বাদশাহ নামা পর্ব ৩৩+৩৪

বাদশাহ নামা পর্ব ৩৩+৩৪
আমিনা

সেদিন লাইফ ট্রি আসওয়াদ এর সাথে ঠিক কি করলো কেউ জানে না, কিন্তু হঠাৎ করেই আসওয়াদের মানসিক পরিপক্বতা যেন বেড়ে গেলো অনেক খানি! তার চেহারায় বিদ্যমান এতদিনের শেহজাদা শেহজাদা বৈশিষ্ট্য গুলো রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে সেখানে প্রকট হয়ে উঠলো একজন বাদশাহর উপযুক্ত অভিব্যক্তি।
কোনো এক অজানা কারণে অন্যান্য শেহজাদা দের থেকে আসওয়াদ বরাবরই সমীহ বেশি পেতো। হোক সেটা তার অদ্ভুত দর্শন শরীর, বা তার বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার কাঠিন্যতার কারণে; কিন্তু রাজ পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত প্রত্যেকেই তাকে বরাবর সমঝে চলত! আর এখন সেটা আরও বেশি প্রকট হতে শুরু করলো।

দাস দাসী গুলো প্রাসাদের প্রতিটা সিংহদুয়ারে থাকা রয়্যাল মেম্বার ইন্ডিকেটর এর স্পিকারে বাদশাহ নামীর আসওয়াদ দেমিয়ান’ এর নাম শোনা মাত্রই নিজেদের ম্যানার্সের সর্বোচ্চ টা জাহির করে নির্দিষ্ট নিয়মে দাঁড়িয়ে যেতো, কেউ টু শব্দ টি করতো না৷ কেউ কেউ তো ভয়ে নড়াচড়াও করার সাহস টুকুও পেতো না! তরুণ বাদশাহর কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই, শুধু মাত্র প্রাসাদে তার পরোক্ষ উপস্থিতিতেই রাতারাতি প্রাসাদে নেমে এলো শৃঙ্খলা। ছুটা চাকর বাকর গুলো পর্যন্ত কাজে ফাকি দেওয়ার সাহস হারাতে লাগলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রাজ পরিষদে কর্মরত প্রত্যেক সদস্য এবং কন্ট্রোলার গণও তাদের তরুণ বাদশাহ কে সর্বদা ঠান্ডা মাথায় রাখার জন্য নিজেদের সর্বোচ্চ টা দিয়ে চেষ্টা করতে শুরু করলেন। কোনোভাবেই যেন এই লম্বা চওড়া সুঠামদেহের অধিকারী, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার ব্যাক্তিটা তাদের ওপর না চটে যায় সেদিকে তারা প্রচন্ড মনোযোগ দিতে শুরু করলেন৷
একজন বাদশাহর থেকে আসওয়াদকে কুরো আহমার বাসীর দেওয়া টেরর নামটা দিয়েই যেন বেশি বিবেচনা করা শুরু করলো সকলে; যেন কোনোভাবেই তাকে কোনো কিছুতে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেওয়া যাবে না, যেন কোনো কিছুতে সামান্য ফ্ল’ থাকলেই বাদশাহ নামক টেরর সেটাকে ফ্ল লেস’ করতে যা করা প্রয়োজন করে ফেলবে!
বিছানায় শয্যাশায়ী হুজায়ফা আহমেদ তার বিশ্বস্ত সেবক দের নিকট থেকে তার নিজ হাতে গড়া নাতির সমগ্র প্রাসাদ টির ওপর এমন প্রভাবের কথা জেনে মনে মনে পুলকিত হলেন প্রচন্ড।

আজলান, ইলহাম, সালিম সকলে বর্তমানে প্রাসাদেই থাকছে। সালিম কে নিজের চ্যিফ অ্যাডভাইজর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে আসওয়াদ। সালিম ছাড়া আর অন্য কাউকে তার নিজের পাশে দাঁড় করানোর মতো উপযুক্ত মনে হয়নি ওর। যে ব্যাক্তি টা তার এত খারাপ সময়ে, তার জীবনের সমস্ত ঝড় ঝাপটাতে পাশে ছিলো তাকে নিজের এই সুসময়ে কোনো ভাবেই হাত ছাড়া করতে চাইলো না আসওয়াদ।

বাবা আরহাম কে পঞ্চদ্বীপের সেনাবাহিনীর দায়িত্ব অর্পণ করে পঞ্চদ্বীপের পাঁচ নম্বর দ্বীপ রামাদিসামাতে পাঠিয়ে দিলো আসওয়াদ। রামাদিসামা হলো সেই জায়গা যেখানে পঞ্চদ্বীপের সমস্ত সৌলজার্স দের কে ট্রেইনিং দেওয়া হয়। বলতে গেলে দ্বীপের পুরোটাই হলো একটা সামরিক ঘাটি৷ আর আরহাম কে করা হলো সেখানেরই প্রধান৷ নিজের পরের সবচাইতে ক্ষমতাবান পদ টি আসওয়াদ তার বাবা কে দিলো, যেন তার বাবা কোনো ভাবেই মনে না করতে পারেন যে বাদশাহ হওয়ার পর তার নিকট তার বাবার প্রতি তার আনুগত্য এক বিন্দু পরিমাণও হ্রাস পেয়েছে!

আসওয়াদের রাজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার ছ মাসের মাথায় একদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘুমের মাঝে ইহলোক ত্যাগ করলেন আসওয়াদের প্রাণাধিক প্রিয় দাদাজান হুজায়ফা আদনান।
মায়ের পর সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষ টাকে হারিয়ে কঠিন আসওয়াদ যেন আরও কঠিন হয়ে পড়লো। শক্ত চোয়াল দ্বয় আরও শক্ত হয়ে উঠলো ওর, হাসতেই যেন ভুলে গেলো আসওয়াদ। তার কাঠিন্যতা চোখে পড়তে শুরু করলো সবার। আরহাম কয়েক বার চেষ্টা করলেন ছেলের সাথে এ বিষয়ে কথা বলার, কিন্তু আসওয়াদ তাকে সাফ বলে দিলো যে সে যেন আসওয়াদের ব্যাক্তিগত কোনো বিষয়ে নাক না গলায়।

পঞ্চদ্বীপের আইন শৃঙ্খলা ব্যাবস্থা পুরোপুরি কঠোর হয়ে গেলো। আসওয়াদ অপরাধী দের কে শাস্তি দেওয়ার এক অভিনব পদ্ধতি বের করলো। শিরো মিদোরিরই এক কোণায় স্থাপন করলো সেইফ জোন, যেখানে পঞ্চদ্বীপের সকল প্রান্ত থেকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দের কে একত্রে রাখা হবে নিজেদের মতো করে কাজ করে খাওয়ার জন্য, যেখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ থাকবে না। সবার কাজ সবাইকে সময় মতো করতে হবে।

