প্রেমঘোর পর্ব ৭৬+৭৭+৭৮+৭৯+৮০
নার্গিস সুলতানা রিপা
সাদাদ রিদিকে ছাড়ানোর চেষ্ঠা করছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।রিদি আরও জোরে জড়িয়ে ধরছে।
সাদাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“রিদি,ছাড়ো বেশি হচ্ছে কিন্তু…..”
সাদাদ বুকে মাথা ঘেষে আরও শক্ত ভাবে চেপে ধরে বললো,
“না,আই লাভ ইউ জান…..”
সাদাদের রাগ এবার চরম পর্যায়ে উঠে যায়,সজোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় রিদিকে।
খেয়াল করে রিদির দিকে তখন তো সেজেই ছিলো আর এখন শর্ট একটা টপ আর স্কিন এজাস্ট হোয়াট পেন্ট পড়েছে।যেগুলো সাদাদ একদম পছন্দ করে না।তবে, রিদি সব সময় সাদাদকে নিজের কাছে টানতে এসব পড়ে থাকে।
কিন্তু সাদাদের যে শাড়ি পরিহিতা নৌশিনকে পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দর লাগে।
“কি দেখছো???”
“তুমি এখানে কেনো??যাও আমার রোম থেকে……”
“ওহ….সাদাদ প্লিজ…..আজ তো নৌশিন নেই….আমার থাকতে কি প্রবলেম বলো….”
“রিদি,মাথা গরম করো না আমার।।।।যাও বলছি…..তুমি কি সোজা কথা বুঝতে পারো না??নাকি বুঝতে চাও না??”
“সাদাদ দেখো না,কেমন দেখাচ্ছে আমায়??”
“রিদি…..আই সে জাস্ট আউট ফ্রম মাই রোম….”
রিদি আবারও সাদাদকে জড়িয়ে ধরার জন্য এগিয়ে আসলে,সাদাদ নিজের রাগ সামলাতে না পেরে রিদির গালে অনেক জোরে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পরমুহুর্তেই রিদি নিজের গালে হাত দিয়ে আবারও সাদাদের কাছে আসে।অন্য কোনো মেয়ে হলে এত জোড়ে একটা থাপ্পর খাওয়ার ফলে কাঁদতে কাঁদতে শেষ হয়ে যেতো।রিদিরও ভেতর থেকে কান্না আসছে,তবুও কাঁদলো না….সাদাদের থাপ্পরের মাঝে হলেও সাদাদের স্পর্শ অনুভব করতে চায় ও।
সাদাদের চোখে চোখ রাখলো রিদি।সাদাদ কি করবে??একটা মেয়েকে এতো করে অপমান করার পর আজ এতো জোরে আঘাতও করলো…আর কিভাবে একজন মেয়ের মাথা থেকে এসব ভুত সরানো যায় সাদাদের জানা নেই।
“দেখো রিদি,তোমাকে ভালো ভাবে বলছি,সরে যাও আমার জীবন থেকে…..আমার জীবনে তোমার কোনো জায়গা নেই….আর তুমি খুব ভালো ভাবে জানো নৌশিন আমার সব…….”
“সাদাদ প্লিজ,নৌশিনের নাম টা আজ নিও না…..”
সাদাদের ঘাড়ে একটা হাত রেখে অনেকটা কাছে এসে বললো,
“আজ শুধু তুমি আর আমি…..”
সাদাদের অসহ্য লাগছে,মেয়েটা কি করে এতো বেহায়া হতে পারে।
রাগে চোখ বন্ধ করে রিদির সব কথা শোনছে সে।
“নৌশিন তো অসুস্থ সাদাদ,সুস্থ হতে মিনিয়াম দেড় মাস লাগবে…….এই কটা দিন আমি কি পেতে পারি না……শোনো না সাদাদ,তুমি এই দেড় মাস আমার সাথে স্টে করো দেখো নৌশিনের চেয়ে আমার সাথে বেশি সুখী হবে……..”
সাদাদ নৌশিনকে নিয়ে রিদির মতো মেয়ের সাথে কোনো দিন কমপেয়ার করতে চায় না।আর রিদির মুখে নৌশিনের নামও শোনতে বিষ মনে হয় সাদাদের কাছে।
“রিদি,নৌশিনের নাম তোমার মুখে এনো না…..নৌশিনের যোগ্য তুমি হও নি এখনও আর হবেও না কোনো দিন”
রিদির চোখে মুখে রাগ ফুটে উঠে,সাদাদের থেকে একটু দূরে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো,
“নোশিন!!!!কি আছে ওর মাঝে???যা আমার মাঝে নেই???”
“এনাফ রিদি,নৌশিনের মাঝে কি আছে মানে??কি বুঝাতে চাও তুমি??”
“দেখো সাদাদ,আমি মানছি নৌশিন সুন্দরী কিন্তু আমি কি কম সুন্দর???বরং নৌশিনের চেয়ে গায়ের রং আমার বেশি ফর্সা……দেন,তোমার বড় চুল লািক বেশি আমার না হয় নৌশিনের মতো এতো বড় গাইয়া চুল নেই…তাই বলে আমার চুল কোনো দিক থেকে কম না…….আর মোস্ট অফ অল লোক এট মি সাদাদ……”
সাদাদ অন্য দিকে তাঁকিয়ে আছে দেখে,রিদি সাদাদের মুখ ঘুরিয়ে নিজের দিকে তাঁক করায়…….”লোক এট মি সাদাদ………আমার ফিগার টা একবার দেখো……নৌশিনের ফিগার তো আমার তুলনায় কিচ্ছু না…….প্রেমাতাল গল্পে মৌরি আপু তো বলেছিলো’বাংলাদেশের সব ছেলে ছত্রিশ বডির ফিগার লাইক করে’আর তুমি কি যে আমি বুঝি না,নৌশিনের ফিগার বত্রিশ হবে বলে আমার মনে হয়……..কি পাও ওর মাঝে……..ওকে ডান সাদাদ,তুমি শুধু আজ রাত টা আমার সাথে স্টে করো দেখো,নৌশিনকে ভুলে যাবে একদম……আমিই তোমায় সব উজাড় করে দিবো সাদাদ,প্লিজ…..আমি আর পারছি না তোমাকে ছাড়া,মাছের যেমন অক্সিজেন দরকার আমারও যে তোমার স্পর্শ চাই সাদাদ…..ভালোবাসি তোমায় খুব……খুব……..(আবারও জড়িয়ে ধরলো সাদাদকে)…….তোমাকে ছাড়া আমার প্রতিটা দিন কত কষ্টে কাঁটে আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না……আই লাভ ইউ সাদাদ…..আই লাভ ইউ সো মাচ……তোমাকে ভাইয়ার বিয়েতে প্রথম দেখেই তোমার প্রেমে পড়ে যাই আর আজও ভুলতে পারি নি…..তোমার নাম টা আমার মস্তিকে গেঁথে গেছে সাদাদ…..”
আর কিছু শোনতে পারছে না…মনে হচ্ছে কেউ কানে সিসা গলিয়ে ঢালছে।
এই ধরনের মন মানসিকতার মেয়ের সাথে আদৌ কি কোনো কথা বলা যায়!!!যে মেয়ে স্বইচ্ছায় কোনো ছেলের সাথে রাত কাটানোর প্রস্তাব দেয়,তাঁকে কি মেয়ে বলে??নাকি নষ্টা মেয়ে বলে??
ভেবে পাচ্ছে না সাদাদ।
এধরনের খারাপ মানুষের সাথে কথা বলতেও রুচিতে বাঁধে।আর সে কি না সাদাদকে জড়িয়ে ধরছে,বুকে মাথা রেখেছে!!!!যেখানে তাঁর প্রবিত্র নৌশিন মাথা রাখে!!!!!
এই কথা টা ভাবতেই নৌশিনের ঘুমন্ত মুখ টা সাদাদের বুকের উপর রাখার দৃশ্য ভেসে উঠে..
সারা শরীরে শিহরণ দেয়….শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে নষ্টা মন মানসিকতার রিদিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো।
তাল সামতে না পেরে ফ্লোরে পরে যায় রিদি।
হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে দাড় করিয়ে নিলো সাদাদ।এতক্ষণ শুধু শোনে গেছে………এবার বলার পলা…..রোমে ধমকাধমকি করলে কেউ শোনতে পারে…….তাই টানতে টানতে ছেদে নিয়ে যায় রিদিকে…….এতক্ষণ একটা কথাও বলে নি রিদি…………
সাদাদ ধাক্কা দিয়ে ছাদের কর্ণারের দিকে নিয়ে গেলো রিদিকে………
বলা শুরু করলো সাদাদ,
“কি বলছিলি তুই???নৌশিনের ফিগার তাই না????তাহলে শোন তোর ঐ ছত্রিশ ইন্সি সস্তা ফিগারের চেয়ে আমার নৌশিনের বত্রিশ ইন্সি ফিগার আমাকে পাগল করে তুলে….ওর ঐ ফিগার দেখলে আমার মাথা ঘুরে যায়…..নেশা ধরে আমার ওর প্রবিত্র শরীরে….আরে তোর এই সস্তা শরীর তো তুই সারা বাড়ি,রাস্তা,স্কুল,কলেজ,ভার্সিটি,অফিস সবাইকে দেখিয়ে বেরাস……বছরে একবার শাড়ি না পড়লেও ফ্লাগুনে মাথায় ফুল লাগিয় চুল ছেড়ে সাদা-লাল শাড়ি পড়ে ঘুরে বেরাস….শরীরের বড়াই করিস??রূপের বড়াই করিস??রাত কাটাতে চাস আমার সাথে????
তুই জানিস টানা চার টা বছর প্রেম করেছি আমার প্রাণ পাখির সাথে……..বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে মাত্র একদিন ওর চুল দেখেছিলাম….বিয়ে ঠিল হয়ে যাওয়ার পর যখন ভার্সিটি থেকে বাসায় ড্রপ করতাম নিজের ইচ্ছায় গাড়ির জানালা টা লাগিয়ে দিতো তারপর হিজাব খুলে চুল দেখাতো যেন আমি ছাড়া ঐ সৌন্দর্য কেউ না দেখে……কত ক্যান্টিনে বসে খেয়েছি ওর ফ্রেন্ডরা পর্যন্ত বলতো আমাকে খাইতে দিতে আমার হাতে খেতে সব সময় বলতো একাবরে বিয়ের পর…….নিজের ইচ্ছায় কখনও চার বছরের মাঝে একটা দিনও আমার হাত ধরে নি…আমাকেও ধরতে দেয় নি,একদিন ভার্সিটিতে অসুস্থ হয়ে গেলো ক্লাসে শুধু সেই দিন কোলে তুলে ছিলাম……নজর দেই নি ওর শরীরে…..ওর প্রবিত্র শরীরে চোখ লাগিয়ে অপবিত্র করতে চায় নি……ভার্সিটিতে মেয়েরা নানা রঙের শাড়ি পড়ে চুল ছেড়ে সেজেগুছে বেড়ায়…..কিন্তু আমার নৌশিন কখনও শাড়ি পড়ে নি…..দেখায় নি নিজের সৌন্দর্য খুলা মেলা ভাবে……..
রাত কাটাতে চাস আমার সাথে???আমার নৌশিনকে আমি অনেক আগেই আমার স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে দিয়েছিলাম ঐ দিন….শাড়ি পড়তে পারতো না বন্ধুদের জোড়াজোড়িতে পড়েছিলো,সামান্য একটু পেট দেখা যসচ্ছিলো আমার কথায় ঠিক করতে গিয়ে আরও গোলিয়ে ফেলে,বিশ্বাস করেছিলো আমায় কিন্তু ছেলে আমি ভালোবাসার মানুষকে ঐ ভাবে দেখে লোভে পড়ে যাই….জৈবিকতা কাজ করে চাইলে পারতাম ঐ রাতে ওর সবটা নিজের করে নিতে…নৌশিনও পাড়তো কিন্তু ও শুধু এই জীবনে না পরকালেও আামাকে চায় তাই সে গভীর রাতেও আমার সাথে থেকেও নিজের সতত্বি বিলিয়ে দেয় নি বরং আমি কিস করেছিলাম বলে কান্না কাটি করেছিলো আর তখনি বাবা-মায়ের সামনে আমার স্ত্রর করে নিই ওকে……আর ছয় মাস পর ওর পরিবারের থেকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি…..শরীর মন দুটো জোরেই শুধু নৌশিন….ছয় মাসের যে কোনো দিনই ওর সাথে রাত কাটাতে পারতাম,বর ছিলাম ওর….কাটায় নি তবুও কেনো জানিস??ওর শরীর টাকে চায় না আমি মন চাই আমার…..আরে শরীর তো আল্লাহ্ সবাইকে দিয়েছে সেটা তো সব ছেয়েমেয়েরই জৈবিক চাহিদা থাকে তাই বলে তোর মতো নষ্টা গিরি কেউ করে না যারা করে তারা পতিতালয়ে যায়……এতোই যদি পরপুরুষকে সুখ দিতে ইচ্ছা করে তো যা না পাশেই তো পতিতালয় নাম লিখিয়ে আয়…..সুখ পাবি আর দিতেও পারবি……মন শরীর দুটোই শান্ত হবে তোর………”
দুকানে হাত দিয়ে চেপে ধরে রিদি,
“ব্যাস,সাদাদ…….ব্যাস….আর না…..আর না…..”
“এই সস্তা চেঁচাবি না একদম…..তোমাকে এতো দিন দেখতে ইচ্ছা করতো না আজ থেকে তোকে ঘৃণা করি আমি….নৌশিনের সাথে তুলনা করিস??নৌশিনের নখের যোগ্য কোনো দিন হতে পারবি না…..এখনও সময় আছে তওবা কর….আমার নৌশিন বলে ‘আল্লাহ্ সব ক্ষমাশীল’….আমিও তাই বিশ্বাস করি সময় আছে ভালো হয়ে যা…..এই শরীর,ক্লিভেজ মানুষকে না দেখিয়ে হাসবেন্ডের হক টা ঢেকে রাখ….সুখ টা হাসবেন্ডেকেই দিস……..”
চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে গিয়ে আবারও কি ভেবে রিদির সামনে এসে দাঁড়ায়,
“আর একটা কথা….বললি না দেড় মাস লাগবে নৌশিনের সুস্থ হতে…..দেড় মাস কেনো দেড় যুগও যদি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকে তাহলেও আমি শুধু ওকেই ভালোবাসবো….ফিগার যদি শুকিয়ে আটাশও হয় ঐ ফিগারেই সব ভালোবাসা উজাড় করে দিবো…….পবিত্র ও,ভালোবাসতে জানে ও….আর শোন তুই তো এইগুলোই শোনতে চাস…স্বামী স্ত্রীর বিষয় আল্লাহ কাউকে বলতে না করছে তবুও শোন…
বললি না আমাকে নৌশিনের চেয়ে বেশি সুখ দিবি??পারবি না কোনো দিন পারবি না…..
বয়সে অনেক বড় ওর আমি,শারীরিক গঠনেও ওর চেয়ে স্ট্রং অনেক….যেদিন আমার কাছে নিজের সব টা বিলিয়ে দিয়েছিলো মেয়েটা,খুব কষ্ট হচ্ছিলো ওর এক সময় সহ্য করতে না পেরে কেঁদেও ফেলে তবুও সরিয়ে দেয় নি,ব্যাথাতেই সুখ করে নিয়েছিলো হারিয়ে গিয়েছিলো আমার সাথে……যেটা তুই কোনো দিন পারবি না!!!আরে আমার তল এটা মনে আমার যদি তোর হাসবেন্ড তোকে সে সুখ কোনো এক সময় দিতে না পারে তুই পরকীয়া করবি…আর আমার নৌশিন কখনো সেটা করবে না,যাকে একবার স্বামী বলে মেনেছে যার ভালোবাসায় সব বিলিয়ে দিয়েছে সে যদি আজ থেকে সেসব দেওয়ার ক্ষমতা হারায় তবু আমার পাশে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে……ছিঃ আর তার সাথে কি না তুই নিজের তুলনা করছিস…..আরে আমার নৌশিনের সম্মান নষ্ট হবে তুই যদি ওর নাম মুখে নিস…….”
নিজের মনের সমস্ত রাগ,ঘৃণা ফেলে চলে যাচ্ছিলো সাদাদ…
রিদি এসব কিছু শোনে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে ছিলো,চোখ দিয়ে অঝোড়ে পানি পরছিলো……..
সাদাদ ছাদের দরজা খুলার সময় পেছন থেকে বলে উঠলো,
“শেষ করে দিবো তোমার নৌশিনকে……..সরিয়ে দিবো তোমার জীবন থেকে……”
আবারও ফিরে আসে সাদাদ,
“ঠাসসসসসসসসস…..”
করে বসিয়ে দেয় আরও একটা………
সাদাদ কিছু বলার আগেই রিদি বলা শুরু করে,
“হ্যাঁ হ্যাঁ মারো যত খুশি মারো,যত পারো অপমান করো তবুও তোমাকেই ভালোবাসি…..কেনো ভালোবাসো না আমায়….বাসো না একটু……আর যদি না বাসো তাহলে কাল তো শুধু পা পড়িয়ে সে পা আবার কাঁচ দিয়ে কেঁটেও দিয়েছি,এবার যখন কিছু করবো জাস্ট পুরো শেষ করে দিবে আমি ঐ মেয়েকে……অনেক সুখ পেয়েছে তোমার সাথে আর না…আর পেতে দিবো না….”
সাদাদ তো ভাবেই নি যে এই কাজ টা রিদি করছে।এতটাও খারাপ ভাবে নি সে রিদিকে।ছিঃ কোনো মানুষ ইচ্ছাকৃত ভাবে একটা মেয়েকে এভাবে পুরাতে পারে….আর শুধু পুরায় ই নি কেঁটেও দিয়েছে……….
এতটা অমানুষ রিদি!!!ভাবেই পারছে না সাদাদ……
এবার ওকে থাপ্পর দিতেও সাদাদের ঘৃণা লাগছে,
রিদির মতো মেয়ের গায়ে আর নিজের হাত টাও ঠেকাতে চায় না সাদাদ।ইচ্ছে করছে,খুন করে ফেলে দিতে।যার জন্য নৌশিন এতটা কষ্ট পাচ্ছে….
“ছিঃ রিদি,আর কত নিচে মানবি তুই??আমি তো ভেবেছিলাম আমার নৌশিন কাজ কম করে তাই বেসামাল ভাবে এই ঘটনা টা ঘটে গেছে….আমারি ভুল ভাবা উচওত ছিলো ‘আমার নৌশিন সব কাজ দায়িত্ব নিয়ে করে’ ছিঃ…ইচ্ছা হচ্ছে তোকে খুন করে লাস টা শহরের মাঝ খানে ঝুলিয়ে দিই কিন্তু সেটাও আমি করবো না……কেনো জানিস???
তুই যে পাপ করেছিা না,তোকে খুন করলে সেগুলো দায়ভার পরকালে আমার উপর এসে পড়বে,আর আমি আমার নৌশিনকে হারিয়ে ফেলবো তখন তাই তোর মতো সস্তা মেয়েকে মারার কোনো সস্তা ইগোও আমার নেই……লজ্জা থাকা উচওত তোর……বুঝিস না কতটা ভালোবাসি আমার বউকে……ওর ভালোর জন্য সব করতে পারবো….আর দূরে সরাবি আমার থেকে নৌশিনকে….তার আগে এই বাড়ি থেকে তোকে কি করে বের করতে হয় সেটা তুই দেখতে থাক….ভাবতেই পারছি না তোর মতো কেউ নাকি ওয়ালিদ ভাইয়ার বোন!!!আমার বোনের ননদ……ছিঃ একটা পাপী তুই…..সময় থাকতে পাপ গুলো ঝরে ফেল….যদি পারিস আমার নৌশিনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিস,আমার নৌশিন অনেক ক্ষমাশীল…..এক নিমিষেই তোকে ক্ষমা করে দিবে”
আর এক মুহুর্তও দাঁরালো না সাদাদ……ছাদের দরজাটা খুলতেই রিদি ছুটে এসে সাদাদের পা জড়িয়ে ধরলো,
কেঁদে দিয়ে বললো,
“প্লিজ সাদাদ,এমন করো না….তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না….বিশ্বাস করো নৌশিনের কোনো ক্ষতি আমি করতে চাই না কিন্তু তোমার কারণে যখন ওর মুখে হাঁসি দেখি সামতালে পারি না আমি নিজেকে…….হিংসা হয় খুব তখন পিচ্চি মেয়ে টাকেই…..আমার কি দোষ বলো??আমি অনেক চেষ্ঠা করেছি তোমাকে ভুলে থাকার কিন্তু পারি নি…….”
সাদাদ পা হুচট দিয়ে রিদির কাছ থেকে নিজের পা ছাড়িয়ে নিচে নামতে থাকে……..
আবারও সিড়ি এসে সিড়ি আগলে দাঁড়ায় রিদি,
“সাদাদ,প্লিজ….শোনো শোনো….আমি বাপ্পি আর মম কে বলবো,ভাইয়াকেও রাজি করাবো আমি জানি তোমার সম্পত্তি চাই না আমি তোমাকে দিবো না তোমার নিতেও হবে না….যা কিছু আছে সব নৌশিনের নামে লিখে দিবো….নৌশিন সারা জীবন পাড় করে দিবে অনায়াসেই কোনো কষ্ট হবে না ওর…..তুমি ওকে ডির্ভোস দিয়ে আমার কাছে আসো প্লিজ……..”
হাঁসলো সাদাদ…পাগল হয়ে গেছে বোধহয় সাদাদের শোকে……..”আরে রিদি প্লিজ হাঁসিয়ো না…..তুমি ভালো করেই জানো নৌশিনের বাবা ভাইয়ের যা আছে…তোমার বাবা আর আমার বাবার চার পুরুষের সম্পত্তি এক করলেও তার সমান হবে না…..আর সে নৌশিনকে তুমি টাকা দিয়ে সুখী করতে চাও!!!হাঁসালে…….সরো সামনে থেকে…..”
রিদিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে,সাদাদ হাঁসতে হাঁসতে নিজের রোমে চলে গেলো।
দরজা লাগিয়ে লাগিয়ে লাইট অফ করে ফোন টা তে হাতে নিয়ে মায়ের নম্বরে কল করলো।
নৌশিনের খবর নিয়ে নিশ্চত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
আর রিদি সিড়িতে বসে পাগলের মতো কাঁদছে…….!
এর্লামেরর শব্দে ঘুম ভাঙে সাদাদের।নৌশিন থাকলে নৌশিন ডেকে দিতো কিন্তু নৌশিন তো হাসপাতালে।
তাই কাল রাত ঘুমানোর আগে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলো পাঁচ টার।ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ৫.৩০।তার মানে আধা ঘন্টা ধরে ফোন বেজে চলেছে।তাহলে তাঁকে জাগাতে নৌশিনের কতটা কষ্ট হয়!!
ভাবতেই মুঁচকি হাঁসলো সাদাদ।
ফ্রেস হয়ে এসে নামায পড়ে,কুরআন শরীফ পড়লো কিছুক্ষণ।একজন সার্ভেন্ট এসে কফি দিয়ে গেলে,কফিট মগ হাতে নিয়ে মায়ের নম্বরে কল করলো।
ফোন ধরলো নৌশিন,
“আসসালামু আলাইকুম…..”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম,উঠে গেছো???”
“হুম……আযানের সময়….কি করছো??”
“এই তো আমার জানের সাথে কথা বলছি…..পায়ে ব্যাথা আছে???”
“না তবে জ্বলে খুব…….”
“অনেক কষ্ট হচ্ছে তোমার আমি কিছুই করতে পারছি না…..”
“না,একদম বলবে না এগুলো……আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে না…..তুমি পাশে থাকলে আমার কোনো কষ্ট নেই…….”
“থাক,আর লুকাতে হবে না….মা রা কোথায়??”
“দুই মা কে ই বাইরে পাঠিয়েছি……..”
“কেনো???”
“আমি পাঠায় নি,আমি শুধু বলেছি আমার ক্ষুদা লেগেছে দুজনই পাগলের মতো কোথায় গেলো আমাকে কিছুই বললো না………”
“ক্ষুদা লেগেছে তোমার ফল তো ছিলো সেখানে নৌশিন,মায়েরা কেটে দেয় নি???”
“আমার ভালো লাগে না সাদাদ……..আমাকে বাসায় নিয়ে যাও……”
“কিহ???”
“প্লিজ……”
“একটা থাপ্পর দিবো…..আমি তোমাকে খাবারের কথা বলেছি আর তুমি বাড়ি আসার কথা বলছো??”
“তো কি করবো!!!এখানে এভাবে আর কতদিন শুয়ে থাকবো?আজকে দিন পাড় হলে তিন দিন হবে…….ভালো লাগছে না আমার……..”
“আসছি আমি,ফোন রাখো….”
“না……খেয়ে তারপর আসো….”
“নৌশিন!!!!”
“……..”
“গ্রেপ ধুয়া আছে পাশে খাও…..ততক্ষণে আমি পৌঁছে যাবো……”
“……….”
“কি হলো????”
“কি???”
“আঙুর ধোঁয়া আছে খাও…….”
“ভালো লাগে না আমার এগুলো…..দুই মা তো গেছে নিশ্চয় কিছু ব্যবস্থা করবে সেগুলো খাবো…..”
“ওফফ….আপাতত তো সেগুলো খেতে পারিস….”
“……..”
“প্লিজ খাও…..”
“খাচ্ছি…..বাট তুমি বাসা থেকে খেয়ে তারপর আসবে কিন্তু….”
“ওকে…..রাজকন্যার মাম্মাম…..”
“ইশশশশ……”
“আহা রে…..”
“ধ্যাত……”
“আচ্ছা!!!রাখছি আর খেয়েই আসছি……”
“ওকে….ওমমমমম্মা……”
“লাইভে হবে ডারলিং…..”
টুট টুট টুট…..লজ্জা পেয়ে ফোন রেখে দিলো নৌশিন।
সাদাদ হেঁসে দিয়ে কফির মগ টা রেখে ফ্রেস হয়ে একবারে রেডি হয়ে নিলো।খাওয়ার জন্য নিচে নামতেই দেখলো,অরূপ শার্ট প্যান্ট পড়ে বাইরে যাওয়ার জন্য পরিপাটি।সোফায় গালে হাত দিয়ে বসে অপেক্ষা করছে মনে হচ্ছে।
“কি আব্বাজান???স্কুলে যাও নি??”
রান্না ঘর থেকে রাফসা এগিয়ে এসে বললো,
“গেলো কই!!!নতুন বউয়ের কাছে যাবেন ওনি….তিন দিন মিস হলো স্কুল……”
“এই ব্যাপার!!!তাহলে মন খারাপ কেনো???”
“বকেছি একটু তাই…..বলছি বিকালে আমি যাবো….প্রাপ্তি এসে বললো ও যাচ্ছে তোর সাথে তাই সে ও পাগলে হয়ে লেগেছে যাবে…..”
“ওকে ডান,চাচ্চু….উঠো…..”
“……..”(আগের মতোই বসে আছে অরূপ)
“কি হলো যাচ্ছিস না কেনো??”(রাফসা)
“বকছো তো….বকা শেষ করো আগে,পড়ে যাই……”
“অরূপ!!!!!!বেশি কথা শিখে গেছো তাই না…….আদর খেয়ে খেয়ে নষ্ট হচ্ছো তুমি…”(রাফসা)
“ভাবী,বাদ দাও…… খাবার দাও আমাকে…..খেয়ে ওদের নিয়ে বের হবো…..”
