বুনো ওল বাঘা তেঁতুল পর্ব ৪০+৪১

বুনো ওল বাঘা তেঁতুল পর্ব ৪০+৪১
রোজা রহমান

চলে গেছে মাঝে সপ্তাহখানেক। এই সপ্তাহখানেকে কুয়াশা নিজেকে আবার আগের মতো উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। আর এসব কিছু সম্ভব হয়েছে তার পরিবারের জন্য। মানুষ জীবনে ভালো কাজের জন্য পূর্ণতা পায়। কুয়াশা বোধহয় চাঁদ কপাল করে জন্মেছিল এই পরিবারে। আল্লাহ মানুষের জীবনে যেমন কঠিন বাস্তবতা দেখান তেমনই সেই কঠিন বাস্তবতা থেকে উঠতে, বেড়তে, মেনে নিতে কোনো না কোনো মাধ্যম ঠিকই দেন৷ কষ্টের পর আনন্দের সুযোগ ঠিকই দেন৷ দুঃখ সময় কাটিয়ে সুখের সময় পাড় করার জন্য সুযোগও দেন৷

কুয়াশার পরিবারের এক একটা সদস্যের যেমন ধারা বুঝ এই বুঝ কতজনের হয়? সকলে যদি এমন বুঝে চলত তবে কী ভাইয়ে ভাইয়ে, জা’য়ে জা’য়ে অপত্যা বলে কিছু হতো? কত পরিবার আছে যেখানে নিজের বাড়ির গীত সমাজের লোকের কাছে গেয়ে বেড়ায়৷ নিজের বাড়ির মেয়ের কুকীর্তি সমাজের কাছে ধরিয়ে দেয়। এমন কতশত পরিবার আছে৷ কিন্তু কুয়াশার পরিবার? কুয়াশার পরিবারের চাচুরা, চাচিরা, ভাইরা, ভাবিরা তার দুঃখ, কষ্ট সময়ের সঙ্গী হয়েছে। ঢাল হয়েছে তার দুঃখ সময়ের। মনবল হয়েছে মেয়ের। সমাজকে মেনে নিতে শিখিয়েছে৷ শিখিয়েছে সমাজের সাথে লড়াই করতে, জানিয়েছে সমাজের লোকের দৃষ্টিভঙ্গি। একটা মেয়ের জন্য সমাজে বেঁচে থাকা কতটা কঠিন সেটা যারা মেয়ে হয়ে জন্মেছে তারা ভালো জানে৷ সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে জীবনের শেষ দিন কখন যে চলে আসে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কুয়াশাকে ভাঙতে দেয়নি শিশির। তার কথামতো সে কুয়াশার জোর হয়েছে। হয়েছে শক্ত মেরুদণ্ড। যেই জোরে কুয়াশা নিজেকে গুটাতে পারেনি৷ শিশিরকে সে বিয়ের আগে শুধু চাচাত ভাই জানত। আর ছোট থেকে তার আদর, ভালোবাসা না পেয়ে তাকে সে সহ্য করতে পারত না৷ পারবে কি করে? যেখানে ওকে বাড়ির প্রতিটা সদস্য একমাত্র মেয়ে বলে মাথায় করে রাখত সেখানে, একটা মাত্র ছেলে কিনা তাকে হিংসা করত? এটা তো তার মনে প্রভাব ফেলবেই৷ আর মেয়ে যদি হয় একটু জেদি প্রকৃতির তাহলে তো কথা-ই নেই! হ্যাঁ কুয়াশা জেদ একটু জেদি কিন্তু ন্যাকা মেয়ে সে না৷ ন্যাকামো করা মেয়ে আর জেদি মেয়ের মধ্যে বিরক ফারাক। আজকাল মেয়েরা জেদি একটু আধটু হয়-ই। আর সেগুলো তার পরিবারের প্রতিটা সদস্য মাথা পেতে গ্রহণ করে। তাদের কথা, একমাত্র মেয়ের, বোনের জেদ সহ্য করবে না তো কার জেদ সহ্য করবে? তার অহংকার তার পরিবার সেই জোরে সে জেদি। তার আহ্লাদ তার পরিবার সেই জোরে সে আহ্লাদী। একমাত্র মেয়ে পরিবারের কাছে আহ্লাদী হবে না তো পাড়ার লোকের কাছে হবে?

শিশিরের প্রতি মনোভাব পাল্টেছে তার। সে তার হৃদয়রাজ হতে সক্ষম হয়েছে। এখন শুধু স্বীকার করা বাকি। কিন্তু কথায় আছে না? মেয়েদের বুক ফাটে তবুও মুখ ফোঁটে না? ঠিক সেটাই হয়েছে কুয়াশার। সে শিশিরের দায়িত্ব দেখতে পেরেছে, যত্ন দেখতে পেরেছে কিন্তু ভালোবাসা কি আদৌ দেখতে পেরেছে? শিশির তো তাকে বলেছিল, ” আমি তোর দায়িত্ব নিয়েছি এড়িয়ে যাব না ” হয়তো সেই দায়িত্ববোধেই আছে৷ সেই ধারণা থেকে কুয়াশা মনে কথা জানাতে নারাজ। সে অপেক্ষা করবে শিশিরের ভালোবাসা পাবার, স্বামীর ভালোবাসা পাবার। দেখা যাক, তার স্বামীর মনে তার জন্য কবে ভালোবাসা ফুল ফোটে৷ বউ হিসেবে মেনে তো নিয়েছে কিন্তু ভালোবাসা তার মাঝে কি সৃষ্টি হয়েছে? বউ বলে তো সকলেই মানে ভালোবেসে বউ কতজন মানে? যাদের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়, তারা তো কবুল বলে খালাশ! না লাগে ভালোবাসা আর না লাগে মনের মিল। সংসার করতে পারলেই হলো। কিন্তু এই দু’টো বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুলের তেমন সংসার চাই না। তারা চাই ভালোবাসা, মনের মিল। দায়িত্ব নিয়ে ভালোবাসতে। ঠিক সেই দিনের অপেক্ষা দু’জন করছে।

বিয়ের আগে একসাথে বড় হয়েছে কিন্তু কেউ কাউকে মুগ্ধ নজর তুলে তাকিয়েও দেখে নি এক হিংসা, শত্রুতার নজর ছাড়া। কিন্তু বিয়ের পর দু’জন দু’জনকে নতুন রূপে দেখতে শিখেছে, নতুন রূপে জানতে শিখেছে। মুগ্ধ নজরে দেখতে শিখেছে। শত্রুতার মাঝে স্বামীস্ত্রীর সম্পর্ক মানার জন্য একে অপরের সৌন্দর্য দেখেছে। মন দেখেছে। সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েছে। এই জন্য-ই তো তারা একে অপরের মনে জায়গা করতে পেরেছে, হৃদয় ছুঁতে পেরেছে। আর এ-সবকিছু শুধু আর শুধু মাত্র বিয়ের তিন কবুলের জোরে। বিয়ের বন্ধনের জন্য। যা বেঁধে দিয়েছে বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুলকে৷ তারা এখন হাজার দূরে থাকতে চাইলেও বিয়ে নাম বন্ধনটা তাদের মনে করিয়ে দেয় তারা এখন স্বামীস্ত্রী। একে অপরের অর্ধাঙ্গ, অর্ধাঙ্গনী।

