প্রেমপিপাসা পর্ব ৬
সুমাইয়া সুলতানা
ভার্সিটির ক্যাম্পাসের ঝকঝকে রাস্তায়, গাছে জমে থাকা পানি টুপটুপ করে পড়ছে। রাতে অল্পস্বল্প বারিধারা নেমে ছিল ধরিত্রীতে। বারিধারার বিন্দু বিন্দু জলকণা প্রকৃতির মাঝে সতেজতা এনে দিয়েছে। গাছের পাতা স্নান করে উঠেছে টুপুর টুপুর বারিধারার জলকণায়। সেই জলকণা ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে গিয়ে দখল করছে ভূপৃষ্ঠ। বৃষ্টি থেমে গেলেও হাওয়ায় একটা ঠান্ডা শীতল আমেজ।
অঙ্কিতা আপন ছন্দে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে হাঁটছে। ওর মাথা নিচু, চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। চিন্তার কারণ সায়র নামক উগ্র ছেলেটা! কে জানে, কখন হুট করে সামনে এসে, পাবলিক প্লেসে কি করো বসে? এই চঞ্চল ছেলেকে বিন্দু মাত্র বিশ্বাস নেই। অঙ্কিতা সাবধানে এদিক ওদিক নজর বুলিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। অতি নিকটে কারো জুতার খচখচ আওয়াজ কর্ণগোচর হতেই সহসা পেছন ফিরে তাকায়। হরিণী নেত্রদ্বয়ে ভেসে উঠে সায়রের পুলকিত মুখশ্রী। সায়র টেডি স্মাইল দিয়ে পকেটে হাত গুঁজে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অঙ্কিতা হাঁটার তালে সায়রও এতক্ষণ তার পিছু পিছু হাঁটছিল।
সায়র দাঁত কেলিয়ে অঙ্কিতার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” জানটুস, কি ব্যাপার? দাঁড়িয়ে পড়লে যে? আমাকে মিস করছিলে বুঝি? ”
অঙ্কিতা ভ্রু কুঁচকে ফেলল। তিরিক্ষি মেজাজ সহিত বলে,
” আমি কেন আপনাকে মিস করতে যাবো? ”
” থাক! আর মুখ ফুটে বলতে হবে না৷ আমি বুঝে নিয়েছি। ”
” কি বুঝেছেন? ”
” তোমার মনে কি চলছে। ”
” কি চলছে আমার মনে? ”
সায়র কিঞ্চিৎ ঝুঁকে আসে। কন্ঠ খাদে এনে হিসহিসিয়ে বলে,
” সামথিং সামথিং! ”
অঙ্কিতা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তপ্ত শ্বাস ছেড়ে চওড়া গলায় বলল,
” আপনার এসব লজিক ছাড়া কথা জাস্ট অফ করুন! ”
” কথার আবার কোনো লজিক হয় নাকি? কথা কথাই হয়! তা তুমি কি ঠোঁটের সার্জারী করেছো?”
আকস্মিক অপ্রত্যাশিত কথায় অঙ্কিতা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। নাকের পাটাতন ফুলিয়ে চাপা রাগী গলায় প্রশ্ন করলো,
” আপনার কেন মনে হলো, আমি ঠোঁটের সার্জারী করেছি? ”
” তোমার ঠোঁট জোড়া অতিরিক্ত সফট আর ড্র! দেখে মনে হচ্ছে সার্জারী করা। তাই জিজ্ঞেস করেছি। সার্জারী করতেই পারো। দোষের কিছু না। ”
অঙ্কিতা ঠোঁট উল্টে জবাব দেয়,
” আমার টাকা এত বেশি হয়ে যায়নি, যে ঠোঁটের সার্জারী করে সেই টাকা অপচয় করবো! ”
সায়র দুষ্ট হেসে ফিচেল গলায় বলল,
” এত রাগ দেখাচ্ছো কেন? তুমি যখন রাগ করো তখন তোমাকে নাক-মুখ বাঁকানো ছোট একটা পেঁপের মতো দেখায়! ”
অঙ্কিতা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। ভোঁতা মুখে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে কটমট করে বলে,
” আপনি আমাকে পেঁপে বললেন? আমি পেঁপের মতো? ”
সায়র হেসে কটাক্ষ করে বলল,
” ইউ নো হোয়াট জানটুস? তুমি খুব কিউট। তোমাকে পেঁপে বলেছি প্রশংসা করে। এখন যদি রেগে গাল ফুলিয়ে রাখো, তাহলে নিজেকে কন্ট্রোল কিভাবে করবো? দেখা গেল তোমার ফুলিয়ে রাখা গালে কুটুস করে কামড় বসিয়ে দিলাম। তখন এর দায়ভার কিন্তু আমার থাকবে না, সম্পূর্ণ দায়ভার তোমার। ”
