প্রেমের সমর পর্ব ৩৬

প্রেমের সমর পর্ব ৩৬
অলকানন্দা ঐন্দ্রি

ছুটি জড় পদার্থের ন্যায়ই শুঁয়ে থাকল চোখ গোলগোল করে। তখনও আবিরের বাহু বন্ধনীতে অবস্থান তার। যেন এই মুহুর্তে তার চলনফেরনের বোধটুকু সে হারিয়েছে।ঠিক মিনিট কয়েক পরই সে যেন বোধ ফিরে পেল। সামান্য ফিরে আবিরের দিকে চাইল কেমন চোখে। তখন মুখে কান্নাগুলো শুঁকিয়ে এসেছে যেন। মলিনতা ঢেকে রেখেছে সারা মুখ। ছুটির বড্ড জানতে ইচ্ছে হয় আবির ভাইকে। কি তার মনে? যদি রাহাকেই ভালোবেসে থাকে তবে বিয়েটা কেন করল তাকে? ছুটি শুকনো ঢোক গিলে। কিয়ৎক্ষন তাকিয়ে থেকেই প্রশ্ন ছুড়ে,
“ আবির ভাই? বিয়েটা করার পেছনে আসলে উদ্দেশ্যটা কি বলুন তো? আমি সত্যিই জানতে চাই। ”
আবির তখনও চোখ বুঝেই থাকল। জেগে আছে অথছ নড়চড় হলো না। শুধু আলিঙ্গনটা দৃঢ় হলো।গম্ভীর স্বরে উত্তর করল,

“ তুই জানতে চাইলেই যে জানাব আমি কোথাও লিখা আছে এমনটা? ”
ছুটি ছোটশ্বাস টানে। আবির যেন একেবারে গায়ে সেঁটে আছে ভেবেই হাঁসফাঁস করে এবারে। সরার চেষ্টা করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতেই বলে,
“আপনি হয়তো নিজের স্বার্থে বিয়েটা করেছেন কিন্তু প্রয়োজনটা কি ছিল জানতে পারব না আমি?”
আবির এই পর্যায়ে চোখ খুলে। ছুটির দিকে তাকিয়ে নিরব দৃষ্টি ফেলে। অথচ সেই দৃষ্টিই যেন ছুটিকে নিরব সতর্কবার্তা উপহার দিল। শাসাল নিভৃতে। অতি শান্ত, শীতল দৃষ্টি ফেলেই ছুটির থুতনিতে আঙ্গুল বুলিয়ে শুধায় আবির,
“সত্যিই জানিস না ? ”
ছুটি কাঁটকাঁট হয়ে তাকায়। থুতনিতে আঙ্গুল বুলানোর দরুণ শরীর শিরশির করছে তার। সাথে শখের পুরুষের মারাত্মক দৃষ্টি খাতা।একটু লালচে হয়ে আছে চোখজোড়া।দৃষ্টিতে যেন সহস্র প্রেম লুকিয়ে। ছুটি নজর সরিয়ে দ্রুত শুধায়,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“জানলে এতক্ষনে বুঝতে পারতাম। অথচ আজ এতক্ষন ভেবেও আমি উত্তর পাইনি। ”
আবিরের রাগ হয় এই পর্যায়ে। সে যে ছুটিকে ভালোবাসে এটা ছুটি বুঝে না?এতকালেও বুঝে নি? এমনকি আজকের পরেও না? মেয়েটা নিশ্চয় এতোটাই বোকা নয়। আবির রাগে ক্ষোভে থুতনি চেপে বলে,
“ তো ঐ ছেলের সাথে বিয়ে হলে উত্তর খুঁজে পেতি? ঐ ছাগলের প্রতি খুব দরদ না?আমায় চড় মারতেও হাত কাঁপেনি তাই না? ”
“ অতিরিক্ত করছিলেন। ছেলেটার ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার নিয়ে ব্যঙ্গ করছিলেন কেন?”
আবির ফের সরাসরি নজর ফেলে শাসিয়ে বলল,
“ খুব দরদ না? অনুভূতি এসেছে ঐ ছেলের প্রতি? অথচ এতকাল তো আমায় ভালোবাসিস বলতি। নাটক করতি সেসব? ”
ছুটিও তাচ্ছিল্য হাসে। শুধায়,

