত করে জাপটে ধরেছে………….
“বাবু একটু নামো…..আবারও কোলে নিবো…..”
“আম্মু মালবে…..”
“আয় আমার কোলে আয়…..”(সাদাদ)
“না….নতুন বউয়েল কোলেই থাকবো…..”
কোনোভাবে না নামাতে পেরে মুখেই সবাইকে সালাম জানায় নৌশিন……
বাড়ির সবাই নতুন বউকে দেখতে ড্রয়িং রোমে হাজির-সবার মুখে কত হাঁসি………….
“এ কি….দাদু ভাই কান্না করেছো কেন?”(প্রাপ্তির মা)

“আম্মু মেলেথে…..”…হঁচকি পাড়তে পাড়তে বলে কথাটা-দাদা:দাদীকে সামনে পেয়ে আরও গলে যায়………
“কি বৌ মা…কতবার বলেছি ওর গায়ে হাত দিবে না……নিশ্চয় মাথায় মেরেছো…..”(সাদাদের মা)
“মা,ও কি দুষ্টুমি টা করে সারাদিন….একটা কথাও শোনে না…..চলন্ত গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলো……..”
“সে কি দাদুন…..এটা কেন করেছো…..আসো দেখি আমার কোলে আসো…..”
“না আমি যাবো না….তোমলা সবাই পঁচা….আব্বু আসলে আমি বলে দিবো আম্মু মেলেথে….আমি নতুন বউয়েল কোলেই থাকবো…..”
“এই কি বললি তুই???সবাই পঁচা মানে???বেপায়দ কোথাকার….আর কি বলবি তোর আব্বু কে…..বেয়াদপ হচ্ছিস দিন দিন….”

“আহ্….দিশা মা কি শুরু করেছো তুমি….বাচ্চা মানুষ ও….”(সাদাদের বাবা)
“ও বাচ্চা না বাবা বুড়ো হয়ে গেছে….বলে কি না আমাকে আর ডির্স্টাব করবে না,বিয়ে করে বউ আনবে আর বউকেই নাকি ডির্স্টাব করবে………”
এ কথা শোনে সবাই হাঁসি শুরু করে……..
“ওরেব্বাস… অরূপ তুই বিয়ে করবি??”(প্রাপ্তি)
“হুম….কলবোই তো….নতুন বউয়েল মতো একটা বউ আনবো……এতো সুন্দল হবে…..”…..অরূপ নৌশিনের গাল টেনে কথাগুলো বলে যাচ্ছে এক নাগরে………..

হঠাৎ দুষ্টু বাচ্চা টা সবার সামনে নৌশিনের মাথা থেকে কাপড় সরিয়ে-খোপটা খুলে ফেলে……
“আল এতো লম্বা চুল থাকবে আমাল বউয়েল…..”
সবার সামনে বিশেস করে শশুড়ের সামনে এভাবে চুল খুলে ফেলায় নৌশিন অনেকটা লজ্জা পেয়ে গেছে…………তাই মাথায় আবারও কাপড় দিতে চাইলে অরূপ হাত ধরে ফেলে…………
“দিও না দিও না….থাক….খোলা থাক চুল……”
“অরূপ বাবা….প্লিজ নেমে আসো….”
“না… আমি নামবো না…..নামলে তুমি মালবে….”
“আচ্ছা…. ঠিক আছে…..ছোট বউ মা ওকে নিয়ে উপরে যাও…….”
কি আর করার খোলা চুলেই সবার সামনে দিয়ে হেঁটে উপরে যেতে হয় নৌশিনকে…….সাদাদও ওর ভাবীর হাতে ফুচকার প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে নিজের রোমে চলে যায়……
নৌশিন অরূপকে খাটের উপর দাঁড় করিয়ে বলছে,

“আব্বু একটু দাঁড়াও…..এখানে তো তোমার আম্মু নেই…….”
“ওকে……”
“এই তো সোনা ছেলে…..”
“তুমি না পুতুল পুতুল…..”
“তাই???”
“হুম…..”
“ঠিক আছে,তুমি বসো এখানে আমি চেন্জ করে এসে তোমাকে আবার কোলে নিবো……….”

