বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৭

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৭
Arshi Ayat

চৈতির সাথে কথা শেষ করে অনুরুপ নিজের চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।ঠোঁটে বাঁকা হাসি।আসলে মিলাতকে নিয়ে যখনই ও ভাবতে শুরু করেছে তখন থেকেই মিলাতের আশেপাশে যারা আছে সবার সম্পর্কে জেনেছে ও।এমনকি মিলাতের যেসব বন্ধুদের সাথে ওঠাবসা তাদের সম্পর্কেও বিস্তারিত জেনেছে কিন্তু চৈতির নাড়ি নক্ষত্র জানার জন্য বন্ধু হিমেল ছাড়াও আরও দু’জনের ওপর দায়িত্ব ছিলো।প্রথমে তো চৈতিকে শায়েস্তা করার প্ল্যান অন্য ছিলো কিন্তু যখনই জানতে পেরেছে ওর রাজনৈতিক হাত আছে তখনই প্ল্যান বদলেছে কারণ যা-ই করা হোক ও ওই রাজনৈতিক পাওয়ার কাজে লাগিয়ে আরও বড় ধরনের ক্ষতি করবে।তাই চালটা এমন হতে হবে যেন ও নিজের জালে নিজেই আটকা পড়ে।এদিকে রেভানকে মোটেই সহ্য হচ্ছিলো না ওর।ও ছাড়া কেউ ওর প্রিয়তমার কথা ভাবলেও রাগ লাগে সেখানে ছেলেটা উঠেপড়েই লেগেছিলো যদিও পরে দমেছে তবুও ভালো লাগছিলো না অনুরুপের।

তাই এমন একটা ঢিল ছুঁড়েছে যাতে দুই পাখিরই জানাজা উঠেছে।এরকম ভয়ংকর পরিকল্পনাগুলো ঠান্ডা মাথায় নিজের চেম্বারে বসেই করে ও।তবে নুহা আর রেভানের বিয়েটা অ্যারেঞ্জ করতে বহু কাঠখড় পোহাতে হয়েছে ওর।রেলমন্ত্রীর শালা কামরুল হক ওর বাঁধা রোগী।প্রচন্ড স্নেহ করে ওকে।প্রথমেই খেলাটা এখান থেকে শুরু করেছে ও।পরিকল্পিত ভাবে রেভানের ইমেজটা তাদের কাছে ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।আর রেভানের ফ্যামিলিতে তত একটা এফোর্ট দিতে হয় নি।ওরা যখন শুনেছে মন্ত্রীর মেয়ে তখন পুরো ফ্যামিলি কবুল বলে ফেলেছে একসাথে আর রেভান তো সদ্য ছ্যাঁকা প্রাপ্ত তাই ও পরিবারের সিদ্ধান্তেই ছিলো।পুরো প্ল্যানটা এখন যতটা সহজ লাগছে ততটাও নয়।এই প্ল্যানটা বাস্তবায়ন করতে ভালোই কষ্ট হয়েছে তবে আজ যখন সফল হলো তখন চৈতির মুখটা ইমাজিন করেই পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চৈতির মস্তিষ্ক ফাঁকা হতে শুরু করলো।একদম হঠাৎ করেই যে প্ল্যানটা এভাবে ঘুরে যাবে সেটা কল্পনাও করে নি ও।অনুরুপকে হালকা নেওয়াটা মস্ত বড় ভুল ছিলো সেটা এখন বুঝতে পারছে।দুশ্চিন্তায় মাথাটা ধরেছে তাই প্যান্টের পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরালো ও।আরামকেদারায় বসে সিগারেটের তপ্ত ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ভাবতে লাগলো এরপর কি করবে!
রেভানের মা ঠিক করেছে ওদের দু’একদিনের মধ্যেই হানিমুনে পাঠিয়ে দেবেন।সেখান গিয়ে ওরা নিজেদের আরেকটু বুঝে নেবে,ভাব হবে তারপর ফিরে এলেই বড় করে রিসেপশন করে বউ উঠিয়ে আনবেন।তবে এই পরিকল্পনার কথা এখনও তিনি ছেলেকে জানান নি কারণ ছেলে তার বিয়েতে রাজি হলেও হানিমুনে রাজি হবে না বলেই তার দৃঢ় বিশ্বাস।তাই আপাতত তিনি নিজের ভেতরেই রেখেছেন।সবকিছু বন্দোবস্ত করে তারপর যেভাবেই হোক পাঠাবেনই ওদের।

অনুরুপ চেম্বার থেকে বেরিয়ে প্রথমে নিজের ফ্ল্যাটে গেলো।একটা ট্রলিতে নিজের কিছু জামা কাপড় ভরে আবার শ্বশুরবাড়ির দিকে রওনা হলো।শ্বশুর হিটলার হলে সেও কম ত্যাঁদড় নয়।বউ নিয়েই ফিরবে সে।ইশ,শখ কতো একবছর পর বউ থেকে দূরে রাখবে।এসব ভাবতে ভাবতেই অনুরুপ পৌঁছে গেলো শ্বশুড়বাড়ি।
হারুন সাহেব মাত্রই এশার নামাজ আদায় করে বসার ঘরে বসেছিলেন।তখনই ডোরবেল বাজলো।ভেতর ঘর থেকে মিলাত শব্দ শুনতে পেয়ে বসার ঘরে আসতেই দেখলো জামাই শ্বশুড় একজন আরেকজনের দিকে চেয়ে আছে।মিলাত খেয়াল করলো অনুরুপের হাত একটা ট্রলি।ও এগিয়ে এসে কিছু বলতে যাবে তার আগেই হারুন সাহেব তীক্ষ্ণ স্বরে বললেন,’কোথাও যাচ্ছো নাকি?’
‘জ্বি,না শ্বশুড় আব্বা।থাকতে এসেছি।আপনি তো আমার বউ দিচ্ছেন না।আর আমিও বউ ছাড়া থাকতে পারছি না তাই চলে এসেছি।ভাবছি একবছর ঘরজামাই থাকবো।তবুও বউ ছাড়া থাকবো না।’

