প্রেমতৃষা পর্ব ৩০
ইশরাত জাহান জেরিন
মুখ থেকে মাক্সটা খুলে বিছানায় ফেলতেই তৃষা বলে উঠল, ‘প্রেম ভাই আপনি?’ভয়, বিস্ময় আর কিছুটা রাগ মিশ্রিত কণ্ঠে।
প্রেম ধীরে হেসে বলল,’সোনা ভাই-ছাই অনেক বলেছো। এখন তোমার ভাতারে কনভার্ট হব।’শিরদাঁড়ার ভিতর দমবন্ধ করা সুলুক ভঙ্গিতে।
‘আপনি কই ছিলেন এতদিন?’তৃষার কণ্ঠে কাঁপুনি।
প্রেম হাসতে হাসতে উত্তর দিল, ‘জাহান্নামের আগুন দিয়ে তন্দুরি করে খাওয়ার ইচ্ছে জেগেছিল তাই পিকনিকে গিয়েছিলাম।’
তৃষা চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে রাগ চেপে ধরে বলল, ‘দেখুন আপনার লজ্জা শরম নেই? বড় ভাইয়ের হবু বউকে তুলে এনেছেন? আর একটা মাস আপনার খবর ছিল না। নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন তো এখন স্টার জলসার নাটক দেখাতে এসেছেন?’
‘তোকে বাড়িতে রেখে গিয়েছিলাম তাই বলে তুই নতুন লাং খুঁজবি?’ ভ্রু উঁচু করে, চেপে রাখা ঠাণ্ডা স্বরে প্রশ্ন করল।
‘লাং না ওটা আমার হবু ভাতার।’ তৃষা ঠোঁট কামড়ে ধরে, কণ্ঠ চড়াচড়ি করে জবাব দিলো।
‘ভাতার? তোমায় এক কিক মেরে ফেলব আমি কাতার।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তৃষা মনকে সামলে বলল, ,’ভালোই হবে ভিসা আর পাসপোর্ট লাগবে না। এমনিতেও আপনি যে কিপ্টে। ‘ তৃষা এক মুহূর্তে প্রেমকে এতদিন পরে দেখে একটু বেশিই আবেগি হয়ে যায়। না না সে কি ভুলে গেছে এই প্রেম ভাই তার সঙ্গে কি গেইম খেলেছে? আর এর ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। তৃষা নিজেকে সামলে এবার শান্ত হওয়ার চেষ্টা করে প্রেমকে বলল, ‘আমাকে বাড়ি দিয়ে আসুন। আর এটা কোন জায়গা? আপনি মানুষটা এত জঘন্য কেন বলতে পারবেন?’
প্রেম এক মুহূর্ত থেমে বলল, ‘জঘন্য হওয়ার পেছনে কোনো কারন লুকিয়ে নেই। জঘন্য কাজ কারবার আমার পুষে বেশি তাই জঘন্য। ‘
তৃষা চট করে বলল, ‘মুখটা ভালোই চলে আর কিছু চলুক কিংবা না চলুক।’
প্রেম ধীরে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে এসে বলল, ‘চালালে সবই চলবে। ট্রাই করে দেখতে পারো।’
‘নোংরামির একটা লিমিট আছে।’তৃষা ক্ষেপা স্বরে বলল।
‘প্রেম লিমিটলেস।’ প্রেমের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি।
তৃষা মুখ ভেংচি কেটে বলল, ‘প্রেম আমার বাল।’ বলতে না বলতেই প্রেমের শক্ত হাতের একটা চর এসে তৃষার গালে পড়ে। ব্যথায় নিজের গালে হাত দিয়ে চেঁচাতে যাবে তার আগেই প্রেম তৃষার মুখটা চেপে ধরে বলল, ‘ আমার শব্দ পছন্দ না। তবে শব্দে শব্দে অনেক তফাৎ আছে। কিছু শব্দ সোনা তোমার মুখ দিয়ে দরকারে না বের হলে আমার আবার জমবে না।’
তৃষা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই প্রেম তাকে ছেড়ে দেয়। তাল সামলাতে না পেরে তৃষা পড়তে পড়তে বাঁচল। প্রেম ফোন বের করে কাকে যেন কল করতেই কিছুক্ষণের মধ্যে শিমলা আর অংকুর রুমে ঢুকলো। পাশে একজন হুজুরমতো মুরুব্বি। তৃষার বুঝতে বাকি নেই এসবের সঙ্গে যে সবাই জড়িত ছিল। ইশ তার কি বালের বন্ধু। বান্ধুবীর বারা ভাতে ছাই দিয়ে বেহায়ার মতো জামাই নিয়ে ঢলাঢলি করে দাঁড়িয়ে আছে। তবে এখানে সে বিপদ বিপদ গন্ধ অবশ্য ঠিকই পাচ্ছে। কি করবে বুঝতে না পেরে উল্টো দিকে ছুটতে শুরু করলে অটোমেটিক ডোর আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। কেমন করে বন্ধ হয়ে গেল?
