প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১৭
অলকানন্দা ঐন্দ্রি
স্বচ্ছর কোলে একটা বাচ্চা ছেলে।এডপ্ট করেছে। বয়স সবে মাস দুয়েক। গায়ের রং শ্যামলা হলেও বাচ্চাটা মিষ্টি। খুব সম্ভবত বাচ্চাটার মা বাবার পরিচয় জানা নেই কারোরই। স্বচ্ছও জানে না তার মা বাবার পরিচয়৷ অথচ বাচ্চাটা কি মিষ্টি। কি মায়া তার চাহনিতে। শান্তশিষ্ট! স্বচ্ছ কোলে নিয়েছে অনেকক্ষন। অথচ বাচ্চাটা একটুও কান্না করেনি, একটুও নড়চড় করেনি। প্রথমদিকে স্বচ্ছকে ড্যাবড্যাব করে দুয়েকবার উৎসুক চাহনিকে পরখ করেই ও গম্ভীর মুখ করে আছে। স্বচ্ছ বুঝে উঠে না, মাস দুয়েকের বাচ্চা এত ম্যাচিউরড ভাব কেন ধরবে? কি দরকার? বহুবার হাসানোর চেষ্টা করল সে। কিন্তু লাভ হলো। স্বচ্ছ ছোটশ্বাস ফেলে বাচ্চাটার কপালে চুমু আঁকে এবারে। পা বাড়িয়ে সুহার কাছে গিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
“ বাচ্চা চেয়েছিলে তো তুমি সুহাসিনী? বাচ্চা এনে দিলাম। একটা মিষ্টি বাচ্চা।তবুও এবারে আমায় তোমাকে হারানোর দুঃশ্চিন্তা থেকে রেহায় পাওয়ার সুযোগ দাও।এবার অন্তত আগের মতো হয়ে যাও সুহাসিনী। ”
সুহা তখন জানালার ধারে বসা।হাতে তখনও ব্যান্ডেজ তার।স্বচ্ছর কন্ঠ শুনে ফিটফিট করেই তাকাল সে স্বচ্ছর দিকে।স্বচ্ছর কোলে সাদা তোয়ালেতে মোড়ানো বাচ্চাটাকে দেখেই সুহা উৎসুক হয়ে চাইল। কি মিষ্টি। কি সুন্দর গাল। চাহনি কতোটা মায়াময়। সুহার আপন আপন লাগে যেন। মাথা এগিয়ে উৎসুক স্বরে বাচ্চাদের মতো করেই বলল,
“ সত্যিই বাচ্চা? ”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
স্বচ্ছ হাসে এবারে। সুহাকে মাঝেমাঝেই এখন বাচ্চা বাচ্চা লাগে একদম। কি সুন্দর আবদার করে। কখনও বাচ্চাদের মতো হু হু করে কেঁদে উঠে।কখনও মিষ্টি হাসে৷ স্বচ্ছ হেসে বাচ্চাটাকে এগিয়ে ধরল সুহার দিকেই। বলে,
“ হ্যাঁ,একটা ছোট্ট বাচ্চা। আজ থেকে আপনারই বাচ্চা সে। ”
সুহা এই পর্যায়ে ভীষণ খুশি হয় যেন। তবে প্রকাশ করে না। শুকনো ঢোক গিলে সে। হাত বাড়িয়ে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়েই চুমু দিল অসংখ্যবার। অথচ পুরোটা সময়ই বাচ্চাটা একদম নিশ্চুপ থাকল। এমনকি স্বচ্ছের কোলেও এতক্ষনে সে একটুও কান্না করে নি। সুহা তাকায়। বাচ্চাটা তখন তার দিকেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।সুহা তা দেখে কিঞ্চিৎ হাসে। বলে,
“ ও কোন প্রতিক্রিয়া করছে না কেন? কান্নাও করছে না। আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ”
স্বচ্ছ হাসে। একটু এগিয়ে সুহার কপালে চুমু দিয়ে বলে,
” ও হয়তো তার আম্মুর মতোই ভীষণ শান্ত বাচ্চা হবে।”
সুহা কেমন করে যেন চাইল মুহুর্তেই। প্রতিবাদ স্বরূপ বলে উঠল,
“ আমি মোটেই শান্ত নই স্বচ্ছ, আপনিও যে শান্ত বাচ্চা এমন নয়। ও আমাদের দুইজনের থেকেই ভিন্ন হবে। ”
স্বচ্ছ স্থির চাহনিতে তাকিয়ে রইল। এতগুলো দিন পর সে সুহার আগের কন্ঠস্বরটা শুনতে পেল যেন। আগের প্রতিবাদী স্বর। আগের চঞ্চল ঝগড়া। স্বচ্ছ ছোটশ্বাস টানে। সুহার দিকে স্থির চেয়ে বলে,
“ এবার বলুন, খুশি আপনি? বাচ্চার কথা ভেবে ভেবে আর মন খারাপ করবেন না তো? নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন না তো? ”
সুহা কিয়ৎক্ষন চুপ থাকে। চোখ টলমল করে তার হঠাৎ। তারপর বলে,
“ আমি তো আমার মেয়ের কথা ভুলতে পারব না স্বচ্ছ। আমি তাকে সবসময় মনে রাখব ৷ সবসময়ই ! সে আমার প্রথম মাতৃত্ব-ময় অনুভূতি।”
স্বচ্ছ ছোটশ্বাস টেনে বলে,
“ আমার কি মনে থাকবে না তাকে সুহাসিনী?”
