প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৩

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৩
অলকানন্দা ঐন্দ্রি

সাদ যখন গম্ভীর মুখে সেভাবেই সিয়ার চলে যাওয়া দেখছিল তখনই তার রুমম্যাটটা একদম তার পাশে এসে দাঁড়াল। মুখে একগাধা রসিকতা। দৃষ্টিও বুঝাচ্ছে খুব একটা সুবিধার লোক সে নয়। ছেলেটা সাদকে হাতের কনুই দিয়ে ইঙ্গিত করল। ভ্রু নাচিয়ে বড্ড রসিকতা নিয়ে বলল,
“ কে মামা? বললে না তো। ”
সাদের এমনিতেই এই ছেলেটার উপর র্গ জমেছে সিয়ার প্রতি এই ছেলের তখনকার দৃষ্টি দেখে। ফের প্রশ্ন করাতে ইচ্ছে হলো দুই গালে দুটো থাপ্পড় দিক। কিন্তু ভদ্রতা জ্ঞানে পারল না। শুধু শক্তস্বরে উত্তর করল,

“ স্টুডেন্ট। ”
ছেলেটা যেন বিশ্বাস করল না। পুণরায় শুধাল,
“ শুধু স্টুডেন্ট? কই? স্যার ট্যার তো কিছু বলল না। ”
এবারে সাদ ছোটশ্বাস ফেলে। জানায়,
“ বন্ধুর ননদ ও হয়, এই কারণে সাদ ভাই ডাকে।”
ছেলেটা এবার হাসল কেমন করে। বলল,
“ আর কিছুই নয়? ”
“ না। ”
ছেলেটা বড্ড আগ্রহ নিয়ে এবারে বলে উঠল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ তাহলে আমার সাথে কিছু করে দাও না। সুন্দর তো দেখতে মেয়েটা। আর কতকাল একা থাকব বলো? ”
সাদের সত্যিই এই পর্যায়ে রাগে নাক মুখ লাল হয়ে আসে। ছেলেটার প্রতি রাগ দেখাতে না পেরে সব জমা হয় সিয়ার প্রতি। ওকে কে বলেছিল একা একা একটা ব্যাচেলর বাসায় চলে আসতে? কে বলেছিল? বেশি বড় হয়ে গিয়েছে সে?সে গম্ভীর গলায় উত্তর করল,
“ আমি একটু আসছি। ”
অতঃপর পা বাড়াল। ধুপধাপ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এল। তারপর পা চালিয়ে গেইট পেরুতেই দেখা মিলল সিয়ার। দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো রিক্সার জন্যই। সাদও গিয়ে দাঁড়াল তার পিছনেই। সিয়া হয়তো খেয়াল করল না। তবে অনেকটা সময় পর যখন একটার রিক্সার দেখা মিলল তখনই সে গলা উঁচিয়ে বলল,

“ এই মামা? যাবেন? ”
রিক্সাটা সাদের ইশারা পেয়ে সামনে এসে দাঁড়াল৷ সিয়া ততক্ষনে কন্ঠস্বর শুনে ফিরে তাকিয়েছে। চোখের দৃষ্টিতে অভিমান তার। সাদ সেসব পরোয়া করল না যেন। গম্ভীর গলায় জানাল,
“ উঠো। ”
সিয়া উঠল না। তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। একটু আগেই তাড়িয়ে দিয়েছে। আর এখন ভদ্রতা দেখাচ্ছে? সিয়া যখন নিশ্চুপ তখন সাদ আবারও বলল,
“ কি হলো? উঠো রিক্সায়। ”
সিয়া শান্ত গলায় জানাল,
“ উঠব না। ”
“ কি করবে তাহলে? ”

“ এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব। এই রাস্তা তো আর আপনার বাসার আওতায় পড়ে না তাই না?তাই এখান থেকে তাড়ানোর অধিকার ও আপনার নেই। ”
সাদ এই পর্যায়ে রক্তিম চোখজোড়া নিয়ে তাকাল সিয়ার দিকে। এমনিতেই রাগ হচ্ছে তার। অযথাই রাগ হচ্ছে। সিয়া কি বুঝতে পারছে না? তবুও রাগ বাড়াচ্ছে কেন? সাদ গলা শক্ত করে বলল,
“ রিক্সায় উঠে বাসায় গিয়ে কল করে জানাবে। আর যদি না উঠো তবে তোমার সাথে আজকের পর আমার আর কোন যোগাযোগ হবে না সিয়া। ”
সিয়ার চোখ টলমল করল কেমন। তবে নিজেকে সামলে নিতে পারল সে। বলল,

“ আপনি আমার দুর্বলতাকে কাজে লাগাচ্ছেন?”
“ লাগালাম। ”
সিয়ার অভিমান তখন আরো গাঢ় হয়। ধীরগতিতে রিক্সায় উঠে বসল সে। জানাল,
“ আপনি খব নিষ্ঠুর সাদ ভাই! খুব নিষ্ঠুর! ”
সাদ বিনিময়ে শুধায়,
“ আর কখনো এখানে আসবে না। কথাটা মনে থাকে যেন হুহ?”
সিয়া উত্তর করে না। অভিমান জমে জমে পাহাড়সম অভিমান তার মনেতে জমা হয়েছে।সাদ কি তা জানে?বুঝে? কতোটা কষ্ট এই মেয়েটা বুকে আগলে রেখেছে?

