প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১৮
অলকানন্দা ঐন্দ্রি
কয়েকমাস পরের কোন এক বিষন্ন সন্ধ্যা। ছুটি মাত্রই বন্ধুদের সাথে বাসায় ফিরেছিল। তখন সেখানে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের শুরু বোধহয়। ছুটির পরণে লং একটা শার্ট আর স্কার্ট। গলায় একটা জর্জেট ওড়না প্যাঁচানো।চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। ছুটিকে ক্লান্তই দেখালো কিছুটা। উইলি আর এলিনার সাথে কথা বলে যখন নিজের রুমে গেল তখন আলো না জ্বালিয়েই সর্বপ্রথম ছুটি বিছানাতেই ঝাপিয়ে পড়ল। এতই ক্লান্ত যে তার আর এক মুহুর্তও চোখ খুলে রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে না যেন৷ ছুটি মিনিট পাঁচ ওভাবেই চোখ বুঝে পড়ে থাকে।
পরক্ষণে না চাইতেও সে উঠে বসে। গলা থেকে ওড়নাটা সরিয়ে একপাশে অবহেলায় ছুড়ে ফেলে আলো জ্বালাতে নিলেই কেউ একজন তার হাত চেপে ধরল শক্ত করেই। মুহুর্তেই নিজের দিকে টেনে নিল এক ঝটকায়। ছুটি ভয়ে ঢোক গিলে। চিৎকার করতে যাবে নেবে সাহস ও পায়না। গলা দিয়ে স্বর আসে না যেন। পরমুহুর্তেই যখন লোকটার শরীরের পরিচিত ঘ্রান নাকে আসে বুঝতে পারে এটা তারই প্রিয় পুরুষ, আবির। ছুটি এবারে সাহস পায়। ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ায়। ফের হেঁচকা টানেই ছুটিকে নিজের সামনে আনল আবির। দূরত্ব কয়েক ইঞ্চি কেবল। অতঃপর ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে এক হাতে খিচে ধরল ছুটির কোমড়। অপর হাতে ছুটির গলায় আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে বলল,
“ তো ম্যাম, অনেক তো হলো লুকোচুরি খেলা। অনেক তো হলো দূরে দূরে থাকা।তারপর বলুন, সেদিন ঐ ছেলেটার গলায় কোন জায়গায় না লাভ বাইট দেখিয়েছেন? আমি খুবই ডেস্পারেট আপনার গলায় তেমন একটা লাভ বাইট বসানোর জন্য৷ ”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
ছুটি চোখ ছোট ছোট করে তাকায় কেবল। শরীর কাঁপছে তার। শ্বাস প্রশ্বাস ঘন হচ্ছে এত দিন পর এই পুরুষটার সংস্পর্শে এসে। ছুটি বারবার শ্বাস ফেলে। চোখেমুখে জেদের ছাপ নিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই আবির মুখ নামাল তার গলায়। নিজের পুরু ওষ্ঠের ছোঁয়া ওর গলায় দিতে দিতেই হঠাৎ গলার বাম পাশটায় যত্নসমেত কাঁমড় বসাল। কাঁমড়ের দৃঢ়তায় এতটাই যে ছুটি দাঁতে দাঁত খিচে চোখ বুঝে। হঠাৎই দুই হাতে ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইল আবিরকে। কিন্তু আবিরকে সরানো অতো সহজ বুঝি? আবির মুখ উঠিয়ে হাসে এবারে। এক হাতে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে অন্য হাতে ছুটির সেই কামড় দেওয়া জায়গায়টায় হাত বুলায়। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
“ এটা তোর শাস্তি। তোর মুখ দিয়ে অন্য ছেলের গলায় লাভবাইট দেওয়ার কথাটা বের হওয়ার জন্য। ”
ছুটি তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় এবারে। ক্ষ্রিপ্ত চাহনিতে বলে,
“ শাস্তি দেওয়ার অধিকার কেবল আপনারই আছে? শুধু আপনিই সারাজীবন আমার উপর অধিকার খাটাতে পারবেন? নিজের যা ইচ্ছে তাই করতে পারবেন? আমি কি? আমি কিছু না? ”
ছুটি কথাগুলো বলতে বলতে একপ্রকার কেঁদে ফেলল৷ চোখ টলমল করে। লাল টকটকে বর্ণ ধারণ করে চোখ৷ আবির তা দেখেই শান্তস্বরে শুধাল,
“ যত অভিযোগ, অভিমান সব ভাঙ্গাব। তোর সব শাস্তি মাথা পেতে নিব। কিন্তু কান্না করবি না, মানব না আমি। ”
ছুটি তখন রাগে জেদে ক্ষুদ্ধ। বলে,
“ একশোবার কান্না করব। আপনার কথা আমি মানব কেন? কে আপনি হু?”
