বিকেলের প্রণয় পর্ব ৬

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৬
Arshi Ayat

অনুরুপের সাথে দেখা করতে এসেছিলো রেভান তবে পারে নি কারণ অনুরুপের আজ ছুটি।ওকে কাল সকালে পাওয়া যাবে কিন্তু কাল সকাল পর্যন্ত একদমই সময় নেই রেভানের।আজ রাতেই ফিরতে হবে।যাইহোক ও তো এসেছিলো এখন না পাওয়া গেলে কি আর করার!
বিকেলেই ডিসচার্জ দেওয়া হলো মিলাতকে।ও নিজেই থাকতে চাইছে না আর হাসপাতালে।যদিও ওকে আরও একদিন থাকতে বলা হয়েছিলো কিন্তু মিলাত রাজি হয় নি।শারীরিক দিক বিবেচনা করলে এখন অনেকটাই সুস্থ আছে ও।

বাসায় ফেরার পথে হারুন সাহেব মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,’কোথাও ঘুরে আসবি?’
মিলাত মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।ক্লান্ত,বিধ্বস্ত মনটা যদি কোথাও গিয়ে শান্তি পায় তাহলে ক্ষতি কি!
মিনারা বেগম মেয়ের হাত ধরে নরম গলায় বললেন,’তুই এভাবে ভেঙে পড়িস না,মা।তোকে এভাবে দেখতে ভালো লাগে না।আর কেউ না থাকুক আমরা তোর পাশে সবসময় আছি।’
মিলাত বাবা-মায়ের দিকে চেয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,’আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমরা।নিজেও কষ্ট পেয়েছি,তোমাদেরও দিয়েছি।’
হারুন সাহেব মেয়ের মাথা নিজের বুকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,’নিজেকে কখনো একা ভাববি না।তোর ফুপির বাসায় যাবি?’
‘চট্টগ্রাম?’
‘হ্যাঁ।’
‘যাব।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘তাহলে কালকে রাতের ট্রেনের টিকিট করি?’
‘না বাবা,আজ রাতেই যেতে চাই আমি।’
‘কিন্তু মা,আমার তো কাল ছুটি নেই।’
‘সমস্যা নেই,বাবা।আমি একাই যেতে পারব।’
‘অসম্ভব!এই অবস্থায় তোকে একা ছাড়ার প্রশ্নই আসে না।’
‘আমার কিছু হবে না,বাবা।আমি ঠিক আছি।’
‘একটাদিন অপেক্ষা করলে কি হয়?’হারুন সাহেব অসহায় কন্ঠে বললেন।
‘বাবা,গেলে আজ রাতেই আর না গেলে যাবই না।’মিলাতের কন্ঠে জেদ।অবশেষে মেয়ের কথায় রাজি হলেন হারুন সাহেব।তবে দুশ্চিন্তাও হচ্ছে।কালকে অফিসে যাওয়াটা জরুরি তা নাহলে ছুটি নিয়ে নিতো।এদিকে মেয়েও নাছোড়বান্দা।
ক্লায়েন্টের সাথে সুন্দরভাবে মিটিং শেষ করে রেভান সাইফুলের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।নিজের ব্যাগটা নিতে হবে।এরপর রাত দশটার ট্রেন ধরবে।

চৈতির মন খারাপ লাগছে ভিষণ।ভালোবাসার মানুষটা চলে যাবে একটু পর অথচ কিছুই বলা হলো না,করা হলো না।অবাধ্য মনটা শান্ত হচ্ছে না কিছুতেই।মন চাইছে সবকিছু ছেড়ে ছুঁড়ে ওর সাথেই চলে যেতে।একটা মানুষ কিভাবে এত অল্প সময়ের মধ্যে হৃদয়ের এতখানি জায়গা দখল করতে পারে?রেভান যখন চলে যাচ্ছিলো চৈতির তখন ইচ্ছে করছিলো দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে।আবার কবে দেখা হবে?
হারুন সাহেব আর মিনারা বেগম দু’জনেই স্টেশনে এলেন মেয়েকে এগিয়ে দিতে।যেতে যেতে কতো রকমের উপদেশ,আদেশ করলেন তার হিসেব নেই।মিলাতও লক্ষী মেয়ের মতো সব শুনলো আর মাথা নেড়ে পালন করার সম্মতি জানালো।
ট্রেন এসে পড়েছে।যাত্রীরা সবাই যে যার মতো উঠছে।হারুন সাহেব মিলাতকে ওর সীটে বসিয়ে দেবার জন্য নিজেও বগিতে এলেন মেয়ের সাথে।মিলাত নিজের সীটে বসে বাবাকে বলল,’বাবা,এবার তুমি যাও।চিন্তা করো না।আমি ফোন করব।’