রোহানের হাতে এক প্ল্যাট খাবার। রাহা ততক্ষনে গোসল সেরে এসেছে।চুলগুলো ভেজা তার। পরনে একটা সুতির গোল জামা। রোহান সেদিক পানে তাকিয়েই রাহার স্নিগ্ধ মুখখানক দুয়েক সেকেন্ড পরখ করে। অতঃপর খাবারের প্ল্যাটটারেখে বলে,
“ খেয়ে নাও। আম্মু পাঠিয়েছে।”
রাহা তাকাল। হুট করেই মাথা ধরেছে তার। চোখ জ্বালা করছে। শরীরটাও উষ্ণ অনুভব হচ্ছে। বুঝে উঠে না জ্বর নেমেছে কিনা। তবুও এগিয়ে এল। বলল,
“ আপনি? ”
“ খেয়ে নিয়েছি। ”

এরপর আর কথা হলো না। রাহা খাবার প্ল্যাট নিতে নিতেই রোহান বিছানার এককোণ দখল করে শুঁয়ে পড়েছে। রাহা তা দেখে। খাওয়ার চেষ্টা করে। অথচ তেমন একটা খেতে সে পারল না। বুঝতে পারল বৃষ্টিতে ভেজার ফল ইতোমধ্যেই শরীরে দেখা দিয়েছে। সে সরু শ্বাস টেনে বিছানার ধারে গিয়ে দাঁড়াল। প্রায় অর্ধেকটা রোহানের দখলে। বাকি অর্ধেকটা রাহার জন্য রাখা হয়েছে৷ কিন্তু তবুও রাহার সংকোচ হয়ে৷ যদি গড়িয়ে ঐ পুরুষের উপর গিয়ে পড়ে? কিংবা হাত পা তুলে দেয়? রাহা উশখুঁশ করে৷ রোহান ততক্ষনে সরু চোখে তাকিয়েছে৷ রাহাকে এমন করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,

“ কি সমস্যা? এমন করছো কেন? ”
রাহা ছটফট বলল,
” আপনি আরও ওপাশে যান। ঘুমাব। ”
রোহান বাকি অর্ধেকটা খালি জায়গা পরখ করল। বলা যায় তার চাইতেও বেশি জায়গা। বলল,
“ এটুকু কি যথেষ্ট নয়? ”
রাহা উত্তর করল,
”না, যথেষ্ট নয়। দেখা গেল ঘুমের মধ্যে আমি আপনার শরীরে হাত পা তুলে দিলাম। তখন আপনি ও বিরক্ত হবেন। ”
রোহানের হাসি পায় এবারে। তবুও হাসে না। শুধায়,

“ যদি বিরক্ত না হই?”
“ তবুও আমার অস্বস্তি হবে।আপনি আরো ওদিক চেপে যান। ”
রোহান ছোটশ্বাস টানে। অতঃপর আরো এদিকে চেপে আসে। বলে,
“ এবার হবে? ঘুমাও। অনেক রাত হয়েছে। ”
রাহা মাথা নাড়ায়। একপাশে শুঁয়ে চোখ বুঝে। আর রোহান সেই চোখ বুঝার মুহুর্তটাই পরখ করে। বাচ্চা বাচ্চা দেখাচ্ছে। মনে মনে আওড়ায়, মেয়েটা আসলেই খুব একটা খারাপ হবে না বউ হিসেবে। এই যে অল্প সময়েই তার মনে অনুভূতি জাগিয়ে দিল এটাই তো তার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হয়ে ঠেকছে এখন।

আধঘন্টা যাবৎ ছুটিরা আবিরের অ্যাপার্টম্যান্টটায় পৌঁছেছে। আবির পকেটে হাত রেখে সে কখন থেকেই তাকিয়ে আছে ছুটির দিকে। ছুটির ধ্যান জ্ঞান তখন তার রুমের দিকে। এপাশ ওপাশ তাকাতে তাকাতে সে বলল,
“ কবে আসলেন এখানে?”
আবির এতোটা সময় পর এমন একটা প্রশ্ন পেয়ে অসন্তোষ দৃষ্টিতে তাকায়৷ মুখে উত্তর দেয়,
” অবশ্যই আজ।”
ছুটি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
” এরমধ্যে সব ঠিকঠাক? ”
” এর আগেই সব ঠিকঠাক। তোর বন্ধুবান্ধব, আমার পরিচিত এক বন্ধু। সব মিলিয়ে আমার অসুবিধা হয়নি কিছুতেই। ”

