বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৫৬ (৩)

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৫৬ (৩)
shanta moni

“রোমান: “কেনো আমার সাথে এমন করলি বল? ভালোই যখন বাসবি না, তাহলে কেনো এতো দরদ দেখাতে আমার কাছে গিয়েছিলি।
“রুহির ব্যথায় চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। রোমান আরো শক্ত হাতে রুহির গাল চেপে ধরে। আর সহ্য করতে না পেরে রোমানকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে কিছুটা’ দূরে সরিয়ে দেয়। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে রাগী চোখে রোমানের দিকে তাকায়। রোমান রুহির দিকে তাকিয়ে রাগে গর্জে উঠে বলে..!

রোমান: “কেনো এমন করছিস বল।
আমি কল দিলে কল ধরছিস না। কথা বললে এড়িয়ে যাচ্ছিস কেনো? উত্তর দে?
নতুন নাগর জুটিয়েছিস হ্যা!
“কথা গুলো বলে রোমান রুহির হাত ধরতে নেয়। রুহি ছিটকে কিছু দূরে সরে যায়। রোমান আবার কাছে আসতে আসতে বলে..!
রোমান: “আমি ছুলেও তোর সমস্যা হ্যা..!
ওহ হবে না কেনো, নতুন নাগর হয়েছে যে। এখন তো আমাকে ভালো লাগবে না…

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আর কোনো কিছু বলতে পারে না’ রোমান। রুহি হাতের থাপ্পড় পড়ে তার গালে। রুহি রাগে রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে রোমানের দিকে। রুহি রোমানের কাছে এগিয়ে রোমার শার্টের কর্লাট চেঁপে ধরে রাগে ফুসতে ফুসতে বলে..!
রুহি: -“আমাকে রোদ মনে করিস না। যে চুপচাপ নিজের প্রতি হওয়া সব অন্যায় মেনে নিব।
“রোমান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রুহির দিকে, রুহি রোমানের শার্টের কর্লাট ছেড়ে দিয়ে। কিছুটা দূরে দাঁড়ায় তারপর বলে..!
রুহি:- “আমার জীবনের সব থেকে বড়ো ভুল যে আমি আপনার মতো একটা নোংরা মনের মানুষকে ভালোবেসেছি।
যে কিনা চোখের দেখায় আমাকে ভুল বুজে ভরা কলেজে সবার সামনে থাপ্পড় মারে। একটা বার সত্যি’টা জানার চেষ্টা করেননি ছিহহহ।

“কথা গুলো বলতে বলতে রুহির গলা কেঁপে ওঠে। চোখের পানি পড়ছে, বার বার চেষ্টা করছে চোখের পানি আটকানোর কিন্তু পাড়ছে না। রুহি হাত দিয়ে কোনো রকম চোখ মুছে রোমানের চোখের দিকে তাকায়। তাঁরপর বলে..!
রুহি:- “আমি জানতাম না ছেলেটা কে, হটাৎ কারে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে, আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই। কিন্তু আপনি কি করলেন আমার কোনো কথা না শুনেই সবার সামনে আমার গায়ে হাত তুললেন ছিহহ।
“রোমান রুহির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে..!
রোমান:- “তাহলে কেনো তোমাকে জড়িয়ে ধরেছিল।
“রুহি রোমানের দিকে ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে..!

রুহি: – “ছেলেটা সিনিয়র ভাইয়াদের রেগিং এর শিকার হয়েছে ছিল। তাই আমাকে ওই ভাবে এসে জড়িয়ে ধরেছে। পরে আবার অনেক বার সরিও বলছে। এমন কি আমার পায়েও ধরেছে। ছেলেটা অনেক সহজ সরল। আর আপনি কিনা, কতো কিছু ভাবলেন ছিহহ।
“রোমান অপরাধ বোধে মাথা নিচু করে ফেলে। রুহি তাচ্ছিল্য হেঁসে বলে উঠে..!
রুহি:- “আপনি কখনোই আমাকে ভালোবাসেনি, যদি ভালোবাসতেন তাহলে একবারের জন্য হলেও সত্যি কি সেটা জানার চেষ্টা করতেন। কিন্তু আপনি কি করলেন।

