প্রেমের সমর পর্ব ৩১

প্রেমের সমর পর্ব ৩১
অলকানন্দা ঐন্দ্রি

ছুটির সাথে যোগাযোগ হয়ে উঠেনি সপ্তাহখানেকের উপরে। সবকিছু থেকে আবিরকে ব্লক করেছে তো করেছে, পরপরই সব একাউন্ট ডিলিট করে হারিয়ে গিয়েছে।আবির অনেক খোঁজ করেও যখন ছুটির খোঁজ মেলাতে পারল না তখন পুরাতন কৌশল অনুযায়ী নিজের কাজিনদেরই কাজে লাগাল। কিন্তু কাজ হলো না। ছুটিরা নাকি বাসাতেও নেই! আবির বিস্মিত হয়। ছুটি এতোটা জেদি হতে পারে?বিশেষ করে তার ক্ষেত্রে? যে আবির বলতে সে এতোটা পাগল ছিল সে আবিরকেই সে এতোটা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে?এটা যেন আবিরের কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকে মাঝেমাঝে। কফির মগে চুমুক বসিয়ে নিধি আর সাদাফের দিকে তাকায় সে। দুইজনকে এক মগে চুমুক বসাতে দেখে মুখ কুঁচকে বলে,
“ একটা মেয়ে! কেবল একটা মেয়ে আমায় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। আর তোরা বসে বসে আমার দুঃখ দেখছিস৷ স্বার্থপর বন্ধুবান্ধব।”

সাদাফ মুখ কুঁচকাল আবিরের কথা শুনে। কফির মগে চুমুক বসিয়ে সেও আরাম করে বলে,
“ তোমার মনে এক বাইরে এক৷ বুঝবে কি করে সে মেয়ে? মনে মনে যে ভালোবেসে এসেছো তা এতকাল বলোনি কেন তা? এখন ভুল বুঝে বসে আছে। ”
আবির দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
“তোর জন্যই শা’লা। অনুভূতি ব্যবহারের প্রসঙ্গ নয়তো আসতই না। ও বোধহয় তোর সেই প্রস্তাবটাই কারোর থেকে শুনে নিয়েছে।নয়তো ও কেন বলল ওর অনুভূতি আমি ব্যবহার করেছি? ”
সাদাফও সঙ্গে সঙ্গে উত্তর করে,
“ আসলেই তো ব্যবহার করেছিস। আমরা বলার পর তুই নাটক করলি কেন হারামি? ”
আবির তখন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ঠোঁট চেপে উত্তর করে,
“ ওটা নাটক না, সত্যিই আমি ভালোবাসতাম ওকে। কিন্তু প্রকাশটা করেছি তোদের কথাতে। ভাবলাম যে কোন এক ভাবে প্রকাশ পেলেই তো হচ্ছে। আজ হোক বা কাল এমনিতেও তো প্রকাশ করব। ”
সাদাফ সঙ্গে সঙ্গে দাঁত কেলিয়ে হাসে। বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ এই যে আমাদের থেকে লুকিয়ে গেলি? এর শাস্তি। একেবারে ফাইন হয়েছে। তোর বউ ভেগে যাক কারোর সাথে, তাও দুঃখ করব না। শা’লা কত বড় মীরজাফর যে এক মেয়েকে এতদিন ধরে ভালোবাসছিস আর আমাদেরকেই বলিসি নি। তুই বন্ধু ভাবিস তো আমাদের? ”
“ তোরা যা হা’রামি এই কারণেই বলিনি। ”
আবির কথাটা বলেই বিরক্ত হয়ে চলে যায়। অপর দিকে সাদাফ হা হুতাশ করতে করতে নিধির দিকে তাকায়। বলে,
“ আমি হা’রামি ? এই নিধি? তুই বল আমি হা’রা’মি? ও আমায় এটা বলতে পারল? ”
নিধিও দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর করে,
“ না,তুই তো মহান! তোর মতো ভালো ছেলে দুনিয়ায় আছে? ”
সাদাফ যেন খুশি হয়। হেসে শুধায়,
“ তবে তোর বাপ হলো চরম লেভেলের হা’রামি! স্বচ্ছ বিয়ে করে ফেলেছে, আবিরও একই লাইনে৷ আমি সে কতবছর আগে থেকে প্রেম করেও বিয়ে করতে পারছি না তোর বাপের জন্য। বয়স তো হচ্ছে নাকি!”
নিধি এই পর্যায়ে সিরিয়াস ভাবে চাইল। বলে,
“ আব্বু তো কোনকালেই মানবে না। তাই বলে কি কখনোই বিয়ে করবি না আমায়? ”
সাদাফ মজা করেই বলে এবারে,
“ করব না, তোরা বড়লোক মানুষ। পরে বলবে উনাদের সহজ সরল মেয়েটাকে আমি ফাঁসিয়ে বিয়ে করে নিয়েছি। এসব বলে যদি কেইস মামলা দিয়ে দেয়? নিশ্চায়তা আছে নাকি? ”
নিধি এবারে রেগে তাকায়। যেন সাদাফের গলা চেপে ধরবে। ধারালো চাহনিতে বলে,
“ বিয়ের বয়স পেরিয়ে এসেছি শুধু তুই বিয়ে করবি বলে। এখন যদি বিয়ে না করিস তাহলে কিন্তু.. ”
“ কি করবি? মে’রে দিবি? ”
তৎক্ষনাৎ নিধি গলা চেপে ধরে সাদাফের। রেগে বলে,
“ হু! মে’রে ফেলব। ”

অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে ঘরর।একটা লোক ওখানে পড়ে আছে। দেখে বুঝা যাচ্ছে ক্লান্ত,ব্যাথিত হয়ে আছে। পা দুটোতে বেশ মারার কারণে উঠে দাঁড়াতে পারছে না যেন৷ স্বচ্ছ দুই পা এগিয়ে যায়। ভেঙ্গে থাকা পা দুটোতে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
“ এতকাল ভাবলে আমি আর দেশে ফিরব না।ছন্নছাড়া হয়ে কাঁটিয়ে দিব। সংসারী হবো না। বিজন্যাসে নাক গলাব না। বিজন্যাস সবটাই তোমার থাকবে তাহলে। কিন্তু যখনই দেখলে আমি তো সংসারী হয়ে যাচ্ছি, বউবাচ্চা নিয়ে সংসার করে এখানে থাকারই প্ল্যান করে ফেলছি তখনই সোজা মেরে ফেলতে চাইলে আমায় চাচ্চু? সেদিন যদি আমি মরে যেতাম? বা আমার বউটা মরে যেত? তোমার এতোটা সাহস কি করে হলো চাচ্চু? আমার বউকে সহ তুমি মেরে ফেলতে চেয়েছো চাচ্চু? ও কি করেছে তোমার? ”
সারোয়ার সাহেব দৃঢ় নজরে তাকান। রাগে উনার গা জ্বলছে যেন। ইচ্ছে হচ্ছে স্বচ্ছকে এই মুহুর্তেই মেরে ফেলতে। কিন্তু পারলেন না তা। বললেন,
“ কিচ্ছু করিনি আমি। ”
স্বচ্ছ হাসে। বলে,
“ করেছো! আমার কাছে প্রুভ আছে চাচ্চু। শুধু থানা পুলিশে জড়াচ্ছিনা তোমায় পরিবারের কথা ভেবে, তিহানের কথা ভেবে।”
সারোয়ার সাহেব আবারও জেদ নিয়ে বলেন,

“ আমি সত্যিই করিনি কিছু। ”
স্বচ্ছ ফের হাসে। উত্তর করে,
“ তুমি সে ট্রাক ড্রাইভারকে কল করেছে, টাকা দিয়েছো সব প্রুভ আছে চাচ্চু। সব! কেন নাটক করছো বলো?”
সারোয়ার সাহেব এবারে চোখ গরম করে তাকায়। ধমকে বলে,
“স্বচ্ছ। ”
স্বচ্ছ হাসে। চাচ্চুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“ চোখ গরম করলে সত্যিটা মিথ্যে হবে? তোমায় কত ভালোবাসতাম বলো তো? সেই তুমিই আমায় একটুও ভালোবাসতে না? মানতে কষ্ট হচ্ছে। চাইলে বলতেই পারতে যে বিজন্যাসে নাক গলাবি না। গলাতাম না। বউ নিয়ে জলে যেতাম দেশের বাইরে। তুমি তো এমনটা নাও করলেও পারতে চাচ্চু। ”