অঙ্কিতা ঝট করে সায়রের কাঁধে একটা হালকা ধাক্কা দিল। রাগে ফোঁস ফোঁস শব্দ তুলে বলল,
” আমি আপনার নামে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে কমপ্লেইন করবো। ”
সায়র শয়তানী হেসে স্বার্থপরদের মতো বলল,
” পেঁপে বলায় প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে কমপ্লেইন করবে? যাও করো। নো প্রবলেম। উল্টো তোমার লস! ভার্সিটির সিনিয়রদের সাথে খারাপ আচরণ করার জন্য তোমার যে আমি কি অবস্থা করবো, সেটা তুমি কল্পনাও করতে পারছো না। দেখি প্রিন্সিপাল কার কথা বিশ্বাস করে। তোমার নাকি আমার! ”
অঙ্কিতা অবাক হয়ে জানতে চাইল,
” আমি কখন সিনিয়রদের সাথে খারাপ আচরণ করেছি? ”
” কেন? আমাকে কি তোমার চোখে পড়ে না? ”
” আমি তো আপনার সঙ্গে খারাপ আচরণ করিনি। ”
” সেটা তো তুমি আর আমি জানি। আর কেউ না।”
” আপনি একটা যা-তা! ”
সায়র হতাশ কন্ঠে জানালো,
” এভাবে বলোনা জানটুস! বুকে লাগে! এই দুনিয়ায় তোমাকে ছাড়া আমার আর কে আছে বলো? ওই গুটিকয়েক গার্লফ্রেন্ড ওই তো রয়েছে। বিশ্বাস করো! ওদের জীবনে একটা চুমু খাইনি! শুধু নিজের বউকে খাবো বলে! পেঁপে ছাড়া যেমন খাবারের স্বাদ হয় না, তেমন তুমি ছাড়া আমার জীবন চলবে না! সেটাই বোঝাতে চেয়েছি। ”
অঙ্কিতা ভ্রু কুঁচকে বলল,
” তাই বলে পেঁপের সঙ্গে তুলনা? আর আমি তো একবারো জিজ্ঞেস করিনি আপনি ওদের চুমু খেতেন কি-না? ”
সায়র যেন কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিতে বলল,
” তোমাকে জিজ্ঞেস করতে হবে কেন? আমি নিজ দায়িত্বে হবু বউকে আগেভাগে জানিয়ে রাখতে চাই, আমার ঠোঁট কতটা ভার্জিন। বুঝেছো? ”
” পথ ছাড়ুন। নয়তো আমি সত্যি সত্যি প্রিন্সিপাল স্যারকে নালিশ করবো। ”
সায়র ভয় পাওয়া অভিনয় করে বলল,
” প্লিজ, দয়া করে বিচার দিও না। আমার ভয় করছে! তুমি না, পৃথিবীর সেরা ভয়ংকর পেঁপে। ”
অঙ্কিতা রাগ হলো, তবে অধরে কোথাও কিঞ্চিৎ মুচকি হাসি ফুটে উঠল। ও জানে সায়র ওকে জ্বালানোর জন্য বলছে। হাসি চেপে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” আপনি একটা পাগল। ”
সায়র গোমড়া মুখে উত্তর দিল,
” তুমি আমার কষ্টটা বোঝার চেষ্টা করছো না। এত কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না অঙ্কু জানটুস! শীতের রাত একা একা কাটানো যে কতটা কষ্টের, সেটা তো ইনোসেন্ট আমি আর আমার ঠান্ডা কোলবালিশ বুঝতে পারি। ”
হ্যাভেন হাত ঘড়ি পড়তে পড়তে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। শু-কেবিনেট থেকে ঝকঝকে পালিশ করা জুতা বের করে পড়ে উঠে দাঁড়াতেই ছোট ছোট হাতে কেউ তার পা জড়িয়ে ধরল। হ্যাভেন গ্রীবা বাঁকায়। টুটুল পোকায় ধরা দন্তপাটি বের করে হাসছে। হাতে তার হ্যাভেনের ওয়ালেট। ছেলের হাসি দেখে হ্যাভেনের অধরেও হাসির ঝলক দেখা যায়। ছোট্ট ছেলে টুটুল জীবনের সমস্ত মিষ্টি আনন্দ আর দুষ্টুমির মূর্ত প্রতীক হয়ে হ্যাভেনের জীবনে পদার্পণ করেছে। হ্যাভেন ওয়ালেট নিয়ে প্যান্টের পকেটে রাখে। টুটুল’কে কোলে তুলে গালে চুমু খায়। টুটুল হাত বাড়িয়ে হ্যাভেনের পরিপাটি করা চুল গুলো অগোছালো করে দেয়। তৎক্ষনাৎ হ্যাভেনের মুখভঙ্গি পাংশুটে হয়ে গেল। নিজের চুল, বডি ফিটনেস নিয়ে হ্যাভেন যথেষ্ট সচেতন আর সিরিয়াস। সবসময় নিজেকে পারফেক্ট বাবু সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করে।