রাত আটটার দিকে। শিশির, নীহার বাড়িতে এলো। একসাথই এলো। হাতে করে কিছু খাবার নিয়ে এসেছে৷ তা হচ্ছে হালিম, পিৎজা আর কোল্ড ড্রিংক’স৷ কুয়াশা পড়তে বসেছিল৷ একটু পর খেতে নিচে নামবে৷ কিন্তু তার আগেই শিশিরের ডাক কানে এলো। আজ কাল বাড়িতে এলে কুয়াশাকে ডাকে৷ বাড়ির প্রতিটা সদস্য ওদের দু’জনের এমন পরিবর্তন লক্ষ্য করে প্রশান্তিময় হাসি ঠোঁটে ঝুলায়৷
” কুয়াশা, এ্যাই কুয়াশা..! ”

কুয়াশা ডাক শুনে পড়া ছেড়ে নেমে এলো। তার শরীর খারাপ। সেইজন্য ঘরেই থাকে। এই সময়টা বেশি বের হয়না৷ সিঁড়ি বেয়ে বার বার ওঠা নামা করলে ব্যথা বাড়ে। কুয়াশা নেমে এসে দেখল তার পছন্দের হালিম আর পিৎজা৷ খুশি হয়ে গেল। খাসির মাংসের হালিম তার বড্ড প্রিয়৷ নীহার বলল,
” তোর হালিম।”
কুয়াশা মুচকি হেসে হাতে নিয়ে ভাবিদের কাছে চলে গেল। বৃষ্টির শরীর আজকাল বেশিরভাগ সময় খারাপ থাকে। বমি করতে করতে বেচারী আধমরা হয়৷ যখন ভালো লাগে তখন নিচে থাকে৷ এখন খাবার সময় হয়ে গেছে তাই সকলে রান্নাঘর সহ ডাইনিং এই ছিল। সেখানে গিয়ে ভাবিদের সাথে মজা করে খেল পিৎজা, হালিম। বৃষ্টি বেশি খেতে পারে না৷ খেলেই সব তুলে দেয়। তাই অল্প একটু খেল৷

রাত বারটা পাড়। তবুও কুয়াশা ঘুমতে এলো না আজ? কথাটা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবছে শিশির। সে পড়ার টেবিলে এখনো। রোজ কুয়াশা বারটা বেজে গেলেই ঘুমতে চলে আসে। শিশির ভাবল হয়তো পড়ার চাপ বেড়েছে তাই পড়ছে। তা নিয়ে বেশি ঘাটল না। সে আবার পড়ায় মন দিল৷ যতক্ষণ না আসে ততক্ষণ পড়া যাক!
পড়তে পড়তে রাত একটার কাঁটা ছুঁই ছুঁই কিন্তু কুয়াশা এ ঘরে এলো না। তাই উঠে পড়ল। উঠে বেড়িয়ে কুয়াশার ঘরের সামনে গেল৷ দরজা দেয়া? তাহলে কুয়াশা কই? ভেবে কুয়াশার ঘরে দরজায় নক দিয়ে আস্তে করে ডাকল,
” এ্যাই কুয়াশা..! ”

উত্তর দিল না কুয়াশা৷ অদ্ভুতভাবে চোখমুখ কুঁচকে গেল শিশিরের৷ এরপর ধাক্কা দিল দেখল দরজা খুলে গেল। দরজা খোলায় ছিল! ভেতরে তাকিয়ে দেখল কুয়াশা শুয়ে কাতরাচ্ছে। মরণ যন্ত্রণার মতো করে। বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে আর একবার কোমড় ধরে কাতরাচ্ছে তো একবার পেট৷ শিশির ওর এই অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। কী হয়েছে এভাবে গড়াগড়ি খাচ্ছে কেন! আরেকটু লক্ষ্য করে দেখল চোখ থেকে টপাটপ পানি পড়ছে৷ কিন্তু কান্নার আওয়াজ হচ্ছে না৷ মূলত ব্যথাটা সহ্য করার চেষ্টা করছে কিন্তু এতটাই তিব্রতা ব্যথার যে না চাইতেও চোখ থেকে টপাটপ পানি বেড়িয়ে আসছে। মেয়েদের সহ্যসীমা যে কতটা তা এসকল বিশেষ দিন আসলে বোঝা যায়।
শিশির হতভম্ব হয়ে দ্রুত পায়ে ভেতরে ঢুকল। এইরকম পরিস্থিতি তার জানা নেই আর পড়েও নি। সে কুয়াশার কাছে গিয়ে খাটে এক পা তুলে হাঁটু মুড়িয়ে দিয়ে বসে জিজ্ঞেস করল,

” কুয়াশা? কি হয়েছে? এরকম করছিস কেন? কোথায় কষ্ট হচ্ছে ? পেট ব্যথা করছে? গ্যাসট্রিক বেড়েছে, তবে ওসব খেলি কেন? ”
শিশির একের পর এক প্রশ্ন করছে। কুয়শা যন্ত্রণায় শিশিরকে খেয়াল করেনি। কন্ঠ পেয়ে খুবই বিব্রত হলো। পেটের ব্যথা এতটায় তিব্র যে উঠে গিয়ে মা’কে ডাকারও শক্তি পায়নি। এমন দিনে আজমিরাই পাশে থাকেন। তিনিই যত্ন নেন মেয়ের৷ তার ব্যথা মাঝে মাঝেই ওঠে। মূলত পিরিয়ড হলে ব্যথা আসে। কখনো তিব্র তো কখনো কম। যখন খুব বেশি হয় সহনশীলতার সীমা পেরিয়ে যায় তখন মাকে গিয়ে ডেকে আনে। জাকিয়াও অনেকবার টের পেয়ে যত্ন নিয়েছেন। মেয়েটার বয়ঃসন্ধিকালের প্রথম পিরিয়ডে হাড় ভাঙা ব্যথা উঠেছিল। সেটার সময় কাতরিয়ে আধমরা হয়েছিল। আজমিরা সব বুঝিয়েছিলেন। জাকিয়া সব জানিয়ে বলেছিলেন এসব বিষয়ে। জোরে কান্না করতেও মানা করেছিলেন।

কুয়াশা মূলত আজ এই ঘরে থাকতে চেয়েছিল তাই যায়নি। আর পড়তে পড়তে পেট ব্যথা এতটাই বেড়ে গেছে যে দরজাতেও ছিটকানি দেবার শক্তি পায়নি৷ সে শিশিরের কাছে খুবই অস্বস্তিতে পড়ল। আজ বিয়ের পর প্রথম এমন পরিস্থিতি হলো৷ তাই খুবই অস্বস্তি হচ্ছে। সে কোনো কথা বলছে না৷ চোখ মুখ খিঁচিয়ে পেট ধরে এবার পড়ে রইল৷ শিশির এবার অবাকই হলো। জহুরী নজর দিল কুয়াশার উপর। ওর মুখের দিকে একবার নজর দিল তো একবার পেট ধরা আর কোমড় ধরার দিকে নজর দিল। যদিও এই পরিস্থিতিতে আজ নতুন সে। তবুও পড়াশুনোর অভিজ্ঞতা থেকে বুঝল বিষয়টা৷ এই সামান্য জিনিস বুঝতে সমস্যা হলো না৷