আর মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী দের জন্য আসওয়াদ তৈরি করলো এক নিকৃষ্ট তম পদ্ধতি। নিজের তৈরি ব্যিস্ট স্কোয়াডস এর বাঘা বাঘা সদস্য গুলোকে ততদিনে আরও হিংস্র আর বেপরোয়া করে তুলেছিলো আসওয়াদ। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী গুলোকে নিজের ব্যিস্ট স্কোয়াডস এর সদস্য দের ভুরিভোজের জন্যই ব্যাবহার করা শুরু করলো ও৷
ডেথ সেন্টেন্সড পাবলিক গুলোকে সমগ্র পঞ্চদ্বীপ থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে এসে নিজের প্রাসাদেরই পাতাল ঘরের এক বিরাট এরিয়া জুড়ে তৈরি কৃত জেইলে ভরে রাখতো আসওয়াদ। আর তার ব্যিস্ট স্কোয়াডস কে দিতো নানা ধরণের টাস্ক। ওরা টাস্ক পুরণ করতে পারলেই আসওয়াদের থেকে পেতো উপহার, আর সেটা হলো একটা বা দুটো জীবন্ত মানুষ।

আসামি গুলোকে নিয়ে গিয়ে রেড জোনের জঙ্গলের মাঝ বরাবর ছেড়ে দেওয়া হতো নিজেদের জীবন বাচানোর শেষ সুযোগ দিয়ে, জীবন বাচাতে সে লোক গুলোও ছুটতো প্রাণপণে। আর ব্যিস্ট স্কোয়াডসে থাকা পশু রূপি মানুষ গুলো তাদেরকে জীবন্তই শিকার করতো, আর তার পর মহাসমারোহে সেগুলোকে খেয়ে নিতো। এতে আসওয়াদের দুইটা লাভ হতো, প্রথমত বিনোদন আর দ্বিতীয়ত নিজের পোশা পশু গুলোর খাবারের ব্যাবস্থা।
কিন্তু তার এই ভয়ঙ্কর কাজের কথা সে আর তার খুবই বিশ্বস্ত কিছু সেবক ছাড়া আর কেউই জানতো না। সালিম ও না।

প্রায় বছর দুয়েক পর একদিন হঠাৎ মাঝ রাতে আসওয়াদের কামরায় এলো সালিম। আসওয়াদ তখনও নিজের রাজকার্যে ব্যাস্ত ছিলো। এত রাতে সালিম কে নিজের কামরায় দেখে আসওয়াদ কিছুটা চিন্তিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো এখানে আসার কারণ। উত্তরে সালিম যা বলল তার সারমর্ম এই যে সে ইনায়া কে ভালোবাসে, এবং তার সাথে একত্রে বসবাস করতে চায়। কিন্তু ইনায়া যেহেতু একজন মুসলিম হিসেবেই বড় হয়েছে তাই সে সালিমের দাসী নয়। আর তাই তাকে হালাল ভাবে পেতে সালিম তাকে বিয়ে করতে চায়, কিন্তু সালিমের বাবা আজলান একজন চালচুলো হীনা জারজ সন্তান কে নিজের ছেলের বউ করে ছেলের ইমেজ নষ্ট করতে মোটেও চান না। কিন্তু সালিম ইনায়া কেই বিয়ে করবে! আর এক্ষেত্রে আসওয়াদ যেন তাকে সাহায্য করে।

সালিমের অসহায় মুখের এমন আকুতি শুনে আসওয়াদ শুধু মাত্র সালিমের দিকে এক টুকরো হাসি নিক্ষেপ করলো। আর সেই রাতেই নিজে কাজী ডেকে এনে ইনায়ার অভিভাবক হয়ে সালিমের সাথে বিয়ে পড়িয়ে দিলো ইনায়ার।
আর এদিকে নিজের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের সন্তান কে এক চালচুলোহীন মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দেওয়ায় আগের থেকেই ক্ষেপে থাকা আজলান এবার অগ্নিশর্মা হয়ে উঠলো। কিন্তু একজন বাদশাহর বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা সে ভাবনাতেও আনলো না। কিন্তু তক্কে তক্কে থেকে একদিন পরোক্ষভাবেই আসওয়াদ কে ধরাশায়ী করার নীলনকশা আঁকতে বসলো।

সালিমের বিয়ে উপলক্ষে কয়েক মাস পরেই একদিন প্রাসাদ জুড়ে বিরাট এক আয়োজন করা হলো। আর আজলান এই দিনটাতেই নিজের প্লান সাকসেসফুল করার জন্য ওত পেতে রইলেন। এই দিনটাকে উদ্দ্যেশ্য করেই তিনি পরিকল্পনা করলেন রাতের বেলার ভুরিভোজের সময় আসওয়াদের খাবারে বিষ মিশিয়ে দেওয়ার, যাতে প্রতিশোধের সাথে সাথে রাজসিংহাসন টাও তার হাতেই চলে আসে।
কিন্তু তার এই নোংরা পরিকল্পনার খবর কোনো এক অতি গোপনীয় মাধমে পৌছে গেলো পঞ্চদ্বীপের পাঁচ নম্বর দ্বীপ রামাদিসামা তে, আরহামের নিকট। নিজের মায়ের পেটের ভাই এমন বিশ্বাসঘাতকতা করার পরিকল্পনা আটছে জেনে আরহাম যেন আকাশ থেকে পড়লেন!

জরুরি কাজের কারণে আরহাম সালিমের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে অপারগ ছিলেন৷ কিন্তু গোপন সূত্রে নিজ সন্তানের অ্যাসাসিনেশনের খবর পাওয়া মাত্রই রামাদিসামা থেকে যত দ্রুত সম্ভব রওনা দিলেন আরহাম। নিরাপত্তার স্বার্থে সাথে নিলেন কিছু সৌলজার্স।
অন্যদিকে কিমালেবে সংঘটিত হওয়া একটি রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে ব্যাস্ত থাকা আসওয়াদ তার বিরুদ্ধে হওয়া এমন ষড়যন্ত্রের কিছুই জানতে পারলো না।
আরহাম প্রাসাদে পৌছে, উপযুক্ত প্রমাণের সাথে আগেই চলে গেলেন নিজের ভাই আজলানের নিকট। তার এই নোংরা পরিকল্পনার জবাব চাইতে। কিন্তু আরহামের রামাদি সামা থেকে রওনা দেওয়ার খবর আগেই পেয়ে গেছিল আজলান। আর সেভাবে সে প্রস্তুত ও ছিল।

আরহাম নিজের সাথের সৌলজার্স গুলোকে নিয়ে আজলানের ঘাটি তে প্রবেশ করা মাত্রই আজলানের পোষ্য সৌলজার্স গুলো কৌশলে ঘিরে ফেলে আরহাম সহ অন্য দের কে। আর এরপর সবার অগোচরে আরহাম এবং তার সাথে থাকা সৌলজার্স গুলোকে হত্যা করে ফেলে দিয়ে আসে রেড জোনের জঙ্গলের ভেতর, আসওয়াদ যে রাস্তা দিয়ে কিমালেব থেকে প্রাসাদে ফিরবে ঠিক সেই রাস্তাতে!

