প্রেমের পাঁচফোড়ন পর্ব ১+২
Afnan Lara
,,কারো একদিন হবো,,
,,,কারো এক রাত হবো,,,
,,,এর বেশি কারো রুচি হবে না,,
,,আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না,,
আমি আজ সারাটারাত শুধু গান গাইবো,আহা গান ছাড়া আর আছে টা কি
ভাই নওশাদ তোর কি পড়ালেখা নাই?কাল যে ইংরেজী পরীক্ষা ধারনা আছে তোর কোনো?
সূর্য ভাই আই এম রেডি ফর দিস ফালতু ইংলিশ পরীক্ষা
এখন আমি গান গাইবো
মে নেশামে ইয়া মুঝমে নেশা হে,হার তারাপ ধুয়া হি ধুয়া হে
রিয়াজ ব্রো মদ কি বেশি দিসিলি আমাকে?উড়তে মন চায় শুধু,আহা আহা
আমি তোকে মদ এক গ্লাস দিসিলাম জাস্ট,তাই না সূর্য?
হ্যাঁ তাই তবে নওশাদ এক গ্লাস খেয়ে থেমে থাকেনি,সে পুরো বোতল একাই শেষ করেছে,ওর কালকের পরীক্ষা গোল্লায় গেলো বলে
আমার কথা বাদ দে! শান্ত ভাই এত শান্ত কেন,তার হদিস ও মিলতেসে না,এত কিছু করলাম আমরা সন্ধ্যা থেকে,এত নাচগান করলাম তাকে তো জাস্ট একবার চোখে পড়লো তাও কিনা বেরিয়ে ডাইনিং থেকে পানি খেয়ে আবার রুমে চলে গেলো,কিরে রিয়াজ?শান্ত ভাইয়ের কি হলো?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তাকে শান্তা টাচ করেছে
রিয়াজের কথা শুনে সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিলো,হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে
হঠাৎ ঠাস করে দরজা খোলার আওয়াজ হলো
শান্ত ফুল শার্ট পরা ছিল,হাতা উঠাতে উঠাতে সোজা হেঁটে এসে ধুমধাম মাইর শুরু করে দিলো নওশাদ,রিয়াজ আর সূর্যকে গনহারে মারতেসে সে
সবার আগে নওশাদকে মেরেছে তার পর রিয়াজকে তারপর সূর্যকে
মার খেয়ে সবাই চুপ করে বসে থেকে নিরবতা পালন করতেসে
শান্ত ফ্লোরে বসে গিয়ে রিয়াজের হাত থেকে ছোঁ মেরে মদের বোতলটা নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিলো
আমি বুঝলাম না আমাদের এলোপাথাড়ি মারার মানে টা কি শান্ত?তুই সবসময় না বলে এসে আমাদের মারা শুরু করে দেস,আগে থেকে বললে আমরা একটু রেডি হয়ে নিতাম তারপর তোর সাথে ফাইট।।।
শান্ত মদ খাওয়া বন্ধ করে রিয়াজের দিকে চোখ তুলে তাকালো
রিয়াজ হালকা কেশে বললো না থাক,তোর সাথে মারামারিতে জীবনে ফার্স্ট হইনি শুধু শুধু পাঙ্গা নিবো না
শান্ত?এরকম চুপচাপ হয়ে গেছিস কেন?কি হয়েছে তোর?আজ তোর পরীক্ষা ভালো হয়নি নাকি?
শান্ত বোতলটা জানালার দিকে ছুঁড়ে মেরে ফেলে দিয়ে হাত দিয়ে মুখ ভালো করে মুছলো
চোখটা বন্ধ করে নিজেকে ঠিক করে বড় একটা নিশ্বাস ফেললো
তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বললো সূর্য!আমাকে আজ একটা মেয়ে থাপ্পড় মেরেছে!
কথাটা শুনে সূর্য আর রিয়াজ উঠে দাঁড়িয়ে গেলো মুখে হাত দিয়ে
নওশাদ মদ খেয়ে অচেতন হয়ে পড়ে ছিল,শান্তর মুখে এই কথা শুনে সেও দাঁড়িয়ে গেলো
কি বললি?তোকে থাপ্পড়? কার এত বড় সাহস?সে কি তোকে চিনতো না?তুই পাল্টা মারিস নি?
