প্রেমঘোর পর্ব ৮৯+৯০
নার্গিস সুলতানা রিপা
পরশ রিদিকে কোল থেকে নামায়।অবাক হয়ে তাঁকিয়ে আছে রিদি।কি করবে পরশ??কি এমন বলবে যার জন্য এতো দূরে নিয়ে এলো???
পরশ রিদিকে দেখছে।খুব সুন্দর লাগছে আজ।কালো রঙের শাড়িতে রূপ যে উপচে পড়ছে একদম।
তার উপর রাফসা খুব সুন্দর করে সাজিয়েও দিয়েছে,যেনো পরশ চোখ না সরাতে পারে।
ঠিক তাই হয়েছে,পরশ একরকম ঘোরে আছে রিদিকে দেখার পর থেকেই।
হাঁটু গেড়ে বসে পরে পরশ রিদির সামনে……রিদি এতে আরও বেশি অবাক হয়ে যায়।মাটির উপরও পরশ হাঁটু রাখতে পারে ওর জন্য??
ভাবতেই চোখ ভিজে আসছে রিদির।
পরশ পকেট থেকে একটা ডায়মন্ড একটা ডায়মন্ড বেস বের করে রিদির ডান হাতে পড়িয়ে দিলো।
গভীর ভাবে চুমু খায় হাত টা।
কেঁপে উঠে রিদি।
আর চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।
না কোনো ভয়ের না কোনো কষ্টের,মহাসুখে আত্মহারা রিদি আজকে….তাই আবেগময়ী চোখের নোনা জলও ভেসে যাচ্ছে…..গাল বয়ে গলাতেও।
পরশ উঠে দাঁড়ায়,রিদির চোখ মুছে দিলো।গালের দু পাশে হাত রেখে বলা শুরু করে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ডোন্ট ক্রাই…….আজ তো প্রথম হাঁসি মুখে দেখেছিলাম তোকে…..তুই তো জানিস ই না।আজ এই দিনে আট বছর আগে তোকে ভার্সিটিতে প্রথম দেখেছিলাম তো…….বিশ্বাস কর থেমে গিয়েছিলাম তোকে দেখে ঐ দিন….আজও ভুলতে পারি না তোর ঐ দিনের হাঁসি মাখা মুখ টা…..সাহস থাকলে ঐ দিন ই বলপ দিতাম…..কিন্তু তখন বললে আজ তোকে এই ভাবে নিজের করে পেতাম না…..”
রিদি ঝাঁপিয়ে পড়ে পরশের বুকে…..ডুকরে কেঁদে উঠে।
সাদাদকে পায় নি বলে রিদি আল্লাহকে অনেক প্রশ্ন করতো কিন্তু আজ বুঝতে পারছে,আল্লাহ ওর জন্য পরশকে এনে দিয়েছে।
যে কি না সাদাদকেই সরিয়েই দিয়েছে ওর কল্পনার জীবন থেকে।
সমস্ত আবেগ জুরে শুধু নিজের জায়গা টা করে নিয়েছে।
পরশের শার্ট খামচে ধরে কাঁদছে রিদি।
পরশ শক্ত করে ধরেছে রিদিকে।চোখ বন্ধ করে নীবরভাবে দুজন দুজনকে উপভোগ করছে।
এখন আর কাঁদছে না রিদি।
পরশের বুকে শান্তির আভাস খুঁজে পেয়েছে।
পরশ রিদির দু কাঁধে হাত রেখে বুক থেকে সরিয়ে দাঁড় করায়।
“ম্যাডাম…..নিজের সব টা তো পেয়ে গেলেন মনে হচ্ছে…..এবার আমার কিছু করেন……..”
“মানে?????”
পরশ মাটির ঘরে রাখা চৌকি টা তে গা এলিয়ে দিয়ে বললো,
“কতক্ষণ যাবত ড্রাইভ করলাম রে বউ…..আম সো ট্রায়াড……কিছু একটা করো……”
রিদি তো ভ্যাবাচেকা।এসব পারে না ও।মানুষের সেবা টেবা তো করে নি কোনো দিন।বুঝে না সে রকম কখন কি করতে হয়।তাই বাধ্য হয়ে প্রশ্ন করে,
“পরশ,কি করবো আমি???”
“কি করবে মানে,ধরো আমি অফিস থেকে ট্রায়াড হয়ে এসেছি…..আমাকে কি খাওয়াবে তখন তুমি???”
“আমি আবার কি খাওয়াবো আপনাকে…..আপনি নিজে পানি নিয়ে খেয়ে নিবেন…..তারপর কাউকে দিয়ে জুস বানিয়ে খাইয়ে নিবেন…..ব্যাস হয়ে গেলো…….আমি তো তাই করি…..”
উঠে বসে পরশ।হা করে তাঁকিয়ে আছে রিদির দিকে।রিদি পরশের চাহনীকে কোনো রূপ পাত্মা না দিয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়।
“দেখি,সরে বসেন….ভালো করে শুই একটু….আমিও তো ট্রায়াড…….”
“হ্যায়…….কাউকে দিয়ে বানিয়ে নিবো মানে???তুমি কি একটু শরবত করতে পারো না নাকি??”
“ও হ্যালো মি. পরশ রিদি পারে না এমন কোনো কাজ নেই……”
“আচ্ছা!!!!!”
“ইয়াহ………”
পরশ রিদিকে একটানে উঠে বসায়।
“আওওওওও…….”
“যাও……..”
“উহুু….হাতুরীর মতো হাত……কোথায় যাবো???”
“ঐ দিকে রান্না ঘর……যাও লেবুর শবরত করে আনবে…..আর শোনো টক আর ঝাল যেনো হয়।।কাঁচা মরিচের ফ্লেভার দিও একটু……”
“কিহ????”
“হ্যাঁ……আমি একটা ডায়মন্ড বেস দিলাম….তুমি একটু শরবত করেও খাওয়াতে পারবে না???”
“কি আপনি এই গিফ্টের বদলে আমাকে খাটাতে চাইছেন???
আমি কি চেয়েছিলাম এটা???”
“বা রে চাইবে কেনো??আমি তো চাইলাম…..দাও আমাকে…..”
“পারবো না আমি……আর শোনোন রাত তো অনেক হয়েছে বাসায় ফিরার তো নিয়ত দেখছি না আপনার।তাই আমি এখানেই শুয়ে পড়লাম…..”
“হোয়াট দা……”
“পরশ!!!!”
“যাও…….”
“চোখ রাঙান কেনো সব সময় এতো,ঘর টা তো মাটির তা রান্না ঘরও কি স্যাকেলে??”
“ম্যাম….এটা রুরাল ম্যানেজিং হোটেল একটা।একদিন এক রাতের বোকিং করতে এক লক্ষ দিতে হয়েছে আমায়।”
“কিহ????”
“হ্যাঁ…..কাপল ছিলো কয়েকটা ওদের সরাতে এতো বেশি লেগেছে না হলে এক রোমেই থাকবো তো দশ হলেও হতো….”
“পরশ!!!!তাহলে কাপল দের সরালের কেনো আপনি??”
“বারে বউ নিয়ে এমন একটা গ্রাম্য স্টাইলিস হোটেলে উঠবো….অন্য কাউকে দেখাবো নাকি??”
“বাট….. ”
“ফাইভ স্টার হোটেলের সব কানান্ট পাবে এখানে….ঐ যে দেখো…..মাটির দেওয়ালেও এসি……..”
“ভালো।আলাদা ডেকোরেশন।এখন আমাকে ঘুমাতে দিবেন আপনি।আমও সারা বিকাল গাড়িতে থেকে খুব ক্লান্ত……”
“আরে ওয়েট সুন্দরী…..আগে টক ঝাল শরবত টা তো করে আনো……..”
