প্রেমতৃষা পর্ব ৬
ইশরাত জাহান জেরিন
পুরান ঢাকার একটা চোরাই ক্লাব ঘর। চোরাই বলার যথেষ্ট একটা কারণ আছে। কারণ এখানে অবৈধভাবে রাতের বেলা পার্টি করা হয়। ভয়ানক সব নেশা করে মানুষেরা। মেয়ে মানুষের সঙ্গে সময় কাটানো এখানে একেবারে সাধারণ বিষয় বলেই বিবেচনা করা হয়। তবে আজকের বিষয়টি আলাদা কারণ আজকে এই ক্লাবের অন্যতম কাস্টমার প্রেম নেওয়াজের আটাইশতম জন্মদিন। প্রতিবার জন্মদিনে সে নাইটক্লাব পুরোটা ভাড়া করে নেয়। সবার জন্য সব কিছু ফ্রি করে দেয়। তবে এখনো সে এসে উপস্থিত হয়নি। প্রেমের বার্থডে কেক দিয়ে নয় বরং মদ দিয়ে উদযাপন করা হয়। নামি-দামি সব ব্রেন্ড।
হঠাৎ বাইরে শব্দ হয়। গরগর শব্দগুলো যেন রাস্তা শাসন করে বেড়াচ্ছে। ক্লাবে যেই মেয়েটা ম্যানেজারের পদে আছে তার বয়সই বা কত? অতীত তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। তবে যাই হোক সে মন-প্রাণ দিয়ে যেই মানুষটার জন্য সবসময় অপেক্ষা করে থাকে সে হচ্ছে প্রেম নেওয়াজ। তার প্রেম। মেয়েটির নাম ইরিন। মেয়েটি এমন কোনো নেশা নেই করেনি, এমন কোনো বাজে কাজ নেই যা তার করা বাকি। প্রেম আর তার মধ্যে এসব দিক থেকে মিলের অভাব নেই। সে জানে প্রেম একদিন তার হবেই। কোনো না কোনো ভাবে। নইলে কী এত এত মেয়ে থাকতে প্রেম বারবার তার কাছে আসে?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইরিন বাইরে বের হওয়ার আগেই দেখল এক দল মানুষ প্রেমকে ঘিরে রেখেছে। সে ভিড়ের মাঝ থেকে এক ঝলক প্রেমকে দেখল, কালো চামড়ার জ্যাকেট, কনুইতে ধাতব গার্ড, হাতে শক্ত গ্লাভস। মুখে হেলমেট, কিন্তু ভেতর থেকে চোখের ধারালো দৃষ্টি বেরিয়ে আসছে ভিজারের ফাঁক দিয়ে। প্রেমের পাশের বাইকে অংকুর আছে। ওরা বাইক রাইড থেকে যে মাত্র ফিরেছে তা বুঝতে বাকি রইল না ইরিনের। প্রেম ধীরে হেলমেটের লক খুলে মাথা থেকে টেনে নামাল। ভেতর থেকে ঘামে ভেজা চুল এলোমেলো হয়ে পড়ল কপালে, মুখে সেই শীতল বেপরোয়া দৃষ্টি। ঠোঁটের কোণে একচিলতে বাঁকা হাসি। চারপাশের মেয়েরা মুহূর্তেই কেমন যেন বদলে গেল। প্রেমকে দেখে তাদের চোখের দৃষ্টি যেন হিপনোটাইজড। দু-একজন ফিসফিস করে নামটা বলল, “প্রেম নেওয়াজ… চলে এসেছে।”
মেয়েদের কেউ ঠোঁটে লিপস্টিক ছড়িয়ে ফিসফিস করে হাসল, কেউ আবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করতে লাগল। কারও চোখে বিস্ময়, কারও চোখে কামনা। হয়তো প্রেমকে একটু ভালো করে দেখার, তার ভারী নিঃশ্বাসের পতনে নিজের ধ্বংস ডেকে আনার। প্রেম আর দেরি করল না। বাইক থেকে নামতেই ভারী বুটের শব্দ মাটিতে বাজল টক…টক শব্দ…। সে ঠাণ্ডা ভঙ্গিতে বাইকের চাবি এক ঝটকায় ছুঁড়ে মারল অংকুরের দিকে। অংকুর হকচকিয়ে গেল, কিন্তু মুহূর্তেই চাবি ধরে ফেলল। চাবিটা পকেটে রেখে সেও নেমে পড়ল। দুই ধারের মানুষকে তখন সিকিউরিটি আঁটকে রেখেছে। প্রেম নেওয়াজের ভেতরে ঢোকার জন্য তো যথেষ্ট জায়গা দরকার? তাই না? ভেতরে ঢোকার আগে প্রেম আর পেছনে তাকাল না। ভিড়ের মাঝ দিয়ে মাথা উঁচু করে ঢুকে গেল ভেতরে।
