প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১৫

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১৫
অলকানন্দা ঐন্দ্রি

“ বিয়ের তো বেশ কয়মাস পার হলো। তা বাচ্চা টাচ্চার বিষয়ে ভেবেছো? ”
রাহা তখন সোফায় বসা। কথাটা এক প্রতিবেশিই বলল। রাহা তখন মুখ কাঁচামাচু করে কোন একটা উত্তর দিয়ে এল কেবল। আসলেইসে বাচ্চা খুব ভালোবাসে। যদি এতদিনের স্বামীর ভালোবাসা পাওয়া হতো তবে সে নিশ্চয় বাচ্চাকাচ্চার প্ল্যান করে ফেলত। বাচ্চা ভীষণ ভালোবাসে যে সে। এই যেমন আজ দুপুরেও রাস্তায়একটা ছেলেকে সে প্রচুর আদর করেছে, খেলেছে।
রোহান বসে আছে বেলকনিতে।আজ অফিস থেকে ফেরার পথেই সাদের সাথে দেখা হয়েছিল। সম্ভবত টিউশন করে ফিরছে সাদ। রাহার কথাও জিজ্ঞেস করল বেশ কৌতুহল নিয়ে। আর এই জিজ্ঞেস করাটাই রোহান নিতে পারে না। একমনে এক ধ্যানে কি যেন ভেবে চেলেছে সে এই নিয়ে। রাহা বাচ্চার কথা ভাবতে ভাবতে রোহানকে মনোযোগ দিয়েই এতক্ষন যাবৎ দেখে চলছিল। কিন্তু আচমকাই রোহান ফিরে তাকাতে সে নজর সরাল। রোহান ভ্রু উুঁচিয়ে শুধায়,

“ এভাবে ড্যাবড্যাব করে পর্যবেক্ষন করার কারণ? ”
রাহা এবারে এগিয়ে আসে। মৃদু হেসে জবাব দেয়,
“ ভাবছি একটা বাচ্চা নিব। ”
রোহান কেঁশে উঠে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। বলে,
“ ক্ কি?”
রাহা ফের বলে,
“ আজ রাস্তায় একটা বাচ্চা দেখেছি। দেখতে ভীষণ মিষ্টি সে। ওরকম একটা বাচ্চা আমার থাকলে জীবনে আর কোন দুঃখ থাকত না। ”
রোহান শান্তস্বরে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ তো বাচ্চা দত্তক নিবে এখন? ”
রাহা তা না মেনে না নিয়ে বলল,
“ মেয়ে হয়েছি। মা হওয়ার ক্ষমতা কি আমার নেই যে দত্তক নিব? ”
রোহান হাসে কিঞ্চিৎ। মেয়েটা কি ছোট? বলে,
” মা হওয়ার ক্ষমতা থাকলেই মা হতে পারবে নাকি? ”
রাহা হাসে দাঁত কেলিয়ে। বলে,
“ অবশ্যই পারব। আপনি আছেন না? ”
রোহান এই পর্যায়ে আবারও কেঁশে উঠে। চোখমুখ লাল হয়ে উঠে কেমন। শুধায়
“ কি? ”
রোহা কোমড়ে হাত রেখে বলে,
“ মানুষ কার বাচ্চা গর্ভে ধারণ করে? ”
রোহানও প্রশ্ন ছুড়ে,
“ কার?”
“ বরের। ”
রোহান দাঁতে দাঁত চাপে। শুধায়,
” এটা কি আমি জানি না?”
“ আমার বরটা কে মিঃ রোহান ফারাবী?আপনি নিশ্চয়? ”
“ হু। ”
রাহা আবারও ব্যাখ্যা স্বরূপ বলে,

“ তাহলে আমি আপনার বাচ্চাই তো গর্ভে ধারণ করব তাই না? আর আপনি এটা অস্বীকার করবেন না যে আপনিও নিশ্চয় বাচ্চা চান হুহ?”
রোহান চুপ থাকে। আসলেই যে সে বাচ্চা অপছন্দ করে এমন নয়৷ সেও চায় কার একটা সংসার হোক, ফুটফুটে সন্তান থাক।রোহান উত্তর না দিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টাতে দ্রুত বলে,
“ হুট করে বাচ্চার ভূত মাথায় চাপল কেন নবনী? তোমার প্রাক্তন প্রেমিক কি বাচ্চা নিয়ে কিছু বলেছে নাকি আজ? ”
রাহার সুন্দর আলোচনায়এমন একটা কথা পছন্দ হলো না। দাঁতে দাঁত চেপে শুধাল,
“ আমার কোন প্রাক্তন প্রেমিক নেই। যে ছিল সে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী। আর আপনার কথানুযায়ী সে যদি কিছু বলেও থাকে তবে তার কথামতে নিশ্চয় আমি বাচ্চা নিতে পাগল হবো না? ”
রোহান এই পর্যায়ে আড়ালে হাসে রাহার কথা শুনে। বিড়বিড় করে শুধায়,