নাহ পারলাম না
কেন পারবি?পারস খালি আমাদের মারতে
শান্ত উঠে চলে গেলো রুমের দিকে,আবারও দুম করে দরজা দিয়ে খাটে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো,তারপর কিসব ভাবতে ভাবতে আবার উঠে বসে গেলো
মাথার উপর সো সো করে ফ্যান চলছে,আর কোনো শব্দ নেই,তাও বিরক্তি লাগছে তার
৫কদম পার হলেই আয়না,আয়নাতে শান্ত নিজেকে দেখছে,এতদিন ভার্সিটির যারা যারা ওর সাথে বাড়াবাড়ি করতো তাদের মেরে ও রড বানিয়ে দিতো আর সে কিনা আজ কিছুই পারলো না,মার খেয়ে আসলো?
গালে হাত দিয়ে মুছতেসে সে জোরে জোরে
শাহরিয়ার শান্তকে মারার ফল আমি তোমাকে বুঝাবো,তুমি মরা পর্যন্ত তিলে তিলে আমি তোমাকে কষ্ট দিব,নতুন স্টুডেন্ট হয়ে এত বড় সাহস তোমার,বেয়াদব মেয়ে একটা
ফ্যানের সো সো শব্দ আর সহ্য হচ্ছে না শান্তর
উঠে গিয়ে অফ করে দিলো,মনে পড়লো আজ কি ঘটেছিল
সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত ক্লাস ভার্সিটিতে,প্রতিদিনের মত শান্ত ২ঘন্টা দেরি করে ভার্সিটিতে পোঁছালো,ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয় বলেই তার এসময়ে আসা,ইচ্ছে করেই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে না সে,কি দরকার,পড়লে পড়বে না পড়লে নাই,বাবার কথা সম্মান করেই বলে সে পড়াশুনা ধরে আছে এতদিন,সারাবছর একটুও পড়ে না শান্ত
শুধু পরীক্ষার আগের দিন খাওয়া দাওয়া ঘুম সব অফ করে পড়ে আর পরীক্ষায় ফার্স্ট ও হয়
যাই হোক ধীরে ধীরে সে ভার্সিটির সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় যাচ্ছে,তার ক্লাস রুম সেখানেই
উপরে উঠেই দেখলো তার থেকে জুনিয়র একটা ছেলে আরেকটা মেয়েকে ডিস্টার্ব করতেসে সেটা চোখে পড়তেই দাঁড়িয়ে যায় শান্ত
ছেলেটাকে সে চিনে,নাম ধরে বললো এসব কি?
সে বললো ভাই নাক গলাবেন না
মেয়েটা এ সুযোগে পালিয়ে গেলো
ছেলেটা হাত উঠিয়ে শান্তর ঘাঁড়ে রেখে বলে none of your business bro!
সো দূরে থাকেন,এটা আমার পার্সোনাল ম্যাটার
মেয়েটা পালানোর সময় ধাক্কা খেলো অাহানার সাথে
আহানা আজ প্রথমদিন ভার্সিটিতে এসেছে,যখন নিজের ক্লাসরুম খুঁজতেসিলো সে তখনই মেয়েটার সাথে ধাক্কা লেগে গেলো তার
সরি আপু,কি হয়েছে?তুমি এরকম হাঁপাচ্ছো কেন?
আপু হেল্প মি,ঐ ছেলেটা আমাকে ডিস্টার্ব করতেসে,আমাকে টাচ করার চেষ্টাও করতেসিলো
মেয়েটা কথা বলতে বলতে কেঁদে দিলো,টাচের কথা শুনে আহানার মেজাজ গেলো গরম হয়ে,কোনটা?
মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বললো ব্লু শার্ট পরাটা
আহানা তাকিয়ে দেখলো দুজনেই ব্লু শার্ট পরেছে
আহানা রেগে গিয়ে কাছে এসে দাঁড়ালো
শান্ত ঐ ছেলেটার কলার ধরে ওকে ঝাঁকিয়ে বললো তোর সাহস তো কম নয় আমার সাথে বড়বড় কথা বলিস
আহানা ভাবলো এরকম গুন্ডা টাইপ ছেলেটায় হবে যে ঐ আপুটাকে টাচ করার চেষ্টা করেছে
আহানা হুট করে একটা চড় মেরে দিলো শান্তর গালে
শান্ত ছেলেটার কলার ছেড়ে অবাক হয়ে পাশে তাকালো আহানা মুখটা ফুলিয়ে বললো লজ্জা করে না মেয়েদের tease করো?প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে বিচার দিব তোমার নামে,বেয়াদব ছেলে কোথাকার
আহানা কথাগুলো বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো
শান্ত গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে,বিশ্বাস হচ্ছে না তার! একটা মেয়ে ওকে চড় মারলো আবার চলেও গেলো
যে ছেলেটাকে এতক্ষণ কেলানি দিচ্ছিলো সে নিচে বসে শান্তর পা জড়িয়ে বললো ভাই আমাকে মাফ করে দিন আমার জন্য আপনাকে ঐ আপুটা মেরেছে
ছেলেটা খুব ভালো করে জানে শান্ত এখন মেয়েটার থাপ্পড় খেয়ে যে রাগের সাগরের স্রোত তার মাঝে বইছে তা ছেলেটার উপরই ঝাড়বে,যা হয়েছে সব ওর কারণের হয়েছে,ও যদি এত প্যাঁচাল না করতো আজ শান্ত চড়টা খেতো না
শান্ত চুপচাপ রোবটের মত হেঁটে তার ক্লাসে ফিরে গেলো,চারপাশটা কেমন যেন লাগতেসে,মনে হচ্ছে দেয়াল ও আমার উপর হাসতেসে,এটা কি ছিল?এত বড় সাহস?একে কিমা করবো নাকি ফ্রাই করবো,কোনটা করলে আমার চড়ের প্রতিশোধ উঠানো যাবে,ছেলেদের সাহস হয় না আমার গায়ে হাত তুলার আর সেখানে একটা মেয়ে এসে কিনা আমাকে মেরে চলে গেলো?এত বড় সাহস!
ছেলেটা আল্লাহর নাম নিয়ে পালালো,আগামী ১০দিনেও এই ভার্সিটিতে আসবো না বাপরে,এক বাঁচা বেঁচেছি
খুব রাগ উঠতেসে আমার!!!
শান্ত ফুলের টবটা হাতে নিয়ে আয়নায় ছুঁড়ে মারলো,ছাড়বো না আমি ওরে,তিলে তিলে কষ্ট দিব,আমার পায়ে এসে বলবে ক্ষমা করেন
বাই দ্যা ওয়ে আজ মনে হয় মদ একটু বেশি খাওয়া হয়ে গিয়েছে,এখন ঘুমাতে হবে,মাথাটা চক্কর দিচ্ছে খুব!
শান্ত চুপচাপ আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো
ফোন বাজতেসে,মুখটা বেডশিটের নিচে রেখেই হাত বাড়িয়ে বিছানার পাশের টেবিলে হাতিয়ে অনেক খুঁজে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করলো সে
ওপার থেকে একটা কন্ঠ ভেসে উঠলো,বাবার ভয়েস এটা
এই পৃথিবীতে বাবা ছাড়া শান্তর আর আপন কেউ নেই,যারা আছে তারা সৎ
সৎ মা,সৎ ভাইবোন,তারা কেউই শান্তকে মেনে নেয় না তাই শান্ত নিজ থেকেই একটা ফ্ল্যাটে একা থাকে তার সাথে তার ৩বন্ধু থাকে,রিয়াজ,সূর্য আর নওশাদ
হুম বাবা বলো,ডিনার করেছো?
হুম
আবার ড্রিংক করেছিস?তোকে মানা করি নাই আমি?কথা শুনিস না কেন?শরীরের জন্য এটা কত ক্ষতিকর জানিস না?