“কি রে বেটা….তোর কাকি অনেক সুন্দর নাকি???যে কাকির মতো বউ বিয়ে করবি তুই…..”
“কি সব বলছো ওকে…..বাচ্চা মানুষ ও…..”
“কাকি কি???”
“ওরে…বিচ্ছু আমি তোর কাকাই আর এই যে নতুন বউ তোর কাকি….কাকিমা বলে ডাকবি…..”
“না না না….নতুন বউ ই ডাকবো….”
“আচ্ছা বাবা তুই তাই ই ডাকিস…..”
নৌশিন লাগেজ থেকে নিজের জামা কাপড় বের করে রাখছিলো এমন সময় একজন সার্ভেন্ট আসে,
“ম্যাম…আসবো?”
“হ্যাঁ….আসুন……..”
“এটা আপনাকে বড় ম্যাডাম দিতে বললো……এটা পড়ে নিচে যেতে বললো আপনাকে…..”
“ও….আচ্ছা আপনি যান…..আর শোনুন….”
“জ্বি ম্যাম…..”

“আমাকে প্লি ম্যাম বলে ডাকবেন না……চাইলে নাম ধরে ডাকতে পারেন…….”
“ম্যাম কি বলছেন আপনি?”
“হুম….আর কোনো কথা না… আপনি আমার নাম ধরে ডাকবেন এটাই শেষ কথা…..আর আমার তো জানেন?”
“হুম…নৌশিন মা……”
“এ মা সে কি আপনি কান্না করছেন কেন??”
“কিছু না মা……তুমি রেডি হয়ে নিচে এসো……”
সার্ভেন্ট চলে গেলে নৌশিন প্যাকেট টা খুলে দেখে,
“ওয়াও…সাদাদ লোক….কি সুন্দর একটা জামা…..”
“দেখো…তোমার জামা তুমি ই দেখো….আমাদের তো কেউ কিছু পড়তে দিলো না….তাই না অরূপ??”
“পলো পলো নতুন বউ…..আমি দেখি…..”

“আচ্ছা সোনা……পড়বো….তুমি বসো…..”
নৌশিন ফ্রেস হয়ে ড্রেস টা পড়ে আসে……ওর শাশুড়ি আগে থেকেই জানেন নৌশিন থ্রি-পিজ পড়ে….তাই কোনো স্টাইলিস্ট জামা না দিয়ে ভালো মানের একটা থ্রি-পিজ দিয়েছেন…………
“অরূপ,আব্বু দেখো তো কেমন লাগছে????”
অরূপের সাথে সাথে সাদাদও নৌশিনের দিকে তাঁকায়…….মিষ্টি কালারের বুটিক্সের কাজ করা একটা থ্রি-পিজ…….যার কামিজের গলাটা ফুল ব্যান,হাতাটাও লং…..চুড়ি পায়জামা….আর সাথে তাঁতের ওড়না যার ওপর আবার বুটিক্সের কাজ…..বেশ মানিয়েছে মেয়েটাকে এই জামায়….
অরূপ খাট থেকে নেমে-নৌশিনকে টানতে শুরু করে বাইরে যাওয়া জন্য…..
“চলো চলো…দাদুন দেখবে তোমায়…..”

“আব্বু…আব্বু….দাঁড়াও…..একটু পরে যাবো আমরা….ততক্ষণ তুমি বসো এখানে…..”
নৌশিন আবার কোলে করে নিয়ে অরূপকে খাটে বসিয়ে দেয়………….
“আল কত বসবো নতুন বউ???যাবে না নিচে??”
“যাবো সোনা…একটু বসো….”
নৌশিন আয়নার সামনে বসে চুল আচড়াচ্ছে…….
সাদাদ অরূপের সাথে বসেই নৌশিনকে দেখছে……
ড্রসিং থেকে কোনো কিছু আনার বাহানায় সাদাদ নৌশিনের কাছে যায়….
নৌশিনের কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বলে,”সুন্দর লাগছে খুব…..”
“ধ্যাত……”
“সিরিয়াসলি….বেনুনী করো…..”
“এখন??”