পুণরায় আবারও সুহার হাতের উপরে হাত রেখে শুধাল,
“ কথা দিচ্ছি। এবারে আমি দ্বিগুণ সতর্ক থাকব সবকিছুতে। সবকিছুতেই আমি আমার স্ত্রী সন্তানকে রক্ষা করব সুহাসিনী৷”
সুহা তবুও উত্তর করে না। চুপ করে থাকে। স্বচ্ছ তাকায়।ডাকে,
“ সুহাসিনী? ”
সুহা হুট করেই যেন শুনতে পেল। উত্তর করল,
“ হু?”
স্বচ্ছ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। শান্ত স্বরে বলে,
“ আমায় কি আর বিশ্বাস করা যায়?আর ভালোবাসো না? খুব বেশি ঘৃণা করো সুহাসিনী? আমার জন্য যেটুকু অনুভূতি তোমার হৃদয়ে ছিল সবটুকু কি ফুরিয়ে এসেছে? ”
সুহা কয়েক সেকেন্ড স্থির তাকায় স্বচ্ছর দিকে। পরক্ষণেই উত্তর দেয়,
“ স্বচ্ছ! আমার জীবনে প্রথম পুরুষ আপনি যাকে আমি ভালোবেসেছি। যাকে আমব জীবনের সবটা দিয়ে চেয়ে এসেছি। এত সহজেই তার প্রতি আমার অনুভূতি ফুরিয়ে আসার তো কথা নয়। ”
স্বচ্ছ চকচকে চোখে তাকায়। বলে,
“ তার মানে? এখনও আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা অবশিষ্ট আছে সুহাসিনী? ”
সুহা উত্তর দেয় না। ক্লান্তির শ্বাস টেনে বাচ্চাকে কোলে রেখে ওভাবেই স্বচ্ছর বুকে মাথা রাখে এবারে। বলে,
“ ঘুমাব স্বচ্ছ, আমার বড্ড ঘুম পাচ্ছে। ”
স্বচ্ছ বাচ্চাকে নিজ কোলে নেওয়ার যখন চেষ্টা চালাল তখন সুহাই বলল,
“ ওকে বুকে নিয়েই ঘুমাই না? আমি তো আমার মেয়েটাকে বুকে নিয়ে ঘুমাতেই পারিনি। চোখের আড়াল হয়েই সে আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছে স্বচ্ছ। এখন ওকে আড়াল করলেও যদি ছেড়ে যায়?”