সে রাতে জঙ্গলের ভেতরে নিজ পিতার রক্তাক্ত লাশ দেখে আসওয়াদ যেন পাথর বনে গিয়েছিলো! জঙ্গল থেকে লাশ তুলে এনে বাকি সমস্ত রাস্তাটা গাড়ির ভেতরে নিজের বাবাকে বুকে করে প্রাসাদে এসেছিলো আসওয়াদ। আর তার মাথায় তখন থেকে একটি মাত্র অক্ষর ঘুরছিলো, সেটা ছিলো ‘আ’।
রেড জোনে ফেলে দিয়ে আসার পরও হয়তো সামান্য দম তখনো উড়ে যেতে বাকি ছিলো আরহামের, আর সেই দম টুকু দিয়েই সে প্রাণপণে চেষ্টা করেছিলো জঙ্গলের মাটিতে আঙুল দিয়ে কারো নাম লিখতে, কিন্তু প্রথম অক্ষর টা লেখার পরপরই প্রাণপাখি উড়াল দেয় তার। বাকিটুকু লেখার ফুরসত তার আর মেলেনা!

বাবার লাশ দেখে যে মানুষ টি সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছিলো সে ছিলো ইলহাম। ওর পুরো দুনিয়াটাই ছিলো ওর বাবা। এ ছাড়া আর কখনো কারো কাছেই ও যায়নি৷ ওর যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি৷ আর এই বাবার মৃত্যুই কাছে টেনে নিয়ে আসলো এই জমজ দুই ভাই কে। আসওয়াদ পরম যত্নে কাছে টেনে নিলো তার পিতার শোকে কাতর হওয়া দু মিনিটের বড় ভাইকে। আর ইলহাম নিজেও অন্য একটা আশ্রয় পেয়ে সাথে সাথেই লুফে নিলো। ভাইয়ের বুকেই বাবাকে হারানোর শোকে চিৎকার করে কাদলো ও!

আজলান ও এলেন, ভাইয়ের মৃত্যু শোকে কাদলেন। কিন্তু আসওয়াদের শকুনী চোখ জোড়া বার বার চলে যেতে লাগলো কুমিরের কান্না করা আজলানের দিকে। আজলানের কান্না টাকে ঠিক কান্না মনে হলো না ওর কাছে! আজলানের চেহারার দিকে লক্ষ্য করে ক্ষণে ক্ষণে আসওয়াদের মন বলে উঠলো ‘সামথ্যিং ইজ নট রাইট’!

কিন্তু আসওয়াদের সাথে হওয়া ইলহামের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন বেশি দিন দৃঢ় রইলো না। আজলান এবার ইলহাম কে আসওয়াদের বিরুদ্ধে নিজের ঘুটি হিসেবে ব্যাবহার করার জন্য তৈরি হলেন৷ ইলহাম কে তিনি ধীরে ধীরে ফুসলাতে থাকলেন আসওয়াদের বিরুদ্ধে। সদ্য পিতাহারা ইলহাম ভাইয়ের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে প্রথমে আজলানের ফুসলানিতে সায় না দিলেও ক্রমে ক্রমে তার ভাবনা চিন্তা বদলাতে শুরু করলো। আর ইলহামের এমন উন্নতি দেখে আজলান এবার হাত ধুয়ে পড়ে গেলেন। ইলহাম কে রোজ তিনি কয়েক ঘন্টা ধরে তালিম দিয়ে বোঝাতে শুরু করলেন যে তার সাথে যা হয়েছে ঠিক হয়নি, সে আসওয়াদের থেকে কোনো অংশেই কম না। বাদশাহ যদি কাউকে হতেই হয় তবে ইলহাম কে হওয়া উচিত৷ ইলহাম শুনতে থাকলো আজলানের কথা, আর আজলান নকশা করতে থাকলো নিজের নতুন পরিকল্পনার৷

এরই মাঝে শোনা গেলো একটি সুখবর। সালিম বাবা হতে চলেছে! এত গুলো দুঃসময়ের পর এই সংবাদটি যেন মরুভূমির বুকে এক পশলা বৃষ্টির ন্যায় ঠেকলো সবার কাছে! প্রাসাদে একজন নতুন সদস্য আসতে চলেছে শুনে প্রচন্ডরকম খুশি হলো সবাই। আর আসওয়াদ খুশি হলো এই নতুন সদস্য টা সালিমের ঘরে আসার খবর শুনে।
আর এর বেশ কিছু মাস পরেই আলট্রাসনোগ্রাফি তে দেখা গেলো দেমিয়ান বংশে এবার আসতে চলেছে একজন শেহজাদী! সালিমের তো আনন্দ আর ধরে না! একটা মেয়েই তো সে চেয়েছিলো! খুব খুব দুয়া করতো দেমিয়ানের পরবর্তী শেহজাদী টা যেন তার ঘরেই আসে। আর সৃষ্টিকর্তা তার ডাকে সাড়াও দিয়েছেন!

মেয়ে হবার খবর শুনে এক প্রকার নাচতে নাচতে সে এসে পৌছালো আসওয়াদের নিকট। এসে উচ্ছাসের সাথে ঝাপিয়ে পড়লো আসওয়াদের বুকে। সালিমের এমন আনন্দের কারণ জানতে চাইলে আসওয়াদ কে দাঁত কেলিয়ে নিজের মেয়ের বাবা হবার খবর টা শুনিয়ে দিলো সালিম। আর সালিমের মেয়ে হবে শুনে অনেক অনেক গুলো দিন পর আসওয়াদের মুখে দেখা দিলো হাসির রেখা। মিষ্টি করে হেসে সে সালিম কে বলল,

— সেদিন জাহাজে করা দুয়া টাই কাজে দিয়েছে আমার!
সালিম দ্বিগুণ উচ্ছাস নিয়ে আবারও জড়িয়ে ধরলো আসওয়াদ কে!
কিন্তু তার কিছুদিন পরেই ঘটলো এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। সেদিন বাবার কক্ষে ঢোকার আগ মুহুর্তে ভুল বসত বাবা আর ইলহামের ভেতরকার কথোপকথন শুনে ফেললো সালিম। কিন্তু সেই মুহুর্তে সে এই বিষয়ে কিছুই বলল না কাউকে। পরদিন বাবাকে একা পেয়েই সালিম তার বাবাকে প্রশ্ন করে বসলো তার আর ইলহামের ভেতর হওয়া গতকালের কথপোকথন নিয়ে। ইলহাম কে এইভাবে নিজের ভাই এবং একজন বাদশাহর বিরুদ্ধে উস্কে দেওয়ার যথাযথ কারণ জানতে চাইল সালিম।

আজলান হঠাৎ করে সালিমের এমন কৈফিয়ত গ্রহণে থমকাল কিছুটা। কিন্তু পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে সালিম কে সে নিজের দলে টেনে নিয়ে আসার জন্য বোঝাতে শুরু করল যে সে যা করছে সালিমের জন্যই করছে। কারণ এরা দুই ভাই বিদায় নিলে আজলান নিজে সিংহাসনে বসতে পারবে। আর সে সিংহাসনে বসলে পরবর্তী উত্তরাধিকার হবে সালিম। আর যেহেতু সালিম একজন শেহিজাদীর বাবা হতে চলেছে সেহেতু ব্যাপার টা তাদের জন্য আরও সহজ হয়ে যাবে, কারণ শেহজাদী গুলোই এই শিরো মিদোরি কে হাতের মুঠোয় রাখতে সক্ষম!

