ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩৭
মিথুবুড়ি
‘রক্তের গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে অন্ধকার ঘরটা। নিস্তেজ দেহটা পড়ে আছে পাথরের মেঝেতে। চামড়া ফেটে রক্তস্রোেত জমে কালচে হয়ে গেছে। রিচার্ডের হাতে বিশাল মাসেটটা ওঠানামা করছে নির্লিপ্ত দক্ষতায়। প্রতিটি কোপে মাংস ছিটকে পড়ছে চারপাশে। রক্তে ভিজে গেছে শরীরের খালি শরীর আর নিচের কুঁচকানো কালো প্যান্ট।
‘এক পিছ, দুই পিছ,তিন পিছ,চার পিছে সম্পূর্ণ হচ্ছে একটি বাটি। কুকুরগুলো বেঁধে রাখা শিকল টানতে টানতে টানতে প্রলাপ বকছে। তাদের লালায় মাটিতে গর্ত তৈরি হচ্ছে। এক ঝটকায় বাটিটা ছুড়ে দেয় রিচার্ড। পিটবুলগুলো হিংস্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ল। মাংসের টুকরো ছিঁড়ে ছিঁড়ে চিবিয়ে খেতে থাকল। হাড় ভাঙার কর্কশ শব্দ আর চোয়ালের চাপা ঘর্ষণ ঘরের নীরবতাকে বিদীর্ণ করে। মাংস ফুরানোর আগেই রিচার্ড ঠান্ডা দৃষ্টিতে নিস্তেজ দেহটার দিকে তাকায়। মাসেটটা আবার প্রস্তুত। আরও মাংস চাই, আরও রক্ত চাই। মৃত্যুর এই ভোজসভার শেষ হতে এখনও অনেক দেরি।
‘পাথরের মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা রক্ত জমে ঘন লাল আবরণ তৈরি হয়েছে। লুকাস বিশাল হাতুড়ি দিয়ে হাড়গুলো গুঁড়ো করছে। লাশের স্তুপে জমে থাকা হাড়গুলো আর মানুষ নয়, নিছক মাংসপিণ্ড মনে হচ্ছে। তার দায়িত্বে এখনও চারটা লাশ। প্রতিটি নিস্তেজ দেহ থেকে মৃত্যু পরে আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। গুঁড়ো গুঁড়ো করা হচ্ছে শরীরের প্রতিটা হাড্ডি। আর ন্যাসো গুঁড়ো গুলো বস্তায় ভরছে।
‘মেঝের এক কোণে এখনও রক্তে ভেজা আহত একজন ব্যক্তি অর্ধমৃত অবস্থায় কাতরাচ্ছে। তার ঠোঁট নড়ে না, জবান স্তব্ধ। কারণ রিচার্ড বহু আগেই তার সামনের দাঁতগুলো প্লাস দিয়ে উপড়ে ফেলেছে। ছিন্নমস্তক ব্যথায় তার আর চিৎকার করার শক্তিও অবশিষ্ট নেই। রিচার্ড লাশের শরীরের অবশিষ্ট সকল মাংস কেটে এক নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। মাসেটটা হাতে ঘুরাতে ঘুরাতে চিন্তা করছে-কোন অঙ্গটা আগে ছিন্ন করবে।
‘কুকুরের লালসা এখনও মেটেনি। আরেক বাটির জন্য অপেক্ষায় তারা শিকল টেনে ধ্বংসের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একটু পর এই নিস্তেজ দেহের শেষ টুকরোগুলোও তাদের হিংস্র চোয়ালে ছিঁড়ে যাবে। ধ্বংসযজ্ঞের মৃত্যুর এই রক্তাক্ত নাচের শেষ কোথাও নেই। রিচার্ডের চোখে নেমে এসেছে হিংস্রতার অন্ধকার। সে যার ছিন্নভিন্ন দেহ কুকুরের খাদ্যে পরিণত করল সে আর কেউ নয়—সেই পাপী। সেদিন সিলেটে বন্ধ ঘরে এলিজাবেথকে লাঞ্ছিত করতে চেয়েছিল। আর যাদের অস্তিত্ব ইতিমধ্যে নিঃশেষ হয়ে গেছে তারাই সেই চালক ও সঙ্গীরা,যারা রিসোর্ট থেকে এলিজাবেথকে অপহরণ করেছিল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘পরবর্তী শিকারকে লক্ষ্য করে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল রিচার্ড। তখনই রক্তস্নাত প্যান্টের ভেতর ফোনটা কম্পিত হলো। ন্যাসো আর লুকাসকে এক ইশারায় নির্দেশ দিয়ে দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে গেল রিচার্ড। বাকিদের মতোই এর শাস্তি হবে তবে আরও নির্মম, আরও যন্ত্রণাদায়ক। রিচার্ডের রক্ত চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে রিচার্ডের দেহ থেকে। শরীর থেকে পড়া রক্ত পিছনে রেখে যাচ্ছে এক লালচে রাস্তা।