স্বচ্ছ তখন বাইরে থেকে এসেছে। ঘামে চিপচিপে হয়ে লেপ্টে আছে শার্টটা। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোঁটা। চোখমুখ দেখে বুঝা যায় সে খুব ক্লান্ত। স্বচ্ছ বাসায় এসেই গা এলিয়ে দিল বিছানায়৷পরপরই অনুভব হয় পাশে এসে বসেছে সুহা। স্বচ্ছ সঙ্গে সঙ্গেই চোখ মেলে তাকায়। সুহাকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুধায়,
“ কি?চুমু খাবে? ”
সুহা মুহুর্তে রেগে তাকায়। একটু তাকাতেও শান্তি নেই এই লোকের জন্য। জেদি স্বরে শুধায়,
“ সবসময় কি এসবই ভাবেন অস্বচ্ছ সাহেব?
স্বচ্ছ ঠোঁট এলিয়ে হেসে বলে,
“ তুমি যেভাবে তাকিয়ে আছো এসবই মাথায় আসে। ”
সুহা অন্যদিক ফিরে উঠে দাঁড়ায়। রেগে বলে,
“মাথাটাও স্বচ্ছ না। ”
কথাটা বলেই পা বাড়ায় সে। একটা শাড়ি আর তোয়ালে নিয়ে যায় ওয়াশরুমে গোসলের উদ্দেশ্যে। স্বচ্ছ সেদিক পানে একবার তাকিয়েই হাসে। পরমুহুর্তেই কিছুক্ষন গড়াগড়ি করে পা বাড়ায় ছাদের দিকে।

সুহার পরনে আজ শাড়ি। গোলাপি রংয়ের শাড়িকে হালকা সাদা রংয়ের কাজ। সুহাকে অবশ্য শাড়িটায় সুন্দর মানাচ্ছে। একদম মিষ্টি এক বউ লাগছে। সুহা যখন শাড়িটা পরে সর্বপ্রথম রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়াল তখনই এগিয়ে এল সিয়া। উচ্ছাস নিয়ে বলে উঠল,
“ তোমায় কি সুন্দর দেখাচ্ছে ভাবি! ভাইয়া দেখেছে? ও, ভাইয়া তো ছাদে। ডেকে আনি ভাবি? ”
সুহা হাসে মৃদু। বলে,
“ এতোটা খুশি কেন আজ? কি ব্যাপার শুনি সিয়া বুড়ি? ”
সিয়া এই পর্যায়ে লাজুক হাসে। উত্তরে কিছুই বলে না। তবে পরমুহুর্তেই বলে উঠে,
“ তোমাকে সুন্দর দেখাচ্ছে৷ সত্যিই সুন্দর দেখাচ্ছে ভাবি। খুব জলদি জলদি ফুফু হওয়ার আনন্দটাও দিয়ে দাও দেখি। ”
সুহা সিয়ার গালে হাত রেখে শুধায়,
“ তাই নাকি? পিচ্চি থেকে দেখছি বড় হয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে সিয়া বুড়ি? ”
সিয়া হাসে। বলে,
“ তোমার বন্ধুকে দেখলাম নিচে দাঁড়িয়ে আছে। কি যেন নাম? সাদ। প্রতিদিনই দেখি দাঁড়িয়ে থাকে। কেন থাকে বলো তো? ”
“ তা তো ঠিক জানি না। ”

“ আমি যখন প্রশ্ন করি তখনই তোতলামো স্বরে উত্তর করে। তুমি কি জানো ছেলেদের তোতলানোর মানে কি? ”
সুহা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ কি? ”
সিয়া তখন অভিজ্ঞদের ন্যায় শুধাল,
“ কোন ছেলে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে তোতলাচ্ছে মানে সে কোন বিষয়ে অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পরছে বুঝলে? হতে পারে না সে তোমার প্রতি দুর্বল বলেই তোমার সামনে কথা বলতে তোতলায়? ”
সুহা ভাবে, সাদ তো রাহাকে পছন্দ করে। সিয়া বোধহয় ভুল ভাবছে।হয়তো সিয়া সাদকে পছন্দ করে। সুহা কি বলে দিবে সাদ যে রাহাকে পছন্দ করে?সুহা ভাবতে ভাবতেই আনমনে শুধায়,
“ হতেই পারে। তবে সাদ তো…”
সিয়া বলে,
“ কি?

