প্রেমসুধা পর্ব ৭০
সাইয়্যারা খান
আকাশে আজ গোল চাঁদ উঠেছে। আশেপাশে কোন তারা নেই। পুকুরের পানিতে জ্বলজ্বল করছে চাঁদের প্রতিচ্ছবি। তাকাতেই যেন চোখে বিঁধে তীক্ষ্ণ সূচের ন্যায়। এই মাঝরাতে বারান্দার থাই খুলে বসে আছে তৌসিফ। বাইরে কিছুই দেখা যাচ্ছে না তেমন৷ ঘাটে পানি দেয়া হয়েছিলো এই দুই মাস। পৌষ’র খুব পছন্দ। তৌসিফ ভেবেছে বসার জায়গার চারপাশ ঢেকে দিবে। কৃষ্ণচূড়ার জন্য সামনের রাস্তা থেকে সরাসরি কেউ দেখতে পায় না। তবুও তৌসিফ চাইছে না এই সময় কেউ দেখুক পৌষ’কে। যদি নজর লেগে যায়? তৌসিফে’র মনের ভেতর এখন আতঙ্ক ঢুকেছে। তার মস্তিষ্ক তাকে বারংবার খুঁচিয়ে মনে করিয়ে দিচ্ছে ডাক্তারের বলা কথাটা, “বাইশ বছরের গর্ভবতী মেয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে চেয়েছিলো”।
তৌসিফে’র বুক কেমন চিলিক দিয়ে উঠে কথাটা ভাবলেই। মুড সুইং কি সত্যি এত তীব্র হয়? পৌষ তো এমনিতেই এলেমেলো ধরণের ছুটন্ত এক মেয়ে। ওর এলোমেলো ভাব শায়েস্তা হয় শুধু মাত্র যখন তৌসিফ কঠিন হয়। এখন তৌসিফ নিজের কলিজা কেটে ফেললেও কঠিন হতে পারবে না৷ সে পারছে না। মনটা আজ সন্ধ্যা থেকে নরম হয়ে আছে। চাইলেও যদি পুরোপুরি ভাবে পিতৃত্ব ভাব বা অনুভূতি জাগ্রত হচ্ছে না যা হচ্ছে তা পৌষ’র আর আগত সন্তানদের জন্য মাথা কিলবিল করা চিন্তা। বলা হয় পুরুষের কোলে যেই পর্যন্ত সন্তানের অস্তিত্ব না আসে সেই পর্যন্ত তাদের পিতৃতান্ত্রিক সত্তা নাকি জাগ্রত হয় না৷ তৌসিফ অবশ্য অনুভূতি গোছাতে পারছে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মনে হচ্ছে দুই হাতে সবটা আগলাচ্ছে আর এদিক ওদিক দিয়ে জোছনার আলোর মতো তা বেরিয়ে যাচ্ছে। আজ পর্যন্ত এই দশা কখনো হয়েছে তৌসিফে’র? উহু, একদমই না। সে যথেষ্ট শক্তপোক্ত এক পুরুষ। তার ধাঁচে নেই নরম স্বভাব। মা বাদে কখনো নরম হয় নি কারো সামনে। পিয়াসী’কে অতিরিক্ত ভালোবেসে তার কদমে কদমে ফুলের গালিচা বিছাতে রাজি ছিলো তৌসিফ। সে নিজের ভালোবাসা দিয়েছে, ছুটেছে টাকার পিছনে কিন্তু সেই সাথে ছুটেছিলো তার অগাধ আস্হা, নিজের ভালোবাসা প্রতিই তার বিশ্বাস ছিলো না। পিয়াসী থেকে সে বারকয়েক মিনতি করেছিলো সন্তানের। জানা নেই কিন্তু ছোট্ট জান তার খুব ভালো লাগে। এই যে হেমন্তের ছেলেটা দেখলেই বুক জুড়িয়ে যায়। ইনি-মিনি’কে কখনো শালী লাগে না বরং বাচ্চা মনে হয়। কেমন আদর আদর মুখ।