“ওফফফ…..যাচ্ছি তো এতো ধাক্কানোর কি আছে??”
“ওকে যাও……সব কিছু আছে রান্নাঘরে……শুধু হেল্পার ছাড়া…..”
“হ্যাঁ…হ্যাঁ….রিদি না একাই একশো…..নো নিড এনি বডিস হেল্প……”
রান্না ঘরে তো এলোই রিদি।
মাটির রান্না ঘর হওয়া সত্বেও দারুণ সব আয়োজন।
কিন্তু রিদি মনি যে রান্নাঘরের ‘র’ টাও জানে না।
সে যাই হোক রিদি কখনো হার মানে নি আর মানবেও না।
পরশের কাছে তো নাই।
শরবত!!!লেবুর শরবত।
টক ঝাল…..কোনো ব্যাপার না রিদি ঠিক করে নিবে।
অনেক ভেবে চিন্তে রিদি কল করলো রাফসাকে।
“হ্যালো…..কোথায় তোমরা?”
“ভাবী,সেটা না হয় পরে যেনো।।।আগে বলো লেবুর টক ঝাল শরবত কি করে করতে হয়???”
“কিহ???”
“হ্যাঁ ভাবী বলো না প্লিজ প্লিজ…..”
“বাট…..”
“ইশশশশ…..তুমি বলবে???নাকি আমি অন্য কাউকে ফোন করবো??”
“আচ্ছা বাবা…..বলছি বলছি………”
রাফসার কথামতো রিদি একদম পারফেক্ট লেবু শরবত তৈরী করে নিয়েছে।দারুণ দেখতে হয়েছে,যেমন টা রাফসা করলে হয়।রিদি জাস্ট বিশ্বাস করতে পারছে না,সে এতো ভালো শরবত বানাতে পেরেছে!!!
খুশি মনে পরশের সামনে শরবত নিয়ে হাজির হয়।
মুঁচকি হেঁসে পরশের হাতে শরবতের গ্লাস টা ধরিয়ে দিয়ে বললো,
“নিন,খান……খেয়ে বলুন কেমন হয়েছে…….”
পরশ রিদির দিকে তাঁকিয়ে জবাব দেয়,
“শবরত টা তো তার মালকিনের মতোই দেখতে হয়েছে।এবার দেখা যাক স্বাধ টা কেমন!”
রিদি পরশের কথায় মুখ ভেঙচি দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে যায়।
হাতের চুরিগুলো এক এক করে খোলার চেষ্ঠা করেও পারছে না।
পরশ শরবতে একটা চুমুক দেওয়া মাত্রই পিলে চমকে উঠে তার।বেশ খানিকটা গিলে নিয়েছিলো…….তাই এতো!!!!
আসলে রিদি সব ইন্সট্রাকশন মেনেই শরবত টা করেছিলো।
কিন্তু বেচারী মরিচের পেস্ট দেওয়ার সময় না চিনেই গোল মরিচের পেস্ট দিয়েছিলো।
সে তো আর জানে না কোনটা সাধারণ মরিচ আর কোনটা ধানী গোল মরিচ।ভেবেছে সব মরিচের ঝাল একই হয়।মরিচ তো মরিচ ই……।
রিদি পরশের অবস্থা খেয়াল করে নি।চুরি খোলার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে।পেছনের দিকেই কমড় টুকু দেখা যাচ্ছে রিদির।খোলা চুলগুলো জ্বালাচ্ছে খুব রিদিকে।
তাই সামনে নিয়ে নিলো।উন্মুক্ত আবেশী পিঠের সৌন্দর্যে মতোয়ারা হয়ে যায় পরশ।
নেশা লেগে যায় চোখে।
গ্লাস টা আবারও হাতে নিয়েয়ে এএক চুমুকেই গিলে নেয় সবটা।
মাথায় আগুন জ্বলছে পরশের।রাফসা বলেছিলো তিনটা কাঁচা মরিচ পেস্ট করে দেওয়ার জন্য যেহেতু চিনি দিবে তাই।
রিদিও তাই করেছে।কিন্তু মরিচ তিন টা বেশ ভালো জাতের বড় বোম্বে গোল মরিচ।
পরশের আর সহ্য হচ্ছে না।
এসি চলছে,অথচ মাথা ঘামছে।মাথায় চাপ দিয়ে বিছানায় বসে যায়।
“উহহহহহহহহ……….উফফফফ…….”
ঝালের মাত্রা এতটাই বেশি পরশ চেঁচাতে শুরু করেছে।
রিদি দৌঁড়ে আসে পরশের আওয়াজে।কি হলো হঠাৎ??
“এই আপনার কি হয়েছে????পরশ??????”
“উফফফফ……..”
বিছানায় গা মেলিয়ে দিলো পরশ এবার।চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।
“পরশ!!!!!!”
“উহহহহহু……কি দিয়েছো???”
অগ্নিমুর্তি হয়ে প্রশ্ন করে পরশ।
“পরশ আমি তো ঠিক ভাবেই করলাম……কি হয়েছে আপনার প্লিজ বলুন…….”
“ঝাল…….ও মাই গড…..হেল্প মি…….”
“পরশ আপনি তো এক চুমুক দিয়েও বুঝতে পারছেন হয়তো ঝাল টা বেশি……না খেলেই পারতেন…….”
“ও মা….?.হোয়ার আর ইউ……আআআআআওওওও………..”
পরশ উসফিস করছে…..এপাশ ওপাশ করে যাচ্ছে শুধু মাথায় হা দিয়ে।ঝাল সারা শরীর ছেয়ে গেছে এমন লাগছে ওর কাছে।
রিদি আর কিছু জানতে চায় নি।পরশের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে।পরশের মাথার দুপাশে হাত চেঁপে ধরে স্থির করার চেষ্ঠা করেই,লাল টকটকে হয়প যাওয়া ঠোঁট দুটো তে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দেয়।
সমস্ত ঝাল নিজের ঠোঁটে গ্রাস করে নিতে চাইছে।পরশও রিদির খোলা চুলে খামচে ধরে নিজেকে আবদ্ধ করতে করতে চাইছে রিদির মাঝে।
প্রায় দশ-বারো মিনিট ধরে রিদি যেনো ঝালের সাথে যুদ্ধ করে চলেছে।যুদ্ধের অস্ত্র তার নরম ঠোঁট জোড়া।প্রতিটা উষ্মতায় হারিয়ে যাচ্ছে সে নিজেও;কারণ একটাই পরশও যে রিদিকে একই ভাবে ছোঁয়ে দিচ্ছে।তীব্র ভালোবাসার প্রতিযোগীতায় মেতে উঠেছে দুজনে।
কিন্তু এটা তো হিতে আরও বিপরীত হয়ে গেছে।রিদির যে ঝাল একদম ই সহ্য হয় না।
পরশের কষ্ট লাঘব করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো….এবার তো ওর মুখও জ্বলছে।
আর জ্বলবেই তো একে তো ঝাল তার উপর পরশ নিজের ঝালের চোটে বেহুশের মতো কামড় বসিয়ে গেছে রিদির ঠোঁটের উপর।সব সহ্য করে নিয়েছে রিদি শুধু পরশের যেনো কষ্ট টা কমে।
তবে আর পাড়ছে না এখন।
ঠোঁট বোধহয় কেঁটেও গেছে অনেক জায়গায়।
পরশের উপর থেকে উঠে আসার জন্য ঠোঁট ছাড়িয়ে নিয়েও পাড়ে নি।পরশ বুঝতে পেরে যায় কি হচ্ছে,তাই তো সাথে সাথে রিদিকে বিছানায় ফেলে নিজের পজিশন টা রিদির উপর করে নিলো।
রিদি হাত পা ছুড়ার চেষ্ঠা করেও পাড়ছে না।পরশের সাথে শক্তিতে কখনো পারবে না রিদি।তবুও উঠার চেষ্ঠা করছে।পাড়ছে না তবুও…….