সুহা পরমুহুর্তেই ভাবে সিয়া যদি মন খারাপ করে?তাই আর বলে না। উল্টো বলে,
“ কিছু নয়, আমি বরং তোমার ভাইয়ার কাছে যাই হুহ?”
সঙ্গে সঙ্গেই পেছন থেকে শোনা গেল গম্ভীর পুরুষালি স্বর,
“ যেতে হবে না, চলে এসেছি। ”
সুহা আনমনে বলে,
“হ্ হু? ”
স্বচ্ছ তাকিয়ে দেখে তার শাড়ি পরিহিতা বউটিকে। নজর যেন সরে না। ভেজা চুলোগুলো খোলা। টপটপ পানি গড়াচ্ছেে।স্নিগ্ধ মুখশ্রী। সাথে গোলাপি সুতির শাড়িটা। যেন একদম বউ বউ! স্বচ্ছ ইচ্ছে হয় এগিয়ে গিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরতে এই মেয়েটাকে। কিন্তু ধরে না। বরং বলে,
“ শাড়ি পড়লে ভুলেও ছাদে যাবে না। আমি ছাদে থাকলেও যাবে না। মনে থাকবে? ”
সুহা হাসে। বলে,
“ ইনসিকিউরড ফিল করছেন? ”
স্বচ্ছ এবারে ভ্রু উঁচায়। ইনসিকিউরড শব্দটা তো রোহানও ব্যবহার করেছিল। স্বচ্ছ তা মনে করেই টানটান স্বরে জানায়,
“ তোমার সে তথাকথিত প্রেমিকও একই কথাই বলল। ইনসিকিউরড ফিল করছি নাকি আমি। দুইজনের শব্দভান্ডারও মিল আছে দেখছি। ”

কথাটা বলেই স্বচ্ছ রুমে এল। সুহার মন খারাপ হয় ফের।স্বচ্ছ এখনও ভুল বুঝছে? এখনো? সুহা কতোটা ফুরফুরে মেজাজে আজ শাড়ি পরেছিল। কতোটা আনন্দিত ছিল৷ সব আনন্দকে মাটি করতে স্বচ্ছর এক মিনিটও সময় লাগে না যেন। সুহা পিছু পিছু রুমে আসে। দৃঢ় জবাবে বলে,
“ ভুল বুঝছেন স্বচ্ছ।সে আমার প্রেমিক নয়।”
স্বচ্ছ এবারে তাকায় কেমন করে। সুহা বুঝে উঠে না, একটা ছেলে একটু আগেই কত ভালোভাবে কথা বলছিল আর এখন? কি হলো? সুহা বুঝার চেষ্টা চালাতেই স্বচ্ছ বলে,
“ হাসছিলে কেন তাহলে সেদিন ওর সাথে? রাহার জম্মদিনে এত ছেলে থাকতে ও কেন ইনভাইটেশন পেল? কি হলো? বলো! ”

সুহা ছোটশ্বাস টানে৷ স্বচ্ছর সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বলে,
“ স্বচ্ছ? আপনি সত্যিই একটা বাচ্চা ছেলে। একটা মেয়ে চারটা বছর আপনার জন্য অপেক্ষায় ছিল। চারটা বছর সে আপনি বিনা অন্য কাউকে বিয়ে করতে চায়নি। আপনার কেন মনে হয় যে আমি রোহানকে ভালোবাসব? দেখেছেন কখনো উনার জন্য ভালোবাসা আমার চোখে? ”
স্বচ্ছ এবারে আচমকায় কোমড় জড়িয়ে ধরে সুহার। কাছে টানে। কিছুটা ঝুঁকে বলে,
“তবুও আমার পছন্দ নয়।যে ছেলে তোমায় চায় সে ছেলের আশেপাশে থাকবেই বা কেন তুমি? ”
সুহা এবারে উত্তরে বলে,

“ রোহান আমায় পছন্দ করে প্রথমদিকে এটা সঠিক ছিল স্বচ্ছ। তবে আপনি আসার পর এই যে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার কথাবার্তা যা আপনার বাবার থেকে শুনেছেন বা বিভিন্ন ভাবে শুনেছেন সেসব মিথ্যে বা নাটক ছিল। যেমনটা প্রথবার আপনাদের বাসায় এংগেইজমেন্ট একটা নাটক হয়েছিল আপনার আব্বু আম্মুর কথাতে তেমনই।একপ্রকার রোহান সাহায্য করেছিল ওসব যাতে আপনি আরেকটু অনুভূতিপ্রবন হোন। এবং যেদিন উনাকে মারলেন সেদিনও মেবি বড়বড় স্বরে এটাই উনি জানাচ্ছিলেন যে উনি আমাকে ভালোবাসেন। আর আপনি নাকি নাক ফুলিয়ে উঠে রেগে মারধর করছিলেন বারবার।যতই আপনাকে বলা হচ্ছিল ততই তান্ডব করছিলেন,মুখ খারাপ করছিলেন। আপনাকে এসব বলে জ্বালাতে নাকি উনার অনেক ভালোই লাগছিল। এসবই বলছিল।পরে বলল কেমন জ্বলে উঠেন আপনি তার সরাসরি দেখব কিনা? আমি কিছুই উত্তর করলাম না। তার আগেই উনি আপনাকে কল দিলেন। কত কথা বললেন। আর আপনি তো রেগে রেগে কথা শুনাচ্ছিলেন সাথে কিছু গা’লি ছুড়িছিলেন। আমি আপনার সেসব কান্ডকারখানা শুনে হাসছিলাম। সত্যি বলতে হাসি চলে আসছিল! একটা ছেলে কতোটা বাচ্চা হলে এমন বাচ্চামো দেখাতে পারে? কেউ বলছে আর আপনিও বিশ্বাস করে নিচ্ছেন। কতোটা বোকা ভাবুন!প্রথমে সাদকে মারধর করলেন, পরে রোহানকে। এখন বলুন, হাসা কি অন্যায় হয়েছে সেদিন আমার? আপনাকে নিয়েই তো হাসলাম।”

