প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ৩৮
সাইয়্যারা খান
হাতে থাকা ইটের টুকরোটা একদম নিশানা বরাবর ছুঁড়ে দিলো পৌষ। ছুঁড়ে দেওয়ার সাথে সাথেই কড়কড়ে গলায় বলে উঠলো,
“একদম নিশানা বরাবর লেগেছে।”
মুখে হাত চেপে পাশেই দাঁড়িয়ে আছে মিনু। ওকে দিয়ে এই ইটের ভাঙা টুকরো আনিয়েছিলো পৌষ। এটা যে এভাবে আরেকজনকে ছুঁড়ে মারবে তা কোনভাবেই জানতো না মিনু। মেরেছে তো মেরেছে একদম আদিত্যর পিঠে গিয়ে লেগেছে। নিচ তলার পার্কিং থেকে একটু সামনেই ছিলো আদিত্য। হঠাৎ আক্রমণে ভরকে গিয়েছে সে। এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজছে। ব্যথা বেশ ভালোই লেগেছে তার পিঠে। পৌষ উপর থেকে জোরে ডাক দিলো,
“অ্যই আদি?”
আদিত্য পড়িমরি করে চাইলো উপর দিকে। পৌষের হাতে তখন আরেকটা ইটের টুকরো। আদিত্য সরে দাঁড়ানোর আগেই তা এসে লাগলো ওর পায়ে। আদিত্য তারাতাড়ি সরলো। ভয়ে বেচারা পালাতে ভুলে গেলো। থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। পৌষ আবারও ডাক দিতেই আদিত্য পালালো। কোথায় যে পালালো পৌষ আর দেখলো না। আজকে তার পা টা ভালো নেই বলে নাহয় পৌষ আদিত্যকে দেখাতো মজা৷ এমন অবন্ধু পৌষের লাগবে না৷ একদম মজা দেখাবে ও আদিত্যকে। একবার শুধু হাতের নাগালে পাক তাকে।
“কি করছো?”
তৌসিফের ডাকে মিনু তরতরিয়ে সরে গেলেও পৌষ সরতে পারলো না৷ ওর পায়ের ক্ষতটা তাজা। হাঁটলে পায়ে জোড় পরে তখন ব্যথা লাগে। তৌসিফ এসে একবার বাইরে তাকালো অতঃপর পৌষকে ধরে নিজের উপর ভর নিয়ে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“খাবে না? এখানে কি করছো?”
“পরে খাব। শুনুন, আমি ভার্সিটি যাব আজকে।”
“আজ? এভাবে কিভাবে যাবে পৌষরাত? পা দিয়ে হাঁটতেই পারছো না৷”
“আপনি তাহলে কোন কাজের? কোলে তুলে বউকে দিয়ে আসবেন আবার কোলে তুলে নিয়ে আসবেন।”
সরাসরি খোঁচা দিলো পৌষ। তৌসিফ ওকে নিজের কাছাকাছি নিয়ে শুধালো,
“এই কথাটাই একটু নরম সুরে, আদর মেখে বলতে। শুনতে কত সুন্দর লাগতো।”
“এখন কি বিষ মেখে বলেছি?”
“নাহ। আমারই দোষ। চলো খাবে।”
তৌসিফ ওকে বিছানায় বসালো। মুখের সামনে খাবারের প্লেট নিতেই পৌষ কিছুটা বাজখাঁই গলায় বললো,
“আমাকে এভাবে খাবার কেন দিচ্ছেন হ্যাঁ? আমার কি হাত নেই? টেবিলে বসেই খাব।”
“এখানেই খাও। কষ্ট করে হাঁটাচলা করার প্রয়োজন নেই।”
“কেন খাবো এখানে? আমি বাইরে খাব। আপা কোথায়?”
“আমার হাতে সময় কম পৌষরাত। তোমার এখনও শাস্তি বাকি বুঝলে। চুপচাপ খেয়ে নিবে। হা করো।”
পৌষ দাঁত দিয়ে দাঁত কামড়ে রাখলো। তৌসিফ এবার ওর গালে হাত রাখলো। আলতো হাত বুলিয়ে বললো,
“খেয়ে নাও ঝটপট। ঔষধ খেতে হবে।”
“ওসব ছাতামাথা আমি খাই না৷”
বলে নিজেই নিজের খাবার খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি খেয়েছেন?”