প্রেম ক্লাবে ঢুকতেই পার্টি শুরু হলো। স্কটল্যান্ড থেকে আনা হুইস্কির বোতলে সবাই ডুবে গেল। তবে প্রেমের গান ছাড়া তো এই পার্টি অসম্পূর্ণ! সে গান গাইতে স্টেজে উঠল মাঝরাতের দিকে। সেখানে উঠতে যাবে তার আগেই একটা মাঝ বয়সী ছেলে তাকে আচমকা ধাক্কা দিলো। প্রেম কিছু বলল না। নেশা করেছে, হুঁশ হারিয়েছে, ধাক্কা লাগা কোনো বড় বিষয় নয়। তবে মাথাটা গরম হলো তখন যখন ওই ছেলেটি বলে উঠল, ‘শালা তোর মা কী তরে অন্ধ পয়দা করছে? এখনই তো মদের গ্লাসটা পড়ত।’ ব্যাস এই টুকু শুনেই প্রেমের মাথা বিগড়ে যায়। টেবিলের ওপর সিরিঞ্জ রাখা ছিল। তাতে ড্রাগস ছিল। প্রেম এক মুহূর্ত ভাবল না সে কী করছে, কোনটা ভুল,কোনটা সঠিক। মুহূর্তেই একসঙ্গে তিনটে সিরিঞ্জ এক সঙ্গে তুলে গেঁথে দিল ছেলেটার গলার রগ বরাবর। ক্লাবের সবাই এক লহমায় থেমে গেল। ছেলেটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জবাই করা মুরগির মতো কিছুক্ষণ ছটফট করে সেখানেই স্থির হয়ে গেল। সবাই তখন আতংকে চুপসে আছে। প্রেম অংকুরের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ওর ব্যবস্থা কর।’
তারপর সবার দিকে তাকিয়ে ধমকে বলল, ‘শালারা সার্কাস দেখো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে? নাচোস না কেন? নাচ সব। ফূর্তি কর।’
সবাই সেই ধমকে এক মুহূর্ত স্থির থেকে পুনরায় স্বাভাবিক হয়ে গেল। ইরিন এসে প্রেমের কাঁধে হাত রাখতেই প্রেম একবার সেই হাতের দিকে তাকালো বাঁকা চোখে। তারপর ইরিনকে বলল, ‘হাত সরাও। মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়া যে নিতে পারি না তা তো জানোই?’
ইরিন হাত সরিয়ে মন খারাপ করল। তারপর বলল, ‘গান গাইবে না?’
‘গানের আর মুড নেই।’
‘ তো কিসের মুড আছে?’
সেই কথার জবাব দিল না প্রেম। তারপর চুপ থেকে পুনরায় বাঁকা হেসে বলল, ‘উপরে চলো। দেখাচ্ছি কিসের মুড আছে।’
সকালে সিদ্দিক নেওয়াজ প্রেমের রুমে আসে। ঘরে মদ, সিগারেটের গন্ধ। জানালা গুলো আটকানো, পর্দা দেওয়া। প্রেমের আলো পছন্দ না। তবে কালো রঙ অনেক পছন্দ, পছন্দ অন্ধকার। তাই তো বাড়ির চারপাশে তার এত এত গাছপালা। যাতে করে ছায়া ঘিরে রাখে তার কাঠের বাড়িটিকে। প্রেম কুকুর বেশ পছন্দ করে। তার যেই পোষা কুকুরটা আছে ওর নাম লুফি। কত্ত বড় আর রোমশ একটা কুকুর। প্রেমের ঘরে সে অপরিচিত কাউকে ঢুকতে দেয় না। একবার নতুন কাজের লোকটাকে কামড়ে দিয়েছিল। তারপর তো মানুষ ওর ঘরে আসতেও চায় না। সিদ্দিক উপর হয়ে শুয়ে থাকা প্রেমের চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। মুখলেসকে জিজ্ঞেস করে, ‘ও ফিরেছে কখন জানো?’