তারও খুব শখ কেউ আসবে তার জন্য হাত ভর্তি করা নরম আদর নিয়ে। মুখ ভরা লালা নিয়ে কেউ ছোট্ট শব্দে ডাকবে। একদম অস্পষ্ট, জড়তায় ভরপুর। মুখের ভাষায় হাজার দূরত্ব থাকলেও তৌসিফ কথা বলবে মনের ভাষায়। বড় বড় চোখে যখন তাকিয়ে থাকবে তৌসিফ তখন নিজেকে দেখবে সেই চোখের মাঝে। ভাবা যায়, নিজের অংশের মধ্যে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখা! কত বড় আশ্চর্যের ব্যাপার। তৌসিফে’র তো ভাবতেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
পৌষটাকে সে পৌষ মাসের মতোই ভালোবাসে। কোনদিন অবশ্য ভাবে নি নিজের থেকে এত ছোট মেয়ের প্রেমে সে পড়বে। বেয়াদব ধাঁচের, বাঁচাল এক মেয়ে। উড়নচণ্ডী অথচ কাঁদুনে। শক্ত অথচ দূর্বল। এ যেন কোন অদ্ভুত মানবী। এমন না সে খুব সুন্দর। না তেমন কোন বিশেষত্ব আছে। যা আছে তার সবটা হলো কাঁচের ন্যায় ফকফকা এক মন। সেই মন দিয়ে সবাইকে সে কাছে টানে। সেভাবেই টেনেছিলো তৌসিফ’কে। তৌসিফ বরাবরই সংসার চেয়েছে। সংসারী বউ সে পেয়েছে। শুরুতে তার মনে ভালোবাসা তো দূর পৌষ’র জন্য ভিন্ন কোন জায়গাও ছিলো না। ফুপির রেখে যাওয়া ছোট্ট একটা আমানত আর বাবা’র মুখের কথা। সবটা রাখতেই যেন হাত বাড়ালো পৌষ’তে। হাতের মুঠোয় আসতেও সময় অবশ্য লাগে নি কিন্তু মন বিনিময়, সে এক জন্ম-জন্মান্তরের কাহিনি। কিভাবে যে তৌসিফে’র মতো মানুষটা প্রেমে পড়লো তা যেন আজও রহস্য।
মাঝেমধ্যে তৌসিফ শক্ত হয়ে যায় নাহয় এই পৌষ বিগড়াবে। তৌসিফ তা হতে দিবে না৷ প্রশ্নই উঠে না৷ চোখে চোখে রাখে সে তার পৌষরাত’কে। বুকের ভেতর খোলা খাঁচায় বন্দী সে পাখি। মন চাইলে উড়াল দেয় আবার সন্ধ্যা হতেই ফেরত আসে। এখন থেকে ডানার নিচে দুটো ছানা নিয়ে সে ফেরত আসবে এই হৃদকুঠুড়িতে। তৌসিফ তখন আগলে নিবে। সামলে নিবে।
— হয়েছে।
পৌষ’র বলা শব্দে তৌসিফ পেছনে ঘুরলো। ক্ষুধা লাগায় পৌষ একাই উঠেছিলো। তৌসিফ উঠেছে নিজ থেকে। খেতে খেতেই পৌষ বললো তার অস্থির লাগছে তাই বারান্দার থাই খুলতে এসেছিলো তৌসিফ অথচ কিভাবে যেন গভীর ধ্যানে আটকা পরলো।
পা বাড়িয়ে ভেতরে এসেই জিজ্ঞেস করলো,
— খেলে না যে?
— বাসি হয়ে গিয়েছে।
তৌসিফ কপাল কুঁচকালো। নাকের সামনে নিয়ে শুঁকে দেখলো। নাহ! ভালোই তো। তৌসিফ জানালো,
— ইটস টোটালি ফ্রেশ হানি। বুয়া রাতেই রেঁধেছে।
— টক টক লাগে কেন তাহলে?
তৌসিফ এক চামচ মুখে দিলো। বললো,
— কোথায়? ঠিকই আছে।
— ওহ আচ্ছা।
তৌসিফ এবার যেন বেশ অবাক হলো। এত সহজে মেনে নিলো? এত সহজ তো তার পৌষরাত না। তবে কি ওর মুড সুইং হচ্ছে? তৌসিফ ওর গা ঘেঁষে বসলো। গালে হাত রেখে বললো,
— অন্য কিছু খাবে?
— কি খাব?