টুটুলের ছোট্ট নাকে আলতো কামড় দিয়ে হ্যাভেন মুখ কালো করে বলে,
” আব্বুর লেট হচ্ছে না? দিলে তো আমার চুলের বারোটা বাজিয়ে! ”
টুটুল খিলখিল করে হেসে ওঠে। বাবার কথায় সে মজা পেয়েছে। কিন্তু হ্যাভেনের বেজার মুখ দেখে হাসি উবে যায়। আবার চুলের ভাঁজে হাত গলিয়ে ঠিকঠাক করে দেওয়ার চেষ্টা চালাল। পুরোপুরি না পারলেও মোটামুটি গোছাতে সক্ষম হয়েছে। ছেলের কাজে হ্যাভেন হাসল।
হ্যাভেনের গালে আদর দিয়ে টুটুল ধীম স্বরে বলল,
” আব্বু তুমি জানো? আমি তোমার জন্য চাঁদ আর তাঁরা এনে দিবো। আমার স্কুলের বন্ধুরা তাদের প্যারেন্টসদের এনে দিয়েছে। ”
হ্যাভেন ছেলের ঠোঁটে চুমু খেয়ে স্মিথ হেসে বলে,
” তুমি তো আমার ছোট্ট রাজা। তা আমি কি জানতে পারি, আমার কলিজা কোথা থেকে চাঁদ আর তাঁরা নিয়ে আসবে? ”
টুটুল গোল গোল চোখে চেয়ে ভাবুকতা গলায় জবাব দিল,
” আকাশ থেকে নিয়ে আসবো। আমি তো তোমার জন্য সব কিছু করতে পারি! ”
হ্যাভেনের মনটা ভরে যায়। আনমনে নেত্রদ্বয় ছলছল করে উঠে। বার কয়েক পলক ঝাপটিয়ে তা লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। টুটুলের নিষ্পাপ মুখশ্রী দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। হ্যাভেন না থাকলে সেদিন এই ছোট্ট প্রাণটার কি হতো? ঝরে যাওয়া বেলীফুলের ন্যায় ভেসে যেতো কোনো মহাসমুদ্রে! অকাল মৃত্যু হতো হ্যাভেনের ছোট্ট কলিজাটার! টুটুলের দুষ্টুমির মধ্যে লুকিয়ে থাকে এক বিশাল পৃথিবী, যা শুধু তার আব্বুর জন্যই উজ্জ্বল।
টুটুল আধো আধো গলায় পুনরায় বলল,
” তুমি যখন আমার পাশে থাকো, আমি তখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ছেলে মনে করি আব্বু। ”
হ্যাভেন টুটুলের কপালে স্নেহময় প্রগাঢ় চুমু দিয়ে উৎফুল্ল চিত্তে বলে,
“তুমি আমার পৃথিবী, কলিজা। আমার চোখের মণি তুমি। আমার ভালো সেরা ছেলে। ”
টুটুল ছোট্ট হাত দুটি হ্যাভেনের গলার চারপাশে মুড়িয়ে জড়িয়ে ধরে। বাবার গালে হাত বুলিয়ে দেয়। হ্যাভেন চোখে পানি নিয়ে টুটুলকে চুমু খেয়ে বলল,
” আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার তুমি। শুধু আমার ছেলে না, তুমি আমার জীবন, আমার সব কিছু। অবশ্য আরেকজন আছে আমার হৃদয়ে দাপিয়ে বেড়ানো মানুষ। কিন্তু সেই মহারানী তো আমাকে পাত্তাই দেয় না! ”
শেষের কথাটা বিড়বিড় করে বলল, হ্যাভেন। বাবা ছেলের খুনসুটির মধ্যে হাতে পুঁথির কারুকার্যে শোভিত পার্স, একটি খাতা আর একটা মোটা বই নিয়ে অরু ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। অরু’কে দেখে টুটুল ভুবন ভুলানো হাসি দেয়। বিনিময়ে অরুও কিঞ্চিৎ মুচকি হাসল।
” আব্বু, সুন্দর আম্মু এসেছে। ”
ছেলের কথায় হ্যাভেন সামনে দৃষ্টি তাক করল। অমনি ধনুকের ন্যায় অদৃশ্য কিছু একটা বুকে বিঁধল! গাত্রে গাত্রে ছুটে বেড়াচ্ছে সুখকর তীব্র আন্দোলন! বক্ষপিঞ্জরের উথাল-পাতাল ঢেউ হানা দিচ্ছে সবেগে! পলকহীন চোখে চেয়ে থাকল অনিমেষ। নববধূর একি নেশা ধরানো রূপ? অরুর পরনে একটি স্টাইলিশ টপস আর ফিটিংস লেডিস জিন্স প্যান্ট। গলায় আলতো করে জড়ানো স্কার্ফ। কানে ছোট পাথরের দুল, হাতে পাথরের কারুকার্য সোনালী রঙের মোটা ব্রেসলেট। চুলগুলো পুতুলের মতো রাবার বেন দিয়ে ঝুঁটি করে বাঁধা, যা তাকে আরও কিউট লাগছে। ঠোঁটে মেজেন্ডা রঙের লিপস্টিক যেন তার সৌন্দর্যে এক অনন্য ঔজ্জ্বলতা এনেছে। চোখে মোটা করে টানা কাজল অরুর মায়াময় দৃষ্টিকে আরও গভীর করে তুলেছে। থুতনিতে আপেলের মতো অল্প টোল আছে, যা অরুর স্নিগ্ধ মুখশ্রীতে ফুটে আরও চমৎকার লাগছে।
