প্রেমতৃষা পর্ব ১২

প্রেমতৃষা পর্ব ১২
ইশরাত জাহান জেরিন

নেওয়াজ কুঠিরের অন্দরমহলে সবাই একত্রিত হয়েছে। প্রত্যুষের আর বাইরে যেয়েও যাওয়া হলো না। তৃষার তো খুশিতে হাতির পাঁচ পা দেখার মতো অবস্থা। এবার মনে হয় এক দফা, এক দাবি আন্দোলন করে হলেও মিসেস দেওয়ান তাকে এই যাত্রায় হতেই হবে। কিন্তু এমন ভদ্রলোককে পটাতে হলেও নিজের ভদ্রলোক হওয়াটা আগে অতিব গুরুত্বপূর্ন। তৃষা মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে এখন থেকে সে একেবারে নম্র, ভদ্র আচরণ করবে। কম কথা বলবে, এমন ভাব করবে যেন গালি নামক শব্দ সে ২০ বছরের জীবনে প্রথম শুনল। তাকে এমন ভাব বজায় রাখতে হবে যেন সে মুখ খুলে বলতে পারে, ‘আমি কালি,নলি, খালি,জালি সব শব্দ শুনেছি, এমা এই গালি আমার কী? ওই যে মুরগির পেটে যে গিলা থাকে না ওইটার কথা বলছেন নাকি?’

হেতিজা কাজের মেয়েকে দিয়ে আগেই তৃষার জন্য রুম ঠিকঠাক করে রেখেছেন। প্রথম যখন তৃষাকে দেখলেন তখন কিছুক্ষণ হা করে চেয়ে রইলেন। মেয়ে তো ভারী সুন্দর। পটলচেরা চোখ, গোল-গাল একটা মুখ। চুলগুলো এত একটা লম্বা না। তবুও তো ভীষণ মিষ্টি দেখতে। তাছাড়া মেয়ের ব্যবহার দেখছো? পারিবারিক শিক্ষা আছে বলতে হবে। তবে হেতিজা সবচেয়ে বেশি খুশি তো তখন হয়েছেন যখন জানলেন তৃষা আর প্রত্যুষ একে অপরকে আগ থেকেই চেনে। ছেলে তার মেয়েদের সাথেও কথা বলে তাহলে? যাক ভালোই হলো। ছেলের যদি এই যাত্রায় কাউকে মনে ধরে, একটা গতি হয় ভালোই হবে। হেতিজা তৃষাকে পইপই করে বললেন, ‘শুনো মা আমার মেয়ে প্রেমান্তি কিন্তু হারে বজ্জাত স্বভাবের। কাজের কাজ ছাড়া দুনিয়ার সব অকাজ-কুকাজে এক্সপার্ট।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সারাদিন কোরিয়ান ড্রামা দেখে। ওইযে সুন্দর সুন্দর কোরিয়ান ছেলে আছে কতগুলো ওগুলোকে ওপ্পা না আপ্পা ওইসব ও ডাকে। রাতে ওদের ছবি বালিশের নিচে রেখে না ঘুমালে তার নাকি স্বপ্নে ব্যাঘাত ঘটে। দেখো আমি খালি টিউশনের জন্য তোমাকে রাখিনি। ওকে সারাদিন নিজের সঙ্গে রেখে মানুষ করবে বলে রেখেছি। তোমার টাকা-পয়সা, যাবতীয় খরচা কিছু নিয়েই চিন্তা করতে হবে না। তুমি খালি মেয়েটাকে মানুষ করে দাও। মাথায় তার প্রেম পিরিতের ভূত। ওই ভূত তুমি থেরাপি দিয়ে ছাড়িয়ে দাও। দুইবছর ধরে ইন্টারে পরে আছে। এইচএসসি দেওয়া আর হচ্ছে না। এসএসসিটা অনেক কষ্টে দিয়েছে। তাও কোনোমতে পাশ করে। ওর সাথের মেয়েটা পড়ালেখায় ভালো ছিল। ওটাকে ঘুষ দিয়ে সব দেখানোর জন্য রাজি করেছিলাম। কত কাহিনী।’

