ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৬১ (২)

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৬১ (২)
মিথুবুড়ি

গ্রিনহাউজের মতো বিশাল একটি কাচঘর। বাইরে মোটা কালো হরফে লেখা “টর্চার সেল”। কাচের ভেতরটা নীলচে ধূসর-আলোয় ঢাকা। ঘরের মাঝখানে ধূসর ধাতবের একটি অটপসি টেবিল। এক কোণে নির্জীব পড়ে থাকা আরও একটি ধাতব টেবিল। যার উপর সারি সারি অস্ত্র সাজানো। সবই যেনো মৃত্যুর প্রতিচ্ছবি। অটপসি টেবিলে শুয়ে এক রমণী। তার হাত-পা শিকলে বাঁধা। মুখে টেপ। চোখদুটি খোলা। অতি খোলা। তার দৃষ্টিতে ভেসে ওঠে ধাতব টেবিলের উপরে সজ্জিত অস্ত্রগুলোর গায়ে লেগে থাকা শুকনো র”ক্ত, অর্ধভাঙা চি’ম’টি, হু’-ক, বঁ-টি, ক-রা’তের মতো কিছু যন্ত্র। শরীরটা থরথর করে কাঁপছে রমনী। হঠাৎ উপর থেকে টুপ করে পড়ে একফোঁটা কিছু। তারপর আরও একটা। তারপর হঠাৎই র-ক্তঝড়। বৃষ্টির মতো র-ক্ত পড়ছে তার গায়ে মুখে, চুলে, বুকের ওপর। তীব্র, গা-বমি-করা এক গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে ঘরে। এগুলো শু’য়োরের র-ক্ত।

‘মেয়েটার পেট মোচড়াতে থাকে। চোখ ভরে ওঠে ব°মিতে। সে চিৎকার করতে চায়। পালাতে চায় কিন্তু শরীর বাঁধা, মুখ বন্ধ। ঠিক তখনই চারপাশে আগুন জ্বলে ওঠে। ভয়ের চোটে চিৎকারটা গলায় আটকে যায়। মেয়েটা গলা নাড়িয়ে দেখতে পায় কোনো কিছুতেই আগুন লাগেনি। কাচের ওপারে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। লাল আগুন, কমলা আগুন, নীল আগুন। এগিয়ে আসছে আগুনগুলো তার বুকের ওপর, মুখের খুব কাছে। জ্বলন্ত আগুন কাচের ওপারে হলেও মনে হয় তার আত্মার গায়ে চড়ছে সেই লেলিহান শিখা। মেয়েটা বেগতিক মোচড়ায়, ছটফট করে। কিন্তু শিকল যে খুব শক্ত। অন্ধকার আর আগুনের মাঝখানে সে একা। ভয়, বমি, ঘৃণা আর মৃত্যু সব একসাথে তার শরীরে নাচতে থাকে। এটা তার জন্য কোনো দুঃস্বপ্ন নয় বরং এক অপার্থিব নরক, যার প্রতিটা মুহূর্ত তাকে জীবন্ত গ্রাস করছে। আর এই নরক তৈরি করেছে স্বয়ং তার স্বামী।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘হঠাৎ টান করে খুলে গেল কাচের দরজা। এক মুহূর্তের স্তব্ধতা তারপর ধাতব মেঝেতে ঘষা খেয়ে কুরবানির গরু জবাইয়ের ছু-রির তীক্ষ্ণ ফল থেকে ভেসে এলো ঠান্ডা, হাড় কাঁপানো ক্রিং ক্রিং শব্দ। শরীরটা কেঁপে উঠল এলিজাবেথের। মাথা ঘুরিয়ে যাকে দেখল সে মানুষের ছদ্মবেশে এক নর-খাদ’ক—রিচার্ড। নর-পিশা’চের চোখে এক বিকৃত উল্লাস আর নৃশংস উন্মাদনার জ্বালা। চুলগুলো এলোমেলো। ঠোঁটের কোণে পৈশাচিক হাসি লেপ্টে। হাতে ধরা সেই ছুরি যেটার ধার শুধু মাংস কাটে না আত্মা বিদীর্ণ করার জন্যও যথেষ্ট। রিচার্ড ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে। এলিজাবেথ হুড়মুড়িয়ে কাঁদতে শুরু করে। গলা দিয়ে শব্দ বেরোয় না। মুখে টেপ। তবুও বুকের ভেতর থেকে উঠে আসে গুনগুন করে কান্নার শব্দ। কান্না, যন্ত্রণায় পুড়ে যাওয়া আত্মার এক অব্যক্ত আর্তি। রিচার্ড এগিয়ে এসে ছুরির ফলটা রাখে এলিজাবেথের উন্মুক্ত পেটের ওপর। ঠান্ডা ধাতুর সংস্পর্শে শিউরে ওঠেএলিজাবেথের অন্তঃস্থ প্রাণ। রিচার্ডের কণ্ঠস্বর কেমন অদ্ভুত,

