বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪২

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪২
Arshi Ayat

‘ওই,শালার বাচ্চা শালা!আমি তোর বোন লাগি?’রেভান চমকালো নুহার এমন ভাষায়।সে ভ্রু কুঁচকে বলল,’কি বললে তুমি আমাকে?শালার বাচ্চা?’
‘তো?আমি তোর বোন?’
‘তুমিও বিয়ে মানো না।আমিও মানি না তাহলে তোমাকে বউ কেন বলব?’
নুহা এবার যুক্তি দাড় করিয়ে সমান তেজে বলল,’না মানি আমরা।কিন্তু বিয়ে তো হয়েছে।কবুল আমিও বলেছি,আপনিও বলেছেন।তো কোনোভাবেই আমি আপনার বোন না।’
‘তো বউ বলবো?’
‘জানি না।তবে বোন বলবেন না।’

রেভান এবার কোনো উত্তর না দিয়ে কিছুটা সামনে অর্ডার নেওয়া সেই বিমানবালা’কে ডেকে আঁড়চোখে নুহার দিকে চেয়ে বলল,’স্যরি মিস।আমি তখন ভূল বলেছি।পাশের মেয়েটি আমার বোন নয় সে আমার হাঙ্গা করা বউ।’
রেভানের কথা শুনে নুহা আবারও চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকালো এদিকে সেই বিমানবালা’টি রেভানের কথা শুনে হেসে ফেললো।বুঝতে পারলো এ কোনো সাধারণ স্বামী-স্ত্রী নয় এরা টম এন্ড জেরির হিউম্যান ভার্সন।
আঙটি পরিয়ে বাসায় ফিরেই অনুরূপ স্ত্রী’কে ট্যাগ করে ‘ম্যারিড’ পোস্ট করে।মুহুর্তেই একে একে কমেন্ট আসতে থাকে।বিভিন্ন ধরনের কমেন্ট আসছে।কেউ অভিনন্দন জানাচ্ছে তো কেউ ট্রিট চাইছে আবার অনুরুপে কলেজের,হাসপাতালের কিছু জুনিয়র আফসোস করছে তাদের ক্রাশের বিয়ে হয়ে যাওয়ায়।এদিকে মিলাত বসে বসে কমেন্ট চেক করছে আর মেয়েদের আফসোস দেখে হাসছে।এরমধ্যেই ফোন এলো অনুরুপের মিলাত রিসিভ করতেই অনুরুপ বলল,’কি ম্যাডাম!আঙটি পছন্দ হয়েছে।’
‘ভীষণ পছন্দ হয়েছে ডাক্তার সাহেব।আপনার দেওয়া প্রতিটি জিনিস আমার পছন্দের।’
অনুরুপের মুখে পরিতৃপ্তির হাসি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আঙটি পরানোর দু’দিন পরই আচমকা ট্যুরের প্ল্যান হলো মিলাতের বান্ধবীদের গ্রুপে।সবাই চাইছে মিলাতও আসুক কিন্তু সামনেই বিয়ে,কতকাজ!এই সময়ে ঘুরতে যাওয়াটা ঠিক হবে না তাই মিলাত মানা করে দেয় এদিকে ওর বান্ধবীরা তো নাছোড়বান্দা ওকে ছাড়া যাবেই না তাই ওরা অনুরূপের নাম্বার জোগাড় করে ওকে ফোন করলো।
ফোন রিসিভ করে মিলাতের বান্ধবী মোনা বলল,’ভাইয়া,আসসালামু আলাইকুম।’
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।জ্বি,কে বলছেন?’
‘ভাইয়া আমি মিলাতের বান্ধবী মোনা।আমরা সোমবারে ট্যুর প্ল্যান করেছি দুইদিনের।তো মিলাত যেতে চাচ্ছে না বিয়ের জন্য।আপনি একটু ওকে বলেন না!’
‘আচ্ছা আপু আমি ওকে আমি বলব।ও আপনাদের সাথে যাবে চিন্তা করবেন না।’
‘ধন্যবাদ ভাইয়া।’

অনুরুপ দুপুরে আসলো মিলাতদের ভার্সিটিতে।মিলাত তখন ক্যান্টিনে বসে সিঙাড়া খাচ্ছিলো।স্বামীকে দেখে সিঙাড়া অর্ধেক রেখেই উঠে দৌড় দিলো অনুরুপের দিকে।ওর সামনে এসে জড়ানো গলায় বলল,’আপনি এখানে?’
অনুরুপ মৃদু হেসে মিলাতে সামনে আসা চুলগুলো সরিয়ে দিতে দিতে বলল,’মুখের খাবারটা আগে গিলে তারপর কথা বলো।পালিয়ে যাচ্ছি না তো,তোমার কাছেই আছি।’
মিলাত লজ্জা পেলো।অনুরুপকে নিজেদের ক্যান্টিনে এনে বসালো।ওর বান্ধবীদের সাথে পরিচয়ও করালো।অনুরুপ ওদের ট্রিট দিলো।সেখানে অনেক্ক্ষণ গল্প স্বল্পও হলো।খাওয়া দাওয়া শেষে অনুরুপ মিলাতকে জিজ্ঞেস করলো,’তোমার আর ক্লাস আছে?’