“আয়…. দিচ্ছি……..এই মিতু দেখ তো তোর বড় ভাইজান আর প্রাপ্তি আপা কি করে,ডেকে আন ওদের……”
প্রাপ্তি আর অরূপকে নিয়ে সাদাদ হাসপাতালের উদ্দশ্যে রওনা হয়।
এদিকে নৌশিনেরর জন্য ওর মা আর শাশুড়ি মা ভাত,ডিম ভর্তা,সিম ভাজি,টমেটো ভর্তা,ধনে পাতা আর লেবু পাতা একসাথে ভর্তা করে নিয়ে এসেছে নৌশিনকে খাওয়ানোর জন্য।
নৌশিনের চোখ তো খুশিতে টলোমলো।ওর মাছ গোস্ত খেতে একদম বোরিং লাগে।
এটা দুই মা খুব ভালো করে জানেন….তাই তো হসপিটালের কিচেনে গিয়ে দুজনে মেয়ের জন্য নিজ হাতে এতো কিছু করেলেন যেন ভাত টা একটু বেশি খায়।
সাদাদের মা খাইয়ে দিচ্ছে নৌশিনকে।খুব তৃপ্তি করে গরম ভাত আর প্রিয় জিনিসগুলো খাচ্ছে নৌশিন।পাশে বসে ওর মা মেয়ের জন্য ফলমূল ধুয়ে কেটে রাখছেন।
“আর খাবো না মা…..”
“সেকি,বউমা……এতটুকু হলে হবে না মা….দু দিনের জ্বরে মুখ শুকিয়ে গেছে,এইটুকু ভাত না খেলে কি করে হয় বলো তো….দেখি হা করো…..”
কি আর করার জোর করে আরও অনেকগুলো ভাত খাইয়ে দিলো বেচারীকে।
সাদাদ,প্রাপ্তি,অরূপ সবাই একসাথে কেবিনে ডুকে।
সাদাদ এসে নৌশিনকে ঔষধ গুলো ঠিক ঠাক মতো খাইয়ে দিলো।
অরূপ তো নৌশিনকে পেয়ে সে কি আদর!!!জড়িয়ে ধরে গালে গলায় হাত বুলিয়ে চুমু খেয়ে সে এক বিশাল কারবার।
সবাই চলে গেলে শুধু সাদাদ রয়ে গেলো।
অরূপ যেতে চাই নি,তবুও বাচ্চাকে হসপিটালে রাখা ঠিক না তাছাড়া পুরা পা রোগীর কেবিনে বিভিন্ন ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া অনেক কিছু সমস্যা।
সাদাদ নৌশিনকে বসিয়ে চুলগুলো আচড়িয়ে সুন্দর একটা বেণুনী করে দিলো।
আর ফাঁকে ফাঁকে সুযোগ বুঝে ঘাড়ে উষ্মতা ছোঁয়াতে ভুল করে নি।
সেভলন দিয়ে নিজেই পা পরিষ্কার করে দিচ্ছে আর ব্যাথায় নৌশিন “উউু… আ করছে…”
চোখ দিয়ে পানিও আসছে।
কাজ শেষে চোখের পানি মুছে দিয়ে দু চোখের পাতায় চুমু এঁকে দিলো সাদাদ।
নৌশিন সাদাদকে টুলে বসতে না দিয়ে ওর বেডে বসিয়ে হাতে হাত রেখে বললো,
“বাসায় যাবো……”
সাদাদ এক হাত জড়িয়ে ধরে জবাব দিলো,
“না বাবুর মাম্মাম….পায়ের অবস্থা ভালো না যে….”
“কি হয়েছে তাতে বাসায় গিয়ে ট্রিটমেন্ট নিবো…..”
“পাগলী,বাসা আর হসপিটাল এক না….আমি আছি তো এখানে………তাহলে??”
“উহুু,ভাল লাগে লাগে না আমার…..কোনো কথা শোনো না তুমি!!!খালি জোর আর জোর…….”
সাদাদ নৌশিনের কপালে একটা চুমু এঁকে দুগালে হাত রেখে বললো,
“তা তো একটু করবোই জান…”
“হুহুহু…..”
“হা হা হা হা হা…….”
নৌশিনও মুঁচকি হাঁসলো……
দুপুরের দিকে সাদ ফোন করে রিদিকে অফিস থেকে বাসায় আসতে বললো।
ওয়ালিদকে ছেলের ছবি অলরেডি পাঠিয়ে দিয়েছে সাদ।ছেলে দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ্।সাদ বললে কখনো বাসায় আসতে রাজি হতো না রিদি,ওয়ালিদ আদেশ করায় বাধ্য হয়ে বাসায় আসতে হচ্ছে।
“রাফসা,রাফসা………”
সোফায় বসে হাঁক ছাড়ছে সাদ…
রান্না ঘর থেকে জলদি ছুটে আসে রাফসা……
“কি হয়েছে???আর তুমি বাসায় এখন???”
“আসবো না নাকি??”
“তা কখন বললাম আমি???তুমি তো লান্স করোই না বাসায় আজ হঠাৎ দুপুরেই আসলে তাই বললাম……”
“কথা ফুটলো তাহলে মুখে….”(বিরবির করে বললো সাদ)
“কি কি বলো ফিসফিস করে…..”
সাদ আশেপাশে তাঁকিয়ে দেখলো কেউ নেই…তাই টান দিয়ে রাফসাকে নিজের কোলে বসিয়ে নিলো……শাড়ির আঁচল কমড়ে গোজা ছিলো তাই পেট টা একটু বেরিয়ে আছে….হাত চেঁপে ধরলো সাদ রাফসার পেটে……….
“আরে,কি করছো???ড্রয়িং রোম এটা???”
ঘাড়ে মুখ গুজে সাদ জবাব দিলো,”তো??”
“ছাড়ো…..কেউ দেখে ফেলবে…”
“আগে বলো….কাল থেকে কথা কেনো বলছিলে না???”
“ইচ্ছে হয়েছে তাই…..ছাড়ো তো…..”
“উমহু……ছাড়ছি না….আগে বলো…..”
“ভালো হবে না কিন্তু!!!”
“ঠিক করে নিবো আমি…..”
“কেউ এসে যাবে সাদ……..”
“বলো আগে এড়িয়ে কেনো যাচ্ছিলে কাল থেকে……”
“ছাড়ো তো….তুমি তোমার ধোঁয়া নিয়েই থাকো….আমার চেয়ে ধোঁয়াই বেশি প্রিয় কি না তোমার!!!আর শোনো ছেলের সামনে যদি আর কোনো দিন ঐ সব আজেবাজে জিনিস বের করো না তো তোমার একদিন,আর আমার যতদিন লাগে….”
“আরে একটুই তো…..তাই এতো রাগ করার কি আছে…..”
“এই ছাড়ো তো…..বললাম তো তুমি একটু খাও আর সারাদিন খাও….কোনো আপত্তি নেই আমার…..বাট আমার ছেলের সামনে না……আর কি বলেছো তুমি ওকে’ছোট রা খায় না বড় রা খায়….’তার মানে আর একটু বড় হলে সে খাবে…কেনো খাবে না তার বাবাই তো বলেছে বড় হলে সিগারেট খাওয়া যায়….তাই না??”
সাদ আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রাফসাকে…..ঘাড়ে থুতনি রেখে বললো,
“এক মাস পর ঐ দিন একটু খেয়েছিলাম,বুঝতে পারি নি অরূপ এতো তাড়াতাড়ি আইসক্রিম শেষ করে ফেলবে…..তাই ওকে সামাল দিতে বলে ফেলেছিলাম…..”
“আচ্ছা!!!!!আর ছেলে যেন আমাকে না বলে তাই তাঁকে ঘুষ খাওয়াও শিখালে!!!বড় হয়ে কর্মক্ষেত্রেও অন্যের আর নিজের দোষ ডাকতে ঘুষ ব্যবহারের সুযোগ করে দিলে???”
“ওয়াট????এখানে ঘুষ কোথা থেকে আসলো?”
“ছেলেকে তিনটা আইসক্রিম খাইয়ে,আমার কাছে কথা গোপন করা শিখিয়েছো এটা ঘুষ না???”
“ও ছোট্ট….. ঘুষের কি বুঝে??”
“হ্যাঁ,ছোট তাই বলছি….বড় হলে তো শিখানো লোভ টা থেকেই যায় তাই না???”
“ওকে ওকে….আম সরি….তোমার ছেলেকে নেক্সট টাইম আর এমন কিছু বলবো না এন্ড করবোও না……..”
“মনে থাকে তোমার??”
“আজব!!!সব প্রেম ছেলের জন্য।।।।তাই না???কতদিন দুপুরে আসি না বাসায় কোথায় একটু আমার সাথে প্রম করবে তা না….. শুধু ছেলে আর ছেলে………আগে জানলে নিতাম ই না……”
“এই কি বললে তুমি???নিতে না মানে???তোমার কাছে বোঝা মনে হচ্ছে ওকে????”
“আরে সেটা কখন বললাম…..আমি তো এটা বলতে চেয়েছি আগে জানলে মেয়ে নিতাম……”
“ওফফ…..খালি মেয়ে আর মেয়ে…….তোমার সাথে কথা বলা টাই আমার বেকার……ছাড়ো বলছি…..”
সাদ একচুলও নড়লো না……রাফসার পেটে আরও চাঁপ দিয়ে বললো,
“রাফসা,ড্রালিং শোনো না…..একটা রাজপুত্র তো আছেই তোমার আমার রাজ্যে আর একটা রাজকন্যা চাই আমার……..”
“আব্বু!!!!রাজকন্যা কি????”
সিরি দিয়ে নামছে অরূপ,শোনতে পেয়েছিলো বাবার বলা শেষ কথা……তাই প্রশ্ন করে বসলো,
সামনে অরূপকে দেখে নিজেকে সাদের থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্ঠা করেও ব্যর্থ হলো রাফসা…………
অরূপ এতক্ষণ খেয়াল না করলেও সামনে এসে দেখলো যে ওর মা তার বাবার কোলে বসে…….
“আম্মু!!!!!তুমি আব্বুর কোলে?????”
“না তো…..”
“আম্মু…….তুমি তো আব্বুর কোলেই বসে আছো!!!!”
“এদিকে আসো……তুমিও তোমার আম্মুর কোলে বসো তারপর আমি বলছি……”
দৌঁড়ে আসে অরূপ সাদের কথায়….সোফার উপর পা রেখে মায়ের কোলে চড়ে বসে……………
কি সুন্দর বসার জায়গা…..সোফার উপর সাদ,সাদের কোলে রাফসা,আর তার কোলে অরূপ……💜💜💜💜💜
“অরদপ,উঠো আব্বু……আমি উঠবো….”
“আম্মু মজাই তো লাগছে….আমরা তিনজনে….”
“অরূপ বাবা…..তোর মা যা ভারী……”
সাদের কথায় চোখ রাঙিয়ে পেছন ফিরে তাঁকায় রাফসা…
হাঁসলো সাদ রাফসার অগ্নিদৃষ্টিতে…………………
“হি হি হি হি……আব্বু,আম্মু যে বড় তাই তো ভারী…..”
“এই সর তো…….বাপ বেটার রং লেগেছে মনে…….”
অরূপ মুখ টা একটু ঘুরিয়ে নরম দু হাতে ওর মায়ের গালে হাত বুলিয়ে বললো,
“রাগ করে না সোনা…….”
সাদ,রাফসা দুজনেই হা😱😱
অরূপ তার মায়ের দু গালে চুমু দিয়ে আবারও বললো,
“বেস্ট আম্মু……..আই লাভ ইউ মা…….”
রাফসা ছল ছল চোখে মিষ্টি হেঁসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে সারা মুখে চুমু এঁকে দিলো।
“রাগ করি নি সোনা,তোমরাই তো আমার সব….তোমাদের উপর রাগ করতে পারি বলো???”
“হি হি হি হি…..দেখেছো আব্বু,আম্মু রাগ করে নি…..তুমিও আমার মতো আদর করে দাও তাহলে দেখবে তোমার সাথেও আর রাগ করবে না…….করো করো……..”
সুযোগ পেয়ে গেছে সাদ,হাত ছাড়া করার কোনো প্রশ্নই উঠে না😆😆😆…..
কিন্তু বাঁশ তো রাফসার মাথায়…..বাপের সামনে ছেলের আদর খাওয়া যায় কিন্তু ছেলের সামনে ছেলের বাপের আদর!!!!!!
নবম আর্শ্চযের ব্যাপার😆😆
“না না,তার দরকার নেই আব্বু,তুমি করেছো তো তাতেই সবার উপর রাগ কমে গেছে….”
“ইটস নট ফেয়ার রাফসা,একজনের আদরে হয় নাকি!!!আমার আদর টাও তো দরকার…….”
রাফসা সাদের পেটে কনুই মরে,চোখ বেটে তাঁকালো।
মাথা গেছে মনে হয় সাদের।
ছেলের সামনে কি না বলে।
“দেখি বাবা সরো……রান্না পুরলো মনে হয়……”
“আরে উঠুক এতো তাড়া কিসের……”
“ধুর ছাড়ো তো…..বাপ ব্যাটাই বসো…….”
রাফসার জোরাজোরিতে অরূপ উঠতে বাধ্য হলো আর সাদের ই বা কি করার ড্রয়িং রোমে তো রোমান্স করা যাবে না…..যে টুকু করেছে সে টুকুই এনাফ…….তাই ছেড়ে দিলো।
রাফসা রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছে,অরূপকে কোলে নিয়ে আবার ডাকা শুরু করলো সাদ।
“আরে,আসল কথাটা তো শোনো….”
রান্না ঘরে যেগে যেতেই রাফসা উত্তর দিলো “বলো,শুনছি….”
“বাসায় মেহমান আসছে,বিকালে…..”
দাঁড়িয়ে যায় রাফসা।আজ আবার কে আসবে!!
“মানে???”
“রিদিকে দেখতে……”
রাফসা দ্রুত সাদের সামনে আসে……”কি???”
“হ্যাঁ,বিকালে কিছু লোক আসবে,কিছু লোক বলতে ছেলে,ছেলের মা আর বোন….”
অবাক হচ্ছে রাফসা!!!বিকালে বাড়িরএকটা মেয়েকে দেখতে আসবে,আর এই খবর টা নাকি দুপুরএকটার পর দিচ্ছে সাদ।
তার উপর বাড়ির যা অবস্থা।
“সাদ,তোমার মাথা ঠিক আছে??বিকালে মেয়ে দেখতে আসবে আর তুমি এটা এখন বলছো আমায়???”
“আজব!!!!”
“অরূপ আব্বু তুমি উপরে যাও তো সোনা…….আর্ট করো যাও…..”
“ওকে,আম্মু……”
“সাদ,তুমি ঠিক আছো???বাসার এই অবস্থা!!!আর তুমি মেয়ে দেখানোর লোক আজকে বাসায় আনছো??”
“তুমিই তো কালকে বললে…..”