বাবা সরি,কি করবো মাঝে মাঝে নিজেকে সামলাতে খেতে হয়,তুমিও তো খাও,আর আমি কি এখন বাচ্চা নাকি কদিন বাদে অফিস জয়েন করবো,মাস্টার্স ফাইনালটা দিয়েই
নিজের খেয়াল রাখিস শান্ত,আমি চেয়েও তোর খেয়াল রাখতে পারি না
বাবা নিজেকে দোষারোপ করবা না একদম,আমি তো এখানে নিজের ইচ্ছাতেই এসেছি তাহলে এটা কেন বলো?যাও ঔষুধ খেয়ে ঘুমাও,লাভ ইউ বাবা
শান্ত ফোনটা রেখে দিলো,আজ মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে,আমাকে ছোটবেলায় একটা ছেলে মেরেছিল বলে মা কেঁদেছিল,আর আজ মা থাকলে আজও কাঁদত নিশ্চয়
নাহ ঘুম চলে গেছে,আর আসবে না ঘুম
যাই বারান্দা বিলাস করবো,হাহা,মানুষ করে বৃষ্টি বিলাস আর আমি করবো বারান্দা বিলাস
এক কাপ কফি হলে জোস হতো,মা যদি থাকত তাহলে কফি বানিয়ে দিতো এখন
নাহ মা যেহেতু নেই সব কাজ আমাকেই করতে হবে,এতদিন তো তাই করে আসছি
শান্ত আকাশের দিকে তাকালো
মা?তুমি খাবে?তোমার জন্য বানাই?খাবে না?ওহ ঠিক আছে তাহলে আমিই খাবো
শান্ত দরজা খুলে বের হলো,প্রথমেই ওর নজর গেলো ফ্লোরের দিকে,রিয়াজের গায়ের উপর পা উঠিয়ে নওশাদ ঘুমায়,তার উপর পা তুলে সূর্য ঘুমায়,বলদগুলো পরীক্ষার আগের দিন মদ খেয়ে পড়ে থাকে সবসময়
শান্ত একটা কাঁথা আলমারি থেকে নিয়ে এসে ওদের গায়ে জড়িয়ে দিলো,এরা তার কাছে বন্ধু কম ভাই বেশি,বিপদে আপদে সবসময় ওরা শান্তর পাশে থাকে
কফি বানিয়ে আবারও রুমে ফিরে আসলো সে,আকাশের দিকে চেয়ে মায়ের সাথে কিছু কথা বললো শান্ত আর বললো সেই মেয়েটার কথা যে ওকে মেরেছে,তারপর কিসব ভেবে রুমে ফিরে আসলো,ঘুম পাচ্ছে খুব
৪টা বছর ধরে এই ফ্ল্যাটে সে থাকে,বাবার থেকে বহুদূরে
ঈদে গিয়ে দেখে আসে,থাকা আর হয়ে উঠে না,থাকলেই জ্বালা যন্ত্রনা শুরু হয়ে যায় তার সৎ ভাইবোনদের,এখানে একা বেশ আছে সে,বাবা খরচ চালায়,কিছুদিন পর সে বাবার খরচ চালাবে অবশ্য বাবা হয়ত টাকা নিতে চাইবে না,অভাব নেই তার তাও আমি আমার প্রথম সেলারি দিয়ে তাকে গিফট দিব কিছু একটা
কফির মগটা হাতে ঝুলিয়েই শান্ত ঘুমিয়ে পড়লো বিছানায়,হাতে থাকা কফির মগটা ঝুলতেসে,আজ আর ফ্যান চালানো হয়নি,এসি চালালো,নামেই এসি রাখসে,শান্তর এসি একদম পছন্দ না,কিন্তু কি করবে ফ্যানের গটগট শব্দের চেয়ে এটা বেটার
সকাল হয়ে গেছে
বারান্দার থাই গ্লাসের দরজাটা কাল রাতে অফ করতে ভুলে গেছিলো শান্ত,সেটা দিয়ে এক পাহাড় রোদ এসে পুরো রুমটা কমলা কালার করে দিয়েছে
কমলা হওয়ারই কথা,সূর্যের কালার তো কমলা আর তার উপর শান্তর রুমের বেড শিট থেকে শুরু করে পর্দা,কার্পেট সব কিছু কমলা রঙের
দুম করে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো শান্তর,কেন কাল রাতে অফ করলাম না এটা,কেন পর্দা টানলাম না,এত সুন্দর ঘুমটা নষ্ট করে দিলো আমার,অসহ্য!
