প্রেমতৃষা পর্ব ২
ইশরাত জাহান জেরিন
না হওয়া সতীনের জামাই ফারাজ এলাহীর কাছে একটা কল দেই। কল দিয়ে কী বলব? আমার ভাইয়া ওরফে ছাইয়া, জানেন ভার্সিটির সিনিয়র পেম না ডিম ওই ছেলেটা দিলো আমায় খাইয়া? তৃষা পারলে ব্রেন থেকে এই স্মৃতি গুলো ডিলিট দিতো।
ভার্সিটির প্রথম দিনটাই এমন জঘন্য যাওয়ার খুব কী প্রয়োজন ছিল? ওই ব্যাটা প্রেমকে ইঁদুর মারার ঔষধ খাইয়ে দিতে ইচ্ছে করছে তৃষার। দুনিয়ায় কোনো হ্যান্ডসাম ছেলে কী নেই তৃষাকে এই হাইব্রিড করলার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য। তবে একটু শান্তি তো লাগছেই। লাগবে না? ওই প্রেমের হাওয়া যে লিক করে এসেছে তৃষা। মানে তার বাইকের। সকালে যেই বাইকটা তাকে মুতুজলে ফেলেছিল ওই বাইকের নাম্বারটা কেবল পেছন থেকে এক ঝলক দেখেছে। ওই করলার বাইকের নাম্বারের সঙ্গে মিলে যায়। তৃষাকে চুমু দিতে বলা তাই না? গায়ে গন্ধ বলে অপমান করা? একেবারে বুড়িগঙ্গার কালো পঁচা জলে চুবিয়ে রোদে শুকাতে ইচ্ছে করছে তৃষার। সে চিনে তৃষা কে? অসভ্য লোক। সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে যে প্রেম করতে হয় তা ওই মগা কী জানে না? ভাব দেখায় শাহরুখ খান, আচরণ তো নায়ক বগাখানের মতো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তৃষা কাজী বাড়ি বাড়ির ছোট মেয়ে। চট্টগ্রামের শান্তিবাগ শ্যামলী আবাসিক এলাকায় তাদের বাড়ি। তার বাবা অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। মা গৃহিণী। মূলত মায়ের থেকেই সাজগোছের স্বভাবটা পেয়েছে। জন্মের পর থেকে মাকে কখনো পরিপাটি ছাড়া দেখেনি সে। খোদার ত্রিশটা দিন ফকফকা, চকচকা থেকেছেন। তৃষার ছোট একটা বিচ্ছু ভাই আছে। নাম তইমুর। ক্লাস টেইনে পড়ে। এই বান্দার কথা বললেও কম পরে যাবে। বাথরুমেও ফোন নিয়ে যায়। ফোনের সঙ্গে তার যেই সম্পর্ক সেটা মনে হয় কালো জাদু করেও নষ্ট করা যাবে না।
তৃষা দূরন্ত চালাক বললেও ভুল হবে আবার বোকা বললেও। মানে এই মেয়ে কাজের না,আবার অনেক কাজের। পড়ালেখার মেধা প্রখর। তবে ওই মেধা খালি পড়ালেখাতেই কাজে লাগে। বাকি সব কিছুতে জিরো পার্সেন্ট ও কাজে লাগে না। আর যদি বলা হয় রূপ? হ্যাঁ ওই একটা আছে বলেই তো মাথার মধ্যে ব্রেনটা একটু কম। না মানে ব্রেন আছে কিন্তু সে অলসতার কারণে কাজে লাগায় না। তৃষার ঠোঁটের কাছে তিল আছে। তিলটা তাকে আর্কষণীয় করে। ওইসব টোল-ফোল তো তার পরে না কিন্তু হাসলে গজ দাঁতটা অবশ্য দেখা যায়। সেই ছোটো বেলার কথা। এক ফাইভে পড়া ছেলে তার গজ দাঁতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিল। সেই থেকে তৃষা তার দাঁতের বিরাট যত্ন নেয়। বলাতো যায় না দাঁতের নজরও তো লেগে যেতে পারে? তখন দাঁত পড়ে গেলে কিংবা পোকা ধরলে তো দেয়াল ভেঙে সাংবাদিক এসে যদি জিজ্ঞেস করে, ‘আপনার টুথপেষ্টে কি নুন আছে?’
পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি অলি-গলি পেরিয়ে বুড়িগঙ্গার উত্তর তীরে অবস্থিত সোয়ারিঘাটের নির্জনতা আজ অন্যরকম। নদীর কালো ঢেউ কেবল ধপধপ করে উঠছে। অন্ধকারে ডোবা রাত, শুধু দূরে কাকের মতো কিছু কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে, তারপর আবার সব স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই স্তব্ধতার মাঝেই প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে মরিয়া হয়ে ছুটে চলছে এক তরুণী। বিয়ে হয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ। যেই হাতের মেহেদীর রঙ এখনো পুরোপুরি ওঠেনি সেই হাতই আজ মাটি খুঁড়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। শ্বাসকষ্টে বুকে ধড়ফড়ানি, হৃদস্পন্দন যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে। তার অপরাধ কী? সে জানে না। সে শুধু জানে—তার পেছনে ছুটে আসা কালো হুডি আর মুখোশ পড়া মানুষটা তাকে খুন করবে। খুনটাও যেনতেন খুন নয়—নির্মমতার সংজ্ঞা পাল্টে দেওয়া খুন।
মেয়েটি অন্ধকার গলি পেরোতে না পেরোতেই ধপাস করে পড়ে যায় মাটিতে। হাঁটু চিরে ইটের ধারালো কোণা মাংসে ঢুকে যায়। ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে উঠে দাঁড়ানোর আগেই শুনতে পায় একটা গান। ফোনে ছাড়া সেই গান। গানের সঙ্গে সুর মেলাচ্ছে কেউ।
মেয়েটির বুকের ভেতর ভয়ের পাথর জমে ওঠে। চোখে অন্ধকার ঘনীভূত হয়। দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই হঠাৎ ঠান্ডা এক চাকু তার গলার ভেতর ঢুকে যায়,সোজা কণ্ঠনালির গভীরে। “গটগট” শব্দে রক্ত ছিটকে বেরোয়, একেবারে লাল ঝর্ণার প্রবাহের মতোই। মরণের সাথে সাথে ভয় বেড়ে যায়। কারণ গানটা এখনো বাজছে। সেই মানুষটা গাইছে গলা মিলিয়ে,
~কোন ভুলে তুমি শুলে বলো এই ফুলশয্যায়? স্বপ্নের লাশ কাঁদে নিয়ে ওরা কেন চলে যায়? প্রেম আমার… ওওও প্রেম আমার!~
মেয়েটি ছটফট করে, গলার ভেতর থেকে ভোঁতা শব্দ বেরোয়, জবাই করা পশুর মতো। মুখোশপরা খুনি একদৃষ্টে তাকিয়ে উপভোগ করে তার নিস্তেজ দেহের টানাপোড়ন। অভিশপ্ত এক হাসি ভেসে ওঠে মুখোশের আড়াল থেকে। ধীরে ধীরে মুখোশ খুলে ফেলে সে। চোখে উন্মাদনায় মেশানো উত্তেজনা, ঠোঁটে প্রশান্তির বাঁকা হাসি। কিন্তু এখনও শেষ হয়নি। হঠাৎ সে এক ঝটকায় চাকুটা গলার ভেতর ঘুরিয়ে দিল। রুহু কেঁপে উঠল। চোখগুলো বিস্ফারিত হয়ে ফেটে পড়তে চাইলেও পারল না। এই রাতের আঁধারে সোয়ারি ঘাট পেরিয়ে এই নির্জন জায়গায় কেউ নেই মেয়েটিকে বাঁচানোর জন্য। মেয়েটি ছটফট করছে। তবে সেই দৃশ্য তেমন একটা উপভোগ করতে পারছে