“ওফফ,কালকে বলছি আর আজ ই???”
“হুম….ভালো ছেলে….রিদিও চিনে….আর আমি সব শোনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিদির বিয়ে টা দিতে চাই…..ওয়ালিদ,নিপা ওদের বলে দিয়েছি মামনির(নিপার মেয়ে) এক্সাম শেষ হলেই যেনো দেশে ফিরে,এক মাস পর নয় -এক্সাস শেষ হতে মানে আর চৌদ্দ দিন পর ওরা দেশে ফিরবে……..”
“তাই বলে আজ পাত্র পক্ষ!!!মা-বাবা জানে???আর রিদিই তো বাসায় নেই…….”
“বাবাকে আমি বলে এসেছি,বাবা তিনটার আগেই চলে আসবে,আর কাকাকে বলে রেখেছি…..এখন তুমি মা,আর কাকি মনি কে বলবে…”
“আর রিদি??”
“রিদি অফিস থেকে আসছে……”
“তুমি বললে আর ও রাজি হয়ে গেলো??”
“পাগল!!এই চিনছো ওকে???
আমার ধার ধারার মেয়ে নাকি ও?এ বাড়িতে থাকে তাই জাস্ট ফরমালিটি টুকু পালন করে…..
ওয়ালিদ বলায় আসছে আসছে অফিস থেকে…..”
“ও……..তা এই কথা টা আমাকে সকালেও তো বলা যেতো নাকি????এখন আমি কোনটা ছেড়ে কোনটা করবো???কম কাজ!!!! তার উপর মেয়ে বাড়ি বলে কথা,কম খাতির করতে হবে….”
“সার্ভেন্ট কম আছে???তোমায় কেনো এতো চাপ নিতে হবে???আর তুমি খুব ভালো করেই জানো,তোমার এই সারা বাড়ির কাজ,রান্না বান্না আমি মোটেও এলাও করি না…..”
“হয়েছে আমি গেলাম…..”বলেই রাফসা উঠে চলে গেলো।কারণ সাদ কখনো চায় না রাফসা এতো কাজ করুক।কিন্তু রাফসা নিজের ভালো লাগা থেকেই সব করে।
এখানে আরও একটু সময় থাকলে সাদ কথা আরও পেঁচাবে যার ফলে রাফসার আর লাজ করা হবে না।তাই এক রকম পালিয়ে এলো সাদের কাছ থেকে।
শরীফ চাচাকে লম্বা একটা লিস্ট দিয়ে তৎক্ষনাৎ বাজারে পাঠিয়ে দিলো।
মা আর কাকিকে রান্না ঘরে ডেকে এনে মেহমানের কথা বলায় ওরা তো অবাকের উপর অবাক।
সব সার্ভেন্টকে কাজের কড়া অর্ডার দিচ্ছে সাদের মা।
এদিকে রিদিও বাসায় এসে গেছে।
রাফসা দু তিন সার্ভেন্ট এক সাথে লাগিয়ে দিয়েছে ড্রয়িং রোম পরিষ্কার করা আর গোছানোর জন্য।
প্রাপ্তির মাআর সে তো কি ছেড় কি করবে ভেবেই পাচ্ছে না।
মেয়ে দেখতে আসলে কি কম কাজ!!!!
আর সে দিকে যাকে দেখতে আসবে সে তো…..
রিদি রোমে এসে আয়নায় নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।
সারা রাত কেঁদেছে তাই চোখ দুটো ফুলে আছে।
প্রায় এক ঘন্টা যাবত একটা সাওয়ার নিয়ে নিলো।
রাফসা সব কিছু ঠিক ঠাক করে,অরূপের খুজ নেওয়ার জন্য গেলো।
এতক্ষণ হয়ে গেছে ছেলেকে দেখতে পায় নি আর এতো কাজের মাঝে নিজেও ফ্রেস হতে পারে নি।সব কিছু করা শেষ হয়ে গিয়েছিলো,তারপর শশুড় আর কাকা শশুড় এসে যাওয়ায় ওদের সবাই খাওয়াতে গিয়ে সময় চলে গেলো।
ঘরে ডুকে দেখলো,অরূপ ওর বাবার বুকে মুখ দিয়ে শুয়ে আছে।
কাছে গিয়ে হাত মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“ঘুমিয়ে গেছে আমার মানিক টা…….”
ফিরে তাঁকালো অরূপ,মুখ টা এমন করে রেখেছে যেন সব চেয়ে অসুখী মানুষ সে।
ছেলেকে জড়িয়ে ধরে,রাফসা আদুরে কন্ঠে বলে উঠলো,
“অনেক কাজ ছিলো আব্বু,রাগ করে রাজা আমার…….উমমমম্মা……”
“তুমি শুধু কাজ করো,আব্বু আর আমি এখনো খাই নি……তুমি তো ভুলেই গেছো আমাদের……”
“না আব্বু,তোমাদের ভুলি নি তো…….দেখো,তোমরা খাও নি তাই আমিও তো খাই নি…….তোমাদের তো ডেকে গেলো তোমার মিতু আপু….যাও নি তো তোমরা!!”
“তুমি তো আর ডাকো নি তাই যাই না,তাই না আব্বু???”
“রাইট ব্যাটা,তোর আম্মুর কাছে কাজ টাই বড় কথা,তুই আর আমি অনেক পরে…..”
“সাদ,কি বলছো বল তো…..কাজ ছিলো একটু….একটা মেয়েকে দেখতে আসলে কি কম ব্যবস্থা করতে হয়।ঘর দূর থেকে সব পরিষ্কার করে কত কি রান্না…..”
“দেখেছিস অরূপ…..এখনও কাজের আলাপ…….”
“হুমমমম……”
অরূপ হাত দুটো বেটে…..পায়ের উপর পা রেখে মুখটা ঘুমড়া করে বিছানায় বসে পড়লো।
“আম্মুর সাথে আড়ি……..”
“না বাবা,আড়ি না…..ভাব করো না বাবু……”
“করিস না অরূপ,আমিও তোর মতো তোর মায়ের সাথে আড়ি করলাম……”
“না……অরূপ,আব্বু তুমি শোনবে না আমার কথা????
কষ্ট হবে তো আমার বাবা…..”
“………….”
“উমমমমমমম্মা,,,,ুমমমমম্্মমমাাায়…..” চুমু দিয়ে ছেলের সারা মুখ ভরিয়ে দিলো রাফসা।
“মানিক,আমার আর রাগ করে না……….এই দেখো কত্ত আদর করে দিলাম…..আসো আসো খাবে চলো….কত বেলা হয়ে গেছে তাই না??”
অরূপ চোখ বেটে ওর মায়ের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
রাফসা দু হাতে পেটের দি সাইডে একটু সুড়সুড়ি দিতেই অরূপ খিলখিল করে হেঁসে দিলো।যে হাঁসিতে বিশ্ব জয় করা যাবে
“এই তো সাত রাজার ধন আমার………(কোলে তুলে নিয়ে)চলো চলো….খাবে চলো….”
মুঁচকি হাঁসছে সাদ মা আর ছেলের কান্ড দেখে।
“কি হলো সাদ,চলো…..একটু পর তো মেহমান চলে আসবে…….পড়ে কখন কি করবে??”
“অরূপ,নামো…..তোমার আম্মু একটু ফ্রেস হয়ে নিক তারপর আমরা তিনজন একসাথে খাবো……..”
“তোমরা দু জন আগে খাও তো…পরে ফ্রেস হয়ে নিবো আমি…….”
“হ্যায়,অরূপ নামো…..আর তুমি যাও ফ্রেস হয়ে নাও….লাগলে সাওয়ার ও নাও……”
“আজব!!ওর ক্ষুদা লেগেছে তো…..”
“ওকে বিস্কুট খাইয়ে ছিলাম…..তুমি যাও…..”
“ওফফফ…..”
“যাওওওওও………”
রাফসা জটজলদি সাওয়ার শেষ করলো।
তিনজন একসাথে খাওয়ার সময় যেন অরূপ আর সাদের দুষ্টুমি বহুগুন বেড়ে যায়।আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি।
খাওয়া শেষে সাদ ড্রয়িং রোমে বসে অপেক্ষা করতে থাকে পরশ দের জন্য।
আর রাফসা অরূপকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে রিদি তৈরী হয়েছে কি না সেটাই দেখতে গেছে।
রাফসা রিদির রোমে ঢুকে খেয়াল করলো,রিদি কিছুটা চটে আছে।কিন্তু তা সত্বেও শাড়ি পড়ে সাজ কমপ্লিট।
কিন্তু!!!!!!
একি বিপত্তি!!!রিদি যে হাতা কাটা ব্লাউজ পড়েছে।বাংলাদেশের মানুষ যতই আধুনিক হোক ছেলের বউ দেখতে এসে নিশ্চয় হাতা কাটা ব্লাউজ পচ্ছন্দ করবে না।
“রিদি,তুমি এই ব্লাউজ টা কেনো পড়েছো????বর পক্ষের সামনে প্রথম দিন এভাবে যাবে?তারা যদি……”
“ওহ.লিসেন্ট ভাবী……আমি নিজেকে কি ভাবে প্রকাশ করবো সেটা কি তোমার কাছে শিখতে হবে????তা ছাড়া আমি তো নৌশিনের মতো এনালগ নই যে ফুল হাতা,ব্যান গলার ব্লাউজ পড়ে মাথায় হিজাব দিবো……..যতসব”
“রিদি,ভালো ভাবে কথা বলো….ভাবী হই তোমার….”
“সরি……”
“ব্লাউজ টা চেন্স করে নাও…..আর ওদের সামনে যাওয়ার সময় মাথায় একটু কাপড় দিও…….”
কিছু বললো না রিদি…..জানালার দিকে তাঁকিয়ে থেকে অন্য ধ্যানে তাঁকিয়ে থেকে বললো,
“ভাবী……”
“হুম…….”
“ফুল হাতা ব্লাউজ আর ফুল কলার,হিজাব এগুলো পড়লে কি সাদাদ আমাকে পচ্ছন্দ করবে???”
রাফসা জানে এসব তবুও রিদির মুখে প্রথম শুনছে এসব…….তাই চমকে উঠেছে “মানে??”
আচমকা রিদি পেছন ফিরে এসে রাফসাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কান্না শুরু করে।
রাফসার ভেতরটাও কেঁপে উঠে রিদির কান্নায়।
“ভাবী,আই লাভ সাদাদ,ভাবী,আমি সাদাদকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না……..”
রাফসা কি করবে???যে ভাবে কাঁদছে রিদি…..ওর ই বা দোষ কি ও তো ভালোবেসেছে সাদাদকে।আচ্ছা!!!এমন কেন হয়???যদি যে যাকে পচ্ছন্দ করে তার সাথেই সারা জীবন কাঁটানো যতো তাহলে তো কাউকেই আর কষ্ট পেতে হতো না।
কিন্তু বাস্তবতা যে উল্টো।’আমি যার লাগি বাঁধি ঘর,সে যে বাঁধে অন্য কারও ঘর’।
রিদির ক্ষেত্রেও এটা হয়েছে।তার মন জোড়ে শুধু সাদাদ।কিন্তু সাদাদের পুরো দুনিয়া জোরে শুধু নৌশিন।নৌশিন আর সাদাদের পৃথিবীতে যে রিদির সামন্য জায়গা টুকুও নেই।ইশ এমন যদি হতো,রিদি সাদাদের মনের মতো ভালো,খগব কেয়ারিং একজন মানুষ হয়ে সাদাদের সাথে সারা জীবন পার করে দিতো।আর নৌশিন সাদাদের সামনেই না আসতো।অন্য কারও সাথে ঘর বাঁধতো।বা রিদির মনে সাদাদ কখনো জায়গা না করে নিতো।
বেশ হতো তাহলে!!!!অতন্ত্য রিদিকে কষ্ট পেতে হতো না এভাবে।বেচারী যে নিজের মনকে কিছুতেই বুঝাতে পারছে না।বেহায়া মন শুধু সাদাদকেই চায়।বুঝতেই চায় না সাদাদ যে বিবাহিত।
“রিদি,বোন প্লিজ এভাবে কেঁদো না…….দেখো আমি সব টা জানি…….কিন্তু কি করার বলো??এমন তো না যে সাদাদ অবিবাহিত,ওর সাথে তোমাকে জোরে দিবো…..জিন্তু সাদাদ তো বিবাহিত আর নৌশিনকে নিয়ে সুখে আছে তাই এখানে তোমার সাথে ওর কি করে রিদি??তুমি তো বুঝো বলো???”
“ভাবী,কেন এমন হলো???আমি তো কত বাইরে থেকেছি যত ছেলে বন্ধু ছিলো আছে।।।কত কলিগ কিন্তু আমার মনে শুধু কেনো সাদাদ!!!আল্লাহ্ যদি সব ভালোর জন্যই করে তাহলে কেন আমার সাদাদকে মনে ধরার পর নৌশিনকে ওর জীবনে পাঠালো।আমি না চাইলেও নিজেকে বুঝাতে পারি না……..কি হতো সাদাদ আমার হলে!!!!আমি না খুব ভালোবাসি সাদাদকে…….”
“রিদি,রিদি দেখি…..মুখ তুলো….ছিঃ এভাবে কাঁদতে নেই বোন……তুমি দেখবে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।তোমার ভাইয়া বলেছে আজ যারা আসছে তারা খুব ভালো মানুষ।আর ছেলেও নাকি মাশাল্লাহ্,তুমিও নাকি চিনো!!!!দেখবে কিছু সময় পর ঠিক তুমি পরশের সাথে সুখী থাকবে।তখন সাদাদের কথা ভাবার সময় ই পাবে না।নিজের পরিবার,হাসবেন্ড,বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে মেতে থাকবে সারাক্ষণ…….”