— যা মন চায় বলো।
পৌষ কিছুক্ষণ ভাবলো। ভাবতে ভাবতেই ঝুমতে লাগলো। তৌসিফে’র কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে চুপ করে রইতেই তৌসিফ ওর মাথায় হাত রাখে। মেয়েটা এত শান্ত হলো কেন? তৌসিফ কখনোই চায় নি পৌষ শান্ত হোক। তার ঘরময় ছড়িয়ে থাকা এক শান্তি এই পৌষ। সে চুপ করে গেলে কিভাবে হবে?
তৌসিফ সাইডে এসেছে কাজে। ঘড়িতে এখন ঠিক তিনটা বেজে দুই মিনিট। বারবার হাত ঘড়ি দেখছে তৌসিফ। ইমু বিষয়টা লক্ষ করলো। ফাইল গুছিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— স্যার কোন সমস্যা?
— হ্যাঁ।
ইমু হকচকালো। বললো,
— কোন ফাইলে? আমি দুইবার চেক করেছিলাম। বাফারিং টাইম তো আছে। আবার দেখব একবার?
তৌসিফ কপাল কুঁচকে তাকালো। ইমু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। বুঝলো না সে ভুল কি হলো। তৌসিফ পানির বোতলটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পানি গলায় ঢাললো। ফোনটা হাতে নিয়ে বললো,
— সময় দেখেছো? তিনটা তিন বাজে। বাসায় থাকা দরকার ছিলো আমার এখন। তোমার ম্যাডাম একা আছে। এমনিতেই আজকাল চুপচাপ থাকছে। না জানি কপালে কি আছে আমার।
বলেই তৌসিফ ফোঁস করে শ্বাস ফেললো। ইমু কোন কথা ব্যাক্ত করার অবস্থায় নেই। স্যার কখনোই এভাবে কথা বলে না। বউ নিয়ে কথা তো দূরের বিষয় সেখানে বউ নিয়ে চিন্তা করছে ইমু’র কাছে। ইমু’র কষ্ট লাগলো। সে তৌসিফ’কে দেখেছে বিভিন্ন ধাপে। ভাঙলেও মচকায় না তৌসিফ। শক্ত ধাতুর মনে হয় তাকে কিন্তু এবার তার ভাব ভিন্ন। হয়তো সে বদলাচ্ছে। মানুষ মাত্রই পরিবর্তনশীল সেখানে তৌসিফে’র পরিবর্তন তার চোখে পড়ছে।
তৌসিফ দুপুরেও খেলো না। আজ পৌষ’র শেষ পরীক্ষা। সেমিস্টার গ্যাপ থাকবে এখন। তৌসিফ লক্ষ করে দেখেছে এই একটা মাস মেয়েটা পড়ায় মন দিয়েছিলো। প্রথম পরীক্ষা খারাপ হওয়ায় নাকি অন্য কোন কারণ তা তৌসিফ বুঝতে পারে না। তৌসিফ বাসায় ঢুকলে তার বই হাত ছাড়া হয়েছে। এরমধ্যে অবশ্য নতুন এক বুয়া রেখেছে তৌসিফ। তার কাজ শুধু পৌষ’র খেয়াল রাখা যদিও পৌষ মতবিরোধ করেছে। তার পছন্দ হচ্ছে না কেউ সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখুক তাকে। তৌসিফ শোনে নি। পৌষ কি জানে তাকে তৌসিফ এমনিতেও চোখে চোখে রাখে?
বাসার রাস্তায় না গিয়ে তৌসিফ সোজা গেলো ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারটা ভালো অবশ্য। দুই দিন পরপরই তৌসিফ ছুটে আসে। নানান রং বেরং এর প্রশ্ন তার। পৌষ নতুন কোন আচরণ করলেই তার ছুট হয় হাসপাতালে। ডাক্তার বিরক্ত হন না বরং মুচকি হাসেন প্রতিবার এবারও তৌসিফে’র প্রশ্নে তিনি মৃদু হাসলেন। বললেন,
— তুমি কি চাইছো তোমার বউ চিৎকার চেঁচামেচি করুক?
