বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৮

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৮
Arshi Ayat

সকালের ফ্লাইটেই ঢাকায় ফিরলো অনুরুপ,মিলাত আর ওদের বাবা,মা।মাঝের উটকো ঝামেলার জন্য ওদের বিয়েটা পরের শুক্রবার ঠিক করা হয়েছে।সেই মত অতিথিদের জানিয়ে দেওয়াও হয়েছে।ঢাকায় আসার পর মিলাত চলে গেলো ওর বাবা-মায়ের সাথে আর অনুরুপ গোমড়ামুখে চলল নিজের বাবা,মায়ের সাথে।এ কেমন নিয়ম?বিয়ে তো হয়েছেই,বাসরও হয়েছে।এইতো চট্টগ্রামে থাকাকালীনও একসাথেই থেকেছে তাহলে এখন থাকলে সমস্যা কোথায়?বিয়ের দিন নাহয় চলে গেলো ওই বাড়ি!

রেভান আর নুহা সন্ধ্যার সময় দেশে ফেরার আগে শেষবারের মত একটু বের হলো।কাছেই একটা কফিশপ আছে এখানকার বিখ্যাত বলা যায়।নুহা বায়না ধরলো যাওয়ার আগে সেখানার কফি টেস্ট করবে।রেভানও ভাবলো যেহেতু আজই শেষদিন সেহেতু যাওয়াই যায়।সব ব্যাকপ্যাকিংও শেষ ইতিমধ্যে।
সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে সুন্দর,নান্দনিক আর ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি শহর হচ্ছে জুরিখ যেখানে বর্তমানে রেভান আর নুহা অবস্থান করছে এবং তারা এখানকারই একটা জনপ্রিয় কফিশপে এসেছে।কফিশপ’টা ভীষণ সুন্দর।এটা মূলত কাঠও কাঁচের তৈরি।যার ফলে ভেতর থেকে বাইরের দৃশ্য দেখা যায়।বসার জায়গাগুলোও বেশ আরামদায়ক আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।মজার ব্যাপার হলো এখানে কফির পাশাপাশি সুইস চকলেট,পেস্ট্রিও পাওয়া যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রেভান আর নুহা শপের ভেতরে গিয়ে বসলো।এখান থেকে জুরিখের সবচেয়ে বিখ্যাত রাস্তাটি দেখা যায়।রেভান ওয়েটার ডেকে নিজের জন্য এক্সপ্রেসো আর নুহার জন্য ক্যাপেচিনো অর্ডার করলো সাথে এখানকার সিগনেচার আইটেম Luxemburgerli অর্ডার করলো।এটা এক ধরনের নরম ও রঙিন মিষ্টি বিস্কুট বা ডেজার্ট জাতীয় খাবার।ভেতরে নরম,হালকা ক্রিমি থাকে।এটা বিভিন্ন স্বাদেরও পাওয়া যায়।
নৈশভোজ শেষে বাবা,মায়ের সাথে টুকটাক গল্প করে মিলাত নিজের ঘরে এলো।বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।মিলাত বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই দেখলো বৃষ্টির ছটা ওর গায়ে লাগছে।এই মুহুর্তে ভীষণ ইচ্ছা করছে একটা এডভেঞ্চার করতে কিন্তু সম্ভব না।তাই বারান্দায় দাঁড়িয়েই বৃষ্টি দেখতে লাগলো মিলাত।তখনই বিছানার ওপর রাখা ফোনটায় রিং হলো।অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো ওর ঠোঁটের কোণে।দ্রুত ঘরে গিয়ে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো গানের সুর।

