বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ১৯
shanta moni
রিয়া দৌড়ে হাঁসি বেগমের রুমে আসে। জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলতে থাকে। হাসি বেগম ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
রিয়া হাঁপাতে হাঁপাতে বলে।
রিয়া: খালা মনি রোদ,
হাঁসি বেগম : রোদ কি
রিয়া: খালামনি রোদ আমার গলায় ছুড়ি ধরে,কিছুক্ষণ আগে যা’ যা ঘটেছে সব খুলে বলে।
কিন্তু হাঁসি বেগম এই সবের কিছু বিশ্বাস করেনা। যেই মেয়েকে কিনা এতো বছর অত্যাচার করে এসেছে। যে কিনা মুখ থেকে টু শব্দ টুকু করেনি। আর সে কিনা প্রতিবাদ করবে,
হাসি বেগম রাগি চোখে তাকিয়ে বলে।
হাসি বেগম : রিয়া তোমার মাথা ঠিক নেই,,রুমে গিয়ে রেস্ট নাও৷ তোমাকে বলছিলাম শুভ্রকে নিজের আয়ত্তে আনতে। আর তুমি কি সব আবল তাবল বকছো হ্যা’ যাও নিজের রুমে যাও।
রিয়া: খালা মনি বিশ্বাস করো আমি সত্যি বলছি,
হাঁসি বেগম রাগি চোখে তাকায়, রিয়া মাথা নিচু করে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
রোদ ফ্রেশ হয়ে বেড় হয় রুম থেকে নিচে আসে। মীরা বেগম কিচেনে কাজ করছে। রোদকে দেখে সে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে নিজের রুমে দিকে যায়।
রোদের চোখে পানি টলমল করে, এই মীরা বেগম তাকে খুব ভালো বাসতেন এক সময়, নিজের মেয়ের থেকেও বেশি, কিন্তু গত সাত বছর ধরে রোদকে এড়িয়ে যান। একা কোথাও থাকলে, রোদকে দেখলে পাশ কাটিয়ে চলে যান।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রোদ সকালের নাস্তা করে বাড়ির বাহিরে গার্ডেনের দিকে যায়।
এমন সময় চোখ পড়ে নিলা আর নিলয় দিকে,
নিলা নিলয়ের চুল ধরে আছে। নিলয় নিলার চুল ধরে আছে, আর দুজনে ঝগড়া করছে।
রোদ মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ এরা বাচ্চাদের মতো কি শুরু করেছে।
কিছুক্ষণ আগে
নিলা রোদকে দেখতে চৌধুরী বাড়ি আসে। এমন সময় নিলয় এসে সামনে দাঁড়ায়,
নিলা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে ফেলে, মনে মনে বলে। মোর জ্বালা এই বাড়িতে আসলে এই গাঁধাটার মুখ দেখতেই হবে হ্যা।
নিলয় নিলার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাঁসে, তাঁরপর বলে।
নিলয় : খালাম্মা কেমন আছেন।
নিলা রাগান্বিত হয়ে বলে।
নিলা: কুদ্দুস মিয়া, আপনার কি কোনো কাজ নেই, আমাকে খালাম্মা বলা ছাড়া হ্যা,
নিলয়: নাহ আমার তেমন কোনো কাজ নেই, আপনাকে খালাম্মা ডাকা ছাড়া,
নিলা: এই কথায় কথায় খালাম্মা বলবেন না, বলে দিচ্ছি। তাহলে কিন্তু ভালো হবে না।
নিলয়: আচ্ছা ঠিক আছে, খালাম্মা এ নাহ থুক্কু না মানে কথায় কথায় খালাম্মা বলবো না। গানে গানে বলবো,