এই সাজ দেখে হ্যাভেন থমকে দাঁড়ায়। তার বুকের গভীরে হৃৎস্পন্দন যেন থেমে যাওয়ার উপক্রম। অরুর এই সৌন্দর্য আর ব্যক্তিত্বের মুগ্ধতা হ্যাভেন’কে স্তব্ধ করে দেয়। মুহূর্তা যেন সময়ের ওপরে ভেসে থাকা এক অপরূপ অনুভূতি হয়ে ওঠে।
হ্যাভেন তখন থেকে ড্রাইভিং সিটে বসে টিট টিট করে শব্দ দিচ্ছে অথচ অরুর তাতে কোনো ভাবান্তর ঘটল না। হ্যাভেনের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। তাকে অফিসে যেতে হবে। অরু ভার্সিটিতে যাবে আগে বললে সায়রের সাথে পাঠিয়ে দিতো। কিন্তু এখন হ্যাভেন’কে পৌঁছে দিতে হবে।
” কি হলো? গাড়িতে উঠছো না কেন? ”
হ্যাভেনের কাটকাট স্বর! অরু বিরক্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিল,
” আমি আপনার সাথে যাবো না। আপনি চলে যান। ”
হ্যাভেন দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
” আমি গাড়ি থেকে নামলে সেটা তোমার জন্য বিন্দু পরিমাণ ভালো হবে না, অরু! বিনা বাক্যে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসো। ”
অরুর কিছু কড়া কথা শোনাতে ইচ্ছে করছে, তবে শোনালো না। ঝগড়া করার জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে নেই। বাধ্য হয়ে গাড়ির পেছনের দরজা খুলতেই, হ্যাভেনের গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে আসে,
” আমাকে কি তোমার ড্রাইভার মনে হয়? ”
অরু তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে বলে,
” মানে? ”
” সামনে এসে বসো। ”
অরু আর কথা বাড়াল না। রাগী লুক নিয়ে হ্যাভেনর পাশের সিটে বসে পড়ল।
হ্যাভেন দক্ষ হস্তে ড্রাইভিং করছে। পাশে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে রয়েছে অরু৷ যার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যে আজ হ্যাভেন অন্য জগতে হারিয়ে যাচ্ছে বারংবার। এমনিতেই মনের সাথে কতশত যুদ্ধ করে দিনরাত পাড় করছে। আর এই জঙ্গি মেয়ে কি-না তার হৃদয়টার দফারফা করে দিচ্ছে? আড়চোখে অরু’কে দেখে চলেছে হ্যাভেন। আল্লাহ আল্লাহ করে আজ এক্সিডেন না করলেই হয়।
অরুর নজর ছুটে চলা চলন্ত গাড়ি গুলোর দিকে৷ পাশে যে কেউ বসে আছে এতে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। অরু ও হ্যাভেনের সম্পর্কটা যেন কোনো এক অজানা দোলাচলে দুলছে। বাইরে থেকে তাদের সম্পর্কটা নিখুঁত মনে হয়। হ্যাভেন বলেছে তাদের মাঝে যা রাগ, অভিমান, ঝগড়া সবকিছু চারদেয়ালের আড়ালে থাকবে। কেউ নূন্যতম কিছু টের পেলে সেটা অরুর জন্য বিশেষ ভালো হবে না। কিন্তু অরুর হৃদয়ের গভীরে কোথাও এক তীব্র অস্বস্তি বাসা বেঁধে রয়েছে।
ড্রাইভিং করতে করতে হ্যাভেন আড়চোখে অরু’কে পর্যবেক্ষণ করে ভরাট স্বরে বলে উঠলো,
” ভার্সিটিতে যাচ্ছো, নাকি কোনো পার্টিতে? ”
অরু কপালে ভাঁজ ফেলে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে শুধায়,
” দিনের বেলা কিসের পার্টি? আপনার কেন মনে হলো, পার্টিতে যাচ্ছি? ”
হ্যাভেন ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