‘গার্ড কইল তো সাতটার দিকে।’
সিদ্দিক বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে লুফির দিকে তাকালো। কুকুরটা প্রেমের পাশেই বসে আছে। দেখছে তার মালিককে। বিপদের গন্ধ পেলেই হামলে পড়বে, মনে মনে হয়তো তাই ভাবছে। সিদ্দিক আফসোস ভরা কণ্ঠে মোখলেসকে বলল, ‘আমি ওকে মানুষ করতে পারি নি কালুর বাপ। ওকে আমি যথেষ্ট ভালোবাসা দিতে পারি নি। তবে তুমি তো জানো আমি চেষ্টা করেছি? তবুও ব্যর্থ কেন হলাম?’
সিদ্দিক রুম থেকে চলে যাওয়ার পর প্রেম এপাশ ফিরে। ঘুমিয়েছিল ঠিকই কিন্তু তার ঘুম অনেক পাতলা। রুমে ঢুকতেই টের পায় সে। ঘুমটা ভেঙে যায়। সে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফোনের দিকে তাকায়। ভালোই তো সময় হয়েছে। ধোঁয়া ছেড়ে লুফির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কাম লুফি বেবি। তোমার খিদে পেয়েছে তাই না? চলো তোমার খাওয়ার ব্যবস্থা করি।’
ভার্সিটি যাওয়ার পর আজ কেমন যেন ভালো লাগছিল না। ওই তৃষার ক্লাসেও লোক পাঠিয়েছিল প্রেম। সে আজ আসেনি। আসতে না আসতেই ফাঁকি বাজি শুরু? শালীকে আরো দুটো কামড় খাওয়ানো উচিত ছিল। এতক্ষণে হয়তো মুখটা ফুলে আলু আর ঠোটটা ফুলে কদুর মতো হয়ে গেছে। ভালোই হয়েছে তাতে প্রেমের কী? বেশি বেয়াদব ওই মেয়ে। ছুটির সময় শিমলা বের হতেই প্রেম অংকুরকে পাঠালো তার কাছে। জিজ্ঞেস করতে ওর বেয়াদব বান্ধবীটা বাসা থেকে প্রেমকে সালাম দিয়ে যায় নি কেন? অংকুর সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘ভাই যা শুরু করছেন। ওই মেয়ে মরলেও তো বলবেন, কবর থেকে উঠে এসে সালাম কেন দিলো না?’ প্রেম সেই কথা শুনে অংকুরের দিকে তাকাতেই সে চুপসে সরাসরি শিমলার পথ রুখে দাঁড়ালো। জিজ্ঞেস করল তোমার বান্ধবী কই? শিমলা চোখের কালো রঙের বঙ্গবন্ধুর মতো দেখতে চশমাটা ঠিক করে বলল, ‘সে বাসায়। ওর মুখ ফুলে বাংলাদেশের মানচিত্র হয়ে গেছে। তাই আসেনি।’
‘তো তুমি এলে কেন? রোদে পুড়ে তোমার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়েও তো যেতে পারে?’
‘সমস্যা নেই গ্লো এন্ড লাভলি ব্যবহার করি।’
‘ওইটা দিলে সুন্দর হওয়া যায়?’