“ভাবছ এটা কেন?”
‘নিজের প্রশ্নের উত্তর সে নিজেই দিল,”জ’বাই করার জন্য। জ’বাই। আমি বলছিলাম, তুই আমার না হলে তোর শেষ নিঃশ্বাসটাও ঝরবে আমার হাতে। আজ সেই দিন। বিশ্বাস কর রেড, একটুও কষ্ট দিবো না।”
‘এলিজাবেথ হাত-পা ছুড়তে থাকে। শিকলের ধারে হাতের কোমল চামড়া ছিঁড়ে রক্তপাত শুরু হয়। হঠাৎই উগ্রতা ভেঙে হিংস্র প্রাণীর মতো গর্জে উঠল রিচার্ড,
“যেখানে আমার রক্ত আমাকে বেচে দিয়েছিল,সেখানে তুই তো পর। আমার সাথে ছলনা করে লাভ নেই এলিজান। ছলনায় পুড়ে, পুড়ে আজ আমি নরপিশাচ। শালার জীবন।এই পৃথিবীর মানুষ আমাকে ভালো হতে দেয়নি।”

‘রিচার্ডের নিঃশ্বাসছোঁয়া স্তব্ধতায় এক মুহূর্ত। তারপর হঠাৎ চারদিক থেকে ভেসে এলো এক বিভীষিকাময় গর্জন। প্রেতাত্মাদের ভয়ংকর হাহাকার। যেন মৃত আত্মারা বিদ্রোহে ফুঁসে উঠেছে।এলিজাবেথ চমকে উঠল। ভয়াল চোখে তাকিয়ে দেখল কাচের ভিতরটা অদ্ভুতভাবে ঘোলাটে হয়ে উঠছে। তার অন্তরাল জুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে বিকৃত মুখ,চোখ ছাড়া খোলস, ছায়ার মতো হাত, ভাঙা দাঁত, ঝুলে থাকা জিহ্বা। ওরা ধ্বংসে মেতে উঠেছে। কাচের ওপর ঘুষি মারছে। আঁচড় কাটছ। আর এমন সব আওয়াজ করছে যা শব্দ নয় চেতনার ক্ষয়। শব্দগুলো কেঁপে কেঁপে ভেদ করে মস্তিষ্ক। নিউরন ছিঁড়ে গিয়ে শ্রবণ ইন্দ্রিয় ঝাঁঝরা হয়ে ওঠে। এলিজাবেথ গা কাঁপিয়ে চোখ-মুখ শক্ত করে বন্ধ করে রেখেছে। কিন্তু কিছুই বন্ধ হয় না। ভিতরটা ফুটতে থাকে শব্দচাপে। রক্তচাপ বাড়ে হু-হু করে। নাকের সরু পথ গলিয়ে বেরিয়ে আসে রক্ত। তবে রিচার্ড নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে। এবার কান দিয়েও গড়িয়ে পড়ে রক্ত। মাথার ভেতর চাপের দাপটে হৃদয়ে ওঠে এক ঝড়।

‘ভয়ার্ত শব্দেরা এক সময় নিঃশব্দে মিলিয়ে যায়। এলিজাবেথ ধীরে চোখ মেলে তাকায়। হঠাৎ মনিটরের দিকে ঝলকে ওঠে নীল রশ্মি গিয়ে পড়ে কাঁচের উপর। সঙ্গে সঙ্গেই কাঁচের মধ্যে ফুটে ওঠে একেকটা স্ক্রিন। প্রতিটা স্ক্রিনে জ্বলছে একেকটা স্মৃতি। দেওয়ান মঞ্জিল,চাচার সেই পুরোনো দোতলা বাড়ি, ক্যালিফোর্নিয়ার হোটেলগুলোর করিডোর, পুলসাইডে বসে থাকা এলিজাবেথের হাসিমাখা মুখ,ইতালির হসপিটাল,রির্সোট, সেই দ্বীপ গুলো একে একে সব পুড়ে যাচ্ছে। আগুনে গলে যাচ্ছে তার অতীত। তার পদচিহ্ন। তার অস্তিত্ব। এলিজাবেথ চমকে তাকায় রিচার্ডের দিকে। রিচার্ডের ঠোঁটের কোণে বিষাক্ত এক হাসি।
“তুই থাকবি না, তোর পদযুগলের অস্তিত্ব কেন থাকবে?”

