প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ১৫

প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ১৫
নওরিন কবির তিশা

সময় বয়ে যায়, তবে তার মাঝে ঘটা অনেক ঘটনার লেশ মন মস্তিষ্কে দোলা দেয়। কারণ হয় ক্ষণে ক্ষণে লুকায়িত লাজুক হাসির। এই যেমন, সেদিনকার ঘটনার পর প্রায় সপ্তাহখানেক অতিবাহিত হয়েছে। তবে এখনো তা তিহুর মন মস্তিষ্কে আঁচড় কেটে রেখেছে, সদ্য লাগা কাঁচা ঘাঁয়ের ন্যায়। এখনো ঠিকমত নীলের সামনে যেতে পারে না সে, আগের মত তর্কও করতে পারেনা। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে মাথা নিয়ে আসে, আরক্তিম হয়ে ওঠে মুখশ্রী।
ভার্সিটি ক্লাস শেষে, সেখান থেকে কিছুটা দূরে একটা সবুজে মন্ডিত ক্যাফের বহির্পাশ্বে বসে আছে দুই অন্তরঙ্গ সঙ্গিনী। তিহু আর মাহা । রিশাদ আজ অনুপস্থিত । তিহু আনমনে গুনগুনিয়ে গান করছে, মাঝে মাঝে ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠেছে লাজুক হাসি। অন্যদিকে মাহা সিরিয়াস ভঙ্গিতে বসে আছে, চোখে মুখে উদ্বিগ্নতার ছাপ স্পষ্ট।
তিহু এক ঝলক তার দিকে তাকালো, মেয়েটি এখনো দুশ্চিন্তায় মগ্ন দেখে, এবার বেশ রাগ হলো তিহুর । তার উদ্বিগ্নতার কারণ বেশ ভালোভাবেই জানা তিহুর। যদিও প্রথমে সেটা তিহু বিশ্বাস করেনি, বিশ্বাস না করাটাই স্বাভাবিক, কেননা মাহার ভাষ্যমতে, আজ প্রায় বছর পাঁচেক পর তার পুরাতন প্রেমিক ফিরে এসেছে । এমনকি তার সাথে দেখা করতে চায় পর্যন্ত ।

ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত লেগেছে তিহুর কাছে । এমনটা কি আদৌ সম্ভব, যে ব্যক্তির সঙ্গে পাঁচ বছর ধরে মাহার কোন যোগাযোগ নেই সে হুট করে ফোন দিয়ে বলছে তার সাথে না কি সে দেখা করতে চায়। তবে সবচেয়ে অদ্ভুততর বিষয় হচ্ছে, ছেলেটির কাছেই নাকি মাহার ফোন । কিভাবে গেল সে সম্পর্কে অবশ্য তিহু অবগত । তবে কেন জানি ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য লাগছে না ।
এদিকে চিন্তায় চিন্তায় মাহার অবস্থা খারাপ, বেচারীর যেখানে রাওফিন নামটা শুনলে হৃদযন্ত্রটার নৃত্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়,নব কিশলয়ে লাগা ঝড়ো হাওয়ায় ন্যায় কম্পিত হয় হাত-পা । সেখানে সেই মানুষটাই আজ পাঁচ বছর বাদে তার সাথে কথা বলতে চায়, দেখা করতে চায়। ভাবতেই অস্থিরতায় ছেয়ে যাচ্ছে চারিপাশ।
তিহু একবার হাত ঘড়িটার দিকে তাকালো, তারা লাস্ট পিরিয়ডে ক্লাস মিস করে এখানে এসে বসেছে । অতিবাহিত হয়েছে প্রায় অর্ধঘন্টা, বিরক্ত হয়ে সে মাহার উদ্দেশ্যে বলল,,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

—-“কোন আ’বা’লে ফোন দিয়েছিল গড নোজ, আর সেই জন্য তুই এখানে এসে আমাকে বসিয়ে রেখেছিস। গালাগালটা কি তাকে দেব না তোকে বুঝতে পারছিনা।”
মাহা:“ওটা রাওফিনই ছিল। আ’ম ড্যাম শিওর । আমি ওর কণ্ঠস্বর খুব ভালোভাবে চিনি।”
তিহু:“ওরে আমার লায়লারে, তা তোমার মজনু যখন তোমার সামনে এসেছিল তখন চেনো নি? তখন তো ও তোকে হেল্প করতে চেয়েছিল তখন তুই কণ্ঠস্বর চিনতে পারিস নি ?”
মাহা চিন্তায় পড়ে গেল। আসলেও তো, তখন তো রাওফিন ওর সাথে কথা বলেছিল ওকে হেল্প করতে চেয়েছিল, তাও কেন চেনে নি তাকে? খানিক ভেবেচিন্তে সে উত্তর দিল,,,
—–“না চেনা টাই নরমাল, কেননা ওর সাথে আমার দেখা হয়েছিল আরো পাঁচ বছর আগে । আর তাছাড়া ওর কোনো ছবিও আমার কাছে নেই । চেহারা তো বলতে গেলে আমি গুলিয়ে খেয়ে ফেলেছি। ও আমাকে পরিচয় না দিলে আমি কখনোই চিনবো না ওকে। আর রইল বাকি কণ্ঠস্বর, আমি তখন ততটা খেয়াল করিনি। তবে ফোনে যখন ও আমাকে মাহা বলে ডাক দিল না, তখন আমার আর কোনো কনফিউশন থাকলো না যে ওই রাওফিন!”