তবে বিষয়টা বুঝতে পেরে তাকেও একটু অস্বস্তি দিল। তাদের সম্পর্ক তো এখনো ততটা গভীরে যায়নি! পরক্ষণেই নিজেকে সামলাল৷ বিয়ে করা বউ তার। বউয়ের শারীরিক, মানসিক সব পরিবর্তনই তার সামনে আসবে। না চাইতেও আসবে। এক সাথে সংসার করলে স্বামীস্ত্রীর বিষয়ে তো সবই জানা হয়ে যায়? এটাই স্বামীস্ত্রীর মধ্যকার কঠিন বাস্তবতা। আর এতদিন এসবের সাথে পরিচয় হয়নি। কিন্তু এখন হতে হচ্ছে।
শিশির নিজেকে সামলে কুয়াশাকে ধরে উঠাল। বসিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,

” খুব ব্যথা করছে?”
কন্ঠটা কেমন ছিল আর প্রশ্ন করাটাও৷ যা দ্বারা কুয়াশা বুঝল যে শিশির বুঝেছে সে না বলতেই৷ ব্যথাতুর চোখ নিয়েই অবাক নয়নে তাকাল। দু’জনের চোখাচোখি হতেই দু’জনকেই আবার অনেকটা অস্বস্তি গ্রাস করল। কুয়াশাকে অস্বস্তি সহ লজ্জা গ্রাস করল। শিশির নিজেকে সামলে কুয়াশার চোখের দিকে তাকিয়ে আবার জিজ্ঞেস করল,
” ব্যথা করছে খুব? ”
কুয়াশা মাথা দুই বার উপর নিচ করে উত্তর দিল। শিশির বলল,
” লজ্জা পাবার কিছু নেই৷ এখন থেকে এমন অনেক কিছুর সাথে পরিচয় হতে হবে তোর, আমার।”
কুয়াশা কথাটা ভাবল। সত্যি তো! স্বামীস্ত্রী তারা। না চাইতেও এসব সামনে আসবে শিশিরের। তাই নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

” আম্মুকে একটু ডেকে দিয়ে তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো। আমি এ ঘরে থাকব আজ। ”
কুয়াশার কথায় ভ্রু কুঁচকে গেল। কুয়াশা আমতা আমতা করে বলল,
” ব্যথা করছে অনেক আম্মু এসে থাকবে। ঠিক হয়ে যাবে। ও ঘরে তো আম্মু থাকতে পারবে না। তাই বললাম।”
শিশির বলল,
” হাঁটতে পারবি? ”
” তুমি আম্মুকে ডেকে দিয়ে চলে যাও তো। হাঁটতে পারছি না তাই ডাকতে পারছি না। ঘুমোও গিয়ে। চিন্তা করতে হবে না।”

বলে আবার পেট ধরে শুয়ে পড়ল। কারণ বসে থাকতে তার জীবন বের হয়ে যাচ্ছে। কথাগুলো খুবই কষ্টে বলল। শিশির আর কথা বলার সুযোগ দিল না। কোলে তুলে নিল। কুয়াশা চমকে হতভম্ব হয়ে তাকাল। বলল,
” আরেহ্ করছ কি? ধুর..ছাড়ো তো, অসহ্য! ”
শিশির কুয়াশার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
” বউ তুই আমার। সেবা, যত্নও আমিই করব। তোর শ্বশুর আর আমার চাচা-শ্বশুর আমাকে তোর দায়িত্ব দিয়েছেন না? আদর যত্ন করার জন্য? এখন সেই দায়িত্বই পালন করব, চল।”

কুয়াশা চোখ বড় বড় করে তাকাল। বলে কী!! শিশির ঠোঁট কামড়ে মুচকি হাসল তা দেখে। হাঁটা ধরল নিজের ঘরে। গিয়ে কুয়াশাকে বসিয়ে দিল বিছানায়। এরপর আগে গুগল থেকে দেখে নিল কী কী করলে ব্যথা নিরাময় হবে! সেই অনুযায়ী আগে গরম পানি লাগবে। এরপর আদা নয়তো আদা দিয়ে চা। কিন্তু সে তো রান্না ঘরে যায় না কখনো! জিজ্ঞেস করল,
” গরম পানির সেঁক দিলে আরাম লাগে। আদা খেলেও নিরাময় হয় কিন্তু আমি তো রান্নাঘরে যায় না। সেসবের অভ্যাস নেই।”

” তোমাকে বললাম তুমি ঘুমোও? তবুও শুনলে না৷ যাও আম্মুকে ডাকো! ”
বসে থেকে ঝাঁঝ নিয়ে বলল কথাটা। মেজাজ গরম হচ্ছে তার। মানা করল তবুও শুনল না। এত দায়িত্বই বা পালন করতে হবে কেন? ভালোবাসতে জানে না আসে শুধু দায়িত্ব নিয়ে। যত্তসব!! আপন মনে আওরাল কথাগুলো সে।
এদিকে শিশির কুয়াশার দিকে ভ্রু কুঁচকে বিরক্ত চোখে চেয়ে বাইরে চলে গেল। গিয়ে ভাবল মা’কে ডাকবে নাকি শাশুড়ীকে ডাকবে? শাশুড়ীকে ডাকতে কেমন কেমন যেন লাগছে। যতটা মা’কে ডাকা সহজ মনে করছে। এই ভেবে মা-বাবার ঘরের সামনে চলে গেল। এত রাতে কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। তবুও দরজায় বারকয়েক টোকা দিয়ে আস্তে করে ডাকল,

” আম্মু.. আম্মু! ”
কিছুক্ষণ ডাকার পর জাকিয়া ঘর খুললেন। ছেলেকে এতরাতে এখানে দেখে অবাক হলেন৷ আতঙ্কিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
” কি হয়েছে আব্বু? এত রাতে তুই? কোনো সমস্যা হয়েছে? ”
মায়ের আতঙ্কিত কথায় শান্ত করল,
” আস্তে আম্মু। বাবার ঘুম ভেঙে যাবে। তেমন কিছু না। শান্ত হও ”
জাকিয়া ভ্রু কুঁচকালেন,
” তবে কি? ”
শিশির এবার অস্বস্তি মুখে আমতাআমতা করে বলল,
” একটু গরম পানি আর আদা দিয়ে চা করে দাও না!”