রিদি এখনো রাফসাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।।।।
“দেখি,বোকা মেয়ে মুখ তুলো।।।।।……”
রাফসা জোর করে রিদিকে স্বাভাবিক করার চেষ্ঠা করছে।
“একদম কাঁদবে না……”(চোখের পানি মুছে দিয়ে)
“আর শোনো….কি কম আছে শুনি???হুম???ছবি দেখেছি আমি তোমার ভাইয়ার ফোনে….সাদাদের চেয়ে অনেক হ্যান্ডসাম……”
“কি হবে ভাবী তাতে??আমার মন যে……”
“দেখো রিদি,জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে….এই তিনটা বিষয় আমাদের কারও হাতে থাকে না……এমনতো হতে পারতো,সাদাদ-নৌশিন একে অপরকে ভালোবাসার পরও ওদের মিলন হতো না কিন্তু ওদের ভাগ্যই ওদের মিলিয়ে দিয়েছে…..আর আমাকেই দেখো না কোনো দিন বাংলাদেশেই আসি নি,ডাক্তার হওয়ার জন্য এলাম আর বাংলাদেশী হয়ে গেলাম….কেউ বলতে পারি না আমরা কার কপালে কি আছে….হয়তো তোমার কপালে সাদাদ নেই তাই তোমার মনে সাদাদের জন্য জায়গা থাকলেও সাদাদের মনে অন্য কেউ….সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছা…..তবে এই টুকু বলতে পারি,বিয়ে টা হোক তোমার,দেখবে তোমার মনে সাদাদের জন্য কোনো জাগয়া থাকবে না…….সাদাদের কথা ভাবার সময়ই পাবে না……”
সাদ রাফসাকে ডেকে পাঠালে রাফসা চলে যায়।
রিদি রাফসার কথা মতো ব্লাউজ টা চেন্জ করে নিলো।
আসলেই আজ অন্য রকম সুন্দর লাগছে রিদিকে।
ফুল হাতা ব্লাউজ,তবে নৌশিনের মতো ফোল ব্যান গলা তো ওর নেই তাই পড়তে পারে নি।মুঁচকি হাঁসলো রিদি।
কালোর রঙের ব্লাউজ,মিষ্টি রঙের শাড়ি-কালো জমকালো পাড়……মেচিং গয়না…..কানের ঝুমকো দুটো একটু বড়…..হাত ভর্তি চুরি…..বেশ লাগছে রিদিকে আজ।
রিদি আগে কখনো এমন করে সাজে নি,আজ কেনো যেন রাফসা যেভাবে বলে গেছে সেভাবেই সাজলো।
সাদাদের মা,বাবা পরশের বাবা মায়ের সাথে কথা বলছেন।প্রাপ্তির বাবা আর সাদ ও আছে সেখানে।
সাদাদের বাবার তো পরশ কে দেখে খুব ভালো লেগেছে।
বেশ দেখতে ছেলেটা আর কথা বার্তায়ও অনেক ভদ্র।
আধুনিকতার ছোঁয়া আছে কিন্তু তাতে অশালীনতার ছোঁয়া নেই।
লম্বায় পাঁচ ফুট আট,ত্রিশ পাড় হয়ে একত্রিশের দৌঁয়াড়ে পাড় দিয়েছে।
সাদা শার্ট-কালো কোর্ট,কালো জিন্স,ব্যাল্ক-হোয়াইট সু আর সাথে চাঁপা খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে দেখতে কোনো হিরোর চেয়ে কম না।
সাদ রাফসাকে রিদিকে আনতে বললে,রাফসা রিদিকে ড্রয়িং রোমে বরপক্ষের সামনে নিয়ে আসে।রিদি ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।সে তো কখনো কারও সামনে বউ রূপে যেতে চায় নি। তার ভেতর বাহিরে যে শুধু সাদাদ।কিন্তু এক রকম বাধ্য হয়ে,পরিবারের সবার কথা মেয়ে এক রকম সং সেজে পরশের সামনে আসে।
পরশ অবাক হয়ে দেখছে রিদিকে।এর আগেও পরশ রিদিকে দেখেছে।দু তিন বার তো হবেই।রিদি কাজ ভালো করায় ওর কম্পানির বড় বড় সব ডিলেই ওকে দেখা যায় সে সুত্র পরশও বেশ কয়েকবার দেখেছে রিদিকে।কিন্তু আজ যেন নতুন রূপে দেখছে।পরশের কাছে এই মুহুর্তে পৃথিবীর সেরা সুন্দরী হচ্ছে ‘রিদি’।আগে তো ফরমাল শার্ট-পেন্টে দেখেছিলো।
আর আজ!!!!!পুরো বাঙালী বউ।শুধু পাড় ভাঙা শাড়ি টা পরলেই হতো……মুঁচকি হাঁসলো পরশ।শার্ট পেন্ট পড়া রিদি আজ তার সামনে মাথা নিঁচু করে কাঁচুমুচু হয়ে বসে আছে।
আর এদিকে রিদিরও অন্য রকম একটা অনুভুতি হচ্ছে।হাজার হোক মেয়ে তো!!!কোনো ছেলে যদি এভাবে পলকহীন ভাবে তাঁকিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে তাহলে যে কোনো মেয়েই লজ্জা পাবে।
তারউপর আবার যার সাথে বিয়ের কথা হচ্ছে মানুষ টা যদি সে হয়!!!!
রিদিকে কিছু জিঙ্গেসা করে নি পরশ বা পরশের পরিবার।
পরশের মা রিদিকে রোমে চলে যেতে বললে রিদি নিজের রোমে চলে যায়।
গা এলিয়ে দেয় বিছানায়,চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে সাদাদের কথা।
হঠাৎ রোমে কারো বুটের আওয়াজ শোনে চোখ মেলে তাঁকায়।
উঠে বসে তাড়াহুড়ু করে,
পরশ যে রোমে এসেছে তাই।
রিদি কিছু বলার আগেই পরশ বলা শুরু করে,
“অনেক সুন্দর লাগছে তোমায় আজ,শার্ট পেন্ট পড়লে এই সৌর্ন্দয টা ঢাকা করে যায়….তবে শার্ট পেন্ট পড়লেও আমার চোখে তুমি সুন্দর!!!তবে লোকে আমার জিনিসের প্রতি নজর টা একটু বেশি করে দেয় তো তাই একটু খারাপ লাগতো আমার”
অবাক হয়ে তাঁকায় রিদি,
“আমার জিনিস মানে???”
“কোন ভার্সিটি ছিলো তোমার??”
“রাজশাহী…….আমি কিন্তু আমার উত্তর পাই নি…..”
“কোন সাবজেক্ট??”
“ফার্মেসি……..বাট আপনি!!”
“তোমার সিনিয়র ছিলাম ওয়ান ইয়ার…..তখন দেখেছিলাম তোমায়….ভালো লাগতো বাট ভালোবাসতাম কি না জানি…… তবে ভালো লাগা ছিলো…….আর অফিসের কাজে তো তোমার সাথে হয়েছিলো দেখা…….তখনও ছিলো……..বাট আজ থেকে ভালোবাসতে শুরু করবো…..”
“আপনি কি বলছেন এসব???ভালোবাসতে শুরু করবেন মানে???”
খাটের উপর আসলো পরশ,
মুঁচকি হেঁসে বললো,
“হুম….কারণ বাবা মায়ের তোমাকে খুব পচ্ছন্দ হয়েছে….আর আমার কথা তো না হয় বাদ ই দিলাম…….তোমার পাপা আর মমের সাথে ফোনে কথা হয়েছে ওদের কোনো আপত্তি নেই……..তাই তিন দিন পর আমাদের ইনগেজমেন্ট……দেন তোমার ভাইয়া আর ভাবী আসলে বিয়ে…..তাই ডিসিশন নিয়ে নিয়েছি যে আজ থেকেই ভালোবাসবো…….”
রিদির মাথা কাজ করছে না….
ওর নাকি বিয়ে!!!!
মানতে পারবে না রিদি।
ও তো ভেবেছিলো যে জাস্ট দেখতে আসছে তাই গিয়েছিলো সামনে……কিন্তু এরা তো বিয়েও ঠিক করে ফেলেছে।
“দেখুন….আপনি কিন্তু বিয়েতে আমার মত নেন নি…..”
উঠে দাঁড়ালো পরশ,
“প্রয়োজন পড়ে নি,লাইফে ফার্স্ট কোনো মেয়েকে বাবা মায়ের সাথে দেখতে আসলাম….অনেক দিন ধরেই সাদ ভাইয়াকে বলা হয়েছিলো তোমার কথা…..মা কে দিয়ে বলিয়েছিলাম…….তাহলে বুঝতে পারছো তো আমি তোমাকে নিজের ইচ্ছাতেই চেয়েছি……আর ফাইনালি সাদ ভাইয়ার সুবুদ্ধি হলো আমাদের ডাকার……তাই এখন তো কোনো বাঁধা নেই……আর তোমার পারমিশন নিবো না আমি……কারণ পরশ চৌধুরী কোনো মতেই তার পচ্ছন্দ করা জিনিস হাত ছাড়া করে না…..”
বলেই বেরিয়ে গেলো পরশ…..
রিদি পেছন ডাকলেও পরশ ফিরে তাঁকায় নি……..
রিদি ধপাস করে ফ্লোরে বসে পড়ে………কি করবে ও….লোক টা কি বলে গেলো??
সে কি প্রপোজ করলো,নাকি মেয়ে দেখতে এসেছিলো নাকি হুমকি দিয়ে গেলো।
ভেবে পাচ্ছে না রিদি।
রাগে শরীর ফেটে যাচ্ছে।ইচ্ছা করছে এই পরশকে গুলি করতে।
রিদির সাথে জোড়াজোরি!!!!
কেউ কোনো করতে পারে নি,আর এই পরশ!!!!!
বেশ কয়েক টা দিন কেটে গেছে।
এর মধ্যে ঘরয়ো ভাবে পরশ রিদিকে আংটিও পড়িয়ে গেছে।
ওয়ালিদ আর নিপা আসলেই সব কিছু সাজিয়ে গুছিয়ে করা হবে।
নৌশিনও এখনো মোটামোটি সুস্থ…….
হসপিটালে সাদাদ নৌশিনের পায়ে ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছে…..
“এই,আমি না……”
“হুম….বলো….ব্যাথা লাগছে???”
“না।বাট ড্রেসিংয়ের সময় খুব খারাপ লাগে…….”
“ঠিক হয়ে যাবে জান…..”
“শোনো….”
“বলো…”
“ইশশশ….পা টা ছেড়ে আমার পাশে বসো না একটু……..”
সাদাদ নিজের কাজ শেষ করেই নৌশিনের পাশে বসলো।
নৌশিন সাদাদের হাত টা ধরে বললো,
“শোনো না…..একটা কথা……”
“কি????”
“আজ কয় দিন হলো হসপিটালে আমি??”
“বারো দিন…. কেনো??”
“আমার না পালাতে ইচ্ছা করছে এখন……তুমি যদি কাল কে আমাকে বাসায় নিয়ে না যাও…..তাহলে কিন্তু….”
“হুশশশ…..আর একটু ভালো হোক পা টা…..”
“আব্বুর মতো কথা বলবা না সাদাদ,আমি বাসায় যাবো এটাই ফাইনাল….রিদি আপুর রিং বদল হলো আর আমি দেখতেই পেলাম না….আর আমি কি না ঐ বাড়ির বউ!!!”
“ঐ রিদির রিং বদল তাতে তোমার কি…….আরও সুস্থ হয়ে নাও……”
নৌশিন সাদাদের হাত খুব জোড়ে একটা খামচি বসিয়ে দিলো।
“আওওওও…….”
“যাবো বাসায় আমি…..”(কাঁদো কন্ঠে)
“চুপ…….”
“যাবো….যাবো…যাবো……”
“নৌশিন!!!”
“আরে এত দিন তো মানুষ মরার পথে থাকলেও হসপিটালে থাকে না…..আর আমি……”
চোখ রাঙিয়ে তাঁকায় সাদাদ নৌশিনের দিকে,চুপ হয়ে যায় নৌশিন,
“থাপ্পর দিয়ে না,বেশি বুঝো নাকি????চুপচাপ বসে থাকবা……বেশি পেঁচাল যেনো না শোনি……”
নৌশিন নিচের দিকে তাঁকিয়ে আছে।সাদাদ খেয়াল করলো নৌশিন কাঁদছে।
“এই চোখের পানি মুছো……”
“……….”
“রাসকেল,পানি মুছ চোখের….”
“………”
“নৌশিন,রাগ উঠাবে না আমার…….চোখ মুছো বলছি……”
“আমি কি করবো??আমার ভালো লাগছে না এখানে….এতো দিন হসপিটালে থাকে মানুষ…….”(কাঁদতে কাঁদতে বললো নৌশিন)
এগিয়ে গেলো সাদাদ নৌশিনের দিকে।
ঠিক ই তো বলেছে নৌশিন।
এতো দুন কোনো মানুষের ই ভালো লাগে না।
নৌশিন তো পরের দিন থেকে বাসায় যাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো। শুধু সাদাদ আর নৌশিনের বাবা-ভাইয়ের জোড়ে যেতে পারে নি।
চোখ মুছ দিলো সাদাদ।
নৌশিন ঝাঁপিয়ে পড়লো সাদাদের বুকে।
শার্ট খামচে ধরে কাঁদতে লাগলো।
“নৌশিন,জান প্লিজ…….নিয়ে যাবো তো বাসায়।দেখো তো এই বারো দিনের সাত আট টা দিনই তোমার ভীষণ জ্বর ছিলো।যদি পা টা শুধু পরতো বা কেঁটে যেতো তাহলে নিয়ে যেতাম কিন্তু কাঁটা তো সেলাই করা যায় নি…….সেফটির ভয় তো থাকে বলো…..আর তার উপর তুমি তো কিচ্ছু খাচ্ছো না……..কাঁদবে না প্লিজ…….আর দু দিন জাস্ট…..নিয়ে যাবো তো বাসায়।”
“…………”কেঁদেই যাচ্ছে নৌশিন…….অসহ্য লাগছে হসপিটালে ওর।
সাদাদ চোখ মুছিয়ে দিলো আবারও।দু চোখের পাতায় চুমু এঁকে দিলো।
“সুন্দরী,কাঁদবে না একদম…..”