‘এলিজাবেথ ঘনঘন মাথা নাড়াতে থাকে। রিচার্ড ততক্ষণে নিজের ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে দিয়েছে। ধাতব টেবিল থেকে তুলে নেয় এক বিশাল হকিস্টিক। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে আঘাত করতে থাকে কাঁচে। কাঁচ ভাঙে না। তবু আঘাত করে চলে। প্রতিটি আঘাত করছে সেইসব জায়গায়,যেখানে এলিজাবেথের অস্তিত্ব ছিল, যেখানে ওর পায়ের ছায়া পড়েছিল এক সময়। রিচার্ড চায় পৃথিবী থেকেও মুছে যায় এলিজাবেথের ইতিহাস। প্রতিটি আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে রিচার্ড। ভাঙা হৃদয়, উন্মাদ প্রেম আর তীব্র অভিমনের শ্বাসরুদ্ধ স্বীকারোক্তি দিতে থাকে গ্যাংস্টার বস,

“যেখানে তোর শ্বাস ফেলা বাতাসকেও ঘৃণা করি আমি,
সেখানে তোকে দিনের পর দিন রেখেছিলাম একটা পরপুরুষের কাছে! কতোটা ইনসিকিউরিটিতে ভুগেছি জানিস তুই? রাতের পর রাত পার করেছি গাড়িতে,
তোর বাড়ির নিচে এক পায়ে দাঁড়িয়ে না ঘুমিয়ে। তোর বিছানার পাশে বসে কাটিয়েছি সারারাত শুধু যেন তোর গায়ে পরপুরুষের ছোঁয়া না লাগে! আর সেই তুই? তুই আমি ছাড়া? কেন? কিসের কমতি আমার মাঝে? আমি যদি প্রেমাগ্নিতে পুড়ি, তোকেও সেই দহন থেকে মুক্তি দিতে পারি না। বাঁচতে দেবো না। তুই শুধু আমার ছিলি। মরলেও আমার হয়েই মরবি। আমি ধ্বংস হবো,তোকেও নিয়ে!”

‘রিচার্ডের প্রতিটি আঘাতে কাঁপে কাঁচের ঘর। কাঁপে এলিজাবেথের দেহ। কিন্তু সবচেয়ে বেশি কাঁপে মানুষ নামক ভালোবাসার ভয়ংকরতম রূপ।রিচার্ড হাঁপাতে হাঁপাতে এলিজাবেথের সামনে এসে দাঁড়ায়। শরীরজুড়ে ঘাম ।হাতজুড়ে রক্ত। চোখজুড়ে চিরচেনা সেই উন্মাদনার ছায়া। ওদিকে এলিজাবেথ চুপচাপ কাঁপতে থাকা এক ভাঙাচোরা প্রাণ। মেয়েটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কিন্তু মুখে কোনো আওয়াজ নেই। শুধু চোখে, হৃদয়ে, সমস্ত রন্ধ্রে ছড়িয়ে আছে মৃত্যুর ভয়। রিচার্ড খামচে ধরল ওর কাঁধ। ঝাঁকিয়ে চিৎকার করতে বলতে থাকে,

“কি পেয়েছিস আমাকে, কি হুহ? আমার সুখ কেনো কারোর সহ্য হয় না? আমি বাপ হতে যাচ্ছিলাম, সহ্য হয়নি? রিচার্ড কায়নাত ভালো হয়ে যাবে বলে হিংসে হচ্ছিল? দিলি না ভালো হতে। এই কুত্তার বাচ্চা, পালাতে পারলি না সেদিন? আমি আসা পর্যন্ত পারলি না আমার বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে? তোরা সবাই কেনো আমার নিঃস্ব করে দিস? আমাকে মানুষ ভাবতে কিসের সমস্যা তোদের? আমি আর পাঁচটা মানুষের মতো অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি না বলে কি আমার ভিতরে অনুভূতি নেই? আমি আর সবার মতো পায়ে পরতে পারি না বলে কি আমার কষ্ট হয় না? আমি পারি না সবার মতো মুখ দিয়ে ভালোবাসার বন্যা বইয়ে দিতে। আবেগ আসে না আমার মাঝে, তার মানে এই না আমি যান্ত্রিক। আমিও মানুষ। কষ্ট এখানটাই আমারও হয়। তোরা কেনো আমার সাথে এমন করিস?আমি এতিম বলে? আমার বাপ একটা কাপুরষ ছিল তাই? আমার মা চরিত্রহীন ছিল বলে? নাকি তোরা আমাকে মানুষের কাতারেই ধরিস না আমার মা আমাকে বেচে দিয়েছিল বলে? জবাব দে কুত্তার বাচ্চা?”

‘ছেড়ে দেওয়া অভ্যাস আবারোও কত নিদারুণ ভাবে কব্জা করে নিল রিচার্ড। ক্রোধের বশবর্তী হয়ে কণ্ঠগহ্বরের ফাঁক গলিয়ে ছিটকে বেরিয়ে আসছে অশ্রাব্য গালি। রিচার্ড বজ্রপাত কণ্ঠে আরো বলতে থাকে,
“কুত্তার বাচ্চারা তোরা কখনো দেখেছিস আমার আহাজারি? আমাকে ছটফট করতে দেখেছিস? দেখেছে আকাশ, দেখেছে বাতাস। আমার বাপের কবরের পাশের গাছপালা গুলো দেখেছে আমার আহাজারি, আমার ছেলের কবরের পাশের আকাশ, বাতাস দেখেছে এই রিচার্ড কায়নাত এতোটা ভেঙে পড়ে রাতের আঁধারে, কিভাবে ছটফট করে সে। এই রিচার্ডের শরীর কাঁপে রাতের আঁধারে। কিন্তু ওই যে বারো বছর কাটিয়েছি একা, অন্ধকারে জন্তুদের মাঝে। ভয় পাওয়া, গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া কাঁদার সুযোগ পায়নি, তাই এখন আর আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয় না। আমি চিৎকার করে কাঁদতে পারিনা। আমার ভিতর ফেটে যায়, তবুও আমি অনুভূতি প্রকাশে ব্যর্থ।