পাশের টেবিল থেকে ফুলের টব আরেকটা নিয়ে থাই গ্লাসে ছুঁড়ে মারলো সে
টব তো ভেঙ্গেছে তবে থাই গ্লাস ভাঙ্গে নাই,সেটার দিকে ব্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে গেলো শান্ত
হয়ত গ্লাসটা ভাঙ্গলে সে খুশি হতো,রাগ যেতো কিছুটা!
বাথরুমে গিয়ে ব্রাশ হাতে নিয়ে আয়নায় তাকাতেই গালের দিকে চোখ গেলো তার,মনে পড়ে গেলো চড়ের কথা,তারপর কিসব ভেবে শয়তানি হাসি দিয়ে fresh হয়ে বের হলো সে
জ্যাকেটটা পরে ব্যাগ হাতে নিয়ে বেরিয়ে ডাইনিং এ এসে দেখলো সকালের নাস্তা বুয়া বানিয়ে টেবিলে রেখে চলে গেসে,বাট আমি খাবো না,আজ আমার একটাই উদ্দেশ্য সেটা হলো ঐ মেয়েটাকে চড়ের শাস্তি দেওয়া
রিয়াজ,সূর্য আর নওশাদ এক্সাম দিতে গেসে,ওরা অন্য ডিপার্টমেন্টের বলে আজ তাদের পরীক্ষা,কাল ছিল শান্তর
ফ্ল্যাট লক করে বের হলো শান্ত,বাইকে উঠে হেলমেট পরে হাই স্পিড দিয়ে ১০মিনিটেই ভার্সিটিতে এসে গেলো সে
ভার্সিটিতে আসতেই দেখা হয়ে গেলো তমালের সাথে,তমাল হলো শান্তর ক্লাসমেট,সে শান্তকে দেখেই হেসে দিলো
শান্ত ভাই কি খবর?আজ এত তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে তুমি?আজ কি সূর্য উঠেছে নাকি উঠে নাই,বিশ্বাস হচ্ছে না
চুপ!ঐ সূর্যের কারনেই আমার আজ এত সকাল সকাল ঘুমটা ভেঙ্গে গেছে,যাই হোক তমাল তোমার থেকে আমার একটা হেল্প লাগবে
তুমি ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসে গিয়ে বলবে আহানা কে?then সে দাঁড়ালে বলবে আমি ডাকতেসি
ওকে ভাই
শান্ত হাতের কব্জি কচলাচ্ছে,একদম আজকে ৫টা চড় মেরে দিব ঐ মেয়েটার গালে,যাই হোক thanks টু রিসাদ,সে আমাকে মেয়েটার নাম আর ক্লাস খুঁজে দিতে হেল্প করেছিল
তমাল গিয়ে ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসে ঢুকলো,যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত,কেউ কেউ গসিপ করছে,কেউ কেউ পড়তেসে,নিশ্চয় এর পরের ক্লাস রোকসানা ম্যামের,কারন উনার ক্লাসের আগেই স্টুডেন্টদের পড়তে দেখা যায়
তাই হয়ত তমালের দিকে কেউ তাকাচ্ছে নাহ
এই বাচ্চা মেয়েগুলো মনে হয় আমাকে চেনে না
চিনলে এতক্ষনে গায়ে পড়ে কথা বলা শুরু করে দিতো,যাই হোক যে কাজে এসেছি সেটা করবো এখন!