‘রিচার্ড বেরিয়ে যেতেই ক্যামেরা অফ করে আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো প্রেম। জায়গাটা এখন নীরব কেবল রক্তের গন্ধ আর হালকা শ্বাসের শব্দ ভাসছে বাতাসে। রিচার্ডের অমানবিক বর্বরতায় গার্ডরা অনেক আগেই স্থান ত্যাগ করেছে। তারা নিজেরাও খুনি,তবুও রিচার্ডের এই নিষ্ঠুরতার কাছে টিকে থাকার সাহস হারিয়েছে তারা। বেজমেন্ট আপাতত ফাঁকা। প্রেমের জন্য এটাই সুযোগ। আহত লোকটার দিকে এগিয়ে গেল নিঃশব্দ পদক্ষেপে। দেয়াল টপকানো তার কাছে নতুন কিছু নয়। আজও সেই চেনা পথে ঢুকেছে বাগানবাড়ির ভিতর, ঠিক আগেরবারের মতো।
‘আগেরবার আনিসুল হকের কেসের পর থেকেই প্রেমের মনে রিচার্ডের প্রতি জন্মেছে চাপা ক্ষোভ। সেই ক্ষোভ নিঃশব্দে দহন হয়ে জমে আছে আজও। তাই তো গোপনে চালিয়ে যাচ্ছে তদন্ত রিচার্ডের বিরুদ্ধে। চাইছে রিচার্ডের নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ডের পর্দা ফাঁস করতে। যেখানে তার টিম অন্য এক জটিল কেসে দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করছে, সেখানে প্রেম একাই লেগে আছে এই ব্যক্তিগত যুদ্ধে। কারণ রিচার্ড শুধু একজন অপরাধী নয়, সে এখন প্রেমের চোখে প্রতিশোধের প্রতীক পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী।
“হেঁটে যেতে পারবে?”
‘আহত লোকটার চোখে এক ঝলক আশা জ্বলে উঠল এই আজাবের মধ্যে থেকেও। প্রেমকে দেখে এই অন্ধকারের মাঝে তার ভেতর নতুন জীবনের সঞ্চার হলো। হুরহুর করে কেঁদে উঠে এক বুক কষ্টে মাথা নাড়াল। প্রেম লোকটাকে তুলে তার এক হাতে তুলে নিজের কাঁধে শক্ত করে পেঁচিয়ে নিল। সামনে এগিয়ে যেতে যেতে প্রেম প্রশ্ন করল,
“আদালতে সাক্ষী দিতে পারবে তো?”
‘কোনো সাড়াশব্দ এলো না। প্রেম তীব্র দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে দেখল লোকটার জামি ফাঁকা, শুধু শূন্যতা। এক দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল প্রেম হতাশ হয়ে। চলতে চলতে অগোচরে বলল,
“গ্যাংটার নৃশংস হলেও মন ভালো আছে। দাঁত তুলেছে, আমি হলে সবার আগে ওটা ছিঁড়ে ফেলতাম।”
‘প্রেম সাবধানে দেয়াল টপকে লোকটাকে নিয়ে বাইকের কাছে পৌঁছাল। নিজের জায়গায় বসে লোকটাকে পিছনে বসাতে যাবে, ঠিক তখনই বিকট এক শব্দে জঙ্গল কেঁপে উঠল। গভীরের পাখিরা ডানা মেলে আকাশে উড়ে গেল। লোকটা মাটিতে পড়ে আছে, কপালের মাঝখানে রক্তের গভীর চিহ্ন। মৃত্তিকার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে তাজা রক্তের ধারা। প্রেম শব্দের উৎস খুঁজে পিছন ফিরতেই দেখতে পেল সাদা গাড়ির জানালা থেকে বেরিয়ে আছে বন্দুকের সরু নল। প্রেমের সঙ্গে চোখাচোখি হতেই লাড়া বন্দুক সরিয়ে বাঁকা হেসে চোখ টিপল।
‘প্রেম ঠোঁট কামড়ে নিজের ক্রোধ সংবরণ করল। লাড়া চেঁচিয়ে ব্যঙ্গের সুরে বলল, “সালা, তুই আমার বন্ধু হয়ে আমাকেই ঠকাচ্ছিস! বন্ধু হতে চেয়ে আমার ভালোবাসার মানুষের পিছনে তদন্ত করিস?”