“তুমি আসলেই খুব খারাপ!!!!খুব……আমার এখানে ভালো লাগছে না সেটা তুমি বুঝতে পারো না……”
“আমার এতো বুঝা লাগবে না….আমি তো পারলে সারা জীবন ই তোমায় নিয়ে হসপিটালে থাকতাম…..রোমান্স টাইম টা বেশি হতো আর বাড়ির কেউ ডিস্টার্ব করতেও আসতো না….বাট হসপিটালে থাকার কারণে তো আসল কাজ টাই করা হয়ে উঠেছে না…….দু একটা কিস ছাড়া……”
ফিরে তাঁকায় নৌশিনের সাদাদের দিকে।এই ছেলের মুখে কিছুই আটকায় না।
সব সময় উল্টাপাল্টা কথা।
নৌশিন চোখ ফিরিয়ে নিলো সাদাদের দিক থেকে।
কি করে চেয়ে থাকবে!!!
সাদাদের চোখের ভাষা যে বুঝে গেছে সে,লজ্জা লাগে তো।
সাদাদ,মুঁচকি হেঁসে নৌশিনের মুখের সামনে আসা চুলগুলো কানের পাশে গুছে দিলো।
টুল ছেড়ে বেডের উপর বসে,হাত টা নৌশিনের কমড়ে রেখে নিজের কাছে নিয়ে আসছে।
খুব কাছে……আর পারলো না নৌশিন ঝাঁপিয়ে পরলো সাদাদের বুকে।
খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে দু জন দুজনকে।
সন্ধ্যার আবঝা আলো যখন বাইরের পরিবেশকে শান্ত করে তুলছে।ঠিক সেই মুহুর্তে সাদাদ আর নৌশিন ভালোবাসা পাওয়ার আশায় অশান্ত হয়ে উঠেছে।
সাদাদ নৌশিনকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে,মাথার পেছনের দিকের চুলগুলো মুষ্ঠিবদ্ধ করে মুখটা নিজের কাছে নিয়ে এলো।
নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে নৌশিনের।চোখ বন্ধ করে আছে।দেরী করে নি সাদাদ,নেশা পূরণের উপায় পেয়ে গেছে সে।ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
নৌশিনও এক হাতে সাদাদের শার্ট আর অন্য হাতে মাথার পেছন দিকে আকড়ে নিয়েছে।
দুজনে হারিয়ে যাচ্ছে,তাদের চির চেনা অনুভুতিগুলোর মাঝে।
ঠোঁট থেকে কমশ্র গলার দিকে নামছে সাদাদ।
নেশা ধরে গেছে তার প্রিয়তমার মাঝে।চুমুতে চুমুতে শিহরিত হচ্ছে নৌশিন।
ওড়না টা সরিয়ে নিলো সাদাদ নৌশিনের শরীর থেকে।
আস্ত করে শুয়িয়ে দিলো নৌশিনকে।আধসোয়া হয়ে নৌশিনের গলায় ঘাড়ে লাভ বিট দিচ্ছে সাদাদ।মুচড়াচ্ছে নৌশিন,আরও আদর চাই তার।দুজনেই খুব তৃষার্থ।
কারও হোশ নেই।
আদরে,ভালোবাসায় হারিয়ে যাচ্ছে নৌশিন।আরও কাছে চাইছে সাদাদকে।সাদাদকে নিজের খুব কাছে টেনে নিচ্ছে।
সাদাদও চাইছে নৌশিনেকে মাতোয়ারা করতে তবে আজ যেন সাদাদের চেয়ে নৌশিনের নেশা টা বেশি ধরে গেছে।
অনেক দিন হলো তো সাদাদকে নিজের খুব কাছে পায় না।তাই হয়তো💜💜💜
হঠাৎ করে,নৌশিনের পা টা বেডের লোহার সাথে লেগে যায়।আর নৌশিন সাথে সাথে ব্যাথায় কুকড়ে উঠে।
উঠে বসে সাদাদ,তাড়াতাড়ি নৌশিনের পায়ের কাছে গিয়ে খেয়াল করে পায়ের ব্যাথাটাতেই বেডের লোহার আঘাত হয়েছে।
“সরি সরি,জান….আমার জন্য হয়েছে এটা………..প্লিজ……..”
“উহুহুহু……..”
“ওহ্…….সরি প্লিজ….”
নৌশিন সাদাদের দিকে রাগী একটা লোক নিয়ে বললো,
“সরি!!!!সাদাদ কত বার বলেছি এই ওয়ার্ড টা বলবে না আমার সামনে……”
মুঁচকি হাসলো সাদাদ,বললো,
“ওকে,ম্যাম…….”
মুঁচকি হাসলো নৌশিন….একটু আগের কথা মনে পড়তেই ব্লাশিং হয়ে অন্য দিকে তাঁকিয়ে যায় নৌশিন।
বুঝতে পারলো সাদাদ,নৌশিনের মনের অবস্থা।
কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,
“জান,আজকে আমার মনে হচ্ছিলো তুমি আমাকে খুব কাছে চাইছো তা কি সত্যি….”
আবারও মুঁচকি হাঁসলো নৌশিন।খুব লজ্জা লাগছে।
আজ যে সত্যিই নৌশিন খুব করে চাইছিলো সাদাদকে।
ইশশশ,বাসায় থাকলে সত্যিই যে করেই হোক সাদাদকে আজ নিজের কাছে আটকতে রাখতো সে।কিন্তু এটা হসপিটাল।😞😞😞ভাবতেই কেমন লাগছে নৌশিনের।
সাদাদ নৌশিনের গায়ে ওড়না টা দিয়ে দিয়ে বললো,
“সব পুষিয়ে দিবো জান,আফসোস থাকবে না তোমার…..শুধু তোমার সুস্থ হওয়ার অপোক্ষা”
জড়িয়ে ধরলো নৌশিন সাদাদকে,
“বাসায় যাবো আমি…..”
“পাগলী,এতো বাসায় যাওয়ার জন্য তাড়া কেনো??হুম????
এখানেই কিন্তু তাহলে বাসার কাজটা সরে ফেলবো….দরজা লাগানোই আছে……..হবে নাকি!!!”
নৌশিন সাদাদের পিঠে একটা ঘুষি দিয়ে বললো,
“ধ্যাত…..”
“হা হা হা…….পাগলী আমার….”
“আই লাভ ইউ…..”
“আই লাভ ইউ টু বাবুর আম্মু….”
নৌশিন সাদাদকে ছেড়ে দিয়ে,সোজা হয়ে বসলো।
“বলছিলাম যে…..”
“হুম বলো…..”
“আসলে……আমার না একটা কথা মনে হচ্ছে…….”
“কি কথা….বলো…..”
“বাট আমি সিউর নই……..”
“কি সিউর নও……”
“ধ্যাত,কিচ্ছু না……”
“আরে বাবা,না বললে বুঝবো কি করে???বলো……”
“আসলে,আমিও বুঝতে পারছি না…..তবে আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে……একটা কারণও আছে অবশ্য……বাট বুঝতে পারছি না আমি…..”
“আমি তোমার কথার কিচ্ছু বুঝতে পারছি না……তুমি কি কারণের কথা বলছো???কি হয়েছে বলবে আমাকে??”
“না….. ”
“মানে??….তার মানে কিছু একটা হয়েছে….তাই তো???”
“হুম……বাট সিউর নই…..মনে হচ্ছে…..”
“কি মনে হচ্ছে সেটা তো বলো।।।।টেনশন হয় তো জান….”
“না…..পরে বলবো…”
“হোয়াট!!!কি কথা যেটা এখন বলা যাবে না???বলো এখনি বলতে হবে তোমায়……”
“আচ্ছা,আজকে কত তারিখ???”
“সাত অক্টোবর……”
“হুম……আমারও তো তাই মনে হয়েছিলো…..”
“বাট নৌশিন সাত অক্টোবরে তো বিশেষ কিছু নেই……..তোমার বার্থ ডে ও তো না…….এমনি কি অন্য কিছুও আমার মনে হচ্ছে না…..”
“আরে এতো উতলা কেনো হচ্ছো….আমি জাস্ট ডেট টা জানতে চেয়েছিলাম….”
“নৌশিন!!!কি প্রব???বলো আমায়……..”
“উফফ…..কিছু না সাদাদ!!!!”
“একটু আগে বলছিলে,তোমার কি যেনো হনে হচ্ছে,বাট তুমি সিউর নও…..সেটা বলো….”
“সাদাদ,সত্যি কোনো প্রবলেম নেই…..তবে হ্যাঁ আমার যেটা মনে হচ্ছে সেটা কোনো প্রবলেম না…..প্লিজ জানতে চাইবে না কি মনে হচ্ছে…..আমি পরে বলবো তোমায়……প্লিজ….”
“ওকে ওকে…….আর রিকোয়েস্ট করতে হবে না….জানতে চাইবো না বাট তোমার যখন মনে হয় বলো আমায়…….তবে কোনো প্রবলেম কিন্তু কোনো ভাবেই লোকানো চলবে না…….”
“ওকে মাই ডিয়ার হাসবেন্ড…..”
“হুম…….” (নৌশিনের কপালে চুমু এঁকে দিয়ে)
“এই আযান দিচ্ছে…..অযু করবো….”
সাদাদ নৌশিনকে ধরে নিয়ে ওয়াশরোমে গিয়ে ওযু করিয়ে দিলো……পা টা অনেকটা শুকিয়ে গেলেও নৌশিন ঠিকমতো পা মাটিতে পাততে পারে না,,কেঁটে যাওয়ায় একটু চাপ পড়লেই ব্যাথা লাগে।
তাই সাদাদ সব সময় উঠা নামায়,হাটা চলায় সাহায্য করে….।
নৌশিনকে নামাযের জন্য বসিয়ে দিলে,নৌশিনও সাদাদকে নামাযের জন্য মসজিদে পাঠিয়ে দিলো।
সাদাদ যাওয়ার সময় একজন নার্সকে বলো যায়,নৌশিনের নামায শেষ হলে তাঁকে বেডে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য।………..
নামায শেষে নার্স এসে নৌশিনকে বেডে শুয়িয়ে দিলো।খাবার খওয়ার আগে ঔষধগুলো খাইয়ে দিলো।
“ম্যাম,স্যার আপনাকে খুব ভালোবাসে তাই না??”
মুঁচকি হাসলো নৌশিন,”হুম…অনেক”
“আসলেই স্যার অনেক ভালো,আপনি যত দিন আছেন স্যার তত দিন রাত আপনার সেবা করছে……কত পেসেন্ট দেখলাম,,,বাট স্যারের মতো বউকে সেবা করতে খুব কম হাসবেন্ডকেই দেখছি…….”
নৌশিন হাঁসি ছাড়া আর কোনো উত্তর খুজে পাচ্ছিলো না।নৌশিন বরাবর নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করলেও আজ যেনো আরও বেশি মনে হচ্ছে।
“আচ্ছা,ম্যাম….শুয়ে থাকুন আপনি….আপনার জন্য তো আমাদের কিছুই করতে হয় না….যা করার স্যার ই করেন…..স্যার এলো বলে নামায পড়ে………আসছি আমি….”
মিষ্টি হেঁসে নৌশিন বললো,
“আচ্ছা…….”
নৌশিন ভাবছে”আসলেই সে কত বড় ভাগ্যবতী…..কয়টা মেয়ের কপালে এতো ভালো স্বামী জোটে!!!!”……………….
আল্লাহ্র কাছে শোকরিয়া আদায় করছে নৌশিন।
দোয়া করছে তার স্বামীর জন্য।
আল্লাহ্ যেনো তার স্বামী সব সময় বিপদ-আপদ থেকে দূরে রাখে।সারা টা জীবন নিজের স্বামীকে ভালোবেসে,সেবা করে কাটিয়ে দিতে পারলেই সার্থক হবে নৌশিন।উদ্দশ্যে সফল হবে নারীরূপী জন্মের।
নয় তারিখ নৌশিনকে বাসায় নিয়ে আসে সাদাদ।নৌশিনের খুশি যেনো আর ধরে না।
সাদাদের মা নৌশিন বাসায় আসবে শোনে সকাল থেকে সারা বাড়ি নিমাইল দিয়ে বেশ কয়েকবার করে ধুইয়েছে।
যাতে নৌশিনের পায়ে কোনো প্রকার জীবাণু না লাগে।
ঐ হাসপাতালে নৌশিনের প্রিয় সব খাবারের তালিকা জেনে নিয়ে রান্না করেছিলো।
অবাক হয়েছিলো এটা ভেবে,
‘আজকের আধুনিক যুগে রাজধানীতে থেকেও কারও এসব ভালো লাগতে পেরে ভেবে’।
সত্যি বলতে সময় আর স্থান কোনো বিষয় না,মাটির প্রতি ভালোবাসা টাই মূল কথা।
সেটা থাকলে আমেরিকা বসেও লেবু পাতার গন্ধের জন্য মন কাঁদে।পান্তা-পিঁয়াজের লোভ জাগে মনে।খিঁচুরি-ইলিশ ভাজা আর সাথে বেগুন বিহারের আবাশে চোখে পানি আসে।যখন বৃষ্টি হয় মনে হয়,হৃদয় পুরে খাই।পেট তো বার্গারেও ভরে কিন্তু হৃদয় কি আর ভরে নাকি!!!হৃদয় তো চায় মাটি!!!খাটি ঘ্রাণ………….
নৌশিন আজ আগের চেয়ে ভালো হাঁটতে পারছে।তবুও বেশি ভালো ভাবে না।আস্তে আস্তে পা ফেলছে।যাতে পায়ে বেশি চাপ না লাগে।এমনিতে শুকনা,আর এতো দিন হসপিটালে অসুস্থ অবস্থায় থেকে শরীর টা আরও নেতিয়ে গেছে।রাফসা সিরি দিয়ে রোমে যাওয়ার জন্য সাহায্য করলো নৌশিনকে।হাত-মুখ নিতে বললো কিন্তু নৌশিন গোসল করার জন্য উঠে পড়ে লাগলো।এমনিতে যা খুতখুতে নৌশিন।এতো দিন সাদাদের ভয়ে হসপিটালের পরিবেশে ছিলো শুধু।ঠিক মতো বেশি পানি দিয়ে গোসলও করতে পারে নি।
“এখন সাদাদ রোমে এসে যদি দেখে তুই সাওয়ারে,তাহলে রাগারাগি করবে,একবার তো করেছিস গোসল হসপিটালে।।।কাল করিস…..”
“প্লিজ,ভাবী……আমার শরীর টা না আমার কাছেই হসপিটাল হসপিটাল গন্ধ করছে……একটা ভালো সাওয়ার নিলে আমার অনেক ফ্রেস লাগবে আর শান্তিতে রাতে ঘুমাতেও পারবো…..”