“হুম….আমি দেখবো আর মাথায় কাপড় দিবে না…..”
“কিন্তু…..”নৌশিন কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই,
“ও কাকাই কি কলো তুমি….আল কত বসে থাকবো”
“দাঁড়া…..নতুন বউ রেডি হয়ে নিক…..”
“একটু দাঁড়াও বসো বাবু….”
সাদাদ অরূপের পাশে বসেই বলেছে “যা বললাম তাই যেন করা হয় না হলে খারাপ কিছু হবে……”
উপায়ান্তুর না পেয়ে নৌশিনও বাধ্য বউয়ের মতো বেণুনী করে-ুএক পাশে বেণুনী এনে দাঁড়িয়ে যায় সাদাদের সামনে….”হয়েছে???”
সাদাদ হা করে তাঁকিয়ে আছে নৌশিনের দিকে…..
একটা বেণুনীতেও এতেটা অর্পূব লাগতে পারে নৌশিনকে ভাবতে পারে নি ও…….
আঙুল নৌশিনের হাঁটুর কাছে নিয়ে চুল মাপা শুরু করে সাদাদ…”আর মাত্র চার আঙুলের জন্য তোমার চুল হাঁটু স্পর্শ করে নি…….”

“না কাটলে হয়ে যাবে……এখন তুমি চেন্স করবে???”
“আরে দাঁড়াও আগে দেখে নিই ভালো করে……”
সাদাদ বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে নৌশিনের বেণুনীতে হাত দিতে যাবে আর তখনি নৌশিন সাদাদের হাত টা ধরে ফেলে ফিসফিসিয়ে বললো,
“পাগল তুমি অরূপ সামনে….”

“অরূপ বাবা যা তো নিচে যা….আসছি আমরা……”
“না আমি নতুন বউয়েল কোলে কলে যাবো…….”
“হুস……”
“থাক না…দেখেছো তো এখন যাও চেন্স করে এসো আমি ওকে নিয়ে নিচে গেলাম……”
“বললাম না মাথায় কাপড় দিতে হবে না….”
“বাবা নিচে সাদাদ…..তাছাড়া বেণুনী করেছি মাথায় কাপড় দিলেও সব চুল দেখা যাবে….”
“যা মন চায় করো…..”{রেগে গিয়ে}
“এই……শোনো….”
নৌশিনের কোনো কথা না শোনে সাদাদ ওয়াশরোমে ডুকে দরজা লাগিয়ে দেয় আর অরূপ জোর করে নৌশিনের কোলে উঠে নিচে যাওয়ার জন্য বয়না শুরু করে……নৌশিন মাথায় ওড়না দিয়ে অরূপকে কোলে করে নিচে নেমে দেখে সবাই ড্রয়িং রোমে আড্ডা দিচ্ছে………
অরূপ রোজ ওর বাবাকে দেখলে কোলে চড়ে বসে কিন্তু আজ নৌশিনের কোল থেকে নামছেই না…..
“বাহ্….বউ মা কে তো খুব সুন্দর লাগছে…..”(সাদাদের বাবা)
….”হায় কপাল শশুড়ও সবার সামনে বলে এগুলা শরম করে আমার”(মনে মনে)