নিলা নিলয়ের দিকে এগিয়ে যায়, তারপর বলে।
নিলা: আপনাকে তো আমি আজকে শেষ করে ফেলবো।
নিলয় বাঁকা শেষে বলে,
নিলয়: শেষ তো অনেক আগেই হয়ে গেছি খালাম্মা,
আপনি আসলেই একটা গাঁধা, আপনাকে ইচ্ছে করছে পচা নরদমায় চুবিয়ে মারতে।
নিলয় নিলা রাগতে দেখে আবার হাঁসে,
নিলা যেনো পুড়ো শরীর রাগে আগুন জ্বলছে,
নিলা রেগে গিয়ে নিলয়ের চুল টেনে ধরে, নিলয় আহ বলে শব্দ করে উঠে ব্যাথায়,
নিলয় : লাগছে আমার খালাম্মা ছাড়েন।
নিলা: লাগছে তাই না, আর খালাম্মা খালাম্মা করবেন হ্যা।
নিলয় : খালাম্মা মাফ করে দেন, আর খালাম্মা বলবো নাহ খালাম্মা।
নিলা রেগে গিয়ে আরো জোরে চুল টেনে ধরে, বলে
নিলা: আপনি আসলেই একটা অসভ্য লোক।
নিলয়: খালাম্মা এই অদম বেচারাকে ছেড়ে দিন, দয়া করুন খালাম্মা।
নিলা রাগে আরো জোরে চুল টেনে ধরে।
নিলয় দুষ্ট হেঁসে
নিলার চুল ধরে তাঁরপর বলে
নিলয়: আপনি যদি আমার চুল না ছাড়েন খালাম্মা তাহলে আমিও আপনার চুল ছাড়বো না।
একদিকে নিলা নিলয়ের চুল ধরে টানছে, অন্য দিকে নিলয়, চুল ধরে খালাম্মা খালাম্মা করছে,
রোদ তাড়াতাড়ি গিয়ে দুজন কে দুই দিকে সরিয়ে দিয়ে বলে,
নিলয় ভাই অয়ন ভাই কি শুরু করছেন, আপনারা বাচ্চাদের মতো চুল টানাটানি করছেন হ্যা,
নিলয় রোদকে দেখে দাঁত কেলিয়ে হেঁসে বলে।
নিলয়: ভাবি আসলে আপনার বান্ধবী আমার বিয়ান। সেই হিসেবে একটু বিয়ানের সাথে চুল টানাটানি করে দেখেছিলাম বিয়ানের চুল গুলো আসল কিনা।
রোদ ভাবি ডাক শুনতেই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।
নিলা নিলয়ের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।
নিলয় নিলাকে চোখ টিপ মেরে বাড়ির গেট থেকে বেড়িয়ে যায়।
নিলা ভ্রু কুচকে রোদের দিকে তাকায় তারপর বলে।
নিলা: এতো লজ্জা পেতে হবে না, হে লজ্জাবতী লাজুক লতা,
রোদ মাথা তুলে নিলার দিকে তাকায়,
নিলা ফিক করে হেঁসে দেয়। তাঁরপর বলে।
নিলা: না জানি কোন বদজ্বীন আমার পিছে লাগছে, তোদের বাড়িতে আসলেই, এই হাদারামের সাথে ধাক্কা লাগবে না হয়, গায়ে পড়ে আসবে ঝগড়া করতে। কানের কাছে এসে খালাম্মা খালাম্মা করবে। এই বাড়ির ছেলেদের জন্মের সময় হয়তো করলার রস দিয়ে ছিলো মুখে তাই ভালো কথা হয়তো মুখ থেকে বের হয়না,
রোদ নিলার হাত ধরে বলে।
রোদ: বাদ দে না’ এই সব কথা চল বাড়ির ভিতরে চল।
নিলা রোদ বাসার ভিতরে যায়।
সিঁড়ি দিয়ে নামছে আরাফ চৌধুরী হেনা বেগম সোফায় বসে পান খাচ্ছেন।
আরাফ চৌধুরী রোদের পাশে এসে দাঁড়ায় তাঁরপর বলে,
আরাফ চৌধুরী : রোদ মা তুমি কেমন আছো?
রোদ আস্তে করে বলে।
রোদ: আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি,মামা আপনি কেমন আছেন?
