ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ২
প্রিয়স্মিতা তেহজীব রাই
শিকদার বাড়ি আজ সরগরম! এত মানুষের ভিড়, যেন এক মুহূর্তের জন্যও দম ফেলার ফুরসত নেই। বাড়ির ছোট-বড় সবাই কাজে লেগে পড়েছে,
বিশেষত বাড়ির ছেলেদের অবস্থা নাজেহাল।।
চৈত্রের দাবদাহে হাঁসফাঁস করছে সবাই। প্রণয় শিকদার বিরক্ত হয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। তার সাদা পাঞ্জাবিটা ইতিমধ্যেই ভিজে উঠেছে , গরমে সে একেবারে ত্যক্ত-বিরক্ত,মাথার চুল গুলো গামে কপাল এর সাথে লেপ্টে আছে! ছয় ফুট এক ইঞ্চি উচ্চতার সুদর্শন এই যুবক শিকদার বংশের গর্ব ও সব চেয়ে সুদর্শন পুরুষ ও প্রখর ব্যক্তিত্বের অধিকারী , তেজ আর তার গভীর বাদামী বর্ণের চোখ— যা মারাত্মক আকর্ষনীয় যে কোনো নারী এই পুরুষ এর জন্য পাগল হতে বাধ্য !
প্রণয় চলে যেতেই কেউ একজন আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো। তার চোখে জোড়া ছলছল করছে …
অন্যদিকে, শিকদার বাড়ির বিশেষ অতিথি মির্জা পরিবার এসে হাজির। তাদের সঙ্গে এসেছেন পরিবারের চার কর্তা ও তাদের স্ত্রীরা। কর্তার দল চলে গেলেন লাইব্রেরীতে , আর তাদের গিন্নিরা চলে গেলেন রান্না করে ।
রহিনী বেগম হাসিমুখে বললেন, “ভাবি, কেমন আছেন?”
প্রণয়ের মা অনুশ্রী বেগম মৃদু হাসলেন, “ভালোই আছি। মেয়ের বিয়ে বলে কথা! একটুও ফুরসত নেই!”
রহিনী বেগম অপলক তাকিয়ে ছিলেন অনুশ্রী বেগমের দিকে। এই পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তিনি এত বড় ছেলেমেয়েদের মা কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই !
রোহিনী বেগম জিজ্ঞাসা করলেন ভাবি প্রেরণা কোথায়।।
অনুশ্রী বেগম বল্লেন কি জানি, মেয়েটা কোথায় আছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এদিকে, তন্ময় লাফিয়ে এসে সোফায় বসে পড়ল,তার বোনেদের পাশে যেখানে তারা আপুরা ও অন্যরা বসে গল্প করছিল। সে এসে এক ঝটকায় প্রিয়তার হাত থেকে চকোলেটের প্যাকেট ছিনিয়ে মুখে পুরে দিল।
প্রিয়তা তো রেগে লাল!
“তন্ময়, এই তন্ময় এর বাচ্চা , আজ তোকে আমি খাচ্ছি!”
বলে এক দৌড়ে তন্ময়ের দিকে তেড়ে গেল। তন্ময় এমন ভাব করল, যেন তার চেয়ে নিরীহ কেউ নেই!
প্রিয়তা চেঁচিয়ে বলল, “আমার চকোলেট দে!”
তন্ময় সয়তানি হেসে বলল, “মুখে দিয়ে দিয়েছি, আর নিবি?”
প্রিয়তা রেগে তেলে বেগুনে জলে উঠল! মনে মনে ভাবল, ‘হাত থেকে মুখে কেন? ভাবার পর আর!’
এক মুহূর্ত দেরি না করে তন্ময়ের চুল টেনে ধরলো !
তন্ময় বা কিসে কম জায় সে ও প্রিয়তার চুল টেনে ধরে দুই ভাই বোন চুলাচুলি শুরু করে দিলো
এতো জোরে টানাটানিতে দুজনের চোখে পানি এসে গেল, কিন্তু কেউ কাউকে ছাড়ল না। বসার ঘরের সবাই হাঁ করে সার্কাস দেখছিল সবাই অধির আগ্রহে দেখতে লাগলো পরবর্তী সিনে কি হয়!