‘আমার সারাটাদিন,মেঘলা আকাশ,বৃষ্টি তোমাকে দিলাম,
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম।’
দুই লাইন গেয়ে অনুরুপ থামলো।মিলাত মুগ্ধ স্বরে বলল,’ভীষণ সুন্দর।’
‘মিথ্যে।তোমার মত সুন্দর কোনো কিছুই না।’
মিলাত হাসলো।বলল,’বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে।’
‘হ্যাঁ,এমন দিনে বউ ছাড়া থাকা ভীষণ কষ্টের।আমার কষ্ট’টা কেউ বুঝলো না।’অনুরুপ ন্যাকা স্বরে বলল।
মিলাত হেসে ফেললো শব্দ করে।হাসতে হাসতেই বলল,’আহারে..’
‘মজা নিও না।আমার সত্যিই তোমাকে ছাড়া ঘুম হয় না।’
‘মজা নিচ্ছি না তো!’
‘হু,হয়েছে।’

মিলাত হঠাৎই বলে ফেললো,’জানেন আমার না ভীষণ ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজে পুরো শহর ঘুরে বেড়াতে।’
‘তাই?’
‘হ্যাঁ।’
‘আচ্ছা,রাখছি।’
এটা বলেই অনুরুপ ফোন রেখে দিলো।মিলাত তাজ্জব বনে গেলো।হঠাৎ হলোটা কি!হুট করেই ফোন রেখে দিলো!পুরো শহর বৃষ্টিতে ভেজার কথা শুনেই কি রাগ করলো নাকি কোনো দরকারি কল এসেছে?এসব সাত পাঁচ ভেবেই মিলাত অনুরুপ’কে টেক্সট করলো,’কি হয়েছে?ফোন রেখে দিয়েছেন কেনো?আমি কি ভুল কিছু বলেছি?’
অনুরুপ উত্তর করলো না।মিলাত একটু পরপরই চেক করতে লাগলো কোনো উত্তর আসে কি না দেখার জন্য কিন্তু কিছুক্ষণ পরও কোনো উত্তর এলো না।ক্রমশ মনে মেঘ জমতে শুরু করলো ওর।হঠাৎই আবার ফোন বেজে উঠলো।অনুরুপ ফোন করেছে।অভিমানে ভাবলো ফোন তুলবে কিন্তু মন তো মানতে রাজি নেই।তাই রিসিভ করেই কানে ধরতেই ওপাশ থেকে অনুরুপের কন্ঠ ভেসে এলো,’পাখি,নিচে নামো তো!’
অভিমানের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে মিলাত আঁতকে উঠে বলল,’আপনি নিচে এসেছেন?এই বৃষ্টির মধ্যে?পাগল হয়েছেন?’

‘কি করব বলো?একমাত্র বউ কিছু আবদার করেছে আর সেটা আমি পূরণ করব না?’
‘তাই বলে এত রাতে?’
‘আমার ইচ্ছের কাছে রাত দিন নেই পাখি।এখন দ্রুত নামো।’
‘নামছি।’
ফোন রেখেই মিলাত খুশিতে বিছানায় একটা গড়াগড়ি দিলো।তারপর চুলগুলো খোঁপা করে নেমে গেলো।দারোয়ান হয়তো ওয়াশরুমে গেছে তাই গেটে কেউ নেই।মিলাত গেট’টা খুলে বেরিয়ে গেলো।দেখলো বাইরেই অনুরুপ বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে।মিলাত দৌড়ে এসে অনুরুপকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর ঝিলমিল হাসিতে বলল,’এত দ্রুতও যে ইচ্ছে পূরণ হয় আমার জানা ছিলো না।থ্যাংকিউ সো মাচ ফর কামিং ইন টু মাই লাইফ।’

অনুরুপ মিলাতের কপালে চুমু খেয়ে বলল,’আমি থাকতে আমার সাধ্যের মধ্যে কোনো ইচ্ছেই তোমার অপূর্ণ থাকবে না কথা দিলাম।’
তারপর মিলাত অনুরুপের বাইকে উঠতেই অনুরুপ বাইক টান দিলো।পেছন থেকে শক্ত করে অনুরুপ’কে জড়িয়ে ধরে রইলো মিলাত।