তিহু এতক্ষণ হা হয়ে মাহার কথাগুলো শুনছিল। ইস কি ভালোবাসা! তার ব্যাচমেট সবার জীবনেই এমন একটা-আধটা অতীত আছে। শুধুমাত্র সে ব্যতীত, এজন্য তো রিশাদ প্রায়শই বলে,‘তুই মানুষ?’ আসলেও এগুলা যদি মানুষের অস্তিত্বের প্রামাণক হতো, তাহলে সে নির্ঘাত মানুষের কাতার থেকে বাদ পড়তো। যাই হোক মাথা থেকে সকল চিন্তা ঝেড়ে, একবার মাথা ঝাঁকিয়ে সে মাহার উদ্দেশ্যে বলল,,
——-“ তাহলে আর কি? তুই তোর মজনুর জন্য ওয়েট করতে লাগ। আমার বাবা ঘুম আসছে, চোখে মুখে পানি দিয়ে আসি বরং।”
তিহু উঠে দাঁড়ালো। কিছু দূর এগিয়ে গিয়ে ফের ফিরে এসে বলল,,,—-“তুইও কোল্ড কফি নিবি । তাই না?”
মাহা সামান্য মাথা ঝাঁকালো । তিহুও মুচকি হেসে এগিয়ে চলল ওয়াশরুমের দিকে।

ফ্রেশ হয়ে, কোল্ড কফির অর্ডার দিয়ে, মাহার বসা স্থানটার দিকে যাচ্ছিল তিহু । হুট করেই পদচলনার থেমে যায় তার, যখন দৃশ্যমান হয় মাহার সামনের চেয়ারটাতে, যেখানে সে বসেছিল । সেখানে এখন অন্য একজন, প্রাপ্তবয়স্ক সুঠামদেহি পুরুষ । উল্টো দিকে ঘুরে বসার দরুন, তিহু শুধুমাত্র তার পিঠ টা দেখতে পাচ্ছে।
তবে মুহূর্তে এসে নিশ্চিত হয়ে গেল এটাই রাওফিন, কেননা মাহার মুখের ভাবসাব, সেটারই প্রমাণক হিসেবে কাজ করছে । তিহু আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না, এতদিনকার জমিয়ে রাখার রাখা ক্ষোভ সব মিটিয়ে দিতে ধুপধাপ পায়ে এগিয়ে চলল সে দিকে। রাওফিন এর পিছনে এসে থমকালো সে । বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে এক নাগাড়ে বলতে শুরু করলো,,,

——“আপনি তাহলে সেই, রাওফিন কি বাওফিন! হোয়াট এভার, আপনি তো সেই না, যার একটা ফোঁস করে ওঠা মা আছে? বোঝে কম চিল্লায় বেশি । আর আপনিও তো মাম্মা’স বয় । এতদিন পর আমার বান্ধবীর কাছে কি হ্যাঁ ? এখন কি আবার নতুন ফন্দি আটঁছেন মা ছেলে মিলে আমার বান্ধবীকে ফের অপমান করার ? শুনুন মিস্টার আপনার থেকে হাজার গুন হ্যান্ডসাম আর সুন্দর পাত্র অপেক্ষা করছে ওর জন্য । এম এইচ আর গ্রুপস অফ কোম্পানিসের নাম শুনেছেন না? সেটার সিইও মাহমুদুল হক,তার ফিওন্সি ও । তাহলে বুঝতেই পারছেন কোথায় আপনি আর কোথায় সে? আপনার মতন ডেট ওভার মা’লকে আর যেন কক্ষনো আমার বড় জার আসে পাশে না দেখি । চলেন ফোটেন!”
‌ তারা এমন কথাবার্তায়, মাহা বারংবার তাকে ইশারা করছে থামতে। তবে তাতে কোনো হেলদোল নেই তিহুর। একনাগাড়ে কথাগুলো শেষ করে তবেই থামল সে । তার কথা শেষ হতেই রাওফিন একবার তার দিকে ফিরল, সঙ্গে সঙ্গে চোখ কোটর থেকে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম তার । একটা ঢোক দিলে সে বলল,,,
—–“ব্রাদার,তুমি এখানে?”

তিহু তাকে ব্রাদার কেন বলল ? সূক্ষ্ম ভাঁজ তৈরি হলো মাহার ভ্রুদ্বয়ের মধ্যিখানে । বিচলিত হলো খানিক । আর এদিকে এতক্ষণ নিজের লাগামহীন কথাবার্তার জন্য লজ্জায় পড়ে গেল তিহু । লজ্জায় পড়াটাই স্বাভাবিক কেননা, কথায় কথায় সে মাহাকে তার ফিওন্সি বলে ফেলেছে যে । এদিকে দুই সঙ্গিনী যখন অদ্ভুত চিন্তার সাগরে ডুবে, তখন চেহারায় কোনো হেলদোল নেই রাওফিনের ।
তার নিশ্চিন্ত থাকার কারণ একটাই,মাহার গ্যালারিতে মাহা আর তিহুর বেশ অনেকগুলো ছবি দেখেছে সে । প্রথমে দেখে অবশ্য সে নিজেও অবাক হয়েছিল । তবে পরক্ষণেই সবটা পরিষ্কার হয় তার সম্মুখে । সে বুঝতে পারে,তিহুই মাহার সেই তথাকথিত বেস্ট ফ্রেন্ড । যার কথা রাওফিন জানতো, তবে কখনো দেখা হয়ে ওঠেনি ।
তিহু একটা শুকনো ঢোক গিলে, অপ্রস্তুত হেসে বলল,,,,—-“ব্রাদার,বললে না যে? এখানে কি করো?”

