বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ২৮
shanta moni
সকাল ৮:০০ চৌধুরী বাড়ির সবাই সকালের নাস্তা করছে। রোদ রুহি দৌড়ে আসে খাবার টেবিলে, শুভ্রও নাস্তা করছিলো । রোদকে দেখে মুচকি হাঁসে। আবার নিজের খাবার খাওয়াতে মনোযোগ দেয়। রোদ গিয়ে খাবার টেবিলে বসে পড়ে। আফরিন বেগম রোদকে খাবার দেয় প্লেটে রোদ প্লেটে খাবার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে আফরিন বেগম দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
রোদ: মামনি আমাকে আরো বেশি খাবার দাও।
আফরিন বেগম বলে উঠে,
আফরিন বেগম : রোদ মা এই খাবার টা শেষ করো, তারপর দিচ্ছি।
রোদ: নাহ আমাকে আরো বেশি করে খাবার দাও, আমাকে বেশি বেশি খেতে হবে।
আফরিন বেগম : মা তুমি এর থেকে বেশি খেতে পারবে না।
রোদ মুখ ফুলিয়ে বলে।
রোদ: পারবো আমি , আমার জামাই বলছে বেশি বেশি খেতে।
রোদের মুখে জামাই ডাক শুনে টেবিলের সবার খাওয়া থেমে যায়। সবাই রোদের দিকে তাকায়, শুভ্র মাথা নিচু করে আছে, না জানি এই পুচকি মেয়ে তার মানসম্মনের ফালুদা না করে ফেলে।
আফরিন বেগম বলে উঠে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আফরিন বেগম : জামাই তোমাকে বেশি বেশি খেতে কেনো বলেছে রোদ।
রোদ বলে উঠে
রোদ: আমাকে তাড়াতাড়ি বড় হতে হবে মামনি। জামাই বলছে বেশি বেশি খেয়ে তাড়াতাড়ি বড় হতে তাহলে নাকি আমাকে আদর দিবে।
হেনা বেগম রোদের কথা শুনে ঠোঁট টিঁপে হাঁসেন।
আফরিন বেগম পুনরায় বলে উঠে,
আফরিন বেগম : রোদ মা, তা তোমার জামাই টা, কে শুনি?
রোদ এক আঙুল সামনের দিকে তাক করে বলে উঠে।
রোদ: ওই তো আমার জামাই,
আফরিন বেগম : তোমাকে শুভ্রকে জামাই বলে ডাকতে কে বলেছে রোদ।
রোদ: জামাই কালকে বলেছে, তাকে যেনো ভাইয়া না ডাকি, জামাই যেনো বলি। তাই জামাই বলছি আর আমি তো তার বউ।
রোদের কথা শুনে শুভ্রের ভিষম লেগে যায়। জোরে জোরে কাশতে থাকে।
শুভ্র আর খাবার টেবিলে এক সেকেন্ড থাকে না। তাড়াতাড়ি উঠে কাউকে কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে যায়।
আর এক সেকেন্ড এইখানে থাকলে এই মেয়ে নিশ্চিত চুমু খাওয়ার কথাটা বলে দিবে।
শেষ মানসম্মান টুকু রাখতে পারবে না।
শুভ্র যেতেই খাবার টেবিলে সবাই হেঁসে দেয়।
দুইদিন পর
হেনা বেগম রুহি এরা কেউ বাসায় নেই। গ্রামের বাড়িতে গেছে, রোদ যেতে চেয়েছিল, কিন্তু আফরিন বেগম যেতে দেইনি। মামনি বারন করেছে বলে রোদ আর জেদ করেনি যাওয়ার জন্য, এই দুইদিন শুভ্র বাড়িতে ছিলো। আজকে শুভ্র রোমান অয়ন মিলে সাজেক ঘুরতে যাবে। শুভ্র জামা কাপড় লাঘেজে গুছিয়ে রেখে রেডি হচ্ছিল। এমন সময় রোদ দৌড়ে আসে, শুভ্রের কাছে শুভ্র এক নজর রোদের দিকে তাকায়, রোদ বিছানার উপর উঠে দাঁড়ায় শুভ্রকে ডাক দিয়ে বলে
রোদ: এই জামাই শোনো
শুভ্র রোদের দিকে ফিরে তাকায় এই মেয়ে তাকে এখন সবার সামনে বসে যখন তখন জামাই বলে ডাকে যার জন্য তার সবার সামনে কয় একবার লজ্জায় পড়তে হয়েছে। শুভ্র রোদের সামনে দাঁড়ায় রোদ শুভ্রের গলা জড়িয়ে ধরতে নেয়। কিন্তু শুভ্র হাইট বড় হওয়াতে পারে না, রোদ শুভ্রের গলা জড়িয়ে ধরতে ব্যর্থ হওয়া শুভ্র রোদের কোমর জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে নেয়। রোদ সাথে সাথে শুভ্রের গলা জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে।
রোদ: তুমি কোথায় যাচ্ছো, জামাই?