“প্রোটিনশেক নিলাম একটু আগে।”
“তাহলে খেয়ে নিন এখন। আমি মিনুকে বলি নাস্তা দিতে।”
“প্রয়োজন নেই। তুমি আগে খাওয়া শেষ করো।”
পৌষ অবশ্য খেতে পারলো না। তৌসিফকে ছাড়া ওভাবে খাওয়াটা সম্ভব হলো না তার। নিজের হাতে খাবার নিয়ে তুলে দিলো তৌসিফের মুখে। আগের ভঙ্গিতেই বলে উঠলো,
“এত খাবার কি আমি খেতে পারি একা? একটু খেয়ে কমিয়ে দিন।”
তৌসিফ বউকে ফেরায় না। চুপচাপ খায়। তায়েফা দরজায় আসে তখন। বাইরে থেকেই অনুমতি চায়,
“তুসু, আসব?”
“আসো আপা।”
হাতে চা নিয়ে ঢুকে তায়েফা। তৌসিফ তাকে বসতে দেয়। তায়েফা চা রেখে বসতে বসতে এক পলক দেখে পৌষের তৌসিফকে খায়িয়ে দেওয়ার দৃশ্যটা। মন ভরে দোয়া করে তা দেখে। তার মেঝ ভাইটার সংসারটা এখন বড় হোক। তায়েফা ভাবলো পৌষের সাথে ভালোমতো কথা বলবে। সে তো চলেই যাবে। পৌষকে একটু মানিয়ে যেতে পারলে ভালো হয়।
তৌসিফ যখন শেষ লোকমা খেয়ে উঠলো, পৌষ তখন বাকিটুকু নিজে খেয়ে বললো,
“আমি এগুলো রেখে আসি আপা। আপনি বসুন।”
“মিনু নিয়ে যাবে। হাত ধুয়ে ফেলো তুমি।”
তৌসিফ বলতে বলতে মিনুর আগমন ঘটে। পৌষ বুয়াদের জানায় কি রাঁধতে হবে। তৌসিফ যখন বাথরুমে ঢুকে তখনই তায়েফা মক্ষম সুযোগ পায়। তার জানা আছে, তার ভাই এখন মুখের যত্নে বেশ সময় লাগাবে। তায়েফা চায়ে চুমুক দিয়ে পৌষের পায়ের খবর নেয়। কাঁথাটা সরিয়ে পা দেখে সাবধানও করে। কথায় কথায় তায়েফা বলে,
“তুই ভালো আছিস তো সোনা তুসুর সাথে?”
পৌষ প্রথমে বুঝে না পরক্ষণেই হেসে ফেললো৷ চা শেষ করে ঝলমলে গলায় বললো,
“খুউব। গাল লাল করে দিয়েছে তুসু ভাই।”
তায়েফা ওর গালে হাত বুলালো। আদর করে বললো,
“খুব চিন্তিত ছিলো ও। তুই রাগ করিস না পৌষ।”
“রাগ করি নি আপা।”
“তুসু তোকে খুব ভালোবাসে।”
“জানি। আমাকে বলেছিলো।”
তায়েফা সন্তুষ্ট হলো। ফের আর জিজ্ঞেস করলো না পৌষ ভালোবাসে কি না। নিজের মতো করে বললো,
“তুসু তোকে খুব ভালোবাসে পৌষ। আমি নিজের চোখে দেখে গেলাম ওর গতকালের পাগলামো। এতটা উতলা শুধুমাত্র তোর জন্য ও৷ আগে কখনো এমন দেখি নি৷ ও এতটা সহজ ভাবেও কখনো কারো সাথে কথা বলে নি। সবসময়ই রাগী, গম্ভীর ছিলো ওর স্বভাব। তোর সাথেই এতটা সহজ। তোদের এই ভালোবাসাটা আরেকটু বড় করে নে সোনা। এবারে বাচ্চা নিয়ে নে। তোদের দু’জনেরই বয়স হয়েছে বাচ্চার জন্য। তোর অনার্সও তো বেশিদিন বাকি নেই। এখন হলেও হবে। আমি এসে ছয়মাস পেলে দিয়ে যাব। ওসব নিয়ে একদম ভাবিস না৷”