রাওফিনও আঁটসাঁট বেঁধে এসেছে । সে খুব ভালো করেই জানতো এখানে আসলে তিহুর সঙ্গে দেখা হওয়ার চান্স শতভাগ । তাই বুদ্ধি খাঁটিয়ে সে বলল,,,
—–“এইতো তোমার ভার্সিটির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম, তাই ভাবলাম তোমাকে নিয়ে যাই। পরে শুনলাম তুমি এই ক্যাফে তে তাই চলে আসলাম তোমাকে নিতে । আর নীলও আজকে একটু ব্যস্ত, কি সব মন্ত্রীদের সাথে মিটিং আছে বলল তাই আমিই আসলাম ।”
তিহু ছোট্ট করে বলল,,,———“ওহ!”
তিহু দ্রুত এখান থেকে কেটে পড়ার চিন্তা ভাবনায় আছে । হাজার হলেও সে একটু আগে যে কথাগুলো বলেছে তাতে লজ্জায় হয়তো মাহার করুন অবস্থা । তার সামনে থেকে এখন এনাকে নিয়ে চলে যাওয়াই উত্তম । কিন্তু লোকটা এখানে এসেছে, তার ওপর তিহুর সাথে আবার তার খুব ভাব । একটা পাতানো ভাই বোনের সম্পর্ক আছে বলতে গেলে, তারপর মাহাও তার বেস্ট ফ্রেন্ড । এমন কাছের দুজন মানুষ সামনাসামনি, তাদের মধ্যে একটু আলাপচারিতা না করিয়ে দিলে হয়? তিহু সামাজিকতা বজায় রাখার দরুণ বলল,,,,
——“ব্রাদার?”
রাওফিন:“হু?”

তিহু, মাহার দিকে ফিরে বলল,,,,—–“মিট মাই বেস্ট ফ্রেন্ড, তাসফিয়া মাহা।”
রাওফিন বাঁকা হেসে মাহার দিকে তাকিয়ে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,,,,—–“ওহ,নাইস নেম ।”
মাহা বুঝতে পারছে রাওফিনের চালাকি । তবে এই মানুষটা তিহুর ভাসুর ভেবেই কেমন লাগছে তার । তার মানে তিহু এতদিন এই মানুষটার সাথেই তার…! মলিন হাসির রেখা ভেসে উঠলো মাহার ঠোঁটের কোণে, বোকা তিহু যদি মানুষটাকে চিনতো!
এদিকে রাওফিন হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে তখন থেকে। আর মাহা চিন্তার অতল গভীরে,ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু লাগলো তিহুর। মাহাকে আলতো ধাক্কা দিয়ে সে বলল,,,,—-“কিরে কই হারিয়ে গেলি? এটাই হচ্ছে আমার ব্রাদার! হ্যান্ডশেক কর!”
মাহা না চাইতেও হাত বাড়িয়ে, হ্যান্ডশেক করলো। রাওফিন মুচকি হেসে বলল,,,—–“আমি মাহমুদুল হক, মাহমুদুল হক রাওফিন। এম এইচ আর গ্রুপস অফ কোম্পানিসের সিইও। সেই সাথে তিহুর ব্রাদার।”
রাওফিন নামটায় থমকালো তিহু। তাহলে এনার অন্য নাম রাওফিনও ছিল । আর বোকা মাহা ভেবেছে, এটা সেই রাওফিন? বোকার ডিম একটা। এমন উজবুক কর্মকান্ডে মনে মনে তাকে হাজারটা অবজ্ঞা করল তিহু ।

অতিবাহিত হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ, এতক্ষন অনেক আলাপচারিতা চালিয়েছে তারা । আলাপচারিতা বলতে তিহু বলেছে, আর তারা শুনেছে। তারা বলতে শুধু মাহা। কেননা রাওফিনের দৃষ্টি,মনোনিবেশ সব তো মাহাতে নিবদ্ধ ছিল । হঠাৎই হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মাহা বলল,,
—–“আজকে তাহলে আমি যাই, আর টাইম নেই অনেক দেরি হয়ে গিছে।”
বলে সে উঠে দাঁড়াতেই রাওফিন উঠে দ্রুতার সহিত বলল,,,—–“কোথায় যাচ্ছ? চলো আমি ড্রপ করে দিব!”
পরক্ষণেই নিজের কথায় নিজেই লজ্জায় পড়ল সে। তিহুর সামনে এমন হ্যাংলোমো করল? কিন্তু তিহু তত একটা খেয়ালই করেনি ব্যাপারটা। তবুও রাওফিন সাফাই গাওয়ার স্বরে বলল,,,—–“ইয়ে মানে আসলে, আমরা তো বাসায় যাচ্ছি । তাই ভাবলাম আপনাকেও নিয়ে….”