স্বচ্ছ গলে না তবুও। মুখ তখনও কঠিন। সুহাকে সেভাবে জড়িয়ে রেখেই বলে,
“ডিভোর্স লেটার যে পাঠালে? চার বছর যাবৎ ভালোবাসলে ডিভোর্স লেটার পাঠানোর সাহস হলো কি করে? ”
“ ওটা দাদাজান করেছে। দাদাজান ব্যাতীত বাকি সবাই, আমি, সিয়, আপনার আব্বু আম্মু, রাহা সবাই এই বিয়েটার পক্ষে ছিলাম স্বচ্ছ। মুখে যাই বলি। ”
স্বচ্ছ এবারে ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
“ শুধু শুধুই জ্বালিয়ছো? ”
“ প্রাপ্য ছিল আপনার ওটা।”
“ যাই হোক ঐ রোহানকে আমার পছন্দ নয়।দূরে থাকবে ওর থেকে। আর তোমার ভিলেইন দাদাজান? এখনও চাল চেলে যাচ্ছে। রোহানের ঐ বেহায়া পরিবার তোমাদের বাড়ি গিয়েছিল কেন হুহ?”
সুহা উত্তর দেয়,
“ রাহাকে দেখতে। উনারা নাকি রাহার সাথে রোহানের বিয়েটা দিতে চাইছেন। ”
স্বচ্ছ এবারে দাঁতে দাঁত চেপে শুধায়,
“ শা’লা বড়বোনকে না পেয়ে এবার ছোটবোনের দিকে হাত বাড়াচ্ছে? মে’রে ওর হাত যদি না ভেঙ্গে দিই। ”
“ সবকিছুতেই মা’রপিট আসে কেন?পারিবারিক আলাপ হচ্ছে। বিয়েটা তো হয়ে যাচ্ছে না। আর আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করব যাতে রাহার বিয়েটা দাদাজান এখানে ঠিক না করেন তা নিয়ে৷ বুঝলেন? এবার শান্ত হোন। ”
স্বচ্ছ শান্ত হয় যেন। সুহার দিকে তাকায় এবারে প্রেম নজরর। কিছুটা ঝুঁকে ঠোঁট বসায় সুহার কপালে। বলে,
“ হলাম শান্ত, স্যরি ভুল বুঝার জন্য। প্রথমে ভেবেছিলাম এক্সিডেন্টটা রোহান করিয়েছিল। আর কেন জানিনা তোমায় ছাদে কথা বলতে দেখে মনে হয়েছিল তুমিও ওকে ভালোবাসো। মূলত ও কথাগুলো বলেছিলই ওভাবে। ”
সুহা ফের বলে,