এই হারে বজ্জাত প্রেমের তো আবার সব খানে পাসওয়ার্ড মারতে হয়। উদ্দেশ্য ভালো ঠেকছে না। তৃষা পেছনে একবার ফিরে তাকায়৷ দেখতে পায় প্রেমের হাতে ফোন। বোধ-হয় ফোনের সঙ্গে দরজার কোনো কানেকশন আছে। ওই বজ্জাত বিটকেলটাই দরজা বন্ধ করেছে। কিন্তু এখান থেকে মুক্তির উপায় কি? উপায় না পেয়ে তৃষা বিছানায় এসে বসে। শিমলা এতক্ষণ যাবৎ তার নাটক দেখে ক্লান্ত হয়ে পাশে বসতেই প্রেম কাজীকে ইশারা করে বলল, ‘এবার একটু আল্লাহর নামে বিয়েটা পড়িয়ে দেন তো জনাব।’
মুহূর্তেই তৃষার চোখ কোঠর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। সে তৎক্ষনাৎ ভ্রু কুঁচকে রাগান্বিত কণ্ঠে প্রেমকে বলল, ‘আপনার মাথা গেছে। বলেছি না আমাকে বাড়ি দিয়ে আসুন। আমাকে আপনার তামাশার পাত্র মনে হয়? ভালো লাগবে কাছে আসবেন,ভালো লাগবে না চলে যাবেন?’
‘চুপ।’প্রেম ধীর কণ্ঠে বলল।
তৃষা দমে না গিয়ে পাল্টা জবাব দেয়। ‘চুপ করেন গিয়ে আপনি।’
‘মানে একমাসে এত পরিবর্তন?’
‘ পরিবর্তনের দেখেছেন কি? এটা শুরু কেবলমাত্র। ‘
‘ সমস্যা নেই শেষটা না হয় আমি করব।’
‘দেখা যাবে।’
‘দেখানোর জন্যই তো বিয়েটা করছি। বিয়ের পর সারাদিন খালি দেখে দেখে পেট ভরবা।’
‘অসভ্য লোক।’তৃষা ঘৃণা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল।
‘বিয়েটা হোক একবার। অসভ্য কতপ্রকার আর কি কি তা ব্যাখ্যা সহ দেখাবো মাই বিটারহার্ট।’
‘করব না আপনাকে বিয়ে। দেশে পাত্রের অভাব পরেছে নাকি?’
‘আচ্ছা করা লাগবে না।’ তৃষা অবাক হয়। ওমা এত সহজে মেনেও নিলো? যাক আঙুল আর বাঁকাতে হলো না।’
প্রেম হঠাৎ একটা কল করল। তৃষাকে ডেকে বলল, ‘এই নাও তোমার ভাই তৈমুর কি যেন বলবে।’
তৃষার হেঁচকি উঠে গেল। তার ভাইয়ের নাম এই হাইব্রিড করলাটা কি করে জানে? তৃষা ভয়ে ভয়ে ফোনটা হাতে নিতেই দেখল ফোনের ওপাশে তৈমুর। সে হেসে বলছে, ‘আপু জলদি বিয়েটা করে নাও না। প্রেম ভাইয়া বলেছে তুমি তাকে বিয়ে করলে সে আমায় এপেলের ট্যাব কিনে দেবে।’
তৃষা ভাইকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রেম ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে কেটে দিয়ে বলল, ‘ওর বয়সই বা কতটুকু? বোন হিসেবে তুমি কি চাও এই ছোট্ট জীবনটা এখানেই শেষ হয়ে যাক?’ তৃষার চোখে এবার সত্যি সত্যি জল। এই মানুষটা খারাপ ভেবেছিল সে। এখন তো দেখছে মহা খারাপ এই লোক। তৃষার চোখে জল দেখে প্রেম এগিয়ে এসে সেই জল মুছে দিতে চাইলে তৃষা এক পা পিছিয়ে যায়। তা দেখে প্রেমের রাগ হয়। সে টেনে তৃষাকে কাছে এনে চোখের জল মুছে তবেই তাকে ছাড়ে। তৃষা ধপাস করে খাটে বসতেই প্রেম কাজীকে ইশারা করতেই সে বিয়ে পড়ানো শুরু করে। তৃষার মুখে কোনো জবাব নেই। কেবল সে ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে প্রেমের দিকে চেয়ে থাকে। প্রেমের দৃষ্টিও যে অন্য দিকে তা বললে ভুল হবে। কারণ সেও তীক্ষ্ণ চাহনি নিক্ষেপ করেছে তৃষার দিকে। হাজারটা না বলা কথা সেই চাহনির মধ্যে থেকে বেড়িয়ে আসছে। একবার তৃষা যদি সেই কথা গুলো পড়ার চেষ্টা করত। কেবল একটি বার তাহলে আজকে এত জোরজবরদস্তির প্রশ্নই উঠত না। তবে প্রেমের সফট রোমান্সে পোষায় না, তার চেয়ে ফ্রোস রোমান্স বেটার। যা তার সেটা সে ছিনিয়ে আদায় করতেই অভস্ত্য।