হেতিজার কথা শুনে প্রথমে তৃষার মাথাটা ভনভন করে উঠেছিল। কি একটা অবস্থা। পরে ভাবল হবু ননদিনীই তো। একটু সাহায্য সহযোগিতা তো সে ফকির-মিসকিনদের কেও করে আর ননদকে করতে পারবে না? এত ছোটলোকও না সে। তৃষা প্রেমার সঙ্গে পরিচয় হয়ে একেবারে রুমে গেল। বড়লোকের সব বড়লোকি করবার। এত আলিশান রুম। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ডান দিকটায় তাকাতেই অনেকটা দূরে বাতি দেখতে পেল। ভালোই একটা আলো। অন্ধকার তো। তাও রাতের বেলা। এত বুঝল না ওইখানে কী থাকতে পারে। তবে কিছুক্ষণের মাঝেই তার রুমে প্রত্যুষ প্রবেশ করল। তারপর জিজ্ঞেস করল, ‘কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?’
তৃষা আড়চোখে একবার প্রত্যুষের বুকের দিকে তাকিয়ে পরক্ষণে বলল, ‘আপনি খালি গায়ে জিম করবেন, গোসল করে এসে নগ্নবুকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন আর সেইসব আমি মাঝেসাঝে উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখব এর চেয়ে সুবিধা আর কি হতে পারে?’

‘কী চুপ কেন? কথা বলো।’
তৃষার হুঁশ ফিরতেই সে বলল, ‘আরে না না অসুবিধা হবে কেন? যেই সুবিধা আপনারা দিচ্ছেন। তবে এখনো ভাবতে পারছি না আপনার সঙ্গে এমন ভাবে দেখা হয়ে যাবে। আর এখন থেকে সাক্ষাৎ টা রোজ হবে।’
প্রত্যুষ মুচকি হেসে বলল,’চা নাকি কফি?’
‘চা আমার জন্য বেশি কমফোর্ট তবে আজকে একটু কফি হলে ভালোই হবে।’
‘ওয়েট আমি বানাচ্ছি। তারপর ছাদে গিয়ে না হয় কথা হবে।’
‘এই সময়?’
‘কেন ভয় হচ্ছে? ছাদ থেকে ফেলব না। ভয়ের কি আছে?’
‘আরে না ভয় হবে কেন? তবে আজকেই এই বাড়িতে এলাম। আপনার বোনের টিচার আমি। বাড়ির মানুষ কী মনে করবে?’

‘টিচার হওয়ার আগে কিন্তু পরিচয়টা আমার সঙ্গেই হয়েছিল।’
‘তা ঠিক।’ তৃষা মুচকি হাসল।
ছাদে এসে দু’জনে কার্নিশে পাশাপাশি বসে পড়ল। রাত তখন অনেকটাই হয়েছে। শহরের আলো নিচে ঝলমল করছে, তবে ওপরে আকাশ পুরো অন্যরকম। আধখানা চাঁদ ভেসে আছে। চারপাশে অগণিত তারা। প্রত্যুষ চুপচাপ চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর বলল, “চাঁদটাকে যত দেখি, ততই মনে হয়, ও একেবারেই নিঃসঙ্গ। কোটি কোটি তারা আছে চারপাশে, তবুও সে কত একা।”
তৃষা হালকা হেসে জবাব দিল, “চাঁদের এই নিঃসঙ্গতাই তো ওকে আলাদা করেছে। যদি সবার মতো হতো, তাহলে হয়তো আমরা ওর দিকে এমন ভাবে ফিরে তাকাতামই না।”

প্রত্যুষ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কিন্তু আলাদা হয়ে থাকাটা কি সুখের? আমাদের জীবনও তো এমন,ভিড়ের মধ্যে থেকেও একা হয়ে যাই আমরা। এই একাকীত্ব কি আদৌ সুখ দেয়?”
তৃষা একটু থেমে গম্ভীর হলো। “হয়তো এটাই বাস্তবতা। সবাই ভাবে তার চারপাশে অনেক মানুষ আছে, কিন্তু শেষমেশ নিজের লড়াইটা একাই করতে হয়।”
হাওয়া একটু জোরে বইল। তৃষার চুল উড়ল বাতাসে, প্রত্যুষ চুপচাপ তাকিয়ে রইল।
তৃষা এবার বলল, “আপনি কি খেয়াল করেছেন, দিনের আকাশে আমরা চাঁদকে দেখি না, কিন্তু সে তখনও থাকে। জীবনের অনেক সম্পর্কও এরকম—চোখে দেখা যায় না, অথচ আছে।”
প্রত্যুষ মৃদু হেসে সায় দিল। “হ্যাঁ। হয়তো আমরাও তাই… সব কথা বলি না, তবু আকাশের মতোই চুপচাপ পাশে থেকে যাই। আচ্ছা তুমি খেয়াল করেছো, শহরটা দিনে যত কোলাহল করে, রাতে ততটাই একা হয়ে যায়?”
তৃষা চায়ের কাপটা আঁকড়ে ধরে বলল, “শহর একা হয় না। একা হই আমরা। দিনের ভিড়ে সেটা বুঝি না, রাতে আকাশের নিচে টের পাই।”