অনুরুপের এমন বেফাঁস কথা শুনে মিলাত পেছন থেকে কপাল চাপড়ালো।লজ্জায় ওর মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে।এদিকে হারুন সাহেব চোখ বড়বড় করে,ভ্রু কুঁচকে ভৎসনার গলায় বলল,’নির্লজ্জ।’
অনুরুপ কপট উদাস হয়ে বলল,’কি করব শ্বশুর আব্বা বলুন!আপনার মেয়ে তো আমার পুরুষত্ব নিয়ে সন্দেহও করে ফেলেছিলো।তাও যাইহোক নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছি আমি।এখন যদি আপনি আমার বউকে একবছর দূরে রাখেন তাহলে বউ তাহলে তো উপোসে মরব আমি!’
অনুরুপের কথা শুনে হারুন সাহেব হতভম্ব।এই ছেলেকে এতদিন তিনি সাধাসিধা মনে করেছিলেন কিন্তু এই ছেলে আস্ত বজ্জাত।এদিকে মিলাত না পারছে হাসতে,না পারছে কাঁদতেে।তবে এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না তাই সে পেছন থেকে অপ্রস্তুতের মত এগিয়ে এসে অনুরুপের হাত ধরে বলল,’আরে,আপনি!আসুন আসুন।ভেতরে এসে বসুন।আজকে রোগীর চাপ ছিলো অনেক বেশি তাই না?’

মিলাত এসব বলতে বলতেই অনুরুপকে ভেতরের দিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।এদিকে জামাই শ্বশুড় এখনো একজন আরেকজনের দিকে চেয়ে আছে।শ্বশুরের চোখে বিরক্তি আর জামাইর চোখে দুষ্টুমি।
অনুরুপ নিজের ঘরে এনেই দরজা আঁটকে দিলো মিলাত।তা দেখে অনুরুপ ফিচেল হেসে বলল,’আরে বউ একটু অপেক্ষা করো।শাওয়ার নিয়ে আসি।এখনই হামলে পড়ো না আমার ওপর।’
মিলাত অনুরুপের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে,ঠোঁট’টা চোখা করে,গাল ফুলিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো।তারপর রাগী স্বরে বলল,’মুখ সেলাই করে দেব।চুপ করুন।’
অনুরুপ বউয়ের ধমক খেয়ে ঠোঁটে আঙুল চেপে নিপাট ভদ্রলোকের মত মুখ করে রইলো।এদিকে মিলাত চোটপাট করে বলল,’এত বেহায়া লোক আপনি!আমি আগে জানতাম না।বাবা কি ভাবলো বলুন তো!’
‘ভাবছে আহারে ছেলেটা কি কষ্ট পাচ্ছে বউটাকে ছাড়া।’
মিলাত অনুরুপের পেটে কনুই দিয়ে একটা গুঁতা মেরে বলল,’আজকে আপনি একটা কথাও বলবেন না।’
‘যথাআজ্ঞা ম্যাম।’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৬

মিলাত মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলো বাইরে।পেছনে দাঁড়িয়ে অনুরুপ এখনো হাসছে দাঁত বের করে।
রাত বাজে বারোটা উনিশ।অনুরুপ মিলাতের ঘরে শুয়ে আছে মুখ গোমড়া করে কারণ তার শ্বশুড় আব্বা নাকি বলেছে মেয়েকে গেস্টরুমে ঘুমাতে।তাই মিলাত গেস্টরুমেই শুয়ে পড়েছে।এটা কোনো কথা?তাহলে এবাড়িতে এসেই বা কি লাভ হলো যদি বউ ছাড়াই ঘুমাতে হয়!আর বউটাও বাপের নেওটা!কিচ্ছু বলল না।সুড় সুড় করে চলে গেলো গেস্টরুমে।হারুন সাহেব বলেছেন অনুরুপের বাবা মায়ের সাথে কথা বলা পর্যন্ত তিনি কিছুতেই ছেলেটার ওপর ভরসা করতে পারছেন না তাই এখন ওরা আলদা থাকবে।তারা আসুক,কথা হোক তারপর সিদ্ধান্ত!মেয়ের বিষয়ে তিনি আপোষহীন।এদিকে অনুরূপের বাবা,মা উমরাহ করতে যাবেন তাই পাসপোর্ট করতে দিয়েছেন।সেদিকেই দেরি হচ্ছে একটু।ওই কাজ শেষ করেই আসবেন ঢাকায়।
ঘরের সব লাইট অফ হয়ে যাবার পর অনুরুপ পা টিপেটিপে বের হলো ঘর থেকে।উদ্দেশ্যে গেস্টরুমে কোনোভাবে ঢুকে বউয়ের সাথে লেপ্টে থাকা।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৮