পৌষ শুনলো। মনোযোগ দিয়ে শুনে বললো,
“আচ্ছা।”
তায়েফা সন্তুষ্ট চিত্তে তাকিয়ে দেখলো পৌষকে। তার বুকের ভেতরের থেকে চাপ কমলো যেন৷ পৌষকে জড়িয়ে ধরলো নিজের সাথে। কপালে চুমু খেয়ে বললো,
“আল্লাহ তোদের সংসার ভরপুর করে দিক।”
“আমিন।”
বিকল তখন চারটা বেজে বাইশ মিনিট।
তালুকদার বাড়ীর চারপাশে যেহেতু গাছগাছালি আর পুকুর ঘিরে তাই এদিকটায় ঠান্ডাটা যেন একটু বেশি। বিকেল হতেই শীত শীত লাগা শুরু হয়। পৌষের শরীরটা আজ গরম। চোখ দুটো টেনে খুলতে পারছে না একদম। শরীর সামান্য ব্যথা তখনও। কলিং বেলের শব্দ কানে এসেছে দুইবার। উঠতে গিয়েও আর উঠাটা হয় নি। পা নড়ানোটা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। মাথাটা বালিশে রেখেই চোখ বুজে রাখলো পৌষ। চোখের কার্ণিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা পানি। সেই পানিটা মুছে দিলো একটা নরম হাত। ফট করে চোখ খুলে পৌষ। পিহার হাতটা তখনও ওর গালে। হুড়মুড়িয়ে তখন ভেতরে আসে একসাথে পাঁচজন। তাদের মধ্যে বড়জনই চিন্তিত বেশি, বাকিরা বোধহয় জানে না তাদের আপা এতটা অসুস্থ। হেমন্তের চোখে মুখে উদ্ভ্রান্ত এক ভাব যা দেখে পৌষ হাসলো। হাসতে গিয়ে তার চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে এলো। হেমন্ত ওর মাথায় হাত রেখে ডাকলো,
“পৌষ? বাচ্চা আমার, কি হয়েছে তোর?”
পৌষের ঠোঁটের হাসি গাঢ় হলো। হাত বাড়িয়ে দিলো ইনি, মিনির দিকে। দু’বোন হৈচৈ করতে করতে বিছানায় লাফিয়ে পড়লো তাদের আপার বুকে। পৌষ হাসে, ইশারায় পিহাকে ডাকে। পিহার চোখে পানি৷ সে আপার মাথার কাছটায় নিজের কপাল রাখে। চৈত্র গিয়ে বসে পৌষের বাম পাশে। ডান পাশটায় জৈষ্ঠ্য বসে বোনের হাত চেপে ধরে। পৌষ হেমন্তের দিকে তাকিয়ে উত্তর করে,
“কিছু হয় নি হেমু ভাই। বান্দর দেখতে গিয়ে বাঘের দৌড়ানি খেয়ে এসেছি।”
কথাটা বলেই পৌষ হাসছে। বোনের হাসিতে ইনি, মিনিও হাসে। পৌষ জিজ্ঞেস করে,
“ভাবী এলো না?”
“ফুপি হবি তো তুই। আরেকটু সময় যাক। আসবে।”
পৌষ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কথাটা বুঝতে সময় লাগলো তার দুই তিন সেকেন্ড। বুঝে আসা মাত্রই লাফিয়ে ওঠে পৌষ৷ পাঁচ ভাই-বোন সহ ছিটকে উঠতেই পা টনটন করে ওঠে ওর। হেমন্ত ধমক দিলো জোরে,
“থাপ্রে তোর আক্কল ঠিক করব আমি পৌষ। এত নড়িস কেন? শান্ত থাকা যায় না?”