প্রত্যুষ হালকা হেসে ফেলল। “তুমি সবকিছুকে এত দার্শনিকভাবে দেখো কেন?”
“এটা দর্শন নয়। এটাই তো বাস্তবতা। আমরা কত দৌড়াই, কত হাসি-আনন্দ করি, অথচ শেষমেশ নিজেদের ঘরে ফিরে আবার চুপ হয়ে যাই। সত্যি কথা বলতে কি, আমি মাঝে মাঝে ভয় পাই। ভবিষ্যৎ নিয়ে। এই যে পড়াশোনা, কাজ শেষমেষ কি এসবের ভিড়েই আমাদেরকে হারিয়ে যেতে হবে?”
প্রত্যুষ গম্ভীর হলো। “আলাদা হয়ে থাকা সহজ নয়। আবার ভিড়ের সঙ্গে মিশেও নিজের মতো থাকা কঠিন। এই তো আমাদের লড়াই।”

কিছুক্ষণ তারা চুপ করে রইল। ওপরে তারাগুলো মিটিমিটি কেমন জ্বলছে। তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
তৃষা নড়েচড়ে বলল,” আপনি কাউকে ভালোবেসেছেন কখনো?”
‘ভালোবাসার মতো সৌভাগ্য আমার জীবনে আসেনি। তবে একজনকে ভালোবাসতে দেখেছি, ধ্বংস হতে দেখেছি খুব কাছ থেকে। একতরফা ভালোবাসার ক্ষমতা সেদিন অনুভব করেছিলাম।”
তৃষা চুপচাপ শুনছিল। প্রত্যুষ পুনরায় ধীরে বলল, “অদ্ভুত না? একতরফা ভালোবাসা মানুষকে যতটা কষ্ট দেয়, ততটাই বাঁচিয়ে রাখে। মনে হয় কেউ জানুক না জানুক, আমি অন্তত তাকে ভালোবেসেছি—এইটুকুই আমার বেঁচে থাকার কারণ, আমার জন্য এক টুকরো সান্ত্বনা।”
তৃষা ম্লান হেসে সায় দিল। “কিন্তু সান্ত্বনা চিরকাল টেকে না। একসময় সেই ভালোবাসাই একাকিত্ব হয়ে ফিরে আসে।”

দু’জনেই কিছুক্ষণ চুপ। বাতাসে কেবল ঝাপটায় কাগজের শব্দ।
প্রত্যুষ এবার গম্ভীর হয়ে বলল, “ভালোবাসার আসল ভয়টা কোথায় জানো? শুরুতে নয়, শেষের দিকে। যখন বুঝি সব শেষ হয়ে যাচ্ছে—তখনও বুকের ভেতর অনুভূতি থেকে যাচ্ছে, ভালোবাসা থেকে যাচ্ছে। বিচ্ছেদ আসলে ভালোবাসাকে মারে না, বরং আরও জাগিয়ে তোলে।”
তৃষা ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল। তার চোখ কোথাও দূরে।
“হয়তো ঠিকই। ভালোবাসা তো শেষ হয় না, শুধু মানুষগুলো আলাদা হয়ে যায়। আমরা ভাবি ভুলে গেছি, আসলে ভুলতে পারি না। বরং নীরবতার ভেতর আরও তীব্র হয়ে ওঠে ভালোবাসার ক্ষত।”
প্রত্যুষ মৃদু হেসে বলল, “তাহলে কি ভালোবাসা মানেই শেষমেশ একাকিত্ব?”