না লোকটি। এখানে কোনো থ্রিল থ্রিল ব্যাপার আছে নাকি? সে এক ঝটকায় গলা থেকে চাকু বের করে পর পর চারটে কোপ বসালো চোখের মণির ওপর। গলে,ছিটকে একেবারে কালো মণিটা নরম হয়ে গেছে। চোখগুলো নরম হয়ে গলে পড়ল। গালের ওপর ছিটকে পড়ল লাল-কালো রক্তমাখা মাংসের টুকরো। মেয়েটি ততক্ষণে মৃত। মৃত্যুর কারণ জানার আগেই মৃত। মৃতদেহের ওপর ঝুঁকে খুনি হাত বাড়ালো, মেয়েটির লম্বা কালো চুলের ভেতর আঙুল চালিয়ে বলল, ‘বাহ চুলগুলো বেশ তো! আমার যে এগুলোই চাই।’
তারপর এক ঝটকায় হুডির পকেট থেকে কেঁচি বের করে ঘেচাং শব্দে গোড়া থেকে কেটে ফেলল পুরো চুল। হাতে নিয়ে এমন ভাবে দেখল যেন যে বিশ্ব জয় করে ফেলেছে। চোখে-মুখে আবার সেই তৃপ্তিদায়ক হাসির রেখা। চুলগুলো পকেটে ঢুকিয়ে দিলো সন্তুষ্টির হাসি মুখে নিয়ে। তারপর সোজা উঠে দাঁড়াল। কী গরম পড়েছে আজ। এত গরমে তো প্রতারকদের খুন করতে কষ্ট হয় তাই না? সে হুডিটা খুলে হাতে নিল। পরনে একটা সাদা রঙের শার্ট ছিল। শার্টের বুকের কাছের বোতামটা খুলে হাঁটতে হাঁটতে সেখান থেকে চলে গেল। লাশটা যে কিছু না বলা প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা করতে করতে ওপারে দাবি নিয়ে চলে গেল তাতে তার কিছু যায় আসে না। সকালে এই লাশ নিয়ে বড় হই-হট্টগোল বাঁধবে। জলদি বাড়ি ফিরে ঘুম দিতে হবে। নইলে সকালে খবরে ব্রকিং নিউজটা শুনবে কী করে? মানুষকে জানতে হবে না, জানতে হবে না একটা প্রতারকের শেষ পরিনতি কী ছিল? যাওয়ার সময় সে এক নাগালে গান গাইল,
~প্রেম আমার ওওওও প্রেম আমার~
নেওয়াজ কুঠি। কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় অবস্থিত সেকেলে একটা জমিদারী বাড়ি। যদিও এই বাড়ি দেখতে তেমন হলেও জমিদারদের বাড়ি নয়। একসময় ইংরেজরা তৈরি করেছিল। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে নেওয়াজ বাড়ির পূর্বপুরুষ কিনে রাখে। তারপর সিদ্দিক নেওয়াজ বাড়িটিকে পুনরায় সংশোধন করে এখানেই বসতি স্থাপন করেন। বুড়িগঙ্গার তীর ঘেষে নেওয়াজদের এই কুঠি। নেওয়াজ পুরান ঢাকার নামি-দামি বংশ। তাদের মশলার ব্যবসা আছে। দেশে-বিদেশে নদীপথে মশলা রপ্তানি করে থাকেন। পুরান ঢাকার নামী-দামী আড়ত গুলোর মধ্যে শতাংশ তাদের নিজস্ব। নেওয়াজ বাড়ির আসল কর্তা সিদ্দিক নেওয়াজ। এই বয়সে এসেও একা হাতে সব সামলাচ্ছেন। ছেলে একটা আছে। তবে সে এখন থেকেও নেই। নিজের আপন বলতে একমাত্র নাতি প্রেম নেওয়াজ আছে। তবে সে তো মশাই বদমেজাজি হয়েছে একটা। বাইক নিয়ে ঘোরাঘুরি, এখানে-সেখানে ঘুরে ফটোগ্রাফি, গিটার একটা নিয়ে রাত জেগে আড্ডা দেওয়া এসব ছাড়া আর তার কাজ কী? কই দাদার