” যেভাবে ভুত সেজে বেরিয়েছো, ভাবলাম হয়তো কোনো ভুতুড়ে পার্টিতে যাচ্ছো! ”
অরু হ্যাভেনের দিকে তাকিয়ে বিদ্রূপ করে বলল,
” বাজে কথা বলবেন না! আপনার থেকে হাজার গুণ ভালো লাগছে আমাকে দেখতে। ”
হ্যাভেন অবাক হওয়ার ভান করে খোঁচা মেরে বলল,
” ও হ্যাঁ! তুমি তো আবার নায়িকা ভিক্টোরিয়া! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম! ”
অরুর বিরক্তি আকাশ চুম্বি! হ্যাভেন’কে অসহ্য লাগছে! লোকটার গা জ্বলানো কথাবার্তা জাস্ট সহ্য হচ্ছে না। খেই হারিয়ে ক্ষিপ্ত মেজাজে ক্ষোভ প্রকাশ করে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
” মিস্টার হ্যাভেন তালুকদার, ডোন্ট ক্রস ইয়োর লিমিট! আই অ্যাম ওয়ার্নিং ইউ! নিজের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিবেন না! কি ভেবেছেন? আপনার টাকা আর ক্ষমতা আছে বলে যা খুশি করবেন? আপনার মতো টক্সিক টাইপের পুরুষকে দেখলে ক্ষণে ক্ষণে বিরক্ত ঘিরে ধরে চারপাশ! আপনাকে বিয়ে করে জীবন কেমন রংহীন ধূসর বর্ণ ধারণ করছে দিনকে দিন! খুশি মনে কোনো কাজ সঠিক ভাবে করতে পারছি না। আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছেন আপনি! লজ্জা করেনি, একটা মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বিয়ে করতে? আপনি ভীষণ স্মার্ট। আই অ্যাম শিওর, আমি অন্য একজন ছেলেকে পছন্দ করি, সেটা আপনি অবশ্যই জানেন। জানা সত্ত্বেও এরকমটা কেন করলেন? বলুন? উত্তর দিন? নিজেকে ব্যক্তিত্ববান পুরুষ মানুষ মনে করলে কখনোই এটা আমার সাথে করতে পারতেন না! ”
লম্বা ভাষণ সমাপ্ত করে অরু তপ্ত শ্বাস ছাড়ল। ভ্রু কুঁচকে গরম চোখে হ্যাভেনের দিকে তাকিয়ে থাকল। হ্যাভেনের মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। তবে গাড়ি চালানোর সাথে অতি মনোযোগ সহকারে অরুর প্রত্যেকটা ধারালো বাক্য কর্ণকুহরে শ্রবণ করার শত চেষ্টা করেছে। কথাগুলো শুনে তার হাতের মুঠো একটু শক্ত হলো স্টিয়ারিং হুইলের ওপর। পুরুষালী চোয়ালদ্বয় কেমন ইস্পাতের ন্যায় শক্ত মনে হচ্ছে। হাত, মাথার দু পাশের সাইডে শিরা গুলো ফুলে টানটান হয়ে গিয়েছে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য গাড়ির ভেতরে যেন নিস্তব্ধতা নেমে এলো। গাড়ির জানালা দিয়ে হালকা বাতাস ঢুকছে, চারপাশের শীতল প্রকৃতি যেন দুজনকেই স্বস্তি দিতে চাইছে। কিন্তু কতটা স্বস্তি দিতে সক্ষম হয়েছে, সেটা প্রকৃতি বুঝতে পারছে না! অরুর মন সেই প্রকৃতির সৌন্দর্যে মগ্ন হতে পারছিল না। তার ভেতরে যেন একটা ঝড় বইছে।
হঠাৎ গাড়ি থামতেই অরু চারপাশে তাকিয়ে অবলোকন করল। ভেবেছে ভার্সিটি পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু না, এটা অন্য একটি গলির মোড়ে গাড়ি পার্ক করেছে হ্যাভেন। জায়গাটা কিছুটা শুনশান নিরিবিলি। লোকটা কি ভুল রাস্তায় এসে পড়েছে নাকি? অরু কিছু বলবে তার আগেই হ্যাভেন কর্কশ আওয়াজে বলে উঠলো,
” গেট আউট অফ দ্য কার। ”
” আমি তো আপনার গাড়িতে আসতেই চাইনি। আপনি জোর করেছিলেন। এখন ভুলবাল রাস্তায় এনে নেমে যেতে বলছেন? আপনি ভারী স্বার্থপর মানুষ! ”
হ্যাভেনের গুরুগম্ভীর স্বর,
” কুইকলি! ”