তাকে কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে মাহা বললো,,,—–“তার দরকার হবে না । আমি একা একা চলাচলে অভ্যস্ত । ইনফ্যাক্ট অন্য কেউ আমার সঙ্গ দিলেও এখন খারাপ লাগে । আর এমনিতেও আপনাদের যাওয়ার রাস্তা আর আমার রাস্তা সম্পূর্ণ ভিন্ন, বিপরীত।”
তিহু:“এত ফিলোসফার মার্কা কথা বলার কি দরকার? চল তোকে ড্রপ করে দিয়েই আমরা যাব!”
তিহুর কথায় রাওফিন সাই জানালেও মাহা বিরোধিতা প্রকাশ করে বলল,,,,—–“একদমই দরকার নেই । দেখছিস না বেলা পড়েছে, তোরা বরং যা। আমি রিকশাতে করে চলে যেতে পারবো।”
কি আর করার? রাওফিন আর তিহু বেরিয়ে পড়ল সেখান থেকে। তিহু কিছুক্ষণ হলো অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে ‌। তবে রাওফিন একটু ধীরে হাঁটছিল, মাহার সমান্তরালে যাওয়ার জন্য। নিজের প্রচেষ্টায় সফল হতেই, মাহার কানের কাছে সামান্য ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে সে বলল,,,,—–“কথাটা যখন সিস্টার বলেইছে, তাহলে সেটা সত্য করার দায়িত্ব তো আমার । তৈরি থাকিয়েন ম্যাম, কিছুদিনের মধ্যেই আপনাকে আমার অর্ধাঙ্গিনী করব।”
নিঃশ্বাস আটকে আসলো মাহার। থমকালো পদচারণা।বিস্ফোরিত নয়নে রাওফিনের দিকে তাকাতেই, মুচকি হেসে,হেলেদুলে সেখান থেকে প্রস্থান করলো রাওফিন।

গাড়িতে বসে উশখুশ করছে তিহু। ড্রাইভিং সিটে বসে আছে রাওফিন । মূলত সেই কারণেই এত অস্থিরতা, তখন কত কিছু না জেনে বলে ফেলল তাকে? সাধে কি আর নীল টাকে স্টুপিড বলে!ঠিকই বলে। এদিকে, লুকিং গ্লাসে তার এমন অবস্থা দেখে মুচকি হাসলো রাওফিন। তবে তিহুকে, এ রূপে একদমই ভালো লাগছে না তার । তাই সে, বদ্ধ গাড়ির গুমোট কাটানোর জন্য বলল,,,
——“কি ব্যাপার সিস্টার? তোমাকে চিন্তিতো লাগছে, এনি প্রবলেম?”
তিহু এতক্ষণ আনমনে ছিল, রাওফিনের এমন কথায় অপ্রস্তুত হেসে বলল,,,
—–“না না তেমন কিছু না । আসলে, তখন তোমাকে এরকম বলে ফেলেছি তো তাই।”
রাওফিন, দক্ষ হাতে গাড়ি চালনা করতে করতে উৎসুক কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,,,,——-“হুম সিস্টার, তুমি তখন কি জানি একটা বলছিলে না? রাওফিন নাকি?কে সে?”

তিহু:“আসলে ব্রাদার, আ’ম রিয়েলি সরি আসলে আমি জানতামই না যে তোমার নামও রাওফিন ।”
রাওফিন:“ইটস ওকে! কিন্তু আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে তুমি কার কথা বলছিলে?”
তিহু:“আসলে ব্রাদার, আমার ওই যে বেস্টু কে দেখলে না, ওর এক্স এর নাম ছিল রাওফিন। কিন্তু ওর ক্যারেক্টার একদমই তোমার মত না, ব্যাডা খচ্চর, ওই ব্যাডার জন্য আমার বান্ধবীর টা কত কান্নাকাটি করছে । একবার যদি ওনাকে সামনে পাই না পুরো সানডে-মানডে ক্লোজ করে দিব।”
তিহুর কথায় রীতিমতো ভীষম লাগলো রাওফিনের। তিহু যাকে না জেনে কথাগুলো বলছে, সে তো সে নিজেই। এদিকে তার এমন অবস্থা দেখে তিহু বলল,,,

—–“আরে ব্রাদার তোমাকে বলিনি তো। ওই ব্যাডাকে বলেছি।”
রাওফিন নিজেকে সামলিয়ে বললো,,,—–“বুঝেছি। কিন্তু সিস্টার তুমি আমাকে বলোতো, তোমার কেন এত রাগ তার উপর?”
তিহু:“ওই ব্যাডা যা করছে, সেটা শুনলে তোমারও রাগ হবে। অবশ্য তুমি তো মাহার লাভ স্টোরি সম্পর্কে কিছু জানো না।”
রাওফিন:“তো বলো তাহলে শুনি!”
তিহু:“সত্যিই শুনবে?”
“হুম? হ্যাঁ, তুমি বলো”——— ঠোঁট চেপে দুষ্টু হাসলো রাওফিন। হাজার হলেও অন্যের মুখে, নিজের লাভ স্টোরি শোনার মজাটাই আলাদা।
এদিকে তার থেকে সম্মতি পেয়েই বোকা তিহু বলতে শুরু করল,,,