আরাফ চৌধুরী : আমি ভালোই আছি মা।
রোদ মা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
রোদ আরাফ চৌধুরী দিকে তাকিয়ে বলে।
রোদ: জ্বী বলুন মামা’
আরাফ চৌধুরী : তোমার সাথে কি শুভ্র কোনো বাজে ব্যবহার করে বা গায়ে হাত তুলে, তোমার ভয় পেতে হবে না, মা তুমি নির্ভয়ে বলো।
রোদ একটু হেঁসে বলে
রোদ: না মামা আমার সাথে সে রকম কিছুই করে না,
আরাফ চৌধুরী রোদের মাথায় হাত ভুলিয়ে বলে।
আরাফ চৌধুরী : মা মনের ভিতরে কোনো সংকোচ রাখবে না,,আর আমি অফিসের কাজে কিছু দিনের জন্য দেশের বাহিরে যাচ্ছি। কবে ফিরতে পারি জানি না।
হাঁসি বেগম আরাফ চৌধুরী যাওয়ার কথা শুনে বাঁকা হাঁসে
আরাফ চৌধুরী আবার বলেন
আরাফ চৌধুরী : রোদ মা, শুভ্র যদি তোমার গায়ে হাত তুলে বা আজে বাজে কিছু বলে,তাহলে তুমি আমাকে সাথে সাথে কল করে বলবে, আমি তাঁরপর ওর ব্যবস্থা নিব।
রোদ আস্তে করে মাথা দুলায়,
আরাফ চৌধুরী হেনা বেগম কাছে এসে তাঁর কাছে বলে, চলে যায়।
এখন সময় রাত ৮:০০ রোদ নিজের রুমে শুয়ে আছে। সারাদিন শুভ্রের দেখা মেলেনি বাড়িতে, হয়তো অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছে। রোদ সকাল থেকে সারাদিন নীলার সাথে ছিলো। নিলা সন্ধ্যা হবার আগে আগে বাড়িতে চলে যায়। রোদ শুভ্রের দরজার আসে পাশে গিয়ে উকি জুকি দিছে, কিন্তু শুভ্রের ছায়াও দেখেনি। নীরা আপুর বিয়ের পর বাড়িটা আবার খালি হয়ে গেছে। অহনা টিনা চলে গেছে হোস্টেলে,,অহনা টিনা সব বয়সি তারা দুজন এক সাথে হোস্টেলে থেকেই পড়ে, নীরা আপুর বিয়ের জন্য আসছিল, বাড়িতে আবার চলে গেছে। বাড়িটা এখন একে বাড়ে ফাঁকা,
রোদ রুম থেকে বেরিয়ে ডয়িং রুমে আসে, এদিক ওদিক তাকায় আসে পাশে কাউকে দেখছে না, কেমন যেনো বাড়িটা নিস্তব্ধ হয়ে আছে, রোদ ধীর পায়ে হেঁটে কিচেনের দিকে যায়, রাতের খাবার খেয়ে আবার উপরে উঠে হেনা বেগমের রুমে যায়।
হেনা বেগম বিছানার সাথে হেলান দিয়ে পান খাচ্ছেন, আর বই পড়ছেন, রোদকে রুমে ডুকতে দেখে চশমা টা খুলে, রোদের দিকে তাকায়, রোদকে নিজের কাছে ডাকে রোদ হেনা বেগমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে,
হেনা বেগম পান চিবাতে চিবাতে বলেন,
হেনা বেগম : রোদ শুভ্র দাদু ভাই সাথে সব ঠিক আছে তো, তোর গায়ে কি এখনো হাত তুলে,
রোদ শুভ্রের কথা শুনতেই ফুপিয়ে উঠে, হেনা বেগম রোদের মাথায় হাত ভুলিয়ে বলে,
হেনা বেগম : কাঁদিস না রোদ, ধৈর্য ধর, দেখবি একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে,
হেনা বেগম একটু থেমে আবার বলতে শুরু করে,
হেনা বেগম : রোদ পুরুষ মানুষের মন হচ্ছে পাথরের মতো, সারা জীবন মাথা ঠুইকা কাঁদলেও বুঝে না, আবার সেই পুরুষের মনে যদি একবার ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পারিস, তাহলে তাকে সারা জীবন আগলে রাখে নিজের ভালোবাসা দিয়ে।
রোদ ঘুরে হেনা বেগম মুখের দিকে তাকায় চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, হেনা বেগম রোদের চোখের পানি মুছে মুচকি হাঁসেন, তাঁরপর আবার বলে,