জাকিয়া শুনে আবারও ছেলের মুখের দিকে তাকালেন। ভ্রু তার আগের ন্যায়৷ ছেলের তিব্র অস্বস্তি আর আমতাআমতা কথাতে কি তিনি ধরতে পারলেন কিছু? হয়তো পারলেন৷ আর এসব জিনিস এবাড়িতে একজনের লাগে প্রায়ই৷ তিনি ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। মাথার চুল এলোমেলো করে দিলেন হাত বাড়িয়ে। বললেন,
” আমার পা’গ’ল ছেলে, চল!”
শিশির একটু লজ্জাবোধ করল বটে। তবুও নিজেকে সামলে নিল৷ বলল,

” ও বলল ছোট আম্মুকে ডাকতে কিন্তু আমার কেমন জানি লাগল তাই তোমাকে ডাকলাম। ঠিক করেছি না?”
” তোর ছোট আম্মু আর আমি কি দুই হলাম? দু’জনেই এখন এক। ”
কথা বলতে বলতে দু’জনই নিচে নেমে এলো। কী সুন্দর দৃশ্য নাহ্? শাশুড়ী আর স্বামী মিলে বউয়ের জন্য রান্না ঘরে৷ জাকিয়া পানি চুলার উপর দিতে দিতে বললেন,
” তা আমার ছেলের ‘ও’ কি আমার ছেলের বউ হতে পেরেছে? ”
শিশির এবার ভড়কে গেল মায়ের কথায়। জাকিয়া মুচকি মুচকি হাসছেন। তিনি আবার বললেন,
” তোদের পরিবর্তন চোখে পড়ছে৷ ভালো লাগছে আমাদের। এটাই চেয়েছিলাম। তোরা যে এত জলদি মানতে পারবি সেটা ভেবেই আশ্চর্য হই। যা করতি বাবাহ্ রে..!”

” মানারই তো ছিল আম্মু! ওর উপর যে কারণে আগে হিংসে করতাম সহ্য করতে পারতাম না এখন সেটা আসেনা। তাই এত জলদি মানতে পেরেছি। আগে থেকে নমনীয়তা দেখালে এমন হতো না হয়তো। তাছাড়া তোমার বৌমা বউ হিসেবে খারাপ না। শুধু জেদি। আহ্লাদী আহ্লাদ করে শুধু।”
শেষ কথাটা এমন ভাবে বলল শিশির। জাকিয়া না চাইতেও একটু শব্দ করে হেসে ফেললেন। মেকি রাগ নিয়ে বললেন,

” এ্যাই আমার মেয়ে আগে থেকেই আহ্লাদী। আহ্লাদ করবে না তো কি করবে? তুই সহ্য করবি।”
” হ্যাঁ, আহ্লাদে আহ্লাদে বাদর বানাতে আমি পারব না। ওকে শাসনের উপরই রাখতে হবে।ওটা ওর ঔষধ।”
জাকিয়া হাসলেন। বললেন,
” সে তুই তোর ‘ও’কে কি করবি না করবি তুই বুঝে নিস।”
শিশির মায়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলল। তার মা’ও মজা নেয় সুযোগ বুঝে৷
” তবে ভালোবাসতে পেরেছিস তো? মেনে নেয়া আর ভালোবাসা কিন্তু এক না আব্বু!”
শিশির মা’য়ের দিকে তাকাল৷ কথাটা ভাবল। পেরেছে কি ভালোবাসতে? এই যে ওর জন্য তড়পানো, ওর প্রতি দায়িত্ববান হওয়া যত্ন নেয়া এসব কি ভালোবাসার কাতারে পড়ে? নাকি পড়ে না? প্রশ্নটা কেন যেন নিজের কাছে চলে এলো। সে ভেবে উত্তর করল,

” হয়তো আম্মু। তবে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ও। কিন্তু কিছু প্রকাশ করিনি এখনো ”
” হয়তো, যদি, কিন্তু এসব বাদ দিয়ে তোর মন যদি বলে ভালোবাসতে পেরেছিস তবে সেটাই তোর আসল উত্তর হবে। জানবি সেদিন তুই ভালোবাসতে পেরেছিস। আব্বু কুয়াশা ভালোবাসার পূজারী। ভালোবেসে দেখিস মেয়েটা চরম আহ্লাদী। জীবন রঙিন হবে তোর। আমরা সেদিনের অপেক্ষায় রইলাম। শুধু দায়িত্ব নিয়ে সংসার সাজানো যায় না। ভালোবেসে, ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে হয়, আঁকড়ে ধরতে হয়।”
মুগ্ধ হলো শিশির মায়ের কথায়৷ মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইল কিয়ৎক্ষণ৷ এরপর মুচকি হাসল। তবে উত্তর করল না৷ জাকিয়া আদা কুঁচি কুঁচি করে প্রিচে দিয়ে গরম পানি নিয়ে বললেন,

” আমার সাথে আয়।”
শিশির কথামতো গেল৷ এরপর শিশিরের ঘরে গিয়ে দেখল কুয়াশা এবার গুঙিয়ে কাঁদছে। ব্যথা আবার বেড়েছে। ঘুমও ধরা দিচ্ছে না৷ এই রাতে ব্যথা উঠলে এতটা জ্বালায়! শিশির বলল,
” সেই তখন থেকে এভাবে কাতরাচ্ছে ”
” চিন্তা করিস না৷ ঠিক হয়ে যাবে। এমন হয় ওর৷ তুই একটা কাজ কর। ওর ঘরে দেখ বেডসাইড ডয়ারে হট ওয়াটার ব্যাগ আছে। নিয়ে এসে দে আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি সব।”
কুয়াশা ব্যথার মধ্যেও অবাক চোখে চেয়ে রইল এই দুইটা মানুষের দিকে। শিশির কথা না বাড়িয়ে এনে দিল। জাকিয়া হট ওয়াটার ব্যাগে পানি ঢালতে ঢালতে বললেন,

” একদিন রাতে বাহিরে এসে দেখছি অনেক রাতে কুয়াশার ঘর থেকে গুঙানি আর কথার আওয়াজ আসছে। কৌতূহল বসত ঢুকে দেখি মা মেয়ের ওরকম দৃশ্য। মেয়েটা কাতরাচ্ছে কিন্তু কাউকে ডাকছে না আজমিরা। রাগ উঠেছিল। তবে মায়াও লেগেছিল। আজমিরা খুবই নরম মনের৷ মুখ ফুটে কিছু বলে না৷ সেদিন রাত জেগে দু’জন মিলে মেয়ের সেবা করলাম৷ পরেরদিন তুষারকে দিয়ে এটা কিনে আনিয়েছিলাম৷ আগে তোয়ালে দিয়ে সেঁক দিত আজমিরা৷ তবুও প্রয়োজনবোধ জানায় নি। চিন্তা করেছিস তোর শাশুড়ী কতটা পাগলী? ”

শিশিরের খুবই খারাপ লাগল শুনে। সে জীবনেও এসব দেখেনি। এসব দিকে নজর দেয়নি। বাড়িতে কুয়াশার কী লাগবে না লাগবে তুষার দেখেছে৷ শিশির গিয়ে কুয়াশার পাশে বসল। তুলে নিয়ে বসিয়ে দিল। দিয়ে বুকের সাথে আগলে ধরল৷ জাকিয়া মুচকি হাসলেন৷ এরপর হাতের ব্যাগটা দিয়ে বললেন,
” এটা তল পেটে ধরে সেঁক দিতে থাক৷ আর এই আদা কুঁচি খাওয়া৷ চা দিলাম না এত ব্যথা ধৈর্য ধরে চা খেতে পারবে না। কাল সকালে খাবে। ”
শিশির কথা অনুযায়ী সেটা করল৷ কিন্তু অদ্ভুত এক অনুভূতির সাথে পরিচয় হলো৷ কুয়াশা কেঁপে উঠল। শিশির টের পেল বোধহয়। তবে মায়ে সামনে কিছু বলল না৷ কুয়াশা শুধু মা ছেলেকে দেখেই গেল৷ আজমিরা কুয়াশার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