এই আল্লাহর বান্দি এই, জবাব দে—তোরা কখনো ভেবে দেখেছিস একটা আট বছরের ছেলে কিভাবে বারোটা বছর মাটির নিচে আটাইশ হাতের একটা ঘরে কাটায়? কখনো ভেবে দেখেছিস সূর্যের আলো না দেখে একটা মানুষ একা এতোগুলা দিন কিভাবে পার করে? আমার সারাজীবনের কান্না আমি প্রথম এক বছরের কেঁদে নিয়েছিলাম, সেজন্য এখন আর আমার কান্না আসে না। শুকিয়ে গিয়েছে চোখের পানি। কঠিন হয়ে গিয়েছে আমার হৃদয়। আর সেই শক্ত হৃদয়ে ঝড় তুলে দিয়েছিলি তুই। সেই শক্ত হৃদয়ে উষ্ণ হাওয়া ছুঁয়ে গিয়েছিল তখন, যখন এই আমি নামক জানোয়ার জানতে পেরেছিল সে বাপ হতে যাচ্ছে। কুত্তার বাচ্চা তাও হতে দিল না। এতো কিসের লোভ তোদের আমার সুখের প্রতি? হুহ?”

‘সন্তান হারানোর গ্লানিতে মদ ছেড়েছিল রিচার্ড। তবু আজ সেই ব্যথা আর নিয়ন্ত্রণের সীমা ভেঙে ফের হাতে তুলে নেয় মদের বোতল। ছুটে যায় ধাতব টেবিলের দিকে। ঠোঁটে চেপে ধরে এক টানে শেষ করে পুরো বোতলটা। তারপরই ছুঁড়ে ফেলে দেয়। বিকট শব্দে ভেঙে পড়ে কাঁচ।এলিজাবেথ মুক্ত হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। রিচার্ড আবার ছুটে যায় ওর দিকে। অস্বাভাবিকভাবে দম নিচ্ছে লোকটা৷ শরীর জুড়ে উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে। হঠাৎ অটপসি টেবিলে এলিজাবেথের মাথার পাশে ঘুষি বসাতে বসাতে ফুঁসে ওঠে,

“তোকে বিয়ে করাটা সহজ ছিল না, এলিজাবেথ। তুই কখনোই জানবি না, কতটা ছটফট করেছি আমি তোর জন্য! কত রাত কেটেছে তোকে না দেখে, তোকে না ছুঁয়ে! তোর সুরক্ষার জন্য কত কিছু করেছি। তুই জানিস না,জানবি না কখনো! কারণ, আমি শো অফ পারি না। আমি করি,মানে করেছি। নীরবতা আমার শক্তি,আর আমার চোখে লেখা থাকে গল্প। যা পড়তে প্রতিবারই ব্যর্থ তুই। আমার কিছু করতে আয়োজন লাগে না। ইচ্ছাশক্তি লাগে। আরে শালি ধান্ধাবাজ, তোর শূন্যতা আমার রূহ পর্যন্ত পুড়িয়ে দিতো কুত্তার বাচ্চা। তোর অনুপস্থিতিতে আমার ঘুমাতেও ভয় লাগত। হ্যাঁ, ভয়। রিচার্ড কায়নাতেরও ভয় হয়। সারাক্ষণ ভয়ে থাকতাম, তোকে হারিয়ে ফেলার ভয়। মাত্র একবার দেখেই আকৃষ্ট হয়েছিলাম তোর প্রতি। মাত্র পঁচিশ মিনিটে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তোকেই বিয়ে করব৷ আমার জীবনের প্রথম নারী হবি তুই। রিচার্ড কায়নাতের প্রথম স্পর্শের দাবিদার তুই, শুধুই তুই!”

‘হাঁপাতে হাঁপাতে রিচার্ড সোজা হয়। হঠাৎ এক টানে ছিঁড়ে ফেলল পরনের কালো শার্ট’টা। ক্ষত-বিক্ষত বুকটা দৃশ্যমান হয়। এলিজাবেথ শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আর নিরবে অশ্রু ফেলে। রিচার্ডের কণ্ঠস্বর এবার ক্ষীণ হয়ে আসে। গলা হতে নির্গত কর্কশ গোঙানির শব্দে দূর্বল গলায় উচ্চারণ করল,
“এই যে, বুকের এই দাগগুলো দেখতে পাচ্ছিস? যদি বলি এগুলো তোর সুরক্ষার জন্য? বিশ্বাস করবি? না, কখনোই না। কারণ কি? কারণ—রিচার্ড কায়নাতের তো কষ্টই হয় না। তার বুকে গুলি লাগলেই কি, তার তো যন্ত্রণা হয় না। কারণ সে রোবট, সে যান্ত্রিক। তার শরীরে রক্ত নেই, হৃদয় নেই। কত ঝড় সওয়ার পর মাটি পাথর হয় জানিস?”