“আপনারা নাটক করে ভালোবাসতে পারেন আবির ভাই। আমি পারি না। ”
আবিরও বাঁকা কন্ঠে শুধায়,
“ তাই নাকি? তাহলে আমি এতোটা আদর মিশিয়ে বলে যাওয়ার পরও তুই পরপুরুষের হওয়ার চিন্তা করিস কি করে?
ছুটি ফের হেসে বলে,
“ আপনি কখনো আমায় ভালোবাসেননি আবির ভাই! বলুন না সত্যি করে, বিয়েটা কেন করলেন আবির ভাই? কোন স্বার্থে?”
বারবার স্বার্থ কথাটা আবিরের লাগে। রাগ হয়। সে কি স্বার্থ নিয়ে এই মেয়েটাকে চেয়েছিল?স্বার্থের কারণে ভালোবেসেছিল? তবুও বারবার এই শব্দটা তাকে কেন শুনতে হচ্ছে? আবির হিসহিসিয়ে শুধায়,
“ কি মনে হচ্ছে? তোকে নাটক করে বিয়ে করে পাচার টাচার করে দিব?এই স্বার্থে বিয়ে করেছি? ”
ছুটি চুপ থাকে কিয়ৎক্ষন এবারে। পরমুহুর্তে বেশ ক্ষাণিকটা সময় পর কাঁপা গলায় শুধায়,
“ আমায় নিশ্চয় ভালোবাসেন না আপনি? ”
আবির হাসে। কন্ঠের কম্পন বলে দিচ্ছে মেয়েটা এর উত্তর পেয়ে কতোটা অনুভূতিসিক্ত হবে। একটু খানি মুখ নামিয়ে ছুটির দিকে তাকায় সে। নাকে নাক ঘষে সেভাবেই বলে,
“ আমার সম্পূর্ণ জীবনটাই তোর অনুভূতি নিয়ে খেলা যাক ভাবলাম। এই চুক্তি করেই বিয়েটা করেছি। শান্তি?এবার ঘুমা বোকা! ”
ছুটি বুঝে উঠল না কি বলা উচিত বিনিময়ে। শুধু বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল আবিরের চোখে হাসার দৃশ্যের দিকে।

সুহা স্বচ্ছর হাতে খাবার খাচ্ছে ঠিকই তবে মুখে গম্ভীর ভাবটা এখনো বর্তমান। মনে হচ্ছে চাপা রাগ বিরাজ করছে। স্বচ্ছ বুঝে উঠে না কি করবে। কিছুটা সময় বউয়ের মুখের দিকে চেয়ে থেকে হুট করেই শুধায়,
“ বিয়েটা করে নিই আমরা সুহাসিনী?”
সুহা তাকায়। খেতে খেতেই ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
“ কবার করব বিয়ে? ”
স্বচ্ছ উশখুশ স্বরে উত্তর করে মুহুর্তেই,
“মানে বিয়ের অনুষ্ঠানটা। ”
সুহা তাকায় স্বচ্ছর দিকে। ছোটশ্বাস ফেলে জানায়,
“ প্রয়োজন কি? ”
স্বচ্ছর মুখ চুপসে যায়। ফাঁটা বেলুনের মতো মুখ করে বলে উঠে,
“ বিয়ে বিয়ে ফিলিংস দেখাতে হবে না? আগের বার বিয়েটাতো এমনিই করেছিলাম।”
সুহা মুহুর্তেই উত্তর করল ত্যাড়া স্বরে,
” বলেছিলাম এমনি করতে? ”
স্বচ্ছ ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। এই মেয়ে দেখছে ভালোই রেগে আছে। কি করে রাগ কমাবে? বুঝে উঠে না। শান্ত গলায় সুহার ঠোঁটে লেগে থাকা ঝোল টুকুুু মুঁছে দিতে দিতে বলে,
“ তখন তো জানতাম না এই মেয়েটাতে আমি ফেঁসে যাব এত কঠিন ভাবে। ”
“ ফেঁসে যেতেও বলিনি। ”

স্বচ্ছ হাত ধুঁয়ে খাবার প্লেটটা রেখে দেয় ততক্ষনে। ফের বিছানায় বসতে বসতে তোয়ালেতে হাত মুঁছে। অতঃপর সুহার গাল আগলে ধরে বলে,
“ বলোনি, কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত ফেঁসে তো গেলামই। কি করি বলো? যাই শাস্তি দাও মাথায় পেতে নিব সুহাসিনী, বিনিময়ে ভালোবাসা দাও। ”
সুহার হাসি পায়। তবে হাসে না৷ স্বচ্ছর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
“ সারাদিন টইটই করে রাতদুপুরে কাব্যিকতা দেখাচ্ছেন?প্রেম ঝরে পরছে এখন হুহ? ”
স্বচ্ছ ঠোঁটে ঠোঁটে চেপে শুধায়,
“ এমন একটা বউ থাকলে প্রেম ঝরে পরবে না? দেখলেই তো ইচ্ছে হয় প্রেমে পরি। কিন্তু কপাল দেখো। বউ পেয়েছি চারবছর,অথচ বউকে কাছে পাওয়া হলো না আমার এখনো।”
সুহা মুহুর্তেই শুধাল,