‘আচ্ছা,তোর কিছু লাগবে?’
‘ওহ,বাবা!চকলেট,চিপস,বিস্কিট,জুস,আচার আর হাবিজাবি কিনে দেওয়ার পরও জিজ্ঞেস করছো আরও কিছু লাগবে কি না!ওদিকে মা-ও বিরিয়ানি দিয়ে দিয়েছে।কখন খাব আমি এগুলো?’মিলাত অসহায় কন্ঠে বলল।
হারুন সাহেব হাসলেন।মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,’আচ্ছা,ঠিকাছে যাচ্ছি আমি।তুই সাবধানে থাকিস।আর কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথে আমাকে ফোন করবি।’
‘আচ্ছা,বাবা।’
‘এক্সকিউজ মি!’বাবা মেয়ের কথার মাঝেই কেউ পেছন থেকে বলে উঠলো কথাটা।হারুন সাহেব ঘুরে মানুষটিকে দেখেই খুশি হয়ে গেলেন।হাস্যজ্বল কন্ঠে বললেন,’আরে,বাবা!তুমি?’

রেভানও চিনতে পারলো।বলল,’হ্যাঁ,আঙ্কেল।আমি চট্টগ্রাম থাকি।এখানে এসেছিলাম কিছু কাজে।’
‘আরে বাহ!তাহলে তো ভালোই।তুমি সেদিন আমাদের যা উপকার করলে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।’
‘আঙ্কেল এভাবে বলবেন না।ওটা আমার দায়িত্ব ছিলো।এখন আপনার মেয়ে কেমন আছে?’
হারুন সাহেব মিলাতের দিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,’এই যে,আমার মেয়ে।’
রেভান এতক্ষণে খেয়াল করলো মিলাতকে।আর মিলাত সে-ই শুরু থেকেই বাবা আর এই আগুন্তকঃ লোকটার কথা শুনছিলো।হারুন সাহেব রেভানের হাত ধরে বললেন,’বাবা,সেদিনের মতো আজও একটা উপকার করবে?’
‘জ্বি আঙ্কেল, বলুন।’
‘মেয়েটার খেয়াল রেখো।ছুটি না পাওয়ার কারণে ওর সাথে যেতে পারছি না।ওর মা আর আমি দু’জনই বেশ চিন্তিত।’
‘আচ্ছা,আঙ্কেল।আপনি চিন্তা করবেন না।আমি আছি।’
‘ধন্যবাদ,বাবা।’

হারুন সাহেব কিছুটা স্বস্তি পেলেন।মেয়েকে আরেকদফা বিদায় দিয়ে তিনি নেমে গেলেন ট্রেন থেকে।
কিছুতেই ঘুম আসছে না অনুরুপের।এরকমটা আগে কখনোই হয় নি।বারবারই কেবল ওই মেয়েটার কথাই মনে আসছে।মেয়েটা ঠিকমতো ঔষধ খেয়েছে তো?ধূর!এসব চিন্তা ও কেন করছে?মনকে নানারকম প্রবোধ দিয়েও লাভ হলো না।নিজের অজান্তেই হাসপাতালে দায়িত্বরত একজন নার্সকে ফোন করলো অনুরুপ।প্রথম সৌজন্যমূলক আলাপ সেরে পরে বলল,’তিনশো সাতাশ নম্বর রুমের রোগীর কি অবস্থা?আর কোনো সমস্যা হয়েছে পরে?’
‘স্যার,বিকেলে ওনারা ডিসচার্জ নিয়েছে তবে এর আগ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিলো।’
অনুরুপ অবাক হলো।ডিসচার্জ নিয়েছে!ওর না আরও একদিন থাকার কথা ছিলো।তাহলো হঠাৎ ডিসচার্জ নিলো কেনো?

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৫

ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।মিলাত আপনমনে তাকিয়ে আছে জানালার বাইরে।কখন যে লম্বা,ঘন চুলের ভারী খোঁপাটা খুলে গেছে টেরই পেলো না।চলন্ত ট্রেনের খোলা জানালা দিয়ে আসা ঠান্ডা বাতাসে চুলগুলো উড়ছে।কেউ একজন সেদিকে তাকিয়ে আছে অনিমেষ!মস্তিষ্কে দ্বন্দ্ব চলছে কি নামে ডাকবে এই রমণীকে?মায়াবতী নাকি কেশবতী?

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৭