হেনা বেগম : রোদ নিজেকে দূর্বল করিস না, আর নিজের অধিকার তুই এখন নিজে বুঝেনে,শুভ্র এখন তোর আইনি ভাবেও স্বামী পুরো পুড়ি অধিকার আছে,শুভ্রের উপর।
তুই নিজে যদি প্রতিবাদ না করিস, তাহলে দিনের পর দিন তোর উপর অত্যাচার আরো বাড়বে, শুভ্রকে বুঝিয়ে বল, সময় থাকতে নিজের স্বামি আঁচলে বাঁধ যেনো কোথাও না পালাতে পারে,
রোদ চুপচাপ হেনা বেগমের কথা শুনছে,
রোদ হেনা বেগমের কথা শুনতে শুনতে এক সময় সেই খানে ঘুমিয়ে যায়।
হেনা বেগম রোদকে ঘুমাতে দেখে, রোদকে বালিশে ভালো করে শুয়িয়ে দিয়ে, সেও পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।
রাত ১২:৩০
অয়ন বাসায় এসেছে রাত ১১:০০ টার দিকে, খাওয়া দাওয়া করছে,তারপর রুমে কতক্ষণ রেস্ট নিয়ে চলে যায় ছাদে রোদকে খুঁজতে কিন্তু রোদ সেখানে নেই। শুভ্রের রুমে রোদের রুমেও খুঁজে কিন্তু কোথাও পায় না।
রোদের হটাৎ করে ঘুম ভেঙে যায়। বিছানা থেকে উঠে বসে৷ হেনা বেগম গভীর ঘুমে রোদ কিছু না বলেই, বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়, আস্তে করে হেনা বেগমের রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।
অয়ন রোদকে হেনা বেগমের রুম থেকে আসতে দেখে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে রোদের দিকে, ঘুম ঘুম চোখ, মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে, হাত খোঁপা করা চুল, মুখের কাছে ছোট ছোট চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে, অসম্ভব সুন্দর লাগছে রোদকে।
রোদ অয়নকে খেয়াল করেনি। হটাৎ অয়ন রোদের সামনে দাঁড়ায় রোদ কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। দু কদম পিছিয়ে যায়। অয়ন কে দেখে বুকে থু থু দেয়। অয়ন রোদকে দেখে মুচকি হাঁসে। অয়ন রোদকে উদ্দেশ্য করে বলে।
অয়ন: রোদ তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
রোদ আস্তে করে বলে।
রোদ: জ্বী বলুন ভাইয়া।
অয়ন: এখানে নাহ ছাদে চলো।
রোদ: ভাইয়া এখানেই বলেন।
অয়ন: প্লিজ রোদ চলো না,,একটুখানি সময় মাত্র।
রোদ অয়নের মুখের দিকে তাকিয়ে ছাদের দিকে হাঁটা দেয়। অয়ন ও রোদের পিছু পিছু হাঁটা দেয়। রোদ ছাদে এসে দাঁড়ায়, অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে।
রোদ: জ্বী ভাইয়া বলুন কি বলবেন?
অয়ন মাথা চুলকাচ্ছে রোদ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে,
রোদ: ভাইয়া কি হলো কিছু বলছেন না কেনো,?
অয়ন এখনো চুপ করে আছে, রোদ বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে ফেলে, যখনি ছাদ থেকে যেতে যাবে এমন সময় অয়ন রোদের হাত টেনে ধরে বলে উঠে।
অয়ন: I love you রোদ, I really love you
রোদ অবাক হয়ে অয়নের দিকে তাকায়, তার পর বলে,
রোদ: কি সব বলছেন অয়ন ভাই,
অয়ন : আমি ঠিকই বলছি রোদ, তোমাকে আমার চাই রোদ, আমি তোমাকে ভালোবাসি খুব বেশি ভালোবাসি। যে কোনো মূলে তোমাকে আমার চাই। প্লিজ তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না।
রোদের চোখে পানি টলমল করছে,রোদ বলে।