কিন্তু সালিম তার বাবার এমন ঘৃণ্য কাজে কোনো মতেই সায় দিলো না৷ সে তার বাবার এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলো। আর বলল যে পঞ্চদ্বীপের বাদশাহর প্রধান উপদেষ্টা, এবং তার চাইতে বড় ব্যাপার বাদশাহর বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে সে এই কাজ কিছুতেই হতে দেবে না, এবং খুব দ্রুতই সে বাদশাহ কে তার এই নোংরা পরিকল্পনার ব্যাপারে জানাবে৷ কিন্তু এর মাঝে যদি আজলান নিজের মত পরিবর্তন করে নেয়, এবং বাদশাহর বিরুদ্ধে করা সব ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা গুলো বাদ দিয়ে দেয় তবে সে বাদশাহ কে আজলানের এসব পরিকল্পনার ব্যাপারে কিছুই বলবে না। আর সালিমের এমন সিদ্ধান্তই হয়ে উঠলো তার কাল।

আজলান ততদিনে ক্ষমতার লোভে নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছে। নিজের সন্তানের জন্য তার এত বছরের পরিকল্পনা নস্যাৎ হোক তা সে কোনোভাবেই চাইলো না। একটি সন্তান চাইলেই সে পেয়ে যাবে, তার দাসী দের তো আর অভাব নেই!
আর ঠিক তার কিছুদিন পরেই এক রাতে খাবার খাওয়ার পর বিষক্রিয়ায় প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়লো সালিম। খবর পেয়ে সাথে সাথেই প্রাসাদের মেডিক্যাল এরিয়ায় ছুটলো আসওয়াদ। সালিমের অবস্থা তখন ভয়াবহ। ইমার্জেন্সি কক্ষের বিছানায় শুয়ে নিজের ফুসফুসের ভেতর সামান্য অক্সিজেন নেওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে চলেছে সে। নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে অবিরত! ডাক্তার নার্স রা ছোটাছুটি করছে চারদিকে। কিন্তু সালিমের শরীরে প্রবেশ কারী বিষ যে তার রক্তে মিশে গেছে ততক্ষণে। তবুও শেষ চেষ্টা!

আসওয়াদ হুড়মুড়িয়ে গিয়ে সালিমের নিকট পৌছাতেই তার দিকে রক্ত জমাট বাধা ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে কেঁপে যাওয়া ফিসফিসে কন্ঠে সালিম অতি কষ্টে শুধু দুটো বাক্যই উচ্চারণ করলো,
— আমার কলিজার টুকরা মেয়েটাকে দেখে রাখিস, ভাই আমার! আর আমার বাবা….. আমার বাবা…..
বাকি বাক্য টুকু শেষ করতে পারলো না সালিম! তার আগেই ওর বুক টা এক ঝটকা দিয়ে বিছানা থেকে উপরের দিকে উঠে ধনুকের ন্যায় বাকা হয়ে এলো, আর তার পরমুহূর্তেই একটা বিরাট দীর্ঘশ্বাসের সাথে এই ধরণীর মায়া ত্যাগ করলো সালিম। নিথর শরীর টা পড়ে রইলো বিছানায়৷ রক্তজবার ন্যায় চোখ জোড়া তখনো তার অতি ভরসার বন্ধু আসওয়াদের দিকে নিবদ্ধিত, যেন চোখ জোড়া এখনো বলছে আমার কলিজার টুকরা মেয়েটাকে দেখে রাখিস!
এই প্রথম বার, এই প্রথম বার কাউকে হারিয়ে চিৎকার দিয়ে কাদলো আসওয়াদ! ওর গগনবিদারী আহাজারিতে কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকলো প্রাসাদের প্রতিটা প্রস্তর খন্ড!

মেডিক্যাল এরিয়ার বাইরে এসে জড় হয়ে গেলো প্রাসাদের প্রত্যেক টা দাস দাসী! কঠোরতার প্রতীক, তাদের পরাক্রমশালী বাদশাহ নামীর আসওয়াদ দেমিয়ান কে এই প্রথম বারের মতো এতটা অসহায় হতে দেখলো তারা! সমস্ত প্রাসাদ জুড়ে নেমে এলো শোকের ছায়া, নিরব হয়ে এলো চারপাশ।
আজলান সকলের অগোচরে ছেলের জন্য সত্যিকার অর্থে দু ফোটা চোখের পানি ঝরালেন! হাজার হলেও নিজের ঔরসজাত সন্তান কিনা!

আট মাসের অন্তসত্তা ইনায়া নিজের গর্ভে দেমিয়ান সন্তান বহন করতে গিয়ে এমনিতেই কাহিল হয়ে গেছিল। তবুও নিজের প্রাণপ্রিয় স্বামীর অত্যাধিক হাসিমাখা মুখের কাছে নিজের সমস্ত কষ্ট গুলোকে ফিকে মনে হতো তার। কিন্তু যার মুখ দেখে এত কিছু সহ্য করা, সেই প্রাণের স্বামী কে হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে গেল ইনায়া! গর্ভের সন্তানের কথা যেন তার মাথা থেকেই বেরিয়ে গেলো! তার আহাজারি তে ভারী হয়ে উঠলো প্রাসাদের অন্দরমহল! আর সেই সাথে প্রচন্ড অসুস্থতা জেকে ধরলো তাকে। আর সে অসুস্থতা তাকে নিয়ে গেলো মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে!

সালিমের মৃত্যুর শোক শেষ হতে না হতেই ইনায়ার অসুস্থতার খবরে এবার মানসিক ভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়লো আসওয়াদ। কিন্তু এবার ও আর রিস্ক নিলো না। চব্বিশ ঘন্টা প্রাসাদের ডাক্তার দের নজর দারিতে রেখে দিলো ইনায়া কে। আর সেই সাথে বাড়িয়ে দিলো প্রাসাদের নিরাপত্তা। আর চোখে চোখে রাখতে শুরু করলো আজলান কে। তার প্রতিটা পদক্ষেপের ওপর নজর রাখতে শুরু করলো আসওয়াদ। সে এখন পুরোপুরি নিশ্চিত যে আজলানই তার বাবা আর তার ভাইয়ের খুনি। কিন্তু এই ঝামেলার ভেতরে নতুন ঝামেলা সৃষ্টি না করে আসওয়াদ অপেক্ষা করলো সব কিছু একটু শান্ত হওয়ার!