স্বচ্ছ সুহার মাথায় হাত বুলায়। শান্ত কন্ঠে বলে,
“ আচ্ছা, থাকুক ও।”
রাহা মাত্রই ফিরেছে।সুহা আর স্বচ্ছর বাচ্চাটাকেও দেখতে গিয়েছিল সে। মূলত সুহাকেই দেখতে গিয়েছিল। কিন্তু ওখানে যে আরো একটা আদর অপেক্ষার করছে তার জন্য তা সে জানতও না। রাহা মিষ্টিমতো বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে ইচ্ছেমতো আদর করেছে, চুমু দিয়েছে।তারপর আসার পথে ভেবে ভেবে এসেছো সেও শীঘ্রই একটা বাচ্চা নিয়ে নিবে। এই কারণে অগ্রীম একটা ডক্টরের এপয়েন্টমেন্ট ও নিয়েছে সে। তারপর যখন বাসায় ফিরল তখন রাত আটটা। বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইছে। যার দরুন সো যখন বাসায় ফিরল তখন সর্বপ্রথম তার শ্বাশুড়িই দরজা খুলল। চিন্তিতি স্বরে বলল,
“ বাইরে যা ঝড়ো হাওয়া! আমার তো চিন্তা হচ্ছিল। ”
রাহা হাসে অল্প। শ্বাশুড়ি হিসেবে সে যে মানুষটিকে পেয়েছে সে মানুষটা নিতান্তই দারুণ একটা মানুষ। রাহা মনে করে পৃথিবীর চমৎকার মানুষ।আর কারোর শ্বাশুড়ি কি বউমাকে রাত আটটায় বাসায় ফিরলে এভাবে চিন্তা করতে পারে? রাহা হেসে উত্তর করে। বলে,
“ আপুর বাচ্চাটা এত কিউট আম্মু। যে আসতেই মন চাইল না। ”
উনি হেসে বললেন,
“ তাই নাকি? বাচ্চা এত ভালো লাগে? ”
রাহা মুহুর্তেই উত্তর দেয়
“ তোমার কাছে শুনেছি উনারও বাচ্চা ভালো লাগে। সুতারাং এই বাসায় একটা বাচ্চা আসলে সবারই মন ভালো হয় কি বলো আম্মু?”
রোহানের আম্মু হাসে এবারে।বলে,
“ যা তো, চেঞ্জ করে আয় পাগল। ”
রাহা হেসে পা বাড়াল। যখন রুমে প্রবেশ করল ঠিক তখনই রোহান এল। ভ্রু বাঁকিয়ে বলে উঠল,
“ আমার আম্মুকে তো ভালোই হাত করে নিয়েছো। ”
রাহা ভ্রু৷ কুঁচকায়। জানতে চায়,
“আমার লাভ কি হাত করে? ”
রোহান বলে,
“ আজকাল আমার থেকে সে তোমায় বেশি চোখে হারায়। তোমায় বেশি ভালোবাসে।”
রাহা ঠোঁট বাঁকায় এবারে। বলে,
“ কারণ আমি আপনার থেকে বেশি মিষ্টি। আপনার মতো রুক্ষ্ম একটা মানুষকে ভালোবাসা যায় নাকি? ”
রোহান দাঁতে দাঁত চাপে। এক্ষুনিই বেলকনি দিয়ে সে দেখেছিল রাহাকে সাদ এগিয়ে দিয়ে গেছে। সে যদি রূক্ষ্ম মানুষ হয় তবে সাদ নরমশরম। এই কারণেই কি রাহা রোহানকে পছন্দ করে না? রোহান দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,
“ তাহলে কি সাদের মতো নরমশরম মানুষকে ভালোবাসা যায়? ”
রাহা এবারে বিরক্তি নিয়ে বলল,
“ সবকিছুতে সাদ ভাই আসে কোথায় থেকে? ”
বিনিময়ে রোহান প্রশ্ন ছুড়ে,
“ সাদ কেন তোমায় এগিয়ে দিল?”
“ রাত হয়ে গিয়েছিল, তার উপর একা ছিলাম। এগিয়ে দেওয়াটা কি অন্যায়?”
রোহান ফের দাঁতে দাঁত চাপে। বলে,
“ অবশ্যই অন্যায়। আমার কন্ট্যাক্ট নাম্বার কি ছিল না? আমাকে কি বলা যেত না এগিয়ে গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসা,র জন্য? ”
রাহা নিজেও রোহানকে মনে মনে পছন্দ করে। অন্তত বিয়ের পর এইকটা দিনে এত কাছ থেকে দেখে দেখে এমনিতেই এই লোকটার প্রতি তার অনুভূতি গাঢ় হয়েছে। শত হোক স্বামী তো তার। যদি তাকে সত্যিই নিয়ে আসত ত্হলে বোধহয় রাহাই সবচাইকে বেশি খুশি হতো। রাহা ছোটশ্বাম ফেলে শুধায়,
“ আপনিই বলেছিলেন আমরা একে অপরের জীবনে নাক গলাব না। সে হিসেবে আমার প্রয়োজনে যদি আপনাকে কল দিতাম তখন বিরক্ত হতেন না? ”
রোহান চিবিয়ে চিবিয়ে শুধাল,
“ নিজের বউয়ের সাথে অন্য কাউকে দেখার মতো বিরক্ত নিশ্চয় হতাম না? ”
রাহা এবারে হাসে। বলে,
“ আর ইউ জ্বেলাস মিঃ রোহান ফারাবী? ”
“ নো, নেভার। ”
রোহান এই উত্তরটাও চোয়াল শক্ত করেই দেয়। রাহা তাকায় রাগী চেহারাটার দিকে। টানটান হয়ে আছে।মনে হচ্ছে রাগী বাবু!সুন্দর লাগে রাহার। হেসে বলে,
“ আপনাকে রাগলে ভীষণ সুন্দর লাগে। প্রেমে পড়ার মতো সুন্দর। ”
“ আমি জানি আমি সুন্দর। ”
রাহা মুহুর্তেই উ্ত্তর করল,
“ মোটেই না, অতো বেশি সুন্দর না। তবে রাগলেন বলে একটু বেশি সুন্দর লাগছে। ”
“ তাই নাকি?”