রুমের সমস্ত জিনিসপত্র ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ। হেতিজা চেষ্টা করেও ছেলেকে শান্ত করতে পারছে না। প্রেমা ভয়ে সে এক কোণে গুটিসুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সিদ্দিক নেওয়াজ নাতিকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু প্রত্যুষের উন্মাদনা যেন কোনো নিয়ম মানে না। অবশেষে মা নিজের মন ধরে রাখতে পারলেন না। চোখের জল ফেলতে ফেলতে তিনি জোর করে ছেলেকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন। সিদ্দিক নেওয়াজ বারবার নাতিকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, “প্রত্যুষ, শান্ত হও, কিছু হয়নি… আমরা এখানে আছি তো। ব্যবস্থা হবে।” কিন্তু প্রত্যুষ যেন অন্য কোনো জগতে, নিজের ক্ষোভের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে। তার চোখ চকচকে, গলায় কণ্ঠকাঠিন্য, শরীর যেন আছড়ে পড়ছে প্রতিটি শব্দে।
অবশেষে মা নিজেকে সামলাতে পারলেন না।
চোখের জল ফেলতে ফেলতে তিনি জোর করে ছেলেকে বুকে টেনে শান্ত করার চেষ্টা করলেন। প্রত্যুষের সমস্ত আবেগ মাটিতে ছুঁয়ে গেছে। বুকে টেনে নিলে প্রত্যুষের চোখের বাঁধও ভেঙে গেল। সে মাকে শক্ত করে জড়িয়ে বলল, ‘মা তৃষাকে এনে দাও মা। ও আমাকে রেখে কেন চলে গেল। মা ওর আর আমার না বিয়ে হওয়ার কথা ছিল? কেন চলে গেল? কোথায় চলে গেল?’বলেই বেডসাইড টেবিলের ওপর রাখা কাঁচের ফুলদানি সজোরে লাথি মেরে মাটিতে ভেঙে দিল। তার চোখের জল আর রাগ একসাথে ছুটে আসে, মুখ ভেঙে পড়ার মতো, কণ্ঠ ভেঙে চিৎকারে রূপ নেয়। ছন্নছাড়া উন্মাদের মতো সে বলল,
“মা… আমি যে করেই হোক তৃষাকে খুঁজে আনবো। ও আমার বউ হবেই! পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই, যা আমাকে ওর থেকে আলাদা করতে পারবে। তৃষাকে পাওয়ার লড়াইয়ে দরকার হলে মা, জানটা খুলে হাতে তুলে দেব।”
মা অশ্রুবাহী কণ্ঠে চেষ্টা করলেন শান্ত করার, “প্রত্যুষ… বাবা শান্ত হও। দেখো, কিছু হয়নি। আমি জানি, তুমি ঠিকই বউমাকে খুঁজে বের করবে। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
কিন্তু প্রত্যুষ থামল না। তার রাগ, দুঃখ, এবং উদ্বেগ এতোটাই প্রবল যে শব্দের আকারও তার অনুভূতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সে উঠে দাঁড়িয়ে ফোন হাতে নিয়ে সরাসরি অফিসে কল করল,
“আমার আগামী এক ঘণ্টার মধ্যে তৃষার খোঁজ চাই। আমি অফিসে আসছি। একটা ভুল হলে… চাকরি থাকবে না। বুঝেছ?”
