প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৪

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৪
অলকানন্দা ঐন্দ্রি

আবির শাড়ি পরাতে জানে না৷ তবুও চেষ্টা চালাতে অপরাধ কি? নিজেরই তো বউ। সে কথা মনে নিয়েই সে শাড়ি হাতে অপেক্ষা করল। মোবাইলে টিউটোরিয়াল দেখল।অতঃপর একটা সময় পর ছুটি যখন উঁশখুশ করতে করতে বের হলো তখন বাঁকা চাহনিতে চাইল সে। ওদেশের মাটিতে তখন মোটামুটি রকমের ঠান্ডা। রুম হিটারের কারণে যা তেমন বুঝা যায় না। তবে ছুটির হাত পা তবুও ঠান্ডা হয়ে আসে। হিম স্রোত বয়ে যায় আবিরকে এগোতে দেখের।পরনে কেবল ব্লাউজ এবং পেটিকোড। মসৃন পেটের অংশটা দৃশ্যমান ঠেকছে । আবির হাসে ছুটির অবস্থা দেখে। এগিয়ে ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,

“ রেডি আপনি শাড়ি পরার জন্য মিসেস ছুটি? ”
ছুটি মাথা তুলে তাকায়। কোনরকমে শুকনো গলায় শুধাতে নিল কিছু। কিন্তু পারল না। আজ এতকাল পর পুরুষটার দৃষ্টি দেখে সে নাজেহাল হতে বাধ্য। বুকের দ্রিমদ্রিম আওয়াজ উঠছে যেন। মুহুর্তেই বুঝে উঠে পুরুষ মনের আকাঙ্খা! আবির ঠোঁট এলিয়ে হাসে। এক হাত দিয়ে ছুটির কোমড় খিচে ধরে এগিয়ে আনে নিজের সম্মুখে। অতঃপর শাড়ির এককোণা গুঁজে নিল ছুটির কোমড় বরাবর। পেঁচিয়ে পরানোর চেষ্টা চালাতে চালাতে বলে,
“ তুই যদি চাস তবে সারারাত এভাবেই শাড়ি না পরেই আমার সামনে বসে থাকতে পারিস। আমি কিছু মনে করব না। ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কথাটা বলতে বলতে স্পষ্টই আবিরের মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠেে।দৃষ্টিতে অন্যকিছু বুঝায়। ছুটি তা দেখে হাঁসফাঁস করে উঠে যেন৷ আড়ষ্ট স্বরে জানায়,
“ আপনি আগের থেকে বেহায়া হয়ে গিয়েছেন। ”
আবির ভ্রু বাঁকায় এবারে। ক্রুর হেসে বলে,
“ আগে বুঝি ভদ্র ছিলাম? অথচ তোর সাথে তো আমার বহু অভদ্রতার প্রমাণ আছে। তুই ভুলে গিয়েছিস? ”
ছুটির কান গরম হয়ে উঠে। লজ্জায় রক্তিম হয়ে উঠে মুখ। এই লোক এমন কেন? এমন কথাও বা কোথায় থেকে শিখেছে। ছুটি সে লজ্জা আড়াল করতে কোনভাবে না জানার ভান করে উত্তর করে ছোটস্বরে,

“ ভুলে গিয়েছি। ”
আবির হাসে এবারেও। ছুটির শাড়ির কুঁচিটা ধরতে ধরতে বলে,
“ সমস্যা নেই৷ নতুন করে মনে করাব সব আবার। খালি একটু ওয়েট কর। ”
ছুটি আর তাকাল না। উত্তরও করল না। শুধু জানে সামনের পুরুষটা আজ তাকে নির্ঘাত লজ্জায় ডুবিয়ে মারার প্ল্যান করেছে। আবির ছুটির অবস্থা দেখে হাসে। খুব যত্ন নিয়ে ছুটির কুঁচি করল। যদিও খুব একটা পারল না সে। তবুও যেটা পারল ওটাই যখন গুঁজতে নিব ছুটির পেটের দিকে ঠিক তখনই ছুটি দূরে সরে দাঁড়ায়৷ বলে উঠে,
“শাড়ির কুঁচিটা আমিই গুঁজতে পারব। দিন।”