রাহা তাকায়। হুট করেই কিছু মনে পড়েছে এমন ভঙ্গিতে বলে,
“ অবশ্যই। শুনুন, আজ আপুর কিউট বাচ্চাটা দেখে এলাম। কি সুন্দর চুপচাপ আলুথালু একটা বাচ্চা৷ আমিও এমন একটা বাচ্চা নিয়ে নিব। ভালো হবে না বলুন? ”
রোহান ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,
“ এডপ্ট করবে? ”
“ না।”
“ তাহলে? ”
“ বাচ্চা জম্ম দিব। ”
রোহান এবারে গুরুত্ব দিল না। যেভাবে বলছে যেন ও বলল আর বাচ্চা জম্ম দিয়ে দিল।এতই সহজ? রোহান তাকায়। বলে,
“ এই কয়েকদিন এমন বাচ্চা বাচ্চা করার কারণ? ”
রাহা মুহুর্তেই উচ্ছাস নিয়ে বলে,
“ আম্মু বলেছে একটা বাচ্চা নিতে।শুনেছি আপনিও বাচ্চা ভালোবাসেন। ধরুন আমাদের একটা বাচ্চা হলো, তখন আপনি অনেক বেশি খুশি হবেন কি? ”
“ হু?”
রাহা হঠাৎই যেন কিছু মনে করল। বেশ ছটফট স্বরেই বলল এবারে,
“ ডক্টরের এপয়েন্টমেন্ট নেওয়া আছেে।চলুন না, ডক্টরের সাথে কথা বলে বাচ্চা নেওয়ার প্রসেসটা শুরু করে ফেলি। ”
রোহান এবারে ভ্রু বাঁকাল। বাচ্চা জম্ম দেওয়ার প্রসেস শুরু করতে তাকে ডক্টরের কাছে কেন যেতে হবে?নাকি এতদিন একই ঘরে থেকেওএই মেয়েটাকে ছুঁয়েও দেখেনি বলে তার পুরুষত্ব নিয়ে সন্দেহ করছে? কোনটা? সে দাঁতে দাঁত চাপে। রেগে ভ্রু নাচিয়ে বলে,
“ আমি কি ফিজিক্যালি আনেবল যে বাচ্চা নেওয়ার প্রসেস শুরু করতে আমায় ডক্টরের সাথে কথা বলতে হবে ? নাকি তোমার মনে আমার পুরুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে? কোনটা?”
রাহা মুহুর্তে কপাল চাপড়ায়। বলর
প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১৬
“আরেহ দূর! আপনি তো আর আমাকে ভালোবাসেন না তাই না? আপনি আমায় নিয়ে সংসার করবেন এই আশাতে নিশ্চয় বিয়ে করেন নি? সে আশা নিয়ে করলে প্রথমেই আমায় শর্ত দিতেন না। তাছাড়া আপনি তো আপুকে ভালোবাসেন। সে কারণে আমাকে নিশ্চয় কখনো ভালোও বাসবেন না আমি জানি। তাই আমি ভেবেছি আমরা অন্য উপায়ে বাচ্চা নিতে পারি। ফিজিক্যালি ইনভলড না হলে কোন পুরুষের শুক্রানু দ্বারা কোন নারী ভ্রূণ গর্ভে ধারণ করতে পারে IUI,ICSI আরো বহু পদ্ধতি আছে মিঃ রোহান ফারাবী। এই কারণেই ডক্টরের সাথে কথা বলার জন্য বললাম।আমরাও ওভাবে বাচ্চা নিতে পারব বলুন? ”
রোহান থ হয়ে তাকাল। বাহবা দিয়ে বলে উঠল,
“ বাহ! অনেক এগিয়ে। ”