তৃষা উত্তর দিল না। হাওয়ার ঝাপটায় তার চুল এলোমেলো হলো, সে কেবল দম নিয়ে বলল, “হয়তো। তবু মানুষ বারবার ভালোবাসে। কারণ একাকিত্বের ভেতর যে শূন্যতা, সেটা ঢাকতে হলেও ভালোবাসতে হবে। বার বার শতবার, নতুন কাউকে নয়তো একজনকেই বহুবার।”
“জানো, আমি মাঝে মাঝে ভাবি, আমরা এত ভেতরের কথা আকাশের সঙ্গে বলি, অথচ একে অপরকে বলার সাহস হয় না।”
তৃষা কাপ থেকে শেষ চুমুক নিয়ে উত্তর দিল, “কারণ আমরা জানি, কথা বললে হয়তো বাস্তবতা পাল্টে যাবে। আর আমরা কেউই হয়তো সেটা চাই না।”
তৃষা এবার প্রত্যুষের দিকে তাকাল।
প্রত্যুষ আর তাকাল না, কেবল বলল, “চল, নেমে যাই। রাত অনেক হলো। আকাশ থাক তার মতো, আমরা আমাদের বাস্তবতায় ফিরি।”

রাতের আকাশ ঘন অন্ধকারে ঢাকা। দূরের শহরের একটানা মৃদু বাতি আর ধূসর আলো ফাঁকে ফাঁকে ছায়া ফেলছে। রাস্তার ধারে দাঁড়ানো বাইকগুলো। লাইট ঝলমল করছে, ইঞ্জিনের তাপে বাতাস কেঁপে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। প্রেম নেওয়াজ হেলমেট ঠিক করে বসেছে তার বাইকে। তার পাশে দলমতের কিছু সদস্য।
“প্রস্তুত?” তার দলের একজন জিজ্ঞেস করল।
প্রেম শুধু মাথা নাড়ল। কোনো শব্দ নেই। প্রেমের উপরের দিকে কালো লেদারের জ্যাকেট, কাঁধ এবং কোমরের চারপাশ প্যাডিং দিয়ে তৈরি।। জ্যাকেটের পিছনে সূক্ষ্ম স্ট্রাইপ। যা বাইকের লাইটে ঝলমল করছে।
নিচে পরা ডার্ক গ্রে বা ব্ল্যাক ফিটেড জিন্স।

পায়ে মোটরসাইকেল বুট। পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ঢেকে রাখে যাতে ব্রেক বা স্টান্টের সময় সে নিরাপদ থাকে।
হাতে কালো ফিটেড গ্লাভস। রেস শুরু হলো। রাতের নিঃশব্দতা ভাঙল বাইকের গর্জন দিয়ে। প্রেমের হাত, পা, চোখ সব কিছুই এক ছন্দে। বাইক যেন তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অংশ। চারপাশে অন্য দল।
রাস্তায় বাঁক আসল।প্রেম নিখুঁত কন্ট্রোলে বাইক ন্যাভিগেট করল। বাতাস কেটে যাচ্ছে, চুলগুলো হেলমেটের ভেতরও উড়ছে। প্রতিপক্ষ চেষ্টা করছে তাকে পেছনে ফেলার। কিন্তু প্রেমের চপলতা এবং অভিজ্ঞতা সবকিছু ছাপিয়ে গেছে। শেষ লম্বা সরাসরি পথ। প্রেম তীব্র গতি, প্রতিটি রেসিং লাইন পার করে। ধুলো উড়ছে, কাদা ঝাপসা করছে, কিন্তু সে থামছে না। শেষ ফ্ল্যাগের কাছে পৌঁছতেই। প্রেম নেওয়াজ জিতল। রেসের শেষে, বাইক থামিয়ে হেলমেট খুলল। সবাই গর্জে তাকে চিয়ারআপ করছে। দলের সবাই পানি, হুইস্কি, ড্রিংকস নিয়ে তার দিকে ছুটে এলো, চিৎকার করে, হাত তুলে চিয়ার করতে।

“দেখেছিস? আমরা জানতাম তুই পারবি প্রেম।” কেউ একজন বলে উঠল। প্রেমের দলের লেডি বাইকারটার হাতে পানির বোতল। সে এগিয়ে দিতে যাবে তখনই হেরে যাওয়া প্রতিপক্ষ বলে উঠল, ” হেরে গেছি তো কি হয়েছে এলিসা? তুমি আজকে রাতটা আমার সঙ্গে কাটিয়ে আমায় জিতিয়ে দাও না।” এলিসার প্রেমের দিকে তাকাতেও এলো না। সে বাইকের ওপর হেলমেটটা রেখে নিচে নেমেই বলা নেই, কওয়া নেই একের পর এক ঘুষি মারতে থাকল ছেলেটিকে। ছেলেটি নিজেও বুঝতে পারেনি। সবাই এসে প্রেমের হাত থেকে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও পারছে না। শেষে অংকুর এসে অনেক কষ্টে প্রেমকে টেনে সাইডে নিয়ে যায়। প্রেম বলে উঠল, ‘আরে ছাড় আমাকে। একে তো হেরেছে তার ওপর আমার দলের বাইকারকে নোংরা কথা বলেছে? ওকে রুমেই পাঠাবো। তবে বেডরুম না, হাসপাতালের রুমে।”
ততক্ষণে ভিড় জমে গেছে। কেউ একজন চেঁচিয়ে উঠে বলল, ‘আরে প্রেম ভাই এই ছেলের শ্বাস চলছে না।”
অংকুর সেই কথা শুনে প্রেমের দিকে তাকাতেই প্রেম ভাবলেশহীন ভাবে বলল, ‘মাটি খুঁড়ে চাপা দিয়ে দে শালাকে।’