রোদ: অয়ন ভাই আপনার মাথা ঠিক নেই। প্লিজ আমার হাতটা ছাড়ুন আমাকে যেতে দিন।
অয়ন যেনো বদ্ধ উম্মাদ হয়ে গেছে, রোদের হাত টেনে ধরে রোদকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে।
অয়ন: তোমাকে আমি কোথাও যেতে দেব না রোদ তুমি শুধুই আমার। আমি জানি শুভ্র তোমাকে ভালোবাসে না,শুভ্র শুধু তোমাকে কষ্ট দেওয়া জন্য বিয়ে করছে।আমি তোমাকে কোনো কষ্ট দিব না রোদ। তুমি শুভ্রকে ছেড়ে আমার কাছে আসবে।আমি তোমাকে আমার আদর ভালোবাসা দিয়ে সারা জীবন আগলে রাখবো।
শুভ্র হটাৎ রোদের হাত টেনে ধরে অয়নের কাছ থেকে সরিয়ে ঠাসসসসস ঠাসসসস দুটো থাপ্পড় মারে। ঘটনা এতো দ্রুত হয়েছে যে, বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগে,
কিছুক্ষণ আগে…
সারাদিনের ব্যস্ততা শেষ করে বাড়িতে ডুকে শুভ্র, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে হটাৎ চোখ পড়ে অয়নের দিকে, ছাদের দিকে হাঁটছে পাশে একটা মেয়েও আছে। তবে পিছন ফিরে থাকায় অন্ধকারে ভালো ভাবে বুঝতে পারছে না। শুভ্র কৌতূহাল বসতো অয়নের পিছু নেয়। হটাৎ হাতে থাকা সাইলেন্ট করা ফোনে আলো জ্বলে উঠে। কল আসে শুভ্রের শুভ্র কথা শেষ করে দ্রুত পায়ে ছাদে উঠে। ছাদে উঠে অপ্রকাশিত কিছু কথা আর দৃশ্য চোখে পড়তেই রাগে চোখে রক্ত উঠে যায়। গাড়ের রগ গুলো ফুলে উঠে।
বর্তমান..!!🍁
রোদ ছাদের ফ্লোরে পড়ে আছে। অয়ন কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শুভ্রের দিকে। এমন সময় শুভ্রকে এখানে আশা করেনি কেউ।
রোদের চুলের মুঠি ধরে দাঁড় করায় শুভ্র রাগে রি রি করতে বলে,
শুভ্র: বাহ খুব সুন্দর পিরিত চলছে তাহলে হ্যা।
ব্যাথায় রোদের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে
শুভ্র আবার বলে উঠে,
শুভ্র: ভাতার থাকতে, অন্য ভাতারের কাছে আসছিস,তাইনা। একটা ভাতার দিয়ে হয় না তোর বিয়াদবের বাচ্চা।
শুভ্র আবার রোদকে থাপ্পড় মারতে যায় এমন সময় অয়ন শুভ্রের হাত ধরে, অয়ন শুভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে।
অয়ন: শুভ্র দেখ রোদের কোনো দোষ নেই। রোদকে আমি এখানে ডেকে এনেছি, রোদাে ছেড়ে দে। এই ভাবে রোদকে মার’বার রাইট তোর নেই।
শুভ্র রোদকে ছেড়ে দিয়ে অয়নের শার্টের কলার্ট চেঁপে ধরে বলে,
শুভ্র: তুই আমাকে রাইট শেখাবি, আমি কি করবো, না করবো হ্যা, তুই শেখাবি আমাকে হ্যা, অয়ন আজ শেষ বার তোকে বলে দিচ্ছি,,আমাদের দুইজনের মাঝে তুই আসবি না। তাহলে ভুলে যাব তুই আমার ভাই।
বলেই অয়নকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
রোদের হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নিজের রুমে নিয়ে আসে। দরজা লাগিয়ে দেয়।
রোদকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। শুভ্র হাঁটু গেড়ে রোদের সামনে বসে রোদের গাল চেপে ধরে রাগে রি রি করতে করতে বলে।
শুভ্র: আদর ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবে তোকে, যার জন্য তুই এত রাতে আদর ভালোবাসা পেতে ছাদে গিয়ে ছিলি। তোর ভাতারের সাথে কিহ..