“ এসবই চিন্তা করছিলেন এতক্ষন?
স্বচ্ছ হাসে দাঁত কেলিয়ে। একদম আচমকায় মাথাটা এলিয়ে দেয় সুহার কোলে। আঁকড়ে ধরে সুহার কোমড়। মাথা গিয়ে ঠেকে সুহার পেটে। শান্ত স্বরে শুধায়,
“ আবির বিয়ে করেছে। ওর বাসর ঘর সাঁজালাম আজ আমি।আর, এইদিকে দেখে, আমি নিজেই এখনো বাসর ঘরে পা রাখা তো দূরের কথা দেখলামই না সুহাসিনী। বিয়ে করলাম চার চারটা বছর! ”
সুহা স্থির বসে রইল। অন্যদিন স্বচ্ছর মাথায় হাত বুলালেও আজ বুলিয়ে দিল না। শক্ত হয়ে বসে থেকে শুধাল,
” দোষ আমার? ”
স্বচ্ছ বউয়ের রাগ বুঝে আরেকটু শক্ত শক্ত করেই জড়িয়েই ধরে। সুহার হাতটা জোরপূর্বকই রাখে নিজের চুলের ভাজে। অথচ তাতেও যখন সুহা আগ্রহ দেখাল না তখনই অবাধ্য কাজ করে বসল। হাত গিয়ে ঠেকল সুহার কামিজের নিচ দিয়ে কোমড়ের ত্বকে। শুধাল,
“ ভালোবাসলে রাগ কমবে সুহাসিনীর? ”
সুহা কথাটা শুনেই নিরবে তাকায়। টলমল করে তার চোখজোড়া।ঠোঁটজোড়া কাঁপছে আকস্মাৎ। বোধহয় অভিমান টুকু একটু আদুরে স্বর পেয়েই গলতে যাচ্ছে। সুহা কান্না দমাল না। কম্পমান ঠোঁটজোড়া চেপে রেখে কাঁপা স্বরে শুধাল,
“ আপনার ভালোবাসার প্রয়োজন নেই। সারাদিনে এতগুলো ফোনকল, এতগুলো ম্যাসেজ আপনার চোখে পড়েনি স্বচ্ছ। আপনি খুবই দায়িত্বহীন প্রেমিক! ”

স্বচ্ছ এই পর্যায়ে সুহার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসে। সুহার টলমল করা আঁখিদ্বয়, কম্পমান ঠোঁটের দিকে চেয়ে নির্নিমেষ। তারপর হুট করেই যেন কি হলো তার। উঠে বসল স্প্রিংয়ের ন্যায়। মেয়েটার মুখ আগলে নিয়ে সর্বপ্রথম চুমু বসাল লাল হয়ে উঠা নাকের ডগায়। পরমুহুর্তেই কপালে চুম্বন এঁকে শুধায়,
” প্রয়োজন না থাকলেও ভালোবাসব। এবং আমার ভালোবাসা অবশ্যই নিতে হবে তোমায়। বুঝলে সুহাসিনী? না করার সুযোগ হবে না। ”
সুহা সেভাবেই কেঁদে উঠে অভিযোগ জানিয়ে বলতে লাগল,

প্রেমের সমর পর্ব ৩৫

“ সারাদিন চিন্তায় রেখে ভালোবাসা দেখাবেন না।এটাকে ভালোবাসা বলে না…”
বাকিটুকু বলার অবশ্য সুযোগ হলো না মেয়েটার। এর আগেই নিজের ঠোঁটজোড়ার অস্তিত্ব টের পেল একজোড়া পুরু ঠোঁটের দখলে।অতি নিকটে যে পুরুষটি সে পুরুষটিরই উম্মত্ত ঠোঁটজোড়ার অধীনে। সুহার চোখ ভেজা। ভেজা চোখজোড়া বন্ধ হতেই স্বচ্ছ কিছুটা সময় পর ঠোঁট ছেড়ে চুমু আঁকে সুহার ভেজা চোখে পাতায়। বিড়বিড়িয়ে বলে,
“ তুমি ভুল, এটাকেই ভালোবাসা বলে সুহাসিনী।”

প্রেমের সমর পর্ব ৩৭