অরু মুখ ঝামটি মেরে, হ্যাভেন’কে মনে মনে বকা দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেল। এদিক ওদিক নজর বুলিয়ে ভিন্ন গাড়ির আসায় খোঁজ করতে লাগলো। অরুর পরপর হ্যাভেন গাড়ি হতে নেমে দাঁড়ায়। আচমকা অরু হাতে টান অনুভব করল। হ্যাভেন একপ্রকার টেনে অরু’কে গাড়ির পেছনের সিটে ছুড়ে ফেলল। নিজেও গাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ল। ফটাফট গাড়ির জানালা গুলো লাগিয়ে দিল। গায়ের কোর্ট খুলে গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলের সম্মুখের গ্লাসে কোর্টটা সুন্দর করে মেলে দিল। এটা সম্মুখের কাঁচ বলে গাড়ির ভেতরকার দৃশ্য স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। এখন আর কোনো সমস্যা হবে না।
অরু চমকে ওঠে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে হ্যাভেনের দিকে তাকিয়ে আছে। হ্যাভেন এখন নিজের শার্টের বোতাম খুলছে। তার ভাবসাব অস্বাভাবিক লাগছে। শার্ট খুলে ঢিল ছুড়ে মারে সামনের ড্রাইভিং সিটে। হ্যাভেনের শরীর এখন উন্মুক্ত। ব্যস্ত হাত বাড়িয়ে অরুর গলার স্কার্ফ খুলে ফেলল। বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় অরু। চোখ দুটো যেন কোটর ছেড়ে এক্ষুনি বেরিয়ে আসবে। ফ্যালফ্যাল করে নিস্প্রভ দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে হ্যাভেনের ক্ষেপাটে রক্তিম মুখশ্রীতে। চোখ দুটো রাগে জ্বলজ্বল করছে, যেন রক্ত বের হয়ে আসবে। স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত রক্তিম হয়ে রয়েছে। হ্যাভেনের বিদ্রোহী মন, শরীরের শিরায় শিরায় অগ্নিকাণ্ডের দাবানলের ন্যায় রক্ত টগবগিয়ে উঠছে।
হ্যাভেন বলিষ্ঠ হাতে অরুর চোয়াল চেপে ধরল। অনেকটা শক্ত করে ধরেছে। অন্য হাতে অরুর কোমর শক্ত করে পেঁচিয়ে কাছে নিয়ে আসে। ব্যথায় কুঁকড়ে গেল নাজুক অরু। চোখ দুটো জলে টইটম্বুর হয়ে গিয়েছে। অতি সান্নিধ্যে নিজের মুখটা অরুর মুখের নিকট নিয়ে আসলো হ্যাভেন। কন্ঠ খাদে এনে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলো,
” জাস্ট স্টপ দিস ননসেন্স, রুড গার্ল! তোমার বেলেল্লাপনা উগ্র আচরণ মুখ বুঝে সহ্য করি বলে, কি ভেবেছো? যা মুখে আসবে, যা মন চাইবে তাই বলবে? নো, নেভার! হ্যাভেন তালুকদার’কে এতটা সহজ মনে করো না। ইউ আর মাই ওয়াইফ। সেজন্য আমি চেয়েছিলাম তোমাকে সময় দিতে, যাতে আমাদের সম্পর্কটা কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতার সাথে শুরু করতে না হয়। বাট আই অ্যাম রং! ইউ আর অ্যা টোটালি স্টুপিড গার্ল! ”
অরু ধাক্কা দিয়ে হ্যাভেন’কে নিজের থেকে সরিয়ে দিতে চায়, পারে না। ঝাঁঝ নিয়ে বলল,
” কি করছেন? ছাড়ুন, আর দূরে সরুন। আমরা রাস্তায় আছি। ”
হ্যাভেন ছাড়ল না। রাগে ফুঁসছে সে। কুন্ঠায় ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে উঠছে। তীব্র বেগে হানা দিচ্ছে পাহাড় সমান ক্রোধ! হাতের জোর বাড়িয়ে গমগমে গলায় বলল,
” আই ডোন্ট কেয়ার, হোয়্যার আর উই! ইট জাস্ট নট ম্যাটার! তোমার সাহস হলো কিভাবে আমাকে ওই ভাবে কথা বলার? আমাকে তুমি পছন্দ করো না, আমার প্রতি অভিযোগ রয়েছে তোমার। আমি মানি, বুঝি। বিয়ের দিন থেকে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে সেসব কথা শুনিয়ে যাচ্ছো, তবুও কিছু বলিনি। হেসে উড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু আজ তুমি নিজের সীমা বাড়াবাড়ি রকমের লঙ্ঘন করেছো! আমার ব্যক্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস তোমাকে কে দিয়েছে? ”