কালরাতে আর ঘুম হলো না। প্রত্যুষের সঙ্গে কথা বলার পর আর একটুও চোখ জুড়ে ঘুমেরা এলো না। ভোরের দিকে ঘুম ভাঙল তৃষার। সে উঠে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়াতেই এবার ডান পাশটায় চোখ গেল। ওইপাশটায় এত জঙ্গল কেন? লম্বা সব গাছের জন্য তো ভালো করে কিছু দেখাও যাচ্ছে না। তৃষার একটু হাঁটাহাঁটি করা দরকার। সে পানি খেয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো। বাড়ির বাইরে যাবে কি যাবে না ভাবতে ভাবতে চলেই গেল। কত বিঘা জমির উপর এই নেওয়াজ কুঠির? আচ্ছা প্রত্যুষের নামের শেষে তো দেওয়ান পদবী তাহলে বাড়ির নাম নেওয়াজ কেন? অদ্ভুত তো ভীষণ। বাড়ির সামনে ঝরণা। ফলফলাদির গাছের অভাব নেই। কী সুন্দর করে সাজানো গুছানো সব। তৃষা হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেল আরো সামনের দিকে। এখনও পুরোপুরি আলো ফুটেনি। তৃষা হাঁটতে হাঁটতে কখন যে জঙ্গলের দিকে পৌঁছে গেল। এদিকটায় আসার পর বুঝতে পারল ফোনটা সে রুমে রেখে এসেছে।

এমন অন্ধকার একটা হাতে বানানো বন। যাও সূর্যের আলো ছিল। এদিকটায় আসার পর সেই অবশিষ্ট আলো গুলোও অন্ধকারে বদলে গেল। জঙ্গলটা একটা সময় ফুরিয়ে গেল। একেবারে ছোট্ট একটা বন। শেষের দিকে আসতেই চোখে পড়ল একটা দোতলা কাঠের বাড়ি। চারিদিকে কেমন ছিমছাম। মাঝে একটা বাড়ি। তৃষা আর এগোবে কিনা ভাবতে ভাবতেই কানে একটা শব্দ এলো। মাটি খোঁড়ার শব্দ। এই অসময়ে কে মাটি খুঁড়ছে? সে এবার একটু ভয় অবশ্য পেল। কিন্তু ভ্রম ভেবে পাত্তা না দিয়ে আরো দুই কদম এগুতেই একটা গুনগুন শব্দ এলো। তার পা মুহূর্তেই থমকে গেল। জমাট বাঁধল। সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে কেউ গান গাইছে। এই গানের সুরটা তার পরিচিত। গানের গলা আরো স্পষ্ট হলো। শরীরের ডান পাশ দিয়ে বয়ে গেল একটা শিহরণ। কেউ গাইছে আর মাটি খুঁড়ছে।
~প্রেম আমার ওওওওও প্রেম আমার।~

প্রেমতৃষা পর্ব ১১

তৃষা আরেকটু এগিয়ে যেতেই হঠাৎ করে পেছন থেকে কেউ একজন তার মুখটা চেপে ধরল। তৃষা তার হাতের দিকে তাকালো। কালো একটা হুডি পড়া। তৃষা চিৎকার করার উপায় পাচ্ছে না। হঠাৎ লোকটা তার কানের কাছে এলো। ঘাড়ের কাছে মুখ রাখতেই বলল, “কোন ভুলে তুমি শুলে বলো এই ফুলশয্যায়? স্বপ্নের লাশ কাঁধে নিয়ে ওরা কেন চলে যায়?”

প্রেমতৃষা পর্ব ১৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here