‘এক নিঃশ্বাসে বলে যেতে যেতে হঠাৎ হাঁটু ভেঙে পড়ল রিচার্ড। নিচে ঝুলে থাকা এলিজাবেথের শাড়ির আচল তুলে নেয় দু’হাতের আঁজলায়। চেপে ধরে কপালের সাথে। কাঁপা কাঁপা গলায় ফিসফিসিয়ে বলে,
“সবকিছু কি মুখে বলে দিতে হয়? আমার চোখের অনুভবের এক মুহূর্তের চাহনিতেই আমি কয়েকটা রচনার উপসংহার টেনে দিতে পারি৷”
‘লম্বা শ্বাস টেনে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় রিচার্ড।হ্যাঁ, এটা সত্যি এই লোকটা কাঁদতে পারে না। তাই তো চোখের তারার পাশের সাদা অংশ রক্তলাল হয়ে উঠলেও,সেই রক্ত গড়িয়ে পড়ে না। থেমে থাকে পাথরের মতো। গুমরে থাকে শুধু ভিতরে। শোচনীয় বিস্ময়ে রিচার্ডের ঠৌঁট কাঁপছে। লোকটা কামড়ে ধরল ঠৌঁট। বুড়ো আঙুল দিয়ে এলিজাবেথের চোখের পানি মুখে দিল। নিস্পৃহ চোখে তাকিয়ে এক অভিন্ন স্বরে বলল,

“প্রেম মানে ধ্বংস জানতাম। তবে তুই আমাকে এমনভাবে পুড়াবি জানলে কখনোই তোর প্রেমে পড়তাম না এলি জান, বিশ্বাস কর। এই জীবন একাই কাটিয়ে দিতাম। তুই তো আমার ভিতরে থেকেও ভিতরটা জ্বালিয়ে দিলি।”
‘হঠাৎই পকেট থেকে গান বের করে নিজের কপালের সাথে চেপে ধরে রিচার্ড। শিউরে ওঠে এলিজাবেথ।মোচড়াতে থাকে, ছটফট করতে থাকে। হাউমাউ করে কাঁদতে চায়।পারছে না, তবু চোখে সবটা বলা হয়ে যায়।রিচার্ড যেনো বুঝে ফেলে সে ভাষা, চোখের কান্নার ভাষা। ধীরে ধীরে সরিয়ে নেয় গানটা নিজের মাথা থেকে। একটা ফিচলে হাসি ঝুলে পড়ে ঠোঁটের কোণে।

“নাহ তোর আগে মরব না আমি। তোর লাশের খাটিয়া তোলার অধিকার তো শুধুই আমার।”
‘রিচার্ড রক্তমাখা হাতে তুলে নেয় সেই ছুরিটা। বাতাস থমকে যায়। এলিজাবেথ হাউমাউ করে কাঁদতে চায়। ভাগ্য যে তার কান্নাও গলায় আটকে দিয়েছে। ঠিক সেই মুহূর্তে উপর থেকে ঝরতে শুরু করে পানি। ঠান্ডা, পরিষ্কার পানি। ধুয়ে দিতে থাকে শরীরের সমস্ত অপবিত্র রক্ত। ভিজে একাকার দু’জনেই। রিচার্ডের চুল থেকে টপটপ করে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা জল। মেঝেতে রক্ত আর জলের মিশ্রিত গন্ধে এক অদ্ভুত পবিত্রতা। রিচার্ড এবার ঝুঁকে পড়ে এলিজাবেথের উপর। রক্তিম কানের লতি ছুঁই ছুঁই করে হিসহিসিয়ে বলল,
“এই পৃথিবীর বুকে এলিজাবেথ রিচার্ডের না হলে আর কারোর হবে না।”
‘থেমে,