‘ সময়টা আজ থেকে পাঁচ বছর আগে, তখন আমরা দুজনেই নবম শ্রেণীতে পড়ি । বলাবাহুল্য মাহা আর আমার ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে, মাধ্যমিক লেভেলে, আমরা দুজনেই তখন ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে উত্তীর্ণ হয়ে সবে সপ্তম শ্রেণীতে উঠেছি । যাই হোক, নবম শ্রেণীতে পড়াকালে, আন্টি অর্থাৎ মাহার মা অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। একটা অপারেশনের জন্য কিছুদিন ঢাকায় থাকতে হয় । মাহার এক আন্টির বাসা ঢাকায় হওয়ায় তারা প্রায় বছরখানেক সেখানেই ছিল। তো নতুন করে মাহা আবার ঢাকার একটা স্কুলে, আর সাথে পাশেই একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়।
সময় চলমান, কেটে যায় প্রায় মাস দুয়েক। আমার আর ওর সম্পর্কের মাঝেও খানিক ছেদ পরে, আসলে তখন আমরা দুজনেই ছোট আর ও অনেকদিন হলো ঢাকায় এসেছে । যাইহোক ওর আরো কিছু বন্ধু মহল জোটে, কথায় আছে না সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে, তেমন হয় ওর অবস্থা। ওর প্রত্যেকটা ফ্রেন্ডেরই বয়ফ্রেন্ড ছিল, শুধুমাত্র ওর ছাড়া । ওর তাতে তত একটা আগ্রহও ছিলো না।

তবে একদিন একটা অন্যরকম ঘটনা ঘটে, সেদিন সিনিয়রদের ক্লাসের সামনে দিয়ে ও আনমনে হেঁটে নিজের ক্লাসরুমের দিকে যাচ্ছিল । যেহেতু কোচিং, তাই অনেক বড় বড় ক্লাসের ছেলে মেয়েরাও পড়তো সেখানে। মাহার আবার ওই ক্লাসের একটা মেয়ের সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল, মেহেতাজ আপু ‌। তার খোঁজেই ও এক ঝলক ক্লাসের দিকে তাকায়।

সঙ্গে সঙ্গে ওর নজর বিদ্ধ হয় এক ছিপছিপে গড়নের ‌মাক্স পরিহিত ফর্সা তরুণের পানে। কিশোরী মনে হঠাৎই দোলা দেয় সে, মাহা অপলক চেয়ে থাকে সেদিকে। কিছুক্ষণের মাঝে ধ্যান ভাঙ্গে তার, এতক্ষণ নির্লজ্জের মত এমন চেয়ে থাকার দরুন জ্বিভ কেটে দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করে সে। প্রথম দিনটা অতিবাহিত হয় এভাবেই।
এরপর থেকে প্রায়শই মাহা ছেলেটাকে দেখার প্রচেষ্টা চালাত, অনেক কষ্টে ও জানতে পেরেছিল ছেলেটার নাম রাওফিন । সে আবার খুব ভালো সাইকেল চালাতে পারতো। মারাত্মক সুদর্শন লাগতো তাকে,যখন সে সাইকেল চালাতো। প্রতিদিন কোচিংয়ে মাহা ঠিক সেখানেই বসতো যেখান থেকে রাওফিনকে বেশ ভালোভাবে দেখা যায়।
দিন অতিবাহিত হতে লাগলো, একদিন একটা অনুষ্ঠানে যাওয়ার দরুণ বেশ দেরিতে কোচিংয়ে গিয়েছিল, মাহা। তবে অদ্ভুতভাবে, সেই দিনটি তার জন্য অনেক বেশি স্পেশাল ছিল । কেননা রাওফিন মাহার ক্লাসেরই একটা মেয়েকে দিয়ে, নিজের ফোন নাম্বার পাঠিয়েছিল তার কাছে ।

সূচনা হলো এক নব প্রেমকথনের, তাদের মুহূর্তগুলো না অনেক সুন্দর ছিল । রাওফিন, অনেক দুষ্টুমি করত মাহার সাথে ‌। এই যেমন ধরো মাহা বসে বসে পড়ছে, হুট করে ফোন দিয়ে সে বলতো,,,—–‘জানো আমি এখন প্রধান সড়কের ওপর সাইকেল চালাচ্ছি, সামনেই একটা ট্রাক । আমার হাত ছেড়ে দেওয়া, এই এই আমার সামনে চলে এসেছে।’
এদিকে বেচারির ভয়ে জমে কাঠ। কাঁদো কাঁদো অবস্থা, তাতে আবার রাওফিন নিজেই হেসে বলতো,,,—-‘আরে না না, আমি সাইকেল ধরেই সাবধানে চালাচ্ছি।’