“ হু, এখনও কিছুই হয়ে উঠল না, আর উনি একেবারে বাচ্চা নিয়ে নিচ্ছেন। ”
কথাগুলো বিড়বিড় করেই বলল রোহান। রাহা শুনল না। তবে হঠাৎই রাহা প্রশ্ন ছুড়ল,
“ আপুকে খুব ভালোবাসেন তাই না মিঃ রোহান ফারাবী? ”
রোহান ফিরে তাকায়। উত্তর দেয়,
“ এর উত্তরটা তো অজানা নয়। হঠাৎ জিজ্ঞেস করার কারণ কি নবনী? ”
রাহা বেশ মনোযোগী হয়ে আবার বলে,
“ অন্য কাউকে কখনো ভালোবাসতে পারবেন কি? ”
“ হ্ হু?”
রাহা এবার কথা ঘুরাতে বলে,
“ কিছু নয়। এতক্ষন আকাশপানে তাকিয়ে কি ভাবছিলেন? ”
রোহান এবারে হাসে। মেয়েটা যে একটু হলেও তার প্রতি দুর্বল এটুকু সে মাস কয়েকে বুঝতে পেরেছে ঠিকই। তাই তো হেসে বলে,
“ ভাবছি অন্যের বউয়ের পিছনে ঘুরে ঘুরে তাকে জ্বালানোর মাশুল এখন আমিও পাচ্ছি। আমার বউয়ের পিছনেও কেউ ঘুরে এইটা আমি মানতে পারছি না সহজ সরল ভাবে এখনও।”
এই প্রথম এভাবে আমার বউ সম্বোধনটা পেয়ে রাহা মাথা নিচু করে। ফর্সা মুখটা বোধহয় লজ্জ্বায় লাল হয়ে আসল। দৃষ্টি অবনত হলো দ্রুত।

সুহার হাতে তখন ধারালো চুরি। একহাত এগিয়ে ধরে সে একাধারে চিন্তা করে যাচ্ছে তার একরত্তি মেয়েটাকে। অতঃপর আকাশপানে চেয়ে হুট করেই কেঁদে উঠে সে। অস্ফুট স্বরে বলে উঠে,
“ আম্মু? তোর ওখানে অনেক কষ্ট হয় না? একা থাকতে পারিস আম্মু? ওখানে তো তোর কেউ নেই আম্মু। আম্মুও তো নেই। তোর খুব কষ্ট হয় তাই না? ”
সুহা নিরবেই কাঁদে। দরজা বন্ধ করতে চেষ্টা করেছিল। তবে পারে না সে। স্বচ্ছ মাস কয়েক হলো দরজার লক হতে ছিটকিনি সব নষ্ট করেছে। সুহাকে সর্বক্ষণ চোখে চোখে রেখেছেে।যত্ন নিয়েছে। মাস কয়েকে মধ্যে সুহা বহুবার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে। বহুবার মরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আবোলতাবোল কান্ডকারখানা চালিয়েছে নিজের উপর। যার ফলস্বরূপ এখনও কিছু কাঁটা দাগ সুহার হাতে ভাসে। এখনও কপালের কোণাটায় কাঁটা দাগ স্পষ্ট যা তার নিজেরই নিজেকে আঘাত করার স্পষ্ট প্রমাণ।অবশ্য এই এক মাসে সুহা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। এই একমাসে স্বচ্ছ অনেকটাই সুহাকে একা ছাড়ে। কিন্তু আজ একমাস পর আবারও সুহার মাথায় একই ভূত চাপবে কে জানত। সুহা নিরবে বসেই বার কয়েক চুরি দিয়ে নিজের হাতে দাগ বসাল। কাঁটা দাগ। যা দিয়ে মুহুর্তেই বেরিয়ে এল লালাভ রক্ত। অতঃপর মুখে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে সে বলল,
“ সোনা? আম্মু তোমার কাছে আসব। খুব আদর করব আম্মু। মিলিয়ে নিও। আম্মু তোমায় খুব ভালোবাসব আম্মু। ”