‘না।ওদের আছে।’
‘তাহলে চলো আমার সাথে।’
‘শপিংয়ে।মা বলেছে তোমার পছন্দে সব কিনতে।যা তোমার পছন্দ হবে সেটাই কিনতে।’
‘আপনার পছন্দই তো সুন্দর।’
‘হ্যাঁ আমি জানি আমার পছন্দ সুন্দর তা নাহলে তোমার মত বউ তো পেতাম না।’
‘আচ্ছা?তাহলে তো আমার পছন্দ আপনার থেকেও সুন্দর তা নাহলে আপনার মত স্বামী তো আমি পেতাম না।’
অনুরূপ মিলাতের নাক টেনে দিয়ে বলল,’তাই না?এবার আসো।যেতে হবে।’
‘চলুন।’
অনুরুপ মিলাতকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।গাড়িতে উঠে আগে মিলাতের সীট বেল্ট লাগালো পরে নিজেরটা।মিলাত আহ্লাদী স্বরে বলল,’আপনি আমার অভ্যাস খারাপ করছেন।এই যে সব কিছুতে নিজের ওপর অভ্যস্ত করে পরে পালিয়ে গেলে আমি বাঁচবো না মনে রাখিয়েন।’

অনুরুপ মিলাতের সীট বেল্ট’টা খুলে ফেললো।অতঃপর মিলাতকে ওর সীট থেকে তুলে এনে নিজের কোলের ওপর বসালো।মিলাত এতক্ষণে লজ্জায় চিবুক নামিয়ে ফেলেছে।অনুরুপ মিলাতে পিঠে চুমু খেয়ে বলল,’একমাত্র মৃত্যুই আমাকে তোমার থেকে দূর করতে পারে।মৃত্যু তো নির্ধারিত।সেটা আমার হাতে নেই।তবে আমার হাতে যা আছে সব এক করে হলে পৃথিবীতে আল্লাহর পর তুমি আমাকেই পাবে।’

মিলাত আরও একবার ভালোবেসে ফেললো মানুষটাকে।পেছন ফিরে দু-হাতে শক্ত করে গলা জড়িয়ে ধরলো।অনুরুপও নিজের শক্ত বাহুটায় প্রাণের পাখিটাকে আবদ্ধ করলো।
শাড়ির দোকানে বসে মিলাত আর অনুরুপ শাড়ি দেখছিলো।মিলাতের একটা শাড়িও পছন্দ হচ্ছে না।সে পাশে বসা অনুরুপের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,’আমাকে একটু হেল্প করুন না।আমি কনফিউজড!’
‘কনফিউজড হওয়া লাগবে না।যতগুলো পছন্দ নিয়ে নাও।’

‘ধূর!আপনি বলুন আমি কোনটা নিবো?আমি তো আপনার বউ আপনার পছন্দেই কেনা উচিত।’
অনুরুপ হাল ছেড়ে দিয়ে অনেক বেছে দুটো শাড়ি পছন্দ করলো।একটা মেরুন,আরেকটা বেবি পিংক।মিলাতেরও পছন্দ হলো।ওরা দুটে শাড়িই কিনলো।বিয়ের শাড়ি কেনা হয় নি এখনও।বিয়ের শাড়ি হিসেবে লালই পছন্দ ওর।
শাড়ি কিনতে কিনতে মিলাতের মনে পড়ে গেলো নিজের প্রথম বিয়ের কথা।অজান্তেই মনটা ভার হয়ে গেলো ওর।ওর লালা শাড়ি পছন্দ ছিলো।সবসময়ই মন চাইতো লাল শাড়ি পরে টুকটুকে বউ সাজার কিন্তু সাইফুল পছন্দ করতো না লাল শাড়ি।ওর পছন্দেই নীল শাড়ি পরতে হয়েছিলো।সেসব এখন শুধু অতীত।মিলাত নিজের পাশে বসা মানুষটিকে দেখে দু নয়ন ভরে।ভাবে এই মানুষটা জীবনে না আসলে হয়তো কখনোই ও স্বাভাবিক হতো না।
প্ল্যান থেকে ল্যান্ড করার পর নুহা বলল,’ঠিকাছে যান আমি আপনার বোন।আপনি নিজের মত মেয়েদের সাথে ফূর্তি করেন আর আমি নিজের মতো ছেলেদের সাথে ঘুরবো।’

রেভান এবার মুখটা চোখা করে বলল,’না না,তা হচ্ছে না!প্লেনে তুমি বলেছো না মানলেও আমাদের বিয়ে হয়েছে।তাই আমরা স্বামী-স্ত্রী।ঘোরাঘুরি করলেও তুমি আমার সাথেই করবা।এদিক ওদিক চোখ দেওয়া যাবে না।’
‘ঠিকাছে আপনার সাথে ঘুরবেই বা কোন মেয়ে?যে না চেহারা নামা রাখসে পেয়ারা!’
রেভান জ্বলে গেলো।ধমকে বলল,’শাট আপ!তুমি আমার হত হ্যান্ডসাম পুরো পৃথিবীতে পাবা না একটাও।’
‘জ্বি,আপনিও হ্যান্ডসাম আর হিরো আলমও নায়ক।’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪১

রেভান রাগে আগুন হয়ে গেলো।ও চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’আর তুমি কি?’
‘ঐশ্বরিয়া আমি।’
রেভান এবার হেসে ফেললো।বলল,’একেই বলে ওভার কনফিডেন্স।গুলিস্তানের লো বাজেট ঐশ্বরিয়া।হুহ্।’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৩