বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৫

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৫
Arshi Ayat

অনেক খুঁজেও কোনো লাভ হলো না।সারাটাদিন চলে গেলো মিলাতের কোনো খোঁজ নেই।এদিকে অনুরুপের অবস্থা শোচনীয়।ও কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছে না।প্রচন্ড কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে,বারবার চোখজোড়ায় জল জমছে।এতটা কষ্ট এই উনত্রিশ বছরের জীবনে ও কখনোই পায় নি।এখন পর্যন্ত বাসায় কেউই জানে না।না অনুরুপের বাসায় আর না মিলাতের বাসায়।সন্ধ্যায় কলি বেগম ফোন করেই বললেন,’কি,রে বাবা!সেই সকালে নাস্তা না করেই বের হলি এখনও ফিরলি না।কলও করেছি কতগুলো রিসিভ করলি না।কি হলো বল তো?চিন্তা হচ্ছে তো আমাদের।’

মায়ের কথা শুনে অনুরুপ নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না।শব্দ করে কেঁদে ফেললো।ছেলের কান্না শুনে কলি বেগমের বুকটা ধ্বক করে উঠলো।ছেলেরা স্বভাবসুলভ এমনিই কাঁদে না তারওপর তার অনুরুপ তো কাদেই না।সেই কবে ছোটো বেলা যখন ওর দাদী মারা গিয়েছিলো তখন কেঁদে ছিলো তবে আজকের মতো না।আজকের কান্নাটা অন্যরকম।ছেলের ভেতরের কষ্ট’টা তিনি বুঝতে পারছেন।সাংঘাতিক কিছু না ঘটলে এভাবে চিৎকার করে কাঁদতে না ছেলেটা।কলি বেগম নিজেকে শক্ত রেখে জিজ্ঞেস করলেন,’কি হয়েছে বাবা?কাদছিস কেনো?কোথায় তুই?’
কান্নার মাঝেও অনুরুপ বলে উঠলো,’মা,ও মা আমি তো মিলাতকে খুঁজে পাচ্ছি না।ওকে এনে দাও মা।আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘কি হয়েছে মিলাতের আর তুই কোথায়?’
অনুরুপ শার্টের হাতায় চোখের জল মুছে কলি বেগমকে সব বলল।তিনি সব শুনে বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন।বললেন,’মিলাতের বাবা-মাকে বলেছিস?’
‘না,তারা জানে না এখনো।’
‘বলা দরকার।’
অনুরুপ অসহায় স্বরে বলল,’কিভাবে বলব মা?কোন মুখে বলব!আমার ভালো লাগছে না।কি করব আমি!’
কলি বেগম একটু ভেবে বললেন,’তুই একটা কাজ কর।কালকে থানায় কমপ্লেন কর আগে তারপর পত্রিকায় সন্ধান চাই বিজ্ঞপ্তি দে।কিছু হলেও হতে পারে!’

অনুরুপের মায়ের বুদ্ধিটা ভালো লাগলো।
অনেক সময় ধরে বেজমেন্টের এই অন্ধকার ঘরে আছে মিলাত।না কথা বলার শক্তি আছে আর না নড়াচড়া করার।ভীষণ অসহায় লাগছে ওর।মনে হচ্ছে ওকে কোনোদিন আর কেউ খুঁজে পাবে না।বারবার বাবা,মা আর অনুরুপের কথা মনে পড়ছে।আর কি কখনোই দেখা হবে না ওদের সাথে?মিলাতের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো কেবল।মনে পড়ে যেতে লাগলো অনুরুপের সাথে কাটানো সময়গুলো।জীবন এত ছোটো কেন!ভালোবাসার জন্য আরেকটু সময় কি পাওয়া যেত না?মন ভরে নি তো!এই তো একসাথে,একই ছাদের তলায় থাকার,একই থালায় খাওয়ার একই বিছানায় ঘুমানোর এই অমূল্য স্বপ্নগুলো অধরাই রয়ে গেলো।নিজেকে কোনোভাবেই বুঝ দিতে পারছে না মিলাত।

রেভান আর নুহার মধ্যে একটা বন্ডিং তৈরি হয়েছে।যার নাম দেওয়া যেতে পারে ঝামেলা বন্ডিং।ওরা একটা মুহুর্ত ঝামেলা না করে থাকতে পারে না।সকাল থেকে রাতে অব্দি ঘুমোতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এটা সেটা নিয়ে লাগবেই।রেভান উপলব্ধি করতে পারে এই মেয়েটার সাথে থেকে থেকে ও নিজেও ঝগড়ুটে হয়ে গেছে।এই স্বভাবটা ছিলো না আগে।কথায় বলে না সং সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।

সারাদিন ঘুরেফিরে এসে রেভান তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগুতেই কোত্থেকে কোত্থেকে যেন নুহা হুড়মুড় করে ঢুকে গেলো ওয়াশরুমে।রেভান দ্রুত গিয়েও লাভ হলো ততক্ষণে দরজা আঁটকে ফেলেছে ও।বাইরে থেকে রেভান চেঁচিয়ে বলে উঠলো,’কি হলো এটা?’
‘আপনি জানেন না লেডিস ফাস্ট!’
রাগে রক্ত টগবগ করছে রেভানের।তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,’ঠিকাছে পাঁচ মিনিটের মধ্যে বের হও।’
‘হোয়াট!পাঁচ মিনিট তো জামাই খুলতে লাগে।’

