প্রেমের ধূলিঝড় পর্ব ৩০

প্রেমের ধূলিঝড় পর্ব ৩০
ফিজা সিদ্দিকী

ধূসরের শত অ্যাপ্রোচ সত্ত্বেও তার গাড়িতে আসতে রাজি হয়নি নন্দিতা। বরং শক্ত কণ্ঠে সেখান থেকে বিদায় দিয়ে নিজে উঠে বসেছে অটোতে। ধূসর আড়চোখে তাকালো চলতি অটোটার দিকে। অতঃপর ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে নিজের গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে আপনমনে বিড়বিড় করে বলল,
“ধূসর শিকদারের নজরে শেষে কিনা একটা বিবাহিত মেয়ে আটকালো। তাও কিনা শত্রুর বউ।”
শব্দ করে খানিকটা হেসে ধূসর আবারও বলল,
“ব্যাপার না, এডভোকেট তুর্জয় আহসানকে কোনো মূল্যেই ছাড় দেবে না ড্যাড। স্বামী হারানোর শোকে কান্নার জন্য নাহয় আমার কাঁধ থাকলো মিস।”

আকাশে ঘন কালো মেঘ। যে কোনো মুহূর্তে নেমে আস্তে পারে ঝুন বৃষ্টি। নন্দিতা ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দিল অটোতে। ফুরফুরে বাতাসের ঝাপটা এসে ছুঁয়ে দিতে যাচ্ছে তার চোখে মুখে। এতো বিষন্ন পরিবেশেও শান্তি লাগছে খানিকটা। চোখ বুঁজে নন্দিতা ভাবলো কিছুক্ষণ আগের ঘটনা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ধূসরের হাতে শিশিটা দিয়ে সামনে তাকাতেই তাদের দিকে এগিয়ে আসা তুর্জয়কে দেখেছিল সে। পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার আগেই ইচ্ছেকৃত ধূসরের হাত ধরে হাসি হাসি মুখে কথা বলছিল সে। যাতে দূর থেকে দেখেই তুর্জয়ের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। যার ফলে তার ওকালতি বুদ্ধি খাটিয়ে অতিরিক্ত ভাবতে গিয়ে আসল ঘটনা উদ্ধার করতে না পারে। এতে অবশ্য খুব একটা মন্দ হয়নি। সেই তো একটা সময় তুর্জয়কে ছেড়ে যেতে হবে তাকে। হয়তো শিকদারদের কেসটা ক্লোজ হলেই সে একেবারের জন্য চলে যেত তুর্জয়ের জীবন থেকে।

তার এই অসুস্থ শরীরের আসল কাহিনী কোনোদিনও যদি তুর্জয় জানতে পারে, পুরোপুরি ভেঙে পড়বে মানুষটা। তাকে বাঁচাতে গিয়ে নন্দিতা নিজেই এই মরণব্যাধিকে আপন করে নিয়েছে, এ কথা জেনে কিভাবেই বা ভালো থাকতো লোকটা? ভেতরে ভেতরে এভাবে নিঃশেষ হওয়ার চেয়ে তাকে ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দেওয়া ঢের ভালো। এতে তুর্জয় কখনোই জানতে পারবে না নন্দিতার শারীরিক অবস্থা। জানতে পারবে না তার পিঠপিছে ঘটে গেছে কতকিছু। বরং নন্দিতাকে ভুল বুঝে নিজেকে শক্ত করবে। একজন প্রতারকের সঙ্গে কেইবা থাকতে চায়? সেও চাইবে না থাকতে। তার জীবনটা নতুনভাবে শুরু হলে মন্দ কী? এটাই তো চেয়েছিল নন্দিতা। তার এই একটা পদক্ষেপ অনেকগুলো কাজ সহজ করে দিলো আজ। তুর্জয়ও তার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করবে না। নাহলে আর কি উপায়ে বা আটকাতো সে তুর্জয়কে। একজন স্বামীকে তার স্ত্রীর সঙ্গ থেকে দূরে রাখার উপায় জানা নেই নন্দিতার। আর এই সঙ্গ তুর্জয়কেও এই মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত করে ফেলতো যে।