নৌশিন অরূপের বাবাকে সালাম জানায়……..
“কি ব্যাপার অরূপ….তোর কাকি কে পেয়ে আমার কোলে চড়লি না আজ…”
“হি হি হি হি…….”
“বাপ রে….হাঁসে আবার….বসো নৌশিন….”
নৌশিন প্রথমে বসতে না চাইলেও ভাসুরের কথায় অরূপকে নিয়ে বসে সবার সাথে…..একপাশে প্রাপ্তি আর অন্য পাশে অরূপ….
অরূপ নৌশিন গাঁ ঘসে বসে ওর বেণুনী নিয়ে খেলছে…..
সার্ভেন্ট এসে সবাইকে ফুচকার প্লেট দিয়ে যায়….সাদাদও এসে ওর ভাইয়ের পাশে বসে……..
সবার সামনে ফুচকা থাকলেও সাদাদের সামনে নেই……….আর সব চেয়ে বেশি ফুচকা নৌশিনের সামনে…………

“এএএএএ….ফুচকা……”(অরূপ)
“অরূপ বাবা…একটা খাবে কিন্তু না হলে পটি আসবে বার বার….”(অরূপের মা)
“আমি অনেক খাবো….”(অরূপ)
“আ………..
“থাক না বাদ দাও…..খেতে দাও….”(অরূপের বাবা)
সবাই ড্রয়িং রোমে থাকলেও রিদি নিজের রোমে,
“রিদি আসলো না??”(সাদাদের বাবা)
“না বাবা,আমি ডাকতে পাঠিয়েছিলাম…..কি যেন কাজ করছে তাই আসে নি….”(অরূপের মা)
“কি কাজ করে সারা দিন মেয়ে টা…এতো কাজ পাগল থাকে নাকি মানুষ…..”(নীলা)
“দাঁড়াও…এখান থেকেই ফোন করে আনছি আমি……”(নীলার বর)

ভাইয়ের ফোন পেয়ে না চাইতেও রিদিকে নিচে আসতে হয়……..এসে অনেক জায়গা থাকতেও সাদাদের পাশে বসে মেয়েটা………………
ওর সামনেও একটা ফুচকার প্লেট দেয় প্রাপ্তি……………….
সাদাদের এমনিতে মাথা গরম তার উপর আবার এই মেয়ে গাঁ ঘেসে বসেছে……..
রিদির ড্রেস আপ টাই সাদাদ লাইক করে না-মানুষ টাকে তো দূরের কথা……………………..
পেন্ট পড়ে এসেছে তার উপর আবার টিশার্ট…..
বারবার সাদাদের উরুর সাথে ইচ্ছে করেই নিজের উরু লাগাচ্ছে……অসহ্য লাগছে সাদাদের………
একটা মেয়ে মানুষও এতোটা নির্লজ্জ হতে পারে…………

“আ….ভাবী….আমার একটা মেইল আসছে জরুরি আমি উপরে গেলাম….”বলে সাদাদ নিজের রোমে চলে যায়….
আর নৌশিন অরূপকে টক দিয়ে ভিজিয়ে ভিজিয়ে ঝাল ছাড়া ফুচকা খাওয়াচ্ছে……….
“নৌশিন আর দিস না ওকে…..”
“আল একটা আম্মু আল একটা…..”
“ওকে এটাই লাস্ট কিন্তু বাবা….”
“আ….হা…..হয়েছে এবার পানি খেয়ে নাও…..”

নৌশিনও নিজের কড়া ঝালের ফুচকাগুলো প্রাপ্তির সাথে শেয়ার করে খেয়ে নেয়…….খাওয়া শেষে অরূপ ওর মায়ের কোলে উঠে বসে,
“নতুন বউ…যাও লেস্ট কলো….আমি আম্মুল সাথে থাকি যাও…..”
“ওরে বাবু টা রে…কত্ত বুঝে….”(অরূপের মা)
“হ্যাঁ….যাও মা রেস্ট করো….আর প্রাপ্তি যাও পড়তে বসো….”(প্রাপ্তির মা)
“আর ছোট বউ মা…শোনো….শাড়ি টারি পড়ার দরকার নেই তোমার….জামা ই পড়ো তুমি…বেশ লাগে এতেও….শাড়ি পড়ার অভ্যাস না হয় পড়ে করে নিও…..”