একটু থেমে দীর্ঘশ্বাস টানল হ্যাভেন। পুনরায় চওড়া গলায় বলে ওঠে,
” আসলে আমারই ভুল! ইয়েস, ইটস মাই ফল্ট! দিস ইজ অ্যা বিগ মিস্টেক! আমার উচিত হয়নি তোমাকে সময় দেওয়ার। বিয়ের দিন রাতে তোমার ডানা কেটে দেওয়া উচিত ছিল। ওই! বিয়ে করে কি কেউ কাউকে সময় দেয়? অপেক্ষা করার জন্য কি কেউ বিয়ে করে? তাহলে বিয়ে করার দরকার কি? বিয়ে ছাড়াই অপেক্ষা করলে পারে! আমি তোমার মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য সময় দিতে চেয়েছি। কিন্তু তুমি সেটার যথাযথ মর্যাদা রাখতে পারলে না। কথার বাণ মেরে বুকটা ঝাঁঝরা করে দিয়েছো। তোমাকে বিয়ে করেছি কি আলমারিতে সাজিয়ে রাখার জন্য? অফ কোর্স নট! শরীর গরম করার জন্য বিয়ে করেছি। তাই তোমাকে আর সুযোগ দিবো না! নিজের অধিকার পুরোপুরি আদায় করে নিবো। গুরুজনরা বলেন, শুভ কাজে দেরি করতে নেই। ”
বাক্যের ইতি টেনে হ্যাভেন চোয়াল থেকে হাত সরিয়ে নিলো। অরু লম্বা শ্বাস টানল। এতক্ষণ শ্বাস কন্ঠনালীতে আটকে রয়েছিল যেন! চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। ভয়ে ক্ষুদ্র সত্তা কাঁপছে। তবে হ্যাভেন চোয়াল ছেড়ে সেকেন্ড ব্যয় করল না! অরু শ্বাস টেনে পাল্টা শ্বাস ছাড়ার আগেই, অরুকে ধাক্কা দিয়ে সিটে শুইয়ে দিল। ঝুঁকে তুরন্ত অরুর টপস এর গলার কাছের দুটো বোতাম খুলে, গলার ভাঁজে মুখ ডুবিয়ে দিল। অরু চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। পুরো শরীর ঝংকার তুলে দিচ্ছে। পেলব হাতে হ্যাভেনের মাথার চুল খামচে ধরে। কাঁধে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইল। হ্যাভেন কাঁধে ধাক্কা দেওয়া অরুর নরম হাতটা আঙুলের ফাঁকে আঙুল গুঁজে সিটের সাথে চেপে ধরল। হ্যাভেন রুডলি ভাবে অরুর গলা, ঘাড়ে চুমু দিচ্ছে আর কামড় দিচ্ছে। এক একটা কামড়ের সাথে নিজের সরু দাঁতের ছাপ স্পষ্ট রেখে দিচ্ছে।
অরুর চোখ পুনরায় ভিজে উঠল। শব্দ করে কেঁদে ওঠে। ব্যথায় চামড়া জ্বলে যাচ্ছে। ভয়ে হাত, পা ভূমিকম্পের মতো কাঁপছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে বহু কষ্টে আহত গলায় উচ্চারণ করলো,
” ছেড়ে দিন। ব্যথা পাচ্ছি, যন্ত্রণা হচ্ছে আমার। ”
হ্যাভেন মাথা উঠায়। অরুর অসহায়, ভগ্ন মুখশ্রীতে নজর বুলিয়ে, হঠাৎ বেহায়া নজর পড়ল অরু তিরতির করে কম্পিত ওষ্ঠপুটে। লিপস্টিক পরিহিত বধূয়ার ওষ্ঠদ্বয় যেন তাকে ডাকছে। নেশায় বুঁদ হয়ে সেদিকে অগ্রসর হতেই, পুনরায় শুনতে পায় অরুর কাতর গলার কাঁপুনি আওয়াজ,
” আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি আর কক্ষনো অসম্মান করে আপনার সঙ্গে কথা বলবো না। প্লিজ ছেড়ে দিন। ”
কথায় কাজ হলো বটে। হ্যাভেন ঝটপট অরুর উপর থেকে উঠে পড়ে। কাঁধ গলিয়ে অরুর পিঠে হাত রেখে তাকে উঠে বসতে সাহায্য করে। অরু এখনো ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। শুষ্ক ঢোক গিলছে।
অরু’কে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখে, বোঝানোর স্বরে হ্যাভেন শান্ত কন্ঠে বলল,