ওপাশের জুনিয়র অফিসাররা বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। তারা জানে এই মানুষটি এত উচ্চ পদে থেকেও সাধারণত সরাসরি এমন টোনে কথা বলেন না। কিন্তু আজকের মানুষটিকে অন্য কেউ মনে হলো। চৌদ্দ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। ঘরে রাগ দেখানো আর চলবে না। নিজের কাজ নিজেকেই সামলাতে হবে। প্রত্যুষ নিচে নামার সময় যখন তৃষার ঘরটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, বুকটা যেন চিলিক করে ওঠে। মনে মনে সে ভাবল, “হায়… আমি নিজের জিনিস আগলে রাখতে পারি। জিনিস আগলে রাখতে যদি আমাকে খারাপ হতে হয়, তবুও হব। তৃষাকে আমি যে কোনও মূল্যেই আমার জীবন সঙ্গিনী করবোই করব।”
তৃষার গায়ে এখনো শাড়িটা। রুমে জামা-কাপড় দিয়ে গেছে। তাও কি রেখে গেছে? একটা পাতলা স্লিভলেস সাদা নাইটি। ওই শিমলাকে কুকুর দিয়ে কামড় খাওয়ানোর দরকার। ওর মতো চরিত্র খারাপ নাকি তৃষার? এসব কেন পড়বে? তার ওপর হতে চেয়েছিল দেওয়ান হয়ে গেল নেওয়াজ। প্রেম নেওয়াজের আন্ডারপেন্টের ভেতর বিষ পিঁপড়া ছেড়ে দিলেও তৃষার মন শান্ত হবে না। রুমের মধ্যে লক করে বজ্জাত, খবিশ লোকটা কার সঙ্গে না জানি টাংকি মারতে গেছে? আর এই লোক তাকে কোথায় এনে আঁটকে রেখেছে এখনো বুঝতে পারছে না। বারান্দায় দাঁড়ালে কতটুকু আন্দাজ করা যায় কোনো পাহাড়ের ওপরই বাড়িটা।
আচ্ছা এটা আসলেই কোনো বাড়ি নাকি আবার সাজেকের কোনো রিসোর্ট? আল্লাহ মাবুদ ভালো জানেন। এখন এই বারান্দা থেকেও লাফ দেওয়ার উপায় নেই। হঠাৎ দরজটা খুলে গেল। প্রেম খালি গায়ে প্রবেশ করতেই তৃষার চোখ গেল তার বুকের দিকে। সুঠাম দেহের খাঁজ বেয়ে কেমন শিশিরের মতো ঘামগুলো মুক্তোর মতো গড়িয়ে পড়ছে। আহা কি মনোরম দৃশ্য। এই দৃশ্য তো বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্যকে হার মানায়। তবে মুহূর্তেই তৃষা নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করল। কি করছে টা কি সে? এই লোক তাকে রেখে চোরের মতো পালিয়েছিল তার ওপর এতদিন পর এসে জোর করে ব্লাকমেইল করে বিয়ে করেছে তার প্রতি গললে হবে না। মনের মধ্যে পুষে রাখা রাগ, ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করতে হবে। তৃষা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বিরক্ত স্বরে বলল, ‘লজ্জা সরমের বালাই খেয়েছেন নাকি? একটা মেয়ের সামনে বস্ত্রহীন ভাবে থেকে কি প্রমান করতে চাইছেন?’
প্রেম তৃষাকে পাত্তা না দিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে গান ছাড়ল। তৃষার তাতে বিরক্তি লাগল। তৃষা চেঁচিয়ে উঠল, ‘আপনার শোনায় সমস্যা আছে নাকি? শুনতে পাচ্ছেন না?’
প্রেম এবার ধীরে মাথা তুলে তাকাল তার চোখের দিকে। তৃষা হঠাৎ থেমে গেল। প্রেম উঠে দাঁড়িয়ে কাছে এগিয়ে এসে গম্ভীর স্বরে বলল, ‘নতুন বউয়েরা লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে থাকে। আর তুমি কিনা স্বামীর সঙ্গে গলা উঁচু করে কথা বলছো? পাপী নারী! আচ্ছা সমস্যা নেই আমি আমার প্রতিটি স্পর্শে তোমায় সব শিখিয়ে দেব।’
তৃষা ভয়ে-পিছু হটে কাঁপা গলায় বলল, ‘আপনি দূরে যাবেন?’