তৌসিফ যেন চমকে উঠে। হ্যাঁ। এটাই। হয়তো ও এটাই চাইছে তৌসিফ। শুক্র-শুক্রে আট দিন পৌষ থমথমে মুখ করে থাকে। নাম মাত্র কথা তার। তৌসিফ ঐ দিকে শ্রেয়া’কে দিয়ে ফোন দেয়ালো। পৌষ হু হা বলে রেখে দিলো। সে নাকি ঘুমাবে অথচ তৌসিফ দেখলো ও মিনু’র সাথে বসে আছে। বাড়ীতে গেলেও কথা নেই। আগের মতো হৈ চৈ করে না৷ জ্বালাতন তো দূরের কথা দুষ্টামির দ ও করছে না ও। এমন কেন হবে? কে বলেছে ওকে ম্যাচিউর হতে? তৌসিফ বলেছে? তৌসিফ কি পা’গল? তার তোতাপাখি চুপ, তৌসিফে’র তো মনে হয় তার দুনিয়াই স্তব্ধ হয়ে আছে। কেন সে চুপ থাকবে। সে তো তোতাপাখি। পাখির বুলি কেন থামবে? ডাক্তারের কাছে আজ আসার কারণই হলো দিনদিন পৌষ চুপ করে যাচ্ছে। গত তিনদিন ও ঠিকমতো ত্রিশটা শব্দ বলেছে কি না সন্দেহ।
ডাক্তার তৌসিফে’র দিকে তাকালো। এত সুন্দর উচা লম্বা সিনা টানটান পুরুষটার চেহারায় চিন্তার ছাপ। সে যে সত্যিই কতটা মানুষিক ভাবে চিন্তিত তা বলার অবকাশ রাখে না। তপ্ত শ্বাস ফেলে ডাক্তার বললেন,
— তৌসিফ, কয় মাস চলছে?
— পাঁচ মাস দুই দিন।
— বাহ। ঘন্টাও গুনো নাকি?
— যদি ঐ দিন সন্ধ্যা ধরি তাহলে পাঁচ মাস দুই দিন উনিশ ঘন্টা।
ডাক্তারের এবার সত্যিই মায়া হলো। লোকরা উদগ্রীব হয়ে আছে। চোখে মুখে প্রশ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে। ডাক্তার বললো,
— আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি তৌসিফ। চুপচাপ হয়েছে। এটা তেমন কোন ফ্যাক্ট না।
— একদমই কথা বলছে না। ওর চালচলন দেখেই বুঝি ইচ্ছে করে করছে।
— ঝগড়া হয়েছে?
— না। ওর সাথে আমার ঝগড়া হয় না।
— বেবি প্ল্যান্ড ছিলো না?
— ছিলো। আমি খুব করে চাইতাম। আমার চাওয়া দেখে ও নিজেও চাইতো।
— তাহলে শুনো মনোযোগ দিয়ে। এখানে ও দুই কারণে হয়তো চুপ আছে। কারণ দুটো খুবই ছোট এবং স্বাভাবিক। এক হলো, নতুন মা হচ্ছে। এই প্রথম। শারীরিক, মানসিক পরিবর্তন গুলো মানাতে পারছে না৷ দুটো বাচ্চা ক্যারী করছে। ও যথেষ্ট পারফেক্ট এরজন্য। এই যে প্রথম মা হচ্ছে এটা হয়তো রিয়েলাইজ করতে ওর টাইম লাগছে। নিজের ভেতরের অস্তিত্বটাকে মেনে নিচ্ছে ধীরে ধীরে। তুমি বাইরে থেকে যা ফিল করো তা ওর ভেতরে বেড়ে উঠছে। ওর মানুষিক দিকটা দেখতে হবে এখানে। অনেকটা ইমোশনাল ব্যাপারটা।
দ্বিতীয় যেটা সেটা অনেকটা সিলি বুঝলে? ও হয়তো তোমাকে জ্বালাতন করতে চাইছে না। ভাবছে তুমি ওর এলোমেলো কষ্ট বা অনুভূতি দেখে নিজে হয়তো গিল্ট ফিল করবে তাই সবটা লুকিয়ে রাখছে।
ডাক্তার দেখলো তৌসিফ মাথা নিচু করে বসে আছে। তিনি ডাকলেন,
— তৌসিফ?
— জ্বি।
— বুঝেছো?
— হ্যাঁ কিন্তু…
— কিন্তু?
— ও তো চুপ থাকার মানুষ না।
ডাক্তার এবার শব্দ করে হাসলেন। বললেন,
— বাসায় যাও বাবা। ওকে টাইম দাও। একা সময় কাটাও। বাইরে ঘুরে এসো। বেশি জার্নি না অবশ্য। মাঝেমধ্যে নিজেদের সুবিধা বুঝে এক হও । ও স্ট্রেস ফ্রী মানেই বাচ্চারা সুস্থ। আর হ্যাঁ, এখন বমি হয়?