ঠোঁট ছেড়ে রিদির গলার ভাঁজে মুখে গুছে পরশ।নতুন জীবন পায় রিদি,এতক্ষণ দম বন্ধ হয়ে এসছিলো।
কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না রিদি।ঠোঁটে তীব্র জ্বালা করছে আর সারা শরীরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।পরশের প্রতিটা ছোঁয়ায় বিদ্যুৎ চমকে উঠেছে রিদির ভেতর বাহিরে।একের পর এক চুমু দিয়ে যাচ্ছে রিদির গলায় পরশ।রিদি সব ব্যথা উহ্য করে হারিয়ে যেতে চায় পরশের মাঝে,আকড়ে ধরে পরশকে।
দুহাতে পরশের চুল মুঠি করে নিজের গলার আরও গভীরে নিয়ে যাচ্ছে।
ঘোরে আটকে গেছে পরশ।
প্রমঘোর মাতাল হয় প্রিয়তমার গলা,ঘাড়,ঠোঁট,কানের লতিতে ভালোবাসা চিহ্ন করে দিচ্ছে।
রিদির প্রতিটা আঙ্গুলের ভাজে পরশের আঙ্গুল ঢুকানো……বিছানার উপর চেঁপে ধরে রেখেছে পরশ।
হারিয়ে যাচ্ছে রিদি।
শক্ত লৌহহ মানবের ভালোবাসার মাতলাতো গলে যাচ্ছে কাঁদার মতো কমল দেহী একটা মানবী।দু জোড়া পায়ের ঘর্ষণে সুখের দোলা বয়ে যাচ্ছে দুটি হৃদয়ে।
আঁচলে থাকা সেপটিপিন টাও পরশ মুখে দিয়ে খুলে নিলো।
চোখ বন্ধ করে আছে রিদি।
কাঁপছে রিতীমতো।পরশ মুখে তাঁকায় রিদির দিকে।
মুঁচকি একটা দুষ্টু হাঁসি হেঁসে নেয়,আর তারপর ই এক টানে কাঁধ থেকে আঁচল টা খসে পড়ে রিদির।
শার্টের বেতামগুলো এক এক খুলার সময় টুকুও হয় নি পরশের,একটানেই শার্ট টা ছুড়ে ফেলে ঘরের কোনো এক কোণায়।রিমোট হাতে নিয়ে ঘরের তাপমাত্রা টা আরোও শীতল করে নেয়।বড় আলো টাও নিভে যায়।শুধু ছোট্ট ছোট্ট মাটির প্রদীপের আলো জ্বলছে।সাথে ধুকধুক করেছে রিদির শরীরে প্রতিটা কোষও।
শাড়ীর কুঁচিগুলোও খুলা হয়ে গেছে পরশের। বাঁধা দেওয়ার নূন্যতম শক্তি টুকু রিদির শরীরে নেই।
আর থাকলেই বা?? পরশ তো ওর স্বামী।সব টা অধিকার আছে ওর।ভালোবাসার পূর্ণ অধিকার প্রাপ্ত তার।
রিদিও যে পরশের সুখে ভাসতে চায়।
কম্পন টা আরও বেড়ে যায় যখন পরশের মুখ টা রিদির গভীর নাভীতে উষ্মতা ছড়াতে থাকে।পারছে না সহ্য করতে আর।মহাপ্রলয় বয়ে যাচ্ছে সারা শরীর জুরে।
এ কোন সুখের আবাস??
ভেবে পাচ্ছে না রিদি।
পরশ নাভীর চারপাশে লেহন দিচ্ছে বাচ্চাদের মতো।বার বার শিউরে উঠেছে রিদি।
না পারবে না আর।মনে হচ্ছে মরেই যাবে আজ।কি হচ্ছে এসব।একটা ছেলে এতটা গভীর ভাবে স্পর্শ করতে পারে!!!যার ছোঁয়ায় এতটা জাদু!!!!
রাফসার সব কথা মিলে যাচ্ছে।অশান্ত হয়ে উঠেছে রিদির সব কিছু,পরশ অশান্ত করে তুলছে তাঁকে।
পরশ আর কিছু করছে না।রিদির কম্পন দেখে যাচ্ছে শুধু।দুজনের নিশ্বাস তীব্র ভারী তবে রিদির টা যেনো পরশের চেয়ে দ্বিগুণ।পরশ আবারও মুখ ডুবায় রিদির গলায়।মুখ তুলে রিদির দিকে তাঁকিয়ে আছে।কি অপরূপ মায়া,কি নেশাধরা সৌন্দর্য।
চোখ বন্ধ করা রূপসী।
এখনো চোখ খুলে নি রিদি।
তবে মনে হচ্ছে কেনো পরশ থেমে গেলো।করুক না আরও আদর।
“রিদি,ওপেন ইউর আইস…….”
এক কথাতেই চোখ মেলে তাঁকায় রিদি।
লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে।পরশের চোখের দিকে তাঁকানোর সাহস পাচ্ছে না বেচারী।
মুঁচকি হেঁসে পরশ রিদির থুতনী ধরে চোখে চোখ রেখে বলছে,
“ইউ লুকিং সো হ……”
পরশের মুখ চেঁপে ধরে রিদি….
করুণ সুরে বলে, “প্লিজ পরশ…..”
পরশ রিদির হাতটা সরিয়ে নিয়ে বললো,”কি প্লিজ জানেমন??আরও আদর চাই???”
এতো বড় অসভ্যও হয় মানুষ জানা ছিলো না রিদির।
ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো পরশকে।দ্রুত উঠে যায়।
ছিঃ….ছিঃ….শাড়ি ছাড়া।ভাবতেই কেমন লাগছে রিদির।
অন্য রোমে চলে যায় দৌঁড়ে।
একটা অজানা সুখ বয়ে যাচ্ছে রিদির মনে।মিটমিট করে হাঁসছে,চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে পরশের প্রতিটা ভালোবাসার ছোঁয়া।
যদি পরশ আবারও এসে যায়!!!এই ভয়ে তাড়াতাড়ি রোমে থাকা আলমারী টা খুললো।
মাথায় তো বাজ পড়লো মনে হচ্ছে।হোটেলের আলমারী গুলোতে আর যাই হোক এত দামী শাড়ি,গহনা,জুতো এগুলো তো অবশ্যই থাকার কথা না।কিন্তু এখানে,সব ই তো আছে।
কি করে সম্ভব এটা??
পেছন থেকে পরশের জবাবে মনে জেগে উঠা প্রশ্নের জবাব পায় রিদি………..
“সব আপনার জন্য আনা হয়েছে??”
“মানে??”
“মানে আবার কি….তোমার জন্য আয়োজন করতে বলেছিলাম সব।ভেবেছি এমনি দিবো…..বাট তুমি যে আদরের প্লেনও করে রেখেছো তা তো জানতাম না……”
“আপনি!!!!!!কি বলছেন??আমি আবার…… ছিঃ।।।আপনি ই তো……”
“ম্যাডাম ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে নেশা ধরিয়ে দিলে কি আর করার থাকে বলুন তো…….”
“আপনি যাবেন?????……”
“আস্তে…..নাগিন একটা……”
“পরশ!!!!!”
“ফ্রেস হয়ে নিন।আর বাকী আদর টা করে নি বলে কোনো আফসোস করার দরকার নেই বাসর ঘরে সব পুষিয়ে দিবো….”