ছুটি এতক্ষন একটা রুমেই অবস্থান করেছে। অপর রুমটা দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তবে সে রুমটা লক করা৷ ছুটি শুধায়,
“ ওই রুমটা দেখব? ”
আবির মুহুর্তেই সতর্ক হয়ে শুধায়,
” না। ”
” কেন? ”
আবির এবারে মশকারা করেই শুধায়,
“ ওই রুমে আমার আরেকটা বউ রাখব তাই।”
ছুটি এই পর্যায়ে চোখ ছোট ছোট করে প্রশ্ন ছুড়ে,
” আরেকটা বিয়ে করেছেন? ”
বোকা ছুটি! আবির যেটা বলে সেটাই বিশ্বাস করতে হবে কেন এই মেয়ের? আবির ভ্রু নাচিয়ে বলে,

” সে কি! তুই জানিস না? দাওয়াত পাস নি?”
“ আবির ভ…”
আবির এই পর্যায়ে দাঁতে দাঁত চাপে। বউয়ের মুখে আর একবারও ভাই ডাক শুনতে ইচ্ছুক নয় সে৷ দ্রুত বলে,
“ এ্যাঁই! ভাই বলবি তো এখন আস্ত থাকবি না। ”
ছুটি ছোট করে বলে,
” ঠিকাছে বলব না। ”
আবির শ্বাস ফেলে। ছুটিকে গিফ্ট করা সেই শাড়ি, সাঁজের অংশ হিসেবে সব কিছুই ছুটির হাতে তুলে দিয়ে বলে,
“ এগুলো নে, সোজা তৈরি হয়ে বসে থাকবি।আমি আর অপেক্ষা করতে চাইছি না। বহুকাল তোকে শাড়িতে দেখি না বোকাপাখি। ”

“ এখন এতরাতে শাড়ি পরব ? এর চেয়ে কাল সকালে পরি? এখন আপনার বাসাটা ঘুরে দেখি। ”
আবির মুহুর্তেই জানাল,
“ জ্বী না, বাসা ঘুরে দেখার কোন প্রয়োজনীয়তা আমি দেখছি না। আপাতত আপনাকে পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখছি। এখন বলুন, আপনি কি এতকাল পর আমার হতে রাজি? আমার আকুল আকাঙ্খা পূরণে সাধ দিবেন? ”
ছুটির কান গরম হয়ে উঠে এবারে। লজ্জায় গাল উষ্ণ লাগে। আবির আবারো বলে,
“ আমাকে কি এভাবেই অপেক্ষা করাবি আজীবন? নাকি বুঝে গিয়েছিস যে এতকালের অপেক্ষার শাস্তি দৃঢ় হবে? তাই ভয় পেয়ে এসব করে বেড়াচ্ছিস? ”
ছুটির গলা কাঁপে এতকাল পর নির্দিষ্ট পুরুষটির আকাঙ্খা পেয়ে। বলে,
“ জ্বী? ”

আবির ভ্রু বাঁকায়। বুকে হাত গুঁজে সেভাবেই বলে,
“ বুঝিস নি? সোজাসুজি বাসায় বললে,তুই কি আমায় আমার জীবনে দ্বিতীয় বাসর উপভোগ করতে দিবি? প্লিজ না বলিস না বোকাপাখি… আমি জানি তুই নিজেও অপেক্ষায় আছিস। ”
ছুটি এবারেও উত্তর করে না। আবির তা দেখে শুধায়,
“এভাবে চুপচাপ থাকলে থাকতে পারিস। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক৷ আমি চেষ্টা করতেই পারি শাড়ি পরানোর। ”
এই বলেই আবির শাড়িটা হাতে নিল৷ ছুটির হাতে দিল ব্লাউজ এবং পেটিকোড।ছুটিকে নিরব চেয়ে থাকতে দেখে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

“ তুই কি চাইছিস এখন এসবও তোকে আমি পরিয়ে দিব? ছিঃ ছুটি! ”
ছুটি এবারে কোনরকমে মুখ খুলে। রুদ্ধ হয়ে আসা স্বরটায় কোনরকমে বলে উঠে,
” শাড়িটা দিন। আমি পরে নিতে পারব। ”
আবির মুহুর্তেই না জানিয়ে বলল,
“ পরে নিতে পারলে এতক্ষন পরিসনি কেন? এখন আমি পরাব বলেছি যেহেতু আমিই পরাব। জলদি এসব চেঞ্জ করে আসবি। সময় দুই মিনিট । ”
ছুটি ফের বলতে নিল,

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২২

“ আমি সত্যিই পা…”
আবির শুনল না। সেভাবেই স্থির তাকিয়ে বলে উঠল,
“ শুনতে ইন্টারেস্টেড নই। আপাতত নিজের বউকে নিজে সাজানোর ইচ্ছা হয়েছে। তাই পূরণ করব। গো ফার্স্ট। ”

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৪