ইনায়া কে চব্বিশ ঘন্টা অবজারভেশনে রাখার কিছুদিন পরেই একদিন ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়ল ও৷ সারাদিন রাত হ্যালুসিনেশনে সালিমের সাথে কথপোকথন চালিয়ে যেত ইনায়া, কিন্তু হঠাৎ করেই তার মুভমেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। চোখের পাতা টা পর্যন্ত তার প্রচন্ড ধীর গতিতে পড়ছে। এসব দেখে চিন্তিত হয়ে পড়লেন ডাক্তার রা।
ইনায়া ভয়ানক ডিপ্রেশনে ভুগছে তার ওপর সে সন্তানসম্ভবা। এই অবস্থায় ডিপ্রেশনের কড়া ওষুধ দিলে তার প্রভাব গিয়ে পড়বে গর্ভের সন্তান টির ওপর। যার জন্য ডাক্তার রা তাকে ডিপ্রেশনের জন্য খুব লাইট পাওয়ারের মেডিসিন দিয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো উপকার হয়নি। দিনে দিনে ইনায়ার অবস্থা হয়েছে আরও শোচনীয়! আর আজ এই মুহুর্তে সে তার শরীরের সমস্ত মুভমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে!

আসওয়াদের নিকট এ খবর গেলে সে সাথে সাথেই মেডিক্যাল এরিয়ার এসে সেখানে উপস্থিত ডাক্তার দের উদ্দেশ্যে সাফ সাফ বলে দিলো কোনোভাবেই যেন গর্ভের বাচ্চা টার শরীরে বিন্দুমাত্র আচড় না লাগে। যার যা হয়ে যায় যাক, গর্ভের বাচ্চা টা যেন পুরোপুরি সুস্থ থাকে। আর এরপর ডাক্তার দের কে বলে দিলো পেটের বাচ্চা টাকে সি সেকশন ডেলিভারির মাধ্যমে মায়ের গর্ভ থেকে বের করতে, এমনিতেও ইনায়ার যে শারীরিক কন্ডিশন তাতে সে নরমাল ডেলিভারি করতে সক্ষম হবে না কোনোভাবেই।

ডাক্তার রা আর কোনো উপায় না পেয়ে সেটাই করলো। কিন্তু সার্জারীর জন্য ইনায়া কে অ্যানেস্থেসিয়া দেয়ার পর পরই ধীরে ধীরে ইনায়ার রেস্পন্স হারাতে শুরু করলো তারা। আসওয়াদ নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলো। ইনায়ার হৃৎপিণ্ডের গতি বাড়তে শুরু করলে সে ডাক্তার দের কে তাড়া দিয়ে বলল বাচ্চা টার যেন কোনো ক্ষতি না হয়, যত দ্রুত সম্ভব বাচ্চাটিকে যেন এই মেয়ের পেট থেকে বের করে ফেলা হয়। এই মেয়ে এমনিতেও মরবে!

ততক্ষণে শিরো মিদোরির আকাশে ঘন কালো মেঘ জমে গুরু গুরু শব্দ তুলতে শুরু করে দিলো, আর সেই সাথে ভয়ানক আকারে বাড়তে শুরু করলো ইনায়ার হার্টবিট, আর ইনায়ার এমন অবস্থা দেখে, অন্যদিকে আসওয়াদের তাড়া খেয়ে ডাক্তার রা আর ইনায়ার প্রাণের তোয়াক্কা করলো না। যত দ্রুত সম্ভব বাচ্চাটিকে পেট থেকে বের করে আনার চেষ্টা করলো, দুর্ঘটনা ঘটার তীব্র আশঙ্কা থেকে আসওয়াদ ও এগিয়ে গেলো সেদিকে। আর ডাক্তার দের এত দোনোমোনো করতে দেখে এক প্রকার রেগে গিয়ে আসওয়াদ নিজেই বাচ্চাটিকে তার মায়ের গর্ভ থেকে বের করে নিয়ে এলো, আর এই বের করে আনার মাঝ পথেই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে এলো ইনায়ার হৃৎপিণ্ডের কম্পন।
কিন্তু সেই নিরাবতাকে ছাপিয়ে তারস্বরে চিৎকার করে উঠলো আসওয়াদের হাতে এক পা রেখে মাথা নিচের দিকে দিয়ে ঝুলে থাকা রক্তে আচ্ছাদিত, ফকফকা সাদা রঙা ছোট্ট দেহটি। আর সেই মুহুর্তেই বাইরে শুরু হলো বজ্রপাতের সাথে ঝমঝমে বৃষ্টি।

আসওয়াদ সহ অন্যরা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সদ্য জন্মানো এই বাচ্চাটির দিকে। সমস্ত শরীর তার লতাপাতার নকশা দ্বারা সজ্জিত, যেন কেউ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হীরক কণা বসিয়ে দিয়েছে তার সে সমস্ত নকশা জুড়ে, মাথার থাকা রক্ত মিশ্রিত চুল গুলো ধবধবে সাদা রঙা! চোখ জোড়া তার কোনো রকমে মেলছে, কিন্তু যেটুকু মেলছে সেটুকুর ভেতর দিয়ে টিকরে পড়ছে এক অদ্ভুত আলোকরশ্মি! দুই হাত মুঠি করে ধরে চিৎকার করে চলেছে বাচ্চা টা।
ঠিক সেই মুহূর্তেই একটা বজ্র এসে পতিত হলো মেডিক্যাল চেম্বারের জানালায়, জানালার কাচ গুলো ভেঙে গুড়িয়ে এসে পড়লো কামরার ভেতরে। আসওয়াদ দ্রুত গতিতে তারস্বরে চিৎকার করতে থাকা বাচ্চাটিকে নিজের শরীর দিয়ে আগলে নিলো তাদের দিকে ছুটে আসা কাচের টুকরোর থেকে। আর এরপর বিপদ সম্পুর্ন কেটে গেলে পা ধরে উচু করেই এই অদ্ভুত সৌন্দর্যের অধিকারিনী টির ক্রন্দনরত মুখ খানাকে নিজের মুখের সামনে ধরে নরম গলায় বলে উঠলো,
— আ’ম গ’না প্রোট্যেক্ট ইয়্যু ফ্রম এভরি হার্ম অব দ্যিজ ক্রুয়্যেল ওয়ার্ল্ড, মা’ লিটল সুয়্যিট প্রিন্সেস!