”কথাগুলোও উনি আমার সামনেই আপনাকে ফোনে বলছিল। দেখাচ্ছিল আপনার ভাষা কেমন চেঞ্জ হয়ে যায়। আর আমার সম্পর্কে বললেই আপনি কেমন দাউদাউ করে জ্বলে উঠেন। মূলত সে কারণেই আরো হাসি পাচ্ছিল আমার। আমি আপনার রাগ দেখে হেসেছিলাম ঠিকই কিন্তু আপনি যে আমায় ভুল বুঝে বসে থাকবেন এটা সত্যিই বিশ্বাস ছিল না। পরে দেখলাম সত্যিই ভুল বুঝে নিয়েছেন,ঐ ছেলের সামনেই যেভাবে সেভাবে প্রশ্ন ছুড়ছিলেন। মাথা গরম হয়ে গেল। ব্যাস! আমিও কত কি বলে ফেললাম। কিন্তু কষ্ট ফেলাম যখন বুঝলাম যে আপনি আমায় এক্সিডেন্টটার জন্য দোষারোপ করছিলেন। আমি সত্যিই এক্সিডেন্টটটা করাতে পারতাম?কিভাবে ভাবতে পারলেন এটা?”
স্বচ্ছ বোকাবোকা চোখে তাকায়। সুহার গালে চুমু বসিয়ে বউকে মানানোর জন্য বলে,
” কারণ ঐ রোহান ওভাবে বলেছিল। আমার দোষ নেই। ”
সুহা দৃঢ় স্বরে জানায়,
“ আমায় কতগুলো দিন এড়িয়ে গিয়েছেন। ”
স্বচ্ছ হাসে সুহার অভিমান দেখে। বলে,
“ তুমিও তো এড়িয়ে গেলে। ভাগ্যিস এড়িয়ে গিয়েছিলাম। নয়তো তো কখনোই আর এমন ভালোবাসার রূপ দেখাতে না, সবসময়ই এড়িয় যেতে। ”

আবির তখন ঘুমে। বার কয়েক কল এসেছে ফোনে। বিরক্তে চোখ মুখ কুঁচকে নিয়েই আবির চোখ মেলে তাকায়। ফোনে কাজিন ফিহার নাম্বার দেখে তড়িঘড়ি করেই কল রিসিভড করে। বলে,
” এমন ছাগলের মতো কল করছিস কেন? খোঁজ পেয়েছিস ছুটির? ”
ওপাশ থেকে ফিহা জানায়,
“ পেয়েছি বড়ভাইয়া। ”
আবির রাগে দাঁত কিড়মিড় করে। বলে,
“ আছে কোথায় ঐ বেয়াদব? ”
“ গ্রামের বাড়ি। মানে ছুটি আপুদের গ্রামের বাড়িতে ভাইয়া। ”
ফের রেগে শুধায়,
“ ওর সাথে যোগাযোগ হলে বলবি ও যে সবকিছু থেকে আমায় ব্লক করে এভাবে সবকিছু থেকে হারিয়ে গিয়েছে তার শাস্তি আমি কানায় কানায় পূর্ণ করে দিব ওকে। একটুও ছাড়ব না। ”
ফিহা উত্তর দেয় না। কিছুটা সময় চুপ থেকে কাচুমাচু স্বরে বলে,
“ ভাইয়া? ”
“ কি হয়েছে? ”
ফিহা বলে,

“ ছুটি আপুর নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে।তাও উনার কোন এক কাজিনের সাথে। ছোটনের থেকেই শুনলাম। ”
ছোটন ছুটির ছোট ভাই। ওর থেকে শুনেছে যেহেতু মিথ্যে শুনেনি নিশ্চয়?তবুও আবির অবিশ্বাস নিয়ে বলে,
”কি বললি? আবার বল। ”
” ওদের পুরো ফেমিলিই বাড়িতে গিয়েছে।ছোটন কাল এল। ওর থেকেই জানলাম যে ছুটি আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে। আগামীকাল নাকি আপুর এইংগেইজমেন্ট! ”
আবিরের রাগে মাথা ধপধপ করে। টগবগ করে শিরা উপশিরায় বহমান রক্তকণিকা। শুধায়,
“ ছুটির এত সাহস? ”
ফিহা আরো বলে,
“ ছুটি আপু নিজেই বিয়েটা করার জন্য মাতামাতি করছে। পুরো পরিবার বলছে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে, কিন্তু আপু নাকি একাই জেদ ধরেছে বিয়ে সে করবেই। ”
আবির দাঁতে দাঁত চাপে। বলে,
“ করাচ্ছি ওকে বিয়ে! ”

প্রেমের সমর পর্ব ৩০

কথাটা বলেই ফোনটা ছুড়ে মারে আবির। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে,
“খুব সাহস দেখিয়ে ফেলেছিস ছুটি। খুব বেশি! ভেবেছিলাম এবার ভালোবাসার অধ্যায়টা শুরু করব তোকে নিয়ে। তুই হতে দিলে তো? মেজাজটাই খারাপ করে দিলি। তুই কি ভেবেছিস? এত সহজ নাকি অন্য একজনকে বিয়ে করে নেওয়া? আমি টের পাব না? শুধু দেখ তোকে আমি কতোটা কষ্ট দিই এবারে। শুধু দেখবি! ”

প্রেমের সমর পর্ব ৩২