হ্যালো everyone,আহানা কে এখানে?থাকলে সাড়া দাও
আহানা তখন রুপার সাথে কথা বলতেসিলো,তমালের মুখ থেকে আহানা নাম শুনে উঠে দাঁড়ালো সে
তমাল তার সামনে এসে বললো তোমাকে শান্ত ভাই ডাকতেসে,ঐ যে
আহানা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলো শান্ত বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,একটা ভাব নিয়ে একবার ডানে তাকাচ্ছে আবার বামে তাকাচ্ছে মাঝে মাঝে ক্লাসরুমের দিকেও তাকাচ্ছে,আহানা শান্তকে দেখেই চিনতে পারলো,এটা তো সেই ছেলেটা
আমি যাব না,এরকম ছেঁসড়া ছেলেদের সাথে আমার কোনো কথা থাকতে পারে না,বাই
আহানা আরেকদিকে ফিরে বসে গেলো
রুপা চোখ বড় করে বললো আহানা এই ভুল করিস না,শান্ত ভাই অনেক ডেঞ্জারাস,কথা না শুনলে মারামারি শুরু করে দেয়,তোর জীবন হেল করে দিবে,গিয়ে কথা বলে আয়
আমি ওর জীবন হেল বানাই দিব,কাল একটা থাপ্পড় মেরে দিসিলাম
আহানার কথাটা শুনে ক্লাসের সবাই পড়া বাদ দিয়ে,গসিপ বাদ দিয়ে,তাদের কাজ বাদ দিয়ে মুখে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকালো
কি বললে তুমি?শান্ত ভাইকে থাপ্পড় মেরেছো?
তমাল রেগে গিয়ে আহানার হাত শক্ত করে ধরলো,চলো আমার সাথে শান্ত ভাই আজ তোমাকে ছাড় দিলেও আমি তোমাকে ছাড় দিব না,এত বড় সাহস তোমার আমাদের কলিজায় হাত দিসো
হাত ছাড়ুন আমার,আমি স্যারকে ডাক দিব এখন!
তমাল টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে আহানাকে
আহানা চিৎকার দিয়ে স্যারদের ডাকতে শুরু করে দিলো সবাইকেও বললো ওকে আটকাতে,কেউ এসে আহানাকে ছাড়াচ্ছে না তমালের থেকে কারন তমাল হলো শান্তর লেফট হ্যান্ড,ওকে ওর কাজে বাধা দেওয়া মানে শান্তকে বাধা দেওয়া তাই কেউ এগিয়ে আসলো না
স্যারদের রুম সেকেন্ড ফ্লোরে বলে তারা আহানার চিৎকার শুনে নাই
সবাই শান্তকে চেনে,চড়ের কথা শুনে সবাই মিলে পারতেসে না আহানাকেই মেরে ফেলে,সবাই রেগে আছে আহানার উপর
তমাল আহানাকে শান্তর সামনে এনে ছুঁড়ে মারলো
আহানা শান্তর পায়ের কাছে গিয়ে পড়লো
সানগ্লাসটা ঠিক করে শান্ত কিছুটা হেসে বললো পা ধরলেও ক্ষমা করবো না আমি
কথাটা বলে দূরে একটা বট গাছের দিকে তাকালো সে,আহানাকে দেখার প্রতি আর কোনো interest তার নেই
আহানা উঠে দাঁড়ালো,তারপর রেগেমেগে আরেকটা চড় মেরে দিলো শান্তর গালে
এটার জন্য তমাল আর শান্ত দুজনের একজনও প্রস্তুত ছিল না
আহানা রেগে রেগে বললো এসব করেন ভার্সিটিতে এসে??আপনার সাহস হয় কি করে লোক ধরিয়ে আমাকে আমার ক্লাস থেকে টেনে আনার?আমি এখন গিয়ে স্যারের কাছে আপনার নামে কমপ্লেইন করবো
শান্ত আর রাগ সামালতে পারছে না,আহানার হাত মুঠো করে টেনে ধরলো সে
কি বললে?বিচার দিবে!ফাইন চলো আমার সাথে
দেখুন আপনি এখন বাড়াবাড়ি করতেসেন,আমার হাত ছাড়ুন বলতেসি,খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু!
শান্ত আহানাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আর বলতেছে খুব খারাপ কি হবে?আরেকটা চড় মারবে?এইটুকু বয়সে এত বড় সাহস দেখাও তুমি,আমার ক্ষমতা সম্পর্কে ধারনা আছে তোমার?
শান্ত প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের সামনে এনে আহানাকে ছুঁড়ে মারলো
স্যার ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে বললেন কি হয়েছে শান্ত?