“আচ্ছা কাকি…..”
“আচ্ছা…প্রাপ্তি যাও তোমার ছোট ভাবীকে রোমে দিয়ে এসে-সোজা নিজের রোমে গিয়ে পড়তে বসো……”
“যাচ্ছি….সারাক্ষণ শুধু পড়া আর পড়া…….ভাবী চলো….”

প্রাপ্তি নৌশিনকে রোমে দিয়ে নিজের রোমে গিয়ে পড়তে বসে যায়……
সাদাদ লেপটপে কাজ করছিলো খাটে বসে-নৌশিন এসেছে সেটা ও খেয়াল করে নি………নৌশিন বুজতে পেরেছিলো তখন মাথায় কাপড় দেওয়া সাদাদ রাগ করেছে….তাই ওড়না টা মাথা থেকে সরিয়ে দরজা লক করে কোনো কথা বলা ছাড়াই সাদাদের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে….
“আরে….কি হলো এটা???”
“কি হলো আবার শুয়েছি একটু….”
“কাজ করছিলাম তো…..”
“রাখো তুমার কাজ…..আমি কোলো শুয়েছি মাথায় হাত বুলিয়ে দাও ঘুমাবো আমি…..”
মুচকু হাঁসে সাদাদ,
“আচ্ছা!……”

দুচোখ বন্ধ করে নৌশন বলে “হুম….দাও না….”
সাদাদ নৌশিনের মাথায় হাত বুলাচ্ছে…..আর নৌশিন সাদাদের পেটে মুখ গুজে কমড়ে আকড়ে ধরে আছে……….
“কি হলো??ঘুম নাকি???”
“উমহু….”
“ঘুমাবে নাকি বললা??”
“আসছে না তুমি মাথায় হাত বুলাতে থাকো আসবে ঘুম….”
“আচ্ছা!শুধু মাথায় কেন?আরও কোথাও হাত দিতে চাইছি তো…..”
“এই না না…..” নৌশিন এক লাফে সাদাদকে ছেড়ে উঠে বসে…….
“আমার মন যেহেতু বলেছে অন্য কোথাও হাত দিবে তো দিবে…..”

“না…..একদম না….”
সাদাদ নৌশিনের কমড়ে হাত দিয়ে নিজের বুকে আনে…..”এবার??”
“কি এবার….ছাড়ো….”
“ছাড়বো বলে ধরেছি নাকি??”
“তোমার না কাজ আছে??”
“তুমি ই তো করতে দিলে না…”
“এখন করো….”
“করবো তো….”
“এই শুরশুরি লাগে তো……”
“ফুল ব্যান গলা কে দিতে বলছে জামায়…..মা ও না পারে।।।।। ”

সাদাদ আঙুল দিয়ে নৌশিনের মুখে স্লাইড করতে শুরু করলে নৌশিন চোখ বন্ধ করে ফেলে,
“একা একা ফুচকা খেলে আমাকে একটাও দিলে না…..”
“তুমি তো খাও না এটা…তাই…..”
“এখন খাবো…”বলেই নৌশিনের ঠোঁটে চিমটি কাঁটে…….
“ওওওও……চিমটি দেয় কেউ…..?
“হুসসসস……”
আঙুল দিয়ে নৌশিনের ঠোঁট বন্ধ করে দেয় সাদাদ…..নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে যায় নৌশিনের সিন্গধ ঠোঁট দুটির দিকে……………..

কাছে খুব কাছে…..এক সে.মি ব্যবধানও নেই……
“নতুন বউ…..ও নতুন বউ…..”
“নতুন বউ……আমি আসবো….দলদা খুলো…..নুতন বউ…..”
সাদাদ নৌশিনকে ছাড়তে বাধ্য……”ধুর রোমান্সে ভেজাল……”
সাদাদের রাগী লোক দেখে নৌশিন মুচকি হাঁসে……
“কি সব বলো….কিসের ভেজাল….তুমি না….”
“হইছে,যান আপনার বাচ্চা আনেন…..”