সমুদ্রের নকশাদার ঝিনুকের ভেতরে সযত্নে লালিত হওয়া মুক্তার ন্যায় রঙের শরীরের অধিকারিনী সেই বিড়াল ছানার ন্যায় তুলতুলে মেয়েটির নাম রাখা হলো আনাবিয়া ফারহা দেমিয়ান। আসওয়াদ নিজেই নামকরণ করলো তার। একদম বাবার মুখের আদল পাওয়া আনাবিয়ার ছোট্ট, একটুখানি মুখ টার দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকতো আসওয়াদ৷ ওই মুখ টার দিকে তাকালেই এক রাশ মায়া এসে ঘিরে ধরতো ওকে। ওর পাষাণ হৃদয় নরম হয়ে আসতো, স্বাভাবিক হয়ে যেতো ওর কুঞ্চিত ভ্রুদ্বয়।

দেমিয়ান বংশের রীতি অনুযায়ী প্রত্যেক শেহজাদী কে জন্মের পর নিয়ে যেতে হতো লাইফ ট্রির নিকট৷ আনাবিয়ার ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম ঘটলো না৷ একদিন যথাসময়ে রেশমি কাপড়ে মোড়ানো আনাবিয়া কে কোলে নিয়ে লাইফ ট্রির নিকট এলো আসওয়াদ৷ ইলহাম আর আজলান ও এল ওর সাথে৷

কিন্তু এবার আর ওদের গিয়ে লাইফ ট্রির জেগে ওঠার জন্য অপেক্ষা করা লাগলো না। ওরা যেতে যেতেই জেগে উঠতে থাকলো লাইফ ট্রি। ওরা লাইফ ট্রির দিকে যতই আগাচ্ছিলো আনাবিয়ার শরীরের খোদাইকৃত নকশা, মাথা ভর্তি সাদা রঙা চুল আর হীরক খন্ডের ন্যায় চোখ জোড়া উজ্জ্বল থেকে উজ্জলতর হয়ে উঠছিল। আর সেই সাথে একটু একটু করে জেগে উঠছিলো লাইফ ট্রি। আর আনাবিয়া কে নিয়ে লাইফ ট্রির কাছাকাছি পৌছানো মাত্রই লাইফ ট্রি তার ডালপালা গুলো দূর থেকেই বাড়িয়ে দিয়ে আসওয়াদের কোল থেকে এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়েছিলো আনাবিয়া কে। আর এরপর নিজের ডালপালা গুলো দিয়েই আনাবিয়া কে দিয়েছিলো এক গাদা আদর। ছোট্ট আনাবিয়া নিজের কুটি কুটি হাত দিয়ে ধরে রেখেছিলো লাইফ ট্রির সরু ডাল। হয়তো এক মুহুর্তের জন্য ওর মনে হয়েছিলো যে ও নিজের মাকে পেয়ে গেছে।

আর এর পরমুহূর্তেই লাইফ ট্রির বিশাল কান্ডের ভেতর থেকে বের হয়েছিলো একটি লম্বা, সরু মেটালিক দরজা। বিপুল উজ্জ্বল আলো টিকরে পড়ছিলো সে দরজার ভেতর থেকে। আর সেখানে নিজের ডালপালা গুলোতে জড়িয়ে নিয়ে আনাবিয়া কে ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়েছিলো লাইফ ট্রি। আর সেদিনই আসওয়াদ বুঝেছিলো যে এই লাইফ ট্রির আদল গাছের মতো হলেও এটা আসলে গাছ নয়, অন্য কোনো কিছু। কিন্তু ঠিক কি সেটা ওরা কেউই জানে না!
কিছুক্ষণ নিজের ভেতরে রাখার পরই আনাবিয়া কে বের করলো লাইফ ট্রি। ওর সাথে ঠিক কি করা হলো সেটা আসওয়াদ জানে না। জিজ্ঞেস করারও কোনো অপশন নেই। নিজের বুকের ভেতর থেকে বের করে দিয়ে আনাবিয়া কে আবার আসওয়াদের কোলে দিলো লাইফ ট্রি। আর এরপরই লাইফ ট্রি দিলো সবচেয়ে আশ্চর্যজনক মেসেজ টি।
আনাবিয়া কে আসওয়াদের কোলে দিয়ে নিজের সরু ডাল গুলো দিয়ে আসওয়াদের হাতের ভেতরে আনাবিয়ার ছোট্ট হাতটা রেখে, নিজের ডাল দিয়েই ওদের দুজনের আঙুলে আঙটি বদলের ন্যায় পরিয়ে দিয়ে ডাল পালা দিয়ে আসওয়াদের সামনে লিখলো,

— মেইক হা’ ইয়ো’ ওয়্যাইফ।
লাইফ ট্রির এমন মেসেজে অবাক হলো ওখানে উপস্থিত সবাই। ওরা যতদূর জানতো দেমিয়ান বংশে নিজেদের ভেতরে বিয়ে সম্পুর্ন নিষিদ্ধ, হোক সেটা জায়েজ তবুও। কারণ এতে শেহজাদী দের প্রাণনাশের বিপুল আশঙ্কা থাকে। কিন্তু সবকিছু জেনেও লাইফ ট্রির এমন সিদ্ধান্ত অবাক করলো আসওয়াদ কে। দ্বিধাভরা দৃষ্টিতে নিজের কোলে থাকা আনাবিয়া কে একবার পরখ করলো ও, বড়বড় দৃষ্টি নিয়ে আনাবিয়া তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আসওয়াদ ভাবলো কিছুক্ষণ, তারপর নিজের মনেই বলে উঠলো, ‘মন্দ হয় না!’

ছোট্ট তুলতুলে আনাবিয়া দেমিয়ান প্রাসাদের বিপুল আভিজাত্যে বেড়ে উঠতে থাকলো ধীরে ধীরে। কিন্তু তার অনেক বাতিক! সে এতটুকুন হলে কি হবে, সে তার রক্তের সম্পর্কের পাবলিক ছাড়া অন্য কারো কাছে কখনোই শান্ত থাকতো না। দাসী দের কেউ তাকে ধরলেই সে তারস্বরে চিৎকার পাড়তো। আর তার এই চিৎকারে অতিষ্ট হয়ে শেষ পর্যন্ত এই দুধের বাচ্চা টার দায়িত্ব নিতে হলো স্বয়ং আসওয়াদ কে৷ তার নাওয়া খাওয়া থেকে শুরু করে পটি করানোটাও সে নিজে হাতে করা শুরু করলো। এমন কি তার দুধ মা এসে যতক্ষণ তাকে খাওয়াবে ততক্ষণ আসওয়াদ নয়তো ইলহাম যে কারো একজন কে সেখানে উপস্তিত থাকতে হবে৷ দুজনের একই চেহারা হওয়ায় আনাবিয়া পার্থক্য ধরতে পারতো না, কিন্তু যেকোনো একজন কে সেখানে উপস্থিত থাকা চাই-ই চাই।

আজলান মাঝে মাঝে আসতো নাতনী কে দেখতে; সালিমের মুখের আদল পেয়েছে কিনা! ছেলে কে হত্যা করে কোথাও না কোথাও আজলানের যেন এতটুকু আফসোস থেকে গেছিলো। নাতনীর ওই হীরক খন্ডের ন্যায় উজ্জ্বল চোখ জোড়ায় যেন সে তার সন্তানের ছায়া খুজে বেড়াতো রোজ। আনাবিয়াও পরম শান্তিতে তার দাদাজানের বুকে মুখ লুকাতো, সে তো আর জানতো না যে তার সবচেয়ে আপন লোকটির হত্যাকারীর বুকেই সে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ছে।
আনাবিয়ার সারাদিন টা কাটতো আসওয়াদ, ইলহাম নয়তো আজলানের কোলে। এর বাইরে আর কারো ছোয়া সে বরদাস্ত করতো না, রেগে ক্ষেপে উঠতো। আজলান তাই রসিকতা করে তার নাম দিয়েছিলো অ্যাংরি দেমিয়ান।