“তুই পবিত্র রূপে আমার কাছে এসেছিলি,
পবিত্র ভাবেই চলে যা। তোর গায়ে কলঙ্কের দাগ লাগুক আমি চাই না।”
‘এলিজাবেথ মাথা নাড়ায়। এই মৃত্যু সে চায় না। সে প্রাণপণে নড়াতে চায় হাত-পা, ছটফট করে। রিচার্ডের চোখে আজও বরাবরের মতো কোনো মায়া নেই। শুধু একধরনের ধর্মীয় উন্মাদনা, একপেশে ভালোবাসা আর ধ্বংসের ঠাণ্ডা নেশা। আড়ষ্ট রমণীর ললাটে দীর্ঘ এক শব্দহীন শেষ চুম্বন এঁকে দিল রিচার্ড। অতঃপর চোখ বন্ধ করে ধীরে ছু’রি’র ধার বসিয়ে দেয় এলিজাবেথের কণ্ঠনালিতে।ছুরির তীক্ষ্ণ ফল ছুঁয়ে যায় গলার কোমল চামড়া। একটা স্লাইসেই চামড়া ফেটে র’ক্ত গলগলিয়ে ঝরতে থাকে। ঠিক তখনই র’ক্তে পিচ্ছিল হয়ে এক দিকের শিকল সরে যায় হাত থেকে। এলিজাবেথ হঠাৎই সুযোগ বুঝে এক হাতে রিচার্ডের হাত থেকে ছুরি ছুঁড়ে ফেলে দেয় দূরে। পরক্ষণেই রিচার্ডকে টেনে আনে নিজের বুকের ওপর। মুখ থেকে টেপ ছিঁড়ে ফেলে কাঁপতে কাঁপতে জড়িয়ে ধরে রিচার্ডকে শক্ত করে।
বারবার বলতে থাকে,

“আমি ভালোবাসি আপনাকে! শুধু আপনাকে। আর কেউ নেই আমার মনে! আমার রবের কসম আপনি ছাড়া কেউ নেই আমার মনে! আমি শুধু মনেপ্রাণে আপনাকেই চাই! আপনার সাথে সংসার করতে চাই মি.কায়নাত।”
‘নিমিষেই নামল একরাশ বর্ষণ৷ স্ফটিক অগ্নির মতো ঝলসে ওঠা রাগ জলধারায় ধুয়ে গেল। চমকে উঠল রিচার্ড। পৈশাচিক চোখে যে হিংস্রতা ছড়াচ্ছিল তা ধীরে ধীরে মিশে গেল বৃক্ষপটে ঝরতে থাকা শিথিলতায়। হিংসা, রাগ, পুরুষতান্ত্রিক অহম সবকিছু হঠাৎ করেই বিলীন হয়ে গেল। এলিজাবেথের চুলের মুঠি ধরে গলায় এক নিঃশ্বাসে আজ বলেই উঠল রিচার্ড,
“আই লাভ ইউ, রেড। আই লাভ ইউ অ্যা লট। আই অ্যাম ম্যাডলি ইন লাভ উইথ ইউ মাই ফা’কিং ডার্ক রেড।”
‘এলিজাবেথও চেপে ধরল রিচার্ডকে। সমস্ত গুমে রাখা যন্ত্রণা ছাপিয়ে ফেটে পড়ল কান্নায়। অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

“আই লাভ ইউ টু।”
‘প্রাপ্তির নির্ভয়তায় দু’জনের মুখভঙ্গে ফুটে উঠল এক দীপ্তি। উষ্ণ ভালোবাসায় উথলে উঠল হৃদয়। হঠাৎ করেই রিচার্ড লাফিয়ে উঠল অটপসি টেবিলের ওপর। ঝুঁকে এলিজাবেথের দিকে এগিয়ে এসে ঘন নিঃশ্বাসে আলিঙ্গনের আর্জি জানালো,
“আজ আমার তোকে লাগবে এলিজাবেথ।”
‘অবাক হয়ে তাকাল এলিজাবেথ নীল চোখে। সে চোখে দাবানলের মতো কিছু ছিল। মেয়েটা কাঁপতে কাঁপতে শুধালো,
“ক… কী হে?”
“আজ আমার লাগবেই।”
‘আর বলেই মুখ ডুবিয়ে দিল এলিজাবেথের গলদেশে।

অটপসি টেবিলের ধাতব শীতলতা আর বাস্তবের নিষ্ঠুরতা সব এবার হার মানল এক উষ্ণ লেপটে থাকার কাছে। রিচার্ডের ঠোঁট ধীরে ধীরে ছুঁয়ে গেল এলিজাবেথের কপাল,ঠৌঁট, গ্রীবা ।সেই স্পর্শে সকল অতীত, ব্যথা, মানঅভিমান গলে গেল নিমিষেই। এলিজাবেথ দুই হাত তুলে জড়িয়ে ধরল রিচার্ড’কে। এমনভাবে ধরল যেনো বহুদিনের অপেক্ষা ফুরালো। বাড়তে থাকে আলিঙ্গনের স্নিগ্ধতা। মধু পিপাসায় ঘটতে থাকে মিষ্টি শ্বাসপ্রশ্বাসের অমোঘ মিলন। হৃদয়ের তীব্র সংযোগে হারিয়ে যেতে থাকে একে-অপরের মাঝে। রিচার্ড ছিন্নভিন্ন করে দেয় রমণীর কোমল ওষ্ঠদ্বয়। হয় রক্তপাত। তবুও সয়ে নেয় মেয়েটা। স্বামীর ক্রোধ ও হিংস্র আচরণের স্বীকার হলেও লোকটাকে সাহায্য করে ক্রোধ সংবরণের। বেগতিক মুহূর্তে হঠাৎ এক টানা শিসের শব্দে চমকে মুখ তোলে রিচার্ড। বিরক্তিতে ঠোঁটের কোণে তীক্ষ্ণ শব্দ ছুঁড়ে দিয়ে কাঁচের দরজা খুলে বাইরে তাকাতেই চোখে পড়ে তার কালা চাঁন আর দলা চাঁন—ন্যাসো, লুকাস। ভ্রু কুঁচকে যায় রিচার্ডের। ওদের দিকে তাকাতেই কিছু না বলে ন্যাসো লুকাস হাত তুলে সামনের দিকে ইশারা করে৷