‘প্রেম গালের কোণে এক হাসির রেখা ফুটিয়ে গলা ছেড়ে বলল,”আরে লাড়া জান্স! তুমি বললে আসামি ছেড়ে আমি নিজে আসামি হয়ে যেতাম। শুধু শুধু জঙ্গলে এতো কষ্ট করে আসতে হতো না!”
“ফা°ক অফ।”
‘মুখ বিকৃত করে বলে লাড়া গাড়ি ঘুরিয়ে ধুলো উড়িয়ে দ্রুত চলে গেল। প্রেম ঠোঁট কামড়ে একপ্রকার বিদ্রূপে হেসে বাইক ছুটিয়ে দিল লাড়ার গাড়ির পিছু। পেছনে পড়ে রইল নিস্তব্ধ জঙ্গলে রক্তে ভেজা মৃতদেহটা৷
‘প্রেমের বাইক সাদা গাড়িটার সমানতালে ছুটছে। গতির চাপে রাস্তার শাসন হারালেও প্রেমের মুখে এখনও সেই চিরন্তন বিদ্রূপ। উইন্ড মিরর খোলা ছিল বলে লাড়ার চোখ প্রেমের চোখে আটকালো। রাগে ফেটে পড়ার বদলে প্রেম হেসে ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিল লাড়ার দিকে। দাঁতে দাঁত পিষে লাড়া চুপ রইল। স্পিড বাড়ালো আরো, বাড়ালো প্রেম নিজেও। প্রেম থামল না। একটার পর একটা কিস ছুঁড়ে দিতে থাকল। সামনে তার কোনো খেয়াল নেই।
‘হঠাৎ লাড়া মিষ্টি হেসে প্রেমের দিকে তাকাল। পরপর নিজেও ছুঁড়ে দিল একটা উড়ন্ত চুমু। প্রেম এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। এমন কিছু আশা করেনি। ঘাবলা লাগল তার কাছে। বিস্ময়ে সামনে তাকাতেই দেখতে পেল বিপরীত দিক থেকে ধেয়ে আসা ট্রাক। পথ সংকীর্ণ, পাশ কাটানোর জায়গা নেই। উপায়ন্তর না পেয়ে প্রেম দ্রুত বাইক জঙ্গলের পথে ঢুকিয়ে দিল। খুবড়ে গিয়ে পড়ল ঝাড় ঝোপের মাঝে। এতোক্ষণে লাড়া চলে গিয়েছে। পড়া অবস্থায় ই রাস্তার দিকে চেয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলল প্রেম।
‘দু’দিন পেরিয়ে গেলেও এলিজাবেথের মন থেকে বিষন্নতা কাটেনি। তার জীবনে আজব ঘটনা যেন থামতেই চায় না। গতকাল মাথার ব্যান্ডেজ খুলে ফেলা হয়েছে। রাতে এলিজাবেথ ঠিকভাবে ঘুমালেও সকালে উঠে দেখে, কপালের কাটা অংশে মলম লাগানো। এলিজাবেথ জানে না, কে এটা লাগিয়েছে। সে নিজেও লাগায়নি। এটা ছিল পরশুর ঘটনা। এরিমধ্য কাল এলিজাবেথ হঠাৎ করে ব্যাগে দেখতে পেল তার কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নেই। তবে এতে প্রথমে খুব একটা মাথা ঘামায়নি। তাকবীর পুরুষ মানুষ,তারা তো এসব কিছু এতো বুঝবে না। হয়তো ব্যাগ গুছানোর সময় খেয়াল করেনি। কিন্তু কাল যা ছিল না, আজ হঠাৎ করে সেই জিনিসগুলো তার ব্যাগে। ব্যাপারগুলো ভৌতিক পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলল এলিজাবেথের মধ্যে। তাই তো এখন সর্বক্ষণ রামু দাকে কাছে রাখে।
‘আজ কিছুক্ষণ আগে যা ঘটল, তা ছিল ভয়ংকর। এলিজাবেথ গোসল করতে গিয়ে হঠাৎ অনুভব করল,পানি যেন খুব ভারি হয়ে উঠেছে। সে চোখ বন্ধ করে চির চিত্তে ভিজছিল৷ কিন্তু যখন চোখ খুলল তখন তার সামনে দেখা দিল এক ভয়ংকর দৃশ্য। এলিজাবেথের সারা গা লাল হয়ে গিয়েছে। স্বচ্ছ পানির বদলে ঝড়না থেকে প্রবাহিত হচ্ছে লাল পানি—রক্তের মতো। এলিজাবেথ ভয়ে কোনো রকমে বাথরোবটি গায়ে জড়িয়ে রুমে ছুটে গিয়েছিল। তার চিৎকারে রামু দা ছুটে এসে হাজির।