শুভ্র রোদের নাকে নিজের নাক ঘষে আদুরে কন্ঠে বলে উঠে,
শুভ্র: বউ আমি বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাচ্ছি।
রোদ: আমিও যাবো তোমার সাথে,
শুভ্র: বউ তুমি তো এখনো ছোট বড় হও তারপর নিয়ে যাবো৷
রোদ ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,
রোদ: আমি তো বেশি বেশি খাই এখন তো এখন বড় হয়ে গেছি। আমিও যাবো তোমার সাথে।
শুভ্র: রোদ এখন না পরে আমি তোমাকে অনেক সুন্দর যায়গা নিয়ে যাবো।
শুভ্রের কথা শুনে রোদের চোখে পানি টলমল করছে, অভিমান করে কোল থেকে নামতে নেই, শুভ্র রোদকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গাল টেনে আদুরে কন্ঠে বলে উঠে,
শুভ্র: ইসস আমার বাচ্চা বউ দেখি রাগ করতে পারে।
রোদের চোখের পানি মুছে দিয়ে গালে শব্দ করে চুমু খেয়ে বলে উঠে
শুভ্র: এই ভাবে কাঁদবি না ওকে, এই ভাবে কাঁদলে তোকে আদর আদর লাগে, খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।
রোদ কিছু না বুঝে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে, শুভ্র রোদকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদুরে কন্ঠে বলে উঠে
শুভ্র: সোনা বউ আমার এই ভাবে কাঁদে না, আমি এই যাবো, আবার উড়ে তোমার কাছে চলে আসবো।
শুভ্র কথা গুলো বলে, রোদের হাতে অনেক গুলো চকলেট দেয়। রোদ চকলেট দেখে খুশিতে চোখ মুখ চকচক করে উঠে, শুভ্র রোদকে আবার বলে উঠে
শুভ্র: বউ তুমি এই চকলেট গুলো খেয়ে শেষ করো। আমি তোমার চকলেট শেষ হবার আগেই চলে আসবো। তোমার জন্য আরো চকলেট গিফট নিয়ে। রোদ খুঁশিতে বলে উঠে
রোদ: আচ্ছা ঠিক আছে।
শুভ্র রোদকে কোল থেকে নিচে নামায় রোদ চকলেট পেয়ে খুঁশিতে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়।
শুভ্র আফরিন বেগমকে বলে চলে যায়। আফরিন বেগম মনটা ভালো নেই৷ কেমন যেনো করছে, বাড়িতে শুধু রোদ আফরিন বেগম হাঁসি বেগম, আর রিয়া আছে। আর কাজের মহিলা রহিমা খালা,
সকাল ১০:০০
চৌধুরী বাড়িতে পিন পতন নিরবতা, বাহিরে মানুষের কান্নার শব্দ রোদের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে আস্তে আস্তে বাড়ির বাহিরের দিকে যায়। সবাই কাঁদছে হেনা বেগম আরাফ চৌধুরী নিলয় রুহি, রোদের চোখ পড়ে সাদা কাপড়ে ডাকা একটা লাশের দিকে সামনে এগিয়ে যেতেই দেখে তার মামনি শুয়ে আছে। রোদের হটাৎ মনে পড়ে যায় তার মা বাবা কথা, তার মা বাবাকে তো এই রকম শুয়ে রেখেছিল। কিছু লোক বলে ছিল, তার মা বাবা নাকি মরে গেছে। আর নাকি তার মা বাবা কথা বলবে না।আর আসবে না। রোদ দৌড়ে গিয়ে খাটের পাশে দাঁড়ায় আফরিন বেগম হাত ধরে টানতে থাকে আর বলতে থাকে।