‘গ্রিনহাউজের মতো দেখতে এই কাঁচের ঘরট গজারী বনের বুক চিরে উঠে আসা এক রহস্যময় আস্তানা। চারপাশটা মোটা মার্বেল পাথরের দেয়ালে ঘেরা। ভিতরের গা ছমছমে ভারের বিপরীতে বাইরের পরিবেশ অদ্ভুত শান্ত ও শীতল। ঘরের সামনের ছোট পরিসরের মাটিতে একাধিক গোল গর্ত। প্রতিটিতেই নীলচে স্বচ্ছ পানি, যার নিচে বিছানো পাথরকুচি। সেই পানির গা ঘেঁষে ধীরে ধীরে উঠে আসছে ধোঁয়ার মতো কুয়াশা। যেমো মেঘের শ্বাস গর্তের বুক থেকে জন্ম নিচ্ছে। ন্যাসো লুকাসের ইশারায় রিচার্ড তাকায় গর্তগুলোর মধ্যখানে। চোখ এক মুহূর্তের জন্য থেমে যায়। বিস্ময়ে দৃষ্টি স্থির হয়ে যায় সেখানে। চারটি গর্তের মাঝবরাবর বসানো এক বিশাল খাট। খাটের চারপাশে ছড়ানো ছোট ছোট সাদা ফুল। ধোঁয়ার চাদরে মোড়া খাটটি দেখতে দিব্য স্থানে বসানো শয্যা। সবকিছু ঢেকে রাখা সাদার আবরণে—সাদা চাদর, সাদা বালিশের কাভার, এমনকি খাটের চারপাশে টানা সাদা পর্দাগুলো। রাতের আকাশ চিড়েঁ ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে টুপটাপ শব্দে। সেই বৃষ্টির হাওয়া পর্দাগুলোকে এলোমেলো দোলাচ্ছে। রিচার্ড চোখ সরিয়ে ওদের দিকে তাকাল। দু’জনেই একসাথে চোখ টিপে নীরবে নিজেদের গাড়িতে উঠে পড়ে। রিচার্ডের ঠৌঁটেও বাঁকা রহস্যময় হাসি খেলে যায়।

‘ন্যাসো লুকাস শুরু থেকেই বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা স্থির থাকলে ভেতরে ছিল একধরনের চাপা উত্তেজনা। এলিজাবেথের জন্য তাদের মোটেও মনে ভয় ছিল না, ভয়টা ছিল রিচার্ডকে ঘিরেই। তারা জানত এই প্রেমের গল্প আজ হয় নতুন এক রূপে জেগে উঠবে, নয়তো চিরতরে ভেঙে যাবে। রিচার্ডকে তারা খুব ভালো করেই চেনে। তার উগ্রতা, তার আবেগ, আর তার ভালোবাসার ভয়ংকর রূপ সব তারা দেখেছে স্বচক্ষে। তাই তো আজকের রাতের জন্য সাজিয়ে রেখেছিল এক পরিপূর্ণ রূপকথার মতো দৃশ্য।
‘দু’টি গাড়ি চলছিল পাশাপাশি, সামান্য আড়াআড়ি ভাবে। হঠাৎ ন্যাসো একপাশে মুখ ফিরিয়ে কুটিল হাসিতে ডাক দিল, “লোকা?”
‘লুকাস স্টিয়ারিং-এ চোখ রাখেই ঠান্ডা স্বরে জবাব দিল,

“বল।”
‘ন্যাসো ঠোঁট কামড়ে হেসে মাপলা গলায় বলল, “বস কিন্তু আজ দ্বিতীয়বার বাবা হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফিরবে ম্যানশনে। আর আমি?আমি তো খুব তাড়াতাড়িই বাবা হবো। আর তুমি এখনো সালমান ভাই হয়ে বসে আছো ছিঃ লোকা, ছিঃ।”
‘লুকাসের মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল। চিবুকে নেমে এল গাঢ় ছায়া। ফাঁকা চোখে সামনে তাকিয়ে গলাটাকে খানিক গম্ভীর করে বলল, “নিজেদের খুব বড় কিছু ভাবছো তোমরা, নাহ?”
‘ন্যাসো নিশ্চিত ভঙ্গিতে বলল, “অবশ্যই।”
‘এক মুহূর্ত চুপ থেকে লুকাস চোখ টিপে তাকিয়ে বলল,
“আমি জানি তোমাদের আসল পরিচয় কী।”
‘ন্যাসো কাঁধ উঁচু করে জিজ্ঞেস করে, “কি?”
“ভাদ্র মাসের কাউয়া, তোমরা আমার শা’উ:য়া।”