পৌষ হাসিমুখে গাল পেতে দিলো। হেমন্তের মন চাইলো বোনটার গালে আদর করে দিতে। তৌসিফ তাকে জানিয়েছে সবটা। গালের ছাপটা এখনও দৃশ্যমান তবে সামান্য। আচ্ছা, হেমন্ত হাত বুলালে কি খারাপ দেখায় বিষয়টা? কেউ কি সেঝ চাচির মতো অপবাদ দিবে তার পৌষকে? সাহস করে হাতটা আর বাড়াতে পারে না হেমন্ত। এই কষ্ট তার আজীবন রয়ে যাবে। হেমন্ত বয়ে বেড়াবে এই অক্ষমতা৷ সম্পর্কের এক তীব্র পিষ্টন। পিহা গিয়ে পৌষের পা সামান্য সোজা করতে নিলেই পেছন থেকে তৌসিফের কণ্ঠ শোনা গেলো,
“পা ধরো না পিহা। আমি দেখছি।”
বাড়ানো হাতটা পিহা গুটিয়ে নিতেই তৌসিফ এগিয়ে এলো। কাঁথার নিচে হাত ঢুকিয়ে পা সামান্য উঁচু করে নিচে বালিশ দিতেই পিহা বললো,
“দুলাভাই, আপার তো জ্বর।”
তৌসিফ প্রথমে বুঝে নি। তাকে দুলাভাই ডাকছে তাও এত ছোট্ট একটা মেয়ে। এই শব্দটা দুষ্টামি করে তাকে ডাকতো একজন। কখনো সত্যিকার অর্থে তৌসিফ তার দুলাভাই হতে পারে নি। আজীবন বড় ভাই হিসেবে ছিলো। এখনও আছে।
” দুতাবাই, তুমি তই তিলে?”
তৌসিফ এবারে বেশিই চমকালো। এই দুই ছোট তোতা তাকে আগেও দুলাভাই বলে ডেকেছে। স্পষ্ট ডাকটা আজ পিহা ডেকেছে। তৌসিফ কিছু বলবে তার আগেই জৈষ্ঠ্য জিজ্ঞেস করলো,
“দুলাভাই, আপনি দেখেন নি আপার জ্বর?”
চৈত্র বোনের হাত নিজের গালে রেখে বললো,
“হাতটাতো ঠান্ডা দুলাভাই।”
আহা, তৌসিফ যেন চমকাতে ভুলে গেলো। এতগুলো বাচ্চাকাচ্চার দুলাভাই কি না তৌসিফ। ভাবা যায়? সবগুলো কেমন করে হিসেব, নিকাশ চাইছে তার কাছে। হেমন্ত আস্তে করে বললো,
“ডাক্তার দেখেছিলো ভাই?”
“তুমি দুলাভাই ডাকলে না?”
তৌসিফের কণ্ঠে মশকরা ভাব টের পেলো হেমন্ত। হেসে উত্তরে বললো,
“আপনার সমন্ধি হই আমি ভাই।”
তৌসিফ নিজেও হেসে ফেললো। পৌষের কপালে হাত ছুঁয়ে কিছুটা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“দুপুরেই তো জ্বরের ঔষধ খেলো তবুও কমলো না৷”
বলতে বলতে ফোনটা হাতে নিয়ে কল লাগায় ডাক্তারকে। পৌষ বিরক্ত হয়েও হয় না৷ তার জীবনের সবটুকু সুখ তার কাছে এখন। হেলান দিয়ে বসে ও বুকে জড়িয়ে রাখে ইনি, মিনিকে। এই দুটোকে জন্মের পর থেকে পেলেপুষে বড় করেছে পৌষ।
হেমন্ত একটু সামনে বসে থেকে উঠে যায়। আড়ালে তৌসিফের হাতে কিছু কাগজপত্র দিয়ে বলে,
“এগুলো সব ব্যাংকে জমা আছে ভাই। আপনার কাছে আমানত রইলো।”
“প্রয়োজন ছিলো না হেমন্ত।”
“আমার ছিলো ভাই। আমার পৌষের হক এটা। আদায় না করলে আখিরাতে ঠেকে যাব।”
তৌসিফ হেমন্তের কাঁধে হাত রাখলো। সামান্য হাসলো হেমন্ত। তৌসিফ নিজে তদারকি করে বুয়াদের দিয়ে রান্নাবান্না করালো আজ। বাসায় থেকেই কাজ করছে সব। তার বউ অসুস্থ। ভালোবাসতে গিয়ে যে তৌসিফ এমন ভাবে ফাঁসবে তা কে জানতো? জানলে কি এমন মারাত্মক ভাবে তৌসিফ ভালোবাসতো? অন্তত একটু কম বাসতো।