“আচ্ছা….ঠিক আছে যা…..তবে তাড়াতাড়ি করিস….বেশিক্ষণ থাকলে আবার ঠান্ডা লাগতে পারে….বেলা শেষের দিকে…..”
“ওকে……আচ্ছা!!অরূপ কোথায়??ওকে তো দেখলাম না……”
“অরূপ বায়না করছিলো ওর নানু বাড়ি যাওয়ার জন্য তাই তোর ভাইয়া সকালে দিয়ে এসেছে……….রাতে আসার সময় নিয়ে আসবে…….”
“ওরা না সিলেটে???”
“পাপা আর মা এখানে দু তিন মাস যাবত আছে….ঢাকার বাড়িতেই…..দাদীর শরীর টা তো ভালো নেই বেশি তাই…..”
“ওহ…..তুমি তো দু মাসে একবারও গেলে না ওরা সবাই যেহেতু ঢাকায়???”
“তুই যা তো গোসল কর……পরে কথা হবে…….”
“আচ্ছা…..যাচ্ছি……..”
নৌশিন পাক্কা পঁয়তাল্লিশ মিনিটের একটা লম্বা সাওয়ার নিয়ে বের হলো।রোমে এসে দেখে সাদাদ খাটের উপর বসে আছে।নৌশিন রোমে ডুকছে বুঝতে পেরে সাদাদ তাঁকিয়ে আছে নৌশিনের দিকে।
নৌশিন ভয়ে শেষ!!!সাদাদ যেভাবে তাঁকিয়ে আছে!!!!
মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই গিলে খাবে।
নৌশিন সাদাদের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে সাবধানে পা ফলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসলো।
অবেলায় গোসল করছে তাই হিটার অন করে…..চুল গুলো শুকাতে লাগলো।
আর মনে মনে আল্লাহ্কে ডাকছে যাতে করে সাদাদ রাগারাগি শুরু না করে।
হঠাৎ করে নৌশিনের হাত থেকে হিটার টা অন্য কেউ নিয়ে নেয়।আয়নায় দেখতে পেলো নৌশিন,এটা আর কেউ নয় তার সাদাদ।
নৌশিনের চুল শুকিয়ে দিচ্ছে সাদাদ,কিন্তু কোনো কথা বলছে না।নৌশিন খুব বুঝতে পারছে যে সাদাদ রাগে ফায়ার।
সাদাদ নৌশিনের চুলগুলো শুকিয়ে দিয়ে,ফ্লোরে হাঁটু গেরে বসলো।নৌশিন বোধহয় খুব ঘষামাজা করেই গোসল করেছে আজ।ক্ষত পায়ের বেশ সাবান লাগিয়েছে,দেখেই বুঝতে পারছে সাদাদ।
কটনে সেভলন লাগিয়ে মুছতে নিলেই পুরা চামড়া গুলো উঠে আসছে।
সাদাদের রাগ আরও বেড়ে গেলো।এই মেয়ে টা সুযোগ পেয়ে ইচ্ছা মতো সাবান লাগিয়েছে পায়ে।ডক্টর বার বার বলেছিলো পায়ে বেশি সাবান না লাগাতে।তাতে কাঁটা অংশে প্রবলেম হতে পারে।
সাদাদ নৌশিনের দিকে মুখ খুললো এবার,
“বেশি বুঝো তুমি তাই না?????আধা ঘন্টা যাবত রোমে এসেছি…..এতোক্ষণ লাগে সাওয়ার নিতে……সারা শরীরে সাবান তো দিয়েছোই ইচ্ছা মতো এই পা টাও বাকী রাখো নি………কাল গোসল করলে কি হতো???হসপিটালে হয় নি গোসল!!!এক ট্যাঙ্ক পানি দিয়ে সাওয়ার নিতে হয় তোমার!!!!কি করেছো পা টা………..দেখি নড়বে না একদম।।।।কাজ করতে দাও……..”
“উহু……ব্যাথা পাই তো……”
“সেটা সাবান লাগানোর সময় মনে ছিলো তোমার!!!!…….”
সাদাদ নৌশিনের পায়ে একবারে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে রোম থেকে বেরিয়ে যায়।
সাদাদ রোম থেকে চলে যাওয়ার পর নৌশিন হাঁসতে শুরু করে।বেশ লাগছিলো সাদাদের রাগী মুখখানা।
বেশ কিছক্ষণ পর সাদাদ কফির মগ হাতে রোমে ডুকলো।
নৌশিনের পাশে বসে বললো,
“এখন,কেমন লাগছে??”
“ভালো……”
“তাহলে কফিটা খেয়ে নাও….ঠান্ডা কেটে যাবে…..”
“তুমিও খাও……শেয়ার করে খাবো দুজনে…….”
“ওকে……..(কফিতে চুমুক দিয়ে)……..এবার তুমি খাও…..”
মুঁচকি হেঁসে নৌশিনও কফির মগে চুমুক দিলো।
দুজনে শেয়ার করে শেষ করলো কফিটুকু।
“এখন,চুপচাপ শুয়ে থাকবে…..মাগরিবের আযান দিলে জাস্ট ওঠে নামায পরবে…..আমি বাইরে যাচ্ছি,নামায পরে একেবারে আসবে……”
মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো নৌশিন…..সাদাদ নৌশিনের দু গালে হাত রেখে কপালে চুমু খেয়ে বললো,
“যা রাগ উঠে গিয়েছিলো না!!!!’ব্যাথা পাই’ বলে দিয়েই বেঁচে গেছেন……”
মুঁচকি হাঁসলো নৌশিন সাদাদের কথায়।
রাতে খাবারের সময় সবাই এক সাথে। আজ বেশ কয়েক দিন ধরে সাদাদকে দেখা হয়ে উঠে নি নৌশিনের।এ কয়েক দিনে রিদির বেশ পরিবর্তন হয়েছে।কেমন একটা চুপচাপ হয়ে গেছে।আগের মতো কারও সাথে রাগারাগি করে না।আর রাগারাগি তো পরের কথা মন খোলে কথাও বলে না।নিজের কেয়ারও করছে না ঠিকমতো।রিং পড়ানোর দিন ওর বাবা মা এসেছিলো।পরের দিন ওকে নিয়ে বাসায় যেতে চেয়েছিলো ওরা,কিন্তু রিদি কাজের দোহায় দিয়ে যায় নি।
সবার আগে রিদি খাওয়া শেষ করে নিজের রোমে চলে যায়।
বেশ অবাক হয় সাদাদ,কারণ রিদি কখনো এমন করে না।
তবে অনেকটা ভালোও লাগে সাদাদের।সাদাদও সবার মতো চায় রিদি সুখে থাকুক।তাঁর পেছনে পড়ে না থাকে নিজের মতো করে বাঁচুক।
“ভাবী,অরূপ কোথায়????”
রাফসা গম্ভীর গলায় বললো,
“তোর ভাইয়াকে জিঙ্গেসা কর…….”
সাদাদ সহ সবাই সাদের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
“সাদ,তুই কিভাবে করলি এই কাজ????দাদুভাই থেকেছে কখনো ওর মা কে ছাড়া???রাতে উঠে কান্না কাটি শুরু না করলেই হয়………..কি যে করিস না তুই…..”(প্রাপ্তির বাবা)
“মানে???অরূপ কোথায়????”(সাদাদ)
“সাভারে,রেখে এসেছে ওনি…..দরদ যে বেশি ওনার…..”(রাগে গজগজ করে উঠলো রাফসা)
এই মুহুর্তে রাফসার ইচ্ছা করছে সাদের মাথায় বাসার সব প্লেট গুলো এক এক করে ভাঙতে।লোক টা কি!!!!ছোট বাচ্চা ছেলে নানা-নানির কাছে রেখে এসেছে ঠিক আছে কিন্তু রাতে নিয়ে আসার কথা-সেটাও করে নি।নানা নানির কাছে আছে…….ভালোই আছে।
কিন্তু রাফসার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।জীবনে প্রথম তাঁর ছেলেকে ছাড়া ওনি পুরোটা দিন কাটিয়েছে আর এখন সারাটা রাত ওর বুকবুক খা খা করবে।নৌশিনের সাথে একদিন অর্ধেক রাত ছিলো তাতে কত কষ্ট হচ্ছিলো।আর এখন ছেলে বাসাতেই নেই।
“বউ মা,ঠিক আছে তো দাদুভাই…….মন খারাপ করো না”(সাদাদের বাবা)
সবার খাওয়া প্রায় শেষ…….
“বউ মা খেয়ে নাও……আর তোমার বেশি খারাপ লাগলে ফোন করে কথা বলো দাদুর সাথে……”(সাদাদের মা)
“ঠিক আছে মা……”
সবাই খাওয়া শেষ করে যে যার রোমে চলে যায়।সাদাদও নৌশিনের জন্য খাবার টা উপরে নিয়ে যায়।
কিন্তু খাওয়া শেষ হলেও সাদ এখনো টেবিলে বসে আছে।
এক ধ্যানে তাঁকিয়ে আছে রাফসার দিকে।রাফসা খেয়াল করছে সাদকে কিন্তু তাতে ওর যায় আসে না।মাথা প্রচন্ড গরম হয়ে আছে ওর।
রাফসা সব কিছু ঠিক ঠিক সাদকে রেখেই উপরে চলে যায়।এমনকি রাতের খাবার টা পর্যন্ত খেলো না।বিকালেও খেতে পারে নি।ছেলেকে ছাড়া সকালেও খেলেও বিকাল থেকেই থাকতে পারছে না আর।
রাফসা একপাশ হয়ে একটা পাতলা কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে।হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে রোমে আসে সাদ।
রাফসার পাশে বসে,কাঁধে হাত রাখতেই রাফসা ছিটকে সরিয়ে দেয় সাদের হাত।
“খেয়ে নাও…….কাল সকালে গিয়েই নিয়ে আসবো তো……থাকুক না একদিন….ওর নানা নানির কাছেই তো আছে……..”
“………….”
“উঠো………সরি আমি……না খেয়ে থাকবে তাই বলে…….”
“খাবো না আমি…..”(কাঁদতে কাঁদতে বললো রাফসা)
“এই এই…..কাঁদছো তুমি!!!!!ওয়াট দা রাফসা!!!!উঠো…..”
সাদ জোড় করে রাফসাকে উঠিয়ে বসালো।চোখ ফুলে আছে রাফসার তার মানে অনেকক্ষণ যাবত রাফসা কাঁদছে।
“ওহ্….মাই গড!!!!!!এভাবে কাঁদো তুমি ছেলের জন্য……”
“ওকে ছাড়া কখনো থেকেছি আমি????”……..
!!!!!
“কাল সকালে গিয়ে নিয়ে আসবো তো……”
“লাগবে না আমার,সকালে তো আমিও যেতে পারবো…. “তাহলে যাও না কেনো???দু মাস হলো তোমার পাপা,মা ঢাকায় আছে,একবারের জন্যও বাসায় যাও নি….অথচ আগে সিলেট যাওয়ার জন্য কত বায়না করতে…..এক মাসও যেতে পারতো না,পাপা-মা-দাদী কে দেখার জন্য সকাল বিকাল বলাবলি করতে…..এখন কি হয়েছে রাফসা?????বলো??”
ডুঁকরে কেঁদে উঠে রাফসা।
জড়িয়ে ধরলো সাদ,
“আমি জানি,বাবা একটু রাগী,তোমাকে কেস উঠানোর ব্যবস্থা করার কথা বলা হলে তুমি বাবাকে না করে দিয়েছিলে।তাই বাবা একটু রেগে আছে।সেজন্য তুমি যদি মন খারাপ করো তাহলে ওনাদের কত খারাপ লাগতে পারে ভাবো তো।
জানি কষ্ট টা তোমার সবচেয়ে বেশি হয় এই ব্যাপার টাতে।তোমাকে সান্তনা দেওয়ার অধিকার আমারও নেই।তবে কি জানো!!!তুমি তো আমার লাইভের হাফ পার্ট,তোমার কোনো কারণে কষ্ট হলে তো আমারও ভালো লাগে না।
কাল সকালে গিয়ে বাবা-মায়ের সাথে দেখা করে ছেলেকে নিয়ে আসবো দুজনে।”
রাফসা সাদের বুক থেকে মাথা তুলে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“যে দিন অরূপের জ্বর হলো,ঐ দিন পাপা বল আমি নাকি বোরিং!আমাকে ডাক্তার বানিয়ে ওনি নাকি ভুল করেছেন।যেখানে নিজের বাবা ই মেয়ের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করে সাধারণ মানুষ কেনো করবে না?????”
কাঁদার জন্য বারবার কথা গুলো আটকে আসছিলো রাফসার।সাদ কি বলবে রাফসাকে বুজতে পারছে না।রাফসার বাবা এই কথাগুলো রাফসাকে না বলতেই পারতেন।মানুষ টা ছোট বেলা থেকে কষ্ট করে মানুষ হয়ে এক রকম বদমেজাজি মানুষ হয়ে উঠেছেন।তবে মন ভালো থাকলে ওনার মতো ভালো মানুষ আর দুটো হয় না।
“রাফসা,বাবা রাগী একটু!!!রাগে বলেছে।তুমি সেসব কথা ধরে বসে থাকবে।মা কত বার ফোন করলো তোমার কথা বললে না,বাসায় আসতে চাইলো সে দিন তবুও বারণ করলে,
তোমার যেমন তোমার ছেলের জন্য কষ্ট হয়।তোমার মায়েরও তো তার একমাত্র সন্তানের জন্য একরকমের কষ্ট টাই হয় রাফসা।এই যে দেখো না,তুমি অরূপ কে ছাড়া কোনো দিন থাকো নি।আমি থাকেছি……বাট বিশ্বাস করো,খুব মিস করি তখন ওকে।দু-তিন ই তো দেশের বাইরে যাই তবু ছয় সাত মাসে একবার।মনে হয় কলিজা রেখে যাচ্ছি।ঘুমের ঘুরে কেউ ওপাশ থেকে তার মাকে টপকিয়ে যখন তার বাবার বুকে না শুয়ে থাকে তখন আমারও তো কষ্ট হয়।তেমন তোমার বাবারও হচ্ছে,নিজের মেয়ের গায়ে সাদা এপ্রোণ না দেখতে পেয়ে ওনার অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে। আর যেটা ওনি প্রকাশ করতে পারছেন না।
তুমি-আমি একদিন আমাদের ছেলেকে না পেলে হাঁপিয়ে উঠছি।আর ওনাদের কথা ভাবো তো,বাসায় কেউ নেই…..সারাদিন দু জন আর দাদী তো অসুস্থ,একমাত্র অবলম্বন তুমি।আর সে তুমিই কি না ওদের উপর অভিমান করে আছো।”
“আমার কি কষ্ট হয় না????ইচ্ছে করে না ওদের দেখতে???”