প্রেম মজা নিয়ে তীরা কে বলল, “খেলা জমে উঠেছে! পুচকি, যা, পপকর্ন নিয়ে আয়। খেতে খেতে সার্কাস দেখি!”
ঠিক তখনই বজ্রকণ্ঠে ধমক এল—
“থামো!”
সবাই দেখল, প্রণয় দাঁড়িয়ে আছে, চোখ-মুখ শক্ত!
তন্ময় মুহূর্তের মধ্যে ভদ্র হয়ে গেল, আর প্রিয়তা মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো ।
প্রণয় কঠিন স্বরে বলল, “কী হচ্ছে এখানে?”
তন্ময় আমতা আমতা করে বলল, “ভাইয়া, আমি কিছু করিনি! আপু আমার চুল ধরে টানাটানি করছে!”
প্রিয়তা কিছু বলল না, শুধু মাথা নিচু করে রইল।
প্রণয় গম্ভীর গলায় বলল, “ঘরে যা!”
সবাই চুপ!
বৃষ্টি ফিসফিস করে বলল, “প্রহেলিকা আপুর কপাল ভালো! এমন একটা এটম বোম্ব পেয়েছে!”
অন্য মেয়েটা বলল, “যা বলেছ! এমন হ্যান্ডসাম ছেলে আগে কখনো দেখিনি!”
প্রিয়তা আর কিছু না বলে চলে গেল নিজের ঘরে।
প্রহেলিকা মা-চাচিদের সঙ্গে কাজ করছিল। হঠাৎ সামির কথা মনে পড়ল, তাই সে ঘরে গেল। গিয়ে দেখল, প্রণয় নেই। এতক্ষণ কাজ করে সে অনেক ক্লান্ত, তাই একটু বিশ্রাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে শুয়ে পড়ল। তখন বিকেল তিনটা বাজে।
প্রিয়তা গা ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এল। মুখটা থমথমে। মাথা থেকে তোয়ালে সরাতেই একরাশ ঘন মেঘের মতো লতানো চুল মুহূর্তেই কোমর ছাড়িয়ে হাঁটুর ওপরে পৌঁছে গেল।
প্রিয়তা মনে মনে বলল, “এই হলো আমার এক জ্বালা! এই চুল শুকাতে এক ঘণ্টা লাগবে! কবেই কেটে কাঁধ অবধি করে দিতাম! শুধুই পারছি না তার জন্য!”
সে বলেছিল,
“প্রিয়, তোর চুলগুলো অনেক সুন্দর! আমার খুব ভালো লাগে!”
ব্যাস! সেই দিন থেকেই প্রিয়তা কখনো তার চুল কোমরের ওপরে ওঠায়নি।
পঞ্চদশী কিশোরী কন্যা! চন্দ্রগলারূপ! তার চেহারার লাবণ্য ও মাধুর্য যেন দিন দিন আলোড়িত হয়ে বাড়ছে!
পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চির মেয়েটি—তাদের বংশের সবচেয়ে সুন্দরী কন্যা বলা যায়!
শিকদার বাড়ির সব মেয়েই সুন্দরী!
কিন্তু তুলনা করতে গেলে প্রিয়তা সবার ওপরে!
এই মেয়েটা সামনে পড়লে কেউ না তাকিয়ে থাকতে পারে না!
কেমন মোহাবিষ্টের মতো চেয়ে থাকে!
চেহারার শিশুসুলভ ভাবটা সরে গিয়ে এক অপার্থিব, অনিন্দ্য সৌন্দর্য ফুটে উঠছে!
অতিরিক্ত সুন্দর ও মায়াবী চোখ! মেয়েটার গায়ের রং দুধে-আলতা!
একটু চেপে ধরলে যেন রক্ত বেরিয়ে আসবে!
পানপাতার মতো মুখ!
সুদীর্ঘ নীলাভ নেত্রযুগল যা সব থেকে আকর্ষণীয়!
জেনো ওই চোখে মাদকতা মিশে আছে!
যে-কোনো পুরুষ সেই চোখের দিকে তাকালেই মুহূর্তেই হারিয়ে যাবে!
ঘন ভারী চোখের পল্লব!