আসওয়াদ আজলানের বিগত কৃতকর্মের প্রমাণ জোগাড় করার জন্য দিন রাত এক করে ফেলতে শুরু করলো। কারণ একজন রাজপরিবারের সদস্য কে কোনো প্রমাণ ছাড়া সে কোনো অপরাধের জন্য অ্যাকিউজড করতে পারবে না। এতে তার শাসন ক্ষমতার ওপর প্রভাব পড়বে৷ কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণ কোনোভাবেই জোগাড় করতে পারছিলো না ও, তবুও চেষ্টার ত্রুটি রাখছিলো না৷

কিন্তু এরপরই একদিন ঘটলো একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা। আনাবিয়া তখন তেরো মাসে পড়েছে। ও কারো কাছে থাকতে না চাওয়ার কারণে আসওয়াদ ওকে নিজের কামরাতেই রাখতো। ওর বিছানার পাসে ছোট্ট একটি কারুকার্য খচিত স্বর্ণের তৈরি দোলনাতে ঘুমাতো আনাবিয়া আর যতক্ষণ জেগে থাকতো ততক্ষণ থাকতো আসওয়াদের বিছানায়, হাজার চেষ্টা করলেও সেখান থেকে ওকে নড়ানো যেতো না। আসওয়াদের গায়ে পা তুলে দিয়ে শুয়ে শুয়ে খেলা করতো ও সারাক্ষণ। আসওয়াদ ওকে একা রেখে চলে যেতে নিলেই কান্না জুড়ে দিতো। তাই ওকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেই আসওয়াদ কে বাইরে যেতে হতো সবসময়।

এমনি একদিনে আসওয়াদ বরাবরের মতো ওকে নিজের কামরায় অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে কোনো এক কাজে চলে গেছিলো প্রাসাদের বাইরে। ও যখনি বাইরে যেত কামরার বাইরে বসিয়ে রেখে যেত কড়া গার্ড, যেন কোনোভাবেই কোনো শত্রু তার আনাবিয়ার একটি পশমও ছুয়ে দিতে না পারে৷ কিন্তু সেদিন কাজ শেষে প্রাসাদে ফেরার পরই নিজের কামরায় ঢোকার পথের অবস্থা দেখে আত্মা উড়ে গেলো ওর!
কামরার বাইরে থাকা সকল গার্ড গুলো অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে মেঝেতে। গার্ড দের এমন অবস্থা দেখে আসওয়াদ ঝড়ের গতিতে গিয়ে ঢুকলো নিজের কামরায়, ঢুকেই আগে দোলনা টা চেইক করলো। কিন্তু না, কোথাও নেই তার আনাবিয়া! সাথে সাথেই হন্তদন্ত হয়ে চার দিকে লোক পাঠালো আসওয়াদ। আর নিজে বসলো সিসি টিভি ফুটেজ চেইক করতে।

কিছুক্ষণ চেইক করার পরেই বুঝলো প্রাসাদের দাস দের ভেতরেরই একজন উচ্চপদস্থ দাস গার্ড দের দুপুরের খাবারের সাথে ড্রাগ মিশিয়ে খাইয়ে দিয়েছে৷ আর ওরা জ্ঞান হারালেই আনাবিয়া কে নিয়ে ভেগেছে। আসওয়াদ আর এক মুহুর্ত ও দাড়ালো না, নিজেও গার্ড নিয়ে চলল আনাবিয়া কে খুজতে।

আর আনাবিয়া কে খুজতে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আসওয়াদের নিকট তার ব্যিস্ট স্কোয়াডস এর থেকে খবর এলো জঙ্গলের এক কোণায় তার আনাবিয়া কে নিয়ে তারই পরিবারের সদস্য রা সওদা করছে কারো সাথে।
সেই মুহুর্তেই আসওয়াদ গার্ড নিয়ে রওনা দিলো সেদিকে। আর এরপর পৌছে গেলো সেই নির্দিষ্ট জায়গায় যেখানে আজলান আর ইলহাম মিলে আনাবিয়া কে সেই দাস টির থেকে নিয়ে তাকে তার পাওনা বুঝিয়ে দিচ্ছিলো।
আসওয়াদের উপস্থিতি টের পাওয়া মাত্রই তিনজন তিন দিকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু তাদের সে চেষ্টা তৎক্ষনাৎ মাঠে মারা খেলো। ওরা পালানোর আগেই আসওয়াদের গার্ড গুলো ধরে ফেললো ওদের। আর এরপর জঙ্গলের ভেতরেই বিচার বসানো হলো ওদের তিনজনের।

এইসব পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পুর্ন উদাসীন ছোট্ট আনাবিয়া এতক্ষণ চুপটি করে ওর দাদাজানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে ছিলো নিশ্চিন্তে। চোখ জোড়া পিটপিট করে তাকাচ্ছিলো চারদিকে। কিন্তু আসওয়াদ কে দেখা মাত্রই আসওয়াদের দিকে নিজের কুট্টু কুট্টু হাত জোড়া বাড়িয়ে দিলো ও। আসওয়াদ এগিয়ে এসে আজলানের ভীতসন্ত্রস্ত চোখ জোড়াতে হাড়হীম করা দৃষ্টি রেখে হাত বাড়িয়ে আনাবিয়া কে নিয়ে নিলো নিজের বুকে। তারপর গার্ড দের কে নির্দেশ দিলো আজলানের হাত জোড়া কড়া করে বাধার।

আনাবিয়া কে চুরি করে আনা দাস টার শাস্তি প্রথমেই দেওয়া হলো। আজলান আর ইলহাম দুজন কে সামনে রেখেই সে দাস টিকে নিজের ব্যিস্ট স্কোয়াডস এর মুখে হাত পা বেধে ছেড়ে ফিলো আসওয়াদ। হিংস্র পশু গুলো জীবন্ত অবস্থাতেই নিজেদের ধারালো দাঁতে পিষে দাস টাকে ছিড়ে ছিড়ে খেয়ে ফেললো ওদের সামনেই!
এ দৃশ্য দেখে আজলান বমি করে দিলো সাথে সাথে, আর ইলহাম আতঙ্কিত হয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে একনাগাড়ে আসওয়াদ কে বলে দিল সব। যা বলল তার সারমর্ম এই যে, আজলান তাকে এতদিন ধরে বলছিলো যে দেমিয়ান বংশের শেহজাদী গুলো বিপুল ক্ষমতার অধিকারী হয়। তাই আসওয়াদের বদলে যদি সে আনাবিয়া কে বিয়ে করতে পারে তবে তাকে পঞ্চদ্বীপের বাদশাহ হওয়া থেকে কেউ তকে আটকাতে পারবে না৷ তাই আনাবিয়া কে আসওয়াদের থেকে দূরে রেখে দিয়ে তাকে নিজে বড় করার জন্যই আনাবিয়া কে ওর কিডন্যাপ করা।
আসওয়াদ আজলানের নিকট তার এমন কথা ও কাজের জবাব চাইলে আজলান উত্তরে বলে যে আনাবিয়া তার নাতনী, তাই তাকে সে কি করবে না করবে সেটা তার ব্যাপার।