ছুটির নিজের একটা বন্ধুমহল হয়েছে এখানে। সে বন্ধুমহলে সে ব্যাতীত দুইজন যুবতী এবং একজন যুবক। যুবকটির নাম আলভি, এবং বাকি দুইজন যুবতী এলিনা এবং উইলি। আলভির গার্লফ্রেন্ড হলো উইলি। এদের মাঝের কেমিস্ট্রিটা তারা বাকি দুইজন সবসময়ই দেখে, সবসময়ই সম্মুখে অবলোকন করে তাদের প্রেম। সেদিন আলভির গলায় যে লাভবাইটের চিহ্ণ ছিল তাও উইলির দেওয়াই ছিল। ছুটি তো কেবল একটু আবিরকে জ্বালাতে আলভিকে বয়ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। ছুটি কিঞ্চিৎ হাসে আনমনেই। আবার পরক্ষণেই মন খারাপ হয়। সে আবির ভাইকে কষ্ট দিতে চায়নি কোনকালেই। কখনোই চায়নি আবির ভাই কষ্ট পাক। কখনো চায়নি আবির ভাই রাত জেগে নিকোটিনে আসক্ত হোক। কিন্তু আবির ভাই কেন তাকে অবহেলা করল? কেন তার সাথে এতগুলো মাস কথা বলল না?কেন অন্য একটা মেয়ে আবির ভাইয়ের রুমে থাকবে? এই এত এত প্রশ্ন যখন তার মাথায় ঘুরপাক খায় তখন এমনিতেই জেদ চাপে। ইচ্ছে হয় আবিরকেও সেইম একই যন্ত্রনায় দেখতে। ইচ্ছে হয় আবিরের কাছে নিজের মূল্যটা হারে হারে প্রমাণ করতে। ছুটি যখন কফি হাতে এসবই ভাবছিল ঠিক তখনই উইলি,এলিনা এবং আলভি আসল। কিঞ্চিৎ হেসে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় উইলি বলল,

“ ব্রো এ’র ক’থা ভাব’ছো? ”
যদিও আলভি আর এলিনা দুইজনেরই মা বাংলাদেশি হওয়াতে তারা সুন্দর বাংলা বলতে পারে। তবে উইলি এই দেশের হওয়াতে বাংলাটা খুব একটা পারে না। তবুও আলভীর থেকে এই কয়েক মাসে শিখে ফেলেছে বেশ অনেকটাই। বলতে গেলে অনেকটা ভালোই পারে সে বাংলা বলতে তবে হালকা ভাঙ্গা ভাঙ্গা এবং উচ্চারণ গুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাস্যকর। ছুটি হাসে। বলে,
“ তোমাদের ব্রো এখন দিনরাত উদাসীনতায় কাঁটায়। নতুন নেশা হিসেবে নিকোটিনে আসক্ত হয়েছে। তার কথা আর কি ভাবব বলো? ”
এলিনা এবারে বলল,
“ সে তোমায় অনেক লাভ করে ছুটি। তবুও মিথ্যে বললে কেন? ”
ছুটি উত্তর করে,

“ একটু জ্বালাচ্ছি। আগে তো আড়ালে আমার সাথে যোগাযোগ রাখত না। আমিও এবার একটু তার দেখানো পথে হাঁটছি। সরাসরি যোগাযোগ না করে আড়াল হতে খোঁজ খবর রাখছি এই আরকি। আর অলভিকে বয়ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দিয়েছি উনার লিজার কারণে। যে একবার তার হয়ে কল তুলেছিল এবং সে মুহুর্তে তার রুমেই অবস্থান করছিল। আমি লিজাকে খুব খারাপ হিসেবে নিচ্ছি না, আবার খুব ভালো হিসেবেও নিচ্ছি না কারণ লিজা নিজেই বলেছে সে আবির ভাইকে পছন্দ করে। তাহলে? একটা মেয়ে পছন্দ করে জেনেও সে কেন তার রুমে মেয়েটাকে এলাও করল এটাই আমি আজ অব্দি মানতে পারছি না। মূল কথা তার পাশে কোন মেয়েকেই আমি সহ্য করতে পারি না এলিনা। এর আগেও রাহাকে নিয়ে আমি অনেকটা কষ্ট পেয়েছিলাম।”
আলভী এই মুহুর্তে বলে উঠল,
“ এমনও তো হতে পারে সে কোন সমস্যায় ছিল? ”
“ তার সাথে তো আমার চলে আসার আগে দিয়ে কয়েকবার ফোনে যোগাযোগ হলো আলভী। বলল না তো সে সমস্যায় ছিল। বলতে পারত তো বলো? ”
ছুটি উত্তরটা দিয়ে শেষ করে ঠিক তখনই তার ফোনে কল আসে। ছোটনের কল। ছুটি কল তুলে। ওপাশ থেকে ছোটন বলে,