যা অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং এনে দেয় বিশেষত্ব!
চিকন খাড়া নাক!
শিকদার বাড়ির পুকুরের রক্ত পদ্মের মতো টকটকে লাল ঠোঁট !
ধনুকের মতো বাঁকানো দেহ!
সৌন্দর্য ও মাধুর্যের এমন এক সংমিশ্রণ!
তবে, তার নিজের কাছে তার সৌন্দর্যের মূল্য একদমই অর্থহীন!
যখন সবাই প্রশংসা করে, তখন তার ভিতর থেকে তাচ্ছিল্য ঠেলে বাইরে আসতে চায়!
প্রিয়তা একটা সুন্দর প্রিন্টেড ফুলস্লিভ থ্রিপিস পরে নিল।
চুলগুলো ঢিলে হাতখোঁপা করে নিল!
চোখে সামান্য কাজল দিল!
ঠোঁটে একটু লিপগ্লস দিল!
কপালে একটা ছোট্ট টিপ দিয়ে বেরুতেই…
কারও সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিল!
শিকদার বাড়ির পেছনে রক্তপদ্ম পুকুরঘাটে বসে আছে পরিণীতা।
মনে মনে ভাবছে, আজ একবার আসুক! দেখাবো, সে আমাকে চিনতে পারবে!
আমি ও শিকদার বাড়ির মেয়ে হুহ!
আমাকে অপেক্ষা করানো !
একবার সামনে আসলেই, এই গভীর পুকুরে এক ধাক্কা মেরে ফেলে দেব!
এটা ভাবতেই পরিণীতা মন চিল্লিয়ে বলে উঠল।
না! তুই এটা করতে পারবি না!
আমি ওকে অনেক ভালোবাসি!
এটা ভাবতেই পরিণীতা কেমন যেন নরম হয়ে গেল।
এতক্ষণ যাবত ওর পাশে যে একজন জলজ্যান্ত পুরুষ বসে আছে, এতে ওর কোনো খেয়ালই নেই!
আবিদ এতক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করছিল পরিণীতার মুখের সব অভিব্যক্তি!
এখন সে বিরক্ত হয়ে ধমক লাগিয়ে দিল—
“কোন দুনিয়ায় আছো?”
মেয়েটা হঠাৎ এত জোরে ধমক খেয়ে চমকে উঠল!
সপ্তদশী কন্যার বুকের মাঝখানে থাকা পরাণটা যেন মুহূর্তেই ফুঁড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইল!
কাঁদো কাঁদো হয়ে আবিদের দিকে তাকাতেই, তার রাগ, অভিমান, ভয়—সব জানালা দিয়ে পালিয়ে গেল!
তার জায়গায় এসে ভর করল এক অপার্থিব লজ্জা!
লজ্জায় মাথা নিচু করে নিল!
সে তো ওর চোখে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না!
আবিদ মেয়েটার গালগুলো লজ্জায় লাল হয়ে যেতে দেখল।
হুট করেই সে ও নরম হয়ে গেল!
“কি ভাবছিলে?”
এটা শুনেই পরিণীতা চোখ বড় বড় করে ফেলল!
মনে মনে ভাবল, এই বেটা যদি এখন জানতে পারে যে আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে এই পুকুরে ফেলে দিতে চেয়েছিলাম, তাহলে নিশ্চিত আমাকেই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে!
এটা ভাবতেই ওর চোখ দুটো আরও বড় বড় হয়ে গেল!
আবিদ ভ্রু কুঁচকালো!
ওই সুন্দর চোখ দুটো বড় হতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল—
“কি ব্যাপার? Angel ?”
এটা শুনেই পরীর ভিতরটা কেমন যেন ধক করে উঠল!
আবিদ পরিনীতার চোখের দিকে তাকাল।
মনে মনে বলল, তুমি সত্যি একটা Angel ! এই চোখের দিকে তাকিয়ে আমি যে বড় ভুল করে ফেলেছি!
কি জানি! এই ভুলের মাসুল হিসেবে হয়তো আমাকে প্রাণ দিয়েই দিতে হবে!
পরিণীতা বলল, “কি ভাবছেন, মাস্টার মশাই?”