আবির ভ্রু বাঁকায়। এমন ভাবো দূরে সরে যাওয়ার মানে কি? আবির কি তাকে আগে ছোঁয়নি? বলে,
“ এমন করছিস যেন তোর আর আমার নতুন বিয়ে হয়েছে। এটা আমাদের ফার্স্ট নাইট। তোকে এর আগে আমি আর ছুঁইনি কখনো। অথচ তোর সমস্ত শরীরেই… ”
ছুটি জানে এই মুহুর্তে এই মহান পুরুষ কি বলতে পারে। তাই দ্রুত কথা ঘুরানোর উদ্দেশ্যে বলে উঠল সে,
“আপনি কি আমায় ছোঁয়ার জন্যই শাড়ি পরাতে চেয়েছেন?আধৌ শাড়ি পরাতে পারেন? ”
আবির এমন উত্তরে যেন বড়ই ক্ষুদ্ধ হলো। বিদ্বেষ নিয়ে বলল,
“ ছিঃ! তোকে ছোঁয়ার জন্য এখন আমায় শাড়ি পরানোর আশ্রয় নিতে হবে? এত খারাপ দিন এসেছে আবিরের? যে নিজের বউকে ছুঁতে সে শাড়ির পরানোর ছল অবলম্বন করবে? ”

“ তাহলে? ”
আবির ফের তাকায়। একহাতে কোমড় টেনে নিজের আর ছুটির মাঝে আর এক ইঞ্চিও দূরত্ব সে অবশিষ্ট রাখল না। মুখ নামিয়ে ঠোঁট ছোঁয়াল ছুটির গলায়৷ অতঃপর সেভাবেই গলাতে মুখ ডুবিয়ে বলে উঠে,
“ তোকে ছুঁতে আমার এক সেকেন্ডও সময় নিতে হবে না বোকাপাখি৷কোন অযুহাতও না। ”
ছুটি সামলাতে পারল না এবারে আবিরের অবাধ্য ছোঁয়া। কেমন নাজেহাল দেখাল। আবিরের হাতের কুঁচিগুলো তখন ফ্লোরেই গড়াগড়ি গেল। অসম্পূর্ণ শাড়ি পরানোআর পুরুষটির অধরের উষ্ণ ছোঁয়া। দুটোতে হাঁসফাঁস করতে করতে সে কোনরকমে বলে,

“ শাড়ি ঠিক করব। ছাড়ুন। ”
আবির ছাড়ল না যেন। বরং ছুটির প্রতি আরো অগ্রসর হতে নিল তার প্রেমস্পর্শ। ঘাঢ় স্বরে জানাল,
“ ছাড়লাম না। ”
এইটুকু বলেই সন্ধ্যায় গলায় যে জায়গায়টায় কামড় বসিয়েছিল ঠিক সেখানেই ফের কাঁমড় বসাল। ছুটি তখন দাঁত খিচে নেয়। চোখ বুঝে এক হাতে খামচে আঁকড়ে ধরে আবিরের চুল। সেভাবেই বলতে নিল,
“ আবি….”