“বাবু….আসো…..”
“কখন থেকে ডাকছি….”
“সরি সোনা….”
“ইত ওকে…. আমি ব্যাগ নিয়ে এসেছি তোমাল কাছে পলবো….”
“তাই……”
“হুম….আম্মুকে বলি নি….”
“আচ্ছা চলো তাহলে আমরা পড়াশোনা করি….”

“বসো হ্যাঁ?”(নৌশিন)
“ওকে……তুমি কই যাবা?”(অরূপ)
“তোমার কাকাই তো কাজ করবে তাই কফি খাবে-তুমি বই বের করো আমি যাবো আর আসবো…….”
!
“অরূপ,নতুন বউ কেমন রে?”
“খুব ভালো……আমাকে অনেক আদল কলে……কিস কলে….খাইয়ে দেয়…..”
“তাই?…..”
“হুম……তোমাকে আদল কলে না???”
“হুম করে তো…….”
“কিস কলে????”
অরূপের কথা শোনে সাদাদ ভিমরি খেয়ে কাশতে শুরু করে……
“কি হলো কাকাই?পানি খাবা???”
“কিছু না তুই বই বের কর….”
“আচ্ছা….বললা না?? ”
“কি???”
“নতুন বউ কিস কলে তোমায়?”

নৌশিন রোমে ডুকে অরূপের করা প্রশ্ন টা শোনে নেয়………সাদাদ কিছু বলার আগেই নৌশিন অরূপের পাশে বসে-সাদাদের হাতে কফি দিয়ে,অরূপকে জড়িয়ে ধরে বললো,”আব্বু,বড়দের না কিস করতে নেই…..আর এগুলো বলতে হয় না…..কেমন??”
“বলদের কিস কলে না??”
“না বাবু….”
“হি হি হি….তাহলে আম্মু কি ছোট??আমি ঐ দিন ছাদে দেখলাম আম্মুলে আব্বু কিস কললো…….”
সাদাদ কফি মুখে নিয়েই হাঁসতে শুরু করে আর নৌশিন সাদাদের দিকে তাঁকিয়ে নিজেও হেঁসে ফেলে,
হাঁসি থামিয়ে নৌশিন অরূপের গালে হাত দিয়ে বলছে,”আব্বু,এগুলো বলতে নেই সোনা…..”

“কেন???”
“তুমি তো ছোট বাবু…..তাই….বলবে না কাউকে এসব…কেমন???”
“ওকে ওকে…..এখন পলবো…..”
“গুড বয়!শোনো আমরা এই সাইডে বসে পড়বো আর তোমার কাকাই ওপাশে কাজ করবে….কোনো দুষ্টুমি করবে না তাহলে তোমার কাকাই য়ের ডির্স্টাব হবে…..কেমন??”
“ঠিক আছে……..”

প্রায় এক ঘন্টা পর,
“আল পলবো না………”
“বাবা এটা শেষ করো….কাল তোমার স্কুলের মিস. জানতে চাইবে এটা…….”
“ক্ষুদা লাগছে তো……”
“আচ্ছা যাও খেয়ে নাও….সকালে কম্পিট করে নিও।।।।।”(সাদাদ)
“ওর ক্লাস কয়টায়???”
“ও দ্বিতীয় সিফ্টে যায়…..সাড়ে আট টায়……”(সাদাদ)
“আচ্ছা…সব ই তো শেষ….এই ওর্য়াড ব্যাল্কগুলো কিন্তু কাল সকাল সকাল ওঠে শেষ করে নিবে……”
“নিবো…..এখন খাবো……চ
লো….”
“একটু দাঁড়াও…তোমার বইগুলো গুছিয়ে রাখি…….”