— এই দুই মাসে একবারও হয় নি আর।
— আচ্ছা। তবে এইক্ষেত্রে শেষ দিকে বমি শুরু হতে পারে।
তৌসিফ যেন ভদ্র ছাত্রের মতো সবটা বুঝলো। বাইরে এসে গাড়িতে উঠে আবার নামলো। দুটো ভিক্ষুক দেখেই তাদের কাছে এগিয়ে গিয়ে কিছু দান করলো। নোংরা জামা পরা ছোট্ট বাচ্চাটার গালে হাত দিয়ে আদর দিয়ে কচকচা একটা নোট দিলো। বাচ্চাটা হাসলো। সে টাকা চিনে। তৌসিফ গাড়িতে উঠতে উঠতে চাইলো আকাশপানে। বিরবির করে বললো,
— এর প্রতিদান আমার স্ত্রী-সন্তানদের দিও আল্লাহ।
বাসায় এসে তৌসিফ ঘুমন্ত অবস্থায় পেলো পৌষ’কে। মুখ হাত ধুতে গিয়ে গোসলই করে ফেললো। পৌষ’র কপালে হাত বুলিয়ে গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। এগিয়ে এসে পেটে হাত রাখলো। দুটো বাবু থাকাতে পাঁচ মাসেই পেটটা বেশ বড় হয়েছে। তৌসিফ পেটে হাত রেখে থম ধরে বসে রইলো। ওর গলা ধরে এলো। আস্তে ধীরে তৌসিফ বললো,
— তোমারা কি জানো তোমাদের পাপা চিন্তায় আছে?
অপেরপাশ নিশ্চুপ। তৌসিফ আবার বললো,
— আজকের ডিল ফাইনাল বাবারা কিন্তু পাপা কাজে মন দিতে পারি নি। তোমাদের আম্মু কেমন শক্ত আচরণ করছে আমার সাথে। সে কথাবার্তা বলছে না অথচ শান্তি প্রিয় মানুষ আমি অথচ বছর খানিক সময় ধরে তোমাদের আম্মুর কথা ছাড়া আমি চলতে পারি না। আমার বুকটা খালি খালি লাগে। মনে হয় দম আটকে যাবে আমার। তোমাদের আম্মু এটা কেন করছে? আমার দোষ কোথায়? আমি সাফার করছি।
তৌসিফ চুপ করে গেলো। তার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কেউ চেপে ধরেছে। আচ্ছা, বাবা হওয়া এত কষ্ট কেন? পেটে না রেখেও তৌসিফ কেমন দূর্বল হয়ে গেলো। এমন কি কখনো ছিলো তৌসিফ যে কথা বলার আগে চোখে পানি জমা হবে? গলা ধরে আসবে? কেন হচ্ছে? ভালোবাসা নামক মন্ত্রে কি এমন জাদু আছে যা বশবর্তী করে ফেললো শক্ত পুরুষটাকে। তৌসিফ ওখানেই মাথা রাখলো। চোখ বুজলো।
চোখটা তখন হয়তো মাত্র লেগে আসবে তৌসিফ মাথায় কারো হাত টের পায়। ধীরে ধীরে শব্দ আসে কানে,
— উঠুন। এখানে কেন ঘুমিয়েছেন?
তৌসিফ চোখ খুলে মাথা তুললো। পৌষ আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো,
প্রেমসুধা পর্ব ৬৯
— খেয়েছেন?
তৌসিফ মাথা নাড়ে। পৌষ উঠতে চাইলেই তৌসিফ আস্তে করে পেছন থেকে সাপোর্ট দিলো। পৌষ নিজে নিজে মুখে পানি দিয়ে এলো। বললো,
— চলুন। আমারও ক্ষুধা লেগেছে।
— তুমি খাও নি?
পৌষ মাথা নেড়ে বলে,
— নামাজ পড়তেই এত ঘুম এলো।
বলেই বেরিয়ে গেলো। তৌসিফে’র রাগ গিয়ে পড়লো নতুন বুয়ার উপর। তার দায়িত্ব ছিলো পৌষ’কে ঠিক সময়ে খাওয়ানো।