বলেই ঠোঁটে লিক করে চলে যায় আগের রোমে।
পরশ চলে যাওয়ার পর রিদি আরও সুখী ভাবতে থাকে নিজেকে।কেউ যে ওর জীবনে এভাবে আসবে ভাবতে পারে নি রিদি।
নিজের মনের অজান্তেই মুখ দিয়ে “আলহামদুলিল্লাহ”শব্দ টা বেরিয়ে এলো রিদির।
একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরোমে ডুকে ডিরেক্ট গোসল করে নিলো।
নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে পরশের রোমে যায়।
পরশ গা এলিয়ে শুয়ে আছে বিছানায়।
“শুনছেন???”
মোবাইলের স্কিনে চোখ রেখে পরশের জবাব,”হুমমমমম……”
“সাড়ে এগারো টা বাজে,চলুন না নামায পড়ি আমরা।এখনো তো এশা নামায পড়া যাবে…..”
পরশ চোখ ঘুরায় রিদির দিকে।
একটু অবাক ই হয়।কারণ পরশ জানতো রিদি নামায কালামে খুব একটা আগ্রহী না।
ভার্সিটি থেকেই এমনটা দেখেছে সে।
আর আজ নিজেই বলছে পরশকে নামাযের কথা।
“কি হলো???আমার দিকে না তাঁকিয়ে না থেকে উঠুন……আমি নামায পড়বো আপনার সাথে…….”
“রিয়েলি???”
“কেনো??আমি কি নামায পড়তে পারি না???”
“না তা কেনো হবে…..”
“শুনোন আমি না ইসলামের সব কিছু একটু হলেও জানি।বাট নামায কালাম নিয়ে ভাবি না এতটা।শয়তানের পাল্লায় পড়লে যা হয় আর কি।বাট আজ পড়বো আমি…..”
পরশ খেয়াল করলো রিদিকে।
খুব সাধারণ পোশাকে আছে রিদি।একটা নীল রঙের শাড়িতে ভেজা এলোমেলো চুল।আর কোনো সাজ না,শুধু গলায় আলমারী তে রাখা পরশের রাখা একটা গোল্ডেন লকেট আর হাতে পড়িয়ে দেওয়া ডায়মন্ড বেস টা।
অসাধারণ সুন্দর লাগছে এইটুকুতেই।
“গোসল করলে??”
“হ্যাঁ……”
“কেনো???”
“কেনো আবার।এমনি ফ্রেস হওয়ার জন্য করলাম…..”
“ওহ……”
“ওহ্?????কিসের জন্য…..???”
“না না আমি ভাবছিলাম আমি তো বেশি কিছু করি নি…..আই মিন ফরযের গোসলের কারণ হই নি……তাই আর কি……”
“পরশ!!!!!!!!আপনি!!!!!!”
রিদির চেঁচানিতে কান চেঁপে ধরে পরশ।যদিও রিদি এতো জোরে চেঁচায় নি।
“উঠবেন আপনি???”
কিছু না বলে উঠে দাঁড়ায় পরশ।মুঁচকি হেঁসে ওয়াশরোমের দিকে যেতে থাকে।
পেছন থেকে রিদি বলে,
“পারলে সাওয়ার নিবেন প্লিজ….আর ওযুও করে আসবেন একেবারে……”
কিছু বললো না পরশ।
সাত-আট মিনিট পর বেরিয়ে আসে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে গোসল করে এসেছে।
সত্যিই ভালোবাসা সব কিছু পালটে দিতে পারে।এর মতো মহান অস্ত্র আর একটাও নেই পৃথিবীতে।পারমানবিক বোমার চেয়ে শক্তিশালী এই ভালোবাসা।যার ছোঁয়ায় বদলে যায় সব কিছু।
দুজনে নামায পড়ে নেয়।
রিদি আল্লাহর দরবারে হাজার হাজার শোকরিয়া জানায় ‘পরশের মতো জীবন সঙ্গী পাওয়ার জন্য’।পার্থনা জানায় মহান আল্লাহ তা’আলার কাছে যেনো কখনো না হারাতে হয় এই মানুষটাকে।
নামায শেষে প্রশ্ন করে পরশ,
“আচ্ছা,তুমি কয়টা মরিচ দিয়েছিলে বলো তো???”
“আমি না আসলে কোনো দিন শরবত বানায় নি……বাট রাফসা ভাবীকে ফোন করেছিলাম,ওনি যেভাবে বলেছে ঠিক সেভাবে করার পরও কেনো এমন হলো জানি না……খুব কষ্ট হচ্ছিলো আপনার তাই না????”
“সব টা তো দ্বিগুণ করে পুষিয়েও দিয়েছো……… ”
প্রতিত্তুরে মাথা নিঁচু করে মিষ্টি হাঁসে রিদি।
“আচ্ছা,যাই হোক……ডিনার করবে না??”
“আমার ক্ষিদে পায় নি…..আপনার???”
“আমার তো পেটে খুদায় মোঁচড় দিচ্ছে……..কি খাবে বলো…..”
“না না আমি কিছু খাবো না।আপনি…… ”
“স্যাট আপ…..আম ইউর হ্যাজবেন্ড সো ট্রাই টু বি ফ্রি উইথ মি…….”
“……….”পলকহীন ভাবে তাঁকিয়ে আছে রিদি পরশের মুখের দিকে।বুঝার চেষ্ঠা করছে মানুষটাকে।
“স্বামী-স্ত্রীর সর্ম্পক ততটাই শক্ত হয় রিদি,যতটা তারা নিজের বিশ্বাস করতে পারে….যতটা পরষ্পরকে বুঝতে পারে,চিনতে পারে সত্যি বলতে ভালো বন্ধ হতে পারে।
স্বামী-স্ত্রী তো অহরহ রয়েছে বাট ভালো বন্ধ না হয়ে উঠেলে না সে ভালোবাসা টা হয় শুধু ভালোবাসার জন্য ভালোবাসা।মানে দায়িত্ব থেকে ভালোবাসা।ফরমাল লাভ।আর যদি শরীরে থেকে মনের গহীন বন্ধু হয়ে কাছে আসা হয়;তাহলে সেটা সবচেয়ে বড় আর প্রাপ্তির হয়।”
পরশের কথায় দু চোখ বয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ে রিদির গালে।
দুহাতে চোখের পানি আটকে দেয় পরশ,
“উমহু……কান্না না বউ।সব সময় হাঁসি মুখটা দেখতে চাই……”
জড়িয়ে ধরে রিদি পরশকে,
“আই লাভ ইউ পরশ…….”
“কিহ?????”
“আই লাভ ইউ সো মাচ…….”
না বুঝার ভান করে পরশ আবারও বললো,
“মানে?????”
পরশের বুক থেকে মুখ তুলে,পরশের কলার চেঁপে ধরলো রিদি,চোখ চোখ রেখে বললো,
“বুঝেন না বুঝি???কি মানে হয় আমার কথার??”
“হ্যায়…..কলার ছাড়ো…..”
“না ছাড়বো না……কি ভেবেছেন সব সময় ভয় পাবো আপনাকে???শুনুন মানুষ না ভেতর থেকে কখনো পাল্টায় না।যে যেরকম সে সারা জীবন সে রকমই থাকে।শুধু ভালো আর মন্দ এইটুকু।কিন্তু শক্ত আর নরম মনের ব্যাপার টা বদলায় না কখনো।যেমন ওমর (রাঃ) ইসলামে আসার আগেও রাগী বলিষ্ঠ ছিলেন ইসলামে আসার পরও একই রকম ছিলেন।শুধু ওনার মন্দ দিক টা ভালোতে রূপান্তরিত হয়।তেমন টা আমার ক্ষেত্রেও হয়েছে……”
“আচ্ছা!!!!!এতো সাহস???”