এভাবে দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটিতে, কাটতে লাগলো দিনগুলো। তবে এরই মাঝে তাদের ওপর নজর পড়লো অলিজা নামক এক ডাইনির। শা*লী ভু’টকি রাওফিনের মায়ের সামনে গিয়ে, উল্টাপাল্টা লাগালো । আর সেই মহিলাও ছিল ব্যাপক মেজাজ ধারী, বেডি বোঝে কম লাফায় বেশি। নিজের আদরের ছেলেকে কিছু বলেছিল কিনা জানা নেই তবে, মাহাকে যাচ্ছে না তাই বলে কথা শোনায়।
ভীষণ ডিপ্রেশনে চলে যায় মাহা, কোচিং এর প্রত্যেকটা টিচারের সামনে তার ভালো ইমেজটা খারাপ হয়ে যায়। যে টিচারটা ওকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসতো সেও আড়চোখে তাকানো শুরু করে। এরপর……! বাদ দাও সেগুলো না শুনলেও চলবে, এক তিক্ত-বিষাক্ত অতীত বলা যায়।

তবে তুমি জানো ব্রাদার, সেই রাওফিন । যার জন্য আমার বেষ্টি এখনো কান্না করে, সে ওই দিনের পর থেকে আর কখনো যোগাযোগের প্রয়োজন বোধ করেনি মাহার সাথে। বেচারী অনেক চেষ্টা করেও, রাওফিন এর পুরাতন নাম্বারে, অ্যাক্টিভ পায়নি তাকে। তবে তুমি জানো ব্রাদার, ও এখনো রাওফিনের, কথা মনে করে গুমড়ে ওঠে। হৃদস্পন্দন বেগতিক হয়, হাত পায়ের কম্পন মাত্রা ছাড়ায়। বেচারীটা এখনো উন্মাদের মতো ভালোবাসে তাকে ।’
তিহুর কথা শেষ হতেই হুট করে থামলো গাড়িটা, রাওফিন মৃদু হেসে বলল,,—–“চলে এসেছি সিস্টার ।”
তিহু নামলো, এগিয়ে গেল মহলের দিকে। তবে রাওফিন এখনো নিরাশ ভঙ্গিতে বসে আছে। মুখশ্রী জুড়ে অনুশোচনা, সত্যিই তো সেদিনের পর থেকে সে আর কক্ষনো মাহার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। অবশ্য তার দোষেই কেননা, ফোনটা সেদিন মায়ের উপর রাগ করে ভেঙে ফেলেছিল সে । আর তার প্রায় সপ্তাহখানেক এর মধ্যেই আমেরিকা যাওয়ার দরুণ, আর যোগাযোগ হয়ে ওঠেনি।

পার্টি অফিসের মিটিং শেষে, ঘন্টা দুয়েক হলো অফিসে এসেছে নীল । ইজি চেয়ারটাতে বসে, সবে ল্যাপটপটা সম্মুখে রেখেছে । তক্ষুনি পাশে থাকা টেলিফোনের ধ্বনি মনোনিবেশ কাড়লো তার। ভ্রু দ্বয়ের মধ্যিখানে তৈরি হলো সূক্ষ্ম ভাঁজ। সেভাবেই ফোনটা গ্রহণ করে সে বলল,,,,
———“হ্যালো ?”
ওপাশে থাকা ব্যাক্তিটি কিছুটা ভীত কন্ঠে বলল,,,———“স্যার একটা মেয়ে এসেছে।বলছে আপনার সাথে দেখা করবে । আমি কিছু বলার আগেই, আপনার কেবিনের দিকে চলে গিছে।”
নীলের ভ্রু দুটি আরও কুঁচকে আসলো । তবে জবাবে সে কিছু বলার আগেই, দরজায় হালকা নক করল কেউ। নীল দ্রুত ফোন রেখে বললো,,,——-“কাম ইন!”
হাতে একগুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে, ভেতরে প্রবেশ করল গাঢ় নীল শাড়ি পরিহিত এক সুশ্রীর রমনী। নীল ভ্রু কুঁচকে গুরুগম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালো সেইদিকে। মেয়েটি প্রাণবন্ত হাসলো নীলকে দেখে, হাসির ঝলকানিতে তাকে বড় মনোহর দেখালেও, নীল তাকালোনা সেদিকে। মেয়েটি এগিয়ে এসে আদুরে স্বরে বলল,,,

———“কেমন আছেন নেতা সাহেব?”
“ভালো”———এক কথায় উত্তর সারল নীল। বড্ড গম্ভীর শোনালো সেই কণ্ঠস্বর।
তবুও মেয়েটি হেসে বলল,,———“আপনি কিন্তু একটু ইন্ট্রোভার্ট টাইপ। বাই দ্যা ওয়ে, আমি কি দাঁড়িয়ে থাকবো?”
নীল ল্যাপটপের স্কিনে দৃষ্টি রেখেই বলল,———“সামনে ফাঁকা অনেক স্পেস আছে, আই থিঙ্ক সেগুলো তোমার জন্য এনাফ। তাও যদি দাঁড়িয়ে থাকো, সেক্ষেত্রে আমার কি করার?”
মেয়েটি এবার সত্যি সত্যি অপ্রস্তুত হলো, সে বেছে বেছে নীলের ফেভরিট কালার শাড়িটা পড়ে এসেছে। এমন কেউ নেই যে তাকে দেখে প্রথমবারই প্রশংসা করেনি, অথচ নীল একবারও তার দিকে ঠিকমত তাকাচ্ছে না! ব্যাপারটা অপ্রীতিকর, যাই হোক সে নীলের সম্মুখের চেয়ারটি টেনে বসলো।
————“শুনবেন না আমি কেন এসেছি?”
নীল:“হু?”