ছুটি বলতে পারল না। তার আগেই আবিরের ঠোঁটজোড়া গলা ছেড়ে কানের দিকে এল। ফিসফিস স্বরে জানাল,
“ আমার বোধহয় তোকে প্রয়োজন এইমুহুর্তে। নিজের উপর কন্ট্রোল রাখতে চাইছি না আপাতত। ইফ ইউ ওয়ান্ট, আই ক্যান কন্টিনিউ দিজ। ”
ছুটি উত্তর করে না। তখন হিম স্রোতের ন্যায় এক অনুভূতি তার শিরদাঁড়া বেয়ে চলেছে যেন। লোমকূপ অব্দি কেঁপে উঠে এই পুরুষের কন্ঠ আর কথাতে৷ আবির হাতে। ফের বলে,
“ ডু ইউ ওয়ান্ট মি টু? ”
ছুটি এই পর্যায়ে চোখ মেলে তাকায়। তবে সরাসরি দৃষ্টি ফেলতে পারে না এই পুরুষটির চাহনিতে। এই চাহনি তাকে এক সেকেন্ডেই কাবু করতে সক্ষম। ছুটি উত্তর দিতে পারে না। তবে এক হাত আবিরের চুলে খামচে রেখে অপর হাত আবার আবিরের ঘাড়ে রেখে যখন শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তখন বোধহয় আবির উত্তর পেয়ে গেল। মুখে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে সে ছুটির দিকে তাকায়। বলে,
“ শাড়ি পরানোর প্রতিশ্রুত আজ বাকি থাক।তোকে পাওয়ার আকাঙ্খা যে বড্ড তীব্র! ”

রাহার শরীর উষ্ণ। জ্বর নেমেছে শরীরে। যার দরুন ঘুম ও আসছে না তীব্র মাথা ব্যাথায় আর শরীর ব্যাথায়।তবুও চোখ বুঝে ঘুমানোর চেষ্টা করে সে। কিন্তু ঘুম আসে না। হাঁসফাঁশ করে । একবার এদিক তো একবার ওদিক ঘুরে।রুমের মৃদু হলদেটে আলোতে কতক্ষন রোহানকে ঘুমাতে দেখে নিশ্চুপ তাকিয়ে থাকে।চুল গুলো পড়ে আছে কপালে এলোমেলো হয়ে।রাহা তাকিয়ে পরখ করে।ছেলেটাকে কি দারুণ লাগে ঘুমালে৷ আচ্ছা, এত তাড়াতাড়ি ঘুম পেয়ে গেল এই ছেলের? কই তার তো এতক্ষন যাবৎ চোখ বুঝে থেকেও ঘুম পেল না৷ রাহা বুঝে উঠে না,এই ছেলেটাকে তার এত মনে ধরেছে কেন? নির্দিষ্ট কোন কারণ তো নেই৷ তবুও এই ছেলেটাকে তার কেন জানি না ভালো লাগে। রাহা হাত এগোল। জ্বর শরীরেই রোহানের চুলগুলোতে হাত বুলাতে লাগল আলতো হাতে। রোহান এবারে চোখ মেলে তাকায়। এতক্ষন যে ঘুমিয়েছিল এমন ও নয়। ঘুমানোর ভান করছিল। কারণ এর আগের সময়টায় সে চোখ বুঝে থাকা রাহাকে পরখ করছিল। যখন রাহাকে চোখ খুলতে দেখা গেল তখনই সে চোখ বুঝেছিল। রোহান মনে মনে কিঞ্চিৎ হাসে তার এই গোপণ প্রেমে পড়া নিয়ে।সত্যিই কি সে এই মেয়েটার প্রেমে পড়েছে? নয়তো এসব লুকোচুরির কোন প্রশ্ন আসে? রোহান তাকায়। তার চুলে হাত বুলাতে দেখে ঠোঁট বাকিয়ে হেসে শুধায়,