“কি মনে হয় আপনার???ভালোবাসি এখন আপনাকে।সবটা জোর আছে আপনার উপর আমার……..আগে ভালোবাসতাম না তাই ভয় লাগতো,মারলেও কিছু বলার ছিলো না।আর এখন,ভালোবাসি আপনাকে…..বুঝেছেন আপনি এবার মানে টা,”আমি আপনাকে ভালোবাসি…..”
“আপনি শুধু আমার…..”
“আগে আমার মনে যা ছিলো আমি আজ বুঝতে পেরেছি পুরোপুরি ভাবে সবটা আমার মোহ ছিলো……এখন থেকে,এই মুহুর্ত থেকে আপনি শুধু আমার”।।।।।সব জোর করবো আমি….আর হ্যাঁ রাগ হলে কলার না শুধু গলাটাও চেঁপে ধরতে পারি…..যেমন আপনি ভালোবাসার জন্য আমার গালে চেঁপে ধরতে পারেন শক্ত করে,ব্যাথা দিতে পারেন আমায়,ঠিক তেমন।কারণ আমিও ভালোবাসি আপনায়।খুব ভালোবাসি…..খুব…..”
পরশ মুগ্ধ হয়ে দেখছে রিদিকে।কোনো মেয়ে এভাবে হার্ড ওয়ার্ড ব্যবহার করে ভালোবাসার কথাও বলতে পারে জানা ছিলো না পরশের।
রিদি পরশের কলার টা ছেড়ে দিয়ে,বিছানায় বসে বললো,
“আমি রাতে বেশি কিছু খাই না।আপনি যা খুশি অর্ডার করুন।তাই তাই খাবো আমি।আমি খাওয়ার ব্যাপারে এতো বেশি খুতখুতে না প্রায় সব ই খাই…….”
“ম্যাডাম।প্রথম দিনেই এতো অর্ডার???”
“হ্যাঁ।সমস্যা আপনার???আমি এমনি……”
“ওকে…….আই লাইক ইট…..”
পরশ রাতের খাবার অর্ডার করলে।রিদি নিজের ইচ্ছায় রান্না ঘরে গিয়ে খাবার পরিবেশন করে নিয়ে আসে দুজনের জন্য।
এতোটা গুছানো হয় নি তবে চেষ্ঠা করছে যতটা করার।
চিংড়ির মালাইকারী,পাবদা মাছের কালিয়া,আলু পোস্ত,চিকেন ফ্রাই,ফ্রাইড রাইস।এগুলো সব রিদির প্রিয় খাদ্য।কোনো প্রশ্ন করে নি রিদি পরশকে,সে কিভাবে জানলো এসব।কারণ এ কয় দিনে বুঝে গেছে পরশ ওর সর্ম্পকে সব কিছু জানে।
দুজনে খাচ্ছে।তবে রিদি বডি ঠিক রাখার জন্য সব মাপ মতো খায়।
“ম্যাডাম,খান ঠিক করে।আপনি মোটা/চিকন/জিরো ফিগার/মোটো ফিগার যাই হন না কেনো সব সময় এক রকম ভালোবাসা পাবেন……”
রিদি কথাটা শোনে পরশের দিকে একবার তাঁকিয়ে আবারও চোখ ফিরিয়ে নিলো,কিছুক্ষণ কিছু একটা ভেবে বললো,
“আচ্ছা পরশ আপনি কি সব সময় এক রকম ই ভালোবাসবেন আমাকে???”
“আমার এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই……তবে বাড়তে পারে…..ধরো আমাকে যখন তুমি একটা হুরপরী এনে দিবে স্বাভাবিক ভাবেই তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা টা বেড়ে যাবে……..”
পরশের মুখে এমন কথা শোনে চমকে উঠে রিদি।সে ও একদিন মা হবে!!!!!ভাবতেই ভেতরে একটা শীতল হওয়া বয়ে গেলো।
আবারপ প্রশ্ন করলো,
“আচ্ছা,আপনি যদি কখনো জানতে পারেন আমি অন্য কাউকে……”
“ভালোবাসো তাই তো??”
“আসলে…….”
“হুম….সেটাই….বাট আজ তো বললে, এখন থেকে শুধু আমাকেই ভালোবাসো।আমি তোমার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছি আজ।আগে কি হয়েছিলো না হয়েছিলো তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।আজ তুমিও আমায় ভালোবাসবে এটাই আমার কাছে সব।”
রিদি হা করে তাঁকিয়ে আছে।এতটা রাগী মেজাজী মানুষ এতো ভালো হয়!!!!
পরশ খাবার মুখে ঢুকিয়ে হেঁসে বললো,
“তা ছাড়া তোমার সাথে সময় কাঁটিয়ে যা বুঝলাম,আই মিন আমার যতটা মনে হলো,তুমি যা কিছু করো না কেনো-ছেলেদের ছোঁয়ায় তুমি পুরোপুরি কাঁচা…..ভার্জিনিটি পাক্কাপাক্কি……… ”
পরশের কথা শোনে রিদির খাবার আটকে যায়।কাঁশতে শুরু করে মেয়েটা।
পানি এগিয়ে দিলো পরশ।
“এতোটা উত্তেজিত হতে নেই…..আসল জায়গায় হলে হলেই হলো…….”
চোখ বড় বড় করে তাঁকায় রিদি পরশের দিকে মুখে কিছু আটকায় না মানুষ টার।
আর একটা কথাও না বাড়িয়ে খাবার শেষ করে রিদি।
দু জন দুই রোমে শুয়ে পড়ে।
রিদিই ইচ্ছে করে আলাদা রোে শুয়েছে,পরশও এটাই চাচ্ছিলো।
পাশের রোম থেকে চেঁচিয়ে বললো রিদি,
“পরশ,সকালে ডেকে দিয়েন আমায়।নামায পড়বো…..”
“ওকে জান…..আর হ্যাঁ…..রিল্পে টা তো দেওয়া হয় নি…….”
“কিসের রিল্পে??”
“তোমার ভালোবাসি কথাটার…….”
“তো দিয়ে দিন…….”
“ভাবছি বাসর রাতে দিয়ে দিবো একবারে…….”
হাঁসলো রিদি।
নিঃশব্দে।আর সাথে পরশও;তবে ঘর টাও বোধহয় কেঁপে উঠেছে তাঁর হাঁসির শব্দে।
দিনগুলো কেঁটে যাচ্ছে।
সূর্যের পালা বদলে সময়গুলো সুন্দর,সুখময় বয়ে যায়।তার সাথে সাথে চলমান থাকে আমাদের পথ চলা।ভালোবাসার ঘোরে আটকে থেকেও গতিবিধি কখনো থমকে যায় না।
কারও জন্যও না,কোনো কারণেও না।
সে যাই হোক।তবুও ঘটনা তো ঘটবেই।ভালোবাসায় ব্যথা-সুখ সব ই তো থাকবে।এক জীবনে এই দুটো জিনিসের স্বাধ আপনাকে আমাকে,সাদাদ-নৌশিন এমনকি সাদ-রাফসা,রিদি-পরশ প্রত্যেকেই ভোগ করতে হবে।
আর না বলি……..
আগে তো রিদির গায়ে হলুদ টা হোক…….
হ্যাঁ….সময় কেঁটে গেছে।এই কয়েকটা দিন রিদির মনের সুবিশাল জায়গা জোরে পরশ তাঁর রাজত্ব্য একটু একটু করে বাড়িয়ে নিয়েছে।
নৌশিনের গর্ভে নিষেক হওয়া জাইগোট টাও ধীর গতিতে সময়ের সাথে মিয়োসিস শেষ করে মাইটোসিস পর্যায়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।ঘোর টাও তীব্র হচ্ছে সাদাদের তার প্রিয়তমার প্রতি।রোজ সকাল,বিকাল,সন্ধ্যা তথা প্রতিটি প্রহর খেয়াল রাখার সময় বের করে নিয়েছে কাজের ফাঁকে।যেনো অনাগত ভালোবাসা আর ভালোবাসার মানুষ টা ভালো থাকে।কষ্ট না হয়।
সবাই তো ব্যস্ত তাই বলে কি ভালোবাসার মানুষকে সময় দিবে না???