আবির এবারে ছুটির থুতনি তুলে ধরে। বলে উঠে,
“ তোর জীবনের অলিখিত মালিক আমি। যদি কথা না শুনিস তো সোজা কিডন্যাপ করে নিজের কাছে বন্দি করে রাখব৷ কান্না করলেই ভালোবেসে শোধ করে দিব। ”
ছুটি চোখ খিচে। যেন সে সহ্য করতে পারে না আবিরের ছোঁয়া। কপাল কুঁচকে বলে,
“ দূরে সরুন বলে রাখছি। ”
আবির সরল না। উল্টো আরেকটু চেপে দাঁড়িয়ে বলল,
“ তুই বললেই হলো? এতদিন পর বউ এর কাছে এসেছি আমি। আর তুই বলছিস এখনও দূরে দূরে থাকতে? ”
ছুটি তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসে এবারে। বলে,
“ বাহ! যখন অবহেলা করলেন? খোঁজ নিলেন না? কথা বললেন না আমার সাথে? তখন বুঝি কাছে কাছে থাকার ইচ্ছে ছিল আপনার? ”
আবির ছোটশ্বাস টানে। উত্তরে বলে,
“ এই একটায় কারণে আজ এত কাল তোর থেকে দূরে দূরে আছি। এতোটা কষ্ট সহে এসেছি। এতোটা যন্ত্রনা পুষে রেখেছি৷ এই একটা কারণেই। এইজন্যই তোর জন্য সবকিছু রেডি করে নিয়ে এসেছি। সব প্রমাণ হাজির করেছি। এবার অন্তত এই অভিমাণ থেকে মুক্তি দে। ”
ছুটি তীক্ষ্ন চাহনিতে তাকায়। মুহুর্তেই বলে,
“ আমার আপনাকে সহ্য হচ্ছে না। আমাকে একটু একা থাকতে দিন প্লিজ। একটু বের হয়ে যান এই রুম থেকে। দয়া করুন। ”
আবির এবারে মনোযোগ দিয়েই তাকায় ছুটির দৃষ্টির দিকে। যে দৃষ্টিতে সত্যিই উপেক্ষা, অনাগ্রহ, ঘৃণা!আবির ভয় পায়। খব বেশি দেরি হয়ে গেল কি? সময় পেরিয়ে গেল? বলল,
“ এতোটাই অসহ্য ঠেকছে আজকাল আমাকে? ”
ছুটি উত্তর করল,
“ হ্যাঁ। ”
আবির দূরে সরে দাঁড়ায়। অবিশ্বাস্য স্বরে বলে,
“ তুই আমায় ঘৃণা করছিস ছুটি? ”
ছুটি কাঁদতে কাঁদতে প্যাচপ্যাচে স্বরে বলে,
“ আমি আমাকেই ঘৃণা করি, আপনাকে ভালোবাসার বিষয়টাকেই আমি ঘৃণা করি এখন। ”
আবির কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে থাকে। কি করবে বুঝে উঠে না যেন। বুকের ভেতর টের পেল অদ্ভুত যন্ত্রনা। আবির স্থির দাঁড়িয়ে থেকে অবিশ্বাস্য চাহনিতে ছুটির দিকে তাকায়। বলে,
“ ঠিকাছে। চললাম, টেইক কেয়ার। ”
এটুকু বলেই আবির বের হয়ে যায়। ছুটি এবারে শব্দ করেই কেঁদে ফেলে। অবহেলায় চশমাটা ছুড়ে ফেলে অন্যদিকে। নিজের চুলগুলো সে নিজের হাতেই খামচে ধরে। মুহুর্তেই দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়ে সে। অনেকটা সময় সে কাঁদে। অনেকটা সময়ই অন্ধকারে বসে থেকে সে নিশ্চুপ কেঁদে অতঃপর একটা সময় পর নিজেকে স্থির