‘রিচার্ড কোনো ভূমিকা না করেই সোজা ভিতরে ঢুকল। অর্ধনগ্ন এলিজাবেথকে দেখে এক মুহূর্তও দেরি না করে কোলে তুলে নিল। এলিজাবেথ তখনও আতঙ্ক আর অস্থিরতার সীমানায়। গলার নিচের চিনচিনে ব্যথা ধীরে ধীরে অসাড় করে দিচ্ছে পুরো শরীরটাকে। রিচার্ডের কোলে বিহ্বল, নিঃশব্দ বিড়ালছানার মতো মাথা গুঁজে থাকে ঢেউ খেলানো সুঠাম বুকে। হঠাৎ টের পায় মাথা রাখা হয়েছে সাদা নরম বালিশে। চারপাশে সাদা পর্দাগুলো বাতাসে দুলছে এক অলৌকিক আবেশে। রিচার্ড এলিজাবেথের উপর ঝুঁকে পড়ে৷ মুখটা এলিজাবেথের কানের কাছে এনে একরাশ তৃষ্ণায় বলে,

“আমার শক্ত শরীরের নিচে তোমার নরম শরীরটা আজ আমার চাইই, রেড।”
‘এলিজাবেথ নিভু নিভু চোখে চেয়ে থাকে রিচার্ডের দিকে। রিচার্ডের চোখে যেন আজ দুটো খাদ৷ গভীর, অনিবার্য, গিলে নেওয়ার জন্য উদ্‌গ্রীব সমুদ্র নীল চোখ দুটোতে। খাদযুক্ত দু’টি দৃষ্টি এক হয়। মিশে যায়। একে অপরের স্বকীয়তা বিলীন হয়ে যায় কোনো অদৃশ্য টানে। ভিতরে অলিন্দে যে প্রেম এতকাল লুকিয়ে ছিল তা আজ উত্তাল জোয়ারে সব ভেসে যেতে থাকে। সায় জানিয়ে এলিজাবেথ হাত রাখে রিচার্ডের উষ্ণ হাতে। ছুঁয়ে দেয় আলতো করে। এক অনিবার্য পরিণতি শুরু। সঙ্গী হবার আগ মুহূর্তে প্রিয়তমার মাঝে নিজের অভ্যন্তরীণ আত্মসমর্পণ ক্ষণিকে মাথা তুলল রিচার্ড। এলিজাবেথ কার্নিশদ্বয় সিক্ত নোনাজল সমেত তাকাল স্বামীর পানে। রিচার্ডের দৃষ্টি কেমন গভীর, অচেনা। সে হঠাৎ ঠৌঁট নাড়ল,

“আল্লাহুম্মা জান্‌নিবনাশ্ শাইতান, ওয়া জান্‌নিবিশ্ শাইতানা মা রাযাকতানা।”
‘তারপর আর অবকাশ দিল না পালানোর, সয়ে নেওয়ার। মুহুর্তেই শরীরের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়ল উষ্ণতা। ঘনিষ্ঠ নিরবতা চিড়ে যায় অন্তরঙ্গ অভ্যন্তরীণ শ্বাসে। সেই রাতে এলিজাবেথ জীবনে পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল বাগান বাড়ির সেই ভয়ংকর দিনটার। আবারও সম্মুখীন হয়েছিল সেই হিংস্র, উন্মাদ রিচার্ডের কোবলে। যার প্রতিটি ছোঁয়ায় ছিল হিংস্রতা, বর্বরতা।

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৬১

তবুও সে সয়ে নিয়েছিল স্বামীর বেপরোয়াভাব, উৎশৃংখল আচরণ। সায় দিয়েছিল প্রতিটি আঙুলের ভালোবাসায়, সুখের নিঃশ্বাসে, মনভর্তি প্রেমের ফুলে অশ্রুসিক্ত আঁখিদ্বয়ে। ঠৌঁটের কোণে লেপ্টে ছিল পূর্ণতার আভাস, চোখে অনাগত পূর্ণের চিহ্ন। বৃষ্টিমুখর রাতে তারা আবারও মিলিত হয়। প্রকৃতিও যেনো তাদের সায় জানানো। পাশের শিমুলগাছ থেকে হাওয়ায় উড়তে উড়তে শিমুল ফুল এসে স্বাগতম জাগিয়ে দিয়ে গেল তাদের৷ সেই রাতে রিচার্ড ছিল বড্ড ব্যস্ত মানুষ। বাক্য আদানপ্রদানে একটুও সময় ব্যয় করেনি লোকটা। শুধু নাজুক মেয়েটা যখন লজ্জায় কপোকাত হয়ে নিজেকে জমিয়ে রেখেছিল তখন নিজ সুবিধার্থে বলেছিল,
“জান সহজ হও।”

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৬২