‘যায় তো। আপনার মতো কাকও ময়ূর হয়ে যাবে।’
‘তুমি যেহেতু আমার কথা বলেছো তাহলে সেটাকে কমপ্লিমেন্ট হিসেবেই ধরে নেব।’
শিমলা মুচকি হাসল। তা দেখে অংকুর বলল,’ওমাগো এভাবে হেসো না মেয়ে,আমার সুগার লেভেল বেড়ে যাবে।’
শিমলা মুচকি হাসল। আর সেটা দেখে অংকুর থামতে না পেরে বলে উঠল, ‘ইশ আবার হাসে। এভাবে হাসলে তো রাতে আমার ঘুমই আসবে না।’
ঠিক তখনই শিমলার হাঁচি এসে পড়ল। সরাসরি অংকুরের মুখে ছিটকে গেল হাঁচি। ‘সরি সরি। হঠাৎ করে চলে এসেছে।’
অংকুর কোনোমতে নিজেকে সামলে নিল। মনে মনে ভাবল, “এভাবে একদিন আমাদের মাঝে ভালোবাসা চলে আসবে, বিয়ে চলে আসবে, ঘরভর্তি বাচ্চাও চলে আসবে। শিমলা মেয়েটা হুটহাট হাঁচি দেয়, আর না জানি কী কী দেবে… তাতে কী! ভালোবাসায় এমন দুই-চারটে দেওয়া-নেওয়া চলতেই থাকে। শিমলা যদি হাঁচি দেয়, আমি তাকে ভালোবাসা দেব, আদর দেব, ডজন ডজন বাচ্চাও দেব।”
স্বপ্নমগ্ন অংকুরকে ভাঙিয়ে দিল হঠাৎ প্রেম ভাইয়ের ফোন। একটু ধৈর্যও নেই লোকটার। এভাবে চললে তো তার বিয়ের এক মাস পরেই শোনা যাবে নেওয়াজ বংশের উত্তরাধিকার চলে আসছে!
ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে প্রেমের গম্ভীর স্বর ভেসে এলো, ‘তৃষার খবর কী? কি বলল শিমলা?’
‘শিমলা তো কিছু বলল না, কিন্তু আমি যে তাকে অনেক কিছু বলতে চাই।’
‘কী বলতে চাস?’
‘ বলতে চাই, ওগো শিমলা তুমি কি আমার জীবনের ডাটা হবে? যাকে ছাড়া আমার জীবন চলেই না।’
প্রেম হাঁ হলো না। উল্টো গম্ভীর গলায় বলল, ‘কিন্তু তুই তো ওয়াইফাই ইউজার।’
‘ওই একটা হলেই তো হলো। হুহ!’
তৃষা অনেক কষ্টে মেডিসিন খেয়ে ঠোঁটের ফোলা কমিয়েছে। জীবনটা তার বেদনা। এমন হারে দজ্জাল ছেলে তো কোনোদিন সে দেখেনি। খবিশের ঘরে একটা তাড়ছিঁড়া আসবে। থুথু দিয়ে গরুরমাংস রান্না করে খাওয়াবে এই বলে রাখছে তৃষা। তৃষার সব টাকা পয়সা শেষ হয়ে যাচ্ছে। একটা কাজ তো খুঁজতেই হবে। এভাবে চললে হবে না। ওদিকে শিমলার মা কাল রাতে শিমলাকে পাশের ঘরে নিয়ে ফিসফিস করে বলছিল, ‘কিরে তো বন্ধু আর কতদিন এখানে থাকবে? সত্যি করে বল তো এই মেয়ে কোনো কাণ্ড ঘটিয়ে এখানে আসেনি তো?’