এপার্টমেন্টের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেললো নন্দিতা। বুকটা তার দুরুদুরু করছে। কিজানি কেমন আছে তুর্জয়? লম্বা একটা নিঃশ্বাস টেনে নিয়ে চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুললো সে। ধীরে ধীরে পা ফেলে বেডরুমে উঁকি দিলো। নাহ তুর্জয় নেই। ওয়াশরুমে, কিচেন সবজায়গায় দেখেও তার কোনো হদিস মিলল না। অগত্যা ফোন করলেও তুর্জয়ের নম্বরে। দুইবার রিং হওয়ার পর থেকে সুইচ অফ। বার কয়েক কল দিলেও একইভাবে সুইচ অফ দেখাচ্ছে ফোন। হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে ফ্রেশ হয়ে নন্দিতা শরীর এলিয়ে দিলো বিছানায়। শরীরটা ভীষণ রকম ক্লান্ত লাগে আজকাল। রান্না করতে গেলেও একদমে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। একবার কয়ে এসে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে আবার যায় রান্নাঘরে। কিজানি আর কত কী দেখাবে এই রোগ?

চোখ লেগে এসেছিলো নন্দিতার। আচমকা কলিংবেলের শব্দে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো সে। গায়ে ওড়না দিয়ে তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে দিতেই এলোমেলো বিধ্বস্ত তুর্জয়কে দেখতে পেল। পাশেই আনসার টালমাটাল তুর্জয়কে দুইহাতে সামলাতে ব্যস্ত। অতিরিক্ত নেশায় পুরো ভর ছেড়ে দিয়েছে তুর্জয় আনসারের উপর। আনসার বহু কষ্টে আগলে রেখেছে তুর্জয়ের মতো বলিষ্ঠ দেহের যুবককে। নন্দিতা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে একবার তুর্জয় তো একবার আনসারের মুখের দিকে তাকালো। নন্দিতাকে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আনসার মুখ খুললো। বিনয়ী কণ্ঠে বললো,

“স্যারকে আটকানোর অনেক চেষ্টা করেছিলাম ম্যাডাম। কিন্তু উনি কোনো কথা শোনেননি। আপনার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই কেমন উন্মাদের মতো করছিলেন। সেই থেকে বারে বসে একের পর এক ড্রিংকের গ্লাস খালি করেছেন। এতো বছরে এই প্রথম স্যারকে ড্রিংক ক্রোতে দেখলাম, তাও এমন পাগলের মতো।”
নন্দিতা আর কথা বাড়ালো না। দুই হাত এগিয়ে আঁকড়ে ধরলো তুর্জয়ের কোমর। এরপর তুর্জয়ের পেশিবহুল বাহু নিজের কাঁধে উঠিয়ে তাকে টেনে নিলো ঘরের মধ্যে। অতঃপর হাসিমুখে আনসারকে ধন্যবাদ জানিয়ে দরজা বন্ধ করতে যাবে, এমন সময় খানিকটা ইতস্তত কণ্ঠে আনসার বলে উঠে,
“ম্যাডাম, আপনি নিয়ে যেতে পারবেন স্যারকে? নাহয় আমি বরং দিয়ে আসি বেডরুম পর্যন্ত।”
“তার কোনো দরকার নেই আনসার সাহেব। আমি আমার বেডরুমে কাউকে অ্যালাউ করিনা। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”