“বোকা মেয়ে,ছেলের মা হৈ গেছো আর এভাবে কাঁদছো!!!!একটা পিক তুলে রাখি বলো….তোমার ছেলে আসলে দেখানো যাবে-তাঁর মা কিভাবে চোখের পানি আর নাকের পানি এক করছে……..হা হা হা হা…..”
রাফসা নিজের চোখ মুছে সাদের পায়ে আস্তে একটা চড় দিয়ে বললো,
“বাজে লোক……..!!!
আমি যাবো কালকে…..”
সাদ কিছু না বলে আবারও পরম আবেশে বুকে জড়িয়ে নিলো রাফসাকে।কিছু সময় পর বললো,
“অবশ্যই যাবে,আমিও যাবো…কতদিন বউয়ের সাথে নিজের শশুড় বাড়ি যাই না।কব্জি ডুবিয়ে খাবো কাল।শশুড় বাড়ির খাবারের মজা টাই আলাদা।আর সেখানে জামাই যদি হয় মাত্র একটা…….”
“ধুর……ওনি আছে ওনার খাওয়া নিয়ে…….ফোন করবো মাকে,অরূপ কি করছে কে জানে…..”
“ম্যাডাম,আপনার ছেলেকে কেউ অযত্নে রাখে নি….আগে খেয়ে নাও…”
“না আগে কথা বলে নিই….”
“ওকে এজ ইউর খায়েশ…….”
রাফসা বেশ কিছুক্ষণ ওর মা আর অরূপের সাথে কথা বললো,
“হয়েছে,শান্তি এবার???ছেলের সাথে কথা হলো তো!!!এবার খায়ে নাও”
“ভাবতে পারছো তুমি আমার অরূপ,বাড়ি ছেড়ে…বাবা মাকে ছেড়ে দিব্বি নানা-নানীর সাথে হাঁসি ঠাট্টায় মেতে আছে….কত বড় হয়ে গেছে আমার ছেলে”
“হ্যাঁ……হবেই তো….আর কিছু বছর যাক দেখবে বউ নিয়ে আলাদা ফ্লেটে উঠবে…..বাবা-মায়ের ধার ধারবে নাকি!!!!”
সাদের এমন কথায় রাফসার বুক টা অজানা একটা ভয়ে ধুক করে উঠলো।সত্যিই কি ওর ছেলে বড় হয়ে আলাদা ফ্লেটে উঠবে???না না তা কি করে হয়????ছেলের বাবা তো এমন করে নি।
তাহলে ছেলে কেনো করবে??
“এই শোনো আবুল তাবুল কথা বলবে না,আমার ছেলে মোটেই এমন করবে না,যথেষ্ঠ ভালো হবে ও।মা কে সম্মান দিতে যানে।আর বউ তো বউয়ের জায়গায়।তুমি তো আলাদা হয়ে যাও নি বিয়ের পর তাহলে তোমার একমাত্র ছেলে কেনো আলাদা হতে যাবে যতসব ফালতু কথা…..”
“আরে চটে যাচ্ছো কেনো??আজকাল যা হচ্ছে আশে পাশে তাই বললাম আর কি।তবে আমারও বিশ্বাস আমাদের ছেলে তেমন কিছু করবে না।ওর মা বাবা তো আর চিপ মাইন্ডের না এমন কি আমাদের বংশে কারও বউয়ের এমন চিপ মাইন্ড ছিলো না যে হাসবেন্ডকে নিয়ে আলাদা সংসার করবে।”
রাফসা সাদের কিছুটা কাছে গিয়ে বললো,
“এই বংশ তাই না??”
“হুম…..রক্ত বলেও কিছু একটা হয়……বৈশিষ্ঠ্য তো থাকবেই…..”
“আচ্ছা!!!!আমাদের ছেলের বউ যদি অন্য রকম মানসিকতার হয়,তাহলে??”
“তাহলে আর কি বুড়ো বয়সে তুমি আর আমি…..
আর ছেলে বউয়ের সাথে মর্ডান ফ্লেটে…….”
“না…….”
“আস্তে…..এতো জোরে বলছো যেনো তোমার ছেলে আজকেই বউ নিয়ে ভাগলো!!!”
“না না…..শোনো না….আমার মাথায় না একটা আইডিয়া আছে,বংশেরও যেহেতু একটা ব্যাপার আছে।তাহলে না আমি আমার ছেলেকে বাইরের কোনো মেয়ের সাথে বিয়ে দিবো না।”
“মানে???”
“আরে মানে বুঝো না,সাদাদের মেয়ে হলে ওর সাথে আমি আমার অরূপের বিয়ে দিয়ে দিবো।ব্যাস,হয়ে গেলো।এক রক্তের ছেলে মেয়ের সাথে বিয়ে।আর আমার যা বিশ্বাস নৌশিনের পেটের মেয়ে কখনো ছোট মন মানুষিকতার হতে পারে না।”
রাফসার কথা শোনে তো সাদ হা হয়ে আছে।যার এখনো বাচ্চা হওয়ার খবরই নাই তার মেয়ের সাথে নাকি ছেলের বিয়ে।
“আরে এমন হা করে আছো কেনো,নৌশিন খুব তাড়াতাড়ি মা হবে।আর হাঁসির কথা কি জানো!!!নৌশিন একটা বাচ্চা পাগলি,বিয়ের পর থেকেই সাদাদের মাথা খেয়ে ফেলছে বাচ্চার জন্য।আর সাদাদ নৌশিনের কথা ভেবে রাজি ই হচ্ছিলো না।বাট নৌশিন হাল ছাড়ার পাত্রী না,বলে কি না “বিয়ের দরকার নেই,বেবী হলেই হবে”।।।।।ভাবতে পারছো???…..হা হা হা হা…বাধ্য হয়ে সাদাদ রাজি হয়েছে নৌশিনের পরীক্ষার পর।আমার মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি একটা সুখবরব পাবো……”
সাদ কিছু বললো না।রাফসার কথা শোনে মিটমিট করে হাঁসলো শুধু।
রাফসার হাঁসিটা সাদকে খুব কাছে টানছে।সাদ আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে রাফসার দিকে।
রাফসার কমড়ে হাত রেখে নিজের একদম কাছে নিয়ে এলো।
রাফসা বুঝতে পারছে,সাদের মাথায় কি চলছে।ওরও একটা ইনটেনশন কাজ করছে।প্রিয় মানুষের কাছে থাকলে যা হয় আর কি।
“ম্যাডাম,সাদাদের মেয়ে হবে কি না জানি না।তোমার ছেলের সাথে বিয়ে দিবে কি না সেটাও জানি না।আমি তো শুধু এটা জানি,আজ তোমাকে আমি শেষ করবো!!!খালি ছেলে ছেলে তাই না,ছেলের বাপের খবরও নাও….অনেক দিন পাই না কাছে।আজ তো তোমার পেটে মেয়ে আনবো আমি।আমার যে রাজকন্যা চাই সেক্সি লেডি।ইশশশশ লজ্জা পেলে না আরও সেক্সি লাগে……. ”
রাফসার ভেতরে রকেট গতিতে লজ্জার সমপ্রবাহ হচ্ছে।কি বলছে সাদ এসব।
লজ্জায় মুখ লুকায় সাদের বুকে।জড়িয়ে নিলো সাদ রাফসাকে।চুলগুলো খুলে দিয়ে একপাশ করে মুখ ডুবিয়ে দিলো ঘারে।
ঘাড়ে ঠোঁট রেখেই বললো,
“আমার রাজকন্যা চাই রানী……”
কাঁপছে রাফসা।সাদ রাফসাকে ধীরে ধীরে শুইয়ে দিলো।
নিজের টি শার্ট টা ছুড়ে ফেলে হামলে পড়লো রাফসার উপর।ঠোঁট আকড় নিলো দুজন দুজানার।
গাল,ঘাড়,গলার কমশ্র নিচে আদরে ভড়িয়ে তুলছে।
হাতের প্রতিটা আঙুলের ভাঁজে আঙুল গুছে দিয়ে,অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে রাফসার দিকে।
“সাত বছর আগে যে ভাবে প্রথম রাতে ঘায়েল করেছিলাম তোমায়।আজ ঠিক সে ভাবে শেষ করবো আমার ডাক্তারনীকে…..”
কথাটা শেষ করেই আঁচল টা সরিয়ে নিলো।ভালোবাসায় মাতাল করে দিচ্ছে রাফসাকে।
চোখ বন্ধ করে আছে রাফসা।সাদ রাফসার উপর থেকে সরে গিয়ে পাগলের মতো রাফসাকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিলো।ব্লাউজের পেছনের দিকের বোতাম গুলো খুলতে খুলতে বললো,
“খাও নি তো তুমি রাতে আজ।এনেছিলাম তো খাবার,ছেলের সাথে কথা বলেই সময় নষ্ট করেছো।আমার কি দোষ বলো??আমি যে খাবারের লোভ সামলাতে পারছিলাম না আর।”
হোক শেষে ফিতা একটানে খুলে নিয়ে ব্লাউজ টাও ঘরের কোনো কোণায় ছুড়ে ফেললো সাদ।
নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নিলো রাফসাকে।
“ইশশশশ,আমার ডাক্তারনী আগের চেয়ে আরও বেশি সুন্দর আর সেক্সি হয়ে গেছে তো….”
উথাল পাতাল ঢেউ বয়ে যাচ্ছে রাফসার বুকে।আর সাদ হয়ে উঠেছে আরও অশান্ত।
“আজ,আমি তোমার পোশাক হবো জানপাখি….আরও বেশি আদর করবো……”
গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো আবারও।রাফসার পাগল হয়ে যাচ্ছে সাদের ভালোবাসায়।
সাদ গলার নিচেও পাগলের মতো চুমু,লেহন,বিট সব করছে।যেনো কত দিনের তৃষার্থ আত্না।
রাফাসা নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে সাদের পিঠে খাঁমচি দিচ্ছে।এতে সাদ আরও নেশাতুর হয়ে যাচ্ছে……।
এক সময় সাথ প্রশ্ন করে রাফসাকে,”তুমি কি আমার রাজকন্যা এনে দিতে চাও???আমি চাই তোমার ছেলের আদরের একটা ছোট বোন হোক…..বলো দিবে তো????”
রাফসা লজ্জা শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই।যা করছিলো সাদ,তাতে তো যে কোনো মেয়েই শেষ হয়ে যাবে।
কিন্তু রাফসা যে সাদের করা প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারছে না গলা আটঁকে আসছে ওর।
সাদ আবার একই প্রশ্ন করলে রাফসা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়।
সাদ মুঁচকি হেঁসে আবারও রাফসাকে ভালোবাসায় হারাতে থাকে।দু জনে মেতে উঠে ভালোবাসার খেলায়।
হারিয়ে যাচ্ছে অতল ভালোবাসার সাগরে।
কোনো একটা জানা উদ্দশ্যে পাড়ি দিচ্ছে ভালোবাসার সেরা মুহুর্তগুলো।ছাড়িয়ে যাচ্ছে সকল অনুভূতি গুলোকে।.
আর এদিকে,নৌশিন সাদাদও যেনো আজ দু জনের মাঝে নেই।
আজ নৌশিন স্বইচ্ছায় তার সাদাদের কাছে আবদার করছে।তার অনেক আদর চাই।ব্যাস সাদাদের জন্য তাই যথেষ্ঠ ছিলো।সে ও আজ তাঁর প্রাণ প্রিয়াকে ছুঁয়ে দিচ্ছে মনের মতো করে।হারিয়ে যাচ্ছে মহাসুখে।প্রেমঘোরে মাতোয়ারা হয়ে আছে দুজনেই।💜💜💜💜
ইশশশ!!!দুটি জুটির ভালোবাসা যদি এখানেই থমকে যেতো।শেষ যদি না হতো খুব ভালো হতো।
💜💜💜💜💜💜💜💜
তবে এ বাড়িতে এতো সুখের মাঝেও একজনের মনে আগুন জ্বলছে।
রিদি!!
ভাবতে পারছে না,সে কি করবে।
আজও পরশ রিদিকে জ্বালিয়েছে অনেক।রিদি যেনো বাঁধা দিতে পারছে না পরশকে।এখনো বার বার ফোন দিচ্ছে পরশ।বার বার কেঁটে দিচ্ছে রিদি।রাগে এক সময় ফোন টাও অফ করে দিলো।রিদি লাইট বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে পড়লো।ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে।কারণ ও যে তার সাদাদকে আর কোনো দিন পাবে না সেটা খুব ভালো করে বুঝে গেছে।
হঠাৎ প্রাপ্তির জন্মদিনে,নৌশিন যখন কেক ধোয়ার জন্য বাথরোমে গিয়েছিলো সে কথা মনে পড়লো।ধোয়ার প্রয়োজন পড়ে নি নৌশিনের।সাদাদ লেহন দিয়েই সব নিজের মাঝে নিয়ে নিয়েছিলো।আর পরশসুখে সাদাদকে শক্ত করে আকঁড়ে ধরেছিলো নৌশিন।
প্রেমঘোর পর্ব ৭১+৭২+৭৩+৭৪+৭৫
হ্যাঁ সে দিন রিদিই ছিলো।
বাথরোমে ওদের প্রেম টা রিদিই দেখেছিলো।নৌশিন বাইরে তাঁকানোর সাথে সাথে পালিয়ে এসেছিলো।
রোমের দরজা বন্ধ করে কেঁদেছিলো অনেক।কি করতো বেচারী!!!খুব যে ভালোবাসে সাদাদকে!!!
সে দিনের কথা ভাবতেই চোখে আবারও অশ্রুকণা এসে ভীর করলো।……