“রোমান রুহির দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকায় রুহি চোখের পানি মুছে কণ্ঠ শক্ত করে বলে…!
রুহি:– “আপনি আর কোনো দিন আমার সামনে আসবেন না। আমি আপনার মুখ দেখতে চাই না।
“রুহি কথা গুলো বলে আর দাঁড়ায় না৷ ছাদ থেকে নেমে আসতে যায়। রোমান রুহির কাছে আসতে গিয়েও থেমে যায়।
ছাদের ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে।
কিছুদিন আগের কথা..”

“শুভ্র রোদ নিয়ে আসার একদিন পর সবাই গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকাতে চলে আসে সবাই। দুই দিন রেস্ট নিয়ে রুহি নীলা কলেজ যায়। আর সেইদিন দেখা করতেও রোমানও যায়, রুহির কলেজে।
কলেজ গেট দিয়ে ডুকতে রোমানের চোখে পড়ে রুহিকে। রুহি একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আছে। যা দেখে রোমানের মাথা খারাপ হয়ে যায়। সাথে সাথে গিয়ে সেই ছেলেটাকে মারতে থাকে। রুহি থামাতে চায়, রোমানকে কিছু বলার চেষ্টা করে। কিন্তু রোমান রুহির কোনো কথা শুনে না। পরে রাগে রুহিকে মারে রোমান কলেজ সবাই সেই সব চেয়ে চেয়ে দেখছিল। অপমান লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে রোদ। তাঁরপর থেকে রুহি রোমানের সাথে সে রকম কোনো কথায় বলেনি। রোমান কথা বলতে আসলেও এড়িয়ে গেছে রুহি। আজকে রাতে একরকম থ্রেট দিয়ে রুহিকে ছাদে আনে রোমান। রুহিও বাধ্য হয়ে ছাদে আসে।

“কথা গুলো ভেবেই শক্ত হাতে নিজের চুল চেঁপে ধরে। কতো বড় ভুল করেছে সে এখন বুঝতে পারছে। এখন রুহির এই অভিমান কি করে ভাঙাবে। অপরাধ বোধে মাথা চেঁপে ধরে রাগে দুঃখে। বিড়বিড় করে বলে..!
রোমান: –“তুই এতো বড় ভুলটা কি ভাবে করলি রোমান। কি করে করলি। শুভ্রের মতো হয়ে গেলি শেষ মেষ।
নিজে নিজেই, কথা গুলো নিজেকে বলে রোমান।
“কেঁটে গেছে তিন দিন। এই তিন দিন রুহি এক রকম ঘর বন্ধি ছিল। সে রকম কারো সাথে কথা বলেনি। রোমানের পাগলামো দিনকে দিন বেড়েই যাচ্ছে৷ রুহি সেদিন রাতের পর থেকে আর কোনো যোগাযোগ করেনি রোমানে৷ সাথে। রোমান কল দিয়েছিল কিন্তু রুহি কোনো কথায় বলেনি। সব মিলিয়ে রুহি আর রোমানকে দেখতে চায় না। নিজের করা ভুলের জন্য রোমান শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেক বার চৌধুরী বাড়িতেও এসেছিল। কিন্তু রুহিকে একটা নজরের জন্য দেখতে পাইনি।