‘কি এমন বস্তা পরেছো যে পাঁচ মিনিট লাগবে।আমি দশ সেকেন্ড জামা খুলতে পারি।’
‘আমি তো আপনার মতো না!অপেক্ষা করেন একঘন্টা।’
রেভান আর উত্তর দিলো না।ও জানে এই মেয়ে একঘন্টার আগে বের হবে ন।ওয়াশরুমে ঢুকেই সে হয়ে ওঠে জগতের কুখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী।শাওয়ারটা ছেড়ে দিয়েই হেড়ে গলায় গান করে প্রতিদিন।আর বাইরে বসে রেভান বিরক্ত মুখে সেগুলোই শোনে।যেমন আজ গাইছে,’সময় পাইলে টাংকি মারতে আইও ও বন্ধ গো,সময় পাইলে টাংকি মারতে আইও…’

রেভান বিরক্ত মুখে এসব অত্যাচার প্রতিদিন সহ্য করে।এমন নয় যে নুহার এসব গান পছন্দ কিন্তু ও শুধুমাত্র রেভানকে জ্বালানের জন্য করে সব।তা নাহলে ছোটেবেলা থেকে গান শেখা ও গান করা একটা মেয়ে এমন হেড়ে গলায় কেন গাইবে!

পাক্কা একজন দশমিনিট পর বেরিয়ে এলো নুহা।রেভানের মেজাজ সপ্তম আসমানে।ও কিছু বলার জন্য যে-ই না নুহার দিকে তাকালো সাথে সাথেই মুখ হা হয়ে গেলো।রাগের কথা আর মনে রইলো না।শুধুমাত্র সাদা একটা তোয়ালে বুকের ওপর থেকে উরু পর্যন্ত পেচানো।পুরো শরীর ভেজা।ভীষণ সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।রেভান উঠে এক পা,দু-পা করে ওর দিকেই এগিয়ে গেলো।ওকে এক কাছে আসতে দেখায় নুহাও পেছাতে লাগলো।পেছাতে পেছাতে একদম দেয়ালের সাথে লেগে গেলো।রেভানও ওর মুখের ওপর ঝুঁকে পড়লো।নুহা ভীষণ লজ্জা পেলো।লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো।রেভান হুশ হারিয়ে ফেলেছে পুরোপুরি।ও নুহার নরম,কোমল ঠোঁটজোড়ায় দিকে এগিয়ে গেলো।ঠোঁট ছুঁতেই হুশ ফিরে এলো।সাথে সাথেই সরে দাঁড়ালো।নুহা চোখ খুলে রেভানকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর ইগোতে লাগলো।ও দৌড়ে গিয়ে রেভানকে জড়িয়ে ধরলো।রেভান জোর করে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,’ছাড়ো,বলছি।’
‘না,ছাড়ব না।আমার আপনাকে চাই এখনি।’

‘অসভ্য মেয়ে ছাড়ো।’
‘ছাড়বো না।’
‘বাড়াবাড়ি হচ্ছে।’
‘আমি শুরু করি নি।আপনিই করেছেন।’
‘স্যরি আমি বুঝতে পারি না ভূল করেছি।’
‘আমি এত কিছু বুঝি না।’
এই বলেই নুহা নিজের শরীরে অবশিষ্ট কাপড়ও খুলে ফেললো।এরপর আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলো না রেভান।শত হোক পুরুষ তো!

মধ্যরাত,দুজনেই পাশাপাশি শুয়ে আছে চুপচাপ।কিছুক্ষণ আগে যা হয়েছে তাতে দুজনেরই সায় ছিলো তবুও কেউ কারো সাথে চোখ মেলাতে পারছে না।নুহা উঠে আবার ওয়াশরুমে চলে গেলো।বাথরোবটা খুলে আয়নায় নিজেকে দেখে ভীষণ লজ্জা পেলো।নতুন একটা অনুভূতি হচ্ছে এখন।নুহা আবার গোসল করে বের হলো।ও বের হবার পরই রেভান ঢুকলো।নুহার শরীর ব্যাথা করছে,জ্বর এসেছে,মাথাব্যথাও করছে তাই ও চুপচাপ শুয়ে পড়লো বাথরোব গায়ে জড়িয়েই।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৪

রেভান গোসল সেরে বেরিয়ে এসে নুহাকে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে ওর কপালে হাত রাখতেই দেখলো কপাল ভীষণ গরম।প্রচন্ড জ্বর এসেছে।রেভান খেয়াল করলো মেয়েটা জামাও পরে নি।তাই ও ভাবলো ও নিজেই পরিয়ে দেবে কিন্তু পরানোর সময় নুহার শরীরে নিজের করা দাগগুলো দেখে নিজেই কপাল চাপড়ালো আর মনে মনে বলল,’ইশ!কি করেছি আমি এগুলো!’
জামা পরিয়ে কাউন্টারে কল করে বলল নুহার অসুস্থতার কথা।তারা যেনো দ্রুত একজন ডাক্তার পাঠান সেটাও জানালো।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৬