” কাঁদিস না মা৷ ঠিক হয়ে যাবে৷ আমার ছেলে তোর পাশে আছে। ”
কুয়াশা ছলছল চোখে চেয়ে রইল। শিশিরের মাথায় হাত রেখে বললেন,
” চিন্তা করিস না আব্বু, ঠিক হয়ে যাবে৷ এভাবেই যত্ন নিবি। আমি আসছি! ”
শিশির সম্মতি দিতেই বেড়িয়ে গেলেন জাকিয়া৷ শিশির উঠে গিয়ে দরজা আটকে দিল। এসে ল্যাম্প লাইট জ্বালিয়ে দিল। এরপর কুয়াশাকে শুয়ে দিয়ে সেঁক দিতে থাকল। এতক্ষণ মরণ যন্ত্রণা থেকে আস্তে আস্তে আরামবোধ হলো। আদা চিবাচ্ছে সাথে৷ ঔষধ সে খাই না৷ এমন প্রাথমিক চিকিৎসাই নেয়। শিশির দেখল কাতরানো একটু কমিয়ে দিয়েছে। বলল,

” কমছে? ”
” হুঁ, আরাম লাগছে। ”
শিশির বলল,
” দেখলাম ম্যাসাজ করলেও আরাম লাগে। করে দেব? তুই বললে দেব।”
কুয়াশা অদ্ভুত নজরে তাকাল। এই ছেলেকে সব অধিকারই দিতে হবে সেখানে এটা আর তেমন কি?
” হুঁ।”

শিশির কুয়াশা তলপেট স্পর্শ করতেই সে কারেন্ট শকট লাগার মতো করে কেঁপে উঠল। শিশিরেরও শরীরে ঝাঁকানি দিল। এ কেমন অনুভূতি? নিত্য নতুন অনভিজ্ঞতা, অনুভূতির সাথে দু’জন পরিচয় হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে অনুভূতিরা তত গভীর হচ্ছে। এক অদম্য অনুভূতি কাজ করছে শিশিরের৷ শিশির আলত হাতে কুয়াশার পেট ম্যাসাজ করতে করতে কুয়াশার দিকে তাকাল। কুয়াশা লজ্জায় চোখ মুখ খিঁচিয়ে নিল। শিহরণ হচ্ছে শরীরে। শিশির ঠোঁট কামড়ে হাসল। সম্পর্কের গভীরতা টের পাচ্ছে। অদ্ভুতভাবে অতিশয় আপন লাগছে এই মেয়েটাকে। আপনই তো! তার হৃদয়ে রাজ করতে বসেছে এই হৃদয়রাণী
কুয়াশা আধা ঘণ্টা মতো চোখ বন্ধ করে পড়ে রইল। এরপর যখন ব্যথা কমে গেল শিশিরকে বলল,

” শুয়ে পড়ো। কমে এসেছে। এবার সেরে যাবে ”
” কষ্ট হচ্ছে না আর? ”
” খুব না। ”
” আরেকটু করি। ”
” লাগবে না, এসো। ”
বলে হাত বাড়িয়ে দিল। শিশির মুচকি হেসে হট ব্যাগ রেখে লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়ল। কুয়াশার গলায় মুখ গুঁজে দিল। কুয়াশা বলল,
” এত ভালো লাগে এখানের স্মেল? ”
অবাক হলো শিশির। মুখ গুঁজে রেখেই বলল,
” তুই জানলি কি করে? ”
” যে ভাবে শ্বাস টানো! ”
শিশির ফিসফিস করে হেসে দিল। টেনে নিল আরেকটু।

দুইদিন পর। দুপুর চারটা। শিশির এসে মাত্র গোসল করে বের হলো। সেই সময়ে কুয়াশা এলো। শিশির সেদিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে তৎক্ষনাৎ আবার তাকাল। সামথিং স্পেশাল লাগছে কি? হ্যাঁ লাগছে তো। নাকে নাকফুল পড়েছে!!
কুয়াশার নাক ফুটো করার পরে সুতো কেটে নাকফুল পড়তে পারেনি। সমস্যা হচ্ছিল অনেক। এখন নাক শুকিয়ে গেছে অনেক। তাই জাকিয়া নাকফুল পড়িয়ে দিয়েছে আজ। শিশির বিড়বিড়াল,
” অপ্সরা। ”
” কি বলো? ”
” এদিকে আয় ”
কুয়াশা এগিয়ে গেলে হাত ধরে টেনে নিল।
” সুন্দরী, অপ্সরা লাগছে নাকফুলে আমার আহ্লাদী বউকে।”
লজ্জা পেল সে। মাথা নিচু করে রাখল। শিশির হাসল।

তাল পাকা ভাদ্র মাস। কথায় আছে, ভাদ্র মাসের তাল পাকা গরম পড়ে। তাল পাকা ভাদ্র মাসের ভেঁপসা গরমে মানব জীবন অতিষ্ঠ৷
ভাদ্র মাস শেষের দিকে। সেদিনের পরে কেটে গেছে একটা মাস। এই এক মাসে অনেক কিছুই পাল্টেছে শিশির কুয়াশার বিবাহিত জীবনে। শিশির কুয়াশার মাঝে এখন অনেকটা ভালোবাসা এসে হাতছানি দিয়েছে। একে অপরের মাঝে সুন্দর একটা খুঁনসুটিময় বন্ডিং তৈরি হয়েছে। ভালোবাসা মুখে না বলেও কাজে প্রকাশ করে দেয় তারা একে অপরকে ভালোবেসে ফেলেছে। গভীর কাছে আসাআসি অবশ্য এখনো হয়নি। কারন তেমন প্রস্তুতি এখনো মানসিক ভাবে দু’জনের একজনও প্রস্তুত হয়নি। হয়তো জড়তা কাজ করে দু’জনের। শারীরিক সম্পর্কের জন্য তাদের আগের সম্পর্ক কেন যেন মনে পড়ে যায়। জড়তা এসে ভিড় জমায়। এই জন্য কেউই ওদিকে আগাতে পারে না৷ মুখ ফুটে একে অপরের চাহিদার কথা বলতে পারে না। শিশিরের মাঝে যদিও কাজ করে কিন্তু নিজের ব্যস্ততার জন্য সেদিকে মানসিক প্রস্ততি নিতে পারে না। তার আর কিছুদিন পর নির্বাচনী পরীক্ষা। সেই নিয়ে সে অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সব কিছু গুছিয়ে উঠলেও আবার ব্যস্ততা এসে হানা দেয়।

কুয়াশাও অধির আগ্রহে বসে আছে শিশিরের নিজে মুখে চাহিদা প্রকাশ করার দিনটিতে। জড়তা তারও কাজ করে। আগে কিরকম চলত আর এখন সম্পর্কের একটা গভীর নামের জন্য শারীরিকভাবে গভীরে কাছে যেতেও যথেষ্ট জড়তা কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে খুব একটা দেরিও হয়নি যে এত তাড়াতাড়ি প্রয়োজন হবে। সে-সবও হবে৷ সময় হলে। আগে ভালোবাসাটা না হয় প্রকাশ করে নিক! গভীরে যাবার জন্য দিন আপনাআপনি চলে আসবে।
ভাদ্র মাস প্রায় শেষের দিকে। সেপ্টেম্বর মাসের আজ ছয় তারিখ। বুধ বার। সকাল আটটার সময় খাবার টেবিলে মালিথা ভিলার সদস্য গুলো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা নিয়ে আলোচনা করছে৷