‘তবে পরবর্তীতে যখন ঝড়না বন্ধ করে আবার চালু করা হলো তখন আর এমন কিছু হয়নি। রামু দা এলিজাবেথকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল এটা তার মনের ভুল হতে পারে। কিন্তু ওর মন কিছুতেই মানছিল না। ভয় এতটাই গভীরে প্রবাহিত হয়েছিল যে, কিছুক্ষণ পরই এলিজাবেথের গা কাঁপিয়ে জ্বর চলে আসে।
‘ক্ষিপ্ত মেজাজে নতুন ম্যানশনে প্রবেশ করল রিচার্ড। চোখে আগুন আর মন উন্মাদ। আজ রিচার্ড বন্দরে গিয়েছিল। এক শিপ মেয়ে ডুবাই পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। ঠিক সেই সময় অকস্মাৎ পুলিশ নিয়ে হাজির হয় তাকবীর। চারিদিক থেকে শত শত পুলিশ ঘেরাও করে ফেলে রিচার্ডকে।তাকবীর তাচ্ছিল্যের হাসি মুখে ঝুলিয়ে এক লুক দিয়ে চেয়েছিল রিচার্ডের দিকে। তবে বস এটা রিচার্ড কায়নাত। এত সহজে কি ধরা পড়ে?
‘হঠাৎ একটি স্মোকিং গ্রেস পড়ল উপস্থিত সকলের মাঝে। ধোঁয়ায় চারপাশ অন্ধকার হয়ে চতুর্দিকে হট্টগোল বয়ে গেল। ধোঁয়ার তীব্রতা যখন কিছুটা কমে গেল ততোক্ষণে বন্দরে শিপটা আর নেই। শিপ ইতিমধ্যে সমুদ্রের মাঝে চলে গিয়েছিল। পুলিশরা তৎক্ষণাৎ বোর্ড নিয়ে পিছু ধাওয়া করলেও মাঝ সমুদ্রে পৌঁছানোর পর হঠাৎ তারা নিজেরাও হারিয়ে যায়। সমুদ্রের মাঝে তাঁদের আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
‘পুলিশের কাছে রিচার্ডের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ ছিল না। তারা শুধু তাকবীরের কথার উপর ভিত্তি করে এই অভিযান চালিয়েছিল। খুব কাছে গিয়ে ধরতে না পারায় তাকবীরের ভিতর আগুন জ্বলে উঠেছিল। রিচার্ড শান্ত থাকলেও তার মস্তিষ্কে নিউরন আর ইন্দ্রিয়গুলো ঝাকড়া করে দিচ্ছে তাকবীরের কয়েকটি কথা । যেগুলো প্রতিধ্বনি হয়ে রিচার্ডের ভিতর তোলপাড় তুলেছে।
“আজ বেঁচে গিয়েছিস ভাগ্য গুণে। তবে যেদিন জানতে পারবো সেদিনের ঘটনার পিছনে তোর হাত রয়েছে, সেদিন আর বাঁচতে পারবি না খুদার কসম। সাধারণ কিছু গুন্ডাদের পক্ষে কখনোই সম্ভব না রিসোর্টের হাই সিকিউরিটির গন্ডি পেরিয়ে ওকে তুলে নিয়ে যাওয়া।”
‘রেগে তেতিয়ে উঠা মস্তিষ্ক আর না সহ্য করতে না পেরে ভাঙচুর শুরু করে দেয়। মুহূর্তেই সাজানো ঘরটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। জিনিসগুলো ছড়িয়ে ছিড়ে উড়ে পড়ছিল। সেই সময় এক পাশ থেকে পর্দা সরে যায়। দেখা যায় দেয়ালে এলিজাবেথের মা-বাবার ছবি থেকে শুরু করে তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডিটেইলস—সবকিছু একত্রিত করে রিচার্ড দেয়ালে সাজিয়ে রেখেছে একটা চক্র তৈরি করে। সেই সাথে ছিল লাল মার্কারের দাগ, যেখানে অনেক কিছু লেখা ছিল।