ঘর ভর্তি বাচ্চাদের দৌড়াদৌড়ি সাথে কথাবার্তার শব্দে মুখরিত চারপাশ। তৌসিফের ভালো লাগলো। তারা ছোট থেকে যৌথ পরিবারে বড় হয়েছে। এখনই না দায়ে পড়ে এমন একা থাকতে হয়। তৌসিফের স্বপ্ন তার পরিবার বড় হবে। পৌষটা তাকে একটু মন-দিল দিলেই তাদের ঘরটাও ভরপুর হবে।
শীতের আগমন হয়েছে বিধায় ধরণীর বুকে রাত নামে এখন খুব দ্রুত। রাত নয়টা নাগাদ সবাই চলে গিয়েছে। আজ ইনি, মিনি খুব কেঁদেছে। পৌষের বুকে লেগে থেকেছে। চৈত্র থেকে পৌষ জানলো আজ অনেকদিন পর এভাবে খাচ্ছে দুই বোন। ছোট চাচি খাওয়াতে পারে না। একদম না খেতে চাইলেই মাঝেমধ্যে টুকটাক মাইর খায় জমজ দুটো। পৌষের মন চাইলো দুটোকে নিজের কাছে রেখে দিতে। বুকে পাথর বেঁধে ধমকে বাড়ী পাঠিয়েছে। তৌসিফ একবার অবশ্য বলেছিলো ওদের রেখে যেতে। পৌষ সরাসরি না করেছে। অন্যের বাচ্চার উপর চাইলেই অধিকার ফলাতে পারে না পৌষ। তৌসিফ নিজে গিয়ে গেট অব্দি কোলে করে দিয়ে এসেছে দুই শালিকে।
কিছুক্ষণ আগেই ডাক্তার এসে পায়ের ব্যান্ডেজ পাল্টে দিয়ে গিয়েছে। দাঁত খিচে ছিলো পৌষ। একবার অবশ্য মন চাইছিলো সব টেনেটুনে খুলে ফেলতে। এসব আলগা ঝামেলা তার বিরক্তই লাগে। ডাক্তারের সাথে তৌসিফ বেরিয়েছে। নিচের অফিসে কোন এক মিটিং চলছে এত রাতে। পৌষ খোঁড়াতে খোঁড়াতে জানালার পাশে এলো। শীতের রাতে যদি শীতের বাতাসই না পেলো তাহলে কেমন শীত এলো। থাইটা সামান্য খুলে তাকালো বরাবর। গাছপালায় ঘেরা এদিকটা। বাড়ীর পেছন দিক। এখনও পৌষের মনে হাজারও প্রশ্ন। সম্রাট চেয়ারম্যান নিয়ে কতশত প্রশ্ন। উত্তর দিতে কেউ রাজি না। তৌসিফ নিজেও কিছু বলছে না৷ তাহলে কে বলবে তাকে? তাহমিনা৷ পৌষ জানে তাহমিনা তাকে উত্তর দিবে। তাকে দিতেই হবে।
প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ৩৭
কেন সে পৌষকে আগে জানালো না সম্রাট জীবিত। জীবিত হয়ে থাকলে ঐ কবরটা কার? হঠাৎ কিছু নড়তে দেখে পৌষ চমকায়। তার দৃষ্টিশক্তি ভালো। মনে হচ্ছে কেউ বাড়ীর পেছন দিকে যাচ্ছে। গাছের কারণে স্পষ্ট দেখাও যাচ্ছে না। পৌষ মনোযোগ দিলো। যখনই গাছ পেরিয়ে ভেতর দিকে মানবছায়াটি আগালো তখনই পৌষ স্পষ্ট দেখলো। একটা মেয়ে। একটা মেয়ে যাচ্ছে ওইদিকে। পৌষ যতটুকু পারলো খেয়াল করার চেষ্টা করলো। এটা তাহমিনা আপা না৷ তিনি শুধু সাদা বা ঐ জাতীয় রঙ পরেন৷ এমন গাঢ় লাল রঙের কাপড়ে কেই বা হতে পারে? পৌষ গভীর ভাবনায় পড়লো। হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের উপস্থিতি সামান্য আত্না কাঁপিয়ে দিলো তার। তৌসিফ রাতে জানালা খুলতে নিষেধ করেছিলো তাকে তবুও সাহস জুগিয়ে পেছনে ঘুরে পৌষ। তৌসিফের দিকে না তাকিয়েই প্রশ্ন করে,
“ঐ বাগান বাড়ীর দিকে একটা মেয়ে যাচ্ছিলো। কে সে?”