স্যার এই মেয়েটা আমাকে কাল বিনা কারনে চড় মেরেছে আর আজ যখন আমি ওকে জিজ্ঞেস করানোর জন্য আমার কাছে নিয়ে আসলাম তখন আবারও আমাকে চড় মারলো
স্যার বিনা কারনে নয়,এই ছেলেটা কাল একটা মেয়েকে Tease করতেসিলো,টাচ ও করসে
প্রিন্সিপাল একটু হেসে বললো ওটা তাহলে শান্ত ছিল না,অন্য কেউ ছিল,শান্ত এমন কাজ জীবনেও করতে পারে না
শান্ত তমালকে ফোন করে বললো সকল ভেজালের মূল রিফাতকে ধরে আনতে
ভাই সে তো আজ ভার্সিটিতে আসে নাই,পালিয়েছে মনে হয়,আগামী ১০/১২দিনেও তার দেখা পাবো না
যেখান থেকে পারো আমার সামনে এনে দাঁড় করাও বেয়াদবরে
স্যার আমি সত্যি বলতেসি এই ছেলেটা খুব খারাপ!আজ আমাকে জোর করে আমার ক্লাস থেকে নিয়ে আনছে উনার একটা ফ্রেন্ডকে দিয়ে
শান্ত দেয়ালে হেলান দিয়ে আহানার কথা শুনে যাচ্ছে
তার আর আহানার দূরত্ব কেবল প্রিন্সিপালের স্যারের টেবিলটার এপার ওপার
আহানা যা পারতেসে তাই বলে যাচ্ছে স্যারকে
শান্ত হঠাৎ এক টান দিয়ে সানগ্লাসটা খুলে নিলো চোখ থেকে,এত জোরে খুললো চশমাটা
আহানা এক প্রকার ভয় পেয়ে গেলো,একটু পিছনে সরে গিয়ে আবারও বলা শুরু করলো
প্রিন্সিপাল স্যার শান্তকে খুব ভালো করে চেনেন,এমনকি উনারই বন্ধুর ছেলে হচ্ছে শান্ত,শান্ত এরকম কাজ করতে পারে না,আহানা যা বলছে এটা যে মিথ্যা কথা সেটা তিনি জানেন বাট আহানার কথার ধরনে মনে হচ্ছে সে সত্যি বলতেসে
আহানা বললো স্যার এক মিনিট আমি কালকের সেই মেয়েটাকে আনতেসি সে সত্যিটা বলবে আপনাকে
আহানা এক দৌড়ে ক্লাসে চলে গেলো,সেই মেয়েটা ওর ক্লাসেরই,তাকে টেনে নিয়ে আসলো আহানা
এসে দেখলো তমাল কালকের ছেলেটাকে নিয়ে এসেছে যাকে আহানা শান্তর সাথে ঝগড়া করতে দেখেছিল
বলো আপু এই ছেলেটা তোমাকে কাল টিজ করতেসিলো না?
মেয়েটা চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছে,কারন শান্ত ভাই তো ওকে টিজ করেনি বরং বাঁচিয়েছিল তাহলে আহানা উনার দিকে আঙ্গুল তুলেছে কেন,মেয়েটা ভেবে পাচ্ছে না সে কি বলবে
চুপ করে থেকে বললো না আপু শান্ত ভাইয়া না,তমাল ভাইয়ার পাশের এই ছেলেটা কাল আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিল আর শান্ত ভাইয়া তো এসে আমাকে বাঁচিয়েছিল
আহানার মনে পড়লো মেয়েটা বলেছিল ব্লু শার্ট পরা আর কাল ওরা দুজনেই ব্লু শার্ট পরে ছিল আহানা ঢোক গিলে শান্তর দিকে তাকালো
শান্ত অগ্নি দৃষ্টিতে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে
স্যার মুখটা গম্ভীর করে বললেন তোমার নাম কি?