হাসি হাসি মুখে করা নন্দিতার অপমানে দাঁতে দাঁত পিষে দাঁড়িয়ে রইলো আনসার। অতঃপর শয়তানি হেসে বলল,
“বাপের মতো বুদ্ধি পেয়েছিস। তোকেও বাপের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে খুব জলদি। নাহয় অযথা আমার বিপদ বাড়াতে থাকবি।”
তুর্জয়ের পুরুষালী ভারী শরীরটা কোনক্রমে টেনে হিঁচড়ে ঘরে নিয়ে গেল নন্দিতা। তুর্জয়কে ঠিকভাবে বেডে শুইয়ে দিতে গেলে দূর্বল হাত দিয়ে নন্দিতাকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বারবার। মুখ দিয়ে বিড়বিড় করে বলছে কিছু। নন্দিতা খানিকটা ঝুঁকে কান এগিয়ে নিয়ে গেল তুর্জয়ের মুখের কাছে। নাহ স্পষ্টভাবে শোনা যাচ্ছে না কিছুই। নেশার ঘোরে অহেতুক প্রলাপ করলেও দুইহাতে নন্দিতাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার বেশ চেষ্টা চালিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে সে অনবরত। অবশেষে রেগে গিয়ে তুর্জয়ের দুইহাত উঁচু করে মাথার কাছে চেপে ধরলো সে বামহাতে। অতঃপর তুর্জয়ের কপালে কপাল ঠেকিয়ে নিস্তেজ কণ্ঠে বললো,

“কী অবস্থা করেছেন নিজের। এতো অবুঝ তো ছিলেন না আপনি কখনও। কেন এমন অবুঝের মতো পাগলামি করছেন আপনি? আমাদের একসাথে হওয়ার কোনো পথ যে আর খোলা নেই। প্রকৃতি আমাদের আলাদা করতে গভীর ষড়যন্ত্র করে চলেছে। কী করব আমি বলুন? এখন যদি আপনিও এমন পাগলামি করেন, কিভাবে ছেড়ে যাব আমি আপনাকে? একটু রহম করুন আমার উপর।”
নন্দিতার চোখের কোল ঘেঁষে গড়িয়ে পড়া চোখের পানি টপ টপ করে পড়ছে তুর্জয়ের গালে। নেশার ঘোরে বুঁজে আসা চোখদুটো বহুকষ্টে খুলে রাখার চেষ্টা করছে তুর্জয়। ছাড়াতে চেষ্টা করছে নন্দিতার কাছ থেকে নিজেকে। কিন্তু অতিরিক্ত নেশায় বুঁদ হওয়ায় শরীরে শক্তিগুলো কাজে লাগাতে পারছে না। ফলে নন্দিতাকে বেশি শক্তিশালী মনে হচ্ছে তার কাছে। অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বিড়বিড় করে বললো,

“তুমি আমাকে ঠকিয়েছ। আমি হেরে গেছি। গো হারা হেরে গেছি। কলেজ লাইফ থেকে কখনও কোনো মেয়ের দিকে তাকাইনি, ভেবেছিলাম বউয়ের জন্য সৎ থাকবো সবসময়। আমার সবটুকু ভালবাসা একজন মানুষের জন্য হবে। কিন্তু প্রফেশন লাইফে আসার পর এতো এত কেস স্টাডি করেছি, যেখানে বেশিরভাগ সব মেয়েরা ধোঁকাবাজ। কেউ পরকীয়া করেও স্বামীর থেকে ডিভোর্স নেবে আবার মত অংকের টাকাও নেবে। কেউ স্বামী, শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তির জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ফাঁসিয়েছে, কেউ কেউ মার্ডার পর্যন্ত করেছে। কতোগুলো কেস হ্যান্ডেল করেছি তার নব্বই পার্সেন্ট দোষ ছিল মেয়েদের। এরপর থেকেই বিয়ে, নারী জাতির প্রতি ঘৃণা চলে আসে। মনে মনে ভাবতাম আমার জীবনসঙ্গীও যদি প্রতারণা করে এমন আমার সাথে? তাইতো বিয়েটাও করতে চাইনি আমি। করতে চাইনি আমি বিয়ে। করতাম না আমি বিয়ে।”