দিতে হয় সময়।কাঁটাতে হয় মধুর কিছু মুহুর্ত।পার করতে হয় কিছু সময় প্রিয় মানুষটার একটু যত্ন নিয়েও।
এমনি এমনি কোনো কিছুই হয় না।ভালোবাসাও তার ব্যতিক্রম না।ভালোবাসা পুষতে হলে ভালোবাসতে জানতে হবে;যত্ন নিতে হবে।
দিন শেষে কড়া ভাষা না বলে,দুজন একসাথে এশার নামায টা পড়ে,দুটো হাত শক্ত করে আগলে নিতে হবে।তবেই টিকে থাকবে ভালোবাসা।
বালিশগুলো চোখের জলে ভিজাতে হবে না আর।
হ্যাঁ….এজন্যই বিয়ের এতোদিনেও কখনো নৌশিনকে রাতে দীর্ঘশ্বাস নিতে হয়।কাঁদতে হয় নি বালিশে হাই হুতাস করে।
কি করে হবে???বালিশে মাথা রাখার দরকার তো পড়ে নি।সাদাদ শক্ত বক্ষপিন্জর টা তো আছেই।
আজও আছে।
রিদির গাঁয়ে হলুদ বলে খুব সকাল সকাল ই সাদাদের বুক থেকে মাথা তুলতে হয়েছে নৌশিনের।
যদিও সাদাদ তুলতে দেয় নি,জেদ দেখিয়ে জোর করে এতো সকালে উঠে গেছে নৌশিন।
নামায টা পড়েই সাদাদ মসজিদ থেকে ফিরার আগেই নিচে চলে যায়।
সাদাদের মা বার বার বলছে এটা ওটা না করতে কিন্তু নৌশিন কিছুই শুনছে না।
ভালো লাগে না কাজ ছাড়া বসে থাকতে।
সাদাদ এসে দেখে নৌশিন রাফসার পাশে বসে তত্ত সাজাচ্ছে।
মেজাজ টা কার না গরম হবে??কাজ করতে বারণ করলেও এই মেয়ে শোনে না।যদিও সোজা কাজ এটা তারপরও আশে পাশে কত মানুষ সবাই এলোমেলো ভাবে চলছে যদি গায়ে লেগে যায়।
“কি করছো তুমি???”
“কিছু না…..”
“আমি তো দেখতেই পারছি…..”
“প্লিজ……”
মুখে মায়াবী ভাব এনে বললো নৌশিন।
সাদাদের সাথে পেড়ে উঠবে না কখনো নৌশিন।সাদাদ জোর করে উপরে নিয়ে চলে যায় নৌশিনকে।
সকালে খাবার টাও জোর করে খাইয়ে দিলো।আর রোজকার মতো নৌশিন আজও নিতে পারে নি খাবারের গন্ধ টা।বমি করে ফেলে দিয়েছে।তবুও যতটুকু কাজে লাগে;তাই সাদাদ বার বার জোর করে কিছু না কিছু খাইয়ে দেয়।
যেনো শরীর টা দুর্বল না লাগে নৌশিনের।
বিকালের দিকে বাড়িতে ধুমধাম ভাবে হলুদ শুরু হয়।
কত মেহমান!!!সারা বাড়ি ভরপুর।বাড়ির সব মেয়েরা দারুণ সাজে সেজেছে।বাড়ির মেয়ের হলুদ ছোঁয়া বলে কথা।
রিদিকে তো পুরো হলুদ পরী লাগছে।হলুদ শাড়ি,হালকা সাজ…গাঁধা ফুলের গহনায় পরিপূর্ণ একটা রমনী।
পরশকে আজ সারা দিন দেখা হয় নি।সাজ কম্পিট করে পরশের কথা মতো ছবি পাঠিয়েছে তার কাছে।
রিদিকে বাগানে হলুদের জায়গায় আনা হলে সবাই খুশিতে মেতে উঠেৃ
বিশেষ করে রিদির মা।এক মাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা।
সিলেটে বাড়ি হলেও সব আত্মীয় স্বজন ঢাকায়,আর রিদি এতদিন ভাইয়ের শশুড় বাড়িতে ছিলো তাই সব কিছু ভেবে রিদির বাবা-মা সিধান্ত নেয় রিদির বিয়ে টা এই বাড়ি থেকেই দিবে তারা।কিন্তু খরচ সমস্ত কিছু ওদের।
তাই হয়েছে।পুরো বাড়ি বিয়ের সাজে সেজে উঠেছে হলুদের জন্য।পাশের কমিউনিটি সেন্টার টাও রঙীণ আলোর সাজানো হচ্ছে কালকের দিনের জন্য।মেয়ে বাড়িতে তো কত অনুষ্ঠান!!!!!💜💜💜
সবাই রিদিকে নিয়ে মেতে আছে।
একটু পরে সাদাদ আর নৌশিন নেমে আসে।সাদাদ নৌশিনের হাত রা আস্তে করে ধরে ধরে নিয়ে আসছে নৌশিনকে।
তিন মাস চলেছে।নৌশিন তো এমনিতেই একটু দুর্বল।তাই সব সময় চোখে চোখে রাখে সাদাদ।
বেশ সুন্দর লাগছে নৌশিন আর সাদাদকে।
সবুজ রঙের পান্জাবী আর কালো চুরিদারে বেশ লাগছে।
নৌশিনকেও হালকা সাজে পরিপূর্ণ লাগছে খুব।
প্রেগনেন্ট তাই গর্জিয়াস ভাবে সাজে নি।ভারী শাড়ি গা জরালে অসস্তি লাগবে তাই সাদাদ কাল রাতে কিছু সিল্ক নিয়ে এসেছে নৌশিনের জন্য।
নৌশিন তো আর সবার সাথে শপিং এ যায় নি।তাই সাদাদ ই নৌশিনের পুরো শপিং টা করে নিয়েছে সময় নিয়ে।
সবুজ রঙের হালকা একটা হলুদ পাড়ের শাড়ি,সাথে কানে ছোট্ট ঝুমকা জোড়া,হাতে কয়েকটা রঙবে রঙের চুরি,গলায় পাতলা একটা হার,হালকা করে বাঁধা সাদা হিজাবে সাদাদের পাশে ঠিক রাণীর মতো লাগছে।
দুজনে এক সাথে পাশাপাশি হাত ধরে এগিয়ে আসতে দেখে;আজ অনেক দিন পর রিদির বুক টা ধুক করে উঠলো।পরক্ষণে পরশের মুখ টা ভেসে উঠলো চোখের সামনে।
তবুও কিসের যেনো একটা টান।হয়তো ঐ যে লোকে বলে না,প্রথম।হ্যাঁ প্রথম…হোক মোহ বা ভালোবাসা বা ভালোলাগা….প্রথম অনুভুতি তো সাদাদ ই ছিলো।হয়তো বা তার জন্যই।
বার বার সাদাদকে দেখছে রিদি।তবে আগের মতো নেশাতুর চোখে না।হিংসা হচ্ছে না ওদের দুজনকে পাশাপাশি দেখে।ভালো লাগছে খুব।
নিজের গভীর শ্বাসের ভাঁজে হঠাৎ চোখের কোণে জল এলেও আঙ্গুলের ডগা দিয়ে উহ্য করে নিলো সেই পানি বেহায়া জলবিন্দুগুলোকে।
পরশের কথা ভাবতেই এসব কিছু আর কাজ করে না আজকাল রিদির মাথায়।
খুব ভালোভাবেই পুরো অনুষ্ঠান টা চলছে।নৌশিনের ক্লান্ত লাগছে খুব নিজেকে।
সাদাদ নৌশিনের কোল থেকে রাফিনকে নিয়ে নৌশিনের মায়ের কোলে দিয়ে আসে।
নৌশিনকে উপরে নিয়ে যায়।
হালকা শীতের মাঝেও নৌশিনের বেশ গরম লাগে আজ কাল।আর আজকে তো বাড়ী ভর্তি মানুষ,গরম টা তাই আরও বেশি।
রোমে গিয়ে বিছানায় যাওয়ার জন্য এগুতেই সাদাদ আটকে নেয়;
“আগে একটু ফ্রেস হলে ভালো হতো তো জান……”
“কেমন জানি লাগছে……”
কথাটা বলতে গিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছিলো নৌশিনের।নিশ্বাস টা বেশ ভারী শোনাচ্ছিলো। বুঝতে পারছে সাদাদ,পাশ থেকে হালকা ভাবে জড়িয়ে ধরলো।
“কষ্ট হচ্ছে খুব তাই না??”