আহানা ঢোক গিলে বললো -আহানা ইয়াসমিন
তো আহানা না জেনে তুমি তোমার সিনিয়র কারোর গায়ে হাত তুলতে পারো না,এখন তুমি এই মুহুর্তে শান্তর কাছে ক্ষমা চাইবে
আহানা চুপ করে থেকে বললো সরি
হুম যাও তোমরা যে যার ক্লাসে ফিরে যাও আর রিফাত তুমি দাঁড়াও,মেয়েদের হেরাস করার শাস্তি তোমাকে পেতে হবে,আমি তোমার বাবাকে কল করতেসি এখানে দাঁড়িয়ে থাকো
শান্ত জ্যাকেটটা পিছন থেকে একটু টেনে সামনে এনে ঠিক করে সানগ্লাসটা পরে আহানার দিকে তাকাতে তাকাতে চলে গেলো
আহানা মনে মনে নিজেকে বকতেছে,এত বড় ভুল,তার উপর এত বড় অপমান,ইস না জেনে শুনে মারলাম,পরেরবার তো মারতাম না আমাকে জোর করে ক্লাস থেকে নিয়ে আনায় মেরেছি,এতটাও ভালো না লোকটা,কিরকম ভাব দেখিয়ে গেলো,অসভ্য একটা!কাল তো মারামারি ও করতেসিলো
আহানা প্রিন্সিপাল স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ক্লাসে গেলো
রুমে ঢুকতেই দেখলো সবাই ওর দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে,একজন আরেকজন কে বলছে জানিস এ মেয়েটা শান্ত ভাইয়াকে চড় মেরেছে বিনা কারনে
আহানা চুপচাপ গিয়ে ওর বেঞ্চে বসলো,রুপা ছাড়া বাকিরা ওর বেঞ্চ থেকে উঠে দূরে গিয়ে বসলো
আহানা তাদের দিকে একবার তাকিয়ে ব্যাগ থেকে বই বের করে তা পড়ায় মনযোগ দিলো
তুই এটা কেন করলি?তোর এত কিসের রাগ,ছেলেদের চড় মারলে তারা যে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে জানিস না আর সেটা নাহয় বাদই দিলাম চড় তো মারলি তাও কাকে?ভার্সিটির ফেমাস বয় কে,তোকে যে কি পরিমান জ্বালাবে তা তুই নিজেও জানস না,এই ভুল কেন করলি?
বই থেকে চোখটা উঠিয়ে আহানা রুপার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বললো আমি কি জানতাম নাকি এত কিছু,আর ছেলেটা কাল মারামারি করছে বলেই আমি ভেবেছি ঐ মেয়েটাকে সে টিজ করতেসিলো
কারোর ফিসফিস শুনে আহানা পাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই এখনও ওর দিকে তাকিয়ে কিসব বলতেসে
১২টা বাজে সবাই ক্লাস শেষ করে এখন ব্রেক টাইমে ক্যামপাসে ঘুরতেসে,কেউ খাচ্ছে,কেউ আড্ডা দিচ্ছে,কেউ বা প্রেম করছে
আহানা আর রুপা ঘাসের উপর এসে বসেছে
আহানা পুরো ক্যামপাসটায় চোখ বুলিয়ে নিলো,বেশ সুন্দর ভার্সিটিটা,সবুজ ঘাস চারিদিকে,গাছগাছালিতে ভরা,শান্তিতে শ্বাস নেওয়া যায়,তার উপর সবাই কি সুন্দর একজন আরেকজনের সাথে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক রেখেছে,বেশ লাগতেসে আমার কাছে
হুম সুন্দর তো বটেই আর তুই চড় মেরে তোর পরিবেশ নিজেই নষ্ট করেছিস,শান্ত ভাইকে চড় না মেরে চুমু দিলে এখন সবাই তোকে কোলে নিয়ে হাঁটতো আর চড় মারায় দেখেছিস?কেউ তোর পাশেও আসতেসে না
ভেরি ফানি ঐ অসভ্য লোকটাকে আমি চুমু কেন দিব?তোর মাথা কি গেছে নাকি,আজব মাইয়া আজব কথাবার্তা!
আহানারে আমার দম বন্ধ হয়ে আসতেসে আমাকে একটু পানি দে,মনে হয় তোর কারনে আমি মরমু
কেন?কি হয়েছে?
পিছনে তাকা আহানা