সেইসব কথা তৃষার একটু ভালো লাগেনি। সে গুগল ম্যাপ খুলে রাস্তায় বের হয়। কিন্তু সে তো ভুলেই গেছে তার ফোনে ডাটা নেই। এভাবে কী চলে? বিকেলের দিকে হাঁটতে হাঁটতে একটা জিমের সামনে গিয়ে চোখ থমকে যায়। এখানে হিসাব রক্ষকের জন্য একটা মেয়ে নেওয়া হবে। যেই আমার জিম। এখানে আর কত ইনকাম হয়? এই হিসাব তৃষা ক্যালকুলেটর ছাড়াই হিসাব করে বের করতে পারবে। তৃষা বুক ফুলিয়ে জিমে যেতেই তার এবার আত্মা বের হওয়ার উপক্রম। উপক্রম হবে না। জিমে দেখি হ্যান্ডসামদের বাহার। এক একজনের কী বডি! উফ এসব দেখলেই তো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল হয়ে যায়। এই ছোট্ট হৃদয়টাকে আশ্রয়কেন্দ্র বানিয়ে ফেলেছে। যাকে দেখে তাকেই জায়গা দিয়ে দেয়। একটার পর একটা কন্টিনিউ টেন্সের মতো চলছে তো চলছেই।
ব্যাগ থেকে জলদি আয়নাটা বের করে মুখটা দেখে। মেকআপ সব ঠিক আছে তো? হঠাৎ তার চোখ যায় একটা লোকের দিকে। আরে এটা সেই দিনের ওই হিরো না? যে তাকে কুকুরের হাত থেকে বাঁচাতে এসেছিল? মাইরি কী হট লাগছে। এই ছেলে তো পুরোই চকলেট বয়। এই ছেকেটার সঙ্গে এই নিয়ে ২য় বার দেখা হলো। আল্লাহ মনে হয় প্রেমের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
প্রত্যুষের শরীর এখন পুরো ভিজে গেছে ঘামে। কপাল থেকে নেমে আসা ফোঁটা চোখে পড়ছে, সে হাতের পশ্চাৎভাগ দিয়ে মুছেও আবার ভিজে উঠছে। গলা ও বুক জুড়ে ঘামের রেখা, টিশার্টের ভেতরটা এমন ভিজে গেছে যে গায়ে আঁকড়ে লেগে আছে। সে গাঢ় নীল রঙের স্লিভলেস টিশার্ট পরেছে, যেটায় ঘাম জমে রঙ আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে। বাইসেপস আর ট্রাইসেপস ফুলে উঠেছে টান টান, পেশিগুলো ঘামের ঝিলিক নিয়ে একেবারে স্পষ্ট। কালো ট্র্যাক প্যান্ট পরে আছে, পাশে সরু ধূসর লাইন টানা।
কব্জিতে কালো জিম-গ্লাভস, যেটা ভিজে গেছে, রঙ প্রায় চকচক করছে। গলায় একটা সাদা টাওয়েল ঝোলানো, সেটাও ভিজে ভারি হয়ে গেছে। কানে ছোট ইয়ারবাডস ঢোকানো, কিন্তু এখন গান শোনার চেয়ে তার নিজের হৃদস্পন্দনের শব্দই বেশি শোনা যাচ্ছে। তৃষা প্রত্যুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য সুন্দর করে ফিটফাট হয়ে এগিয়ে যেতেই পাশ থেকে একটা দানব লোকের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে একেবারে প্রত্যুষের পেছনে এসে ধপ করে পড়ল। জিহ্বার একেবারে কাছেই গালি চলে এসেছিল। ‘ভোটকার বাচ্চা ভোটকা, তুই এই পেট নিয়া জিমে কেন আসছোত? অভিশাপ দিলাম চিকন তো হইতেই পারবি না। উল্টো ব্লাস্ট হয়ে মরবি।’ তবে সামনে হ্যান্ডসাম ছেলে আছে। এসব শুনলে পটার আগেই পালাবে। কী এমন ধপাস করে পড়ল তা দেখার জন্য সে পেছন ফিরতেই দেখল সেই দিনের সেই তৃষা মেয়েটা পড়ে আছে। সে ভ্রু কুঁচকে তৃষাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আরে তুমি? এভাবে ফ্লোরে পড়ে আছো যে?’
প্রেমতৃষা পর্ব ৫
‘তৃষা জলদি কপালের সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে বলল, ‘আরে দেখছেন না মশাই,এখানে শুয়ে শুয়ে জিম করছি।’
‘এটা কোন ধরনের জিম?’
তৃষা তখনো সেইভাবেই পড়ে আছে। লজ্জা লাগছে তার। কী কেলো হয়ে গেল। সে কোনো মতো ম্যানেজ করে বলল, ‘ইয়ে মানে এটা চিৎপটাং জিম।’