“নাহ…..কেমন জানি…..”
“আচ্ছা…..তুমি বেডে বসো একটু…..”
সাদাদ নৌশিনকে বেডে বসিয়ে দিয়ে টাওয়েল বিজিয়ে এনেছে।হাত মুখ টা ভালো করে মুছে,পা দুটোও বিছানাও তুলে মুছিয়ে দিলো।
“শাড়ি চেন্জ করবে??”
নৌশিন মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালো।
সাদাদ ই পড়িয়ে দিয়েছিলো শাড়ি।আর এখন দরজা টা লাগিয়ে নিয়ে একটা সুঁতি শাড়ি নিয়ে এসে পড়িয়ে দিলো।
ব্লাউজ ভিজে গেছে ঘেমে।
এসি অন করে দিয়ে বড় গলার একটা ব্লাউজ জোর করে পড়িয়ে দিলো সাদাদ নৌশিনকে।
“খাও কিছু??”
“না…..ভালো লাগছে না…..”
দরজায় নকের শব্দ পেয়ে দরজা খুলে সাদাদ।
রাফসা এসেছে।
নৌশিনের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করে,
“কি রে বোন,বেশি খারাপ লাগছে???”
“না…..ঠিক আছি….গরম লাগছে একটু…..”
“আচ্ছা সাদাদ,আয় আমার সাথে আমি একটু লেবুর শরবত করে দিচ্ছি…….”
“ভাবী,এখন খাবো না কিছু….”
“নৌশিন,শুয়ে থাকো চুপ করে…..”
“সাদাদ!!প্লিজ…গা গুলাচ্ছে আমার……”
“একটু খেলে কিছু হবে না বোন…..”
“ভাবী,তাহলে লেবু না একটু বেলের শরবত খাবো…..”
“আচ্ছা,ঠিক আছে তাই হবে…..”
সাদাদ শরবত এনে খাইয়ে দিচ্ছে,অর্ধেক টা খেতেই সাদাদ নৌশিন মুখ চেপে ধরে “ওয়াক,ওয়াক…”করতে শুরু করে।বমি করবে,বুঝতে পেরেছে সাদাদ।বিছানা থেকে একটু এগিয়ে আনে,যেনো ফ্লোরে বমি করতে পারে।
ওয়াশরোমে নিয়ে যাওয়ারর কষ্ট টা নৌশিনকে আর দিতে চায় না।কিন্তু ততটুকু সময়ও নৌশিনের কাছে ছিলো না,বিছানাতেই বমি করে ফেলে।সাদাদ জড়িয়ে ধরায়,পুরা ময়লা টাই সাদাদের পান্জাবীতে লেগে গেছে।
সাদাদের নজর সে দিকে নেই,নৌশিনের শরীর নেতিয়ে আসছে সেদিকে মনোযোগ ওর।সে অবস্থাতেই জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
“কুল,কুল…..এখানেই করো….নামতে হবে না….”
নৌশিন সাদাদের শরীরে বমি করায় ওর নিজের কেমন লাগছে।তাই সরে আসতে চাইছিলো কিন্তু সাদাদ দেয় নি।
হাঁপিয়ে গেছে নৌশিন।
সাদাদ খাটের ক্রবে হেলান দিয়ে আধশোয়া করে দিলো নৌশিনকে।
বেল যে টুকু খেয়েছিলো সেটুকুও বেরিয়ে এসেছে।আর বিকালের খাবারটুকুও……
সাদাদ ছোট বালতি করে পানি এনে,নৌশিনের মুখ গলা পরিষ্কার করে দিলো।
কুলি করিয়ে পানি খাওয়াতে গেলে মাত্র এক চুমুক খেলো নৌশিন।
নৌশিনকে শুইয়ে দিয়ে সাদাদ নিজে ফ্রেস হয়ে আসে।
নৌশিন শুয়ে আছে।শরীর টা বড্ড বেশি দুর্বল লাগছে।
সাদাদ নৌশিনের পাশে গিয়ে বসতেই,নৌশিন বলে উঠে;
“সরি……..”
অবাক হয় সাদাদ,”কি?”
“সরি…..”
“কেনো??”
“তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি খুব।আমি না কন্ট্রোল করতে পারি নি…..”
“নৌশিন!!!মাইর দিবো কিন্তু।কিসের কষ্ট??হুম?????আর একটা উল্টা পাল্টা বললে খবর আছে…….”
“এতো ভালোবাসো…… ”
“সন্দেহ আছে তোর???”
“মোটেই না…..”
“এখন চুপচাপ চোখ বন্ধ করো…..”
নৌশিন কোনো কথা না বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
সাদাদ মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার পরপরই ঘুমিয়ে যায়।
তবুও সাদাদ একিভাবে নৌশিনকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে চুলে বিলি কেঁটে দিচ্ছে।
মাগরিবের আযানেও ঘুম ভাঙে নি নৌশিনের।শরীর ভালো থাকলে হয়তো টের পেতো।সাদাদও ডাকে নি।
অনুষ্ঠান শেষ করে সবাই নামায পড়ে নেয়।নৌশিনের মা এতক্ষণ উপরে আসার উপায় পায় নি।কেবল আসলো,নৌশিনের যে এই অবস্থা তা কেউ জানে না।সাদাদ কাউকে ডাকে নি।
সাদাদ উযু করে রোমে আসে এমন সময় ওর শাশুড়ি মাও রোমে প্রবেশ করে।
মেয়ে অসময়ে শুয়ে আছে।
কখনো তো এমন হয় না।
“বাবা,নৌশিন??”
“আসলে মা…..”
“মুখ টা দেখি শুকিয়ে গেছে।খাওয়া দাওয়া করে তো ঠিক মতো….”
“মা আজ শরীর খারাপ লাগছে ওর……”
“বল কি????কি হয়েছে??পেট ব্যথা হয় নাকি??”
“না মা…বমি করেছে তো তাই…..”