আজলানের এমন উত্তরের প্রতিউত্তরে আসওয়াদ একে একে আজলানের করা খুন এবং অপরাধের আদ্যপান্ত বিবরণ দিতে শুরু করলে আজলানের পাশে থাকা ইলহাম ঝটকা খেলো একটা। এতদিন যার সাথে সে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেছে শেষ মেশ সেই তার বাবার হত্যাকারী শুনে ইলহাম যেন আকাশ থেকে পড়লো! আর আজলান যে এতদিন ক্ষমতা পাওয়ার আশায় ইলহাম কে ব্যাবহার করে কাজ চালিয়ে নিয়েছে, এবং তার নিজ সন্তান কেও সে-ই হত্যা করেছে এইটা শুনে আরও বেশি চমকালো ইলহাম। নিজেকে ওর বড্ড বোকা মনে হলো! কিন্তু তখন আর কিছুই করার নেই। যা হওয়ার তা তো ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে!
আসওয়াদ রাজপরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কে অপহরণের চেষ্টায় অভিযুক্ত করে ইলহাম কে আজীবনের জন্য পঞ্চদ্বীপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ওকে ডার্ক প্যালেসে নির্বাসিত করার হুকুম জারি করলো। আর আজলান কে শাস্তি দিলো তার চিরাচরিত নিয়মে।

রেড জোনের জঙ্গলে ওকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যেতে বলল আসওয়াদ। আর নিজের ব্যিস্ট স্কোয়াডস এর সমস্ত সদস্য কে লেলিয়ে দিলো ওর পেছনে। আর ওদের কে বলে দিলো আজলান কে একটু একটু করে ছিড়ে ছিড়ে খেতে, যেন ওর শরীরের শেষ মাংস টুকরো টা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওর মৃত্যু না হয়। আর এসব বিষয় থেকে সম্পুর্ন উদাসীন আজলান নিজের প্রাণ বাচানোর শেষ চেষ্টা পেয়ে দিকবিদিকশুন্য হয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটলো জঙ্গলের ভেতরের দিকে। আর সে জঙ্গলে ঢোকার কয়েক মুহুর্ত পর থেকেই আসওয়াদের কানে ভেসে আসতে থাকলো আজলানের গগনবিদারী চিৎকার। থেকে থেকে আজলানের করা সেই প্রচন্ড যন্ত্রণার চিৎকারে আসওয়াদের মনে নেমে এলো প্রশান্তি। এদিকে আসওয়াদের বুকে চুপটি করে লেপ্টে থাকা ছোট্ট আনাবিয়ার মস্তিষ্ক আজলানের এমন চিৎকারের কারণ বুঝতে না পেরে ক্ষণে ক্ষণে আতঙ্কে কেঁপে উঠতে থাকলো। আর আসওয়াদ তার বুকের ভেতর গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকা আনাবিয়া কে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
— ন্যো ওয়ান’স এভার গ’না হার্ট ইয়্যু লাভ
আ’ম গ’না গ্যিভ ইয়্যু অল অভ মা’ লাভ
ন্যো বাডি ম্যাটার্স লাইক ইয়্যু (রকাবাই বেইবি)

দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে এগোচ্ছে। রিসোর্টের স্যুইমিং পুলের ওপর ছায়া পড়ে গেছে৷ ম্যাটের ওপর বসে কোনো এক অনির্দিষ্ট বস্তুর দিকে অপলকে তাকিয়ে ধ্যানমগ্ন হয়ে আছে অ্যানা৷ ফ্যালকন একপাশে বসে নাক টানছে আর মাঝে মাঝে চোখের কোণা মুছছে৷ এত ট্রাজিক হিস্ট্রি ওর সহ্য হয়নি।
জায়ান চুপ করে বসে আছেন। কিছুক্ষণ পর পাশে থাকা বোতল থেকে দুই চুমুক পানি খেয়ে নিয়ে নিরবতা ভেঙে তিনি অ্যানার উদ্দ্যেশ্যে বললেন,

— হ্যিজ ম্যাজেস্টির একটি সন্তানের জন্য এত ডেস্পারেট হওয়ার কারণ এটাই। যে সাম্রাজ্যের জন্য উনি ওনার পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষ কে হারিয়ে ফেললেন সেই সাম্রাজ্য কে উনি কখনোই হারিয়ে যেতে দেবেন না। উনি যদি কোনো সাধারণ মানুষ হতেন আর আপনি যদি সন্তান জন্মদানে অক্ষম হতেন তবে কখনই উনি আপনাকে এই সন্তানের কথা মুখ ফুটেও বলতেন না, কোনোদিন এই নিয়ে আফসোস ও করতেন না৷ উনি এই পঞ্চদ্বীপের বাদশাহ, নিজের সাম্রাজ্য কে এগিয়ে নিতে ওনার একটা সন্তানের অবশ্যই প্রয়োজন। এখন এই সন্তান লাভের দুইটা রাস্তা, প্রথম টা হলো তাকে দাসী দের সাথে থেকে সন্তান লাভ করতে হবে, আর দ্বিতীয় টা হলো আপনাকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে আপনার সন্তান কে রাজ সিংহাসনে বসাতে হবে। দুই ক্ষেত্রেই কাউকে না কাউকে অন্য কারো হতে হবে। কিন্তু দ্বিতীয় রাস্তার কথা মুখে আনলেও বিপদ। উনি বেচে থাকতে আপনার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকানোরও সাহস পাবে না। সুতরাং প্রথম রাস্তা ছাড়া আর অন্য কিছু রইলো না।
জায়ানের কথা শেষ হলে অ্যানা শূন্যে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো একটা। তারপর ম্যাট থেকে উঠে দাড়াতে দাড়াতে নির্লিপ্ত গলায় বলল,

বাদশাহ নামা পর্ব ৩১+৩২

— আপনারা বসুন, আমি খাবার গরম করে নিয়ে আসি৷
বলেই সেখান থেকে প্রস্থান করলো ও। আর তার কিছু মুহুর্ত পরেই কিমালেবের আকাশ জুড়ে দেখা দিলো ছাই রঙা মেঘের ঘনঘটা, আর তার পরপরই শুরু হলো বৃষ্টি; স্নিগ্ধ, ঝিরঝিরে বৃষ্টি……

বাদশাহ নামা পর্ব ৩৫+৩৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here