“এসো, এসো…..এখন তাড়াতাড়ি খেতে নিয়ে যাও…..”
“কি রে তুই কি নতুন বউকে পেয়ে হাঁটা ভুলে গেলি?….”(সাদাদ)
“কোলে চললে মজা লাগে,তুমিও উঠে দেখো…..”
“হা হা হা হা…….”(সাদাদ)
“পাঁকা বুড়ো একটা……”(নৌশিন)
!
নৌশিন নেই,এই ফাঁকে রিদি ওদের রোমে ডুকে,সাদাদের পুরো মনোযোগ লেপটপে…..
রিদি সাদাদের পাশে গিয়ে বসলো….সাদাদ না তাঁকিয়েই বলে, “তোমার বাচ্চার খাওয়া শেষ???”
“কার বাচ্চা?….”

কণ্ঠ শোনে সাদাদ বুঝতে পারে এটা রিদি…..চোখ গরম করে তাঁকায় রিদির দিকে, “বেট থেমে নেমে বসো…..”
“বসতেও পারি না?শুয়ার অনুমতি তো কেড়ে নিয়েছো-বসার অনুমতি টাও……..”
“বেস,,,আমি নির্লজ্জ মানুষ দেখেছি বাট তোমার মতো কাউকে দেখি নি…….আর ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন-আমি তোমাকে আমার রোমে আসতে বারণ করেছিলাম….বসা তো দূরে থাক……….”
চেঁচিয়ে উঠে রিদি,
“আমি ভালোবাসি তোমায়,এই সোজা কথাটা মেনে নাও কেন তুমি?”
“চুপ…….একদম চুপ….বেরিয়ে যাও……”
“কেন???ঔ মেয়ে আসবে তাই না?”
“ওর একটা নাম আছে……”

“ও নৌশিন….তাই না….একটা মেয়ে যে কি না আমার জীবন টা শেষ করে দিচ্ছে……”
“দেখো,নৌশিন আসবে এখন যাও তুমি প্লিজ……”
“আসবে না প্লিজ…..একটু ভালোবাসো না আমায়….”
“আর ইউ ক্রেজি?এই জীবনে আমি এক জনকেই ভালোবাসি আর সেটা নৌশিন…..”
“নৌশিন,নৌশিন,নৌশিন….কি আছে ওর যা আমার নেই?”
“ওর সাথে তোমার তুলনা করো না….করলে আমার নৌশিনকে অপমান করা হবে…..”
রিদি রেগে গিয়ে সাদাদের শার্টের কলার ধরে ফেলে,
“অপমান আমাকে তুমি কম করেছো?কি করলে কাল রাতে?”
সাদাদ ধাক্কা দিয়ে রিদিকে সরিয়ে দেয়,
“কেন?বুজতে পারিস নি তুই?”
রিদি রাগে ফুসছে……..

“তোর মতো মেয়েকে না সস্তা মেয়ে বললেও সস্তা জিনিসের অপমান হবে…….”
রিদি সাদাদের কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে……
“ঐ শব্দটা শুনিয়েছো আমায় প্লিজ সাদাদ…আমি তোমাকে চাই……শব্দ শুনতে না আমি করতে চাই প্লিজ জান…..”
“ছাড়ো”বলেই আবারও ধাক্কা দেয় এবার ধাক্কায় রিদি ফ্লোরে পড়ে যায়।
রিদি আরও ফুসে উঠে….উঠে দাঁড়িয়ে সাদাদ কাছে এসে বলে,
“সুখের শব্দ তাই না?সেই শব্দ ই শুনিয়েছো আমায়…..আমি শুনেছি সেটা কিন্তু তোমায় আমি ওর কান্নার আওয়াজ শুনাবো……তৈরী থেকো। ”
“বাহ্,স্টার জলসা দেখে সিরিয়ালের খল-নায়িকা দের মতো ওর্নিং দিচ্ছো…..এখন যান আপনি আমার অনেক কাজ বাকী…….”

প্রেমঘোর পর্ব ২৯+৩০

রিদি সাদাদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রয়েছে…….
“কি হলো…..রোম থেকে যেতে বলেছি আমি…..”
রিদি চলে গেলো রোম থেকে….
সাদাদ একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়….

প্রেমঘোর পর্ব ৩৩+৩৪+৩৫