“ কি ব্যাপার নবনী? না ঘুমিয়ে আমার চুলে হাত বুলাচ্ছো?”
রাহা ভ্রু বাঁকিয়ে তাকায়। অন্যদিনের মতো ছটফট চঞ্চল গলায় উত্তর করল না৷ তবে ছোটশ্বাস ফেলে শান্ত স্বরে জানাল,
“ আপনার চুলগুলো কপালে পরে ছিল। ভাবলাম সরিয়ে দিই। ”
রোহান বোধহয় এইটুকু উত্তরে সন্তুষ্ট বোধ করতে পারল না। জানাল,
“ শুধু এইটুকুই? ”
“ হ্যাঁ। ”
রোহান কিঞ্চিৎ নিরাশ দৃষ্টিতেই তাকায়। পরমুহুর্তেই আবার শুধায়,
“ ঘুমাও। রাত হয়েছে অনেক। ”
“ হ্যাঁ। ”
এই হ্যাঁ হ্যাঁ, আর শান্তস্বরে উত্তর যেন রাহার সাথে যায় না। রাহা ছটফটে, চঞ্চল তরুনী৷ এমন শান্ত উত্তর সে কেন দিবে? রোহান এমন উত্তর পেতে চায় না মোটেও৷ শুধাল,
“ হঠাৎ এত শান্ত দেখাচ্ছে তোমাকে? এটা একটু অপ্রত্যাশিত নয়? ”
রাহা এই পর্যায়ে অন্য দিকে ফিরে। বলে,
“ ঘুমান। শুভরাত্রি। ”

তখন মাঝরাত। রাহার শরীর ভীষণ উষ্ণ। জ্বরে তখন তার হুশজ্ঞান নেই বললেই চলে। শুধু শীত করছে এইটুকু বোধজ্ঞান তার আছে। উষ্ণতা পেতে ক্রমশ কোন কিছু পেতে চাইল যেন। রোহানের তখন চোখ বুঝে এসেছিল। হুট করেই নিজের শরীরের সাথে আরো একটা শরীরের উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ খুলে। উষ্ণতা টের পাওয়া যায় শরীর সংস্পর্শে। রোহান ভ্রু কুঁচকায়। দেখা গেল রাহা খুব গুঁটিশুঁটি মেরেই তার দিকটায় শুঁয়ে আছে ।যেন প্রচুর ঠান্ডা লাগছেে।রোহান আন্দাজ করে হাত রাখল মেয়েটার কপালে। মুহুর্তেই যা বুঝার বুঝা হয়ে গেল। জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। এই পর্যায়ে সে রাহাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“ বলেছিলাম বৃষ্টিতে না ভিজতে। তবুও ভিজেছো। ভেজা শরীরে কতোটা সময় ধরে ছিলে তারও ঠিক নেই। এখন তো এল জ্বর তাই না? ”
রাহা শুনে না৷ সে তো নিজের মধ্যেই নেই বলতে গেল। রোহান দ্রুত একটা কম্বল এনে পেঁচিয়ে নিল রাহাকে। ফুলো গালে মৃদু হাত স্পর্শ করে ডাকল,
“ নবনী? নবনী? মেডিসিন নিবে। উঠো। ”
রাহা শুনে না। রোহান ফের বলল,
” নবনী! ”
রাহা এতোটা সময়ে গিয়ে উত্তর করল। রোহানের কাছ ঘেষে শুঁয়ে এক হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরল রোহানের গলা। বড্ড আড়ষ্ট স্বরে ঘুমের মধ্যেই উত্তর দিল,

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৩

“ উহ্ শীত করছে।”
রোহান ছোটশ্বাস ফেলে।রাহাকে সরিয়ে দিতে মন চায় না৷মন বলে, যেভাবে কাছ ঘেষে আছে ওভাবেই থাকুক না, সমস্যা কি?রোহান নিজেও হুট করেই নিজের অবাধ্য মনকে প্রশ্রয় দিয়ে দুই হাতে আলতো করে জড়িয়ে নিল রাহাকে। উষ্ণতা স্বরুপ নিজের আলিঙ্গন দিল। রাহা তখন সে উষ্ণতায় গুঁটিশুঁটি হয়ে রোহানের বুকেই ঘুমিয়ে নিল। যেন আদুরের পাখির ছানাটা! রোহান তা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। বিনিময়ে রাহার কপালে খুবই সতর্কতা সহিত একটা আদুরে স্পর্শ আঁকল।

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৫