স্নিগ্ধ,শান্ত বৃষ্টির রাত।বাতাসে ভেজা বৃষ্টির মিষ্টি ঘ্রাণ আর প্রেমের সুর।এই রাত প্রেমের,ভালোবাসার রাত।মিলাত ভালোবাসার মানুষটির ভেজা পিঠে আলতো চুমু খেয়ে বলল,’আমি আপনাকে পাওয়ার পর বুঝেছি মানুষ কেনো বলে সঠিক মানুষ এলে জীবন সুন্দর হয়ে যায়।আমার জীবনটা এই স্নিগ্ধ বৃষ্টির রাতের মত সুন্দর করে দিয়েছেন আপনি।’
‘আমি না কখনো প্রেম,ভালোবাসা,সংসার এসবো আগ্রহী ছিলাম না।কারো প্রতি সেভাবে অনুভূতি তৈরি হয় নি।মানে হলে হলো না হলে নেই এরকম ছিলো কিন্তু তুমি আমার লাইফে আসার পর আমার কেনো যেনো মনে হতো তোমাকে না পেলে আমি আমার জীবনের অর্থ খুঁজে পাব না।তোমাকেই লাগবে এমন অনুভূতি হতো সবসময়।’
চৈতি আর মতিউর রহমানের মধ্যে সেদিন সকালে দুটো চুক্তি হয়েছে।প্রথম চুক্তিটা হলো ও একজনকে খু’ন করবে সেই দায় যেন ওর কাঁধে না আসে আর খু’নটা করতে সবরকমের সাহায্য যেন পায়।দ্বিতীয়’টা হলো তার মেয়ে নুহার ডিভোর্স করাতে হবে।যদি এই দু’টো শর্ত মতিউর রহমান মেনে নেন তাহলে চৈতি এইসব ভিডিও ডিলিটও দেবে আর তাকেও ডিভোর্স দেবে।মতিউর রহমান প্রথম অস্বীকৃতি জানালেও পরে মানসম্মান আর ক্ষমতা হারানোর ভয়ে রাজি হলো।

চৈতি জানতো এমনটাই হবে।কেউ কারো ক্ষমতা ছাড়তে চায় না এত সহজে।ও ভীষণ খুশি।যাক এতদিনে ওর মনের আশা পূর্ণ হবে।চৈতি শপথ করে মিলাতকে শেষ করে দিয়ে ও রেভানকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবে।তারপরই মনে প্রশ্ন আসে রেভান যদি ওর সাথে না আসতে চায়?চৈতি কুটিল হাসে,সুস্থ বা অসুস্থ যেভাবেই হোক ওকে তো আসতেই হবে।

বৃষ্টিতে ভিজে পরেরদিন দু’জনেরই ভীষণ ঠান্ডা লেগেছে।যদিও এই ঘটনা এখনও কেউ জানে না।কলি বেগম ছেলের জন্য গরম দুধ নিয়ে এসে বলল,’এটা খা।ভালো লাগবে।আচ্ছা একটা কথা বল তো তোদের দু’জনেরই একইদিনে ঠান্ডা লাগলো কিভাবে?মিলাতকে ফোন করলাও ওরও ভীষণ ঠান্ডা লেগেছে তোরও।ব্যাপারটা কি করে?’
‘ইট’স ওনলি পেয়ার মা!’অনুরুপ ভাঙা স্বরে বলল।
কলি বেগম মুখটা বাঁকা করে বললেন,’বিয়ে হলো দু’দিন এরমধ্যেই রোমিও হয়ে গেছসি?’
‘কি করব মা?বাবার আদর্শ ছেলে তো আমি।’
কলি বেগম ছেলের দিকে চোখ গরম করে কপট রাগী স্বরে বললেন,’হয়েছে নাটক।এখন এটা গরম গরম খা।আমি আসছি পাঁচমিনিট পর।’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৭

‘আচ্ছা।’
মা যাওয়ার পর অনুরুপ মিলাতকে কল করলো।রিসিভ করতেই বলল,’কি অবস্থা বউ?’
‘আপনার যে অবস্থা আমারও সেই অবস্থা।’
এটা বলে দু’জনেই একসাথে হেসে উঠলো।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here