বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৬

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৬
Arshi Ayat

প্রত্যেক’টা টিভি চ্যানেলে ফলাও করে প্রচার হচ্ছে রেলমন্ত্রী’র দ্বিতীয় বিয়ের কথা।এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে কক্সবাজারে একটা বিলাসবহুল হোটেলে দেখা গেছে এমন দাবিও করছে কিছু নিউজ চ্যানেল।তার কয়েকটা ঘোলা,অস্বচ্ছ ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে যোগাযোগ মাধ্যমে।হোটেলের নামটা জানতে পেরে সেখানেই ছুটলো অনুরুপ।হয়তো ওরা কোনো সাহায্য করতে পারবে এই আশায়।
ক্ষুধা,ক্লান্তি আর একইভাবে অনেক্ক্ষণ বসে থাকার দরুণ শরীর ব্যাথা,মাথাব্যথায় আবার জ্ঞান হারিয়েছে মিলাত।এখান থেকে বেঁচে ফেরার আশা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছে ও।এবার শুধু মৃত্যুর অপেক্ষা।
সায়মন বিচ রিসোর্টের রিসিপশনে গিয়ে অনুরুপ বলল,’আমার একজনের খোঁজ চাই।’
রিসেপশনিস্ট ছেলেটা বলল,’স্যরি,স্যার।আমরা কারো ব্যাক্তিগত তথ্য দিতে পারব না।এটা আমাদের রুলসে নেই।’
‘আচ্ছা,আপনাদের ম্যানেজার কোথায়?ওনাকে ডাকেন।’

ছেলেটা ফোন করে ম্যানেজারকে ডাকতেই সে হাজির হলো মিনিটখানেকের মধ্যে।তাকে দেখে অনুরুপ অনুরোধের স্বরে বলল,’ভাই,আমার একটা হেল্প লাগবে।আমার স্ত্রী’কে খুঁজে পাচ্ছি না।আমার ধারণা আপনার হোটেলেই আছে ও।আপনি প্লিজ একটু হেল্প করেন।’
‘কিরকম হেল্প চাচ্ছেন আপনি?’
অনুরুপ মিলাতের ছবি দেখিয়ে বলল,’ওর ডিটেইলস লাগবে।’
ম্যানেজার রিসেপশনিস্টকে বলল,’এই নামের কেউ আছে কি না চেক করে দেখুন।’
রিসেপশনিস্ট ছেলেটা দু’বার চেক করেও পেলো না।
ম্যানেজার অনুরুপ’কে বলল,’না ভাই।এই নামে কেউ নেই এই হোটেলে।’
হঠাৎ অনুরুপ বলল,’হোটেলের সবগুলো রুম যদি একবার দেখা যেত তাহলে ভালো হতো।’
‘ইম্পসিবল!আমাদের যতটুকু সাহায্য করার ছিলো করেছি আর কিছু সম্ভব না।এটা আমাদের পলিসির বাইরে।’
‘প্লিজ,ভাই।একটু দেখেন।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘সম্ভবই না।আপনি পুলিশে কম্প্লেন করেন।’
‘করেছি।ওরাও খুঁজছে।’
‘তাহলে অপেক্ষা করেন।’
অনুরুপ মুহুর্তেই মেজাজ হারিয়ে ফেললো।একহাতে গলা চেপে ধরলো ম্যানেজারের।হিংস্র স্বরে বলতে লাগলো,’অপেক্ষা করব মানে?গত চব্বিশ ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করছি।আর কত?মরে যাওয়ার অপেক্ষা করব এখন?আমার ওকে জীবিত লাগবে যেকোনো উপায়ে।তা নাহলে আমি সবকিছু শেষ করে দেব।’
ইতিমধ্যে হোটেলের পাঁচ ছয়জন স্টাফ এসে অনুরুপ’কে জোর করে ছাড়ালো।ম্যানেজার লোকটা চিৎকার করে বলল,’পুলিশ ডাকো।এই বাস্টার্ড’কে পুলিশে দাও।’

অনুরুপ রক্তচক্ষু নিয়ে বলল,’দে,পুলিশে।শুধু আমার বউয়ের কিছু হোক আর ওকে যদি তোদের হোটেল থেকে পাওয়া যায় এই হোটেল আমি বন্ধ করিয়ে ছাড়ব।মনে রাখিস!’
সচারাচর এত অল্পতে মেজাজ হারানোর মানুষ অনুরুপ নয়।ও প্রচন্ড ঠান্ডা মাথার মানুষ কিন্তু গত চব্বিশ ঘন্টা ধরে মিলাতের খোঁজ না পাওয়ায় মস্তিষ্ক উত্তপ্ত হয়ে আছে।
কথাটা ম্যানেজারের কানে লাগল।এভাবে কেউ কখনো ওপেন থ্রেড দেয় নি ওদের।নিশ্চয়ই পাওয়ারফুল কেউই হবে এটা ভেবেই ম্যানেজার অনুরুপ’কে ছেড়ে দিতে বলল।আদেশ শুনে স্টাফ’রা ওকে ছেড়ে দিলো।ম্যানেজার রুক্ষ স্বরে বলল,’যেসব রুমে গেস্ট আছে সেগুলোতে ঢোকা যাবে না।এছাড়া বাকিসব দেখতে পারেন।’
অনুরুপের কন্ঠস্বর নরম হয়ে এলো।ও অনুতপ্ত স্বরে বলল,’ধন্যবাদ ভাই।মাফ করবেন আমাকে।মাথা ঠিক নেই একদমই।আপনার এই উপকার আমি ভুলব না।’