রোদ ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, শুভ্র আবার বলতে থাকে,
শুভ্র: কি বলে ছিলাম। আমাকে উসকানি দিস না, তাহলে তার বিপরীত তোকে ভয়াবহ কিছু সহ্য করতে হবে। কেনো শুনলি না আমার কথা হ্যা বল উত্তর দে।
রোদ শুভ্রের হাত গাল থেকে সরিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে।
রোদ: বিশ্বাস করুন আপনি যা ভাবছেন। সে সব কিছু না, প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।
শুভ্রের রাগ যেনো দাউ দাউ করে কয়েক গুন বেড়ে যায়। শুভ্র রোদের চুলের মুঠি ধরে বলে।
শুভ্র: ওহ তাই কিচ্ছু না, এতো রাতে কি তাহলে তাহাজ্জুদ পড়তে গেছি তুই,তোর ভাতার নিয়ে হ্যা, নষ্টা কোথাকার তোর মতো ডাস্টবিনকে আমি আর বাঁচিয়ে রাখবো না, তোকে আমি শেষ করে ফেলবো।
রোদ : আপনি যা ভাবছেন সে সব কিছু না, বিশ্বাস করেন প্লিজ( কাঁদতে কাঁদতে)
শুভ্র জোরে জোরে হাঁসতে থাকে, তাঁরপর বলে।
শুভ্র: বিশ্বাস তা আবার তোর মতো খুনি কে হ্যা,
রোদ কিছুটা অবাক হয়। শুভ্র তাকে খুনি বলছে কেনো।
রোদ: আপনি কি বলছেন, আমি কাকে খুন করছি, আর খুনি বা কেনো বলছেন।
শুভ্র রোদের হাত টেনে দাঁড় করিয়ে বলে।
শুভ্র: সব যেনে শুনে না জানার ভান ধরিস না রোদ। তুই কি ভেবেছিস। এই ভালা ভুলা চেহারার পেছনে তোর ওই খারাপ রুপ আমি দেখবো না,
রোদ: আপনি কি বলছেন কিছুই আমি বুঝতে পারছিস না।
শুভ্র রোদের চুলের মুঠি ধরে বলে
শুভ্র: কিছুই বুঝতে পারছিস না তাই না, তুই একটা খুনি খুনি খুনি। তোকে সবাই মাফ করলেও আমি তোকে কখনোই মাফ করবো না। কোনো দিন না।
রোদ কাঁদতে কাঁদতে বলে,
রোদ: আমি কাকে খুন করেছি, কি সব বলছেন।
শুভ্র চোখে রক্ত উঠে যায় রাগে,
শুভ্র: কাকে খুন করেছিস নাহ, এতো তাড়াতাড়ি সব ভুলে গেলি বাহ। তোর কারনে আমি আমার মা কে হারিয়েছি। আমার জীবনের সব থেকে মূল্যবান মানুষকে হারিয়ে ফেলেছি। ওহ সরি তোর কারনে নাহ, তুই নিজ হাতেই খুন করেছিস, আমার মা কে
রোদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শুভ্রের দিকে, শুভ্রের চোখ লাল হয়ে আছে। রোদ ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে, আস্তে করে বলে,
রোদ: মামনি কে আমি খুন করেছি,( কান্না অবস্থায়)
রোদ পাথরের মুরতির মতো বসে আছে, চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। এতদিন শুভ্রের তার প্রতি খারাপ ব্যবহারের কারন তাহলে এটা, এই জন্য শুভ্র ভাই তাকে এতো বছর ধরে ঘৃণা করেছে,এই জন্য এতো বছর সে বিদেশ ছিলো। রোদ স্তদ্ব হয়ে আছে।
শুভ্র জোরে জোরে হাঁসছে হাঁসি দিয়ে রোদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে চুলের মুঠি ধরে বলে।
শুভ্র: কি কথা বন্ধ হয়ে গেলো। জানতাম এইটাই হবে। আজকে তোর শেষ দিন রোদ,
তোর মতো খুনি বাজে চরিত্র মেয়েকে আমি আর বাঁচিয়ে রাখবো না।
রোদের মুখে কোনো শব্দ নেই। শুভ্র দাড়িয়ে কোমরের ব্লেড খুলে, রোদকে ইচ্ছে মতো মারতে থাকে, যতক্ষণ না নিজের রাগ কমে, রোদ ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে। কিন্তু মুখ থেকে কোনো শব্দ বেড় হয় না। রোদ মার সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায়। শুভ্র হাতের ব্লেড দূরে ছুড়ে মারে। রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রুমের দরজা লক করে,
গাড়ির চাবি নিয়ে বেড়িয়ে যায় বাড়ির থেকে,
বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ১৮
এক ঘন্টার রাস্তা ১৫ মিনিট ড্রাইভ করে নিজের গ্রেস্ট হাউজে আসে শুভ্র, বাড়ির ভিতরে ডুকে ভাংচুর করা শুরু করে,,পুড়ো বাড়ি তচনচ করে ফেলে, কিছুক্ষণ আগে সাজানো গোছানো বাড়িটা যেনো একটা বস্তি মনে হচ্ছে। শুভ্র কোনো ভাবেই রাগ কমাতে পারে না। দেয়াল ঘেঁষে বসে পড়ে৷ হাত দিয়ে অনবরত রক্ত পড়ছে।