প্রেমসুধা পর্ব ৩২

প্রেমসুধা পর্ব ৩২
সাইয়্যারা খান

খাওয়া দাওয়ার পাট চুকে যেতেই দেখা মিললো ভিন্ন দৃশ্যর। সামনেই ফাঁকা স্থান যেখানে দলে দলে দম্পতিরা কাপল ডান্সে ব্যস্ত। লাইভ মিউজিক বাঝছে পাশেই। তৌসিফ’রা আড্ডা দিচ্ছিলো এতক্ষণ। আড্ডার মাঝেই বারকয়েক ওর পেটে গুতা দিলো পৌষ। তৌসিফ তাকাতেই কেমন একটা মুখ করে। এর মানে অবশ্য তৌসিফ জানে। বাচ্চারা যেমন এক জায়গায় বেশিক্ষণ টিকে না তেমনই ওর পৌষরাত। তৌসিফ আদর করে করে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখছে ওকে। কিছুটা জাপানিজ ভাবে ডেকোর করাতে নিচেই গদিতে বসা ওরা। তৌসিফ হেলান দিয়ে বসে নিজের বাহুতে পৌষ’র মাথা নিলো হেলিয়ে। এদের আড্ডা চলছে জমকালো ভাবে। পৌষ নজর ঘুরালো। বারের ব্যবস্থা করা। কয়েকজন কি সুন্দর করে গিলছে শুধু। ঠোঁট উল্টায় পৌষ। আর কতক্ষণ?

এদের আড্ডায় ও মন বসছে না ওর। এদের কথা শুরু হয় বিয়ে দিয়ে শেষ হয় বাসর ঘরে এমন একটা অবস্থা। তৌসিফ বরাবর ই বন্ধুদের চোখ রাঙিয়ে রাঙিয়ে চুপ করাচ্ছে। পৌষ মনে মনে গা’লি দিলো, “শা’লা, একেকটা বুড়ো হয়ে ঝুনা হয়ে গেলো অথচ ভাবখানা এমন যে কচি কদু”।
হঠাৎ ই রওনাক হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তৌসিফে’র দিকে তাকিয়ে বললো,
— চল। ডান্স হোক একটা।
তৌসিফ কিন্তু না করলো না। তার শখ আছে বউ নিয়ে অনেক। আহ্লাদীপনা তার ভালোলাগে। বউ মানেই আদরী হবে। সোহাগী হবে। এদের পা থেকে মাথা পুরোটা থাকবে আহ্লাদে ভরপুর। এরা হবে মধু’র রস যা আহরন করবে তার একমাত্র পুরুষ মৌমাছি।
তৌসিফ পৌষ’র দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো বসা অবস্থায়। বাকি বন্ধুরা বউ নিয়ে ফ্লোরে ততক্ষণে। রওনাক জোর দিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— কাম ফাস্ট ম্যান।
পৌষ আড় চোখে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— আমি নাচব না। বউ নাচাতে এসেছেন আপনি?
তৌসিফ একটু থতমত খেলো। নিজেকে ধাতস্থ করে অসহায় চোখে তাকিয়ে বললো,
— ইটস নট লাইক দ্যাট হানি।
পৌষ চোখ তুলে তাকাতেই দেখলো এক জোড়া চোখ খুব আশা ভরসা নিয়ে তাকিয়ে আছে। পৌষ ফাঁকা ঢোক গিললো। কিছু বলবে তার আগেই কোথা থেকে আরশি হাই হিলের ঠক ঠক আওয়াজ তুলে ওদের সম্মুখে এসে দাঁড়ালো। তৌসিফে’র দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে আবেদনীয় ভাবে বললো,
— মে আই?