নন্দিতা আজ অঝোরে কান্না করছে। চোখের জল তার বাঁধ মানছে না। এই মানুষটাকে এতটা কষ্ট কিভাবে দিলো সে? চাওয়ার আগেই সবকিছু হাজির করে দেওয়া মানুষটার মনে এতটা আঘাত না দিলে কী খুব ক্ষতি হতো? কিন্তু সে কী বা করবে? প্রকৃতি এতো বিশ্রী ষড়যন্ত্র করেছে তাদের বিরুদ্ধে। আসল কথা হলো তার ভাগ্যটাই খারাপ। জন্মের পর থেকে বাবাকে পায়নি কাছে ঠিকমত। যখনই ভেবেছিল এবার হয়তো বাবা মা দুজনকে পাবে, তখন আকস্মিক দুর্ঘটনা দুজনকে একসাথে কেড়ে নিলো তার কাছ থেকে। এরপর সে পেল অন্য একটা পরিবার, তুর্জয়কে। আর যেই না তার ভাগ্যের সাথে তুর্জয়ের জীবন জোরালো, সেই থেকেই একের পর এক অঘটন ঘটেই চলেছে। তার কপালটাই শনি কপাল আসলে। যার জীবনে যায়, তাকেও ধ্বংস করে দেয়। নন্দিতা দুইহাতের আজলায় তুর্জয়ের মুখটা ধরে কান্নারত কণ্ঠে বললো,

“আমাদের একসাথে হওয়ার আর কোনো পথ খোলা নেই তুর্জয়। আমাদের যে আলাদা হতেই হতো। যেভাবে আলাদা হওয়ার ছিলো, তার চেয়ে এভাবে আলাদা হওয়া ঢের ভালো। আমি আপনার থেকে অনেক দূরে চলে যাব। আপনি জানতেও পারবেন না, আমি বেঁচে আছি কিনা। জানবেন না আমি ভালো আছি কিনা। শুধু জানবেন আমি একজন প্রতারক ছিলাম। যে আপনার জীবন, আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। আপনাকে ঠকিয়েছে অন্য এক পুরুষের জন্য।”

তুর্জয় কী বুঝল কে জানে? নন্দিতার দুই হাত নিজের হাতের ভাঁজে নিয়ে মলিন কণ্ঠে বললো,
“কেন করলেন এমন? কেন আপনি শত্রুদলের হয়ে আমাকে ধ্বংস করতে চাইলেন? কী কমতি ছিল আমার ভালোবাসায়? আমার এতো গুরুত্বপুর্ন কেসের ফাইলটা পর্যন্ত আপনি তাদের হাতে তুলে দিলেন? কেন করলেন আপনি এমন? কেন?”
নন্দিতা যেন চমকে উঠলো। বিস্মিত কণ্ঠে বললো,
“ফাইল? কিন্তু আপনার কেসের ফাইল সম্পর্কে তো আমি কিছুই জানিনা।”
তুর্জয় বুঝল না কিছুই। শুধু আপনমনে বলে গেল,

“তুমি আমার পিঠপিছে ষড়যন্ত্র করছো জেনেও কখনও কৈফিয়ত চাইনি। বেশ কয়েকবার সন্দেহ হলেও ভেবে নিয়েছি আমার মরণ যদি তোমার হাতে হয় তাতেও ক্ষতি কি? প্রিয়জনের হাতে মরতে পারার সৌভাগ্য কয়জনের হয়? তুমি যদি চোখে চোখ রেখে আমার বুকে গুলি চালাতে পারো আমি হাসি মুখে সেই গুলি বুক পেতে নেব। কারন আমার ভালোবাসার উপর পূর্ণ বিশ্বাস ছিল। আমি জানতাম আমার ভালোবাসা শেষ পর্যন্ত তোমাকে আমার দিকে ফিরিয়ে দেবে। আমার পবিত্র ভালোবাসা তোমার সব অসৎ পরিকল্পনা বাঞ্চাল করে তোমাকে আমার বুকে ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু অন্য পুরুষের সাথে তোমাকে আমি মেনে নেব কিভাবে? কেন এলে তুমি আমার জীবনে? কেন এই ধ্বংসলীলার খেলা খেলার জন্য আমার বুকটাকে রণক্ষেত্র বানালে? কেন তুমি আমার বুকে থেকে আমাকেই আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করলে? আমি তো ভালবেসেছিলাম। শুধু ভালবেসেছিলাম।”