রোদ: মামনি তুমি এভাবে শুয়ে আছো কেনো, উঠো তুমি মামনি উঠো আমার ভয় লাগছে মামনি উঠোনা।
হেনা বেগম রোদকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠে
হেনা বেগম : তোর মামনি আর উঠবে না রোদ। তোর মামনি তোর মা বাবা কাছে চলে গেছে।
রোদ হেনা বেগমের কথা শুনে জোরে কেঁদে উঠে, আফরিন বেগমের কাছে গিয়ে পুড়ো মুখে চুমু খেতে খেতে বলে।
রোদ: মামনি তুমি আব্বু আম্মু কাছে যেওনা। আমাকে ছেড়ে আমি আর দুষ্টামি করবো না, সব কথা শুনবো তোমার। মামনি উঠো তুমি দেখো সবাই কাঁদছে কেমন করে, আমার ভয় লাগছে মামনি, তুমি তো বলেছিলে আমাকে ছেড়ে যাবে নাহ।
রোদের কান্না দেখে আসে পাশে সবাই কাঁদছে, শুভ্র এ কোনে দেয়াল ঘেষে বসে আছে।
আফরিন বেগমকে কবর দিয়ে সবাই বাড়িতে আসে। রোদ কাঁদতে কাঁদতে শরীর খারাপ করে ফেলেছে।
সাতদিন পর, শুভ্র এই সাত দিনে রোদকে একটা বাড়ের জন্য দেখেনি, বেঁচে আছে কিনা মরে গেছে। হাঁসি বেগম, মুখে বিশ্ব জয়ের হাঁসি, সব কিছু প্লান মতোই হচ্ছে, শুভ্রকে ভুল বুঝিয়েছে। যে রোদ তার মায়ের খুনি। আর আসল সত্যি কখনোই কেউ জানতে পারবে না।রোদ অনেক দিন ধরে অসুস্থ বার বার মামনি মামনি করছে। শুভ্র আগের মতো আর নেই৷ গম্ভীর মুখে কোনো হাসি নেই, বাড়ির কারো সাথে কথা বলে না।চোখ দুটো সব সময় লাল হয়ে থাকে। ডয়িং রুম থেকে বেরিয়ে বাহিরে দিকে যাচ্ছিল শুভ্র৷ এমন সময় রোদ এসে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে, শুভ্র লম্বা হওয়াতে রোদ শুভ্রের কোমর পযন্ত ধরতে পারে রোদ কাঁদতে বলে উঠে
রোদ: আমাকে মামনি কাছে নিয়ে চলো শুভ্র ভাই। আমি মামনি কাছে যাবো।
রোদকে দেখে শুভ্রের রাগটা যেনে দাউ দাউ করে বেড়ে যায়। রোদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। নিজের কাছ থেকে রোদ ট্রী টেবিল উপরে গিয়ে পড়ে। রোদের কপাল ফেটে রক্ত পড়ছে রোদ সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়। শুভ্র এই সব কিছু যেনো দেখেও দেখছে না।
আরাফ চৌধুরী এই সব দেখে শুভ্রের গালে ঠাসসসস ঠাসসসস দুটো থাপ্পড় মারে।
আরাফ চৌধুরী : তোমার সাহস কি করে হয়। রোদের গায়ে হাত তুলতে,
শুভ্র রেগে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেঁপে বলে উঠে
শুভ্র: বাবা সব কিছু যেনে শুনে একটা খুনির সার্পোট করছো তুমি হ্যা।
আরাফ চৌধুরী : রোদ খুনি না, তুমি ভ্রমে আছো শুভ্র।
শুভ্র: সব কিছু চোখের সামনে দেখে, সত্যি কে মিথ্যা কেনো বানাচ্ছো।
আরাফ চৌধুরী : শুভ্র রোদ একটা বাচ্চা মেয়ে, যদি রোদ ভুল করেও থাকে রোদকে মাফ করে দেওয়া উচিত।
শুভ্র: মাফ আমি রোদকে কখনোই করবো না। আর না এই খুনি বাড়িতে থাকবো আমি।