” প্রতিটা মেয়ের আত্মসম্মানবোধ থাকা উচিত। তুমি সবার সামনে আত্মসম্মান সহিত কথা বলবে বিষয়টা দারুণ। আমিও চাই আমার বউ সকলের সামনে মাথা উঁচু করে চলুক। কিন্তু তুমি আমার সাথে বিয়ের পর থেকে তিনটা দিন যেভাবে কথা বলেছো, এতে কি তোমার আত্মসম্মানবোধ বেড়ে গিয়েছে? স্বামীকে কড়া কথা শোনালে কি নিজেকে বাহাদুর ভাবা যায়? কোনো পুরুষ কি তোমার এরকম আচরণ সহ্য করবে? আমি হ্যাভেন সহ্য করেছি। জানি না, আমার এত ধৈর্য্য কোথা থেকে এসেছে। অফিস, আশেপাশে একটু খোঁজ নিয়ে দেখো, আমার সামনে দাঁড়িয়ে অনেক ক্ষমতাবান প্রভাবশালী মানুষ কথা বলতে ভয় পায়। তাদের কন্ঠনালী কাঁপে! সেখানে তোমাকে আমি তেমন কিছুই বলি না। অবলীলায় আমার সাথে মিস-বিহেভ করো তুমি! ”
অরু কাঁদো কাঁদো মুখভঙ্গিতে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় হ্যাভেনের দিকে। পরপরই দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। হ্যাভেনের নজর যায় অরুর গলার ভাঁজে। কেমন লাল হয়ে গিয়েছে। নরম চামড়া, ফর্সা হওয়ায় পার্পল বর্ণ ধারণ করেছে। দাগ গুলো সুস্পষ্ট ভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
হ্যাভেন ঝুঁকে আসে। অরু হতবিহ্বল হয়ে পিছিয়ে যায়। মাথা ঠেকে সিটের উঁচু নরম জায়গায়। অরুর ভয়, লজ্জা আর অস্বস্তিতে কুন্ঠায় হাঁফসাঁফ বিমূর অবস্থা। হ্যাভেনের উষ্ণ গরম নিঃশ্বাস অরুর মুখমণ্ডল, গলা জুড়ে আছড়ে পড়ছে। অরুর শরীর অবশ অবশ লাগছে। নড়তে পারছে না। হ্যাভেন পাত্তা দিল না অরুর উচাটন প্রতিক্রিয়া! নিরদ্বিধায় ওষ্ঠদ্বয় এগিয়ে কামড়ের জায়গায় গুলোতে আলতো করে ঠোঁট বুলিয়ে ভেজা চুমু খেল। অরু চোখমুখ খিঁচে নিঃশ্বাস আটকে রইল। কিয়ৎপরিমাণ পর হ্যাভেন সরে আসে।
হ্যাভেন আলতো করে অরুর গালে এক হাত রেখে শীতল ভরাট কন্ঠে বলে,
” তোমার এই সব আচরণ আমি আর টলারেট করবো না। এখন থেকে যা বলবো, মেনে চলবে। কথার নড়চড় হলে খবর আছে। উইল ইউ রিমেম্বার ইট?”
অরু চোখ খুলে দ্রুত মাথা নেড়ে বলে ওঠে,
” হুম। ”
হ্যাভেন কপাল কুঁচকে ফেলল। সন্দেহী গলায় শুধাল,
” ভবিষ্যতে আমার সঙ্গে অশোভন কথাবার্তা বলার আগে, আজকের ঘটনা স্মরণ করবে। মাথা বিগড়ে দিলে, পুরো শরীরে জখম করে ছাড়বো। আর এখন স্বীকার করছো ভয়ে। পরে আবার যদি ভুলে যাও? বিশ্বাস করবো কিভাবে? ”
অরু হকচকানো দৃষ্টি ফেলে। ঘন পাপড়ি যুক্ত নয়ন জোড়া মেলে, বারকয়েক পলক ঝাপটায়। পীবর ঠোঁট জোড়া নেড়ে গোমড়া মুখে বলে,
” আপনি বলুন, কি করলে বিশ্বাস করবেন? ”
হ্যাভেনের দুষ্টু চক্ষুদ্বয় চকচক করে উঠল। বেপরোয়া মস্তিষ্ক সুযোগটা লুফে নিলো। মুখে কাঠিন্য ভাব ফুটিয়ে আদেশ ছুড়ল,
” তেমন কিছু না। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে বিশ্বাস করবো। ”
” কিহ্! ”
হ্যাভেন ধমকে বলল,
” শুনতে পাওনি? হোয়াট এভার, আই থিংক বাসর করাই বেস্ট অপশন হবে। ”
প্রেমপিপাসা পর্ব ৫
অরু তৎক্ষনাৎ হ্যাভেন’কে জড়িয়ে ধরে। হ্যাভেন ঠোঁট টিপে হাসে। গম্ভীর কণ্ঠে পুনরায় বলে,
” এটা কোনো হাগ হলো? বলেছি একদম টাইট টাইট করে জড়িয়ে ধরবে। কথার খেলাফ হচ্ছে! ”
অরু হাতের বন্ধন দৃঢ় করল। যতটা পারলো শক্তি খাঁটিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল। হ্যাভেন মিটিমিটি হেসে নিজেও আলতো করে জড়িয়ে ধরে তার ধানিলংকা কে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ক্ষীণ স্বরে আওড়াল,
” আহ্! বউ মানেই শান্তি। শীতের সময় হলে তো কোনো কথাই নেই। ”