ম্যানেজার মাথা নাড়লো।একজন স্টাফ অনুরুপকে নিয়ে রুমগুলো দেখাতে লাগলো।প্রত্যেক’টা রুম দেখার পরও অনুরুপ পেলো না।শেষে ফিরে যাওয়ার সময় স্টাফ ছেলেটা বলল,’স্যার,বেজমেন্ট’টা দেখবেন একবার?’
অনুরুপ সঙ্গে সঙ্গেই বলল,’হ্যাঁ,চলো এক্ষুনি।’
বেজমেন্টে’র লক খুলে দিতেই অনুরুপ সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো নিচে।টিমটিমে আলোয় প্রথমেই চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞান হওয়া মিলাতের দিকে চোখ গেলো অনুরুপের।প্রায় ছুটে আসলো ও।দ্রুত মিলাতের হাত,পায়ের বাঁধন খুলে ওর নার্ভ দেখলো।এখনও সচল আছে।আর দেরি না করে কোলে নিয়ে সাথের ছেলেটাকে বলল,’অ্যাম্বুলেন্স কল করো দ্রুত।’

ছেলেটা ফোন বের করে কল করতে করতে অনুরুপ মিলাতকে নিয়ে উপরের দিকে উঠে যেতে লাগলো।
কক্সবাজারের সবচেয়ে বড় প্রাইভেটে ভর্তি করানো হলো মিলাতকে।এই হাসপাতালে অনেকদিন কাজ করেছে সেই সুবাদে সবাই অনুরুপকে চেনে।বের কয়েকজন বন্ধু এখনও এখানে কর্মরত।
নুহার ঘুম ভাঙতেই দেখলো ও রেভানের নগ্ন বুকের ওপর মাথা রেখে শুয়ে ছিলো।দ্রুত সরে যেতে চাইলেও রেভান দিলো না।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুম ঘুম স্বরে বলল,’এভাবে থাকো,প্লিজ।তোমার শরীরের ঘ্রাণ ভালো লাগছে ভীষণ!’

অন্য সময় হলে এই কথা বলার অপরাধে ঝগড়া লেগে যেতো নুহা কিন্তু এমুহূর্তে লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো ও।কিছু বলার ভাষাও পেলো না খুঁজে।রেভান ওর সিল্কি চুলে হাত বুলাতে বুলাতে ঘুম ঘুম স্বরে আবার বলতে লাগলো,’আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি,মিলাত।’
নুহা চমকে উঠলো।এতক্ষণের লজ্জা লজ্জা ভাব চলে গেলো নিমিষেই।রেভানকে এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে তড়াক করে উঠে বসলো।এতে রেভানেরও ঘুম ছুটে গেলো।নুহা কঠোর স্বরে বলল,’মিলাত কে?আপনি ওর নাম নিচ্ছিলেন কেন ঘুমের ঘোরে?’

রেভান বুঝলো ও মস্তবড় একটা ভুল করে ফেলেছে নিজের অজান্তেই।তবুও পরিস্থিতি সামলানোর উদ্দেশ্যে বলল,’তুমি একটু বেশি ভাবছো!ঘুমের ঘোরে তো কত কথাই বলে মানুষ।
‘মোটেই না।ও কি আপনার এক্স?’
রেভান বুঝলো আর মিথ্যা বলা সম্ভব না তাই বলল,’না,ও আমার এক্স না।এক তরফা এটা।’
‘আপনি ওকে এখনও ভুলতে পারেন নি?’
‘সত্যি বলতে আগে যেমন মনে পড়তো এখন তেমন পড়ে না তবে যখন পড়ে ভীষণ খারাপ লাগে।’

এই প্রথম নুহা কষ্ট পেলো রেভানের মুখে অন্যকোনো নারীর জন্য কষ্ট পাওয়ার কথা শুনে কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না।এই মানুষ’টার প্রতি তো তার কোনো অনুভূতি নেই।মিথ্যে,মিথ্যে বলে হৃদয়টা চিৎকার করে উঠলো।নুহা কেঁদে ফেললো মুখে হাত দিয়ে।রেভান বিচলিত স্বরে বলল,’কি হয়েছে তোমার?’
কান্নার স্বরেই নুহা বলল,’আপনি কি ওকে ভুলতে পারবেন না?’
রেভান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে স্বান্তনার স্বরে বলল,’ভুলে যাব।’
‘সত্যি?’
‘সত্যি।’

নুহা বিড়ালের বাচ্চার মত রেভানের বুকে ঠাঁই নিলো কিন্তু কান্না থামালো না।রেভান নিজের বউয়ের আরেকটা রুপ দেখতে পেয়ে বিমোহিত।
মিলাতের জ্ঞান ফিরেছে ঘন্টা খানেক পর।শরীর ভীষণ দূর্বল।একটু নড়ারও শক্তি নেই।স্যালাইন চলছে।অনুরুপ ওর শিয়রের কাছে বসে ছিলো।ওকে চোখ মেলতে দেখেই বলল,’জান,কেমন লাগছে এখন?কষ্ট হচ্ছে?ব্যাথা হচ্ছে?কোথায় খারাপ লাগছে বলো?’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৫

মিলাত ইশারা করে অনুরুপ’কে ডাকলো।অনুরুপ ওর মুখের কাছে কান নিতেই মিলাত ধীরস্বরে বলল,’আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবেন প্লিজ?’
অনুরুপ সাথে সাথে জড়িয়ে ধরলো স্ত্রী’কে।চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো প্রিয়তমার মুখশ্রী।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৭