বয়স হয়েছে ব্যবসার হাল নিজে ধরবে, তা তো নয় উল্টো রাতে মদ খেয়ে বাসায় ফিরলে এই বুড়োকেই সামাল দিতে হয়। তবে আর নয়। এবার একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে পড়িয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত এই মহাশয় লাইনে আসার পাত্র নয়। হয়েছে একটা বুনো হায়না। মুখ-হাত দুটোই সবার আগে চলে। বাচ্চা-কাচ্চা না হলে নাতির এই স্বভাব বোধহয় আর ঠিক হচ্ছে না। সংসারের পানি গায়ে পড়লে বখাটেপনা সারবে।
সিদ্দিক নেওয়াজ সকাল সকাল উঠেই চেচামেচি করেন। দৌড়ে আসেন তার মেয়ে হেতিজা। হেতিজারা আগে রাজশাহী থাকত। স্বামী মরেছে সেই ছোট মেয়েটা হওয়ার পর। শেষে এত অভাব অনটন দেখে সিদ্দিক নিজের কাছে এনে রাখেন। হেতিজার ঘরে দুই ছেলে-মেয়ে। ছেলেটা একেবারে মানুষের মতো মানুষ হয়েছে বলা চলে। স্পেশাল ফোর্সের অফিসার। তার কথা বলার ভঙ্গিমা থেকে শুরু করে সবই আলাদা। বেশি কথা বলে না। তবে যা বলে তা কম কোথায়? এই বাড়িতে প্রেম নেওয়াজের ভক্তের থেকে প্রত্যুষ দেওয়ানের ভক্ত বেশি। মেয়ের মায়েরা লাইন দিয়ে দাড়িয়ে থাকেন বিয়ের কথা বলার জন্য। সরকারি চাকরিজীবি তাও আবার ইন্টেলিজেন্স স্পেশাল ফোর্সের অফিসার? ড্যাশিং লুক, মারাত্মক চাহুনি কোনটার অভাব তার? প্রত্যুষ নাস্তার টেবিলে বসে বোন প্রেমান্তিকে জিজ্ঞেস করল, ‘কিরে প্রেমা প্রেম কোথায়? নাস্তা করবে না?’
‘সে তো রাত করে ফিরেছে। আমি ডেকে আনি?’
‘ইচ্ছে।’
প্রেমা মুখটা ভেংচি কেটে ঢেঙঢেঙিয়ে প্রেমের ঘরের দিকে গেল। নেওয়াজদের এই এত বড় সীমানার মধ্যে দু’টো বাড়ি। একটা নেওয়াজ কুঠী। অন্যটা হাউজ ওফ লাভ। একটা বাগান বাড়ি। প্রেমের পঁচিশ তম জন্মদিনে দাদা তাকে বাড়িটি একেবারে নিজের নামে লিখে দিয়েছেন। এখন এখানে কম সেখানেই বেশি থাকা হয়। কাঠের তৈরি একটা বাড়ি। চারপাশ নিজের মতো করে সাজিয়েছে। বাড়িটা দোতলা তবে বেশি বড় নয়। চারপাশটা কেমন যেন ভয়ানক ভয়ানক লাগে। প্রকট দুপুরে কিংবা রাতে ভয়ে ওইদিকে মানুষ যেতে চায় না। যদিও প্রেম তার ত্রিশ সীমানায় কাউকে যেতেও দেয় না। রান্না থেকে ঘরের কাজ সে নিজে সামলায়। একবার দাদু কাজের মেয়েকে রুমে পাঠিয়েছিল। সেই মেয়ে তো সকাল সকাল খালি গায়ে উপুর হয়ে শুয়ে থাকা প্রেম কে দেখে প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে একেবারে শেষ। প্রেমকে কফি দিতে এসেছে নাকি প্রেমকে চোখে খেতে এসেছে সে নিজেই ভালো জানে। প্রেম খালি একবার বলেছিল, ‘দেখাদেখি করে চোখের স্বাদ মিটবে তবে বাকিগুলো? কাম। প্রেমময় তৃষ্ণায় তোমায় একটু তৃষ্ণাত্ব করি। কোনটা দিয়ে শুরু করব ডার্লিং?’