হায় কপাল! শা*লী বলে কি? পৌষ’র জামাই’কে পৌষ’র ই চোখের সামনে আরেক মেয়ে বলে ” মে আই”? এই মেয়ের মুখ না খামচে দিবে পৌষ? পৌষ ছোঁ মে’রে উঠলো চিলের মতো। আরশির বাড়ানো হাতে এক চাপড় মে’রে তৌসিফে’র হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো। মাড়ি শক্ত করে যেতে যেতে বললো,
— তোমার বাবা’র বয়সী এই ব্যাটা বুঝেছো? একদম তোমার চাচা’কে বিচার দিব৷ বলব আপনার ভাতিজী বিয়ে করার জন্য মুখিয়ে আছে। দেখবে কোন এক গাঞ্জা খোড় ধরে এখনই বিয়ে করিয়ে দিবে।
আরশি হা হয়ে তাকিয়ে রইলো। ওর বোধগম্য হলো না কিছুই। তৌসিফ যেতে যেতেই পৌষ’কে বললো,

— কি দরকার ছিলো….
— ওওও তাই তো? কি দরকার ছিলো নাআআআ? কচি মেয়ে দেখলেই আপনার বুকের ভেতর তৈ তৈ করে?
— কি সব বলো তুমি হানি? আমার বউ ই তো কচি।
পরের টুকু কানে কানে বললো,
— আজ সাধু পুরুষ বলেই তুমি ফিটফাট আছো হানি। আমি অসাধু হলে আমার তোতাপাখি’র ত ত ত যে কোথায় যাবে তা ঢের জানা আছে আমার।
কথায় কথায় ওরা ডান্স ফ্লোরে চলে এলো। আশেপাশে সবাই হেলে দুলে নাচছে। পৌষ অসহায় চোখে তাকিয়ে বললো,

— জামাই, নাচ তো আসে না আমার।
তৌসিফ এক টানে পৌষ’কে নিজের কাছে নিলো। এক হাতে কোমড়ে ধরে পৌষ’র হাত রাখলো নিজের বুকে। টিপটিপ শব্দ করছে পৌষ’র বুকে। তৌসিফ ফিসফিস করে বললো,
— আমাকে সারাক্ষণ ইশারায় নাচিয়ে এখন বলো তুমি নাচ পারো না?
গানের সুরে সুরে সকলে তখন নাচে বিভোর। হঠাৎ ই এনাউন্সমেন্ট হলো। এখন সকলে স্মাচ করবে। পৌষ আশেপাশে দেখে অবাক বনে গেলো। বেহায়া, বেশরম, নির্লজ্জ সবগুলো এখানে। একেকটা বুড়ো বুড়ি, যুবক যুবতীরা এমন ভাবে স্মাচ করছে।

তৌসিফ নেশালো চোখে তাকিয়ে রইলো। খুব ধীরে ধীরে সে মুখ এগিয়ে আনলো পৌষ’র কাছে। এক হাত পৌষ’র চুলের পেছনে দিয়ে হিজাব চেপে ধরে অতি যত্নে সে চুমু দিলো পৌষ’র থুতনিতে। পৌষ চোখ বুজে নিলো।
বলা হয় সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। পৌষ’র সাথে বোধহয় তাই হলো। সে হঠাৎ ই তৌসিফে’র ওষ্ঠাধরে নিজের ওষ্ঠাধর চেপে ধরলো। তৌসিফ অবাক বনে গেলো তবে নিজেও সায় জানালো। অনুভূতি তাদের আজ ভিন্ন। দু’জন ই প্রাপ্ত বয়স্ক। তাদের মাঝে বাঁধা বলতেও কিছু নেই। স্বাধীন ভাবে দু’জন লেপ্টে গেলো একে অপরের সাথে।
বারে বসে আরশি দেখলো সবটা৷ কষ্টে তার চোখে পানি চলে এলো। তার কাছে তৌসিফ তালুকদার মানুষটা বেশ শখের ছিলো। সে খুব করে চেয়েছিলো তাকে। এখন পৌষ’কে দেখে যেন রাগ চেপে গেলো ওর মাথায়। ক্লাচ হাতড়ে একটা মেডিসিনের পাতা বের করলো। কিছু ক্যাশ ওয়েটারের হাতে দিয়ে গোপনে কিছু বলে আরশি সরে দাঁড়ালো। যেই আগুন তার বুকে জ্বলছে তার কিছুটা স্ফুলিঙ্গের শিকার নাহয় পৌষরাত তালুকদার ও হোক।