সেই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা মূল টপিক হলো নীহার আর শশীর আঙটি বদল৷ মালিথা ভিলার সকলে আগামীকাল শশীদের বাড়িতে যাবেন। সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে। গোছগাছও চলছে। তারা বৃহস্পতিবারে যাবে শুক্রবার, শনিবার সেখানে থেকে রবিবারে আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। তেমনটা জানিয়েছেন হানিফ সাহেব। মূলত তিনিই এভাবে আসার কথা বলেছেন। এতে করে ঘুরাঘুরি একটু আধটু হয়ে যাবে সকলের। শশীদের গ্রামে তেমনভাবে কারোরি যাওয়া হয়ে ওঠেনি।

সকলেই চারদিনের ছুটি নেবে জব থেকে। জাহিদ মালিথা এখনো আসেন নি৷ তবে আজ চলে আসবেন বলেছেন। শিশিরের পরীক্ষার জন্য ডেট পাল্টাতে চেয়েছিল নীহার কিন্তু সে মানা করেছে। জানিয়েছে তার সমস্যা হবে না৷
সকালে খাবার খেয়ে সকলে চলে গেল। কুয়াশাও আজ কলেজে গেল৷ শিশিরের বাইকেই গেল। ওরা যেতেই আবার সকলে আগামীকালের জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করল।

দুপুর তিনটা। শিশির এলো মাত্র। এসে নিজের ঘরে মাত্রই শরীর থেকে শার্টটা খুলে বসেছে বিছানায় আর তৎক্ষনাৎ কুয়াশা ঝড়ের বেগে এসে শিশিরকে এলোপাতাড়ি মারা শুরু করে দিল। তার সেই বিখ্যাত মা-র চুল টেনে ধরে, কিল, ঘুষি, চড় থাপ্পড়, খামচি সব। কোনো কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ কি হলো? এভাবে হামলে পড়ল কেন? এটা ভাবতে ভাবতে সে অনেকগুলো মার খেয়ে ফেলল। এবার জিজ্ঞেস করতে লাগল,
” আরে করছিস কি? কি হয়েছে এভাবে মারছিস কেন? কি করলাম আমি? ”
বলতে বলতে কুয়াশাকে দেখার চেষ্টা করল আর থামানোর চেষ্টা করল। দেখল কুয়াশার চোখ থেকে টপাটপ পানি পড়ছে। আশ্চর্য!! নিজেই মারছে আবার নিজেই কাঁদছে? ভাবতে ভাবতে কুয়াশা এবার বালিশ তুলে নিল। মারতে মারতে বলল,

” ইতর, শয়তান! জানিস না তুই কেন? বাইরে মেয়ে নিয়ে ঘুরিস, অথচ আমাকে নিয়ে আসার তোর সময় হয় না? মেয়েরা তোর গায়ের উপর কেলাতে কেলাতে পরে তুইও সেসব কেলাতে কেলাতে গ্রহণ করিস? রাস্তার ভেতর এত কিসের কেলানো মেয়ে নিয়ে তোর? ফাজিল মেয়ে তোর গায়ে পড়ে পড়ে হাসে আর তুই কিছু বলিস না? এ্যাই তোর বউ নেই ঘরে? ওমন তো কখনো আমার সাথে হাসিস না? রাস্তায় রাস্তায় কেন তোর ফস্টি-নস্টি করে বেড়াতে হবে? এই জন্য তুই আমাকে ভালোবাসিস না? আজ বুঝেছি আমি। তোর আমার জন্য কোনো সময় নেই কিন্তু ওসব গায়ে পড়া, ফাজিল মেয়েদের জন্য সময় ঠিকই আছে! অসভ্য ছেলে তুই একটা। ”
বলে এবার জোরে কান্না শুরু করে দিল।

আসলে বিষয়টা হয়েছে কী, আজকে শিশির কুয়াশাকে নিয়ে আসতে পারেনি। দু’টোর দিকে কল দিয়ে জানিয়েছিল একা একটু ম্যানেজ করে চলে যেতে। সে খুব ব্যস্ত। আর একটু স্টেশনের দিকে লাইব্রেরীতে যাবে কিছু বই কিনতে। কুয়াশা মেনে নিয়ে সেই সুযোগটা লুফে নিয়েছিল। সে শিশির না আসাতে অনেকদিন পর কলেজ থেকে গলি দিয়ে স্মৃতি, ঈশা আর রনি, রনির বন্ধু মিলে হেটে রেস্টুরেন্টে যাবার প্ল্যান করেছিল। রনির সাথে এখন পুরো বন্ধর মতো সম্পর্ক কুয়াশার। রনি নিজেকে সামলে শুধু বন্ধু হয়ে থাকতে চেয়েছে। কুয়াশাও আর মানা করেনি একটা সুযোগ দেয়াই যায়!

যায়হোক, সেই হিসেবে তারা কিছুক্ষণ কলেজে আড্ডা দিয়ে এরপর হেঁটে রেস্টুরেন্টে যাবে বলে বেড়িয়ে পড়ে৷ হেঁটে স্টেশনের রোডে আসতেই শিশিরকে দেখতে পাই। সেখানে রিজভী সহ দুটো মেয়ে আর দুটো ছেলে ছিল। মূলত ওরা শিশিরে বন্ধু। খুব বেশি ক্লোজ না কিন্তু ক্লাসে ক্লোজ ভাবেই চলে। একসাথে সকলে মিলে আড্ডা দেয়া পড়াশুনো করা এগুলো চলে। তবে শিশির ঐ দুটো মেয়ে ফ্রেন্ড ছাড়া কারো সাথে বেশি মেশে না। ওরা অনেক মিশুক আর বিবাহিত। সেই জন্য আরো জোর পায় মিশতে। রিজভী ছাড়া এমনিতেও তেমন ফ্রেন্ড সার্কেল বানতে নারাজ সে।

তো সেই হিসেবে সকলেই একে একে ক্লাস শেষে স্টেশনের লাইব্রেরীতে যাবার প্রয়োজনের কথা জানায়। সকলের যখন যাবার আছে একসাথে গেলে কি সমস্যা? এই ভেবে সকলে হাঁটতে হাঁটতেই গেছিল। কিন্তু কুয়াশা রাস্তা ক্রস করতে গিয়ে শিশিরকে দেখে বন্ধুদের সাথে। দূর থেকেই দেখে কিন্তু শিশির বন্ধুুদের সাথে ব্যস্ত থাকায় খেয়াল করেনি। এটা আরো গা জ্বালিয়ে দিয়েছে কুয়াশার। একটা মেয়ে কিছু কথা নিয়ে হাসতে হাসতে শিশিরের বাহু জড়িয়ে ধরে ওর বাহুতে কপাল ঠেকিয়ে হাসিতে মত্ত হচ্ছিল সেই ভঙ্গিমা কুয়াশা দেখে। দেখেই ওর মাথা রক্ত চাপে। তাকে দিয়ে আসতে পারবে না বলে মেয়েদের বাহু ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে এটা যে কোনো বউ দেখলেই তো ফা-য়ার হয়ে উঠবে!!