এইদিকে’ শুভ্র রোদের সম্পর্ক’ আগের থেকে অনেকটাই স্বাভাবিক, আগের সেই রাগ চটা, বদ মেজাজি শুভ্র চৌধুরী আর নেই। শুভ্র রোদের দুষ্ট মিষ্টি ভালোবাসায় চলছে তাদের সংসার। কিন্তু কেউ কাউকে বলেনি ভালোবাসে। রোদ শুভ্রের চাল চলন ব্যবহার, রোদের প্রতি যত্ন সব কিছুতেই বুঝতে পারে। শুভ্র তাকে ভালোবাসে। রোদ আর এখন শুভ্রকে জিজ্ঞেস করেনা। ভালোবাসে কিনা৷ শুভ্র যখন নিজ থেকে বলবে, সেইদিন না হয়, শুনবে প্রিয় পুরুষের কাছ থেকে ভালোবাসার কথা। রোদ তো এই রকম চেয়েছিল। তার আর শুভ্র ভাইয়ের সুন্দর একটা সংসার হোক। আর এখন সেই টা হচ্ছে। আগে যে শুভ্র ছিল। যে সব সময় গায়ে হাত তুলতো, বাজে কথা বলতো৷ আর এখন কার শুভ্র যেনো পুড়াপুড়ি আলাদা৷ যার প্রতিটা কথা আবেগ মেশানো। ভালোবাসা বিশ্বাস ভরসা। রোদও শুভ্রের সাথে অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। আগের থেকে। শুভ্র যে একেবারে রোদের সাথে রাগ দেখায় না। সেটা বললে ভুল৷ এখনো চোখ গরম করে তাকায়, কথা না শুনলে দমক দেয়।

“রাত প্রায় ১২ টা কি সাড়ে ১২ টা, বেডের উপর মুখে কাছে বালিশ নিয়ে এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে রোদ। শুভ্র রোদের দিকে তাকিয়ে তপ্ত নিশ্বাস ফেলে। রোদের কাছে এসে রোদকে বেড থেকে পাজা কোলে করে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে ছাদের দিকে হাঁটা দেয়। ছাদে এসে, ছাদের দোলনা রোদকে নিয়ে বসে পড়ে শুভ্র। রোদের ঘুম ভেঙে যায়। ভয়ে নড়েচড়ে উঠে রোদ। শুভ্র দুই হাতে রোদকে ঝাঁপটে ধরে’ বলে উঠে…!
শুভ্র: রিলাক্স জান! আমি ভয় নেই!
“শুভ্রের কন্ঠ স্বর পেতেই শান্ত হয়ে যায় রোদ। আকাশে আজ সুন্দর চাঁদ, আর সেই চাঁদের আলোয় দুইজন কপত কপতি, জোসনা বিলাসে ব্যস্ত। শুভ্র আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। রোদও নিশ্চুপ, কারো মুখে কোনো কথা নেই। ঠান্ডা শীতল হাওয়া বইছে, রোদ কেঁপে উঠছে বারবার। রোদকে কাঁপতে দেখে শুভ্র রোদের কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে..!

শুভ্র: ৪০০ গ্রাম এই ভাবে কাঁপাকাঁপি করলে কিন্তু ভয়ংকর কিছু করে ফেলবো।
“শুভ্রের কথায় রোদের শরীর কেঁপে ওঠে,
কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না রোদ। শুভ্র মুচকি হেঁসে, রোদের গালে শব্দ করে চুমু খায়। রোদকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে..!
-“ম্যাডাম চুপ কেনো হুম? আমি যা ভাবছি, আপনিও কি তাই ভাবছেন?
শুভ্রের কথা শুনে রোদ আমতা আমতা করে বলে..!
রোদ:- “নাহ আ…আমি কি ভা ভাববো…?
শুভ্র: ম্যাডাম তোতলাচ্ছেন কেনো…?
“রোদ চুপ হয়ে যায়। কোনো কথা বলে না।
শুভ্র আর রোদের দুষ্ট মিষ্টি খুনসুটিতে কেঁটে যায়। আরো একটি রাত!