প্রেম ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি এনে ফিসফিস করে বলল, ‘আরেকবার বলে দেখো। এতটা কাছে চলে আসব না পালানোর পথ খুঁজে পাবে না প্রিমরোজ।’
তৃষা হকচকিয়ে গেল—“প্রিমরোজ” শুনে এক মুহূর্ত থমকে দাঁড়াল। এটা তো তার পছন্দের ব্যান্ডের নাম।
সে গলা কাঁপিয়ে বলল, ‘দেখুন আমি ওইসব নোংরা জামা পড়ে আপনার সামনে আসতে পারব না।’
প্রেম মুচকি হেসে জবাব দিল, ‘জামা পড়ে সামনে আসতে বলল কে?’
তৃষা রাগ চেপে প্রশ্ন করল, ‘তো কি ভাবে আসব?’
প্রেম নির্লজ্জ ভঙ্গিতে হেসে বলল, ‘জামা ছাড়া মানুষ যেমন ভাবে আসে তেমন ভাবে এলেই চলবে।’
তৃষা বিরক্ত হয়ে কেঁপে উঠল,’নোংরা।’
প্রেম ঠোঁট কামড়ে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিল, ‘তোর নানায় নোংরা।’
তৃষা চোখ রাঙিয়ে বলল, ‘কথায় কথায় নানাকে তুলেন কেন?’
প্রেম গা ছমছমে ভঙ্গিতে হেসে বলল, ‘যাও সোনা এখন থেকে তোমার নানাকে না তুলে তার আউকে তুলব। ‘
তৃষা বিরক্ত হয়ে হাঁফ ছাড়ল, ‘উফ।’
প্রেম খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠল,’ পঁচা সাউন্ড করে না বউ। কুচ কুচ হোতা হে।’
তৃষা এবার ধমক দিল, ‘থামুন বলছি। এই যে শুনেন না! বাড়ি যাব আমি।’
প্রেম ক্ষেপে উঠে গর্জে উঠল, ‘বান্দির বাচ্চা চুপ কর! বাসর করছি আমি এখনো? খালি বাড়ি যাব, বাড়ি যাব লাগাইছিস? তোকে আমি কবরে পাঠাব। শাড়ি খুল আগে। বালের এত সেইফটিপিন লাগাইছো কেন? এই বাল খুলতে ঝামেলা হয় না? এই শাড়ি এত ঢং করে পড়া লাগে? প্যাচিয়ে পড়লেই তো হয়। নারী এই মাথার মধ্যে এক গাদা ক্লিপ আর শাড়িতে এক গাদা পিন লাগায় কেবল স্বামী জাতিকে হেনস্তা করার জন্য। বুঝি না আমি বাল?’
প্রেম শাড়িতে হাত দিতে গেলে তৃষা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল, দৃঢ় স্বরে বলল, ‘দেখুন এসব কিন্তু ঠিক না। বউ বলে যা ইচ্ছে তাই করতে পারবেন না। আমি আপনার সঙ্গে বাসর করব না। যান গিয়ে গোসল করে আসেন। ছি ছি ছি শরীর দিয়ে ঘাম ঝড়ছে। না জানি কার সঙ্গে কি করে এসেছেন।’
প্রেম হো হো করে হেসে উঠল, ‘আরে বলদ শরীরচর্চা করেছি। বাসরটা করতে দেও সোনা একবার এর থেকে দ্বিগুন ঘাম তোমার শরীর দিয়ে ঝড়াবো আমি। আই প্রমিস।’
তৃষা দাঁত চেপে বলল, ‘রাগ উঠছে কিন্তু।’
প্রেমতৃষা পর্ব ২৯ (২)
প্রেম ভয় ধরানো স্বরে বলল, ‘ আরে শাড়ি তুই খুলবি? এই শাড়ির সঙ্গে কিন্তু তোকে ফ্যানের সঙ্গে বুঝাবো।’
তৃষা হঠাৎ তাচ্ছিল্য করে বলল, ‘কিন্তু আপনার তো ইয়ে নেই।’
প্রেম হতভম্ব হয়ে বলল, ‘ইয়ে নেই মানে? হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ইয়ে নেই?’
তৃষা ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল, ‘আরে সিলিং ফ্যান কই? এসি ছাড়া তো কিছুই চোখে পড়ছিল না। ইয়ে মানে সিলিং ফ্যানটা কই?’
‘তোর নানার পেছন সই।’