নীল গুরুগম্ভীর দৃষ্টিতে একঝলক মেয়েটির পানে চাইলো, পানি মন্ত্রীর একমাত্র মেয়ে সে। দেখতে অনেকটা, বাবার মতই, গোল গাল ফর্সা মুখশ্রী। নাম সুনেরা ইশতিয়াক অরু । অরু এক গাল হেসে বলল,,,
———“আমি আপনাকে আমার বার্থডে পার্টিতে ইনভাইট করতে এসেছি। কালকে আমার বার্থডে তো তাই…”
তাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে নীল ল্যাপটপ এ কাজ করতে করতে বলল,,,———“এই ব্যাপারে কিছুক্ষণ আগেই তোমার বাবার সাথে আমার কথা। সেক্ষেত্রে নতুন করে তোমার আসার কারণটা কি জানতে পারি?”
অরু অপ্রস্তুত হয়ে উঠল, মূলত নীলকে আর তার গাম্ভীর্যকে অরুর মারাত্মক ভালো লাগে। বলা চলে নীল তার অন অ্যান্ড অনলি ক্রাশ । তাইতো বাবা বলা শেষেও আগবাড়িয়ে সে আবার এসেছে। কিন্তু এখন কি বলবে, কিছুটা অপ্রস্তুত কণ্ঠে সে বলে উঠলো,,,,
‌‌ ———“না আসলে আমি ভাবলাম, বাবা তো অনেক বিজি থাকে । তাই যদি ভুলে যায় এজন্য আমি নিজেই এলাম।”
নীল:“ওহ বুঝলাম! তো তাহলে তোমার কথা তো শেষ তাই না? এখন তুমি আসতে পারো।”
অরু এবার ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এমন রাফ বিহেব ! তার সাথে? তবুও নিজেকে সংযত রেখে, হাতে থাকা গোলাপ গুচ্ছ নীলের দিকে এগিয়ে দিয়ে সে বলল,,,

———“এগুলো আপনার জন্য!”
নীল সেদিকে না তাঁকিয়েই বলল,,,———“আই হেট রেড রোজ!”
অরুর মুখশ্রী এবার সত্যি সত্যি ভোঁতা হয়ে গেল। এ মানুষটা রেড রোজকে হেট করে বলল নাকি চাতুরতায় তাকেই বোঝালো? গড নজ। এক প্রকার বিরক্ত হয়ে সেখান থেকে চলে গেল অরু ।

———“এই,এই তুমি চিটিং কেন করলে?আমি নিজের চোখে দেখেছি তোমার পাঁচ পড়েছে । তুমি ছক্কার দান কেন দিলে?”
নীরার রুমে লুডু খেলছিলো তিহু, নিহিত,রাফা আর নীরা। এক পর্যায়ে খেলতে খেলতে,তারা যখন একটু গল্পগুজবে লিপ্ত হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে নিহিত দুষ্টুমি করে পাঁচ পড়া চালটা ছক্কা দিতে যেতেই, তৎক্ষণা দ্রুত কণ্ঠে তাকে থামিয়ে দিল তিহু । নিহিত বোকা হেসে বলল,,,,
———“হি হি, একটু দেখছিলাম যে তোমাদের মনোযোগ আছে কিনা। তুমি তো দেখছি অনেক মেধাবী, পুরো তীক্ষ্ণ বাজপাখির মতো চোখ তোমার।”
তিহু:“পাম কমায় দাও ব্রো। আগে যে মিথ্যা চালটা দিয়েছো সেটা সংশোধন করো।”
নিহিত:“এমা,তুমি জানো না? একবার ভালো কিছু করলে সেটা বদলাতে হয় না। কি হলো রাফা বলিস না কেন?”

এদিকে রাফা ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে । নিহিত কথাটা বলতেই ফোঁস করে উঠল সে। অবস্থা বেগতিক দেখে নিহিত দ্রুত বোকা হেসে চাল বদলালো ।
তিহু :“এবার আইছে পথে!”
তার জবাবে নিহিত কিছু বলার আগেই, রুমে প্রবেশ করে আসমা বেগম। তিহুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
—-“বউমনি, তোমাকে নীল বাবা ডাকছে।”
নীলের কথায় রাফা আর নিহিত দুষ্টু হেসে তাকায় তিহুর দিকে। লাজুক তিহু কিছুটা অপ্রস্তুত কণ্ঠে বলে ওঠে,,,—-“ত-তুমি,যাও আমি একটু পরে আসছি ।”
সঙ্গে সঙ্গে আসমা বেগম তীব্র বিরোধিতা করে বলে ওঠেন,,,—-“না না, নীল বাবা তোমাকে এখনই যেতে বলেছেন।”
আসমা বেগমের কথা শেষ হতে না হতেই নিহিত আর রাফা তার কথার পুনরাবৃত্তি করে একসঙ্গে বলে ওঠে,,,,—-“না না, নীল বাবা তোমাকে এখনই যেতে বলেছেন।”
ব্যাস তিহুর ফর্সা মুখশ্রী লাজে রাঙ্গা হয়ে ওঠে। তা দেখে রাফা গুনগুনিয়ে গান গেয়ে বলে,,,,,