-সকাল ১০:০০ টা মুখ কালো করে লাঘেজ শুভ্রের জামা কাপড় গুছিয়ে রাখছে রোদ। অফিসের এক কাজে কানাডা যাবে শুভ্র। সপ্তাহ খানিক লাগবে যেতে। কাল রাতে সেই কথা বলেছিল শুভ্র রোদকে ছাদে নিয়ে। আর সেই রাত থেকেই রোদের মন খারাপ। কেনো জানি, তার মন সায় দিচ্ছে না, শুভ্রকে যেতে। লাঘেজ কাপড় গুছিয়ে রেখে, বিষন্ন মনে দাড়িয়ে আছে রোদ। শুভ্র ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে রোদকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। প্রথমে রোদ হকচকিয়ে উঠলেও। শুভ্রের ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে চুপ হয়ে যায়। সে জানে না কেনো তার এতো খারাপ লাগছে। কিন্তু সে চাইছে না, শুভ্র দূরে কোথাও যাক। শুভ্র রোদের গাড়ে নাক ঘষে ফিসফিস করে বলে উঠে..!

শুভ্র: ম্যাডামের কি মন খারাপ নাকি হুম…?
রোদ শুভ্রের কথা শুনে ফুপিয়ে ওঠে..!
শুভ্র রোদকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দুই গালে হাত রেখে বিচলিত হয়ে বলে উঠে..!
শুভ্র: কি হয়েছে জান? কাঁদছো কেনো?
রোদ শব্দ করে কেঁদে উঠে শুভ্রের গলা জড়িয়ে ধরে ফুপাতে ফুপাতে বলে..!
রোদ:-“আপনি কোথাও যাবেন না প্লিজ। আমার ভালো লাগছে না কিছু..!
শুভ্র রোদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে…!

শুভ্র: আমার তো যেতেই হবে বউ!
রোদ:- নাহ আপনি যাবেন না!
শুভ্র: কেনো যাবো না?
রোদ: আমি বলেছি তাই!
শুভ্র:- তুমি বললে কি আমাকে শুনতে হবে!
রোদ শুভ্রের গলা ছেড়ে, শুভ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে..!
রোদ:-“হ্যা শুনতে হবে। কারন আমি আপনার বউ, আর স্বামিদের উচিত বউয়ের সব কথা শোনা।
শুভ্র রোদের পাগলামো দেখে আনমনে হাঁসে তারপর বলে..!
শুভ্র: বাহ আমার বউ দেখছি, ভালোই হাদিস জানে..!

“রোদ একটু ভাব নিয়ে বলে…!
রোদ:- “হ্যা অবশ্যই জানবো না কেনো।
“শুভ্র দুষ্ট হেঁসে রোদের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে এসে বলে..!
শুভ্র: তা বউ কি এই হাঁদিস জানে, যে জামাই যখন আদর চাইবে তখন বউকে আদর দিতে হবে।
“রোদ চোখ বড় বড় করে তাকায় শুভ্রের দিকে…!

সাতদিন হয়ে গেছে শুভ্র বাংলাদেশে নেই। কালকে রাতে শুভ্রের সাথে কথা হয়েছে। আজকে সকাল ১০ টার ফ্লাইটে বাংলাদেশে ফিরবে। রোদও অনেক খুশি। সকাল থেকে মুখে হাঁসি লেগেই আছে।
ড্রয়িং রুম পেরিয়ে রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছিল রোদ। সময় টা ঠিক ১২ টার কাছাকাছি৷ হটাৎ রোদের পা থেমে যায়। টিভিতে একজন মহিলা নিউজ পড়ছে।

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৫৬ (২)

“বাংলাদেশ টাইম সকাল ১০ টা কানাডা থেকে যে ফ্লাইটি বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। সেই বিমানটি মাঝ পথেই ব্ল্যাস্ট হয়। আর গোপন সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশের বিশিষ্ট বিজনেস ম্যান শুভ্র চৌধুরীও সেই ফ্লাইটে ছিল। এখন পযন্ত কারো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
রোদ চিৎকার করে ফ্লোরে বসে পড়ে…!

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৫৬ (৪)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here