তবে শিশির মেয়েটাকে অতি কৌশলে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে সরেছিল কিন্তু সেটা কুয়াশার চোখে পড়েনি। ওর তো শুধু চোখে পড়েছে অন্য একটা মেয়ে তার স্বামীর বাহুতে। মেজাজটা তখনি চড়েছে। স্মৃতিরাও দেখেছিল সব। স্মৃতিদের তৎক্ষনাৎ কিছু বলতে না দিয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে সিএনজি নিয়ে বাড়ি চলে আসে৷ এসে ধাপধুপ পা ফেলে ঐ যে ঘরে ঢুকে শিশির জন্য অপেক্ষা করছিল আর বেড় হয়নি। না খেয়েছে আর না গোসল করেছে৷ আসলে আজ বিহিত হবে। কতত বড় সাহস ঐ বুনো ওলের! বাড়িতে আস্ত একটা বউ আছে তার!
আসলে মেয়েরা এমনি। ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য নারীর সাথে কখনো সহ্য করতে পারে না৷ আর সে যদি হয় কুয়াশার মতো প্রতিবাদী।

শিশির এবার বিষয়টা বুঝল৷ তার মানে পাগলা এই জন্য ক্ষেপেছে? ভাবতে ভাবতে ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। বালিশ দিয়ে আনলিমিটেড মে-রেই চলেছে কুয়াশা। শিশির এবার না পেরে উঠে কুয়াশাকে দুই হাতে কোমড় চেপে ধরে কোলের উপর নিয়ে বসে পড়ল। তৎক্ষনাৎ কুয়াশা কিছু বুঝে ওঠার আগে কুয়াশার গ্রিবাদেশে মুখ ডুবিয়ে কামড় বসিয়ে দিল৷ দাঁত বসিয়ে অনেকটা জোরেই৷ যেটা আজ অবধি করেনি শিশির সেটা আজ করল। কুয়াশা বিষয়টা যখন বুঝল তখন, শান্ত তো হয়েছেই আবার কেঁপেও উঠেছে। এদিকে ব্যথায় গুঙিয়ে উঠেছে৷ দাঁত মুখ খিঁচিয়ে শিশিরের নগ্ন পিঠে নখ বসিয়ে চেপে ধরল৷

শিশির কামড়টা দিয়েছে কাঁধ ও গলার হাড়ের মাঝামাঝি। এই প্রথম এরকম ভাবে কুয়াশাকে ছুঁলো সে৷ এটা দ্বারা কি ভালোবাসার পরিমাণ বুঝিয়ে দিল? কুয়াশাকে এই কামড়ের মাঝে বুঝিয়ে দিতে চাইল, তার বুনো ওল শুধু তারই? নাকি কুয়াশার আক্রমন আঁটকাতে, শান্ত করতে? নাকি কুয়াশাকে তার মা-র দেয়াটা ফিরিয়ে দিতে কামড় দিল কোনটা? সঠিক কারণটা বোঝা গেল না৷ কুয়াশা চোখ মুখ খিঁচিয়ে পড়ে রইল। কিন্তু কিছু বলল না। নড়াচড়া করল না। শুধু ব্যথা সহ্য করতে শিশিরের পিঠে নখ দাবিয়ে রাখল। সে এই গভীর ছোঁয়াটা অনুভব করতে চাইল বোধহয়। কিছু পল পাড় হয়ে গেল তবুও ছাড়ল না শিশির। কুয়াশা এবার না পেরে অন্য হাত শিশিরের ঘাড় গলিয়ে পেছনের চুলের মধ্যে দিয়ে মুঠো পাঁকিয়ে চুল টেনে ধরল শক্ত করে৷

শিশির তা টের পেল৷ বুঝল সে ব্যথা পাচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না। আশ্চর্য হলো খুব। কতটা পরিবর্তন! ভাবা যায়!! শিশির এবার কামড়ের জায়গায় দাঁত বাদে দু’ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরল৷ অতিশয় গভীর সেই ঠোঁটের ছোঁয়া। কুয়াশা বুঝল তা। এবার তার শরীর অবাস হলো। শিহরণ হলো৷ জড়িয়ে আসতে চাইল। নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করবে বুঝছে না৷ শিশিরের কোলের মাঝে নেতিয়ে পড়তে চাইল। এরকম ভাবে আজ প্রথম শিশির তাকে ছুঁয়েছে৷ সে এখন না পাড়ছে সায় দিতে আবার না পাড়ছে কিছু বলতে।
কিছুক্ষণ পর শিশির মুখ তুলল। কুয়াশা ওর কাঁধের উপর মাথা দিয়ে পড়ে আছে। তাকাল কুয়াশার মুখের দিকে। চোখ বন্ধ। শিশির ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হাসল। উচিত জবাব দিতে পেরেছে। সে এবার কুয়াশার এলোমেলো চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল,

” কীরে বউ? আর ইউ জেলাস? ”
কুয়াশা চোখ খুলে তাকাল। অতিশয় কাছে শিশিরের মুখ৷ শিশিরের মুখ, ঠোঁট কিয়ৎক্ষণ অবলোকন করল। এরপর চোখের দিকে নজর রাখল৷ প্রগাঢ় সেই দৃষ্টি। শিশির তাকিয়ে রইল তার বউয়ের দিকে। কুয়াশার উত্তর,
” হুঁ, বহুত।”
শিশির হাসল দুষ্টু চোখে মু্চকি মুচকি৷ বলল,
” ভাবা যায়? কুয়াশা গোবর ঠাঁসা তার স্বামীর উপর পজেসিভ!! তাও আবার অন্য মেয়েকে তার সাথে দেখেছে বলে? বাহ্ কী পরিবর্তন!! ”
শিশির যে পুরোটা মজা নিচ্ছে সে ভালোভাবেই বুঝল। চোখমুখ কুঁচকে ফেলল। রাগের ঝাঁঝ নিয়ে বলল,
” ফাজলামো করো? ”
” নাহ্ তো! আমার বউ যে অন্য মেয়ের উপর জেলাস সেটা বললাম৷ তাও আবার ট্রিপিক্যাল বউদের মতো ”
” মটেও ট্রিপিক্যাল না। স্বামী সকল মেয়ের জন্য পজেসিভ পার্সোন। অন্য মেয়ের সাথে দেখলে সব বউই ট্রিপিক্যাল হবে। সেটা তুমি বুঝবে না। ”

” আচ্ছা? ”
” হুঁ ”
” ওটা সারথি ছিল। ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়ে। বিবাহিত। অনেক মিশুক আর অনেক মজার একটা মেয়ে। সিঁথি আর সারথি ছাড়া কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড নেই। সিঁথিও বিবাহিত। বই কেনার প্রয়োজন ছিল তাই একসাথেই গেছিলাম৷ ওখানে ওরা একটা টপিক নিয়ে হাসাহাসি করছিল। কিন্তু ওর স্বভাবগত কারণে ওরকম ভাবে ধরেছিল। আমি পরে ছাড়িয়ে নিয়েছিলাম৷ সেটা দেখিস নি? শুধু ও ধরেছে সেটা দেখেছিস! বাই দ্যা ওয়ে তুই ওখানে কোথায় ছিলি? ”
” রেস্টুরেন্টে যাচ্ছিলাম৷ অনেকদিন যাওয়া হয় না বলে প্ল্যান করেছিলাম ”
শিশির এবার কুয়াশাকে কামড় দেবার জায়গায় নজর দিল। দাঁত বসে আছে স্পষ্ট। হাত তুলে স্লাইড করতে থাকল বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে। কুয়াশা আবার ব্যথা পেল। কারণ কামড়ানোতে ব্যথা জমে গেছে সাথে সাথে৷
” এটা কি বাইট দিলাম জানতে চাস? ”
কুয়াশা তাকিয়ে রইল। বলল,

