প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১৩

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১৩
অলকানন্দা ঐন্দ্রি

প্রায় মাস তিনেক পেরিয়ে গেল চোখের পলকেই। আবির ছুটির খোঁজ পেল না। কেউ বললই না তাকে। ছোটনকে এত করে বুঝিয়ে শুনিয়েও লাভ হয়নি। উত্তর দেয় নি তাকে। বরং ছোটনটাও আজ তিনমাস হলো লাপাত্তা বোধহয়। একবার শুনেছে সে নাকি বন্ধুদের সাথে ট্যুরে ঘোরাঘুরি করছে। আবির বিশ্বাস করে না। তিন মাস যাবৎ কে ঘোরাঘুরি করে হুহ? হয়তো ছোটনই ওর সামনে পড়ে না ইচ্ছে করে। লুকিয়ে থাকে হয়তো জিজ্ঞেস করবে বলে। আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাতের আঁধারেই বসে থাকে ছাদের এককোণায়। আবিরের চুলগুলো এলোমেলো কিছুটা। বড় হয়ে কপালে ঠেকেছে। হাতের আঙ্গুলে গুঁজে রাখা সিগারেটের ধূসর ধোঁয়া মধ্যরাতের যন্ত্রনারই বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে বোধহয়। আবির যখন ছাদে দাঁড়িয়ে আনমনে সিগারেট ফুঁকছে আর ছুটির কথা ভাবছে ঠিক তখনই দেখা গেল ছুটিদের ছাদে এসে দাঁড়িয়েছে ছোটনের মতোই একটা ছায়া। আবির ভ্রু কুঁচকায়। ছোটন তো বাইরে। তাহলে? ভার গলায় জিজ্ঞেস করল,

“ ছোটন নাকি? ”
ছোটন এগিয়ে এল।সে যে বাসাতেই আছে, কোথাও যায়নি এটা মূলত আর লুকানোর প্রয়োজন বোধ করল না। কারণ আবির যে হারে প্রতিটা রাতে ছাদে এসে নির্ঘুম কাঁটিয়ে সিগারেট ফুকছে এই তথ্য ছুটিকে দেওয়ার পর ছুটি রেগে আগুন হয়ে আছে। আবিরের উপরই। ছোটনকে বারবার করে বলে পাঠিয়েছে এই লোক আবার সিগারেট ধরলে সোজা ছাদ থেকে ফেলে দিতে। ছোটস অবশ্য গত এক সপ্তাহ যাবৎ এই দুঃসাহসী কাজ সম্পাদন করার চেষ্টা চালিয়েও পারে নি।এই যেমন এখনও ছুটি ফোনকলে আছে। ছোটন ফোনটা হাতে নিয়েই ছাদে এসেছে। বোনকে দেখিয়েছেও আবিরের কার্যকলাপ। এই পর্যায়ে রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে হেসে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ প্রতিদিন রাত বারোটা থেকে চারটা অব্দি এত সিগারেট টেনে কি বুঝাতে চান ভাই? আমার বোনের কথা ভেবে নিজের শরীরের বারোটা নিজেই বাজাচ্ছেন এটা? ”
আবির ঘাড় কাঁত করে তাকায়। তখনও সিগারেটে সুখটান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ায় ব্যস্ত সে। বলে,
“তোর আপু তো ছেড়ে চলেই গেছে, একপ্রকার ছাড়াছাড়ির মতোই তো আছি বল? তো শরীরের বারোটা বাজাই অথবা তেরোটাই তোর আপুর কোন ক্ষতি হবে না এতে। ”
কথাটা শোনামাত্রই ফোনকলে ঘাপটি মেরে থাকা ছুটি ফুঁসে উঠে। রাগে নাক ফুলায় সে। ইচ্ছে হয় আবিরকে কিছু বলে বসতে। কিন্তু উপায় নেই। ফলস্বরূপ কলই রেখে দিল সে। এবার ছোটনই বলল,
“ ছাড়াছাড়ির মতো থাকা আর ছাড়াছাড়ি একই কথা না।নিজের এভাবে অযত্ন না করলেও তো হয়।”
আবির সিগারেট ফেলল। জ্বলন্ত সিগারেটের অংশটাকে পা দিয়ে ফিষে ফেলতে ফেলতে তাচ্ছিল্য করে বলে উঠে,

“ বাদ দে, তুই তো তোর আপুর সাথে আর কথা বলিয়ে দিবি না তাই না? ”
ছোটন জানায়,
“আপুই আপনার সাথে কথা বলবে না। ”
আবির হাসে। কত উন্নতি না ছুটিটার? যে ছুটি তার সাথে কথা বলতে মরিয়া হয়ে থাকত, সে ছুটি আজকাল তাকে এড়িয়ে চলে। তার সাথে কথা হোক এটা ছুটি চায়ই না আজকাল। সময় কত অদ্ভুত!সময় সত্যিই মানুষকে পরিবর্তন করে, সঙ্গে মানুষের অনুভূতিকেও। আবির তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসে। এক লাফে ছুটিদের ছাদটায় পৌঁছে ছোটন ঘাড়ে হাত রাখল। বলে,