সেই মেয়ে ওইদিন নতুন কাজে এসেছিল। দু’দিনও টিকতে পারেনি। প্রেমের সঙ্গে দেখা হলেই কাম হেয়ার কাম হেয়ার বলত সে চোখ মেরে। মেয়ের আর সাহসই হয়নি ওই বাড়িতে কাজ করার কিংবা আর প্রেমের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়ার।
প্রেমা ঘরে ঢুকতেই দেখল প্রেম বিছানায় শুয়ে আছে। জুতাগুলোও খুলেনি। গায়ে সাদা একটা শার্ট। দেখে মনে হচ্ছে রাতে কত গুরুত্বপূর্ণ কাজই না করে এসেছে। প্রেমার ইচ্ছে করছে প্রেমের ঘাড় ছুঁই ছুঁই কার্লি চুলগুলোতে একটু হাত বুলিয়ে দিতে। সে মিটিমিটি হেসে বলল, ‘ও প্রেম ভাই। নাস্তা খাবে না?’
প্রেম নড়েচড়ে বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘তোমার বাল খাবো। যাও নিয়ে আসো।’
‘একটু সুন্দর করে বললে তো সবই নিয়ে আসতে পারি।’
‘সুন্দর তোমার..’ বলেও থেমে গেল প্রেম। ‘তোকে না বলেছি আমার ঘরে আসবি না?’
‘এমন করো কেন?’
‘সকাল সকাল পিরিতের প্যাচাল পারিস না তো। তোকে দেখলেই আমার মাথার রগ গুলো নড়ে উঠে।’
‘কেন সুন্দর লাগছে না? নতুন ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে এসেছি।’
‘খালি ফেসওয়াশ করলেই হয় রে মগী? একটু ব্রেনওয়াশেরও তো দরকার আছে।’
প্রেমা আর অপমান নিতে পারছে না। রোজ রোজ এত অপমান! আর মানা যাচ্ছে না। এই লোককে বিয়ে করে মানুষ বানাতে হবে। কিন্তু সে তাকে বিয়ে করলে তো! প্রেমা গাল ফুলিয়ে উঠে পড়ে। সে যাওয়ার পরই প্রেম উঠে একটা সিগারেট ধরায়। দূর বাল আজকে লেট হয়ে গেল। জলদি ভার্সিটি যাওয়ার কথা ছিল। ওই শালী বাঁদরমুখি তার বাইকের হাওয়া লিক করে পালিয়েছে কাল। ওর ভেতর এত আগুন কিসের? প্রেম আজ গলাটা চেপে ধরে বুড়িগঙ্গার পানি দিয়ে ওর আগুন নিভাবে।
নাস্তা তো দূরে থাক। আর তীব্র মেজাজ খারাপ নিয়ে কারো সঙ্গে দেখা না করেই প্রেম ভার্সিটি যায়। তখন ক্লাস চলছে পুরোদমে। প্রেমের হাঁটার গতি দেখেই সবাই বুঝতে পারছে আজ কারোর ওপর তাল পড়বে। প্রেমের সবচেয়ে কাছের মানুষ হচ্ছে অঙ্কুর। গুরু গুরু বলে ডেকে মাথা খায় ছেলেটা। সেও আজকে প্রেমের এই রূপ দেখে আন্দাজ করতে পারছে ভয়াবহ কিছু হতে চলেছে। প্রেম সরাসরি তৃষার ক্লাসরুমে গিয়ে পুরো জমজমাট চলা ক্লাসের মাঝে এসে পকেট থেকে পিস্তলটা বের করে একেবারে তৃষার কপাল বরাবরের ধরে। তৃষার মধ্যে কোনো রিয়াকশন দেই। তাকে ভয় দেখানোর জন্য এত সস্তা খেলনা গুলি? সে ফোনটা বের করে প্রেমকে বলল, ‘এই এই ভালো করে ধরো। চেহারাটা যেন এমনই গুন্ডা গুন্ডা লাগে। এই শিমলা একটা ছবি তুলে দে তো। ইন্সট্রাগামে পোস্ট করব।’
প্রেমতৃষা পর্ব ১
রীতিমতো তখন ক্লাস পুরো চুপচাপ। স্যার নিজেও চুপসে আছেন। প্রেমের মেজাজ তখন আরো খারাপ হয়েছে। সে পুরো ক্লাসের মধ্যে তৃষার গলা চেপে ধরে বলল, ‘বান্দির বাচ্চা তোর সাথে প্রেম ইতরামো করে রে? এই অঙ্কুর হলের রুমের চাবি দে তো। শালীকে বুঝিয়ে দেই পিস্তল আমার আসল না খেলনা?