আবিদ পরিণীতার চোখের দিকেই তাকিয়ে থাকল!
তারপর গভীর গলায় বলল—
“এঙ্গেল! তুমি আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার আগপর্যন্ত আমার হাত ছাড়বে না! কথা দাও!”
পরিণীতার চোখ জল জলে হয়ে উঠল!
মনে হলো, বুকের ভেতর কেউ সুচালো কিছু দিয়ে আঘাত করল!
পরিণীতা আর কিছু না ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়ল আবিদের বুকে!
সঙ্গে সঙ্গেই আবিদ চোখ বন্ধ করে নিল!
এটাই যেন তার প্রশ্নের উত্তর!
দুজনের নিঃশ্বাসের গতি যেন অব্যক্ত প্রশ্নের উত্তর হয়ে উঠল!
আবিদ বলল, “হয়ে গেছে! ছাড়ো! কেউ দেখে ফেললে আমার গর্দান নেবে তোমার বাবা-ভাই!”
বলে পরীর মাথায় একটা চুমু দিল!
পরিনীতা বুকের সঙ্গে লেপ্টে থেকেই বলল, “কেউ দেখবে না!”
আবিদ স্মিত হাসল!
পরী বুক থেকে মাথা তুলে আর কোনো দিকে না তাকিয়ে ছুটে চলে গেল!
ওকে চলে যেতে দেখে আবিদ এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল!
আবিদ বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে!
রায়পুরের এক সাধারণ ঘরের ছেলে!
বাবা পুলিশে সাধারণ কনস্টেবল!
মা গৃহিণী!
অনেক কষ্ট করে সে লেখাপড়া শেষ করেছে!
তার একটাই স্বপ্ন—বাবা-মাকে ভালো রাখা!
পরিবারের অভাব দূর করা!
সে চায়নি পরিণীতার মতো রাজকন্যাকে ভালোবাসতে!
পরিণীতা পড়াশোনায় সবসময় উদাসীন!
প্রণয় বোনের অবস্থা দেখে পরিণীতার এসএসসি পরীক্ষার সময় একজন প্রাইভেট টিউটর হিসেবে আবিদকে নিয়োগ করেছিলেন!
প্রথমে আবিদ সাধারণ ভাবেই পড়াত!
কিন্তু, সেদিন এলোমেলো চুলে শ্যামবর্ণের সেই ছেলেটাকে দেখে হারিয়ে গিয়েছিল পরিণীতা!
আবিদ সব বুঝত!
কিন্তু এসব পাত্তা দিত না!
কোথায় আছে গরিবের ভালোবাসার অধিকার নেই !
আবিদও সেটা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করত!
কিন্তু কোথা থেকে যে কি হয়ে গেল!
ভেবে আবিদ দ্বিতীয়বারের মতো দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল!
প্রিয়তার একটুখানি থমকে যাওয়া
তখন প্রিয়তা হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে নিলে, হঠাৎ তার হাতটা টেনে ধরে ফেলল প্রণয়। তার দৃষ্টি ছিল স্থির ও শীতল।
প্রিয়তা বিষণ্ন মনে বিরক্ত হয়ে ভাবল, আমার জীবনে কি কম ব্যথা ছিল, যে আবার নতুন করে ব্যথা পেতে হবে! ভাবতেই তার মুখটা তেতো হয়ে গেল।
কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরই অনুভব করল—সে পড়েনি, বরং ভেসে আছে!
ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই ছোট্ট একটা ধাক্কা লাগল। সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে দেখল—তার নয়ন এসে ঠেকেছে একজোড়া গভীর বাদামি চোখের দিকে।
প্রিয়তার বুকের খাঁচাটা মোচড় দিয়ে উঠল। সামনের বলিষ্ঠ পুরুষটির শক্ত বাহুর বন্ধনে নিজেকে আবিষ্কার করতেই হতভম্ব হয়ে গেল। সেই বাদামি চোখজোড়া একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, নিস্প্রভ অথচ থমথমে।
এই চোখের গভীরতা মাপা প্রিয়তার পক্ষে অসম্ভব! এই চোখ-মুখ দেখে কোনোদিন মনের ভাব বোঝা যায় না!