“ ভালো তো, তোর আপুকে বলিস আমি মরে গেলে একবার দেখে যেতে। নাকি মরে গেলে ও দাম দেখাবে এমন? ”
ছোটন ঘাড় কাঁত করে তাকায়। মুহুর্তেই উত্তর করে,
“ আপু এতোটা স্বার্থপর নয়। ”
আবির মুখ ভেঙ্গিয়ে বলে,
“ তা তো দেখতে পাচ্ছি।নিজের দাম দেখাতে আমাকে উনি ভুলে যেতেও দুবার ভাবেননি। সেলফিশ। ”
কথাগুলো বলেই অন্যদিকে ফিরে চাইল সে। কিয়ৎক্ষন চুপ থেকে কিছু ভাবল। অতঃপর ছোটনের দিকে চেয়ে ক্রুর হাসে সে। ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে ডাকে,
“ ছোটন? ”
ছোটন জবাব দেয়। আবির প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘাড় ঝুুকিয়ে হেসে বলে,
“ তোকে কিডন্যাপ করে নিলে দোষ দিবি না তো আমায়? কিংবা জোরজবরদস্তি করলে?”
ছোটন বুঝে উঠে না। বোকার মতো জিজ্ঞেস করে,

” মানে?”
আবির আরো শক্ত করে ঝেকে ধরে ছোটনাকে। একদম ঝেকে ধরে কাঁধে হাত রেখেছে যেন৷ বলে,
“ তোর ফোনে নিশ্চয় ছুটির সাথে কন্ট্যাক্ট করার কোন ওয়ে থাকবে?তুই তো ওর সাথে যোগাযোগ রাখছিসই নিয়মিত তাই না?”
“ হু আব…”
কথাটা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই আবির ছোটনকে ছাদ থেকে ঠেলে ধরে কিছুটা।যেন আরেকটু ধাক্কা দিলেই ছোটন সোজা বিল্ডিংয়ের নিচে পড়বে। ছোটন ভয় পায়। কোনভাবে বলে,
“ আপনি আবির ভাই?”
আবির হেসে বলে,
“ তোর আপুকে কল করে কথা বলতে বল। নয়তো সোজা নিচে ফেলে দিব ছোটন। তুই কি নিচে যেতে চাস?”
ছোটন শুকনো ঢোক গিলে। ততক্ষনে কোনরকমে মাথা নাড়ায় সে। আবির তাড়া দেখিয়ে বলে,

“ এবার তাড়াতাড়ি ছুটিকে কল দে। নাহলে সোজা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব ছোটন ”
উত্তর আসে,
“ দিচ্ছি আবির ভাই।”
অতঃপর ছোটন করে সোজা হয়ে দাঁড় করায় আবির। অপেক্ষায় থাকে ছুটি কখন কল তুলবে। অবশেষে ছুটি যখন কল তুলল ভিডিও কলের ফোন স্ক্রিনে সে চেয়ে থাকে।
ছুটির চোখে চশমা। কাঁধ অব্দি চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া৷ ছুটি কি চুল কেঁটেছে?ছোট করেছে? কোন প্রয়োজনে? আবির তাকিয়ে দেখে। নাকে নাকফুলটা জ্বলজ্বল করছে৷ দেখতে সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। আবিরকে অবশ্য দেখা যাচ্ছে না।ফলস্বরূপ ছুটি রেগেমেগেই বলে ফেলল,

“ বলেছিস ঐ বেয়াদব লোককে সিগারেট আর না ফুঁকতে? এভাবে রাত জেগে সিগারেট ফুঁকে শরীরের বারোটা বাজাচ্ছে কেন? কোন প্রয়োজনে? আবার বলছে তোর বোনের কিছু হবে না? এই লোক পেয়েছে কি আসলে হুহ?”
আবির শুনে। লুকিয়ে লুকিয়ে তাহলে এখন তাকে পর্যবেক্ষণ করা হয় এখন? যেটা সে এতকাল ফলো করত সেটাই তার উপরে এপ্লাই করা হচ্ছে? বাহ! ভালো তো। সে হাসে। আড়ালে খবর রাখলেও ধরা যে পড়ে গেছে এইটা আবিরের ভালো লাগছে। এতকালের সমস্ত রাগ তার এক মুহুর্তেই হাসিতে পরিণত হয়েছেে।ছুটি আবারও বলল,
“ কি হলো কথা বলিস না কেন? তোরে যে দেশে রেখে আসছি? কোন কারণে? সঠিত কাজই যদি না করতে পারিস তাহলে তুই কিসের ভাই আমার? ঐ লোক এখন কোথায়? কি করছেন উনি? আবারও সিগারেট ফুঁকছে? ফুঁকছে কিনা বল… ”

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১২

ছোটন উত্তর করে না। একবার ঘাড় ফিরে শুধু আবিরের দিকে চায়। আবার ফোনের স্ক্রিনে তাকায়। আবির হাসে শুধু। ছুটি ফের বলে,
” যদো সিগারেটই ফুঁকে থাকে তাহলে প্লিজ সিগারেটের জ্বলন্ত দিকটা চেপে ধর উনার ঠোঁটে। বেয়াদব পুরুষ মানুষ কোথাকার। আমি এই পুরুষমানুষ জীবনেও চাই না। ”
আবির হাসে এবারেও। বিনিময়ে ছোটনের হাত থেকে ফোনটা নিজের হাতে নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকায়। বাচ্চামতো চেহারার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে উত্তর করে সে,
” কিন্তু আপনাকে না চাইলেও এই পুরুষমানুষকেই চাইতে হবে ম্যাম। আপনার জন্য এই পৃথিবীতে শুধু এই পুরুষমানুষটিই বরাদ্ধকৃত আছে। বুঝলেন? ”

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১৪