বন্ধুদের পাল্লায় পরে একে একে দুই প্যাক গিলে নিলো তৌসিফ। প্রায় সময়ই খাওয়া হয় তার। তবে পৌষ’কে বিয়ের পর গিলেছিলো একদিন। সেদিন টাই সে আঘাত করেছিলো পৌষ’কে। নেশা যদিও তার তত সহজে হয় না তবুও আজ দুই গ্লাসেই মাথা ব্যথা ভার হলো যেন৷ পৌষ গিয়েছে ওয়াশরুমে। সেই ফাঁকেই গিলেছে তৌসিফ। রওনাক আরেক গ্লাস হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
— পৌষ আসতে আসতে গিলে ফেল।
তৌসিফ হেসে বললো,
— বউ ভয় পাই না আমি।

বলেই গিলে নিলো। প্রায় দশ মিনিট পর ও যখন পৌষ এলো না তখন তৌসিফ উঠে দাঁড়ালো। বউ কোথায় গেলো ওর? তৌসিফ লেডিস ওয়াশরুমের সামনে যেতেই দেখলো শাড়ী ঠিক করতে করতে পৌষ বেরিয়ে আসছে। তৌসিফ গিয়ে বাকিটা পথ বউকে ধরে নিয়ে এলো। ওর পা তখনই টলছে যদিও এটা হওয়ার কথা না। এত টুকুতে তো তৌসিফে’র গলা ই ভিজে না। “চ্যাহ” শব্দ করতেই পৌষ জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে?
— কিছু না। বাসায় যাচ্ছি আমরা।
— বাঁচা গেলো। কি এক জায়গা ভালো লাগে না।
তৌসিফ রওনাকের কাছে গিয়েই বললো,
— চিকেল বল দিয়েছিস?
— গাড়িতে পাঠিয়েছি।

রওনাকের বউ সহ বাকিরা এসে পৌষ’কে বিদায় জানালো। কেউ কেউ আবার পৌষ’র কানে কানে পরামর্শ দিলো। আমলে নিলো না পৌষ। তৌসিফ বিদায় জানিয়ে গাড়িতে পৌষ’কে বসিয়ে বললো,
— দুই মিনিট বসো। আসছি।
পৌষ কিছু বলার আগেই তৌসিফ চলে গেল। ভেতরে ঢুকতেই রওনাক হাসি মুখে ইনটেক বোতল খুলে দিলো। দাঁড়িয়েই তা ঠোঁটে লাগালো তৌসিফ। বেশিক্ষণ লাগলো না। সে সাবার করে নিলো সবটা। রওনাক জিজ্ঞেস করলো,
— প্যাক করে দিব?
— ধুর শা’লা। এখন এসব খাই না আমি। বউ আছে না?

সবে মাত্র গিলা পাবকিল এই কথা বললে বুঝতে আর বাকি রয় না তাকে নেশা ধরেছে নাকি সে নেশাকে ধরেছে। টলতে টলতে বেরিয়ে এলো তৌসিফ। রওনাক দৌড়ে ওর পেছনে এলো। গাড়িতে তুলে দিতেই তৌসিফ বসলো পেছনে। রওনাক ই ওর ড্রাইভার আনিয়েছে। জানা আছে তৌসিফ তালুকদার এখন ড্রাইভিং করতে পারবে না। তবে এতটা ইফেক্ট ও পরার কথা ছিলো না।
মুখে চুইংগাম চিবুতে চিবুতে পৌষ’র কাঁধে মাথা দিলো তৌসিফ। নাকে অল্প গন্ধ আসতেই পৌষ বলে উঠলো,
— কেমন একটা গন্ধ আসছে।
তৌসিফ মুখ খুলে বললো,

— নতুন পারফিউউমমম হানি।
তৌসিফে’র কথা বলার ধরণ দেখে পৌষ বুঝলো না কি হয়েছে তাই জিজ্ঞেস করলো,
— ঠিক আছেন?
তৌসিফ হঠাৎ ই শাড়ীর আঁচল সরিয়ে পেটে হাত দিলো। পৌষ’র কাঁধে মাথা রেখে বললো,
— মাই হানি, ক্যান আই হ্যাব সাম?
পৌষ তড়িৎ গতিতে তৌসিফে’র মুখের সামনে নাক নিয়ে বললো,

প্রেমসুধা পর্ব ৩১

— ইয়াক। কিসের গন্ধ আসছে? এই, আপনি মদ খেয়েছেন নাকি?
তৌসিফ সটান হয়ে বাবু সেজে বসলো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— আমি ওসব খাই না পৌষরাত।

প্রেমসুধা পর্ব ৩৩