প্রণয় একটুও চোখ সরাল না।
প্রিয়তা ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারল না আর। দৃষ্টি নামিয়ে নিতেই, প্রণয় তাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিল। গম্ভীর স্বরে বলল,
“কি ব্যাপার? এমন লাফালাফি করছ কেন?”
প্রিয়তা কয়েক সেকেন্ডের জন্য আবারও সেই গভীর চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর ধরে আসা গলায় বলল, “কিছু না, এমনি,” বলেই দ্রুত সরে গেল ওখান থেকে।
প্রণয় তার চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসল।
নিজেই নিজেকে বলল, আমার মতো ব্যর্থ পুরুষ হয়তো দ্বিতীয়টি নেই! ওই নীলসাগরের মতো চোখে কী আছে, যা প্রতিনিয়ত নেশার মতো আসক্তি ছড়িয়ে দেয় হৃদয়ের প্রতিটি কোণায়!
তার মনের গভীর থেকে যেন কেউ উত্তর দিল—
ওই নীল বর্ণের চোখগুলো সুবিশাল মাদকতার সাগর! যেখানে ডুবে যাওয়া আমার কপালে নেই!
আমার চারপাশে বিষ লতার মতো প্যাঁচিয়ে রেখেছে আব্রার প্রণয় শিকদার অসহায় ! সেখান থেকে কোনো দিন মুক্তি নেই। হয়তো কোনো একদিন এই যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আমি নিজেই হেরে যাব!
ভাবতেই তাচ্ছিল্য মাখা একটা হাসি দিল প্রণয়।
দিনের শেষ ভাগ। বাড়ির পরিবেশ জমজমাট!
চারতলা বিশিষ্ট “প্রণয় কুঞ্জ” নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে গায়ে হলুদের জন্য। বিশাল ছাদটাকে ঝলমলে করে সাজানো হচ্ছে, যেখানে সন্ধ্যায় জমকালো গায়ে হলুদ অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি আরও অনেক আয়োজন চলছে।
আজকের গায়ে হলুদের থিম—সাদা ও লাল। ছেলেরা সাদা পাঞ্জাবি, আর মেয়েরা লাল শাড়ি পরবে।
পুরো আয়োজনের দায়িত্ব পড়েছে পৃথম ও প্রেমের কাঁধে। দুই ভাই হরদম ব্যস্ত, তবু নিজেদের মধ্যে ঠাট্টা-তামাশার সময় বের করতেই হয়!
প্রেম হাসতে হাসতে বলল, “ভাইয়া, আজ রাতে হবে তো?”
পৃথম কপাল কুঁচকালো, “কি হবে?”
প্রেম কৌশলে বলল, “ওই যে! আব্বু, চাচ্চু আর বড় দাদার চোখ ফাঁকি দিয়ে যেটা হবে!”
পৃথম বুঝে গিয়ে চোখ টিপে বলল, “সব হবে, ব্রাদার!”
প্রেমও চোখ টিপে বলল, “ভাইয়া, আমি কিন্তু সব জানি!”
পৃথম ভ্রু তুলল, “কি জানিস তুই?”
প্রেম রহস্যময় হাসি দিল। পৃথম যা বোঝার বুঝে গেল। সেও মুচকি হেসে বলল, “আমি-ও সব জানি!”
প্রেমের মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চিপসে গেল!
এইভাবে দুই ভাইয়ের কথোপকথন চলতে থাকল, আর তাদের হাতে গায়ে হলুদের আয়োজন ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে লাগল।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল।
পৃথার ঘরে বসে আছে ওর সব বোন, কাজিন আর বান্ধবীরা।
সবাই মিলে হৈ-হুল্লোড় করছে, আর পৃথাকে খেপাচ্ছে!
“পৃথা, তুই তো দেখি ভালোই চালাক!”
ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ১
এই কথা শুনে সবাই হেসে উঠল! পৃথা রাগে, লজ্জায় লাল, নীল, সবুজ হয়ে উঠল!
তার বান্ধবী সায়রা হাসতে হাসতে বলল, “বান্ধবী, বুদ্ধির খেলায় তুই সবার সেরা!”
এই কথা শুনে এবার পুরো ঘর হাসিতে ফেটে পড়ল!