🎶 লাজে রাঙা হলো কনে বউ গো….
মালা বদল হবে এই রাতে…..
আজি ‌মালা বদল হবে এই রাতে… 🎶
তার গানে তিহু কিছুটা রাগ দেখানোর ভঙ্গিতে বলে,,—-“রাফু!”
রাফা মুচকি হেসে বলে,,,—-“তোমার আর ড্রামা করতে হবে না । যাও, দেখছো না, আমার ভাইটা এসে তোমার খোঁজ করছে। যাও যাও দ্রুত যাও।”
তিহু আর এক সেকেন্ড দাঁড়ায় না, দ্রুত পায়ে প্রস্থান করে সেখানে থেকে। আর যাওয়ার মানে চেয়ে রাফা আর নিহিত একে অপরের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে ওঠে ।

রুমে এসে দেখা মেলে না নীলের। তিহু ভ্রু কুঁচকে চারিদিকে নজর বোলায়, তবে কোত্থাও নেই নীলের অস্তিত্ব। ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ ও শোনা যাচ্ছে না, তাহলে কি আসমা বেগম থেকে বোকা বানালো। কিন্তু এতে ওনার লাভ কি,তিহু বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাবে তখনি তার অনুভূত হয় ছাদ খোলা বেলকানিটায় কারো অস্তিত্ব। সে বুঝতে পারে হয়তো সেখানেই আছে নীল, তাই দ্রুত পায় সেদিকে এগিয়ে যায় সে।

ব্যালকনিতে এসেই তিহু দেখতে পায়, নীল পিছন ঘুরে দাঁড়িয়ে। সে কি করছে বুঝতে তিহু একটু এগিয়ে যেতেই, সঙ্গে সঙ্গে গা গুলিয়ে আসে তার । দ্রুত দুই কদম পিছিয়ে এসে সে বলে,,,,
———“অ্যাঁ, ছিঃ। আপনি সিগারেট খান? ওয়াক থু।”
তিহুর কন্ঠে, অপ্রস্তুত হয়ে পিছনে তাকায় নীল । দ্রুত হাতে থাকা সিগার টা নিচে ফেলে,পা দিয়ে পিষে বলল,,,—–“হোয়াটস প্রব্লেম?”
বলেই সে এগোতে গেলে তিহু সঙ্গে সঙ্গে আরো কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়ে বলে,,,—-“একদম আমার এখানে আসবেন না। সরুন বলছি, ইয়া ছিঃ আপনি সিগারেট খান। আসবেন না আমার এখানে।”
নীল তার কথার তোয়াক্কা না করে তার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,,,—–“হোয়াটস রং? তুমি তখন থেকে সিগারেট সিগারেট বলছো কোনটাকে? ইটস সিগার নট সিগারেট । দিস ইজ মাছ মোর কজলি।”
তিহু নাক সিঁটকিয়ে বলে,,,—-“গু তো গু’ই, সেটা মুকেশ আম্বানির টয়লেটের হোক অথবা পাবলিক টয়লেটের। একই তো কথা।”

তিহুর এমন কথায় নীল, দ্রুত এগিয়ে আসে তার দিকে।সরে যাওয়ার কোনো উপায় না পেয়ে,তিহু সঙ্গে সঙ্গে দেয়ালের সাথে লেগে পরে । নীল নিজের ডান হাতটা,তিহুর পিছনের দেয়ালে শক্তপোক্তভাবে রেখে বলে,,,,
———“টেস্ট করবে নাকি? আসলে কেমন, করলে করতে পারো ।(সে নিজের ঠোঁটের দিকে ইশারা করে বলে) দেখো, এখনও ফ্লেভার লেগে আছে।
তিহু এবার লজ্জায় মিইয়ে পড়ে, বাম দিকে থাকা নীলের হাতটা নিজের ক্ষীণ শরীরের সর্বশক্তিতে সরিয়ে দিয়ে, চলে যেতে যেতে বলে,,,—–“নট ইন্টারেস্টেড।”
নীল অপ্রস্তুত থাকায়, সহসা ভারসাম্য হারায়। তবে পরক্ষণেই তিহুর দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হেসে বলে,,,—-“সেটা আমি জানি, ইন্টারেস্টেড কি নট ইন্টারেস্টেড?”

প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ১৪

তিহু তার কথায় কান দেয় না । দ্রুত রুমে এসে সোফায় বসতে যেতেই দেখতে পায় সেখানে, একটা মোড়কজাত কিছু। দেখে তো মনে হচ্ছে শাড়ির প্যাকেট, কিন্তু নীল শাড়ি এনেছে? কার জন্য? তার জন্য কি? এমনই হাজারটা প্রশ্ন মাথায় ঘূর্ণিপাক চালনাকালে, নীল এসে দাড়ায় তার পাশে । তিহুর অবাক দৃষ্টি দেখে বলে,,,
———“এতটা শকড হওয়ার কিছুই নাই,এট’স ফর ইউ!”
তিহু তার দিকে ঠিক তেমন দৃষ্টি রেখেই বলে,,,—-“আমার জন্য কেন?”
নীল:“কাল একটা প্রোগ্রাম আছে, আর সেখানে তুমি আমার সাথে যাবে!”

প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ১৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here