” কি? ”
সে এবার কুয়াশার কানের কাছে মুখ দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
” লাভ। ”
কেঁপে উঠল কুয়াশা৷ শিশির কথাটা বলে আবার চোখের দিকে নজর দিল। চোখজোড়ার গভীরে যেতে চাইল। কুয়াশা কী চাই! বুঝার চেষ্টা করল। কিন্তু ধরতে পারল না কুয়াশার ইচ্ছেটাকে৷ উল্টো জিজ্ঞেসও করল না। তাকিয়ে রইল৷ তাকিয়ে থেকে বলল,
” তুই একটা জাদুকারিণী জানিস? ”
” করতে পেরেছি জাদুটোনা। ”
” হু। ”
ছোট্ট উত্তর তার। কুয়াশা এবার একটা অদ্ভুত কাজ করল। শিশিরের কন্ঠমণিতে গাঢ়, গভীর একটা চুমু খেল। শিশির চমকে উঠল। পুরো শরীরে ঝাঁকানি দিল। বিদ্যুৎের সঞ্চার হলো৷ ভালোবাসা কতটা গভীর হয়েছে বুঝিয়ে দিল। দুই মাস হতে চলল বিয়ের। বুঝে গেছে গভীরতা৷ অনায়সে গ্রহণ করা যাবে। চাইবে কি সেই অধিকার? নাকি আরো সময়ের প্রয়োজন পড়বে?

” আরে এ্যাই মারবি নাকি? ”
” মরলেই বা কি সমস্যা? ”
” বলছিস তো? ”
শিশিরের কন্ঠে অদ্ভুত নেশা। কুয়াশা লজ্জা পেল। কুয়াশা চোখ নামিয়ে শিশিরের লোমশ বুকে আঁকিবুঁকি করতে লাগল। শিশির এবার কুয়াশাকে আউড়িয়ে ফেলার মতো করে বিছানায় ফেলল। কুয়াশার শরীরে ভর ছেড়ে বুকের নিচে পিষে ফেলার পণ করল। কুয়াশা এসব এত জলদি হলো হজম করতে সময় নিল। ভয় পেয়ে গেল৷ ধুকপুক করছে৷ চোখ বড় বড় করে বলল,

” কি করছ?”
তা শুনে শিশির কুয়াশার কানে কানে কিছু একটা বলল। যা শুনে কুয়াশা বেজায় রেগে উঠল৷ এক ধাক্কা দিয়ে শিশিরকে ফেলে দিল নিজের উপর থেকে৷ বালিশ তুলে জোর একটা বাড়ি দিয়ে বলল,
” অসভ্য ফাউল লোক..!”
বলে হাঁটা ধরল বাইরে। কুয়াশা যেতেই শিশির জোরে জোরে হেসে দিল।

পরেরদিন সকাল থেকে সকলে রেডি হলো। বারটার মাঝেই রওনা দেবে। আম্বিয়া তার ভাই বোনদের জানিয়েছে। সেখান থেকে আসতে চেয়েছেন আমিনুল হক আর ঈশা। আর বোনেরা কেউ রাজি হয়নি। একবারে বিয়ে খেতে আসবে জানিয়েছেন। ঈশা আর কুয়াশা মিলে স্মৃতিকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে শিশির রিজভীকে নিয়েছে৷ নীহারের বন্ধুদের বেশি বলে নি৷ সবথেকে ক্লোজ দুইটা বন্ধুকে বলেছিল কিন্তু একজন রাজি হয়েছে৷

সকাল এগারটা৷ কুয়াশা রেডি হচ্ছে তার ঘরে। সে আজ শাড়ি পড়ার প্ল্যান করেছিল। কিন্তু শিশির মানা করেছে। শাড়ি পড়ে জার্নি করতে দিতে নারাজ। যেমন চলে তেমনই যেন যায়। বোরকা, হিজাব৷ প্রয়োজনের ওখানে গিয়ে শাড়ি পড়বে। এই কথায় রাগ উঠছে তার। মার্জিত ভাবে শাড়ি পড়ে গেলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হতো? এই ভেবে তার ভেতরে একটু রাগ।
শিশির রেডি হয়ে এলো কুয়াশার ঘরে। দেখল কথা অনুযায়ী বোরকা-ই পড়েছে। হাসল সে। অধিকার দেখালে আজকাল মানে। শিশির এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। কুয়াশা আরো ছ্যানছ্যান করে জ্বলে উঠল। আইছে আলগা পিরিত দেখাতে। বলল,

” ছাড়ো তোহ্, আলগা পিরিত দেখাতে এসো না। ”
” আমার অপ্সরা আহ্লাদী বউকে রাস্তার লোক শাড়িতে দেখে মুগ্ধ হবে আমি তা মেনে নিই কী করে? ”
কুয়াশা শান্ত হয়ে গেল৷ তাকাল মিররের প্রতিবিম্বতে। শিশির হাসল অমায়িক। মুগ্ধ হলো তা দেখে।বলল,
” সুদর্শন পুরুষ।”
” কে?”
” আমার স্বামী। ”

বুনো ওল বাঘা তেঁতুল পর্ব ৩৮+৩৯

শিশির তাকাল অদ্ভুত নজরে। আমার স্বামী কথাটা ভেতর নাড়িয়ে দিল৷ প্রেমে সে হাবুডুবু খাচ্ছে। এত সবের পরেও কি ‘ভালোবাসি’ নামক বাক্যটি বলার প্রয়োজন পড়বে? আছে কি প্রয়োজন? উহু নেই। কোনো প্রয়োজন নেই তারা প্রেমে পড়ে গেছে৷ ভালোবেসে ফেলেছে৷ ভালোবাসা নামক সুখ পাখি এসে ধরা দিয়েছে তাদের জীবনে৷ কি অদ্ভুত নাহ্? কেউ কি ঘুনাক্ষরেও টের পেয়েছিল এই দু’টো হাম সেপাইরা একে অপরের প্রেমে পড়বে? যে হারে চুলোচুলি করত বাবাহ্ রে বাবাহ্!! যারা বিয়ে করতে পর্যন্ত নারাজ ছিল তারা আজ একে অপরের অনুভূতি প্রগাঢ়ভাবে অনুভব করার চেষ্টা করে। চেষ্টা করে কি? অনুভব করে। সময় নিয়ে তারা ভালোবাসতে শিখে গেছে। কে বলে, বিয়ের পর প্রেম হয় না? প্রেমে পড়া হয় না? এটা কি প্রেম না? প্রেমে পড়া না? চলুক না এই খুনসুঁটিময় প্রেম কিছুদিন। ক্ষতি কি তাতে!

বুনো ওল বাঘা তেঁতুল পর্ব ৪২+৪৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here