করল। উঠে বসে। গিয়ে রুমের দরজা অফ করে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় সে। অতঃপর দীর্ঘ একটা ঘুম দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাতেই চোখে পড়ে নিজের ল্যাপটপের উপরে একটা গিফ্টবক্স। ছুটি ভ্রু কুঁচকায়। এই গিফ্টবক্স টা কার? কোথায় থেকেই এল? আবির রাখল? ছুটি উঠে বসে। অতি ক্লান্তিতে গিফ্টবক্সটার প্রতি অতোটা আগ্রহ না দেখিয়ে নিজের কাপড় নিল প্রথমে, অতঃপর শাওয়ার নেওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হলো।
তারপর আধঘন্টা সময় শাওয়ার সারল সে। ভেজা চুলগুলো তোয়ালেতে জড়িয়ে নিয়ে আগের মতোই একটা লং শার্ট আর স্কার্ট পরে বের হলো। দ্রুত হাতে এক মগ কফি করে গিফ্টবক্সটা খুলে নিল সে। অতঃপর যত্ন করেই তা খুলে৷ চোখে পড়ে কয়েকটা কাঁচের চুড়ি। ছুটি ভ্রু কুঁচকায়। কাঁচের চুড়ি? তাও এদেশে? কে আর গিফ্ট করবে? আবির? আনমনে নামটা ভেবেই ছুটি ছোটশ্বাস ফেলে। বুঝতে পারে এটা আবিরই। আবিরের সাথে তো মাস দুয়েক হলো কথাই হয়নি তার। খোঁজও পায়নি এই দুয়েক মাস। এমনকি ছোটনও জানিয়েছে সে নাকি জানে না। ছুটি ছোটশ্বাস টানে। এই দুয়েকমাস যোগাযোগের পথই রাখল না আর হঠাৎ এসে এসব গিফ্ট, আকস্মিক দেখা দেওয়া মানে কি? ছুটি এবারে আবিরের প্রতি জমা ক্রোধ, অভিমান, অভিযোগ থেকে বিড়বিড় স্বরে বলে,
“ আপনি খুব স্বার্থপর! খুব। কখনো আমার দিকটা ভাবেনই নি।খুব স্বার্থপর একটা লোক আপনি। ”
কথাটুকু বলেই সে হতাশ শ্বাস ফেলে। পুনরায় আরো একটা গিফ্ট বক্স পাওয়া গেল টেবিলের নিচে। ছুটি ভ্রু কুঁচকে তাও নেয়। খুলে দেখে একজোড়া নুপূর। কিছুটা বিস্ময় নিয়ে ছুটি যখন উঠবে তখনই আবারও টেবিলের বাম পাশটাতে সে আরো একটা গিফ্ট বক্স পেল। যেটাতে আছে লাল টকটকে একটা শাড়ি। ফের আরো দুটো গিফ্ট বক্স। একটাতে কানের দুল, অপরটাতে আলতা আর কাজল।
প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১৭
ছুটি ছোটশ্বাস ফেলে। তার অবর্তমানে এই রুমে ডুকতে পারার মতো কেবল উইলি আর এলিনাই আছে। তারাই যে আবিরকে সাহায্য করেছেেতা বুঝতে আর বাকি থাকে না তার। কিন্তু কিভাবে?আবিরের সাথে যোগাযোগ হলো কিভাবে ওদের? আবিরই বা ওর এড্রেস পেল কিভাবে? ছুটি ভ্রু কুঁচকায়। রুম থেকে বেরিয়ে পা বাড়ায় এলিনা আর উইলির কাছে জিজ্ঞেস করতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।