একটু পর সাদাদের মা এসে সাদাদকে ইচ্ছা মতো বকাবকি করে,কাউকে জানায় নি বলে।
আর কাউকে না ডাকলেও বমির পর একবার তো রাফসাকে ডাকতে পারতো।
রোমে এতো চেঁচামেচির পরও জাগে নি নৌশিন।
রাফিন ঘুমিয়ে গেছে ওর মায়ের কোলে।
সাদাদের বাবা-মা জোর করে নৌশিনের বাড়ির সবাইকে থাকার জন্য রাজি করায়।যদিও ওর মা মেয়ের অবস্থা দেখে থাকার কথা আগেই বলেছে।সবার জোরাজোরিতে বাকী রাও থাকতে বাধ্য হয়।
সাদাদও খুব ক্লান্ত।কাল অনেক রাত অবদি কাজ করেছে।আর আজও সারা দিন নানা রকম প্রেসার গেলো।
রাতের খাবারের সময় নৌশিনকে ডেকে ওঠায় সাদাদ।সবাই দেখে যায় নৌশিনকে।নৌশিনের মা তো মেয়েকে নিয়ে খুব চিন্তিত।আর ওর বাবার কথা তো বলতেই হয় না; ওনার প্রশ্ন একটাই,বার বার নৌশিনের মাকে বলছে,”ছেলের বউ,মা হওয়ার সময় এতো দূর্বল হয় নি তাহলে মেয়ের কেনো এই অবস্থা??”
কোনো জবাব নেই নৌশিনের মায়ের কাছে।ডাক্তার তো বলেই দিয়েছে ওনাদের মেয়ে দুর্বল খুব।প্রশার ল,রক্তে হিমোগ্লোবিন খুব কম।
নৌশিনের মা মেয়েকে নিজ হাতে খাইয়ে দিলো।বিয়ে বাড়ি তো মাছ মাংসের গন্ধে আরও অস্বস্তি হয়েছে নৌশিনের।তাই সাদাদের মা লাল শাক,লেবু পাতা আর বেগুন ভাজি করে দিয়েছে।কিন্তু খাইয়ে দিতে বলে নৌশিনের মাকেই।যতই হোক মায়ের হাতের খাওয়া; আলাদা একটা প্রশান্তি।
খাওয়ানোর পর পর সাদাদ নৌশিনকে ঔষধ খাইয়ে আবার ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
নামায পড়ে নিজেও শুয়ে পড়ে।নৌশিনের মাথা নিজের বুকে টেনে গায়ে চাদর জড়িয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায়।
দুদিনের ধকলে বেশ গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় সাদাদ,রাত সাড়ে দশটার মাঝেই।
প্রায় আধা ঘন্টা পর।ঘুম ভাঙে নৌশিনের।মাথা ব্যথা করছে একটু।হাঁটলে হয়তো একটু ভালো লাগবে,তাই সাদাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে বসে।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ।তবুও মাথা ধরছে।
বাড়ির সবাই জেগে আছে এখনো,কথা বার্তার আওয়াজ আসছে ড্রয়িং রোম থেকে।
যদি বাইরে গিয়ে কাউকে বলে মাথায় ভালো করে তেল লাগিয়ে দেওয়ার জন্য,তাহলে হয়তো মাথা টা হালকা হবে।এই ভেবে দরজা খুলে বেরিয়ে যায় নৌশিন।
সাদাদের মা দেখা মাত্রই দৌড়ে আসে উপরে।
“ও মা,মা গো….উঠেছো কেনো??”
“ঘুম ভেঙে গেছে মা….”
“সাদাদকে ডাকলেই তো হতো…আসো রোমে আসো…”
“মা,মাথা ধরেছে কেমন জানি…..রোমে যাবো না।একটু ড্রয়িং রোমে গিয়ে বসি??”
সাদাদের মা আর কথা বাড়ায় নি,সিড়ি দিয়ে ধরে ধরে নামিয়ে আনে ছেলের বউকে।
নৌশিনের ঘুম ভাঙার খবরে,ওর মা,বাবা,ভাইও গেস্ট রোম থেকে ছুটে আসে।
রাফিনের জন্য নৌশিনের ভাবী রোম ছেড়ে আসতে পারেন নি।
“মা এখন কেমন লাগছে??”
“ভালো…..”
“কিসের ভালো?ভাবী এই মাত্র বললো মাথা ধরছে…..”
নৌশিন তেলের কথা বলার আগেই।পাশ থেকে রিদির মা বলে উঠে,”মামনি,মাথায় একটু তেল দিয়ে দিই??ভালো করে মেসেজ করে দিলে আরাম পাবে……”
স্বায় জানায় নৌশিন রিদির মায়ের কথায়।
রিদি মা পরম যত্ন নিয়ে নৌশিনের মাথায় বিলি কেটে কেটে তেল দিয়ে দিচ্ছে।বেশ আরাম পাচ্ছে নৌশিন।
মনে হচ্ছে মাথা ঠান্ডা হয়ে গেছে।নৌশিনের বাবা-মা-ভাই নিজেদের বাড়ির মেয়ের এমন যত্ন দেখে মনে মনে বেশ খুশি হয়।তেল দেওয়া শেষে হালকা করে একটা বেনুনীও করে দিলে রিদির মা।প্রায় বিশ মিনিট ধরে মাথায় এতো কিছু করায়,শান্তি পাচ্ছে খুব নৌশিন।
“থ্যাস্ক গো আন্টি…..আমার মাথা হালকা লাগছে এখন…”
সবাই হু হু করে হেঁসে দেয় নৌশিনের কথায়।
“পাগলী মেয়ে,এখন কিন্তু উপরে যেতে হবে।সাদাদের ঘুম ভাঙে গেলে??”
“এখন যাবো তো।ঘুমাবো গিয়ে….”
“আচ্ছা, চল আমি দিয়ে আসি….”
রাফসা দেওয়ার জন্য বসা থেকে উঠতে নিলে,নৌশিনের ভাই বলল,”ভাবী,যদি কিছু মনে না করেন…তাহলে আমি কি ওকে…..”
“হায় হায়…কি বলেন ভাই।আপনার বোনকে আপনি রোমে দিয়ে আসবেন,আর আমি কি মনে করতে যাবো??এটা তো আরও ভালো হলো….”
“হ্যাঁ হ্যাঁ….বাবা যাও তুমি ই যাও।আর বড় বউ মা তুমিও যাও ওদের সাথে গিয়ে দেখে এসো রোমে পানি,এসির পাওয়ার সব ঠিক আছে কি না….”
সবাইকে সালাম দিয়ে নৌশিন উপরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।ওর ভাই ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে,খুব সাবধানে নিজের কলিজার টুকরা বোনকে এক একটা সিড়ি পাড় করাচ্ছে।
রাফসাও ওদের পেছনে পেছনে আসছে শাশুড়ি মায়ের কথামতো।
রোমের দরজা একটু চাঁপিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো নৌশিন।
ওর ভাইয়া এক হাত দিয়ে নৌশিনকে ধরে,অন্য হাতে দরজার হ্যান্ডেল ধরে দরজা টা আলগা করে।
ঘরে আলো জ্বালানো।আলোর রেখায় ঘরে দৃষ্টিপাত হওয়া মাত্রই,আঁতকে উঠে নৌশিন।
সাথে ওর ভাইয়াও আর ওদের দু ভাইবোনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রাফসাও।
প্রেমঘোর পর্ব ৮৭+৮৮
নৌশিনের পায়ের নিঁচের মাটি সেরে গেছে।আকাশের সাথে সব কয়টা গ্রহও বোধহয় ওর মাথায় ভেঙে পড়েছে প্রতিটা ন্যানোসেকেন্ডে।দৃষ্টি আঁটকে গেছে নৌশিনের।মনে হচ্ছে বিশাল কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছে সে।চোখ দিয়ে অনবরত বৃষ্টি ঝড়ছে।শরীর অসাড় হয়ে গেছে মুহুর্তেই।বাকী দুজনেও মুর্তি হয়ে গেছে,ঘরের ভেতরের দৃশ্য দেখে।রাফসা তো নৌশিনের অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়,তার উপর নৌশিনের ভাইয়ের চোখ দিয়ে তো আগুন বের হচ্ছে।
রাফসা কি করবে বুঝতে পারছে না।
নৌশিন আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।স্থিতি পেতে ভাইয়ের হাত টা দু হাতে খামচে ধরে…..