“আপু? আবির ভাইয়া তো চলে যাবে আবার। এবার অন্য কান্ট্রিতে যাবে। ভিসার জন্য গেছে আজ। ভালোই ভালোই ভিসা হয়ে গেলে মাস এক দুয়েকের মধ্যে চলে যাবে আবির ভাই। আর শুনলাম,এবারে গেলে উনি নাকি আর দেশে ফিরবেন না কোনদিন।”
আচমকা এই খবরটা ছুটি বিশ্বাস করতে পারে না। ভ্রু কুঁচকে শুধায়,
“ ফিরবেন না মানে?”
ছোটন বলে,
“ফেরার ইচ্ছে নেই নাকি উনার। চিরচেনা সব কিছু থেকেই নাকি হারিয়ে যাবেন। এইজন্যই নাকি অন্য কান্ট্রিতে যেতে চাইছেন এবার। ”
ছুটি রেগে উঠল এবারে। চলে যাবেন মানে? নিষ্ঠুর! নির্দয় লোক! প্রতিবার ছুটিকে অবহেলায় ছুড়ে ফেলতে একটাবারও মায়া হয় না এইলোকের? ছুটি মুহুর্তেই বলল,
“ ফেরার ইচ্ছে নেই বললেই হলো? হারিয়ে যাবেন বললেই হলো? উনার মামাবড়ির আবদার নাকি? ”
“ সেটা তো জানি না আপু। ”
ছুটি ফের বলল,

“ সিগারেট টেনে টেনে এসব ভাবে এখন?আজ সকাল থেকে সিগারেট ছুঁয়েছে কয়বার হু? ”
ছোটন বলে,
” দুয়েকবার বোধহয় ছুঁয়েছে। ”
ছুটি বাহবা দিয়ে বলে,
“ বাহ! কেউ কিছু বলে না এই খারাপ লোককে? পরিবারে এতগুলা লোক কিছুই বলে না? ”
ছোটন শুধায়,
” জানি না,তবে ফিহার কাছেও শুনেছি আবির ভাই এবারে গেলে আর ফিরবে না। ”
ছুটির এবারে কান্না পেয়ে যায়। ফিরবে না মানে? ছুটি কি একটু বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে আবির ভাইকে? ছুটি যদি পরবর্তীতে আর খুঁজে না পায় এই লোককে? ছুটি কেঁদে ফেলে সামনের বাকি তিনজন মানুষের সামনেই৷ বলে,
“ খবদ্দার ছোটন, উনাকে একেবারের জন্য যেতে দিলে দেশে ফিরে আমি তোর চুল একটাও রাখব না। দরকার হলে কিডন্যাপ করে হলেও তার যাওয়া আটকাবি।মাইন্ড ইট ছোটন। ”

এপাশে ছোটনের পাশে বসেই আবির সবকথা শুনছিল। এবারে ছুটিকে কাঁদতে কাঁদতে এসব বলতে দেখে হালকা হাসে সে। ছোটনের থেকে ফোনটা নিয়ে কল রাখে সে। ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
“ তোর বোন জ্বলে উঠল নাকি ছোটন? ”
ছোটন বোনের কান্না শুনে আপসোস করে। বলে,
“ একটু তো জ্বলবেই। সেই কবে থেকে আপনাকে পাগলের মতো ভালোবাসে৷ ”
আবির উত্তর দেয়,

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১৪

“ অথচ তোর বোন নিজেও জানে না যে তোর বোনকে আমি কতোটা পাগলের মতো ভালোবাসি।তোর বোন একটা বোকা। সাধে কি বোকাপাখি বলি? আমি যে তার কাছে যাওয়ারই প্রস্তুতি চালাচ্ছি এটা তার মাথায় একবারও আসবে না দেখিস। আসবে দুনিয়ার হাবিজাবি চিন্তা।দেখবি যেদিন ওর সামনে গিয়ে হাজির হবো সেদিন আবারও নিশ্চয় কাঁদবে বোকাপাখিটা।”

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১৬