আরাফ চৌধুরী আর কোনো কিছু না বলতে দিয়ে শুভ্র বেড়িয়ে যায়।
একমাস পর
আজকে শুভ্রের ফ্লাইট, হেনা বেগম কাঁদছে আরাফ চৌধুরী শুভ্রকে অনেক বুঝিয়েছে, রোদকে মাফ করে দিতে কিন্তু শুভ্র কোনো ভাবেই এই বাড়িতে থাকতে রাজি না। রোদ এখানে থাকলে সে কোনো ভাবেই এই বাড়িতে থাকবে না।
এই এক মাসে শুভ্র রোদের সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করেছে, ছোট্ট রোদের মনে অনেক দাগ কেটেছে। বড্ড অভিমানে হারিয়ে গেছে আগের সেই দুষ্ট রোদ, পুড়ো বাড়ি যার হাঁসিতে ঝনকার তুলতো। আজ সেই ছোট্ট পরিটা চুপ হয়ে গেছে। বাড়ির সবাই তার সাথে কেমন করে কথা বলছে, কেউ তাকে ভালোবাসছে না।সারাক্ষণ নিজেকে ঘর বন্দি করে রেখেছে। মামনি ছবি বুকে জড়িয়ে কাঁদছে, তার শুভ্র ভাইও সবার মতো পচা হয়ে গেছে। তাকে এখন খুব মারে রাগ দেখায়।
রুহিকে শুভ্র কোথায় যেনো নিয়ে গেছে, রুহিকে নিয়ে যাওয়ার দিন অনেক কেঁদেছিল রোদ কিন্তু শুভ্র কারো কথা শুনেনি। রুহিকে কোথায় যেনো রেখে গেছে।
নিজের দেশ ছেড়ে চলে যায় অনেক দূরে, শুভ্র রোদের বাঁধনহারা প্রেম শুরু হওয়ার আগেই যেনো সব মিথ্যা বেড়া জালে, পড়ে শেষ হয়ে যায়। কেটে যায় অনেকটি বছর সেই ছোট্ট রোদ বড় হয়ে গেছে। আর শুভ্র আগের থেকে কঠোর আর নিষ্ঠুর হয়ে যায়। নিজের মনে রোদের প্রতি ভালোবাসা মিথ্যা কাছে চাঁপা পড়ে যায়। শুভ্র হয়ে যায় রাগী গম্ভীর বদমেজাজি।
বর্তমান
শুভ্র রুমের আসে পাশে তাকায়, রুমের দেয়ালে রোদের ছোট্ট বেলা ছবি। তাদের ছোট বেলার বিয়ে ছবিও আছে।
শুভ্র আস্তে করে উঠে দাঁড়ায়, ধীর পায়ে আফরিন বেগম একটা ফটোর সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়ে, মাথা নিচু করে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠে।
শুভ্র: আমি আমার ছোট্ট পরিটার খেয়াল রাখতে পারিনি আম্মু। তোমার কথা আমি রাখতে পারিনি, আম্মু, তুমি আমায় মাফ করে দিও। আমার ছোট্ট ফুলটাকে অনেক আঘাত করেছি আম্মু, অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমাকে কি মাফ করবে আমার ছোট্ট পরি,
বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ২৭
সকাল ৭:০০
শুভ্রের হাত থেকে রক্ত পড়তে পড়তে শুকিয়ে গেছে। পুড়ো শার্টে রক্ত শুকিয়ে আছে। চুল গুলো অগোছালো চেহারা ফেকাসে। শুভ্র প্যান্ট পকেটে থাকা ফোনটা হাতে নেই। ফোন হাতে নিতেই। অনেক গুলো মিস কল দেখতে পায়। হেনা বেগম, রোমান, রুহি সব মিলিয়ে এক হাজারের উপরে মিস কল। শুভ্র সাথে সাথে রোমানকে কল ব্যাক করে। শুভ্র হ্যালো বলতে রোমানের কথা শুনে হাত থেকে ফোন পড়ে যায়।