তুর্জয়ের শেষের কথাগুলো বড্ডো করুণ শোনালো নন্দিতার কাছে। বুকটা হু হু করে উঠলো তার। অন্তরের মাঝে অসহনীয় জ্বালাপোড়া নিয়ে আর দূরে থাকতে পারলো না সে তুর্জয়ের থেকে। অতঃপর আহ্লাদী কণ্ঠে বললো,
“আমাকে শেষবারের মতো বুকে টেনে নেবেন তুর্জয়? একদম বুকের সাথে পিষে ফেলুন। পারলে ঢুকিয়ে ফেলুন না আপনার বুকের মাঝে। আর কেউ দেখতে পাবে না আমাকে, কেউ আঘাত দেওয়ার ফন্দি আঁটবে না। প্রকৃতিও পাবে না আমার নাগাল। আমার থেকে আর কিছু কেড়ে নিতে মরিয়া হবে না সে। আমি আর পারছি না। মানুষ কতটুকু হারাতে পারে বলুন তো।

একটা গোটা জীবনে আমি পেলামটা কী? শুধু হারিয়েই গেলাম। যা পেলাম তাও হারালাম, যা পেলাম না তাও হারালাম। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিন না তুর্জয়, করে নিন না লোকসম্মুখের আড়াল। এই ভাঙ্গা গড়ার খেলা আমি যে আর নিতে পারছি না। আপনাকে হারিয়ে আমি বাঁচব কিভাবে? আমাকে একা বাঁচতে শিখিয়ে দিন না। আপনি তো এতদিন একাই বেঁচেছেন, আমাকেও শিখিয়ে দিন না। আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছে। আমাকে আপনাকে বুকে ঠাঁই দিন না। আজ আপনার বেঘোরে আপনার সুযোগ নিতে বড্ডো ইচ্ছে করছে। আপনার ঐ সিগারেট পোড়া ঠোঁটের স্পর্শ পেতে ইচ্ছে করছে। আপনার হৃদস্পন্দন, আপনার উষ্ণ নিঃশ্বাস, আপনার বেসামাল হাতের বিচরণ সবটুকু আমাকে উজাড় করে দিন না। বাকি যে কয়টা দিন বেঁচে থাকব, আপনার এটুকু স্পর্শ যেন আজীবন লেপ্টে থাকে আমার শরীরে।”

গুটি গুটি পায়ে নন্দিতা এগিয়ে গেল বিছানায়। তুর্জয়ের দুইহাত এনে রাখলো তার কোমরে। বুকে মাথা রেখে চুপটি করে শুনতে থাকলো তার হৃদস্পন্দন। হাপড়ের মতো ওঠানামা করছে নন্দিতার বুক। ঠিক যেমন করে বাঁধ আটকানোর চেষ্টা করে প্লাবন। তেমন করেই নন্দিতা আটকানোর চেষ্টা করলো তার কান্না। অতঃপর তুর্জয়ের গালের একপাশে হাত রেখে তার চোখের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো,

প্রেমের ধূলিঝড় পর্ব ২৯

“আমার বুকের ভাঙচুরের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন আপনি? শুনছেন তারাও ভালোবেসে হেরে গেছে। আমি ভালোবেসে হেরে গেছি তুর্জয়। আমাদের ভালোবাসা হেরে গেছে। শুধু একটা কথা জেনে রাখুন, নন্দিতা আপনাকে ভালবেসেছিল। ভীষণ ভালোবেসেছিল।”

প্রেমের ধূলিঝড় পর্ব ৩১