‘ক্রোধে কাঁপতে থাকা হাতে ফোন তুলে নিল রিচার্ড। তার আকাশ ছোঁয়া ক্রোধ এখন একজনের সংস্পর্শে এসেই স্তব্ধ হতে পারে। কিন্তু ফোন হাতে নিতেই মেজাজ আরো বিগড়ে গেল। হোয়াটসঅ্যাপে একমাত্র একটাই কনভারসেশন ছিল। যেখানে কথা হয়েছিল শেষ দুদিন আগে। তারপর আর কোনো মেসেজ আসেনি। রিচার্ড আজ আর অপেক্ষা করতে পারল না। নিজের মেল ইগোর কোনো তোয়াক্কা না করে, একে একে আঙুল ছড়িয়ে দিল উত্তর লেখার জন্য। উগ্রতায় ভরা মেজাজে মেসেজ পাঠাল,
“বা°ল।”
‘অল্প সময়ের মধ্যে উত্তর না পেয়ে রিচার্ড ক্ষোভে ফোনটি বিছানায় ছুঁড়ে মারল। একের পর এক পায়চারি করতে থাকে সারা রুমে। এখনও মধ্যে আগুন জ্বলছে তার ভিতর। কিছু মুহূর্ত পরই ফোনে নোটিফিকেশনের শব্দ এলো। রিচার্ড একপ্রকার ছুটে গিয়ে ফোন হাতে নিল। দেখতে পেল ওপাশ থেকে ছোট একটি ত্যাড়া উত্তর: “আপনার।”
‘রিচার্ড ঠোঁট কামড়ে হেসে লিখল, “***********।”
‘ওপাশ থেকে আরও তীব্র উত্তর এলো, “অসভ্য, অসভ্য, অসভ্য, অসভ্যের শেষ বংশধর।”
“শেষ মানে? আমি কি অক্ষম নাকি? ভবিষ্যতে আমার ছেলে হবে, সে বাপের থেকেও বেশি অসভ্য হবে।”
“আল্লাহ আপনার মতো অসভ্যকে চারশো পাঁচটা মেয়ে দিক।”
‘রিচার্ড অনুভব করল তার ভিতরের রাগ ধীরে ধীরে কমে আসছে। কিন্তু সে অনুভব করতে পারল না এই লাস্যময়ী নারীর সংস্পর্শে এলে যে সে কখনও কখনও নিজের গাম্ভীর্য হারিয়ে ফেলে, আর হয়ে যায় অন্যরকম। রিচার্ড দ্রুত লিখল:
“আমার ওয়াইফ নিতে পারলে আমার বাঁধা নেই। আই’ম টু মাচ স্ট্রং এন্ড কনফিডেন্ট।”
“কথার মিনিং ঠিক করতে শিখুন জাত নষ্ট লোক।”
“সাহায্য কর।”
“ওমা আমি কিভাবে সাহায্য করব?”
“চাঁদের খায়েশ মিটিয়ে দাও। চাঁদ শান্ত হলে মন এমনিতেই শুদ্ধ হয়ে যাবে। ভাববে না উল্টাপাল্টা কিছু।”
“আল্লাহ কার মেলে এসে পড়লাম।”
“এক নারীতে আসক্ত রোমান্স কিংয়ের পাল্লায় এসে পড়েছ মেয়ে। ইউ শুড প্রাউড।”
“প্রাউড? তাও আবার আপনার মতো একটা নষ্ট পুরুষ মানুষকে নিয়ে?”
“এই নষ্ট মানুষটাই একদিন তোমাকে এতোটাই প্রাউড ফিল করাবে, যে গর্ভে গর্ভবতী হয়ে যাবে তুমি। আই প্রমিজ।”
“আচ্ছা মশাই আপনার কথায় কি আছে বলুন তো? প্রতিটা কথা আমার কান দিয়ে ধোঁয়া বের করে দেয়।”
“তাহলে এখান থেকেই বুঝো আমার ঠিক কোন দিক দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে? তাও একদল বলবে পুরুষ মানুষের সংযম নেই।”
ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩৬
‘অপ্রত্যাশিতভাবে ওপাশ থেকে টুক করে ব্লক করে দেওয়া হলো তৎক্ষণীক। রিচার্ড রাগের পরিবর্তে শব্দ করে হেসে উঠল। এটাই ছিল গ্যাংস্টার বসের প্রথম শব্দ করা হাসি, তাও নিজের অজান্তেই। রিচার্ড ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ব্রাশ করতে করতে আওড়াল,
“বোকা হৃদয়হরণী। আমাকে ব্লক দেওয়ার শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে। ইউ’র রোমান্স কিং ইজ কামিং।”